Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১১৩ তম সংখ্যা । ৫ মার্চ, ২০২৪
এই সংখ্যায় থাকছে :
“বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ”
“যৌন হয়রানি: ভিকারুননিসার শিক্ষক গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ”
“আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম, কাল থেকেই কার্যকর”
“গাজায় ‘গণহত্যার প্রতিবাদে’ ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে শরীরে আগুন দিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য”
“গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা: শেখ হাসিনা”
“মন্ত্রিপাড়ায় গোলাপের বাংলোবাড়ির বরাদ্দ বাতিল”
“বইমেলায় ধাওয়া খেলেন মুশতাক-তিশা!”
“বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ”
খবরঃ
২৮ ফেব্রুয়ারী রাতে রাজধানীর বেইলী রোডের একটি ভবনে আগুণে এই পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরও অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেইলি রোডে যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে কোনো ফায়ার এক্সিট নেই। এসব ভবন নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ার এবং মালিকদের গাফিলতি থাকে। এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে ইনস্যুরেন্স কিন্তু নিরাপত্তা দিতে পারে। (www.ittefaq.com.bd/679355/)
মন্তব্যঃ
জনগণের প্রতি শাসকগোষ্ঠীর চরম অবহেলার আরেকটি নির্মম বলি হতে হলো নারী-শিশুসহ ৪৬টি তাজা প্রাণকে। জনগণ এই শাসকগোষ্ঠীর কাছে সমাধানের কোন আশা করে না, বরং ভবিষ্যতের দূর্ঘটনার কার উপর ও কতটা ভয়াবহরূপে আপতিত হয় সেটা ভেবে উদ্বিগ্ন। সড়ক দূর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড, লঞ্চডুবিতে যখন ব্যাপক প্রাণহানী ঘটে, সরকার তখন জনগণ আইন মানেনা, কেউ সচেতন না ইত্যাদি বলে ব্যর্থতার দায়ভার ভুক্তভোগী জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেয়। বেইলি রোডের এই অগ্নিকান্ডের পর যখন জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে, তখন সরকার রেস্টুডেন্ট ভেঙ্গে দেয়া, সিলগালা করা, ফুটপাতের খাবারের দোকান উচ্ছেদ, ইত্যাদি লোক দেখানো পদক্ষেপ নিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যেখানে প্রায় ৩০লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান। এমনকি, যত্রতত্র আগুন লাগা আর সরকারের নির্বিকার ও উদাসীনতা জনগণের মনে এই অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে যে, অনেকে মনে করে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে শাসকগোষ্ঠীর হাত রয়েছে যাতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল হয়। যেমন, রেস্টুডেন্টের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সন্দেহ পোষণ করছেন পুঁজিপতি একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে তাদের ব্যবসা বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে। অনেকে সন্দেহ করছে, সরকার চট্টগ্রামে চিনিকলে অগ্নিকাণ্ডকে চিনির দাম আরেক দফা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট হিসেবে ব্যবহার করবে।
শুধুমাত্র মানুষের খেয়াল-খুশির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার উপর ভরসা রাখলে এই দুঃখজনক অবস্থা থেকে আমাদের কখনও উত্তরণ ঘটবে না। এই ধরণের অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণ হচ্ছে একটি অনিবার্য পরিণতি, কারণ আমরা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করে মানবসৃষ্ট ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা আঁকড়ে ধরেছি। এই ব্যবস্থা এমন শাসক ও রাজনীতিবিদ তৈরি করছে যারা জনগণের বিষয়ে উদাসীন এবং যেকোন ধরনের জবাবদিহিতার বাইরে।
ইসলামে শাসকের নিকট জনগণের জীবন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মুসলিমের একফোটা রক্তকে কাবাঘর ও তার চারপাশ হতেও মূল্যবান আখ্যা দিয়েছেন। ওমর (রা.) রাস্তা খারাপের কারণে একটি পশুও যদি পা ভাঙ্গে সে ব্যাপারেও আল্লাহ্’র নিকট জবাবদিহিতার বিষয়ে ভয় করতেন। কারণ ইসলামী ব্যবস্থায় শাসকের দায়িত্বকে তার পরকালের জবাবদিহিতার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “জেনে রেখো তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। জনগণের দায়িত্বশীল তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন” (বুখারী)। ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় খলিফা নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ সকল বিষয়ে খেয়াল রাখবেন এবং অন্যান্যরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন কিনা তা নিশ্চিত করবেন। সঠিক নগর পরিকল্পনা, যথোপযুক্ত বিল্ডিং কোড প্রণয়ন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে উন্নত ট্রেনিং ও আধুনিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করা, এবং আনুষঙ্গিক সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেক বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, এসবই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খলিফার দায়িত্ব। আর এটা কোন কাল্পনিক বিষয় নয়, এমনটাই বজায় ছিল খোলাফায়ে রাশেদীন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ওসমানী খেলাফতের শাসনকাল পর্যন্ত। সুলতানি আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় হাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন স্থাপত্য কিংবা ওসমানী খেলাফত আমলে প্রায় অর্ধ পৃথিবী জুড়ে স্থাপিত অসংখ্য স্থাপনা এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যা ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় শাসকদের পরিকল্পিত নগরায়ন এবং ইমারত ভবন নির্মাণে তাদের নজরদারি বা দায়িত্বশীলতার অন্যতম উদাহরণ।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“যৌন হয়রানি: ভিকারুননিসার শিক্ষক গ্রেপ্তার, জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ”
খবরঃ
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ক্যাম্পাসের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারকে যৌন হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাঈদ ইবনে সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার রাতে মুরাদ হোসেনকে কলাবাগানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ পরিদর্শক সাঈদ ইবনে সিদ্দিক আরও বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষার্থীর মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করেন। ধারাটি মূলত শ্লীলতাহানি-সংক্রান্ত। এ মামলায় মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/o6brn3tumf)
মন্তব্যঃ
নারীর নিরাপত্তাহীনতা শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। মাত্র কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উত্তপ্ত। অপরাধ জনসম্মুখে আসলে তখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজের মধ্যে যে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধগুলো চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছে না। সরকার পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে দূষিত ‘যৌনশিক্ষা’ কর্মসূচির মাধ্যমে ‘সম্মতিসূচক যৌনতার’ অশুভ ধারণা প্রচার করছে। স্কুলে শেখানো হচ্ছে পারষ্পরিক সম্মতিতে ব্যভিচার (জিনা) একটি স্বাভাবিক বিষয়! সবার ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ রয়েছে এবং তাই ‘সম্মতি’-তে সম্পর্ক হলে তা দোষের নয়। সরকার সমাজে তথাকথিত গুণগত পরিবর্তন আনয়নের লক্ষ্যে সমাজে যৌনতার প্রতি উদার মনোভাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবাধ যৌনাচার, ব্যভিচার ও প্রতারণার ধ্বংসাত্মক পশ্চিমা সংস্কৃতি বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে মিডিয়ায় নারীকে যৌনতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। এধরণের সমাজে আমাদের কন্যা সন্তানেরা লালসার শিকার হবে এটাই স্বাভাবিক।
মুসলিম সমাজে বহু যুগ ধরে চলে আসা তাক্বওয়া (আল্লাহ্’র ভয়) এবং খুলওয়া (বিবাহ বৈধ এমন পুরুষের সাথে প্রাইভেট প্লেসে মাহরাম ব্যতীত অবস্থান) এর ভিত্তিতে যে সামাজিক ভারসাম্য রয়েছে, তা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়ানোতে এই বিষয়গুলো দারুণভাবে উপেক্ষিত। পারস্পরিক সম্মতি থাকলে সব ঠিক, যদি না আনুশকা-দিহানের বিকৃত যৌনাচারের পরিণতি আমাদের সামনে আসে, অথবা কোন শিক্ষার্থীর অসম্মতির কারণে শিক্ষক মুরাদের মত কুলাঙ্গারের চরিত্র আমাদের সামনে আসে।
আমাদেরকে অনতিবিলম্বে এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাটি প্রত্যাখ্যান করতে হবে, যা নারীদের পবিত্রতা, সম্মান ও মর্যাদাকে নষ্ট করছে। নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্রই নারীদের উপর সকল ধরনের বর্বরতা ও সহিংসতার দ্বার রুদ্ধ করতে পারে। খিলাফতের অধীনে নারীদের সম্মান রক্ষা করার বিষয়টি অন্যতম রাষ্ট্রীয় নীতি। নারীদের জন্য নিরাপদ ও শ্রদ্ধার পরিবেশ তৈরির উদ্দেশ্যে এই রাষ্ট্র নারীর প্রতি তাক্বওয়া ভিত্তিক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনের প্রতি গুরুত্বারোপ করবে। “তিনি (একজন নারী) মর্যাদার পাত্র এবং তাকে সুরক্ষিত রাখা বাধ্যতামূলক।” (অনুচ্ছেদ ১১২, কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান)। খিলাফত রাষ্ট্র নারী ও পুরুষের মধ্যে মেলামেশা ও সহযোগিতার বিষয়টি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে সহিংসতা ও নৈতিক অবক্ষয় উৎস থেকেই নির্মূল হয়ে যায়। “পুরুষ এবং নারীকে মৌলিকভাবে পৃথক রাখতে হবে। শারী‘আহ্ অনুমোদিত প্রয়োজন ব্যতীত তাদের মেলামেশা করার অনুমতি নেই। মেলামেশার ক্ষেত্রে শারী‘আহ্ অনুমোদিত কারণ থাকতে হবে, যেমন: ক্রয়-বিক্রয় এবং হজ্জ্ব ইত্যাদি।” (অনুচ্ছেদ ১১৩, কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধান)। নারীদের বিরুদ্ধে যেকোন ধরনের সহিংসতার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান (চাবুক মারা থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড) রাখা ছাড়াও খিলাফত রাষ্ট্র তাদের মর্যাদা রক্ষায় সেনাবাহিনী প্রেরণেও দ্বিধা করেনা। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফা আল মুহতাসিম বিল্লাহ্’র শাসনামলে একজন রোমান সৈন্য কর্তৃক নির্যাতন ও বন্দীত্বের শিকার এক মুসলিম মহিলাকে উদ্ধারের জন্য রাজধানী বাগদাদ থেকে আমুরিয়া শহরের একটি শক্তিশালী রোমান ঘাঁটি দখলের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল।
মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“আবারও বাড়ল বিদ্যুতের দাম, কাল থেকেই কার্যকর”
খবরঃ
ফের বাড়লো খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিন দফায় বাড়ানো হল বিদ্যুতের দাম। সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দাম বাড়ার এই তালিকা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। এভাবে ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘটনা নজিরবিহীন। এবারও নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়। এই দফায় ৫ ভাগ দাম বাড়লো। সব মিলিয়ে চলতি বছরের দুই মাসে সরকার ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ালো। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বর্ধিত এই দাম বিল মাস মার্চ থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগ পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই দাম ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হয় হয়। তারও আগে ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। (www.jugantor.com/national/649917)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৯৫.৬২ শতাংশ উৎপাদিত হয় দেশে আর বাকি ৪.৩৮ শতাংশ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট ক্ষমতা ২৫,৩৪৪ মেগাওয়াট, যা বর্তমান বিদ্যুৎ চাহিদার (১০,৯৫২ মেগাওয়াট) তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশী। সামনে গরমের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে চাহিদা বৃদ্ধি হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। এক্ষেত্রে কার স্বার্থে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানী করে উৎপাদন খরচ বাড়ানো হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এছাড়া, দেশে মোট ১৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র (৬৩টি সরকারি এবং ৮৮টি বেসরকারি) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যার মধ্যে ৪৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে চলছে। বাকি ১০৪টির মধ্যে অন্তত ৫৩টি রক্ষণাবেক্ষণ বা জ্বালানির অভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎখাতকে বেসরকারী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কুইকরেন্টালসমূহের উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে যাতে সরকারঘনিষ্ট কতিপয় দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের স্বার্থ হাসিল হয়। যেমন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ গত ১৪ বছরে দাড়িয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিরতো কোন যৌক্তিকতাই নেই যেখানে আমাদের দেশেই বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে থাকে। উপরন্তু আমরা দেখেছি চুক্তিকৃত বিদ্যুৎ না পেয়েও ভারতের আদানি গ্রুপকে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হয়েছে ১২১৯ কোটি টাকা।
মূলত দেশি-বিদেশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খাতকে তুলে দেয়াই বিদ্যুৎ এর মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাছাড়া, উৎপাদনে ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বণ্টনের বেলাতেও সরকার বেসরকারিকরণ নীতি গ্রহন করেছে। সরকার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাইকারী দরে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে আর সেসকল বেসরকারি কোম্পানি জনগণের কাছে খুচরা মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে। ফলে, আরেক দফা মূল্য বৃদ্ধি পায়। বলা হচ্ছে যে, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসলেও তা এক্সপ্লোরেশনের গতি খুব ধীর। এর পাশাপাশি বিদেশী কোম্পানীর হাতে এসকল তেল-গ্যাস ক্ষেত্র তুলে দিয়েও আমরা আমাদের সম্পদ হারাচ্ছি। অপরদিকে বাংলাদেশের উচ্চমানের কয়লা উত্তোলন না করে বর্তমান সরকার ভারত থেকে নিম্নমানের কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে, আমরা আমাদের নিজেদের জ্বালানি থাকলেও দালাল শাসকগোষ্ঠী তাদের বিদেশী প্রভূদের স্বার্থে বিদেশী কোম্পানির হাতে জ্বালানী ক্ষেত্র তুলে দিচ্ছে। এবং জ্বালানী খাতকে আমদানী নির্ভর করে তুলে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে ক্রয় করে উৎপাদন খরচকে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ নীতি অনুসরণ করে সরকার দেশে যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ থাকা সত্ত্বেও তা উত্তোলনে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনজীবন কি দুর্দশায় নিমজ্জিত হলো কি না হলো এটা এখানে বড় বিষয় নয়, বরং বিশেষ একটি শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাই এই ব্যবস্থার শেষ কথা। ইসলামী ব্যবস্থায় জ্বালানী খাতের বেসরকারীকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কারণ শারী‘আহ্ তেল-গ্যাস-কয়লার মত জ্বালানীগুলোকে গণসম্পত্তি হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “মুসলিমরা তিনটি বিষয়ে অংশীদারঃ পানি, চারণভূমি এবং আগুন [তেল-গ্যাস-কয়লা]”। এবং “এগুলোর মূল্য নির্ধারণ হারাম”। খিলাফত রাষ্ট্র জ্বালানীর অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণায় বাপেক্স কিংবা বুয়েটের মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাবে। নিজস্ব জ্বালানী ও কারিগরী দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এবং সরকারী অচল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে সচল করে বিদ্যুতখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। গ্যাস-তেল-বিদ্যুতের মত জ্বালানী যেহেতু জনগণের সম্পত্তি সেহেতু রাষ্ট্র এগুলোকে জনগণের দোরগোড়ায় বিনামূ্ল্যে পৌছে দিবে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“গাজায় ‘গণহত্যার প্রতিবাদে’ ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে শরীরে আগুন দিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য”
খবরঃ
নিউইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা ওই ব্যক্তি ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করা এক ভিডিওতে বলেছেন, ‘আমি আর গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকব না'। এরপর শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে তিনি চিৎকার করে 'ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো' (ফ্রি প্যালেস্টাইন) বলতে থাকেন বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। (https://www.tbsnews.net/bangla/international/news-details-199890)
মন্তব্যঃ
গাজায় মুসলিমদের উপর সন্ত্রাসবাদী ইহুদীগোষ্ঠী কর্তৃক চলমান গণহত্যায় মার্কিন এবং মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা সহ্য করতে না পেরে খোদ মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য অ্যারন বুশনেলের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহুতি করে। দ্যা ইন্টারসেপ্ট এর রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন বিমানবাহিনী প্রত্যক্ষভাবে গাজায় মুসলিমদের উপর বোমাবর্ষনে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সামরিকবাহিনীকে সাহায্য করছে। মার্কিন বিমানবাহিনীর সদস্য হওয়ার কারণে অ্যারন বুশনেল ভালোভাবেই এই গণহত্যায় মার্কিনীদের ভূমিকার ব্যাপারে অবগত ছিলেন। যার প্রতিবাদেই তিনি নিজের শরীরে আগুন লাগান।
মুসলিম সামরিক অফিসারদের জন্য কি এটা লজ্জার নয়, যখন মুসলিমদের উপর ইহুদী ও মার্কিনী গোষ্ঠীর নৃশংসতা একজন অ-মুসলিম সদস্যকে জাগ্রত করেছে, অথচ বিশাল মুসলিম সামরিকবাহিনী এখনো দালাল মুসলিম শাসকদের আনুগত্য করে নীরব বসে আছে! যখন মুসলিমদের উপর চলমান নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ একজন অ-মুসলিম সামরিক সদস্যের হৃদয়ের আগুনকে প্রজ্জলিত করেছে, অথচ মুসলিম সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ঈমানকে প্রজ্জলিত করেনি! এ যেন জীবন্ত মানুষের আর্তনাদ মৃতদের কানে না পৌঁছানোর মত। যাদের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…যারা কবরে শায়িত (সত্য থেকে বিমুখ) আপনি তাদেরকে শোনাতে সক্ষম হবেন না” (৩৫:২২)। দুনিয়ার সবচেয়ে কাপুরুষ ও দুর্বল চিত্তের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন কাপুরুষতা, লজ্জা এবং দায় নিয়ে মুসলিম সামরিক অফিসাররা কিভাবে আল্লাহ্ রাব্বুল-আলামিন এর সামনে দাঁড়াবেন? মুসলিম সামরিক বাহিনীর নিস্তব্ধতা ও নিশ্চুপতার কারণে কাফেররা মুসলিমদের রক্ত ও সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করার সাহস পাচ্ছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের যে নিয়ামত “সামরিক শক্তি” দান করেছেন তার ব্যবহার তিনি ইসলাম এবং মুসলিমদের রক্ষায় ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন, “আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহ্র রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’” (৪:৭৫)। অথচ, এই নিয়ামত আজ ব্যবহার হচ্ছে শেখ হাসিনার মত দালাল শাসকদের আহ্বানে কাফেরদের সহায়তায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কাজে। ইহুদীদের মদদদাতা যে মার্কিন বিমানবাহিনীর হাতও মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত সে বিমানবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামরিক মহড়া করতে বাধ্য করেছে শেখ হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের মুসলিম সামরিক বাহিনীর জন্য এর চেয়ে লজ্জা ও অপমান আর কি হতে পারে? তারা কি জানেনা, “তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদেরকে নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে”- (১০২:৮)। সুতরাং, তাদের করণীয় এখুনি আল্লাহ্’র হুকুমে সাড়া দিয়ে এসব দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করা এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় নুসরাহ্ (ক্ষমতা) প্রদান করা, যাতে তারা খলিফার নেতৃত্বে মুসলিমদের রক্ষায় সামরিক অভিযানে ঝাপিয়ে পরতে পারেন। না হয় আমাদের জেনে রাখা উচিত “নিশ্চয়ই তোমার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন”- (৮৫:১২)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা: শেখ হাসিনা”
খবরঃ
ফিলিস্তিনে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যেকোনও ধরনের গণহত্যার বিপক্ষে। গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা। আমরা এর নিন্দা জানাই। ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার এবং নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে। তাই ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করা উচিত। ফিলিস্তিনের সীমানা নিয়ে ১৯৬৭ সালের জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় বেসামরিক মানুষদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানুষজনের জন্য বাংলাদেশ সহায়তা পাঠিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাসীকে ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, নারী ও ফিলিস্তিনের জনগণকে’ সমর্থন ও সাহায্য করতে হবে। (https://www.banglatribune.com/foreign/836731/গাজায়-যা-ঘটছে-তা-গণহত্যা-শেখ-হাসিনা)
মন্তব্যঃ
মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, “...যখন তারা কথা বলে মিথ্যা বলে...” (বুখারী/মুসলিম)। শেখ হাসিনা গাজায় মুসলিমদের উপর চলমান ইসরায়েলী নৃশংসতাকে গণহত্যা বলে অভিহিত করলেও, বাস্তবে তিনি মুসলিম গণহত্যার বিপক্ষে নন। তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক পরিচালিত হত্যাকাণ্ডকে কিংবা কাশ্মির ও গুজরাটে মুসলিম হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলেননি। তার সরকার ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ইসরায়েল এবং হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপর ৬ দিনের মাথায় ১৩ অক্টোবরের মধ্যেই ইসরায়েলকে রক্ষায় লেবানন সীমান্তে ইউনাইটেড নেশন্স পিস কিপিং মিশনের ‘ইউনাইটেড নেশন্স ইন্টারিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল)’ হয়ে কাজ করতে নৌবাহিনীর ৭৫ জন সদস্য প্রেরণ করে। এটা সর্বজনবিদীত, ইউনাইটেড নেশন্স পিস কিপিং মিশনের শুরু হয়েছে মূলত ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল এবং আরব দেশগুলোর মধ্যকার যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে যেন নব্য প্রতিষ্ঠিত ইসরায়েল দখলদারগোষ্ঠী টিকে থাকে। তাছাড়া, ইসরায়েলের রক্ষাকবচ এই আমেরিকা যার হাতও মুসলিমদের রক্তে রঞ্জিত, সেই আমেরিকার সাথে এই যুদ্ধকালীন সময়েও যখন হাসিনা সরকার দেশের বিমানবাহিনীর যৌথ-মহড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে (https://www.bd-pratidin.com/national/2024/02/19/969159)। তার সরকার ইসরাইলের কাছ থেকে গোয়েন্দা নজরদারীর সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়, পাসপোর্ট হতে একসেপ্ট ইসরাইল শব্দ দুটো বাদ দিয়ে অবৈধ রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতির পথে এগিয়েছে। অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের স্বীকৃতির নিমিত্তে আমেরিকার প্রস্তাবিত “দুই রাষ্ট্র সমাধান” বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবে সরকারের অবস্থান যে মূলত ইসরাইল ও আমেরিকার পক্ষে আর মুসলিমদের বিপক্ষে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সুতরাং, মুসলিমদের এই বাস্তবতা বুঝা জরুরী যে, গাজার মুসলিমদের পক্ষে শেখ হাসিনার অবস্থান বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য শাসকদের মতই নিঃসন্দেহে প্রতারণায় পরিপূর্ণ। মুখে ফিলিস্তিন, অন্তরে ইসরায়েল-আমেরিকা হচ্ছে শেখ হাসিনার মত বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ (স্রষ্টাবিবর্জিত) শাসকগোষ্ঠীর প্রকৃত বাস্তবতা। এরা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের রক্ষায় কখনোই বাস্তবিক কোন পদক্ষেপ নিবেনা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “এ উম্মতের ব্যাপারে এমন সব মুনাফিক সম্পর্কে আমার আশংকা হয়, যারা কথা বলে সুকৌশলে, আর কাজ করে জুলুমের সঙ্গে” (বায়হাকী)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সতর্কবাণীর বাস্তব প্রতিফলন যেন ফুটে উঠেছে এসব শাসকদের কর্মকান্ডে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “...তারা অন্যায় কাজের প্ররোচনা দেয় এবং ভাল ও ন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে এবং কল্যাণকর কাজ হতে নিজেদের হস্ত ফিরিয়ে রাখে। এরা আল্লাহ্-কে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ্ও তাদের ভুলে গেছেন। এ মুনাফিকরাই হল ফাসেক” (সূরা আত-তওবা ৬৭)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“মন্ত্রিপাড়ায় গোলাপের বাংলোবাড়ির বরাদ্দ বাতিল”
খবরঃ
মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) রাজধানীর মন্ত্রিপাড়ায় যে বাংলোয় থাকতেন, সেটির বরাদ্দ বাতিল করেছে সরকার। রাজধানীর মিন্টো রোড মন্ত্রিপাড়া বলে পরিচিত। সেখানকার দুইতলা বাংলোগুলোয় মন্ত্রীরা বসবাস করেন। সেখানকার ৪২ নম্বর বাংলোয় থাকছিলেন আবদুস সোবহান। বাংলোটিতে আবদুস সোবহান উঠেছিলেন ২০১৬ সালে। তখন তিনি বাংলোটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে; যদিও ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি আর বিশেষ সহকারী নেই। (www.prothomalo.com/bangladesh/gpzwhr4tvb)
মন্তব্যঃ
এই গোলাপ মূলত সেক্যুলার-পূজিবাদী ক্ষমতার ফুলের তোরার একটি ফুল মাত্র। এরকম অসংখ্য গোলাপের সন্ধান পাওয়া যাবে এই ব্যবস্থায়। এরকম আরেকটি গোলাপ হচ্ছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। গত ২৬শে ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। এসকল ক্ষমতার বলয়ের লোকজন নিজেদের দায়মুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়েই এসকল অপরাধের সাথে জড়িত হয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে এদের কোন আদালত বা জেল নেই, বড়জোড় মন্ত্রীত্ব থেকে অবসান কিংবা বাংলোবাড়ি থেকে প্রস্থান। তারপরও যদি বিচার হয় তাহলেতো রাষ্ট্রপতি আছেনই ক্ষমার নিদর্শন স্থাপনের জন্য।
অপরদিকে ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপারে খুবই কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে অবস্থানকারী লোকজন কিংবা তাদের কোন আত্মীয়-স্বজন যদি কোন অপরাধ করে তাহলে খলীফার পক্ষে তাকে বিশেষ কোন ক্ষমতার বলে ক্ষমা করে দেওয়ার নীতি ইসলামে নেই। পাশাপাশি তাক্বওয়ার কারণে মুসলিম শাসকরা এসকল অপরাধকে গুরুত্বসহকারে নিতেন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতেন সে যতই কাছের লোক কিংবা সম্ভ্রান্ত হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সীরাতেও আমরা এর উদাহরণ দেখতে পাই। আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, “মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রা.) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রিয় ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদের ব্যপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণ ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহ্’র কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম।”
এমনকি খলীফারাও এই মূলনীতি মেনে চলতেন অক্ষরে অক্ষরে। খলীফা উমার ইবনুল খাত্তাবের ছেলে আবু শাহমা যখন মদ্যপানের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন তখন তিনি নিজেই সেই অপরাধের শাস্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন কারণ তিনি শংকা করেছিলেন যে অন্যরা শাস্তি প্রদানের দায়িত্ব নিলে তারা হয়তোবা খলিফার ভয়ে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে না। অপরদিকে খলীফা উমার ইবনে আবদুল আজিজ যখন ক্ষমতায় আরোহন করেন তখন তিনি উমাইয়া বংশের যারা সম্পদের মালিক হয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে তা কেড়ে নিয়ে বাইতুল মালে জমা দেন কারণ তিনি মনে করতেন যে উমাইয়ারা তাদের শাসন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এসকল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহ্’র জন্য সাক্ষীরূপে। যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়” [সূরাঃ আন-নিসা-১৩৫]
মো. হাফিজুর রহমান
“বইমেলায় ধাওয়া খেলেন মুশতাক-তিশা!”
খবরঃ
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ একই কলেজের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ইসলাম তিশাকে বিয়ে করে আলোচনায় আসেন। তাদের এই অসম প্রেম ও বিয়ে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই এবার বইমেলায় এসে ধাওয়া খেলেন এই দম্পতি।… (https://www.somoynews.tv/news/2024-02-10/OUM7L8Wy)
মন্তব্যঃ
মোশতাক-তিশার আলোচিত বিয়ের ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত হয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে জাতি দেখিয়ে দিল আমরা কতটুকু দ্বিধাগ্রস্ত ও বিভক্ত। বাংলাদেশে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা ব্যক্তি জীবনে কিছু ইসলামী আবেগকে স্বীকৃতি দিলেও সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পুরোপুরি পৃথক রেখেছে। এখানে রাষ্ট্রীয় আইনসমূহ তৈরি করে মানুষ এবং এক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার অধিকারকে সমুন্নত রাখা। আলোচিত ঘটনাটিতে দেখা যায় তিশা ও মোশতাক দম্পতি তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার দোহাই দিয়ে শুরুতে প্রেমের সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। আবার সমাজে যেহেতু বিয়ে না করে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে ইসলাম থেকে আসা নেগেটিভ ইমোশন রয়েছে, সেহেতু তারা বিয়ে করেছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার ফল হিসেবে বয়সের অধিক পার্থক্যের বিয়েকে অনেকে মেনে নিতে পারছে না। একদিকে মোশতাক-তিশা দম্পতি সমাজে প্রচলিত ‘ভাইরাল হওয়ার নেশা’র ট্র্যান্ড অনুসরণ করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বইমেলায় বই বের করে পর্যন্ত তাদের ব্যক্তিগত জীবনকে জনসমক্ষে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে ইসলাম থেকে আসা কন্যা সন্তানকে দেখেশুনে সুপাত্রে পাত্রস্থ করার ইসলামী সংস্কৃতি সমাজে চালু থাকায়, এটি করতে না পেরে তিশার অভিভাবকগণ নিজেদেরকে মর্যাদাহীন বোধ করছেন। তারা সোশ্যাল মিডিয়া, মিডিয়া, থানা, কোর্টসহ বিভিন্ন জায়গায় এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বিভিন্ন কর্মকান্ড করছেন। সুতরাং, একদিকে সমাজে প্রচলিত ইসলামী আবেগ, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চার দৃষ্টিভঙ্গী, আমরা উভয় নৌকায় পা দিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ও বিভক্ত হয়ে পড়েছি।
এসমস্যার মূল কারণ হলো, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ইসলামকে নিয়েছি, আবার ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক পশ্চিমা সংস্কৃতিকে অন্ধভাবে ধার করে নিয়েছি, যা পশ্চিমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাস হতে এসেছে। আমরা জাতি হিসেবে একটি নৌকায় উঠতে হবে, তবেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এগুতে পারবো। বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আক্বীদা আমাদেরকে জানিয়েছে মানুষ স্বাধীন নয়, সে আল্লাহ্’র গোলাম। তার সমস্ত কাজ-কর্ম আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জনকে ঘীরে আবর্তিত হতে হবে। এবং এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রের আইন-কানুন, রীতি-নীতির একমাত্র উৎস হতে হবে আল্লাহ্।
ইসলামী আক্বীদা ও এর ব্যবস্থাসমূহ আল্লাহ্ প্রদত্ত, তাই এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীসমূহ ও আবেগ একই থাকবে। যেমন, আলোচ্য ঘটনাটির ক্ষেত্রে বলা যায় সমাজে ইসলামী ব্যবস্থা বাস্তবায়িত থাকলে, পিতা-মাতা সুপাত্র দেখে বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে তাদের মধ্যকার শঙ্কা কাটাতে পারতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “কোন বিবাহ হবে না, ওয়ালীর (অভিভাবক) অনুমুতি ছাড়া” [ইবনে হিব্বান এবং আল-হাকিম কর্তৃক বর্ণিত]। পিতা-মাতা সন্তানের হকের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী স্নেহশীল ও যত্নবান,এবং কল্যানের ব্যাপারে অবগত। এজন্য তারা নিজেদের স্নেহশীলতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সবচেয়ে ভালো পাত্র/পাত্রি নির্বাচন করবে। আবার কোন অভিভাবক তাদের কন্যাকে জোরপূর্বক তার অমতে কোন পাত্রস্থও করতে পারতো না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “বিধবার বিয়ে তার পরামর্শ ছাড়া এবং কুমারী মেয়ের বিয়ে তার অনুমতি ছাড়া করানো যাবে না” [বুখারী ৫১৩৬]। সকল অহেতুক দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি নিরসন করে মানুষে মানুষে ঐক্য ও সমাজে প্রশান্তি স্থাপনে ইসলামী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম