Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১১৫ তম সংখ্যা । ২৪ মার্চ, ২০২৪



এই সংখ্যায় থাকছে :

“এমভি আবদুল্লাহর পাশে ইইউ যুদ্ধজাহাজ”

“ঢাবিতে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা”

“সোমালিয়ার দস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি”

“মোটরসাইকেলসহ সব যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে, আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন”

“ইফতার পার্টি না করে সেই টাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর”

“সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নবীন কর্মচারীরা”

“শিল্পীরাতো একটু অভিমানী হয়, অনেক কিছু নিয়ে হয়তো অভিমান ছিল”

“চুমুকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে!”




“এমভি আবদুল্লাহর পাশে ইইউ যুদ্ধজাহাজ”

খবরঃ

সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেভির একটি যুদ্ধজাহাজ। জিম্মি জাহাজটি ঘিরে ইইউ নেভির একটি হেলিকপ্টারকেও চক্কর দিকে দেখা গেছে। সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যু দমনে ‘অপারেশন আটলান্টা’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইইউর নেভাল ফোর্স। তাদের সামাজিক মাধ্যম এক্স বা টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও থেকে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের দুই সদস্য এমভি আবদুল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছে। ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধজাহাজটি এমভি আবদুল্লাহর খুব কাছাকাছি রয়েছে। (https://www.bd-pratidin.com/first-page/2024/03/23/978466)

মন্তব্যঃ

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও এর নাবিকদেরকে উদ্ধারে কোন অগ্রগতি না হলেও এরই মধ্যে এর সাথে ইইউ ও ভারতীয় নেভিকে জড়িয়ে বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, ইউরোপ থেকে নৌপথে ৪,৬০০ নটিকেল মাইল বা প্রায় ৮,৫০০ কিলোমিটার দূরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী কিংবা ভারতীয় উপকূল থেকে ২,৩০০ নটিকেল মাইল বা প্রায় ৪,২৫০ কিলোমিটার দূরে ভারতের নৌবাহিনী কী করছে! এডেন উপসাগরের মত একটি মুসলিম জলসীমায় তাদের অপারেশন পরিচালনার কী যৌক্তিকতা রয়েছে? অপারেশন পরিচালনা দূরে থাক, কোন অধিকার বলে তারা মুসলিম জলসীমায় প্রবেশ করছে! ভূমধ্যসাগর-সুয়েজ খাল-লোহিত সাগর-আরব সাগর নৌরুটের এডেন উপসাগর বা সোমালিয়া উপকূল কেনইবা জলদস্যুতার জন্য এত আলোচিত? এই সবগুলো প্রশ্নের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে।

এডেন উপসাগর হল পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম নৌরুটের একটি নার্ভ পয়েন্ট, যার একপাশে মুসলিম ভূখন্ড ইয়েমেন এবং আরেকপাশে মুসলিম ভূখন্ড সোমালিয়া অবস্থিত এবং সোমালিয়া উপকূলের নিকটবর্তী সমুদ্র হল সামুদ্রিক মত্সসম্পদে ভরপূর একটি অঞ্চল, কারণ সোমালিয়ার মত্সজীবীদের মাছ শিকারে কখনোই আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া লাগেনি। তবে, তাদের হাতে প্রযুক্তি না থাকলেও তারা মাছ শিকার করে ভালোই চলছিল। কিন্তু এই মত্স সম্পদে শকুনের চোখ পরে ইউরোপের  উপনিবেশিক দেশগুলোর, বিশেষ করে ফ্রান্স, ইতালির। ফলে, আধুনিক প্রযুক্তির বিশাল বিশাল ফিশিং-জাহাজ নিয়ে সোমালি জলসীমায় এসে বিশেষ করে টুনা ও উন্নতমানের লবস্টার জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যেতে থাকে ও সোমালি মত্সজীবিদের জাল নষ্ট করা সহ নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। আর দেশটির ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে আমেরিকা সেখানে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার খেলায় জড়ানোর কারণে দেশটির রাজনেতিক ও সামরিক কাঠামো ইতিমধ্যেই ভেঙ্গে পড়ায় এই ইউরোপীয় আগ্রাসন মোকাবেলায় কোন রাষ্ট্রীয় প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সোমালি মুসলিমরা। ফলে, মত্সজীবীরা নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে এই মাছ ডাকাতি প্রতিরোধ করার জন্য ইউরোপিয় ফিশিং-জাহাজ আক্রমন, বিতারণ ও জিম্মি করা শুরু করে; যা কালক্রমে পন্যবাহী জাহাজ জিম্মি করার দিকে গড়ায়। প্রায় ৫০-৬০ বছর ধরে এই ফিশিং-জাহাজগুলো ইউরোপ থেকে আসার সময় জাহাজ ভর্তি করে তাদের দেশের হাসপাতালগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ ও পারমানবিক বর্জ্য নিয়ে এসে সোমালি জলসীমায় নিক্ষেপ (dumping) করে আসছে। ফলে, কয়েক প্রজন্ম ধরে সোমালিদের মধ্যে ক্যান্সারসহ নানা প্রাণঘাতি রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের শারিরিক গড়নেও এই রেডিয়েশনের প্রভাব স্পষ্ট। যার কারণে, যাদেরকে সারাবিশ্বের মিডিয়া জলদস্যু নামে প্র্রচার করছে তারা প্রতিরোধযোদ্ধা হিসেবে সোমালিয়ার সাধারণ জনগনের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে আসছে। এই মুসলিম জলসীমায় ইইউ নেভির যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের মূল উদ্দেশ্য হল ইউরোপের ফিশিং-জাহাজগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া যেন তারা নির্বিঘ্নে পারমানবিক বর্জ্য ডাম্পিং করতে পারে এবং মাছ ধরে নিয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি এই পথে চলাচলকারী তাদের পন্যবাহী জাহাজগুলোকে এসকর্ট করে নিয়ে যেতে পারে।

আর, ভারতীয় উপকুল থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতীয় নেভির জাহাজ প্রেরণের মূলে রয়েছে আমেরিকার ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। আমেরিকা তার আইপিএস-এর অংশ হিসেবে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতকে মোড়লের ভূমিকায় প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং এই মুশরিক রাষ্ট্রটিকে চীনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এর অংশ হিসেবে আমেরিকা ২০০৮ সালে জাতিসংঙ্ঘের মাধ্যমে রেজুলেশন পাশ করিয়ে ভারতীয় নেভিকে এডেন উপসাগরে প্রবেশ, অবস্থান ও এর তীরবর্তী দেশগুলোর জলসীমায় অভিযান পরিচালনার অধিকার (!) প্রদান করে। তখন থেকেই ভারতীয় নেভি সোমালিয়া ও ইয়েমেন উপকুলে অনধিকার প্রবেশ ও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে; যার প্রতিউত্তরে নিজেদের জ্বালানি সরবরাহ রুট নিরাপদ রাখার আজুহাতে চীন ২০১৭ সালে এই অঞ্চলে (জিবুতিতে) একটি সামরিক ঘাঁটি চালু করে ও চীনা যুদ্ধজাহাজের আনাগোনা বাড়িয়ে দেয়। মূল কথা হল, সোমালিদের এই জলদস্যুতার জন্য পশ্চিমাদের উপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী কর্মকান্ড প্রত্যক্ষভাবে দায়ী এবং এই জলদস্যুতাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে তারা বর্তমানে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত। এমনকি সোমালিয়ান উপকুল থেকে ৬০০-৭০০ নটিকেল মাইল দূর দিয়ে জলদস্যুদের নাগালের অনেক বাইরে দিয়ে ‘নিরাপদ রুটে’ গন্তব্যের দিকে চলা এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি হওয়ার পিছনেও যে এই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর কোন কূটচাল নেই তাও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বাস্তবতা হল এডেন উপসাগর হল একটি মুসলিম জলসীমা এবং তা উম্মাহর একটি অন্যতম অর্থনৈতিক ও অতি গুরত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদ (সামরিক ও ভূরাজনৈতিক)। 

ইতিপূর্বে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর যোগসূত্রটি হল মুসলিমদের সুরক্ষা ঢাল খিলাফত ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। খিলাফত ব্যবস্থার অবর্তমানে নিকৃষ্ট চোরের দল আমাদের জলসীমায় অনধিকার প্রবেশ করছে, জুলুম করছে এবং ‘চোরের মায়েরা’ আজ ‘বড় গলায়’ বুলি আওড়াচ্ছে, হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। খিলাফতের আবির্ভাবের মাধ্যমে খুব দ্রুতই মূল অপরাধীদের দৌড় থেমে যাবে, ইনশা’আল্লাহ্‌। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হল ঢালস্বরূপ, যার পেছনে থেকে মুসলিমরা যুদ্ধ করে ও নিজেদের (জীবন, সম্পদ, সম্মান) রক্ষা করে। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।

    -    রিসাত আহমেদ




“ঢাবিতে রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা”

খবরঃ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) রমজানের আলোচনা সম্পর্কিত অনুষ্ঠান আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ সম্পর্কিত কোনো অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিতে হলের প্রভোস্ট, অনুষদের ডিন ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের চিঠি দিয়েছে প্রক্টর অফিস। বুধবার (২০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।… এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ‘প্রোডাক্টিভ রমাদ্বান’ শিরোনামে রমজানবিষয়ক আলোচনার আয়োজন করে। সেখানে হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হামলায় অন্তত ৫ জন গুরুতর আহত হয়। (ittefaq.com.bd/681554/ঢাবিতে-রমজানের-অনুষ্ঠান-আয়োজনে-নিষেধাজ্ঞা)

মন্তব্যঃ

দেশের অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যলয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন রমজানের মত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দিতে হলো? যদিও সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনো রমজানে শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। কতিপয় রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে, যার ফলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে প্রক্টর অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিধিনিষেধ আরোপের প্রেক্ষাপট হিসেবে কিছু সংগঠন কর্তৃক সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে। এই রকম দুইটি ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার পিছনের প্রকৃত কারণ বোঝা যায়। প্রথম ঘটনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মসজিদে আইন বিভাগের কতিপয় ছাত্রদের রমজান উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান বহিরাগত দুর্বৃত্ত ছাত্রলীগ হামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত দুর্বৃত্ত ছাত্রলীগ হামলা থেকে সাধারণ ছাত্রদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এই বিষয়ে কোন লজ্জাবোধ করে নাই বরং তারা রমজানের অনুষ্ঠান আয়োজনের নিষেধাজ্ঞা প্রদানের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার ছাত্রদেরই আবার অপরাধী হিসাবে প্রমাণ করতে চাচ্ছে। কি লজ্জা! দ্বিতীয় ঘটনা, কতিপয় শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে কোরআন তিলওয়াতের অনুষ্ঠান আয়োজন করে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিহ্নিত কিছু সেকলুার গোষ্ঠীরে আতেঁ ঘা লাগে। তারা কোনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে কোরআন তিলওয়াতের অনুষ্ঠান মেনে নিতে পারছে না বরং তারা মুসলিমদের ভূমিতে প্রকাশ্যে কোরআন তিলওয়াতের অনুষ্ঠানকে অপরাধ হিসাবে সাব্যস্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই সেকুলার বুদ্ধিজীবিরা এতটাই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেউলিয়া যে তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে কোন বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি দিতে পারছে না। তাই, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগই হচ্ছে তাদের খায়েস পূরণের একমাত্র হাতিয়ার। যদি তারা সত্যিকার অর্থে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিকভাবে শক্তিশালী হতো তারা ইসলামের আলোচনাকেও অবারিতভাবে চলতে দিত এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার দাবি করতে। যেটা সত্য সেটাই প্রতিষ্ঠিত হতো। যেহেতু, পথভ্রষ্ট এই সেক্যুলাররা তাদের আদর্শের অসাড়তার বিষয়ে অবগত। তাই তারা সবসময় বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে তাদের ভ্রান্ত চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। “আর বলুন, হক এসেছে ও বাতিল বিলুপ্ত হয়েছে; নিশ্চয় বাতিল বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল”  (বনী-ইসরাঈল, আয়াতঃ ৮১)। 

আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-এর নব্যুয়তের প্রথম দিকে মক্কার কুরাইশরাও ইসলাম প্রচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একই ধরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তারা মক্কায় আগত হজ্ব যাত্রীদের রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর মুখে আল্লাহ্‌’র বাণী শুনতে নিষেধ করতো। কিন্তু, তাদের সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি। সত্য দ্বীন ইসলাম মদিনাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু, যারা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নব্যুয়তের মিশনকে বাধাগ্রস্ত করেছিল তারাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর আল্লাহ্‌ তাঁর কাজ সম্পাদনে অপ্রতিহত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ২১)। 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম




“সোমালিয়ার দস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি”

খবরঃ

সোমালিয়ার দস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে এ জাহাজটি আক্রান্ত হয়। সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রে অন্তত ১০০ দস্যু জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ওই জাহাজে কর্মরত ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, সমুদ্রগামী এ জাহাজটি কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। পথিমধ্যে গালফ অব ইডেনে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় দস্যুরা। (www.jugantor.com/national/others/783965/সোমালিয়ার-দস্যুদের-কবলে-বাংলাদেশি-জাহাজ-২৩-নাবিক-জিম্মি)

মন্তব্যঃ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের কর্তৃক তাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বিভিন্ন বিদেশী জাহাজ অপহরণ ও পরবর্তীতে মুক্তিপণ আদায়ের এই কাজের পিছনে রয়েছে এক দীর্ঘ উপনিবেশিক ইতিহাস। মূলত সোমালিয়া হর্ন অফ আফ্রিকার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ। উনিশ শতকের শেষের দিকে ইটালি ও বৃটেন সোমালিয়াতে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয় এবং ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে এদেশকে দারিদ্রপীড়িত দেশে রুপান্তরিত করে। পরবর্তীতে গত শতাব্দীতে সোমালিয়রা নিজেদের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে পেলেও বিভিন্ন গোত্রে উপগোত্রে বিভক্ত হয়ে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। যেহেতু দেশটির জলসীমার নিরাপত্তায় কোন কোস্টগার্ড বা কার্যকর কোন বাহিনী ছিলনা, এই সুযোগে ইউরোপীয় জাহাজসমূহ বিপুল মৎস সম্পদ চুরি করে নিয়ে যেত। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের হাসপাতাল ও শিল্প কারখানার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বিভিন্ন জাহাজের মাধ্যমে সোমালিয়ার উপকুলে ডাম্প করতো, যার ফলে সোমালীয়রা মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। ফলে, স্বাভাবিকভাবে মৎস্যজীবী ও উপকূলীয়রা নিজেরা এসকল বিদেশী জাহাজকে বিতাড়নের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেয়, যা পরবর্তীতে বাণিজ্য জাহাজ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের দিকে মোড় নেয় কারণ তারা দেখল মৎস শিকারের চেয়ে এটি বরং অধিক লাভজনক। 

সোমালিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান ভূমধ্যসাগর থেকে ভারত মহাসাগর রুটের কৌশলগত স্থানে অবস্থিত। ফলে, সোমালিয়ার রাজনীতিতে পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বাণিজ্য পথেই পৃথিবীর ১৫ শতাংশ সামুদ্রিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালে অ্যামেরিকার ইন্ধনে সোমালিয়াতে ইথিওপিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ সোমালিয়াকে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের রণক্ষেত্রে পরিণত করে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয়দের নিরাপদ ও কমখরুচে বাণিজ্যিক রুট লোহিত সাগরে হুথিদের আক্রমনের কারণে ইউরোপীয় বাহিনীগুলোকে সেইদিকে বেশি নজর দিতে হয়েছে। ফলে সোমালিয়া উপকূলে নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে জলদস্যু কর্তৃক জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সের নির্ভরশীলতা বাড়াবে। ইতিমধ্যে আমরা ছিনতাইকৃত জাহাজ এমভি রুয়েন উদ্ধারে ভারতীয় বাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা এবং মোদী কর্তৃক ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তার অঙ্গীকারে যার কিছু প্রতিফলন আমরা দেখতে পেলাম। পশ্চিমারা সমুদ্র রুটের নিরাপত্তার মুলাকে তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে যুক্ত হওয়া করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবে তারা সমুদ্র রুটের নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেয়ে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে বেশী গুরুত্ব দেয়। উল্লেখ্য যে, এপথে চলতে গিয়ে গত ২৪ বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ জাহাজ অপহৃত হয়েছে। তাদের দুর্বলতার স্বীকারোক্তি পাওয়া যায় ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সিকিউরিটি এন্ড ডিফেন্স এজেন্ডার প্রাক্তন পরিচালক গিলস মেরিট-এর বক্তব্যে, ‘এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে যে আমরা এমন এয়ারক্রাফট চালাতে পারি যা চলমান যেকোনও কিছু চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু স্পষ্টতই আমরা ছোট নৌকার মধ্যে মেশিনগান হাতে কিছু তরুণকে দেখতে পাই না।’

যতদিন খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে না আনবো ততদিন হয় আমরা পশ্চিমা শক্তিগুলোর স্বার্থের দ্বন্দ্বের বলি হবো, না হয় তাদের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে থাকবো। সমুদ্র অর্থনীতি এবং সমুদ্রপথের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসলামের রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যার আলোকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে আচরণ করা হবে। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামের ভিত্তিতে সোমালিয়াসহ হর্ন অফ আফ্রিকার দেশগুলোকে একত্রিত করবে এবং শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে এই অঞ্চলসহ আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখবে। ইসলাম অনুযায়ী, সমুদ্র একটি গণসম্পত্তি সেহেতু কাফিররাও এমনকি কোন জেলে যদি যুদ্ধরত রাষ্ট্রেরও হয় তাহলেও সে তা থেকে মৎস আহরণ করতে পারবে তবে খনিজ সম্পদ বাদে। বাণিজ্যিক জাহাজের ক্ষেত্রে:- ১. যদি তা খিলাফত রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের হয়, হোক সে মুসলিম কিংবা অমুসলিম, তবে তাকে ব্যবসা করার জন্য সর্ব প্রকারের সুবিধা সরবরাহ করতে হবে এবং তাদের উপর কোন প্রকার ট্যাক্স আরোপ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম, ২. যদি কোন বানিজ্য জাহাজ এমন রাষ্ট্রের হয় যাদের সাথে খিলাফত রাষ্ট্রের চুক্তি রয়েছে তাহলে তার উপর সেই চুক্তি অনুযায়ী ট্যাক্স ধার্য করা কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে, ৩. যদি জাহাজটি এমন কোন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের হয় যাদের সাথে খিলাফত রাষ্ট্রের তখন কোন যুদ্ধাবস্থা নেই তবে তাদের বিরুদ্ধে সবরকমের পূর্বসতর্কতা গ্রহণ করা হবে, তাদের জাহাজ সমূহকে সার্চ করা হবে যাতে তারা এমন কিছু বহন করতে না পারে যা তাদেরকে মিলিটারি শক্তি প্রদান করে, এবং তাদের উপর ট্যাক্স ধার্য করা হবে যেমন তারা আমাদের উপর ধার্য করে, ৪. বানিজ্য জাহাজ যা শত্রুরাষ্ট্রের যেমন অ্যামেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী, ভারত ইত্যাদি, তাদের জাহাজকে আটক করা হবে, তাদের মালামাল জব্দ করা হবে এবং তাদেরকে ক্রুদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে বন্দী করা হবে। 

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“মোটরসাইকেলসহ সব যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে, আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন”

খবরঃ 

মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাকসহ সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের গাড়ি বা যানবাহনের জন্য বিমা করা আবার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অবশ্য আগেও তা বাধ্যতামূলক ছিল। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে বিধানটি তুলে দিয়ে ঐচ্ছিক করা হয়। সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন, ২০২৪-এর খসড়ায় সব যানবাহনের বীমা করার বিধান রাখা হয়েছে। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন, ২০২৪-এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।   (https://www.prothomalo.com/business/7u9n82ap25)

মন্তব্যঃ 

কেন আবারও যানবাহনের বীমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে? যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রী বা যানবাহনের মালিকরা কি বীমা করার কোন দাবী জানিয়েছিল? না। বরং, যানবাহনের বীমা বাধ্যতামূলক করার জন্য দাবি আসছিল বীমা ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকে। যদিও, প্রতারণামূলক ব্যবসায়িক মডেলের কারণে বীমার উপর জনগণের আস্থা শূন্যের কোঠায়। বীমা কোম্পানীগুলো চটকদার অফারের মাধ্যমে বীমার পলিসি বিক্রয় করলেও বীমা দাবি মেটানোর সময় টালবাহানার আশ্রয় নেয়। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বাংলাদেশে বীমার ওপর এত অনাস্থা কেন, এ খাতের ভবিষ্যৎ কেমন, বিবিসি বাংলা, মার্চ ৫, ২০২২। মেটলাইফ বাংলাদেশের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে আসে, দেশের বীমা খাতে ক্রমবর্ধমান হারে ছোট হচ্ছে ২০০৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে জীবনবীমার গ্রাহক দশমিক ৪০ শতাংশ থাকলেও ২০২২ সালে সেটি আরও কমে দশমিক ২২ শতাংশে নেমে যায়। এর প্রেক্ষিতে বীমা ব্যবসায়ীরা চিন্তিত হয়ে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ব্যবহার করে জনগণকে বীমা পলিসি কিনতে বাধ্য করার রাস্তা খুঁজছিলেন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর চাচা বীমা ব্যবসায়িদের সংগঠনের সভাপতি শেখ কবির বিভিন্ন সময় জনসাধারণের উপর বীমাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বীমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানালেন শেখ কবির হোসেন, https://insurancenewsbd.com/article/news/4909, মে ৮, ২০২৩। সরকার বীমাকে জনগণের বিষয়াদি দেখাশুনার দায়িত্ব এড়ানোর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করার উছিলা হিসাবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী যখনই সুযোগ পাচ্ছে বীমাকে প্রতারণামূলক বীমাকে প্রচার করছে। সাম্প্রতি বেইলি রোডের ভায়বহ অগ্নি দুর্ঘটনার পরে  জনগণের বীমার পলিসি ক্রয়ের প্রতি অনীহাকে হেয় করে সে বলে, ”দেখা যাবে এখানে কোনো বীমাও করা ছিল না। কাজেই বিনিময়ে কিছু পাবেও না।” যদিও শাসক হিসাবে তার দায়িত্ব ছিল জনগণের জানমাল নিরাপদ রাখার উপযোগী সড়ক নির্মাণ, অগ্নি ঝুঁকি হ্রাস হয় এরকম বিল্ডিং নির্মাণ এবং জনগণ দুর্ঘটনায় পতিত হলে তাদের উদ্ধার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা। কিন্তু, সে শাসক হিসাবে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের দায়িত্ব পালনতো করছেই না বরং, জনগণের দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে মুনাফা করার অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। এটা বিশ্বাসঘাতকতা এবং জনগণের উপর একটি বড় যুলুম।

অন্যদিকে, ইসলামে শাসন বা জনগণের বিষয়াদি দেখাশুনা একটি আমানত যার জন্য শাসককে দুনিয়া এবং আখিরাতে জবাবদিহিতা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ইমারত বা শাসনকার্য সম্পর্কে বলেছেন, “নিশ্চয়ই তা আমানত এবং নিশ্চয়ই তা কিয়ামতের দিন অপমান ও আফসোসের কারণ হবে। তবে তার জন্য নয়, যে উহার হক বুঝে উহাকে গ্রহণ করবে এবং ওই সম্পর্কিত তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে” (মুসলিম, হাদিস নং: ৪৬১৩)। তাই খলিফারা উম্মাহর দুর্দশাকে নিয়ে পুঁজিপতিদের ব্যবসা করার সুযোগ দিবে না বরং কিভাবে জনগণের দুর্দশাকে লাগব করা যায় তার বিষয়ে আল্লাহ্‌’র ভয়ে তটস্থ থাকত এবং থাকবে। এই বিষয়ে খলিফা ওমর (রাঃ) একটি বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, “যদি ফোরাত নদীর কূলে একটি ভেড়ার বাচ্চাও হারানো অবস্থায় মারা যায়, তাতে আমি ভীত হই যে, সেজন্য আমাকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হ’তে হবে”। (বায়হাক্বী) 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম




“ইফতার পার্টি না করে সেই টাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর”

খবরঃ

পবিত্র রমজান মাসে ইফতার পার্টি না করে সাধ্যমতো সেই টাকা নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।... মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ একটি আবেদন জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি ইফতার পার্টি না করার জন্য একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যারা যারা আগ্রহী বা যাদের সাধ্য আছে, তারা যেন তাদের সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়ান। ইফতার পার্টির যে টাকা সেই টাকা নিয়ে যেন মানুষের পাশে দাঁড়ান। (www.prothomalo.com/bangladesh/fejt3g4g7c

মন্তব্যঃ

প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান যদি কৃচ্ছতা সাধনের জন্য হয় তাহলে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কতিপয় দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানীকে কেন বসিয়ে বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে, কেন ১০০কোটি টাকার প্রকল্প ৩০০ কোটি লাগছে, কেন একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থে ৬টি ব্যাংক খালি করে দেয়া হচ্ছে, পাচার হওয়া লক্ষ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না? ইফতার পার্টির টাকা দিয়ে মানুষের পাশে দাড়ানোর তার এই আহ্বান যদি সমাজে বিত্তশালী বা সামর্থ্যবান জন্য হয়ে থাকে তবে সাধারণ ছাত্রদের অতিসাধারণ ইফতার অনুষ্ঠানে কিংবা কুরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠানে কেন সরকারের পেটুয়া বাহিনী হামলা করলো? মূলতঃ সামাজিকভাবে একত্র হওয়ার অন্যতম একটি ইসলামি সংস্কৃতি ইফতার মাহফিলকে নিষিদ্ধ করে সরকার তার ইসলাম-ভীতি ও ইসলাম-বিরোধী অবস্থানকে আবারও স্পষ্ট করেছে। একাজে অতীতের মতই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতার পাশাপাশি স্যেকুলার মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি ও তার দলীয় অংগসংগঠনসমূহকে ব্যবহার করছে। পূর্বেও আমরা দেখেছি তারা কোভিড ভাইরাস ছড়ানোর অজুহাতকে ব্যবহার করে ইফতার, ওয়াজ মাহফিল এমনকি মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়কেও সীমিত করে ফেলেছিল। শেখ হাসিনার মত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য স্যেকুলার শাসকদের বাস্তবতাও একইরকম। সৌদি শাসকরাও যেমন সিনেমা হল, কনসার্ট, ফুটবল লীগ ইত্যাদির সমাবেশকে দিনে দিনে বড় করার চেষ্টা করছে, অথচ মসজিদুল হারামাইনসহ বিভিন্ন মসজিদে ইফতার বিতরণকে সীমাবদ্ধ করছে। হাসিনা কিংবা সালমান ইসলাম-বিদ্বেষী এই শাসকরা ভালো করেই জানে যে ইসলাম তাদের শাসন ও শাসন ব্যবস্থা উভয়ের জন্য হুমকি। তাই ইসলাম ও ইসলামকেন্দ্রীক মানুষের যেকোন জমায়েত তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে। এই ভীতি থেকেই তারা এসব প্রতারণামূলক কাজ করে। 

এই স্যেকুলার শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে তাই সবকিছুতেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পায়। তারা ইফতার পার্টি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য নয়, বরং তাদের রাজনৈতিক হীন স্বার্থে আয়োজন করে। বিদেশী কূটনৈতিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবি, রাজনৈতিক দল, আলেম-ওলামাদের সাথে আওয়ামী-বিএনপির ইফতার পার্টি, এমনকি হোয়াইট হাউজের ইফতার পার্টির আয়োজন সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। ইসলাম-ভীতি ও ইসলাম-বিদ্বেষ তাদেরকে এমন অন্ধ করেছে যে তারা অন্য মুসলিমদেরকেও একই চশমায় দেখে। ইসলাম অনুযায়ী মানুষকে ইফতার খাওয়ানো অপচয় নয় বরং অনেক বেশী উৎসাহিত ও উত্তম আমল। নিশ্চিতভাবে এসব ব্যয় অত্যন্ত উত্তম ব্যয় আর হারামের পছনে ব্যয়ই হচ্ছে অপচয়। 

ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী ইসলামকে বহুপূর্বেই সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে নামায-রোজার মত ব্যক্তিগত কিছু রীতি-নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে। তারা এখন এগুলোর দিকেও চোখ দিয়েছে। কাফির-মুশরিকদের প্রতিনিধি হিসেবে তারা ইসলামের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলতে চায়। এদের কবল থেকে রক্ষা পেতে আমাদের ঈমান-আমলকে রক্ষার একমাত্র ঢাল খিলাফত ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত যেকোন আহকাম, হোক তা আক্বীদা সংক্রান্ত, কিংবা ব্যক্তিগত ইবাদত-আখলাক কিংবা সামাজিক-অর্থনীতি সংক্রান্ত, এগুলোর কোনটাই ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়া বাস্তবায়ন এবং সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হচ্ছে ঢাল, যার পেছনে মুসলিম যুদ্ধ করে এবং নিজেদের রক্ষা করে” (সহীহ্‌ বুখারী/মুসলিম) 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নবীন কর্মচারীরা”

খবরঃ

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত ও সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী ১ জুলাই বা তার পরে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সুবিধার আওতায় আসবেন। সরকারের অর্থমন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। …… উল্লেখ্য, আইনের ১৪(২) এ বলা হয়েছে, ‘সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি অথবা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত, অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের চাঁদার অংশ কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। তবে শর্ত থাকে যে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনও আইনে যা কিছুই থাক না কেন, সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত, সরকারি ও আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতা-বহির্ভূত থাকবে।’ (www.banglatribune.com/national/840043)

মন্তব্যঃ

‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ এর প্রস্তাবনায় বলা হচ্ছে, “যেহেতু দেশের সর্বস্তরের জনগণের বিশেষ করিয়া গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করা প্রয়োজন এবং যেহেতু ভবিষ্যতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাইবে” সেহেতু এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এই উদ্যোগকে জনকল্যানমূলক মনে হতে পারে। কিন্তু এখানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার যে দুর্বলতা তা ঢেকে রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেমন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রাষ্ট্র কর্তৃক নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের দায়িত্বভার গ্রহণ না করা। ফলে, রাষ্ট্রের একজন নাগরিক যখন কোন কারণে অর্থ উপার্জনে অক্ষম হয়ে যায় কিংবা বৃদ্ধাবস্থায় উপার্জনে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার দেখভালের দায়িত্ব নিতে রাষ্ট্রকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এর পাশাপাশি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং স্বার্থকেন্দ্রিক মানসিকতার প্রচার-প্রসার করে, যার কারণে বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার দায়িত্ব গ্রহণকে বোঝা হিসেবে মনে করা হয়। ফলে, পশ্চিমা দেশে যেমন বয়স্ক লোকজন বৃদ্ধাশ্রম সমূহে আশ্রয় লাভ করে, একইভাবে বাংলাদেশেও এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই হচ্ছে,  পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের স্বরূপ, এটি সমস্যা তৈরি করে, অতঃপর সেই সমস্যাকে পুঁজি করে জনগণের অর্থলুটের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়। তারা অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা করেনা, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনা, অতঃপর জনগণের নিরাপত্তাহীনতাকে পুঁজি করে জনগণকে বীমা করতে বাধ্য করে যাতে সেই টাকা লুট করতে পারে। 

পক্ষান্তরে, ইসলামী ব্যবস্থায় প্রতিটি নাগরিকদের ব্যাপারেই রাষ্ট্রের রয়েছে দায়িত্বের চিন্তা। ইসলামী ব্যবস্থায় শাসক তথা খলিফার উপর এটি ফরয দায়িত্ব যে, তিনি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করবেন। যেসকল কর্মক্ষম পুরুষ কিন্তু আর্থিকভাবে নিজের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম খলীফা তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিবেন যাতে তারা তাদের উপার্জন দ্বারা তাদের অধীনস্ত নারী, শিশু ও উপার্জনের দিক থেকে অক্ষম পুরুষদের ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এটিই একজন মানুষের গোনাহগার হওয়ার জন্য যথেষ্ট যে যারা তার অধীনস্ত সে তাদের চাহিদা পূরণে অবহেলা করে” [আবু দাউদ]; অর্থাৎ, এখানে স্বাভাবিকভাবেই বাবা কিংবা মা যারা নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম তাদের দায়িত্ব অবশ্যই তার ছেলে সন্তানদের উপর বর্তাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে? বল, ‘তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করবে, তা পিতা-মাতা, আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য।” [আল-বাকারা-২১৫]। যদি তারাও তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তবে তখন এর দায়িত্ব গ্রহণ করবে বায়তুল মাল অর্থাৎ রাষ্ট্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যদি কেউ মৃত্যুর সময় সম্পদ রেখে যায় তাহলে তা প্রাপ্য হবে তার উত্তরাধিকারীগন আর যদি কেউ ঋণ ও অধীনস্ত পোষ্য রেখে যায় তাহলে এর দায়িত্বভার আমার এবং আমি এর জন্য দায়িত্বশীল” [মুসলিম]। মদীনায় এক অন্ধ ইহুদী জিজিয়া দেবার জন্য ভিক্ষা করছিল। হযরত উমর (রা.) তাকে দেখতে পেয়ে বললেন যে, ‘এইসব মানুষের যৌবনকে কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় অবহেলা করা সুবিচার নয়। যাকাত গরীব ও অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য, অভাবগ্রস্ত বলতে এদেরকেও বুঝতে হবে।’ সুতরাং খিলাফত ব্যবস্থায় বয়স্ক ও অক্ষম নাগরিকগণকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের মত অবহেলিত অবস্থায় ফেলে রাখা হবে না। রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এদের দায়িত্ব গ্রহন করবে।

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“শিল্পীরাতো একটু অভিমানী হয়, অনেক কিছু নিয়ে হয়তো অভিমান ছিল”

খবরঃ

বেশ কিছুদিন ধরে সাদি মোহাম্মদ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন… কাজের স্বীকৃতি পাননি বলেও অভিমান ছিল সাদি মোহাম্মদের। এর আগেও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন… বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় শিল্পী সাদি মহম্মদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।…  (https://www.bbc.com/bengali/articles/c720qw18gqno)

মন্তব্যঃ

রবীন্দ্রদর্শনের তীর্থস্থান ভারতের শান্তি(?) নিকেতন যে শান্তি দিতে ব্যর্থ তা রবীন্দ্রদর্শনের এই সঙ্গীতগুরুর আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রতিফলিত। এই ব্যক্তি বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রদর্শন শিখতে। তাদের রবীন্দ্রদর্শন ধর্মকে গোড়ামী ও কুসংস্কার আখ্যা দিয়ে ধর্মবিহীন জীবনকে প্রগতিশীল আখ্যা দেয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত যে উপাসনার প্রবৃত্তি আছে, সেটা তো তারা বাদ দিতে পারে না! তখন তাদের উপাস্য কিংবা পথপ্রদর্শক হয়ে যায় রবীন্দ্রনাথ কিংবা লালনের মত কিছু সীমাবদ্ধ মানুষ, যা তাদেরকে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। এবং পাশাপাশি অর্থ, নাম, যশ কিংবা খ্যাতির মত আরও কিছু উপাস্যকে তাদের জীবনে জড়ো করে। এভাবে সেক্যুলারিজমের (ইসলামবিবর্জিত জীবন) বাংলা ভার্সন এই রবীন্দ্রদর্শন প্রগতিশীলতার নামে মানুষকে আইয়্যামে জাহেল্যিয়াতের মুর্তি তথা বস্তুর উপাসনার দিকে ধাবিত করে। 

মানুষ যখন বস্তুগত প্রাপ্তি দ্বারা তার জীবনকে মূল্যায়ন করে, তখন প্রাপ্তি কিংবা অপ্রাপ্তি-দুই ক্ষেত্রেই সে হতাশায় ভোগে। যখন সে তার চাহিদা মত সবকিছু পেয়ে যায় তখন তার মনে হয়, এরপর কি? তখন এই উত্তর না পেয়ে সে হতাশ হয়ে যায়, আবার যদি না পায়, তাহলেও সে হতাশ হয়ে যায়। তখন তাকে এসব হতাশা থেকে মুক্তি কখনোই তার মানব রচিত সেক্যুলার আকিদা কিংবা রবীন্দ্রদর্শন দিতে পারেনা। এই কারণে সাদি মোহাম্মদের মতো শিল্পীরা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরও রোল মডেলরা, যেমন বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীরা, নৃত্যশিল্পীরা বেশির ভাগই হতাশায় ভোগে, ড্রাগ নেয়, তারপর কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেছেন, “আর আমি ইচ্ছা করলে তাকে এই আয়াতসমূহের সাহায্যে উন্নত করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে এবং স্বীয় কামনা বাসনার (প্রবৃত্তির) অনুসরণ করতে থাকে। তার উদাহরণ একটি কুকুরের ন্যায়, ওকে যদি তুমি কষ্ট দাও তাহলে জিহবা বের করে হাঁপায়, আবার কষ্ট না দিলেও জিহবা বের করে হাঁপাতে থাকে। যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, এই উদাহরণ হল সেই সম্প্রদায়ের জন্য। তুমি কাহিনী বর্ণনা করে শোনাতে থাক, হয়তো তারা এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে” (সুরা আরাফঃ ১৭৬)।

অন্যদিকে ইসলাম মানুষকে সেকুলার আকিদা সহ সকল মানব রচিত আকিদা, দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা দর্শনের ফাঁদ থেকে মুক্তি দেয়। ইসলাম মানুষের সকল চিন্তা ও কাজের উদ্দেশ্য বানিয়েছে “আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) সন্তুষ্টি অর্জন করাকে’। আর বস্তুগত অর্জনকে বানিয়েছে মানুষের জীবন উপকরণ। এটি প্রাপ্তির কারণে সে আল্লাহ্‌’র শুকরিয়া আদায় করে আর অপ্রাপ্তি তাকে ধৈর্য্য ধারণের শিক্ষা দেয়। নাম, যশ, খ্যাতির জন্য নয়, বরং আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সে তার দায়িত্বসমূহ পালনের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকে, আর এসব প্রাপ্তিকে সে নিজের অর্জন হিসেবে না দেখে আল্লাহ্‌’র পক্ষ থেকে নিয়ামত হিসেবে দেখে এবং আল্লাহ্‌’র প্রশংসা করে। এভাবে মুমিনের আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ্‌’র রাসূল (সঃ) বলেছেন “মু’মিনের অবস্থা কতইনা চমৎকার! তার সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো জন্য এমনটি নয়। যদি সুখী হওয়ার মতো কিছু ঘটে তবে সে কৃতজ্ঞ হয়। আর এটা তার জন্য মঙ্গলজনক। আর যদি সে সমস্যা বা অভাব-অনটনে পড়ে তবে ধৈর্য ধরে এবং এটা তার জন্য উপকারী।” এভাবে প্রাপ্তিতে শুকর আদায় ও অপ্রাপ্তিতে ধৈর্য ধারণ করতে করতে মু’মিন প্রশান্ত আত্মা আল্লাহর হুকুমে একটা সময় তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার সান্নিধ্যে চলে যায়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “(নেককার লোককে বলা হবে) হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রব-এর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে এবং (তোমার রব-এর) সন্তুষ্টির পাত্র হয়ে। অতঃপর আমার (নেক) বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও। আর প্রবেশ কর আমার জান্নাতে”। (সুরা ফজরঃ ২৭-৩০)

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“চুমুকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে!”

খবরঃ 

আলোচনা সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের। সমকামিতার গল্প পাঠ্যপুস্তকে থাকায় তা ছিড়ে ফেলেন এক শিক্ষক। তারপর আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এবার সেখানে অনুষ্ঠিত গালা নাইটে চুম্বনের দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় উঠে। ...অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি এর পক্ষে এক পোস্টে জানান, “চুমু ভালোবাসার একটা আদুরে বহিঃপ্রকাশ। যেখানে সেখানে চুমু খেয়ে ফেলা উচিত...রিক্সা, বাস, ট্যাক্সি, ফুটপাত, রাজপথ, পার্ক, দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, ধর্মশালা, হাইকোর্ট, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে শুরু করে সবখানে চুমু খাওয়ার অধিকার থাকা উচিত এবং এটা নিয়ে কটু কথা বলাটা বরং অন্যায়।”...তবে এধরণের ঘটনার বিপক্ষে বেশিরভাগ মানুষ সরব হয়েছেন। তারা বলেন, “একটা মুসলিম প্রধান দেশে এ ধরণের ঘটনা মেনে নেওয়া কষ্টকর”। (https://www.youtube.com/watch?v=j6eyDJdJhqE)

মন্তব্যঃ 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের TARC-এর “গালা নাইট” প্রোগ্রামের এই দৃশ্য কোন বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। বরং এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা আমাদের মুসলিম তরুণদের চিন্তা-ভাবনা এবং কর্মকান্ডকে “পশ্চিমা করণ তথা স্যেকুলারাইজড করার” ক্যাম্পেইনের একটি প্রতিফলন। ঘটনাটির ফলে অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তার জন্ম নিচ্ছে তাদের ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের ব্যাপারে, যখন TARC (Training and research centre) কিংবা শরীফ শরিফার গল্পের নামে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভ্রান্ত সব কালচার অনুপ্রবেশ করানো হচ্ছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের উত্তম চরিত্রবান এবং জীবনের ব্যাপারে সঠিক উদ্দেশ্য দিয়ে গড়ে তোলার কথা ছিল সেখানে এই শিক্ষার কারিকুলামের মধ্যে সেক্স এডুকেশন, free to sex, Transgenderism, LGBTQ+, ফ্রি মিক্সিং কালকার প্রচার-প্রসার করে শিক্ষার্থীদের Hedonistic lifestyle এ অভ্যস্ত করানো হচ্ছে। এই পশ্চিমা সাংস্কৃতিক বিষ মূলত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দিন কে দিন আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কেননা, কোন বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গন রাষ্ট্রীয় মঞ্জুরী কমিশনের বহির্ভূত নয়। নর্থ সাউথের নারী বিষয়ক আলোচনায় ট্রান্সজেন্ডার হো চি মিন ইসলামকে বক্তা হিসেবে নিমন্ত্রণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি প্রোগ্রামে হামলা, খুলনায় মেডিক্যাল ছাত্রীর হিজাব খুলতে বাধ্য করা এবং ধর্ম নিয়ে কটূক্তি এসব কিছুই “বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন” এর অনুমোদিত ধর্মনিরপেক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশের অধীন। সরকার মূলত চায়, আমাদের সন্তানদের চিন্তা-চেতনা যেন পশ্চিমা কুফর সংস্কৃতির ছাঁচে গড়ে উঠে। যাতে তারা ইসলামের সামাজিক খোলস থেকে বের হয়ে পশ্চিমা কুফর সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ করে।  

ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী চায়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম “ধর্মনিরপেক্ষ” চিন্তা-চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে ১৯৬০ সালের পশ্চিমা “সেক্সুয়াল রেভ্যুলেশন” এর মত রেভ্যুলেশন ঘটিয়ে সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে নতুনভাবে সংঘায়িত করে। এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা যদি আমরা বর্তমান পশ্চিমা সমাজের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে বুঝতে পারব। বর্তমানে আমেরিকায় ৫০% এর বেশি শিশু বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে, ব্রিটেনের যার সংখ্যা ৫১% এর বেশি। ২০২২ সালের গ্যালাপ ইন. এর সূত্র মতে আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ৭.১% এর বেশি LGBTQI+। যারমধ্যে ৫% ই বর্তমান তরুণ জেনারেশন। আবার, ১৯৯৭-২০০৩ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা ২১% আমেরিকান তরুণই LGBTQI+। ঠিক এমন একটা সমাজ গড়ার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী আমাদের তরুণ-তরুণীদের ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা সংস্কৃতিতে দীক্ষিত করছে। এর মাধ্যমে তারা চায় আমরা যেন “আশরাফুল মাখলুকাত (শ্রেষ্ঠ জীব)” এবং “আহসানুল তাকয়ীম (সবচেয়ে সুন্দর গড়নের)” এর পরিবর্তে “আসফালা সাফিলীন (সর্বনিকৃষ্ট পর্যায়)”-এ পরিণত হই। 

এমতাবস্তায়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কুফর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে রক্ষায় অবশ্যই খুব দ্রুত ইসলামের আলোকে সমাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের অধীনে সমাজ “নিকৃষ্টতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করবে”। যা হবে, আমাদের জন্য নিশ্চিত ধ্বংসের কারণ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন বিশ্বাসী পুরুষ কিংবা বিশ্বাসী নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের অবাধ্য হলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে “-(সূরা-আহযাব:৩৬)। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম