Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১১৬ তম সংখ্যা । ২ এপ্রিল, ২০২৪
এই সংখ্যায় থাকছে :
“ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি বুয়েট শিক্ষার্থীদের”
“গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস”
“১৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি আছে মাত্র ২৮টিতে”
“ধার-দেনা করে খাবার কিনছেন দেশের ৪ কোটি মানুষ”
“পরিস্থিতি বিবেচনায় শিশুদের ভাগাভাগি করা হয়েছে: হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ”
“মুসলিম দেশগুলির জন্য অভিন্ন মুদ্রা: কি একটি কার্যকর বিকল্প?”
“ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আরজি বুয়েট শিক্ষার্থীদের”
খবরঃ
মন্তব্যঃ
বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক কৌশল বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “পাঁচ বছর আগে রাজনৈতিক পরিবেশে ভয়ের জায়গা ছিলো বুয়েট। রাজনীতি বন্ধ হওয়ায় আমরা একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস পেয়েছিলাম। আমরা সেই পরিবেশটাই বজায় রাখতে চাচ্ছি”। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি এই বক্তব্য থেকে তা সুস্পষ্ট। কারণ ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনীতির নামে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ রাজনৈতিক ময়দানে দলীয় সরকারের গদি রক্ষার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে। ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ কর্তৃক পিটিয়ে আবরার ফাহাদকে হত্যার পূর্বে ২০০২ সালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে আলোচিত সনি হত্যার কথা আমরা জানি। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে ঘোষণা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ, ছাত্রলীগের এক নেতার রিট আবেদনের পর সোমবার সেটি স্থগিত করে হাইকোর্ট। আদালত যে এমনকি সরকারী সংগঠন ছাত্রলীগের ইচ্ছার বাইরেও যেতে অক্ষম তা প্রমাণ হলো। প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কেন দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার পরিবেশের চেয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে তথাকথিত জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ধোয়া তুলে সেখানে তার দলীয় অপরাজনীতি পুনরায় চালু করার বিষয়ে এতটা মরিয়া হয়েছে, যা আমরা ছাত্রলীগ সভাপতি, শিক্ষামন্ত্রী কিংবা সড়কমন্ত্রী ওয়াবদুল কাদেরের বক্তব্যে দেখেছি? ‘বুয়েট নিয়ে একশনে যেতে পারে সরকার -ওবায়দুল কাদের’ (১ এপ্রিল, ২০২৪ দৈনিক ইনকিলাব)। ‘যে কোনো মূল্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি দেখতে চাই: সাদ্দাম হোসেন’ (১ এপ্রিল, ২০২৪ জাগো নিউজ ২৪.কম)
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকে সরকার জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্তম্ভ তথা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা ক্ষেত্রকে ধ্বংসের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। আমরা দেখেছি পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ৫৭জন মেধাবী সেনাঅফিসারের হত্যা এবং দেশের সীমান্ত সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বিডিআর-কে ধ্বংস করে মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান বিজিবি তৈরি করা, যার ফলে এখন আমরা শুধু সীমান্তে নিরীহ নাগরিক হত্যাকান্ডই নয়, এমনকি আমাদের সীমান্তে প্রবেশ করে বিজিবি সদস্যকেও হত্যার ঘটনা দেখছি। বুয়েট হলো বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে পাশ করা দক্ষ ও মেধাবী প্রকৌশলী ও গবেষকরা দেশে ও বিদেশে খ্যাঁতির স্বাক্ষর রাখছে। সেখানে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা নৃশংস খুনী তৈরি হতে দেখেছি, যা আরবার হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ হয়েছে। সরকার চায় আমাদের দেশ যেন এই মেধাবীদের কাঁধে ভর করে স্বনির্ভর না হয়, বরং জ্বালানীর মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে বিদেশ নির্ভরশীলতা বজায় থাকে, যেমন, বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোতে সরকারের অনীহায় যা সুস্পষ্ট। তাছাড়া, পশ্চিমা ভোগবাদী সংস্কৃতিকে শিক্ষাঙ্গণে প্রবেশ করিয়ে মাদক, ধর্ষণ, শিক্ষক কর্তৃক যৌন হয়রানী, ইডেন কলেজ কেলেঙ্কারীর মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। পাঠ্যপুস্তকে ট্রান্সজেন্ডারিজমের প্রবেশ করিয়ে পুরো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র এখন বিদ্যমান। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কারিকুলামে নাচ, গান, সংস্কৃতি চর্চা, রান্না শেখা, সেক্স এডুকেশনের পাঠ যুক্ত করে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদী কাফির-মুশরিকদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে এটাই কাম্য, কারণ তারা ক্ষমতায় আসীন থাকে তাদের এসব প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য। মুসলিম ভুখণ্ডগুলোর শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা সাম্রাজ্যবাদী কাফির-মুশরিকদের অন্যতম এজেন্ডা, যাতে ভবিষ্যতে খিলাফত রাষ্ট্র তার মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে না পারে, কারণ শতাব্দীর পর শতাব্দীর চেষ্টার পর তারা আমাদের গৌরবোজ্জল শাসনকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। সুতরাং, বুয়েটের মেধাবীদের উচিত অপরাজনীতির জননী হাসিনা সরকারের কাছে আশ্রয় না চেয়ে বরং সর্বশক্তিমান রবের দ্বীন ইসলামের অধীনে নিরাপত্তা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিকশিত হওয়ার স্বপ্ন দেখা। ইতিহাস সাক্ষী মুসলিম মেধাবী শিক্ষার্থীরা সবসময় সঠিক এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পৃষ্ঠপোষোকতা পেয়েছে ইসলাম তথা খিলাফতের অধীন। খলিফা হারুন আর-রশিদের সময়ের বায়াত আল-হিকমাহ্ বা হাউজ অব উজডম যার প্রমাণ। দেখুন “হারিয়ে যাওয়া এক ইসলামিক লাইব্রেরি থেকে যেভাবে আধুনিক গণিতের জন্ম ”বিবিসি, ৩১ মার্চ’২৪। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “কেউ সম্মান-সুখ্যাতি চাইলে (আল্লাহ্‘কে উপেক্ষা করে তা লাভ করা যাবে না), সে জেনে নিক যাবতীয় সম্মান-সুখ্যাতির অধিকারী হলেন আল্লাহ্” (সূরা ফাতিরঃ ১০)। ‘যারা জানে (জ্ঞানী) এবং যারা জানে না (মূর্খ) তারা কি সমান? বোধশক্তিসম্পন্ন জ্ঞানী লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা জুমার-৯)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস”
খবরঃ
রমজান মাসে গাজায় 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি'র আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে। আজ সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের সভায় প্রস্তাবটি পাস হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ছাড়াও অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ সরবরাহ 'বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন' উল্লেখ করে এ প্রস্তাব আনা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে মোজাম্বিক এ প্রস্তাব উপস্থাপন করে। প্রস্তাবের ওপর ভেটো না দিলেও ভোটদানে বিরত ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবের সমর্থনে ভোট পড়েছে ১৪টি। যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, গাজায় ত্রাণ বাড়ানো-এই তিন দাবিতে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয় নিরাপত্তা পরিষদের সভায়। প্রস্তাবে রমজান মাসে 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি'র আহ্বান জানানো হয়, যা 'স্থায়ী' যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাবে। তবে রাশিয়ার প্রস্তাব ছিল, এই প্রস্তাবনাতেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো। কিন্তু, তা গৃহীত হয়নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, হামাস জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত থাকলে আরও 'কয়েক মাস আগে' যুদ্ধবিরতি হতে পারত-তা প্রস্তাবে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা উচিত। প্রস্তাব পাসের পর প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রস্তাবটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। (নিরাপত্তা) পরিষদের ব্যর্থতা ক্ষমা করা হবে না। (bangla.thedailystar.net/news/world/ইসরায়েল-হামাস-যুদ্ধ/news-570171)
মন্তব্যঃ
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কর্তৃক গাজার মুসলিমদের উপর চালানো এই গণহত্যা প্রমাণ করে যে, বর্তমান বিশ্বে মুসলিমদের রক্ত সবচেয়ে সস্তা। চাইলেই মুসলিমদেরকে হত্যা করা যায়, মুসলিম নারীদেরকে ধর্ষণ করা যায়, নবজাতক শিশুকে বম্বিং করে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা যায়, শত শত বছর ধরে বসবাস করা স্থান থেকে বাস্তুচ্যুত করা যায়। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই উম্মতকে রক্ষা করার মত কেউ নেই। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ হবে কিনা, ত্রাণ পৌছাবে কিনা – এসকল বিষয় নির্ভর করছে কাফির মুশরিকদের ভেটো দেওয়া না দেওয়ার উপর। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে মুসলিমদের রক্ত ও সম্মান কাবা ঘরের চেয়েও পবিত্র। আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.) কাবাঘর তাওয়াফ করছিলেন। তিনি (কাবাকে লক্ষ্য করে) বলেন, ‘ওহে আল্লাহ্’র ঘর, তুমি কতই না পবিত্র এবং তোমার সুঘ্রাণ কতই না মনমাতানো! তুমি কতই না মর্যাদাবান, কত সম্মানের অধিকারী! নিশ্চয়ই সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদ-এর প্রাণ! একজন মুসলিম আল্লাহ্’র কাছে তোমার চেয়েও অধিক মর্যাদাবান, তাদের সম্পদ ও রক্ত অধিক সম্মানিত’ (ইবনে মাজাহ)। অথচ প্রতিদিনই শত শত কাবাঘরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে – তা দেখার জন্য নেই এমন কোন অভিভাবক যে একজন দাসীর সম্মান রক্ষার্থে চিৎকার করে বলেছিল, “রোমান কুকুর নিকোফোরাস এর প্রতি বিশ্বাসীদের নেতা হারুন উর রশিদ। হে রোমান কুকুর তুমি যদি এ ঘটনার বিচার না কর তবে অচিরেই আমাকে তোমার সামনে দেখতে পারবে।”
অপরদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের মানে হচ্ছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কর্তৃক ৩০ হাজারের বেশী মানুষকে হত্যা এবং ৭০ হাজারের বেশী মানুষকে আহত করার শাস্তি থেকে দায়মুক্তি পাওয়া। উপরন্তু যুদ্ধবিরতির মানে এই নয় যে, যুদ্ধের সমাপ্তি বরং তা ক্লান্ত খুনীকে সাময়িক সময়ের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দেয়া। আবার জাতিসংঘের এই প্রস্তাব ইসরায়েলি বাহিনী মানতে বাধ্য কিনা তা নিয়েও রয়েছে ধোয়াশা। অর্থাৎ এই যুদ্ধবিরতির কোন বাস্তব প্রভাব নেই। যেমন, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হওয়ার চারদিনের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী ৪০০ জন ফিলিস্তিনি মুসলিমকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে জানুয়ারীতে ICJ কর্তৃক ইসরায়েলি বাহিনীকে গণহত্যা বন্ধে রুল জারী করা হলেও এখন পর্যন্ত ৬৫০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। মূলত জাতিসংঘ কিংবা আইসিজে’র মত প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিমাদের স্বার্থে পশ্চিমাদের হাতেই তৈরী। সুতরাং এদের হাতে যদি আমরা আমাদের সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব তুলে দেই, তা হবে রোগের নিকট রোগের সমাধান চাওয়ার মতো।
সুতরাং আমাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমাদের নিজেদের হাতে তুলে নিতে হবে। মুসলিম দেশগুলোর দালাল শাসকগুলো যারা মূলত পশ্চিমাদের দ্বারা, পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে আমাদের উপর সওয়ার হয়েছে, তাদেরকে অপসারণ করতে হবে এবং খলীফা হারুনুর রশীদের মত শাসক নিয়োগ দিতে হবে যিনি ইসলাম দ্বারা আমাদেরকে শাসন করবেন এবং কাফির-মুশরিকদের হাত থেকে রক্ষা করবেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই, ইমাম হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ যার পেছনে থেকে জনগণ যুদ্ধ করে এবং যার মাধ্যমে জনগণ নিজেদেরকে রক্ষা করে” [মুসলিম]
- মো. হাফিজুর রহমান
“১৫৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি আছে মাত্র ২৮টিতে”
খবরঃ
উচ্চ আদালতের আদেশ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন নিপীড়ন রোধে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘নিপীড়ন বিরোধী সেল’ থাকার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অভিযোগও জমা পড়ে কম। তারপরেও কেউ অভিযোগ দিলে শিক্ষকদের অসহযোগিতার পাশাপাশি জোটে নানান হুমকি। আছে সামাজিক চাপ ও লজ্জা এবং পড়াশোনা বন্ধ হাবার শঙ্কা। (https://www.youtube.com/watch?v=BjDIZysEhZs)
মন্তব্যঃ
দেশের জ্বালানী ও ব্যাংকখাতের লুটেরাদের জন্য দায়মুক্তি আইন, সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের কন্ঠরোধ করতে ‘সাইবার আইন’ ও ইসলামের ন্যায়নিষ্ঠ রাজনৈতিক কর্মীদের দমন করতে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ থাকলেও যৌন নিপীড়ন থেকে নারী শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে এখন পর্যন্ত দেশে কোনো আইনের অস্তিত্ব নেই। ফৌজদারী কার্যবিধিতে ধর্ষন বিষয়ে আইন থাকলেও তা একটি অসভ্য ও বিকৃতরুচির আইন, যা নিয়ে কারো মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই এবং এই আইন ধর্ষন প্রতিরোধের পরিবর্তে বরং ধর্ষকদের জন্য উত্সাহমূলক হিসেবে কাজ করে। ধর্ষনের মামলায়ও আদালত হরহামেশাই ধর্ষকের সাথে আপোষ-রফা অথবা ধর্ষকের সাথে বিবাহের ব্যবস্থাও করে থাকে! (পড়ুন: https://samakal.com/somota/article/224644/বিচার-ও-সমাজের-দায়)
২০০৮ সালে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট ‘যৌন নিপীড়ন’ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রদান করে যার আওতায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন নারীকে প্রধান করে যৌন নিপীড়ন বিরোধী পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, যিনি অভিযোগ করবেন তিনি যদি মনে করেন যে বিষয়টা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপোষ নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে সেটা করা হবে; আর তিনি যদি মনে করেন যে বিষয়টি গুরুতর, তাহলে এই কমিটি তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিবে, যা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়! তবে, কেউ যদি মনে করে যে প্রতিষ্ঠান ন্যায়বিচার করেনি তাহলে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেকোন পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। কী চমত্কার নীতিমালা (!), এটা শুধু স্যেকুলারিজম নামক অসভ্য ব্যবস্থার মধ্যেই সম্ভব! একটি জঘণ্য ফৌজদারী অপরাধকে (criminal offense) অবলিলায় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আপোষ-রফার ব্যবস্থা করে দিয়েছে!
যে স্যেকুলার জীবন-দর্শনে সুখের সংজ্ঞাই হল নারীকে নিগ্রহ করে সর্বোচ্চ ইন্দ্রীয় তৃপ্তি অর্জন করা, সেখানে এর চেয়ে বেশি আর কি-ইবা আশা করার আছে? অপরাধী শিক্ষক স্ব-বেতনে ছুটির নামে আরাম-দন্ড পায় এবং ছুটি শেষে আবার নতুন উদ্যোমে নতুন শিকারের খোঁজ করে! দেশে এত এত আইনের ভিড়ে ‘যৌন নিপীড়ন’ নিয়ে কোন আইন না থাকার কারণ হল বিদ্যমান স্যেকুলার শাসন ব্যবস্থা ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে বেহায়াপনার বিস্তারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে; ফলে ‘যৌন নিপীড়ন’ শুধুমাত্র সামাজিকভাবে ব্যবহৃত একটি শব্দ যার কোন আইনি সংজ্ঞা বা আইনগত ভিত্তি নেই। যদি কোন কারণে ঘটনা প্রকাশিত হয়ে যায় কিংবা ধর্মীয় ও সামাজিক অগ্রহণযোগ্যতার কারণে গণরোষ তৈরী হয় তখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বলির পাঁঠা বানিয়ে স্যেকুলার শাসনব্যবস্থাকে দায়মুক্তি দিতে নানান ভাষ্য (narrative) হাজির করা হয়। সুতরাং, স্যেকুলার শাসনব্যবস্থাকে দায়মুক্তি দিতে আলোচনা-সমালোচনাকে শুধুমাত্র অপরাধী ব্যক্তি কিংবা সেই বিশ্ববিদ্যালয়, এমনটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দায়দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা নিতান্তই দূর্বৃত্তপনা।
এর বিপরীতে, ইসলামী জীবনব্যবস্থার মধ্যে নারী-পুরুষের সম্পর্কের প্রতিটি বিষয়ে সুষ্পষ্ট বিধান রয়েছে, যেখানে ‘যৌন নিপীড়ন’ সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত; এই অপরাধের শাস্তি, শাস্তিদানকারী কর্তৃপক্ষ, অভিযোগ প্রমাণের পদ্ধতি ও প্রমাণকারী কর্তৃপক্ষ এর সবকিছুই ইসলামী শরীয়াহ দ্বারা নির্ধারিত। যৌন নিপীড়নের শিকার নারী যদি বিশেষত: অপরাধীর অধিনস্ত কেউ হয়, যেমন: শিক্ষার্থী কিংবা কর্মরত (employee) তাহলে প্রযোজ্য ‘তাজির’ সমূহের মধ্যে থেকে সবচেয়ে কঠোরতম শাস্তি আরোপ করার বিধান রয়েছে ইসলামী বিচারব্যবস্থায়। অভিযোগ প্রমাণ স্বাপেক্ষে তাত্ক্ষণিকভাবে ‘জনসম্মুখে’ শাস্তি কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে যেন এর বাস্তবায়ন সমাজের বাকি অপরাধ-মনস্কদের জন্য ভীতিপ্রদ ও নিবৃত্তকর (deterrent) হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি, কেউ যদি অন্য কাউকে অপদস্ত করার জন্য ‘যৌন নিপীড়নের’ মিথ্যা অভিযোগ করে তাহলে সম্মানহানীর অপরাধে মিথ্যা অভিযোগকারীর উপর সুনির্দিষ্ট শাস্তি কার্যকর করা হবে। সর্বোপরি, বিচক্ষণ এই বিচারব্যবস্থা এবং পাশাপাশি ইসলাম প্রদত্ত নারীর প্রতি পুরুষের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ‘সুখের’ সঠিক ধারণা সমাজে মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজ থেকে এই জঘণ্য অপরাধকে নির্মূল করে এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সম্মানজনক পরিবেশ ও প্রশান্তি নিশ্চিত করে।
- রিসাত আহমেদ
“ধার-দেনা করে খাবার কিনছেন দেশের ৪ কোটি মানুষ”
খবরঃ
চড়া মূল্যস্ফীতি আর লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে অতিষ্ঠ দেশের চার কোটি মানুষ খাবার কিনছে ধার-দেনা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভঙ্গুর অর্থনীতির প্রতিফলন উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্য নিরাপত্তা জরিপে। সংকট কাটাতে সঠিক পরিকল্পনা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাড়ানোর তাগিদ অর্থনীতিবিদদের।… (https://www.channel24bd.tv/economy/article/203551/ধার-দেনা-করে-খাবার-কিনছেন-দেশের-৪-কোটি-মানুষ)
মন্তব্যঃ
অসংখ্য নদী বিধৌত ও উর্বর জমির কোন দেশে মানুষ ‘খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বা ধার-দেনা করে খাচ্ছে’ এমন অবস্থা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং আশ্চর্যের বিষয়ও বটে। কারণ এখানে পুরো দেশটি নদীবাহিত পলি মাটি দিয়ে তৈরি, যেখানে সবরকম ফসল ফলে এবং এখানকার কৃষক-শ্রমিকগণও হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করতে অভ্যস্ত। আরো আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে শর্করার উৎস হিসেবে পরিচিত চাল, প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত মাছ, মাংস, ডিম কিংবা ভিটামিন ও খনিজের উৎস হিসেবে পরিচিত শাকসবজি ও লবণ প্রয়োজনের চেয়েও অনেক অতিরিক্ত উৎপাদন হয়। তাই এখানে প্রয়োজন ছিল শুধুমাত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং বন্টনের মাধ্যমে দেশের মানুষের হাতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু এই সহজ কাজটি করতে অক্ষম এদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র কিংবা এদেশের জনগণকে ‘চোরের খনি’র দৃষ্টিতে দেখা আমাদের অযোগ্য শাসকগোষ্ঠী। যারা এখানে পশ্চিমা অনুকরণে পুঁজিতন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে। এদের কাজ হলো দেশের খাদ্য কিংবা জ্বালানির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সমগ্র জনগণকে জিম্মি করে শাসক সংশ্লিষ্ট কিছু বৃহৎ পুঁজিপতি প্রতিষ্ঠানের (যেমন- বসুন্ধরা, সিটি, টি.কে. ইত্যাদি) হাতে কিংবা সমগ্র বাজার ব্যবস্থাকে মধ্যস্বত্তভোগী ও সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়া এবং বিদেশি প্রভুদের খুশির জন্য তাদের স্বার্থে খাদ্যখাতকে আমদানিনির্ভর (সার, বীজ, কীটনাশক, নদী-খাল-বিলের পানির মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থার পরিবর্তে আমদানিকৃত ডিজেল চালিত ভূগর্ভস্থ সেচযন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদির ক্ষেত্রে) বানিয়ে ফেলা এবং এদের উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা। এই কারণে এখানে বগুড়ার ৫ টাকার (প্রতি কেজি) বেগুন ঢাকায় এসে ৮০ টাকা হয়ে যায়। অবশেষে পুরো দেশের জনগণ তীব্র খাদ্য সংকটে ভোগে।
পশ্চিমাদের থেকে আমদানিকৃত এই পুঁজিতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই সকল মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করায় বিশ্বাসী না। বরং এটি গোটা বিশ্বের মানুষকে দুর্ভিক্ষ ও দরিদ্রতার মধ্যে রেখে হলেও মুষ্টিমেয় পূঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় বিশ্বাসী। এরা খাদ্যের মূল্য ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনে হাজার হাজার টন খাদ্য সমুদ্রে ফেলে দেয়। পশ্চিমা চিন্তাবিদরা এটা মনে করে যে, যেহেতু পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে সেহেতু সবার খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। ১৯৬৮ সালে সুপরিচিত বায়োলজিস্ট পল এর্লিক তার বিখ্যাত বই ‘দ্যা পপুলেশন বোম্ব’-এ উল্লেখ করেন, “সকল মানুষকে খাবার দেওয়ার জন্য যুদ্ধের আর কোন প্রয়োজন নেই।… পৃথিবী এখন থেকে দুর্ভিক্ষে ভুগবে, কোটি কোটি লোক না খেয়ে মারা যাবে…”। যদিও খোদ মার্কিন বিজ্ঞানীরা মনে করেন পৃথিবীতে যে পরিমাণ খাবার উৎপাদন করা সম্ভব তা দিয়ে ৪ হাজার ৭০০ কোটি মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা সম্ভব অথচ পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি মাত্র।
আর, আল্লাহ্ আল-রাজ্জাক বলেন, “তিনি জমীনকে বরকতময় করেছেন এবং এতে চার দিনের মধ্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন সমভাবে সকল অনুসন্ধানকারীদের জন্য” (সূরা হা-মীম আস-সাজদাঃ ১০)। এই কারণে বলা যায় সকল মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এই পৃথিবীতে এবং এর জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হল উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এবং সেইসাথে সুষম বন্টন নিশ্চিত করা। ইসলাম কখনোই এই খাতকে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়াকে সমর্থন করে না বরং প্রত্যেকটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এই ব্যবস্থার রাষ্ট্রপ্রধানকে (খলিফা) বাধ্য করে। এ কারণে প্রতিটি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য নিশ্চিতে খলিফা যেটা প্রয়োজন শরীয়াহ অনুযায়ী সেটাই করবেন। আল্লাহ্’র রাসূল (সঃ) বলেছেন, “খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল” (বুখারী)। ইসলামী রাষ্ট্রের কোন শাসক যদি এ ব্যাপারে অবহেলা করেন, তাহলে জনগণ প্রয়োজনে শাসকের বিরুদ্ধে মাযালিম আদালতে মামলা করতে পারবেন এবং আদালত এব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। একই সাথে এই ব্যবস্থায় খলিফা তার দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এ কারণে খলিফা ওমর (রা:) শহরের বাইরে মরুভূমিতে অবস্থানরত এক মহিলার খাদ্যাভাবের অভিযোগ শুনে পাগল-প্রায় হয়ে ছুটে গিয়ে নিজের পিঠে খাদ্যের বস্তা নিয়ে তাকে নিজ হাতে রান্না করে দিয়েছিলেন এবং মহিলাটির কাছ থেকে ৪০ দিরহাম ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আলী (রাঃ) এবং ওসমানকে (রাঃ) সাক্ষী রেখে এই মর্মে লিখিত নিয়েছিলেন যে, মহিলাটি এই অভিযোগ উঠিয়ে নিয়েছেন। তারপর তিনি এই কাগজটি তার কাফনের নিচে রেখে তাঁকে কবর দেওয়ার আদেশ করেছিলেন।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
“পরিস্থিতি বিবেচনায় শিশুদের ভাগাভাগি করা হয়েছে: হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ”
খবরঃ
‘ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ দুই মেয়েকে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবার কাছে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মেয়ের হেফাজত নিয়ে বাবার করা রিভিশনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে এমন অভিমত দিয়েছেন বিচারপতি মামনুন রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায় অনুযায়ী তিনজন মেয়ে সন্তানের মধ্যে প্রথম জন জেসমিন ও ছোটজন সোনিয়া মায়ের কাছে থাকবে। দ্বিতীয় সন্তান লায়লা বাবার কাছে থাকবে। (www.jugantor.com/todays-paper/last-page/788972/ )
মন্তব্যঃ
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ইমরান-এরিকো দম্পতীর ডিভোর্স হওয়ার পর থেকে তিন সন্তান কার সাথে থাকবে এবং কিভাবে তাদের ব্যবস্থাপনা হবে এটা নিয়ে জাপান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রায় দিয়েছে। সর্বশেষ হাইকোর্ট তিন সন্তানকে ভাগ করার ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির’ কথা বলছে! কিন্তু বাবা-মা এখনও সন্তুষ্ট নয়, তারা আবার আপিল করবে। এর মধ্যে বাচ্চারা কেমন মানসিক ও বাস্তবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বলাবাহুল্য। এই হচ্ছে মানবমস্তিষ্ক প্রসূত আইন দ্বারা সমাধানের সীমাবদ্ধতা। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে মাতৃত্ব, পিতৃত্ব, অভিভাবকত্ব, সন্তানদের মতামত, তাদের ভবিষ্যৎ, ভরন-পোষণ, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বামী-স্ত্রী ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর রীতিনীতিতে অভ্যস্ত, ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলো সামনে আসে। যেমন আমরা দেখেছি রায়ে পিতা সন্তুষ্ট হলে মা অসন্তুষ্ট হয়ে আপিল করেছে, আবার উল্টোটাও হয়েছে। সন্তানদের মধ্যে যে সাবালিকা সে তার মতামতের গুরুত্ব চেয়েছে, যে নাবালিকা তারা বাবা-মা উভয়ের ভালোবাসা চেয়েছে। মানব মস্তিষ্ক কখনওই জটিল সমীকরণটি মেলাতে সক্ষম নয় যাতে সবার উপর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। কারণ মানুষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয় এবং এটি কখনওই অপরিসীম হতে পারে না, এটি একটি নির্দিষ্ট সময় ও পরিবেশ অতিক্রম করতে পারে না। তাছাড়া, মানুষ পক্ষপাতদুষ্ট, যেমন এক্ষেত্রে আদালত জাপান সরকারের সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট হওয়ার বিষয়টি আমলে নিয়ে রায় দিয়েছে, কারণ এরিকো জাপানী নাগরিক।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেননা? তিনি সূক্ষ্ণদর্শী, সম্যক অবগত” (সুরা মুলক ১৪)। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তিনি সর্বজ্ঞানী, তাঁর নিকট কোন সময় ও পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নেই। তাছাড়া তিনি পক্ষপাতদুষ্ট নন, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর কোন সন্তান নেই, তিনি কারোও সন্তান নন। ফলে ন্যায়বিচার একমাত্র তাঁর কাছ থেকেই আসা সম্ভব, যেটা পক্ষপাতদুষ্ট হবে না, সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত যেকোন সময়-পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য প্রযোজ্য হবে।
ইসলাম অনুযায়ী প্রথমত মানুষ আল্লাহ্র সৃষ্টি এবং তিনিই মানুষের মালিক। কোন মানুষ অন্য মানুষের মালিক বা owner হতে পারে না, হোক সে মা, বাবা কিংবা অন্য যে কেউ। মানুষ অন্য মানুষের সুরক্ষাকারী বা custodian এবং guardian বা অভিভাবক হয়। এমন ছোট বাচ্চা যার একজন যত্নকারি না থাকলে সে মারা যাবে বা তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে, ইসলাম অনুযায়ী তার একজন সুরক্ষাকারী বা custodian থাকা ওয়াজিব বা বাধ্যতামুলক। এবং মা-ই সাধারণত এর জন্য উপযুক্ত তাই ঐ বাচ্চার সুরক্ষাকারী হবে মা। সে মা মুসলিম বা অমুসলিম যাই হোক না কেন। কিন্তু বাচ্চার অভিভাবকত্ব সব সময় বাবার অথবা বাবা ও মা দুইজনের কেউ অমুসলিম হলে, যে মুসলিম তার। সাধারণত অভিভাবক হিসেবে বাবা বাচ্চার লালনপালনের সকল ব্যয় বহন করবে যদিও সে মায়ের custody তে থাকে। বাচ্চা যদি এমন বড় হয় যে মা ছাড়াও তার বেঁচে থাকতে সমস্যা হবে না এবং সে যদি চিন্তা করতে শিখে এবং পছন্দ করতে শিখে তাহলে ঐ বাচ্চা মা ও বাবার মধ্যে যেকোন একজনকে তার সুরক্ষাকারী বা custodian হিসেবে পছন্দ করতে পারবে। এই সংশ্লিষ্ট বিস্তারিত শরিয়া নির্দেশনা হিযবুত তাহ্রীর-এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর বিশিষ্ট ইসলামি ফকিহ ও মুস্তাহিদ শাইখ ত্বাকী উদ্দিন আন-নাবাহানী (রহমাতুল্লাহ্) কর্তৃক কুর‘আন-সুন্নাহ্ আলোকে প্রণীত The Social System in Islam বইতে বিদ্যমান।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“মুসলিম দেশগুলির জন্য অভিন্ন মুদ্রা: কি একটি কার্যকর বিকল্প?”
খবরঃ
বিশ্বে ৫৭ টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) হল মুসলিম দেশগুলোর একটি সংগঠন। যেহেতু এই দেশগুলো ইতিমধ্যে একটি গ্রুপে আছে, এই সাংগঠনিক কাঠামোকে ব্যবহার করে তারা কি একটি আর্থিক ইউনিয়ন তৈরি করতে পারে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের বাণিজ্য উপমন্ত্রী মোস্তফা তুজকু-এর নেতৃত্বে ডি-৮ বাণিজ্য মন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠককালে মুসলিমদেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে অভিন্ন মুদ্রার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন, বড় প্রশ্ন হল: এটি কি কার্যকর? একটি আর্থিক ইউনিয়নে, সদস্য দেশগুলি একই মুদ্রা নীতি এবং বিনিময় হার সহ একটি একক মুদ্রা ভাগ করে। (tbsnews.net/features/panorama/common-currency-muslim-countries-viable-option-815076) (অনুদিত)
মন্তব্যঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য একটি গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড অর্ডার তৈরি করা এবং তা বজায় রাখা, যেখানে অন্যান্য দেশসমূহ অন্তর্ভূক্ত হবে ও মেনে চলবে। এটিই মুলতঃ মার্কিন আধিপত্যকে নিশ্চিত করেছে। ইচ্ছামাফিক ডলার ছাপানোর কারণে বিশ্বঅর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক স্যাংশন, সুইফট সিস্টেম, ইত্যাদি মার্কিন হাতিয়ারের কারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার প্রতি যে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছে, এধরণের প্রস্তাবনা সেটিকে প্রশমিত করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেমনটি আমরা দেখেছি, ব্রিকস, এসসিও (সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংকের মত সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে যা শুধু খবরের শিরোনামেই ভালো শুনিয়েছে, বাস্তবে অকার্যকর। কারণ এগুলোর কোনটিই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প নয়। শেখ হাসিনা যে ৫৭ মুসলিম দেশগুলোর শাসকের কথা বলেছে, তারা প্রত্যেকে হয় মার্কিন, না হয় বৃটেন কিংবা ইউরোপের দালাল। তারা বর্তমান পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। আমরা জানি, মার্কিনীরা ১৯৭১ সালে যখন ব্রেটন উড এগ্রিমেন্ট থেকে বের হয়ে ডলারকে গোল্ড ব্যাকআপ এবং অর্থনৈতিক গ্রোথের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ডলার ছাপানোর নীতিমালা থেকে ডলারকে মুক্ত করে দেয়, তখন ইউরোপীয়ান দেশগুলোকে তা মানতে বাধ্য করতে আমেরিকা কিভাবে তার দালাল আরব শাসকদের পেট্রোডলারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। সুতরাং, মার্কিন অর্থনৈতিক হেজেমনি থেকে বের হতে হলে তার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। Brzezinski, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ সালে তার একটি বইতে নেতৃত্ব এবং অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে লিখেছিল, আমেরিকা আর নেতৃত্ব দিতে পারবে না, আর তাই এটিকে বিশ্বব্যবস্থায় তার অর্থনীতির চর্চা বিদ্যমান রাখতে হবে। বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার একমাত্র উপায়, আপনার এমন একটি আদর্শ দরকার যা নির্দিষ্ট জাতিকে ও একাধিক জাতিকে একত্রিত করতে পারে, বর্তমানে এমন কোনো আদর্শের অস্তিত্ব নেই।
তিনি ভুল বলেছেন, অবশ্যই একটি আদর্শের অস্তিত্ব আছে কিন্তু তা বাস্তবায়িত নেই, আর তা হচ্ছে ইসলাম। ইসলামী খিলাফতের নেতৃত্বে বিশ্বব্যবস্থা আমাদের মুদ্রাই নয় বরং মুসলিম ভূমি, সম্পদ, সেনাবাহিনীকে একত্রিত করবে এবং বিশ্ববাসীকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার হেজেমনি থেকে মুক্ত করবে। আলোচ্য রিপোর্টটিতে মুসলিমদেশগুলোর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখানো হয়েছে। মনে হচ্ছে মুসলিমদের জন্য অভিন্ন মুদ্রা একটি নতুন ধারণা! যদিও মাত্র ১০০ বছর পূ্র্বেও মুসলিমরা ভৌগলিক অবস্থান নির্বিশেষে এক রাষ্ট্রে, এক খলিফার (শাসক) নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং মুসলিমদের একটি অভিন্ন মুদ্রা দিনার বা দিরহাম সারাবিশ্বে প্রচলিত ছিল। খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রা কখনও বিনিময় হারের কারণে কোন সংকট প্রত্যক্ষ করে নাই কারণ খিলাফত রাষ্ট্রে মুদ্রা ব্যবস্থা বর্তমান প্রচলিত মুদ্রার যেমনঃ ডলার, ইউরোর মত (ফিয়েট ক্যারেন্সি বা কাগুজে মুদ্রা) ছিল না যার কোন প্রকৃত মূল্য নাই। খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রা ছিল শারীয়াহ নির্দেশিত স্বর্ণ বা রৌপ্য ভিত্তিক যার প্রকৃত মূল্য রয়েছে। খিলাফতের স্বর্ণ বা রোপ্য ভিত্তিক মুদ্রার বিনিময় হার বা মুদ্রার চাহিদা যোগানের কারণে মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসের কোন সুযোগ ছিল না। এই মুদ্রা ব্যবস্থায় বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার এক সোনালী অধ্যায়। প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করা যায়, স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা কার্যকর থাকার সময় ১৮৯০ থেকে ১৯১০ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম খুব সামান্য পরিবর্তন হয়। অথচ বর্তমান কাগুজে মুদ্রার যুগে ২০০৫ সালে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ৪০০ ডলার যা ২০২৩ সালে ২০০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ, মুদ্রার মূল্য ২০ বছরের কম সময় ৫ গুণ হ্রাস পেয়েছে। এটা থেকে প্রমাণীত হয় শুধুমাত্র ইসলামের স্বর্ণ বা রোপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যাবস্থা শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেয় নাই বরং এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষ উপকৃত হয়েছিল। “আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” (সূরা আল আরাফ, আয়াত ৯৬)
- মো: সিরাজুল ইসলাম