Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১০৬ তম সংখ্যা । ১৬ নভেম্বর, ২০২৩



এই সংখ্যায় থাকছে : 


“বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিল ভারত”

“২৩ বছরে শান্তি মিশন থেকে আয় ২৮ হাজার কোটি টাকা”

“বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি থেকে সরে আসার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর”

“প্রধানমন্ত্রী একজন জান্নাতি মানুষ”

“পোশাকশ্রমিকদের ঘোষিত মজুরিতে কাজে ফেরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর” 

“ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী”








“বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিল ভারত”

খবরঃ

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনায় প্রত্যাশিতভাবে উঠে এল নির্বাচনমুখী বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। বৈঠকে ঘনিষ্ঠতম প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের চিন্তাভাবনার কথা আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই ধারণার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের অমিলের বিষয়টি আরও একবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে।… যুক্তরাষ্ট্রের ওই সক্রিয়তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে বলে ভারতের আশঙ্কা।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/42emzwv4tu)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের নির্বাচন কিংবা সরকার পরিবর্তনের পালা বদলের সময় আমেরিকার সাথে ভারতের দরকষাকষি এটা প্রমাণ করে যে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে কিছুই নেই। বরং এটা একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সরকার কে চালাবে? সেটা মূলত নির্ধারণ হয় দিল্লি কিংবা ওয়াশিংটনের কোনো এক টেবিলে। কিন্তু এখানে প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের মুখোমুখি অবস্থান, বিদেশি কূটনৈতিকদের দৌড়ঝাঁপ, গরম রাজপথ, রাজনৈতিক সহিংসতা ইত্যাদি নাটকের মঞ্চায়ন কেবলমাত্র এটা দেখানোর জন্য যে এখানে ‘গণতন্ত্র’ বাস্তবায়িত আছে। এবার এজন্য অগণিত মানুষ নিহত হলেও কিংবা মূল্যবান সম্পদসমূহ ধ্বংস হলেও একটা নির্বাচন আয়োজন করা চাইই চাই। সেটা এক দলীয় নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কিংবা রাতের ভোটের নির্বাচন যেটাই হোক না কেন! আলোচ্য নিউজে আমরা দেখতে পাই, ভারত তথাকথিত ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা’র ছদ্মাবরণে পুনরায় আওয়ামী শাসনের দিকেই তাদের পক্ষপাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে, ১৫ বছরের দুঃশাসনের কারণে চরম অ-জনপ্রিয় আওয়ামীলীগ সরকারের উপর আমেরিকা আস্থা রাখতে পারছে না। কারণ চরম অ-জনপ্রিয় সরকারগুলো মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে আরব বসন্তের মতো অভূতপূর্ব সমস্যা তৈরীর কারণ হতে পারে। এই কারণে এখানে সে এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চায় যেখানে তার স্বার্থের অনুকূলের শাসক ক্ষমতায় বসবে, কিন্তু জনগণ বুঝবে যে এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। যেমনটি ২০০১ সালে কিংবা ২০০৮ সালে হয়েছে। সেটা আবার শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছিল এটা ‘সমঝোতার সরকার’ বলে। অন্যদিকে আমরা দেখি যে, এই সরকারের আমলে কোণঠাসা একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরাও সরকারের পতন হওয়াটাই মুক্তির উপায় হিসেবে আমাদের নিকট উপস্থাপন করছে যদিও সেটা মার্কিন শকুনের ডানার ছায়ায় হয়ে থাকে। কেউ কেউ  এক্ষেত্রে এতটাই মরিয়া যে, হাসিনার পতনের জন্য তারা নাকি ইবলিশেরও সহযোগিতা নিতে রাজি আছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থাই আমাদের মুসলিমদেরসহ সমগ্র বিশ্বের মানুষদের যাবতীয় দুর্দশার কারণ। সেটা পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে গণহত্যা কিংবা আই.এম.এফ-এর কর্তৃত্বের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক দুর্দশা-যে রূপেই হোক না কেন! 

কিন্তু এই দুর্দশাতো আমাদের কারোই কাম্য নয়। তাই এ নির্বাচনী নাটক তথা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিকট থেকেই আমাদের মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। আমাদের কখনোই আপাতদৃষ্টিতে বড় জুলুমকারীর হাত থেকে রক্ষা পেতে ছোট জুলুমকারীর দ্বারস্থ হওয়া উচিত নয়। কারণ এখানে ছোট-বড় সকল জালিমই উপনিবেশবাদী পশ্চিমাদের হাত ধরে ক্ষমতায় বসে এবং তাদের এজেন্ডাসমূহই প্রকাশ্যে এবং গোপনে বাস্তবায়ন করে। যেমনটি আমরা দেখেছি ফিলিস্তিনে গণহত্যায় বর্তমান হাসিনা সরকার জাতিসংঘের মাধ্যমে সৈন্য পাঠিয়ে লেবাননের ইসরাইল বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিকট অস্ত্র যাওয়ার পথ বন্ধ করে হত্যাকারীদের সাহায্য করেছে এবং বিএনপিও এক্ষেত্রে নীরব সম্মতি প্রদান করেছে। তাই আমাদের উচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ইসলামি খিলাফত শাসন ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন করা, যেখানে আমাদের খলিফা (শাসক) আমরাই নির্বাচন করব, যেন তিনি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হুকুম অনুযায়ী ন্যায়-পরায়ণতার সাথে আমাদের শাসন করতে পারেন।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“২৩ বছরে শান্তি মিশন থেকে আয় ২৮ হাজার কোটি টাকা”

খবরঃ

গত ২৩ বছরে (২০০০-২০০১ থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছর) বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ‘জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশন’ থেকে আয় করেছে ২৭ হাজার ৯৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা (৩৪৬ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ১০৩ মার্কিন ডলার)। জাতীয় সংসদ কাজে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই তথ্য জানিয়েছেন। (www.banglatribune.com/national/ 822796/২৩-বছরে-শান্তি-মিশন-থেকে-আয়-২৮-হাজার-কোটি-টাকা)

মন্তব্যঃ

‘জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী মিশন’ হল উপনিবেশবাদী কাফির রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষার মার্সেনারীর (ভাড়াটে) পোশাকী নাম। ধূর্ত উপনিবেশবাদীরা এই মার্সেনারীদের ‘প্রাণ ও আনুগত্য’ ক্রয়ের বিনিময় হিসেবে নিজস্ব-মূল্যমানহীন ডলার নামক একটি ছাপানো কাগজ প্রদান করে। আর দেশীয় দালালগোষ্ঠী তাদের কাফির প্রভুদের ঘৃণ্য স্বার্থরক্ষার এই মার্সেনারীর কাজকে গর্ব ও সম্মানের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল: নিজের ঈমান ও ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে অর্থের বিনিময়ে বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে কীভাবে গর্ব ও সম্মানের বিষয় থাকতে পারে? উপনিবেশবাদীদের তৈরী করা সংঘাতে তাদের মদদপুষ্ট একটি পক্ষকে নিরাপত্তা দিতে তথাকথিত শান্তিরক্ষা মিশনে অন্য একটি পক্ষকে হত্যা ও নির্মূলে কীভাবে সম্মানের বিষয় থাকতে পারে? তাদের আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক লুণ্ঠনের স্বার্থে (যেমনটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মূল্যবান খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে চলেছে) নিয়োজিত হওয়ার মধ্যে কীভাবে সম্মানের বিষয় থাকতে পারে? আমাদের প্রশ্ন করা উচিত: এই ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ কী? এটি কি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল-এর আদেশের পরিপন্থী নয় যে মুসলিম সামরিক বাহিনী কাফিরদের আদেশ পালন করবে ও তাদের পদানত থাকবে? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যথার্থই এমন লোকদেরকে Hireling (ভাড়াটে) বলে অভিহিত করে বলেছেন: দেখে নিও সে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবেই মৃত্যুবরণ করবে (অপমান অর্থে)। (সুনানে আবু দাউদ)।

সামরিক বাহিনীর জন্য প্রকৃত গর্ব ও সম্মানের কাজ হল দাওয়াহ ও জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী আইডিওলোজি (জীবনাদর্শ)-কে পুরো পৃথিবীর নিকট পৌঁছে দেয়া এবং জয় করা নতুন ভূমিতে ইসলামের ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং, এটি কোন আগ্রাসন বা দখলদারিত্ব নয় বরং এটি হল একটি ভূমিকে কুফর শাসনের যুলুম থেকে মুক্ত করা। মুসলিম সামরিক বাহিনীর প্রতি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর আদেশ হল: তারা অভিযানে বের হয়ে কাফিরদেরকে আহ্বান করবে, “তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, অথবা জিযিয়া দিয়ে (খিলাফতের) কর্তৃত্ব মেনে নাও, অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও” (সহীহ মুসলিম)। এই মুলনীতি অনুসরণ করেই খলীফা উমার (রা.)-এর তত্ত্বাবধান ও নেতৃত্বে মুসলিম সামরিক বাহিনী জেরুজালেম ও আল-আকসা বিজয় করেন এবং কুফরের অপবিত্রতা থেকে এই ভূমিকে মুক্ত করেন। জায়নবাদীরা যে দাবি করে যে ‘মুসলিম দখলদাররা ইহুদিদের পূর্বপুরুষদেরকে এই ভূমি থেকে বিতারিত করেছিল’, তা অসার ও মূল্যহীন; কেননা পৃথিবীর প্রকৃত মালিক ও সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ আল-হাকিম-এর বিধান অনুসরণ করে ও তাঁর আদিষ্ট পন্থায় আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের মুসলিম সামরিক বাহিনী জেরুজালেমকে ‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামী ভূখন্ডে পরিণত করেছিলেন। বর্তমান প্রজন্মের সামরিক বাহিনীর জন্য এটি একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব যে তারা জেরুজালেমকে মুক্ত করবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এই ভূমিকে নিরাপদ রাখবে; কারণ, প্রথমত: এটি বেদখল হয়ে যাওয়া ‘দারুল ইসলাম’ বা ইসলামী ভূখন্ড ও দ্বিতীয়ত: এটি বরকতময় পবিত্র ভূমি ও মুসলিম উম্মাহ্‌’র হৃদপিন্ড। 

তবে, আল্লাহ্‌’র পথে যুদ্ধ করা এবং দাওয়াহ ও জিহাদের মাধ্যমে ইসলামের আহ্বানকে পুরো পৃথিবীর নিকট পৌঁছে দেয়া কোন সহজসাধ্য কাজ নয়, বরং এজন্য সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কষ্ট হবে, ঘাম ঝরবে, শরীর নিস্তেজ হবে, আঘাতপ্রাপ্ত হবে, রক্ত ঝড়বে, প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, সম্পদহানী ঘটবে এবং এর সদস্য ও অফিসাররা শহীদ হবেন এটিই বাস্তবতা। আমাদের পুর্ববর্তী প্রজন্মের সামরিক বাহিনী এসবগুলোই মোকাবেলা ও জয় করে ইতিহাসের পাতায় সর্বোত্তম মুসলিম বাহিনী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। ‘জান্নাতুল ফিরদাউস’ হল তাদের গন্তব্য এবং সেখানে তারা প্রবেশ করবেন তাদের প্রিয় পরিবার পরিজনদেরকে সাথে নিয়ে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুরআন-এ বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের জীবন ও সম্পদকে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহ্‌’র পথে জিহাদ করে; ফলে তারা (কাফির বাহিনীকে) হত্যা করে ও নিজেরাও নিহত হয়।… সুতরাং আল্লাহ্‌’র সাথে সম্পাদিত এই চুক্তির জন্য তোমরা উৎফুল্ল হও। নিশ্চিতভাবেই এর চেয়ে বড় সফলতা আর নেই। (সূরা আত-তাওবা: ১১১)।

    -    রিসাত আহমেদ




“বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি থেকে সরে আসার নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর”

খবরঃ

বিদ্যুৎ ও পানিতে ভর্তুকি থেকে সরে আসার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি অন্য খাতগুলোতেও ভর্তুকি কমাতে বলেছেন। বিদ্যুৎ ও পানির দাম গ্রাহকের আয় ও এলাকা অনুযায়ী নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন সরকারপ্রধান। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (www.banglatribune.com/national/823993

মন্তব্যঃ

বিদ্যুৎ (যার কাঁচামাল হচ্ছে গ্যাস, তেল ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদ) ও পানি সাধারণভাবে জনগণের সম্পত্তি হলেও আমরা দেখতে পাই পুঁজিবাদ অনুসরণকারী রাষ্ট্রে অন্যান্য যেকোন পণ্যের মতই পানি ও বিদ্যুতের মত পণ্যগুলোকেও রাষ্ট্র তার ব্যবসায়িক পণ্যে রুপান্তরিত করে। ফলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ কিংবা পানির মত বিষয়গুলোও সাধারণ জনগণকে ক্রয় করতে হয়। ওয়াসা কিংবা ডেসকোর মত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়। যাদের কাজ হচ্ছে জনগণের নিজেদের সম্পদ জনগণের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করা। 

এখন সরকার যে বলছে তারা ভর্তুকি দিচ্ছে এটি আসলে কি? এটি মূলত সরকারী সেবাখাতসমূহ যেমন সরকারী হাসপাতাল কিংবা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি পরিচালনার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় সেগুলোকে বোঝাচ্ছে। এসকল খাতে সরকার মূলত জনগণের কাছ থেকে আরোহিত ট্যাক্স ও ভ্যাটের টাকা থেকেই অর্থ ব্যয় করে থাকে অর্থাৎ তথাকথিত ভর্তুকি দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এখানে ভর্তুকির নামে মূলত জনগণের টাকাই জনগণের সেবায় নিয়োজিত করা হয়। এই ভর্তুকির অর্থ সরকারপ্রধান কিংবা মন্ত্রীদের নিজস্ব পৈতৃক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত না।

এখানে বিদ্যুৎ ও পানি থেকে সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে দেয়ার পলিসি মূলত নতুন কিছু নয়, বরং সম্প্রতি আইএমএফ কর্তৃক বাংলাদেশকে প্রদেয় ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের বিভিন্ন শর্তসমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে দেয়া। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও পানির মূল্য বৃদ্ধি পাবে। ফলে, কৃষি ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনের খরচের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু প্রতিটি পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। মূলত আই.এম.এফ ও বিশ্বব্যাংক-এর মাধ্যমে পশ্চিমাদের যে বৈশ্বিক প্রভাব তৈরী হয়েছে সেটি চলমান থাকলে বাংলাদেশের মত দেশসমূহের মানুষদের দৈনন্দিন জীবনযাপন অধিকতর কষ্টের মধ্যে পতিত হবে এবং দেশের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্ব পশ্চিমাদের হাতে বন্দী হয়ে পড়বে।

মূলত জনবিচ্ছিন্ন এই সেক্যুলার শাসকেরা নিজেদেরকে পশ্চিমাদের পদতলে সমর্পণ করে ক্ষমতাকে অটুট রাখার জন্য আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর মত প্রতিষ্ঠানের যেকোন শর্ত মেনে নিয়ে জনগণকে বিপদে ফেলে দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। সুতরাং এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের দিকে ফিরে যেতে হবে। ইসলাম যেমন একদিকে খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে গণসম্পত্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তা জনগণের সেবায় নিয়োজিত করবে, অন্যদিকে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক-এর মত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ থেকেও বিরত থাকবে কারণ খিলাফত রাষ্ট্রের পলিসি হচ্ছে কাফিরদেরকে মুসলিমদের উপর প্রভাব বিস্তার করার কোন রকম সুযোগই দেয়া হবে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” (সূরা নিসা-১৪১)। ফলে, খিলাফত ব্যবস্থায় এসকল কাফিরদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের শর্ত থেকে মুক্ত হয়ে খলীফা কাজ করবেন। যে কারণে পানি কিংবা জ্বালানির মত গণসম্পত্তি খলীফা জনগণের দোরগোড়ায় বিনামূল্যে পৌছে দিবেন এবং অতিরিক্ত তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে বিক্রি করে সে টাকা সাধারণ জনগণের কল্যানে ব্যয় করা হবে।

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“প্রধানমন্ত্রী একজন জান্নাতি মানুষ”

খবরঃ

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষ এবং ইসলামের জন্য আশীর্বাদ’ মন্তব্য করে বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা ছারছীনা দরবারের অন্যতম প্রধান আলেম মাওলানা মুফতি কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন জান্নাতি মানুষ।’ (https://www.banglanews24.com/national/news/bd/1215121.details)

মন্তব্যঃ

এই মুহূর্তে সারাবিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে একজন মুসলিমকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ‘বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু কারা?’ নির্দ্বিধায় উত্তর দিবে- আমেরিকা ও ইসরাইল। ইসরাইল মুসলিমের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর তাকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, রণতরী, যুদ্ধবিমান, ডলার ইত্যাদি দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে আমেরিকা। অন্যদিকে, এটাও এখন সবার কাছে দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, হাসিনাসহ বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের অভিভাবক হচ্ছে আমেরিকা-ব্রিটেন-ভারত। তাহলে প্রথম ভাববার বিষয় হচ্ছে, যেই আমেরিকা-ব্রিটেন পুরো মুসলিম ‍উম্মাহ্‌’র শত্রু, সেই তাদেরকে অভিভাবক বানিয়ে একজন মানুষ কিভাবে জান্নাতি হয়? দ্বিতীয়ত, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত জীবনাদর্শ-ইসলামকে বাদ দিয়ে যে শেখ হাসিনা কাফিরদের জীবনব্যবস্থা তথা ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনুসারী, সে আবার কিভাবে জান্নাতি হয়? অথচ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যারা আল্লাহ্‌ যা নাযিল করেছেন, তদনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করে না, তারাই যালিম” (সূরা আল-মায়িদাহ্‌: ৪৫)। তৃতীয়ত, যে শাসকদের সাথে উম্মাহ্‌ কোনো সম্পর্ক নেই, উম্মাহ্‌ শাসকের জন্য বদদোয়া করে, আবার শাসকও উম্মাহ্‌’র জন্য বদদোয়া করে, সেই শাসক কিভাবে জান্নাতি হয়? সবশেষে, যে জালিম হাসিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কাফিরদের যুদ্ধে একনিষ্টভাবে অংশগ্রহণ করেছে, অগণিত আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে, এবং জঙ্গী নাটক সাজিয়ে অসংখ্য শিশু, নারী ও নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, সে কিভাবে জান্নাতি হয়? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, একটি মুসলিম দেশে যখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মতো একটি কুফর মতবাদ দিয়ে শাসন করতে হয়ে তখন উম্মাহ্‌কে ধোকা দেওয়ার জন্য কিছু মুনাফিক আলেম ভাড়া করতে হয়, যারা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তাদের ঈমানকে এই জালিমদের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং জালিমদের বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করে। আবার এই জালিমদের মুসলিম উম্মাহকে ধোকা দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে কখনো হিজাবী, কখনো তাহাজ্জুদ নামাজী, কখনো কওমী জননী, কখনো মুসলিমের ত্রাণকর্তা ইত্যাদি হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়। উম্মাহ্‌’র সাথে এই স্ট্যান্ডবাজি তাদের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদেরই একটি অংশ। 

ইসলামের শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থা এবং খলিফা হচ্ছে শাসক। খলিফা এই জমিনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র ছায়া এবং রহমতস্বরূপ। জান্নাত হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থায় সেই সকল ন্যায় পরায়ন শাকদের জন্য, যারা ‍আল্লাহ্‌ কর্তৃক নাজিলকৃত বিধান দ্বারা শাসন করবে এবং দুনিয়াতে জনগণ ও পরকালে আল্লাহ্‌’র নিকট জবাবদিহিতার ভয়ে প্রকম্পিত থাকবে। শাসকের জন্য সমস্ত উম্মাহ্‌ দোয়া করবে এবং শাসকও উম্মাহ্‌ জন্য দোয়া করবে। শুধু তাই নয় আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই ন্যায়পরায়ন শাসকদের হাশরের ময়দানে তাঁর আরশের নিচে ছায়া দিবেন। অন্যদিকে, হাসিনার মতো জালিম শাসকদের জন্য জান্নাত তো দূরের কথা, তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর আপনি কখনো মনে করবেন না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্‌ উদাসীন। তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। ভীত-বিহ্বল চিত্তে উপরের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৪২-৪৩]

    -    আহমাদুল্লাহ্‌ সবুজ




“পোশাকশ্রমিকদের ঘোষিত মজুরিতে কাজে ফেরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর” 

খবরঃ

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি যা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়েই কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যেটা বাড়ানো হয়েছে, তা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। তারা কাজ করুক।’ আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পোশাকশ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই সময় আসে তাদের (শ্রমিক) সব রকম সুবিধা আমরা করে দিই। কিন্তু তারা যদি সেটা না করে, কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নেমে...এরাই তো যারা উসকানি দিচ্ছে, তারাই তাদের (শ্রমিক) লাশ ফেলবে। এরাই এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যাতে তারা চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে, গ্রামে গিয়ে পড়ে থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এখন তারা কী চায়? কারখানা ধ্বংস হয়ে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়, রপ্তানি ব্যাহত হয়, তাহলে তাদের কাজ থাকবে কোথায়? এটা তো তাদের বুঝতে হবে। আর উসকানিদাতা কারা?’ (https://www.prothomalo.com/politics/04pbc6cvld

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে রাষ্ট্রীয় মদদে নব্য-উপনিবেশবাদী লুটেরা মডেল চলছে। পশ্চিমা দেশগুলোর পুঁজিবাদী কর্পোরেট কোম্পানীগুলো নামমাত্র মূল্যে বাংলাদেশে থেকে পোষাক ক্রয় করে। আবার এই পোশাকই তারা ২-৩ গুণ বেশী দামে তাদের দেশের ক্রেতাদের নিকট বিক্রয় করছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ How cash incentives from taxpayers' pockets benefit Western RMG buyers, টিবিএস, নভেম্বর ৮, ২০২৩)। বাজারে ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন কাঁচামাল এবং জ্বালানীর দাম বাড়লেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাজার ধরে রাখতে যৌক্তিক দাম বাড়াতে পারছে না। বরং, কাজ হারানোর ভয়ে তারা পূর্বের থেকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয়ে বাধ্য হচ্ছে। তারপরেও এই খাত নিয়ে বাংলাদেশের শাসকদের গর্বের সীমা নাই। খাতটিকে উৎসাহিত করার জন্য তারা পুঁজিপতি ব্যবসায়িদের শ্রমিকদের শোষণ করার সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে যদিও শিল্পটি শ্রমঘন। অর্থাৎ, শ্রমিকদের শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে আছে এই শিল্পটি। শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরিই শুধু নয় বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম মজুরিও পাচ্ছে না। একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী দু’জনে কাজ করার পরেও পরিবার নূন্যতম চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে শ্রমিকরা যখন ন্যায্য মজুরির দাবি করে, মালিক পক্ষ দাবির ন্যায্যতা বিচার না শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতিসহ নানা প্রকার নির্যাতন করে। আবার, যখন শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করে মালিক পক্ষ এবং সরকার তখন ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজে শ্রমিকদের নির্দয়ভাবে দমন করার জন্য সরকার দলীয় গুন্ডা এবং পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি লেলিয়ে দিয়ে শক্তিপ্রয়োগ এবং রক্তপাতের মাধ্যমে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। গত কয়েক দশক ধরে তৈরি পোষাক শিল্পে এই প্রক্রিয়াই চলছে। মূলত, তৈরি পোষাক শিল্প পশ্চিমাদের জন্য স্বস্তায় পোষাক তৈরি এবং পুঁজিপতি ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর মুনাফা বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে আমাদের শ্রমিকদের ব্যবহার করছে, এটাকে নব্য উপনিবেশবাদের নয়া দাসপ্রথা হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এখানে, শ্রমিকদের শুধুমাত্র আদা পেটে কোন মতে বেঁচে থাকার মজুরি ছাড়া আর কিছুই দেয়া হয় না। পশ্চিমাদের এই শোষণ এখন আর গোপন কোন বিষয় নয়। নূন্যতম বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যাক্তিই এই সত্য অনুধাবন করে এই দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য তাড়না অনুভব করে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী এই দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার চেষ্টা না করে শ্রমিকদের হুমকী দিয়ে এটাই আবার প্রমাণ করলেন উপনিবেশবাদিদের স্বার্থ রক্ষাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। 

নব্য-উপনিবেশবাদী লুটেরা মডেলের পোষাক শিল্প থেকে বেরিয়ে আসার উপায় হচ্ছে উপনিবেশবাদীদের চাপিয়ে দেয়া পরনির্ভর অর্থনীতির বিপরীতে ইসলামের স্বনির্ভর অর্থনীতির মডেল বাস্তবায়ন। যেখান রাষ্ট্রের প্রাথমিক শিল্পায়ন হবে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর ভিত্তি করে। রাষ্ট্রের প্রয়োজন পূরণের পর রাষ্ট্র বিদেশে বিক্রয় করতে পরে। তাই, সেখানে বিদেশীদের কাছ থেকে কাজ হারানোর ভয়ে কমমূল্যে রপ্তানী বহাল রাখতে শ্রমিক শোষণের কোন সুযোগ থাকবে না। 

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম  




“ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল হিলটন জেদ্দায় ‘ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’-এ যোগ দিয়েছেন।

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের সাথে সমন্বয়ে সৌদি আরব ৬-৮ নভেম্বর সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনে যোগদান ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী উইমেন ইন ইসলাম প্রদর্শনীর উদ্বোধন এবং তাঁর সম্মানে নৈশভোজে অংশ নেন। (https://www.bssnews.net/bangla/news-flash/113378

মন্তব্যঃ

একদিকে পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ মদদে এবং সহযোগিতায় অভিশপ্ত ইহুদীরা সবার চোখের সামনে প্রতিদিন মুসলিম নারী ও শিশুদের উপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, আর অন্যদিকে হাসিনাসহ মুসলিম দেশসমূহের শাসকরা অভিজাত হোটেলে জড়ো হয়ে পশ্চিমাদেরই প্রকল্প ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ নিয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করছে এবং ভুরি ভোজে ব্যস্ত আছে। এদের কর্মকান্ড দেখলে আমরা বুঝতে পারি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যথার্থই বলেছেন, “যখন তোমাদের কোন লজ্জা না থাকে, তখন যা খুশি তাই কর” (সহিহ বুখারি ৫৭৬৯)। ক্ষমতার জন্য পশ্চিমাদের গোলামী মুসলিম দেশসমূহের শাসকদের এরকম এক নির্লজ্জ অবস্থায় নিয়ে গেছে যে এখন তা আর কোন পর্দা দিয়েই ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। এমনকি তারা যেন এখন আর তাদের নির্লজ্জতা ঢেকে রাখার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করছে না। আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যখনই শুনলেন বানু কায়নুকার এক ইহুদী একজন মুসলিম নারীর পর্দার অমর্যাদা করেছে এবং প্রতিবাদকারী মুসলিমকে হত্যা করেছে, তিনি (সাঃ) সাথে সাথে মসজিদে আজান দিয়ে জিহাদের ঘোষনা করেন এবং মদিনা রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী জড়ো করে বানু কায়নুকাকে হামলা করে তাদেরকে মদিনা থেকে বের করে দেন। অথচ শতবছর যাবত ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন ভুমিতে অসহায় মুসলিম নারী-শিশুরা সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছে কিন্তু মুসলিম সেনাবাহিনীর কমান্ড ইন চার্জ এইসব শাসকরা এক্ষেত্রে কবরবাসীর মত আচরণ করছে। অসহায় নারীদের চিৎকার এই নির্লজ্জ শাসকদের কাছে যেন নিরর্থক হাকডাক! এদের বিষয়েই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “বধির, মুক এবং অন্ধ; সুতরাং তারা কিছুই বোঝেনা” (সুরা বাকারাহ ১৭১)। দীর্ঘদিনের গোলামী ও তাবেদারী তাদেরকে এমন মাতালের মত এবং চিন্তাহীন করেছে যে তাদের মধ্যে ইসলামের কোন চিন্তা বা গুণাবলী তো অবশিষ্ট নেইই এমনকি তারা স্বাভাবিক লজ্জাবোধ, আবেগ-অনুভুতিও হারিয়েছে। এসব দালাল শাসকরা তাদের দৈনন্দিন শাসন কর্মকান্ডে আল্লাহ্‌’র হুকুমকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণ করতে করতে তাদের ভিতরকার নূন্যতম ভালো বা নূন্যতম আলোও হারিয়ে ফেলেছে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আরও বলেন, “তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়” (সুরা বাকারাহ ২৫৭)।

তাই মুসলিম উম্মাহকে মুসলিমদের জান-মাল-সম্মানের সুরক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই এসব শাসকদের দিকে তাকানো, তাদের উদ্যোগের জন্য আশা করে সময়ক্ষেপন করা পরিত্যাগ করতে হবে। বরং এদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করতে হবে। কারণ খলিফাগণ মুসলিম নারীর সম্মানহানীকে পুরো উম্মাহ্‌’র সম্মানহানী হিসেবে দেখতেন, এবং তারা জানতেন শারীয়াহ অনুযায়ী এটি মুসলিমদের জীবন-মরণ ইস্যু। ফলে এধরনের অপরাধের জবাব খলিফারা দিতেন বিনা আলোচনায়, বিনা কালক্ষেপনে, কোন পরিণতি চিন্তা না করে। খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ্‌ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে কেবলমাত্র একজন মুসলিম নারীর চিৎকারে সাড়া দিয়ে, তৎকালীন পশ্চিমা পরাশক্তি রোমানদের বিরুদ্ধে বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করে রোমানদেরকেও সেই শহর থেকে বের করে দেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলীফা) হচ্ছে ঢাল, যার অধীনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করে” (সহীহ্‌ বুখারী)। ফলে একমাত্র পরবর্তি খলিফাই পারবেন ফিলিস্তিনসহ সকল দখলকৃত মুসলিম ভূমিগুলো থেকে দখলদার উপনিবেশকারীদের তাড়াতে এবং মুসলিম নারী-শিশুদের জান, মাল ও সম্মানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন