মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খলিলুর রহমানের বৈঠক- বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্রের

 

খবরঃ

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ এবং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক আলোচনা, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা করেন। (https://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2025/06/20/1534431 )

মন্তব্যঃ

লন্ডনে তারেক-ইউনুস বৈঠকের পরপরই নিরাপত্তা উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং ‘রোহিঙ্গা সংকট, দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে’র বিষয়ে আলোচনায় এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে জুলাই গণআন্দোলন-উত্তর নতুন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় গড়ে তোলার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার ও সম্ভাব্য পরবর্তী সরকার বিএনপির নেতৃত্বের সাথে সমঝোতা হয়েছে। বলাবাহুল্য যুক্তরাষ্ট্র কখনই তাদের স্বার্থের ব্যতিরেকে কাউকে সহযোগিতা করে না এবং যতক্ষণ তাদের স্বার্থের জন্য কাউকে দরকার তার চেয়ে বেশীক্ষণ কারও সাথে বন্ধুত্ব করেনা, যা এখন আর কোন সিক্রেট বিষয় নয়। অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারী অব ষ্টেট মার্কো রুবিও সিনেটে এক বক্তব্যে স্পষ্ট করেছে যে, “Aid, Diplomacy and Economic Development to a country and a region will be tailored to our National Interest”। এটাও নিশ্চিত যে তাদের স্বার্থ ও আমাদের স্বার্থ কখনই এক হতে পারে না। কারণ ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরানসহ সারাবিশ্বে মুসলিম হত্যাকারী যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে মূল বিদেশনীতি হচ্ছে ইসরায়েলকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইসলামের উত্থানকে ঠেকানো। এবং আমাদের এই অঞ্চলে তাদের বিদেশনীতির মূল হচ্ছে ভারতকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ইসলামের উত্থান ঠেকানো। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয় তাদেরই একজন” [সুরা মায়িদাহ্‌: ৫১]।

আমাদের শাসকগোষ্ঠীর উপলব্দি করা উচিত, ইরানে আমেরিকা ও ইসরায়েলের হামলা আবারও চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, শত্রুদের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠা শক্তির কি পরিণতি হয়। গত ৪০ বছর যাবত ইরান আমেরিকার স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। ইরানকে ব্যবহার করে আমেরিকা ইরাকের সাদ্দাম সরকারকে দুর্বল করেছে, সৌদিসহ গালফ রাষ্ট্রগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখিয়ে অস্ত্র বিক্রিসহ ঐদেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, সিরিয়ার কসাই আসাদকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রেখেছে, ইয়েমেনকে বিভক্ত ও দুর্বল করেছে, ইত্যাদি। এখন যখন নিজের স্বার্থে ইরানকে দুর্বল করতে হবে তখন আমেরিকা একে একে ইরানের হাতিয়ার হুতি, হিযবুল্লাহ্‌, হামাস সহ সব শক্তিকে ধ্বংস করছে। ইরানের IRGC, যা সবসময় আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করেছে তার নেতৃস্থানীয়দেরকে আমেরিকা-ইসরায়েল এখন হত্যা করছে। 

সুতরাং, শত্রুকে সাময়িক বন্ধু হিসেবে দেখা, শত্রুর সহযোগিতা নিয়ে নিজেকে শক্তিশালী করার চিন্তা করা, এক শত্রু থেকে বাঁচতে অন্য শত্রুর সহযোগিতা নেয়া, শত্রুর সাথে আলোচনা করে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা অথবা শত্রুর পরিকল্পনায় কাজ করা বা তার প্রকল্পগুলোর অংশ হওয়া কোন বাস্তবতাতেই যুক্তিযুক্ত নয়। এমনকি কোন বাস্তবতায় কারও কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হলেও তা করা যাবে না, কারণ আল্লাহ্‌ তা নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্‌ বলেন, “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু হিসেবেই গণ্য কর” [সুরা ফাতির ৩৫]। 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন


Previous Post Next Post