চুক্তিতে সই করা উচিত ছিল ইরানের, পারমাণবিক অস্ত্র রাখা যাবে না: ট্রাম্প



খবরঃ

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের মাঝেই জি৭ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্রুতই হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুমে ফিরে যাচ্ছেন। এই সংকটময় মুহূর্তে আবারও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না”। একটি Truth Social পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “ইরানের চুক্তিতে সই করা উচিত ছিল। আমি বলেছিলাম, সই করো। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তি করতে চেয়েছিল। আলোচনাও ভালোভাবে এগোচ্ছিল, কিন্তু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ছিল মূল বিরোধের বিষয়। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি রাজনৈতিক সাফল্য অর্জনের সুযোগ, আর ইরান চাচ্ছিল মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি। কিন্তু এখনকার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সমাধানের আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। আরেকটি পোস্টে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। আমি বারবার বলেছি!” (https://www.dailyjanakantha.com/national/news/820284)

মন্তব্যঃ

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের লক্ষ্য কখনোই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাধীন এবং শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ (Deterrence) এবং ত্রাস সঞ্চারের আকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভুত হয়নি। জাতীয়তাবাদের উপর নির্মিত হওয়ায় ইরান সর্বদা যেকোন প্রতিরোধ মোকাবেলার প্রচেষ্টার চেয়ে বেঁচে থাকার কৌশল ও জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। ইরানি শাসকগোষ্ঠী অন্যান্য আরব শাসকের মত যেমন মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে, তেমনি সামরিক উচ্চাকাঙ্খা না থাকায় ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার বানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব স্বার্থে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারণের অনুমতি দিয়েছে, সুরক্ষা প্রদান করেছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, পারমাণবিক চুক্তি করেছে এবং তারপর বাতিলও করেছে। ইতিপূর্বে আমেরিকা ১৯৮১ সালে সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইহুদী রাষ্ট্র কর্তৃক ইরাকের নিউক্লিয়ার রিআ্যক্টরগুলোতে হামলার অনুমতি দিলেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীতে আক্রমণের প্রচেস্টাকে বাধা দিয়েছে! ২০০৩ সালে সংলাপ শুরুর সময় থেকে আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে শুধুমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইরানের এই নিউক্লিয়ার ভীতিকে কাজে লাগিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে ও এসব দেশগুলোর কাছে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে। এছাড়া আমেরিকা ইরানের পরমাণু অস্ত্র মোকাবেলা এবং এটা থেকে রক্ষা করার ছুতোয় তুরস্ক ও মধ্য ইউরোপে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করে। এরপর ২০১৫ সালে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পতন ঠেকাতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা গুরুত্বপুর্ণ হয়ে হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওমাবা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সিরিয়ায় মার্কিন প্রক্সি হিসেবে কাজ করার শর্তে ইরানকে দিয়ে সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনে আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে মুসলিম হত্যাসহ অপরাধমূলক ভূমিকা পালন করায়। অতঃপর তুরস্ক ও সৌদি আরব সিরিয়ার বিপ্লব দমনে ইরানের চেয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা হ্রাস করে ২০১৮ সালে পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়, কারণ এই অঞ্চলে ইরানের ভূমিকা হ্রাস করার জন্য নতুন শর্তাবলীর প্রস্তুতি হিসেবে চুক্তি থেকে সরে আসা আমেরিকার স্বার্থ ছিল। আর ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের সাথে আবারোও পারমাণবিক চুক্তি সম্পাদন করতে চায়, যাতে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং পারমাণবিক অস্ত্রের অজুহাতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সৃষ্ট হামলা ও পাল্টা হামলার অবসান হয়। এবং যার ফলশ্রুতিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত মনোযোগ চীনকে মোকাবেলার দিকে কেন্দ্রীভূত করতে পারে। এভাবে মুসলিম উম্মাহ্‌’র স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ” এবং তথাকথিত “জাতীয় সার্বভৌমত্ব” নামক সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী চিন্তা ধারণ করায় এবং যাবতীয় সক্ষমতাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে সমর্পণ করায় ইরান স্বাধীনভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের মত অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্পন্ন (Sophisticated Weapons) রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি। 

তাই ইরান সহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো যদি সত্যিকার অর্থে পারমাণবিক অস্ত্র সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্র (Sophisticated Weapons) অর্জনের মাধ্যমে পশ্চিমা পরাশক্তি ও ইসলামী উম্মাহ্‌’র শত্রুদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায় তাহলে তাদেরকে ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রিত জাতীয়তাবাদী সীমানা প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং মুসলিম উম্মাহ্‌’র ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম দেশগুলোর কৃত্রিম সীমানাকে উপড়ে ফেলে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে রুপান্তর করবে। মুসলিম ভূখন্ডসমূহ, সম্পদ, সামরিক ক্ষমতা, বিশাল জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে এটি রাতারাতি একটি পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভাব হবে। কাফির শক্তিসমূহের আগ্রাসন মোকাবেলা এবং সমগ্র বিশ্বে ইসলামের ন্যায়বিচার ও আলোকিত জীবনব্যবস্থা ছড়িয়ে দিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করবে, যেখানে এটির সামরিক দর্শন দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকবে। আর পারমাণবিক অস্ত্রের মত অত্যাধুনিক অস্ত্র ত্যাগ করা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা, তাঁর রাসূল (সাঃ) এবং মুসলিম উম্মাহ্‌’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, কারণ এগুলো ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের জন্য ঢালস্বরুপ। তাই সকল প্রকার সামরিক সক্ষমতা অর্জনের ব্যাপারে খিলাফত রাষ্ট্র যেকোন পশ্চিমা পরাশক্তির চাহিদা ও দাবিকে উপেক্ষা করবে কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিমদেরকে শক্তিশালী সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে আল্লাহ্‌’র শত্রু এবং ইসলামী উম্মাহ্‌’র শত্রুরা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর প্রস্তুত করো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী, যা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহ্‌’র শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জানো না, আল্লাহ্‌ তাদেরকে জানেন” [সুরা আল-আনফালঃ ৬০]। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌ মোতাবেক হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্রের সকল ধরণের পারমাণবিক অস্ত্র, রকেট, উপগ্রহ, বিমান, ট্যাঙ্ক, মর্টার, নৌ জাহাজ, সাঁজোয়া যান এবং সকল ধরণের ভারী ও হালকা অস্ত্র তৈরির কারখানা থাকা আবশ্যক। রাষ্ট্রের এমন কারখানা থাকা আবশ্যক যেখানে মেশিন, মোটর, উপকরণ এবং ইলেকট্রনিক্স তৈরি হয়, এবং এমন কারখানা থাকা আবশ্যক যার জনসাধারণের সম্পত্তির সাথে সম্পর্ক রয়েছে এবং হালকা কারখানাগুলো যার সামরিক বা যুদ্ধ শিল্পের সাথে সম্পর্ক রয়েছে”। 

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post