খবরঃ
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রকট স্ববিরোধিতা দেখা যায় কমিশনের এ বছরে প্রকাশিত রিপোর্টের জরিপ অংশে। জরিপে প্রকাশ, সংবিধানে ‘আল্লাহ্’র ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ চান ৫৩৪৩ জন, ইসলামী ভাবধারাভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র চান ৩০৩১ জন, শারী‘আহ্ভিত্তিক ইসলামী সংবিধান চান ৩৫৬৭ জন, সংবিধানে কুর‘আন ও সুন্নাহভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনার বিধান এবং সংবিধানে কুর‘আন-সুন্নাহ্ বিরোধী কিছু রাখা যাবে না, এমনটা চান যথাক্রমে ৪২২৩ ও ৫৭৫১ জন। সংবিধান সংস্কার ও নয়া সংবিধানে ইসলামী মূল্যবোধ অনুসৃত হোক, এমন চান ৩৯৮১ জন। পক্ষান্তরে, মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে চান ১৬৬০ জন। সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ চান ৬১৩ জন। সাম্য-মানবিকমর্যাদা-ন্যায়বিচার চান ১৬৩৩ জন। জনগণের ভেতর সেক্যুলার সাম্যভিত্তিক সংবিধানের পরিবর্তে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিকতার এমন ব্যাপক জনপ্রিয়তা কমিশন যে আমলে নেয়নি, তার কারণ তাদের স্মরণশক্তির অভাব নয়, বরং সুনির্দিষ্ট মতাদর্শিক রাজনৈতিক প্রকল্প। পরিতাপের কথা, তারা ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটে যে ইসলামী মতাদর্শিক জনগণের স্পষ্ট শরিকানা আছে, তাও অস্বীকার করে (https://www.dailyamardesh.com/op-ed/amdwyqvl3xqtb)
মন্তব্যঃ
ইতিপূর্বে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে থাকা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ সহ সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন ৫ মূলনীতিগুলোও (সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র) বেশিরভাগ জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বরাবরের মত জনগণের ইসলামী সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা দিয়ে শাসিত হওয়ার অভিপ্রায় স্পস্টভাবে ফুটে উঠেছে। এই রিপোর্টটি প্রমাণ করেছে যে তথাকথিত সংবিধান সংস্কার কমিশন ও ঐক্যমত্য কমিশন জনগণের আবেগ-অনুভুতির প্রতিনিধিত্ব করে না। এছাড়া যেসব রাজনৈতিক দল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে অটুট রেখে সংবিধান সংস্কারে সংলাপে অংশ নিচ্ছে তারাও জনগণের আশা-আকাংখাকে ধারণ করে না। কেউ অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজের নামে রেইনবো নেশনের কথা বলছে; অথচ রেইনবো হচ্ছে এলজিবিটিকিউ-এর প্রতীক যার মধ্যে সমকামিতার মত ঘৃণ্য মূল্যরোধ অন্তর্গত; আর কেউবা সংবিধানের ভিত্তি হতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ পরিবর্তনের কথা না বলে ক্ষমতার ভাগাভাগির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, জুলাই সনদ, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধি (পিআর) পদ্ধতির নির্বাচন, ইত্যাদির নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া, বিদেশী গোলামী থেকে মুক্তির যে গণআকাঙ্ক্ষা ছিল তার তোয়াক্কা না করে কতিপয় রাজনৈতিক দল পশ্চিমা দূতাবাসসমূহে দৌড়ঝাপ করছে। জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে এসব দৌড়ঝাপের সারমর্ম হলো পশ্চিমা সমর্থিত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা এবং দেশের উপর ঔপনিবেশিক শক্তির আধিপত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। ৯০% মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে যেই সংবিধান ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জনগণের ইসলামী বিশ্বাস ও আবেগ-অনুভূতিকে উপেক্ষা করে সেটা জনগণ কখনোই মেনে নিবে না এবং এই সংবিধান ও রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধও হবে না।
তাই দেশের সর্বস্তরের জনগণকে জনবিচ্ছিন্ন সংস্কার নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে, কারণ এসব সংস্কারপন্থীরা জনগণের উপর এমন একটি সংবিধান এবং পশ্চিমা সমর্থিত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর যা এই দেশের জনগণের বিশ্বাস, চিন্তাভাবনা, চেতনা এবং আবেগের পরিপন্থী। জনগণের বিশ্বাস ও আবেগ-অনুভূতি এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম কেবল ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা। জনগণকে ইসলামী সংবিধান এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থার দাবীকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করতে হবে। আর একমাত্র হিযবুত তাহ্রীর হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দল যারা ইসলামী সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য ইসলামী আদর্শভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে জনগণকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। হিযবুত তাহ্রীর ইতিমধ্যে কুর‘আন-সুন্নাহ্ এর ভিত্তিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ “খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান (খসড়া)” প্রস্তুত করেছে এবং জনগণের নিকট উপস্থাপন করেছে। তাই দেশের ছাত্র-জনতা ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী সংবিধান ও শাসনব্যবস্থার অতি শীঘ্র বাস্তবায়ন ঘটাতে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হওয়া।
-কাজী তাহসিন রশীদ