চামড়ার দেশেই বছরে ১,৫০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি

 


খবরঃ

দেশে নিজস্ব কাঁচামালনির্ভর রপ্তানিপণ্যের মধ্যে চামড়া অন্যতম। এটি দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিপণ্য, যা এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আন্তর্জাতিক সনদ মিলছে না। গত এক দশকে চামড়ার দাম না বেড়ে উল্টো কমেছে বলা যায়। বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। শুধু কি তাই? কাঁচা চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ এই দেশে এখন বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, উন্নত দেশে জুতা রপ্তানি করতে গেলে আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়; কিন্তু দেশে চামড়া প্রক্রিয়াকরণব্যবস্থা তথা সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) সেই মানের না হওয়ায় এ সনদ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিজেদের চামড়া গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও দেশের রপ্তানিমুখী জুতা কোম্পানিগুলোকে চীন, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশ থেকে চামড়াপণ্য আমদানি করতে হচ্ছে।

(https://www.prothomalo.com/business/industry/okwdh9weh4)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশে কি এই পরিমাণ চামড়াও উৎপাদন হয় না যার মাধ্যমে এদেশের মানুষদের সুলভ মূল্যে চামড়াজাত দ্রব্য সরবরাহ করা যায়? অথচ তুলা উৎপাদনে বিশ্বে ৪০ তম বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী ও বিকশিত শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া এ প্রশ্নেরও উদয় হয় কোন কারণে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চামড়া শিল্পে লিডারবোর্ডে চলে গেল কিন্তু বাংলাদেশ তার ধারে কাছেও যেতে পারল না? কাঁচা চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা চামড়া আমদানির জন্য গুণতে হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতে চামড়া পাচার একটি বহু পুরনো ও চলমান সমস্যা। ফলে দেশে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের হার মাত্র ৬৫% — বাকি হয় নষ্ট হয় বা পাচার করা হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পঞ্চাশ বছর পার হলেও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের এই যুগে কার স্বার্থে যাবতীয় চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে একটি সমৃদ্ধ চামড়া শিল্প নির্মাণ করা যাচ্ছে না? একদিকে এরকম উৎপাদনশীল খাতকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা আর অন্যদিকে  সম্পূর্ণরূপে বিদেশি কাঁচামাল নির্ভর রেডিমেড গার্মেন্টস ( RMG) খাত,  রেমিটেন্স ও অন্যান্য অনুৎপাদনশীল মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার লক্ষ্যেই কেনো সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে?

মূলত সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাঠামোগত সমন্বয় প্রোগ্রামের (SAPs) অধীনে বিভিন্ন শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৯৮০-র দশক থেকে নির্মাণ শিল্প ও কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ কমিয়েছে এবং সেবা ও রেমিট্যান্সভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকেছে। এ সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে গার্মেন্টস খাতকেই রপ্তানির মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে নিতে বাংলাদেশকে বাধ্য করে, কিন্তু চামড়া শিল্পের মতো উৎপাদনশীল, নিজস্ব কাঁচামাল নির্ভর, আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সম্ভাবনাময় শিল্পকে উপেক্ষা করে। লক্ষণীয় যে, ঔপনিবেশিক সময়ে ব্রিটিশরা কেবল তাদের স্বার্থে যেমন নীল চাষ বাধ্যতামূলক করেছিল, তেমনিভাবে নব্য উপনিবেশবাদী সময়ে এদেশে গার্মেন্টস খাতকে সুকৌশলে চাপিয়ে দিয়ে কেবল সস্তা শ্রমের ‘গ্লোবাল ফ্যাক্টরি’ বানিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে কার্যত বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র এখনো উপনিবেশবাদী কাঠামোর মধ্যেই রয়েছে। ফলে এখানকার নীতিনির্ধারক কিংবা শাসকদের পক্ষে এখনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের বাহিরে যাওয়ার সামর্থ্য তৈরি হয়নি। কারণ এটাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাঠামো। এই একই ফর্মুলা পাকিস্তান, মিশর ও নাইজেরিয়ার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে পরনির্ভরশীল শিল্পগুলোর দ্রুত বিকাশ হচ্ছে, অন্যদিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়ে তোলার পথ রুদ্ধ হয়েছে। এসবই সাম্রাজ্যবাদীদের নীলনকশা। এসকল নব্য উপনিবেশবাদী নীতিসমূহ  রাষ্ট্রসমূহের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।

এর বিপরীতে ইসলামী রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব কেবল আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা‘আলা’র কেননা “বিধান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্‌” [সূরা ইউসুফ : ৪০]। এখানে কোনো বহিরাগত শক্তি বা কাঠামোর অনুগত থাকার কিংবা ইসলামী রাষ্ট্রের উপর ছড়ি ঘোরানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই খিলাফত রাষ্ট্র তার সকল সম্ভাবনা সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য যাবতীয় নীতি নির্ধারণ করবে এবং আত্মনির্ভরশীল স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবে। উল্লেখ্য যে, খিলাফত রাষ্ট্রের অর্থনীতি হবে প্রতিরক্ষা শিল্পকেন্দ্রিক অর্থনীতি। উন্নত প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা ও তার ক্রমাগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়নই হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কাজেই এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জনে রাষ্ট্র চামড়া শিল্পের মত উৎপাদনশীল খাত বিকাশে জোর দেবে এবং দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করবে। সর্বোপরি, এভাবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি খিলাফত রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের হাতিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর চক্রান্ত উন্মোচিত করে পুঁজিবাদের পতনঘন্টা বাজাবে এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রকেও আধুনিক বন্দী দশার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নিয়ে আসবে, ইনশা‘আল্লাহ্‌।

    -    আলভি আরসালান


Previous Post Next Post