Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৩৭ তম সংখ্যা । ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১
“RAB এর সাবেক-বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা”
খবরঃ
RAB এর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ঘটনায় এ বাহিনীর সাবেক প্রধান, বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ২০০৪ সালে গঠিত RAB এর বিরুদ্ধে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার’অভিযোগ অনেক পুরনো। শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থদপ্তর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই তালিকায় RAB এর সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে RAB-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাউদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে। (bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1982435.bdnews)
মন্তব্যঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মানবতার
ও ন্যায়বিচারের রক্ষক মনে করার কোন কারণ নাই,
কারণ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার
প্রশ্নে সে
দুমুখো নীতি অবলম্বন করে। ফিলিস্তিনে দুর্বৃত্ত
ইহুদী সত্ত্বা যখন নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তখন আমেরিকা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। কাশ্মিরে ভারতীয় আগ্রাসনকে তার নিকট মানবাধিকার লঙ্ঘন মনে হয়না। গত
বছর ভারত
NRC ও CAA এর
মাধ্যমে কয়েক লাখ মুসলিমকে রাষ্ট্রহীন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে আমেরিকা সেখানেও মানবাধিকারের কথা বলে কোনরুপ হস্তক্ষেপ করেনি।
তাছাড়া আমেরিকা নিজে সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধের (Global War on Terror) নামে ইরাক ও আফগানিস্তানে ২০
লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছে এবং সিরিয়ার কসাই বাশার আল আসাদ কর্তৃক
মুসলিম গণহত্যাকে প্রত্যক্ষভাবে ও পরোক্ষভাবে তার মিত্র ইরান,
রাশিয়া ও
তুরষ্ককে দিয়ে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে শুধুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ থাকায় তথাকথিত এই
মানবতার ফেরিওয়ালার ভিন্ন রুপ আমরা চীনের জিংজিয়াং-এ প্রত্যক্ষ করেছি;
আমেরিকা উইঘুরদের নিপীড়নকে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে প্রচার করে চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
আমেরিকা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যায় মায়াকান্না দেখালেও
রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুকে জিইয়ে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে সে মিয়ানমারে ব্রিটিশ
সমর্থিত সামরিক জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
আমরা এটাও প্রত্যক্ষ করেছি সম্প্রতি আমেরিকা আফগানিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠায় তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা অর্জনের উপায় হিসাবে ২৩
মিলিয়ন আফগান জনগণকে জোড়পূর্বক ক্ষুধা ও অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। একই কায়দায় আমেরিকা তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বৃটিশ দালাল হাসিনাকে চাপে ফেলে নিজের আয়ত্বাধীন করতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা
বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্মকর্তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে
অভিযুক্ত করলো।
এভাবে মানবতার কল্যাণের প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকলেও উপনিবেশবাদী আমেরিকা তার সংকীর্ণ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনে মানবাধিকারের স্লোগানকে বিশ্বব্যাপী ঠিকই ফেরি করে বেড়াচ্ছে।
তাই মানবতার কল্যাণে পশ্চিমা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য মুসলিমদের অবশ্যই কোন কাল বিলম্ব না করে প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্’কে ফিরিয়ে
আনার কাজে ধাবিত হতে হবে।
আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র বিশ্ব নেতৃত্ব দেয়ার জন্য কোন প্রকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিবে না। খিলাফত রাষ্ট্র এমন দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে যা মানবতার প্রতি আহ্বান জানাবে,
দাওয়াহ এবং জিহাদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইসলামের
আহবানকে ছড়িয়ে দিবে, বিশ্বের অন্যান্য
নিপীড়িত রাষ্ট্রগুলোকে খিলাফতের
কাছাকাছি নিয়ে আসবে, ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের পরিবর্তে
ইসলামের ন্যায়বিচারকে আন্তর্জাতিক
রীতি হিসাবে প্রতিস্থাপন করবে এবং খিলাফতের বলয়ভুক্ত একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা (New World Order) বিনির্মাণ করবে।
-
মোহাম্মদ সিফাত
“আবরার হত্যাঃ ২০ আসামির মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৫ জনের”
খবরঃ
দুই বছর আগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড
দিয়েছে আদালত;
পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
আসামিদের সবাই বুয়েটের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী। তাদের মধ্যে ২২ জনের উপস্থিতিতে আদালত এই
রায় ঘোষণা করে; বাকি তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। আবরারের বাবা, এ মামলার
বাদী বরকত উল্লাহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। এখন দ্রুত এই রায় কার্যকর হবে, এটাই তার প্রত্যাশা।
(bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1981067.bdnews)
মন্তব্যঃ
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন
হচ্ছে যে, দেশে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা কিংবা বিভিন্ন সময়ের সরকারগুলো কি আদৌ ন্যায়বিচারের
তোয়াক্কা করেছে?
সাগর-রুনীর হত্যাকান্ডের নয়
বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তই শেষ হয়নি!
রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষনের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকপুত্রসহ অন্যান্যরাও বেকসুর
খালাসপ্রাপ্ত হয়েছে।
সরকার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে মুনিয়া হত্যকান্ডের সাথে জড়িত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরকে কোনরকম
‘ফুল-টোকা’ ব্যতিরেকেই অব্যাহতি দিয়েছে। তাহলে প্রশ্ন
হচ্ছে, হঠাৎ করে সরকার ও তার বিচার ব্যবস্থার কি
এমন হল
যে তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লেগে গেল! মূলত সরকার তার হারানো ইমেজ ফিরে পেতে এবং তার বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্যমান ক্ষোভকে প্রশমিত করতেই মাঝে মাঝে তার নিজের দলের লোকজনকেই
‘বলির পাঁঠা’
বানায়। মুরাদ হাসান, শাহেদ, সাবরিনা, ক্যাসিনো সম্রাট,
যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া কিংবা গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম– এরা সবাই হাসিনা সরকারের মুখ রক্ষার
‘বলির পাঁঠা’। এই
সিরিজের সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে বুয়েটের এই ২৫ ছাত্রের
দন্ড।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বুয়েটের মত দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের জন্য কেন আজ ফাঁসির দড়ি অপেক্ষা করছে?
এরা কি
বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল মানুষ হত্যার ট্রেনিং নিতে? সহজ উত্তর হচ্ছে,
না। বাংলাদেশের বর্তমান
ও সাবেক সব সরকারগুলো ছাত্র রাজনীতিকে ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্য বিস্তারের খুটি ও ‘ফিল্ড স্ট্রাইকার’ হিসেবে
ব্যবহার করেছে।
হল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সাময়িক ক্ষমতার স্বাদ কিংবা সুবিধা ছাত্র রাজনীতির কতিপয় নেতাকে পরিণত করেছে একেকটি ‘দানবরূপে’। এটাই বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা এখানে রাষ্ট্রের হৃদপিন্ড থেকে শুরু করে শিরা-উপশিরা পর্যন্ত
দানবের জন্ম দেয়। কারণ এই ব্যবস্থা যেহেতু স্রষ্টাকে জীবন ও
রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে ফলে শাসকবৃন্দ এখানে নিজের ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা ভোগ করে (যেমন: বাংলাদেশে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন), যা তাদেরকে
স্বেচ্ছাচারী করে তোলে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা থাকে তারাও স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠে। তরুণদের মেধা আর সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জাতির উন্নতি করা কখনোই এসব শাসকদের উদ্দেশ্য থাকে না, বরং তারুণ্যকে তারা নষ্ট করে ভুল পথে ধাবিত করে।
অতঃপর যখন এদের কাজ উদ্ধার হয়ে যায় তখন এদেরকে টিস্যু পেপারের মত ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে।
তরুণদের মেধা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে শুধুমাত্র এমন এক
ব্যবস্থা যা
একটি সঠিক আকীদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং যার আছে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ও
সারাবিশ্বে নিজেদের প্রভাব স্থাপন করার বৈশ্বিক লক্ষ্য। আর
তা শুধুমাত্র ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফত রাষ্ট্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে
সম্ভব। ইসলাম তরুণদেরকে বিশ্বজয়ের মানসিকতা প্রদানের মাধ্যমে তরুণদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কিংবা হল নিয়ন্ত্রনের মত ক্ষুদ্র কাজ ছেড়ে এদেরকে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখাবে এবং মানবজাতিকে ইসলামের মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার মহান কাজে লিপ্ত করবে।
উপরন্তু সহপাঠীকে হত্যার পরিবর্তে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করবে।
আওয়ামী-বিএনপির
ক্ষমতা ধরে রাখার পরিবর্তে ইসলাম তাদের হাতে তুলে দিবে কলম-খাতা-গবেষণাগার যার ফলে তৈরী হবে এ যুগের ইবনে সিনা, আল-খারেজমি, আল-জাবির, ইবনে আল-হাইশাম, আল-বিরুনী, আব্বাস ইবনে ফিরনাস, আল কিন্দির
মত জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী।
-
মো. হাফিজুর রহমান
“হেলিকপ্টার বিধ্বস্তঃ ভারতের প্রতিরক্ষাপ্রধান বিপিন রাওয়াত নিহত”
খবরঃ
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতের প্রতিরক্ষাপ্রধান জেনারেল
বিপিন রাওয়াত নিহত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রীসহ হেলিকপ্টারের আরও ১১ আরোহী নিহত হন। …রাশিয়ার
তৈরি এমআই-১৭ভি৫ মডেলের হেলিকপ্টারটিতে ১৪ জন
আরোহীর মধ্যে পাঁচজন ক্রু ও
নয়জন যাত্রী ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী মাধুলিকা রাওয়াত ছাড়াও সেনা কমান্ডোরা ছিলেন। …সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে নতুন তৈরি করা ভারতের সামরিকবিষয়ক বিভাগের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে চার দশকের পেশাগত জীবনে ভারতের সংঘাতপ্রবণ জম্মু ও কাশ্মীরে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চীন সীমান্তেও ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। (www.prothomalo.com/world/india/হেলিকপ্টার-বিধ্বস্ত-হয়ে-ভারতের-প্রতিরক্ষাপ্রধান-বিপিন-রাওয়াত-নিহত)
মন্তব্যঃ
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা প্রধান নিহত হওয়ার মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হলো ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর ও
দুর্বল, গত
কয়েক বছর ধরেই বিশ্ববাসী যা ধারাবাহিকভাবে প্রত্যক্ষ
করে আসছে। নিকট অতীতে ২০১৯ সালে কাশ্মির উত্তেজনার সময় পাকিস্তানি এফ-১৬এস দ্বারা ভারতীয় মিগ-২১ ভূপাতিত হয়ে এর পাইলট গ্রেপ্তার হয়
এবং ২০২০ সালে চীনের সাথে সংঘর্ষে চীনা সেনাবাহিনী কর্তৃক
ভারতীয় সেনাবাহিনী অপদস্থ
হয়। মুলতঃ ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধুমাত্র নাটক-সিনেমায় অনেক দুঃসাহসিক ও শক্তিশালী,
কিন্তু বাস্তবে এটা কাগজের
বাঘ। ২০১৫ সালে ভারতের কম্পট্রোলার এ্যান্ড
অডিটর জেনারেলের
(ক্যাগ) এর প্রতিবেদনে বলা হয় ২০দিনের বেশি যুদ্ধ স্থায়ী হলে ভারতের পরাজয় নিশ্চিত।
বর্তমানে, যেকোন দেশের সামরিক শক্তি উক্ত দেশের মোট সৈন্য সংখ্যা,
যুদ্ধশাস্ত্র, সামরিক
সরঞ্জামাদি, পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাগজে কলমে নির্ধারণ করা হলেও সত্যতা হচ্ছে বর্তমান সামরিক শক্তিগুলোর বেশিরভাগই কাগুজে পরাশক্তি। প্রমাণস্বরূপ, যার সামরিক কমান্ডার হিসেবে ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কাজ করছে সেই আমেরিকাই এই অঞ্চল তথা আফগানিস্তান থেকে রাতের অন্ধকারে বাতি বন্ধ করে পালিয়েছে।
অথচ, পরিতাপের
বিষয় ভারতের মত এমন দুর্বল সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে যাদের কিনা যুদ্ধ জয়ের তেমন কোন প্রকৃত গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস নেই, বরং আছে শুধুমাত্র কিছু কাপুরুষোচিত ঘটনার ইতিহাস;
যাও আবার সম্ভব হচ্ছে মূলত এই অঞ্চলের কিছু দালাল শাসকদের কারণে। যেমন, ২০০১ সালে বাংলাদেশের দুঃসাহসিক
ও শক্তিশালী মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে কুড়িগ্রামের রোমারী ও
সিলেটে পদুয়াতে সংঘর্ষে লাঞ্চিত হওয়ার পর দালাল হাসিনা
সরকারের সহায়তায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পীলখানা হত্যাকান্ড ঘটিয়ে আমাদের সেনাবাহিনীকে দুর্বল এবং নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালানো হয়। আবার আমরা দেখছি কাশ্মীর মুক্ত করতে অত্যন্ত শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকা স্বত্বেও মার্কিন দালাল ইমরান-বাজওয়া সরকার ভারতীয় দখলদারিত্ব অবসানের
কোন চেষ্টাই চালাচ্ছেনা। এরকমভাবে দালালদের মাধ্যমে এই ভারতীয় মুশরিকরা তাদের একধরণের কৃত্রিম আধিপত্যের বলয় তৈরি করে রাখছে যার ভিতরটা মাকরশার ঘরের মত নিতান্তই দুর্বল।
আর এই
দুর্বল বলয়ের আধিপত্য নিমিষেই বিলীন হয়ে যাবে যখন এই অঞ্চলে পুনঃরায়
আবার পরাক্রমশালী ইসলামী
খিলাফত রাষ্ট্র ফিরে আসবে। যেই রাষ্ট্রের আছে পৃথিবীকে দাপটের সাথে প্রায় ১৪শ বছর শাসন করার ইতিহাস। যার গৌরবের ঝুড়িতে রয়েছে,
পারস্য, বাইজেন্টাইন, ক্রুসেডার, মঙ্গলদের
মত পরশক্তিদের মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ইতিহাস যারা আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। মূলত, মুসলিম
সেনাবাহিনীর ঐতিহ্যই হচ্ছে পরাশক্তিদের পরাজিত করে ইসলামের আধিপত্য দুনিয়াব্যাপী প্রতিষ্ঠা করার।
আর এই
ঐতিহ্য খিলাফত রাষ্ট্র ফিরে আসার সাথে সাথে আবারো ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ্।
-
আসাদুল্লাহ নাঈম
“ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ”
খবরঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগে পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ
হাসানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আবেদন সোমবার খারিজ করে দেন।... মামলার আবেদনে বলা হয়, আসামিরা
ফেসবুক লাইভে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী এবং যে কোনো নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ভাষা’ ব্যবহার
করেছেন।
যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বিভিন্ন টকশো ও অনুষ্ঠানে নানা বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ও ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার সঙ্গে অডিও ফাঁসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন ডা. মুরাদ
হাসান। (samakal.com/bangladesh/article/211288724/ডা-মুরাদের-বিরুদ্ধে-মামলার-আবেদন-খারিজ)
মন্তব্যঃ
মুরাদকে বিনা বাধায় বিদেশ যেতে দেয়া, তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়াতে দেশের জনগণ অবাক হয়নি, বরং মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ন্যায়বিচারক সাজার নির্বুদ্ধিতা দেখে তারা অবাক হয়েছে।
মুরাদ সবসময় বলত, “আমি
যা বলি তা প্রধানমন্ত্রীর, আমি প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি করি, অন্য
কারো নয়”; “প্রধানমন্ত্রী
বললে আমি আগুনে ঝাপ দিব”।
এর আগেও সে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে বিতর্কের সময় একই ভাষায় কথা বলেছিল।
তারপর সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হল, ‘বিষয়টি মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত বক্তব্য হতে পারে’।
প্রকৃতপক্ষে মুরাদের মত ব্যক্তিরা বর্তমান ক্ষমতার রাজনীতির অন্যতম অস্ত্র; যাদের উত্থান, আশ্রয় ও
প্রশ্রয় দেয়া হয় যাতে এমন অনেক কথা ও কাজ তাদের দিয়ে করানো যায় যা সরকারের উচ্চ
পর্যায়ের নেতৃত্ব করতে পারে না।
প্রকৃতপক্ষে মুরাদ কিংবা তার ‘মায়ের মত’ বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী-প্রত্যেকেই
বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার
গর্ভে জন্ম নেওয়া নষ্ট সন্তান ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ব্যবস্থা মানুষের জন্য এক অবাস্তব ও কল্পিত ‘স্বাধীনতা’য় বিশ্বাস করে এবং তাকে মহিমান্বিত করে। ফলে সমাজে একজনের স্বাধীনতার চর্চা অন্যের পরাধীনতার কারণ হয়।
তখন মানুষে মানুষে সঙ্ঘাত তৈরি হয়।
যেমন, মুরাদের
স্বাধীনতা চর্চায় চিত্রনায়িকা মাহি পরাধীনতার শিকার হয়, নাসিরের
স্বাধীনতা চর্চায় পরিমনিরা পরাধীনতার শিকার হয় কিংবা প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতার চর্চায় সমগ্র জনগণ পরাধীনতার শিকার হয়। অবশেষে, এই
সংঘাত থেকে উত্তরণের জন্য যখন মানুষ বিচারব্যবস্থার দ্বারস্থ হয় তখন তা ক্ষমতাবানদের পক্ষে রায় দেয়।
তাই তখন সব মানুষ নিজের স্বাধীনতা চর্চার আশায় ক্ষমতা অর্জনের নেশায় পাগল হয়ে ছুটতে থাকে।
কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক লোকইতো ক্ষমতায় যেতে পারে।
তখন সকল মানুষকে তারা তাদের পরাধীন করে নিজেদের স্বাধীনতার চর্চা করে।
তাই স্বাধীনতা চর্চার বিষাক্ত তত্ত্বকথা আমাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে
বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা আর কাফিরের জন্য
জান্নাত”
(সহীহ্ মুসলিম)। একজন মুমিন
তার সকল চিন্তা, কথা
এবং কাজের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছে দায়বদ্ধ।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা
বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেকটি জিনিসের ব্যাপারে হিসাব নিবেন”
(সূরা আন নিসাঃ ৮৬)।
তাই সকলের স্বাধীনতার মূলা দেখিয়ে ক্ষমতাবানদের হাতে সকল মানুষকে পরাধীন করার এই প্রতারণামূলক ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদায় বিশ্বাসী পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে অপসারণ করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী বিষয়।
এবং একে এমন একটি ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে, যেখানে
মানুষ হয়ে মানুষের পরাধীনতার অধীনে থাকতে হবে না।
একমাত্র দাসত্ব হবে মহাবিশ্বের পালনকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া
তা‘আলা’র। যিনি সকল বিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান,
সকল দাসদের রব।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দাসত্বের এই
জীবন ব্যবস্থার
নাম হচ্ছে ইসলাম এবং যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় তা বাস্তবায়ন করা হয় সেটি হল ‘খিলাফত’ রাষ্ট্র
ব্যবস্থা।
- মো:
জহিরুল
ইসলাম
“কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু”
খবরঃ
খুলনা প্রকৌশল
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের রহস্যজনক
মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর মানসিক
নিপীড়নে ড. সেলিমের মৃত্যু হয়েছে। কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ এ শিক্ষকের রহস্যজনক
মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতারা।
অন্যদিকে কুয়েট ছাত্রলীগ খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, সেলিম স্যারের মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও একটি কুচক্রী মহল ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে
ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। (www.jugantor.com/todays-paper/editorial/494634/কুয়েট-শিক্ষকের-মৃত্যু)
মন্তব্যঃ
“লেখাপড়া করে
যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”- এই প্রেরণায় যখন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে তখন
উপরিল্লিখিত ঘটনাসমূহের অবতারণাই কি স্বাভাবিক নয়? চেয়ারম্যান কর্তৃক শিক্ষককে চড়
মারা, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক শিক্ষকদের অপমানিত হওয়া, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের
মাধ্যমে নিয়মিত ভিত্তিতে শিক্ষকদের হেনস্থা করা ইত্যাদি সব খুবই নিত্যনৈমিত্তিক
ঘটনা। তাছাড়া গত ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবরারের মত ৮ জন ছাত্রসহ মোট ২৪ জনকে
হত্যা করা হয়েছে। আবরারের মত একেকজন ছাত্রের খুন ২৫ জন খুনী তৈরি করে দিচ্ছে। বর্তমানে
আমরা দেখি যে, ক্ষমতাসীন মন্ত্রী এমপিদের মধ্যেও মূলত গায়িকা, ক্রিকেটার এবং
ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য প্রবল, যাদের বেশিরভাগেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করার মত
নয়। শুধুমাত্র তাদের আর্থিক সক্ষমতা আর চাটুকারিতায় পারদর্শিতা তাদের অবস্থানের
জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী। অর্থাৎ আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কোন দিক থেকেই
শিক্ষার কোন ভূমিকা নেই। স্বাভাবিকভাবে, শিক্ষক এবং ছাত্র উভয়পক্ষকেই বিকল্প উপায়ে
নিজেদের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় বহন করতে হয়। ফলে শিক্ষকরা কার্যকরী
গবেষণা না করে সাদা দল ও নীল দলে বিভক্ত হয়ে যান। কারণ প্রকৃত গবেষণার কোন উদ্দেশ্য
ও প্রায়োগিক স্থান তারা পান না। বরং সাদা দল ও নীল দলে ভাগ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের
গুরুত্বপূর্ণ পদ ও সুযোগ সুবিধা অনায়াসে করায়ত্ত করা যায়। একইভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা
হয় সরকারীদলের ছাত্র সংগঠনে যুক্ত হওয়া নয়তো বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়াকেই
শ্রেয় মনে করে। কারণ তারাও তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের প্রয়োগের কোন সুযোগ পান না।
বরং গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে যে ব্যক্তি যত বেশি শিক্ষিত তার বেকার থাকার
সম্ভাবনা তত বেশি। তাই নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একমাত্র পথ খোলা থাকে যেকোন
মূল্যে অর্থ এবং ক্ষমতা অর্জন করা। সে উদ্দেশ্যেই মেধাবী শিক্ষার্থীরা
চাঁদাবাজি, মারধর-খুন খারাপি এবং মাদক ব্যবসা ইত্যাদি করে নিজের বর্তমান এবং
ভবিষ্যৎ উভয়কেই সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেন।
বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ
শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্র এবং শিক্ষক কাউকেই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করতে
পারে নাই। বরং শিক্ষাও তাদের কাছে এডাম
স্মিথের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থের একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিগণিত। অথচ খিলাফত
শাসনামলে আমরা দেখেছি একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন বাইতুল হিকমাহ, আল আজহার
এবং আল কারাউইন যাদের কার্যক্রম ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের সাথে সমন্বিত। খিলাফতে
অধীনে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা একদিকে আল্লাহভীরু জনগোষ্ঠী তৈরি করেছে এবং অন্যদিকে বিষয়ভিত্তিক
জ্ঞানে অনন্য ছাত্র-ছাত্রীও প্রস্তুত করেছে। যেমন বিমান আবিষ্কারের জনক আব্বাস ইবনে ফিরনাস, আধুনিক
সার্জারির জনক আল-জাহরাভি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক ইবনে সিনা, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারের
জনক আল জাজারি, রসায়নের জনক জাবির ইবন হাইওয়ান, আলোক বিজ্ঞানের জনক হাসান ইবন
হাইসামসহ আরো অনেকে। একটি আদর্শিক জাতি গঠনের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আদর্শিক জাতির জন্য
দরকার একটি ত্রু টিহীন আদর্শিক জীবনব্যবস্থা
যা একমাত্র মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে পাওয়া
সম্ভব, যেটা হচ্ছে ইসলাম। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিনিয়ত
ইসলামী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এমন ছাত্র-ছাত্রী প্রস্তুত করবে যাদের থাকবে ইসলামকে
সারাবিশ্বের সামনে নেতৃত্বশীল জায়গায় পৌছানোর উদ্দেশ্য এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।
-
জীবন চৌধুরী