জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি: ৩৬ দিনের কর্মসূচি শুরু আজ

 


খবরঃ

…জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।… (https://www.ittefaq.com.bd/739155/জুলাই-গণঅভ্যুত্থানের-বর্ষপূর্তি-৩৬-দিনের-কর্মসূচি)

মন্তব্যঃ

জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি দেখা গেলেও তা নিয়ে জনগণের মধ্যে কোন সাড়া নেই। আন্দোলনে ব্যাপক মানুষের সম্পৃক্ততা থাকলেও আন্দোলন পরবর্তী সরকারের প্রতি চাওয়া-পাওয়া নিয়ে মানুষ হতাশায় ভুগছে। মানুষ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চেয়েছিল, যেখানে রাজনীতি হবে জনগণকে দেখাশোনা করার রাজনীতি। জনগণের চাহিদাসমূহ ছিল বিদেশী আধিপত্য থেকে মুক্তি, পিলখানা হত্যা কিংবা ৫ই মে শাপলা চত্ত্বর গণহত্যার বিচার, বেকারত্ব ও বৈষম্য দূরীকরণ, ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি দমন-নিপীড়নের অবসান, জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি। কিন্তু জনগণকে অনেক আশা দিলেও, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেই পুরোনো সেক্যুলারিজমকেই (যেটা হাসিনার শাসনেরও ভিত্তি ছিলো) নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তি বানানো হয়েছে, যেখানে শাসকেরা তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট জবাবদিহিতাকে পরোয়া করে না। এই ব্যবস্থায় শাসকরা শাসনক্ষমতাকে রাজনীতির পুরস্কার মনে করে তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে জনগণের দেখাশোনা করা নিয়ে শাসকের কোন চিন্তা থাকে না। সেক্যুলারিজমের ভিত্তিতে প্রণীত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শাসকরা কখনো সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে বাধ্য নয়। এই শাসনব্যবস্থা সকলের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বাধ্য নয়। আর যেহেতু এই শাসনব্যবস্থা পাশ্চাত্য থেকে আমদানিকৃত, সেহেতু সেক্যুলার শাসকরা আমেরিকা-ব্রিটেনের মত উপনিবেশবাদী শক্তিকে তাদের পথ-প্রদর্শক মনে করে। ফলে তাদের আধিপত্য থেকে জাতিকে মুক্ত করা দূরে থাক, উল্টো তাদের আধিপত্য রক্ষায় স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করে। যেমন, মার্কিন স্বার্থে প্রণীত ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশের বিগত সরকারের মত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও আমেরিকাকে সহায়তা করে যাচ্ছে। আর ইসলাম ও মুসলিমদের দমনের ক্ষেত্রে, যেসব ইসলামপন্থী দল সেক্যুলার বন্দোবস্তে অংশগ্রহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে (যেমন, হি*যবুত তাহ*রীর), তাদের উপর দমন-নীপিড়ন অব্যাহত রয়েছে। ফলত, পূর্বের হাসিনা সরকারের সাথে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের ভিত্তিমূলগত জায়গায় কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। ফলে জনগণের অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের কর্মকান্ডেও কোন গুনগত পরিবর্তন দেখা যায়নি।

তাই, একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল- তাদের ক্ষমতা প্রাপ্তিতে কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা সুগম হওয়াতে খুশি হয়ে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে উদযাপন করছে, অন্যদিকে গণ-অভ্যূত্থানের মূলশক্তি ‘জনগণ’ হতাশায় ভুগছে। ফলে এই উদযাপন জনসম্পৃক্ততা হারিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিবর্গ দ্বারা গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে, আবহমান সেক্যুলার রাজনীতির বাংলার চিরন্তন সংস্কৃতি অনুযায়ী, ভাড়া করে লোক সমাগম দেখাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। 

আজকে যদি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে, ক্ষমতাসীন অন্তবর্তী সরকার ‘সেক্যুলারিজম’কে বাতিল বলে ঘোষণা করতো এবং জনগণের বিশ্বাস ‘ইসলাম’ থেকে আসা জীবনব্যবস্থা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করত, তাহলে খুব দ্রুতই তারা জনপ্রিয়তা পেতো। আর এই ব্যবস্থা যেহেতু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট থেকে আগত, সেহেতু এটা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত। এখানে শাসক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-কে ভয় করে এবং প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে বাধ্য। উপরন্তু শাসককে বিচারের আওতায় আনার জন্য মাহকামাতুল মাযালিম আদালত ও জনসাধারণের ‘সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ’-এর সংস্কৃতি শাসককে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে দেয় না। ইসলামী শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে ‘হাজ্জাজ বিন ইউসুফ’ এর মত অনমনীয় ও কঠোর শাসক আসলেও, তারা কখনো জনগণের অধিকার জনগণকে বুঝিয়ে দিতে কিংবা উম্মতের দায়িত্ব নিতে পেছপা হননি। তাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব নেওয়া সেক্যুলার শাসকদের কর্মকান্ডে জনগণের হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে, এমন দলের পিছনে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিৎ, যারা সেক্যুলারিজমকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

    -    মো: জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post