Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 43

 





 

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৪৩ তম সংখ্যা ২৯ জানুয়ারী, ২০২২

 

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

 

 

 

আইপিটিভিইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা হলে ব্যবস্থা: তথ্যমন্ত্রী

খবরঃ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার বন্ধে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে  সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইপিটিভি-ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তথ্যমন্ত্রী। সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী কোনো আইপি টিভি সংবাদ প্রচার করতে পারে না। এছাড়া ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, এগুলো সম্প্রচার নীতিমালার পরিপন্থী। আপনাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। একই সঙ্গে যেসব সংবাদপত্র ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করছে, তাদের সেটার কোনো অনুমতি নেই। অনুমোদনহীন কিছু করা বেআইনি। আমরা সে ব্যাপারেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। (www.prothomalo.com/bangladesh/capital/আইপিটিভিইউটিউব-চ্যানেলে-সংবাদ-প্রচার-করা-হলে-ব্যবস্থা-তথ্যমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

বর্তমান সরকারের ব্যাপক দমন-নিপীড়ন সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়াসহ IPTV (ইন্টারনেটভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম) গুলোতে সরকারের দুর্নীতি, জুলুম ও লুটপাটের খবর প্রকাশ থেমে নেই, যা তাদের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমান সরকার তার সমর্থিত দালাল মিডিয়া ব্যতীত সকল প্রকার স্বাধীন মিডিয়াগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। মূলত, ধর্মনিরপেক্ষ এই শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সম্মানের দাবী করলেও তারা তাদের এই ভিত্তিহীন ও প্রতারণামূলক স্লোগাণের প্রতি কখনোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। যখনই তারা কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তখন তারা নিজেদেরকে যতই গণতান্ত্রিক দাবী করুক না কেন, সেই ভিন্নমতকে অত্যন্ত কঠোরতার সাথে দমন করে। এভাবে ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা তাদের তথাকথিত পবিত্র স্তম্ভগুলোকে (যাকে তারা পবিত্র মনে করে) নিজেরাই খেয়ে ফেলছে যেভাবে তৎকালীন মক্কার জাহেলী যুগে পৌত্তলিকদের কেউ কেউ মূল্যবান ‘আজওয়া’খেজুর দিয়ে মূর্তি বানাতো, অতঃপর ক্ষুধার্ত হলে তা খেয়ে ফেলত! বিশ্বব্যাপী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমুহের কোথাও স্বাধীন গণমাধ্যমের অস্তিত্ব নেই। ২০২১ সালে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২৫টি মামলায় সাংবাদিক সহ সর্বোমোট ১৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয় (যুগান্তর, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১)। Reporters Without Borders তাদের বিশ্ব প্রেসফ্রিডম ইনডেক্সের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যে- ১৮০টি দেশের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশেই সাংবাদিকতা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে (https://www.rferl.org/a/world-press-freedom-under-threat/31227193.html)। তাই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় স্বাধীন মিডিয়া বলে কিছু নেই; গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটা কল্পকাহিনী (Myth) মাত্র।

অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রের গণমাধ্যমসমূহ হবে ইসলামের ধারক-বাহক ও প্রচারক। একক ইসলামী সমাজ গঠন, খলীফা ও শাসকদের জবাবদিহি করা, কুফর বিশ্বে ইসলামী ব্যবস্থার ন্যায়বিচার ও সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি মানবরচিত ব্যবস্থার অসঙ্গতি, দুর্নীতি এবং জুলুমকে প্রকাশ করার মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্রের গণমাধ্যম এক অনন্য সাধারণ গণমাধ্যমে পরিণত হবে। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর নির্যাতিত ও নিপীড়িত গণমানুষ তাদের মুক্তির পথ খুঁজে পাবে এবং ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করবে। এই স্পিরিট বজায় রেখে খিলাফতের যেকোন নাগরিক যেকোন ধরনের প্রচারযন্ত্র স্থাপন করতে পারবে, সেটা প্রকাশনার মাধ্যমে হোক কিংবা অডিও বা ভিজ্যুয়াল যাই হোক না কেন। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৪ এ বলা হয়েছে,রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের মালিকানাধীন গণমাধ্যমের অনুমতির প্রয়োজন হয় না; বরং তাদের কেবল তথ্য বিভাগকে (আল-লাম) জানাতে হবে, যাতে তথ্য বিভাগ উক্ত মিডিয়াটি সম্পর্কে অবগত হতে পারে যা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যেকোন মিডিয়ার মালিক সম্পাদকরা তাদের প্রকাশ করা প্রতিটি নিবন্ধের জন্য দায়ী এবং অন্য নাগরিকদের মতো একইভাবে শারীআহ্বিরোধী যেকোন কিছুর জন্য দায়ী

  • মোহাম্মদ সিফাত

 

“বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় পিডিবি” 

খবরঃ

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। নিত্যদিনের এ সেবাপণ্যটির পাইকারি দাম প্রায় ৬৯ শতাংশ বাড়াতে চায় এ খাতের শীর্ষ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আর বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়লে খুচরা দামও বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি কার্যকর এবং চলতি জানুয়ারিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়ার মধ্যেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। (www.ittefaq.com.bd/311742/বিদ্যুতের-দাম-বাড়াতে-চায়-পিডিবি%C2%A0)

মন্তব্যঃ

বিগত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি একটি নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র গত ১১ বছরে সরকার নানা উসিলায় ১০ বার বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি করেছে। যখন থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী দেশের জনগণের স্বার্থকে বিবেচনা না করে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে তখন থেকেই বিদ্যুৎ খাতের নৈরাজ্যের সূচনা। বিশ্বব্যাংকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সালে শাসকগোষ্ঠী বিদ্যুৎ “উৎপাদন নীতি” অনুমোদন করে যার মূখ্য বিষয় ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (IPP) নামে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করে দেয়া। এছাড়া, তারা দক্ষতা বৃদ্ধির নামে সরকারী ব্যবস্থাপনার বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙ্গে ছোট ছোট কোম্পানী তৈরি করে এই খাতে বেসরকারী বিনিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। গুটি কয়েক প্রতিষ্ঠানের স্থলে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হবার কারণে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুৎ খাতের পরিচালনা ব্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারী মালিকানায় বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেসরকারী মালিকানায় “কুইক রেন্টাল” বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের সাথে অতি উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। শাসকগোষ্ঠী পুঁজিপতিদের সন্তুষ্ট রাখতে এত বেশী “কুইক রেন্টাল” বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার অনুমতি দেয় যে বর্তমানে এই সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ৫৭% অলস বসে আছে। কিন্তু, কোন প্রকার বিদ্যুৎ না নিয়েও চুক্তি অনুযায়ী এই সকল বেসরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে “ক্যাপাসিটি চার্জের” নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ এই সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের প্রদান করা হচ্ছে। শুধুমাত্র, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে  এই সকল বেসরকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়। যার ফলে বিদ্যুৎ ক্রয়ে দেশের একমাত্র পাইকারী বিদ্যুৎ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পিডিবির লোকসান ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ এবং শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ কতিপয় পুঁজিপতির স্বার্থরক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার ফলে বিদ্যুৎ খাতে চলছে ব্যাপক লুটপাট এবং দুর্নীতি। শাসকগোষ্ঠী এই সমস্যার মূল কারণ জানার পরেও মূল সমস্যা সমাধানে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, বরং পুনঃ পুনঃ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে এই ‍দুর্নীতি এবং লুটপাটের বোঝা জনগণের কাঁধের উপর চাপাচ্ছে, কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই হলো জনগণকে শোষণ এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের তোষণ। তাই পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থাকে নির্মূলের ডাক না দিয়ে শুধুমাত্র এই অত্যাচারী সরকারকে বিদ্যুৎ এর দাম কমানোর আহ্বান করা নেহাতই বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ত।

আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র জনগণকে শোষণকারী সাম্রাজ্যবাদের মদদপুষ্ট পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দুষ্ট চক্রকে সমূলে উৎপাটন করে বিদ্যুৎ খাতকে ঢেলে সাজাবে। বিদ্যুৎ খাত তিনটি কারণে খিলাফত রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বর্তমানে বিদ্যুৎ উন্নত এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের জন্য অপরিহার্য যা জনগণের অধিকার। দ্বিতীয়ত, সাশ্রয়ী এবং নিবিঘ্ন বিদ্যুৎ শিল্প বাণিজ্য বিকাশে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ খাতের প্রধান জ্বালানী যেমনঃ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, এবং তেল গণমালিকানাধীন সম্পদ। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের এই সম্পদগুলোর থেকে সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সুতরাং, খলিফা উম্মাহ্‌’র অভিভাবক হিসেবে এই খাত থেকে দেশী-বেদেশী পুঁজিপতিদের কর্তৃত্বের অবসান করে উম্মাহ্‌’কে এর সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি করবেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা (ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান) হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তারা নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” (বুখারী)।

  • মোঃ সিরাজুল ইসলাম

 

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৩তম, এক ধাপ উন্নতি

খবরঃ

বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অবশ্য দুর্নীতির এই সূচকের মৌলিক বিষয়, অর্থাৎ স্কোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি নেই। ১০০–এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৬, যা গতবারও একই ছিল। এমনকি চার বছর ধরে স্কোরটি একই আছে। (www.prothomalo.com/bangladesh/বিশ্বের-সবচেয়ে-দুর্নীতিগ্রস্ত-দেশের-তালিকায়-বাংলাদেশ-১৩তম-১-ধাপ-উন্নতি-স্কোর-২৬-টিআই)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি সেক্টর যে ভয়াবহ মাত্রায় দুর্নীতিগ্রস্থ তা আমরা সকলে প্রতিনিয়ত হারে হারে অনুধাবন করি, এর জন্য বিশেষ কোন গবেষণার আবশ্যকতা নেই। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) বৈশ্বিক দুর্নীতির তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করে আসলে কি বোঝাতে চায়? তারা বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্থ দেশের তালিকা প্রকাশ করে দেশগুলোর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য তুলে ধরে স্পষ্ট করে বলতে চায় দুর্নীতির আসল কারণ প্রকৃত গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায় বিশ্বজুড়ে আজ দুর্নীতির যে মহোৎসব চলছে তার পিছনে আছে পুঁজিবাদী স্বার্থপর চিন্তা-চেতনা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সেক্যুলার-পুঁজিবাদী আদর্শ মানুষকে জাগতিক বস্তুগত উপকরণের প্রতি লোভী ও স্বার্থপর করে তোলে। আর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যা মানুষকে প্রভুর মত আইন তৈরির ক্ষমতা দেয়, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের পথকে করে বাধাহীন।

টিআই কিন্তু কখনই দুর্নীতির জন্য পুঁজিবাদ বা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দায়ী করে না। বরং দুর্নীতি ও দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে জনগণ যেন এ ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয় টিআই সেটাই নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। টিআই-এর মত সংস্থাগুলো আসলে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার রক্ষাকবচ বা পাহাড়াদার। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক বিষয়। এটা অনস্বীকার্য যে একটি দেশের দুর্নীতির পিছনে অন্যান্য তথাকথিত দুর্নীতিমুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাত থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ প্রদান পলিসিও দুর্নীতির একটা অন্যতম উৎস, এসব বিষয় তাদের প্রতিবেদনে উঠে আসে না। তারা দুর্নীতিকে একটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখিয়ে তারা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড অর্ডারকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে চায়। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে দুর্নীতির একটা শ্রুতিমধুর ডাক নাম আছে “playing by the rules”। এই নামে তারা সব দুর্নীতিকে জায়েজ করে নেয়, ফলে দুর্নীতির দুর্নাম তাদের গায়ে লাগে না। মজার ব্যাপার হল, এসব সৎ ও সাধু রাষ্ট্রগুলোর চরিত্র তাদের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে একেবারে অন্যরকম, বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে তারা ঘুষ থেকে শুরু করে দুর্নীতিবাজ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া, কিছুই বাদ দেয় না।

দুর্নীতি কোন জৈবিক সমস্যা না বা এটা আমাদের আবহাওয়া বা নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত না। দুর্নীতির উদ্ভব আমাদের চিন্তা চেতনা বা জীবন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। দুর্নীতি পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। দুর্নীতিকে নির্মূল নয় বরং এটাকে সহনীয় মাত্রায় রাখা এ ব্যবস্থার লক্ষ্য।

দুর্নীতিকে সমূলে উপড়ে ফেলতে হলে জীবন সম্পর্কে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। মুসলিম জাতির জন্য পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে দুর্নীতি দমন একটা অলীক স্বপ্ন। মুসলিম জাতির অবশ্যই নব্যুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে কারণ খিলাফত রাষ্ট্র তাদের দিবে জীবন সম্পর্কিত সঠিক দর্শন এবং পরিচালিত হবে শারিয়াহ আইন অনুযায়ী, তাই রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির কোন রাস্তা সেখানে চিন্তাও করা যায় না। আর খিলাফতের আদর্শিক ভিত্তি হবে তাক্বওয়া যা কেবল শাসকদেরই নয় রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ন্যায় ও নীতির পথ অবলম্বনে উদ্বুদ্ধ করবে।

  • আবু যাইদ

 

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ঃ শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙালেন . জাফর ইকবাল

খবরঃ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙালেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। (www.prothomalo.com/bangladesh/district/শিক্ষার্থীদের-অনশন-ভাঙালেন-ড-জাফর-ইকবাল)

মন্তব্যঃ

        মুহম্মদ জাফর ইকবাল শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মুখে পানি দিয়ে অনশনেরই অবসান ঘটাননি, একইসাথে তিনি ন্যায্য দাবীর এই আন্দোলনের দাবানলে পানি ঢেলে তা বিনষ্ট করে দিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে সরকার যখন তার সকল প্রকার উপায় উপকরণ ব্যবহার করেও এ আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারছিল না, তখনই মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত পরিচিত একজনকে ব্যবহার করতে উদ্যত হয়। তবে অদূর ভবিষ্যতে যদি মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আমরা তার এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্বাচন কমিশনের কোন পদে দেখতে পাই তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ সম্প্রতি বর্তমান সরকারের জোটবদ্ধ দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটির জন্য তার নাম প্রস্তাব করেছে। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, এই সরকার, তার পুলিশ বাহিনী, ছাত্রলীগ, ভিসি কিংবা জাফর ইকবালদের মত লোকেরা হচ্ছে একই বলয়ের লোক আর সেটি হচ্ছে ‘ক্ষমতার বলয়’। ক্ষমতার এই বলয়ের বাইরে থাকা সাধারণ জনগণ কিংবা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকারসমূহ কিংবা বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পূরণ না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে উঠে তখনই আমরা দেখেছি সরকার এসকল দাবীর প্রতি কোনরকম ভ্রুক্ষেপ না করে আন্দোলনকে দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। যেমন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের কোনও আগ্রহ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বিষয়ে মন্তব্য করলেও ছাত্রছাত্রীদের দাবী এবং পরবর্তীতে মামলা-হামলা ও আমরণ অনশনের ব্যাপারে কোনরকম মন্তব্য করেননি। আন্দোলনকারীদের দাবী-দাওয়া ও জীবনের প্রতি উদাসীনতার পাশাপাশি আমরা দেখেছি আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে ছাত্রলীগের হামলা, পুলিশের বেধড়ক পিটুনি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও গুলি ছোড়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি সবরকমের প্রচেষ্টাই চালানো হয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা ধর্ষন বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি আন্দোলনের সময়ও আমরা একই রকম দমন-নিপীড়নের চিত্র দেখতে পেয়েছি।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে জনগণের ন্যায্য দাবীর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এসকল আন্দোলনের ব্যাপারে সরকার সবসময় কেন খড়গহস্ত থাকে? মূলত আমরা যদি আমাদের এই ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব এখানে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে মানুষকে। যেহেতু মানুষের চিন্তার ক্ষমতা সীমিত সেহেতু সে সমগ্র মানুষের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরী করতে ব্যর্থ হয়। ফলে আইন প্রণয়নকারী যতই ন্য্যপরায়ন হোক না কেন তার প্রণয়ন করা ব্যবস্থা দিনশেষে সমাজে বৈষম্যের তৈরী করবেই। ফলে জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠা স্বাভাবিক বিষয়। উপরন্তু এই ব্যবস্থায় যেহেতু মানুষই সর্বেসর্বা এবং কারো কাছে তার কোন জবাবদিহিতা নেই তাই সে এরকম ব্যবস্থা প্রণয়ন করে যাতে দেশের ক্ষমতা ও অর্থ তার নিজের, নিজের পরিবার, দল কিংবা তার সমমনাদের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। এর ফলে জনগণ যখন এই ক্ষমতাশীল বলয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে তখনই এরা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে সর্বশক্তি নিয়ে জনগণের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

তাই শুধুমাত্র ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করে আমাদের পক্ষে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। বরং বিভিন্ন সমস্যার কারণ এই মানবরচিত জীবনব্যবস্থারই সমূলে উৎপাটন জরুরী। তাই আমাদের আন্দোলনসমূহ হওয়া উচিত ব্যবস্থা পরিবর্তনের আন্দোলন। মানবরচিত ব্যবস্থার বিপরীতে একমাত্র উত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) কর্তৃক প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা যেখানে আইন প্রণয়ন করেছেন মানুষের স্রষ্টা স্বয়ং নিজে এবং যেখানে শাসক (খলিফা) সবসময় তার দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আল্লাহ্‌’র কাছে হিসাব প্রদানের ব্যাপারে সবসময় ভীত থাকে। তাই আমাদের আন্দোলনসমূহ এই ব্যবস্থা অপসারণ করে ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থা আনয়নের আন্দোলন হওয়া উচিত।

 

  • মো. হাফিজুর রহমান

 

“লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি বিতর্ক, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের রাজনীতি”

খবরঃ

দেশের তথাকথিত প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষত আমেরিকায় লবিস্ট বা তদবিরকারক নিয়োগ করার অভিযোগ করেছে। এজন্য আওয়ামী লীগ, সরকার ও বিএনপি সকলে ব্যাপক অর্থ ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে কূটনীতিক মহল বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নতুন নয়। অতীতেও রাজনৈতিক দলগুলো এমন কাজ করেছে। (www.bd-pratidin.com/first-page/2022/01/20/732653)

মন্তব্যঃ

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮০টি লবিস্ট ফার্ম বা তদবিরকারী প্রতিষ্ঠান আছে যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দেশের হয়ে তাদের আইনপ্রণয়নকারী ও সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদেরকে প্রভাবিত করতে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপ তাদের পক্ষে আইন তৈরীর জন্য কিংবা কোন আইন যাতে তাদের ক্ষতির কারণ না হয় সেজন্য লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে। ‘স্বাভাবিক মস্তিস্কে’ মনে হবে আইনপ্রণয়ণকে যদি অর্থ খরচ করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রভাবিত করা যায় তাহলে সেই আইনতো সব সময়ই প্রভাবশালীদের পক্ষে যাবে। আর ‘গণতন্ত্রের নীতি কথা অনুযায়ী’ সকল আইন হতে হবে অন্তত সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থ অনুযায়ী, অতঃপর এই আইনকে যদি প্রভাবশালীরা নিজেদের পক্ষে নিতে বৈধভাবে ও প্রকাশ্যে অর্থ ব্যয় করতে পারে তাহলে আইনতো হয়ে যাবে ক্ষুদ্র প্রভাবশালী বা ধনবানদের জন্য। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে যেহেতু উইন-উইন সিটুয়েশন ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণের আর কোন পদ্ধতি নেই সেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ শুধু বৈধ তা নয় বরং এটি একটি আইনগত অধিকার। তবে নিশ্চয়ই উইন-উইন সিটুয়েশন এর কোন শেষ নেই, প্রভাবশালীরা প্রতিনিয়ত আরও বেশী উইন করার জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। এজন্য প্রায় সবপক্ষই লবিস্ট নিয়োগসহ নানা সামর্থ ব্যয় করে থাকে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই উইন-উইনের বিবাদমানগোষ্ঠী শুধু সরকার ও বিরোধী দলগুলো নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও এর অংশ। তাই খুব স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বিবাদমান গোষ্ঠীগুলো নিয়মিতই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় দেশের সাধারণ জনগণের স্বাভাবিক কোন অংশগ্রহণ নেই। বরং উইন-উইনের প্রতিযোগিতারত গোষ্ঠীগুলো সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেয় সেগুলো সব মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে জনগণের উপরে আসে। লবিস্ট নিয়োগ একটি ওপেন সিক্রেট বিষয় হলেও এখন হঠাৎ এই বিতর্ক সামনে নিয়ে আসাও হয়েছে ওই রকম একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্তকে ঢাকার জন্য। আর সেটা হলো RAB তৈরি ও এর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার উপর দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা। এটা সবাই জানে যে একসময় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারকে প্রত্যক্ষ পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে RAB গঠন করার জন্য। RAB-কে প্রতিটি সরকার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। আওয়ামী-বিএনপি সরকারগুলো বাহিনীটিকে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে, আর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এটিকে ব্যবহার করেছে তথাকথিত war on terror-এর অজুহাতে ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আর পরবর্তিতে এটিকে ঢাকার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে লবিস্ট বিতর্ক উস্কে দেয়া এই সবই উইন-উইন সিটুয়েশন-এর নতুন ব্যালেন্স অর্জনের জন্য।

ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্নতর একটি চিন্তা ও ব্যবস্থা যেখানে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সন্তুষ্টির জন্য। ইসলামী ব্যবস্থায় উইন-উইনের কোন বিবাদমান পক্ষ নেই, এখানে সবাই মিলে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শারী‘আহ্‌ বাস্তবায়নে কাজ করে। এখানে বিদেশীরা দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত বা আইনগ্রহণ করাতো প্রশ্নই আসেনা এমনকি খলিফাও এখানে কোন আইনপ্রণয়ন করতে পারে না। হুকুম একমাত্র আল্লাহ্‌’ [সূরা ইউসুফ ৪০]। খলিফা প্রতিটা নাগরিককে ইসলাম প্রদত্ত অধিকার দিতে আইনগতভাবে বাধ্য। খিলাফত ব্যবস্থায় দুর্বল বা শক্তিশালী প্রতিটি ব্যক্তি যেকোন বিষয়ে খলিফার কাছে শারী‘আহ্‌ সম্মত দাবী তুলে ধরতে পারবে, কোন লবির প্রয়োজন হবে না। যদি খলিফাকে কোন ব্যক্তি সরাসরি জবাবদিহি না করতে পারে তাহলে সেই ব্যক্তি ‘মাহকামাতুল মাজালিম কোর্টে’ আইনের আশ্রয় নিতে পারবে।

  • মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 বোরোর মজুদকৃত আট লাখ টন চাল মানহীন হয়ে পড়ার শঙ্কা

 

খবরঃ

খাদ্য অধিদপ্তর গতবছর বোরো মৌসুমে উৎপাদিত চাল সংগ্রহ করেছিল ১৪ লাখ টনের কিছু কম।এর মধ্যে ৮ লাখ টনের কাছাকাছি এখনো মজুদ অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে।খোদ খাদ্য অধিদপ্তর নিজেই এখন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব চাল মানহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে।এজন্য গত বছর সংগৃহীত বোরো চাল দ্রুত ছাড়করণের নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর।সারা দেশে চলতি বছরের বোরো মৌসুমের আবাদ কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।যদিও খাদ্য অধিদপ্তরের গত বছর সংগৃহীত বোরো চালের মজুদ এখনো অর্ধেকও ফুরায়নি।বোরো মৌসুমের চাল দীর্ঘদিন সংগ্রহে রাখা যায় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। (https://bonikbarta.net/home/news_description/287190/বোরোর-মজুদকৃত-আট-লাখ-টন-চাল-মানহীন-হয়ে-পড়ার-শঙ্কা)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদী অর্থনীতির জনক Adam smith এর মতে “markets tend to work best when the government leaves them alone”। এই নীতি অনুসরণ করার কারণে বাংলাদেশের বাজার সবসময় অস্থিতিশীল আচরণ করে। যার ফলে কিছুদিন পরপর যেকোন পণ্যের মুল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে, যা একসময় ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায় (যেমন বছরে একটা সময় পেয়াজ ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়, বা বর্তমানে যেমন খোলা বাজারে চালের কেজি ৭০ টাকা করে); তখন পুঁজিবাদীরা Keynesian Economics প্রয়োগ করা শুরু করে যা মুলত পুঁজিবাদীদের মুনাফা করার আরেকটি কৌশল মাত্র। Keynesian Economics এর মুলকথা হচ্ছে optimal economic performance could be achieved—and economic slumps prevented—by influencing aggregate demand through activist stabilization and economic intervention policies by the government", ফলে সরকারগুলো তখন উচ্চমুল্যে পুঁজিবাদী কোম্পানীগুলো থেকে পণ্য কিনে কিছুটা কমদামে জনগণের কাছে বিক্রি করে। যার উদাহরণ হচ্ছে TCB (Trading Corporation of Bangladesh), বা পশ্চিমা দেশের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজ। কিছুদিন পর দেখা যাবে পূর্বের মত এই চাল কোন পুঁজিবাদী কোম্পানীর মাধ্যমে TCB-এর ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে। পুঁজিবাদের এই চক্রের ফলে সরকারগুলো জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে ভাল সাজার চেষ্টা করলেও মূলত অল্পকিছু ধনিকগোষ্ঠীকে সুবিধা প্রদান করে আসছে। এই অর্থব্যবস্থায় এরূপ অমানবিক ঘটনা ঘটার কারণ তারা অর্থনীতিকে দেখে একটি অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে। অর্থাৎ, অর্থনৈতিক কিছু নির্দেশক, যেমন সঠিক প্রবৃদ্ধি, জিডিপির ক্ষেত্রে ক্রমশ উন্নতি, কোন বাজেট বা ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর সংকট না থাকা ইত্যাদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আদর্শ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা হিসেবে দেখে। সমাজের প্রতিটি মানুষ এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সুফল ভোগ করতে পারছে কিনা তা পুঁজিবাদী অর্থনীতির বিবেচ্য বিষয় না। যার ফলে তারা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার দিকে কখনোই জোর দেয়নি বরং মুনাফা বৃদ্ধির কথা বলে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলে একটি মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীকেই সুবিধা দিয়ে আসছে।

          অন্যদিকে ইসলাম অর্থনৈতিক সমস্যাকে যেকোন সমস্যার মতই মানবীয় সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করে। মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাকে পুঁজিবাদের মতো কিছু অতি টেকনিক্যাল ‘অর্থনৈতিক নির্দেশক’ এর আলোকে দেখে না। তাই ইসলামী ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য এটা না যে, জিডিপি কত হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি কেমন হচ্ছে ইত্যাদি, বরং প্রতিটি মানুষের ঘরে উৎপাদিত সম্পদ পৌঁছানোই (Distribution) হল মূল লক্ষ্য।  যার ফলে মুল্যবৃদ্ধি জনিত কারণে মানুষ অভুক্ত থাকে না, আবার ব্যবসায়ীরা সঠিক মাত্রায় লাভ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন “সৎ আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী শহীদদের সঙ্গে থাকবে” (জামে আত-তিরমিজি: ১২০৯)। তিনি (সাঃ) আরো বলেন, সুলতান (খলীফা) হচ্ছেন অভিভাবক এবং তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল(বুখারী ও মুসলিম)। এই কারণে খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের সকল বিষয়াদির দায়িত্ব নিবে এবং বর্তমান রাষ্ট্রের মত গুদামে চাল মজুদ রেখে মানুষকে অভুক্ত করে রাখবে না। খিলাফত রাষ্ট্রের ইতিহাসে বিশ্ব দেখেছে কিভাবে খলিফারা অভুক্ত মানুষের ঘরে খাদ্য পৌছে দিয়েছেন, দূর্ভিক্ষের বাজারে কিভাবে বাজারে খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়েছেন। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “… তারপর আসবে জুলুমের শাসন, জুলুমের শাসন শেষ হবে যখন আল্লাহ্ইচ্ছা করেন অতঃপর আবার আসবে খিলাফত নব্যুয়তের আদলে…” ইনশাআল্লাহ্‌ আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র আমাদেরকে এই অমানবিক ব্যবস্থা থেকে মুক্ত করে, জনগণের দায়িত্ব নিয়ে সমাজে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনবে।

  • ইরফান আবিদ

 

ঢাবিতে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে গেস্টরুমে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

খবরঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে না আসায় এক অসুস্থ শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ৬ কর্মীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আকতার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাত ১০টার দিকে আমাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। অন্যরা গেস্টরুমে আসলেও আখতার অসুস্থ থাকায় সে গেস্টরুমে আসেনি। ..সেসময় অভিযুক্তরা তাকে বলেন, 'কিসের অসুস্থ তুই? তোকে বিকেলে কলা ভবনের সামনে দেখলাম! তুই লাইটের দিকে আধা ঘন্টা তাকিয়ে থাকবি!' কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ব্যাচমেটের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গণরুমে আকতার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। (www.thedailystar.net/bangla/তারুণ্য/শিক্ষা/ক্যাম্পাস/ঢাবিতে-অসুস্থ-শিক্ষার্থীকে-গেস্টরুমে-নির্যাতনের-অভিযোগ-ছাত্রলীগের-বিরুদ্ধে)

মন্তব্যঃ

মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আশ্রয়স্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম-গেস্টরুমে ছাত্র নির্যাতন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পেশীশক্তিনির্ভর অপরাজনীতির ধারাবাহিকতার অংশবিশেষ, যা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের হলগুলোকে একেকটি টর্চার সেলে পরিণত করেছে। মূলত, ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রাজনীতির অন্যতম মূল নিয়ামক শক্তি পেশীশক্তি এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, যা তারা তাদের মদদপুস্ট ছাত্র সংগঠনকে ক্যাম্পাস ও হলের দখলদারিত্ব প্রদানের মাধ্যমে অর্জন করে থাকে। এই ছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটকে পুঁজি করে আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে জোরপূর্বক তাদের দলে টানে, হলে সিট পাওয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করে, ম্যানার শিখানোর নামে গেস্টরুমে শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিছিলে যেতে বাধ্য করে এবং তাদের সামনে মাথা নিচু করে চলতে বাধ্য করে। ইতিপূর্বে ২০১৬ সালে বাধ্যতামূলক গেস্টরুম ও শীতের রাতে ছাত্রলীগের কর্মসুচীতে অংশ নিয়ে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হয়ে ঢাবির এস এম হলের ছাত্র হাফিজের করুণ মৃত্যু ঘটে। ভারতবিরোধী ফেসবুক পোস্টের অপরাধে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বুয়েটের শেরে বাংলা হলে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে। এতদসত্ত্বেও, শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে ঢা.বি. সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণরুম-গেস্টরুম কালচার, চাদাবাজি, দখলদারিত্ব, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্য, রাজনৈতিক হত্যাকান্ডসহ ছাত্রলীগের অন্যান্য অপরাধ কর্মকান্ড থেমে নেই। ফলশ্রুতিতে ছাত্র সমাজের মধ্যে পুরোপুরি ছাত্র রাজনীতি বিমুখ একটি অংশ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসাধারনের মধ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। কিন্তু সমস্যার মূলে হাত না দিয়ে রাজনীতি বিমুখতা কিংবা ছাত্র রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে গেলে তা কোন ফলাফল বয়ে আনবে না। কার্যত, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিই অত্যাচারী শাসক ও রাজনীতিবিদ তৈরি করে যারা আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে গণরুম-গেস্টরুমে পদানত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের যেকোন ন্যায্য দাবীকে দমন-নিপীড়নের মাধ্যমে নস্যাৎ করতে তাদের লাঠিয়াল বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে এবং যুলুমের সাম্রাজ্য রক্ষা করে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তনে সচেষ্ট না হলে অত্যাচারী শাসন আরো দীর্ঘায়িত হবে এরং আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপর যুলুম-নিপীড়নের নিত্যনতুন খড়গহস্ত চলতে থাকবে।

          এমতাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিন্তাশীল ও নিষ্ঠাবান শিক্ষার্থীদের উচিত গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতিসহ সকল প্রকার নিপীড়ন ও বৈষম্যের জন্মদাতা ধর্মনিরপেক্ষ পুজিবাদী ব্যবস্থাকে অপসারণের লক্ষ্যে তাদের সকল প্রচেস্টাকে খিলাফতে রাশিদাহ্‌ রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের দিকে ধাবিত করা। রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং রাজনীতির মত মহান ও পবিত্র দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বর্তমান যুলুমের শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব। ইসলাম সকল নাগরিকের জন্য রাজনীতি (সিয়াসাত) করা বাধ্যতামূলক (ফরয) করেছে এবং অত্যাচারী শাসকদের সামনে হক্ব কথা বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে হক্ব কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ (সহীহ্‌ তিরমিযী)। খিলাফতের ১৪০০ বছরের অধিক সময়ে তারুণ্যদীপ্ত তরুণরাই অত্যাচারী শাসকদের সিংহাসন কাঁপিয়ে তাদের যুলুমের শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।

  • মোহাম্মদ সিফাত
Previous Post Next Post