Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৪২ তম সংখ্যা । ২৩ জানুয়ারী, ২০২২
“হয়রানি বন্ধ করে, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি আসকের”
খবরঃ
বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হয়রানি করছে জানিয়ে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।...আসক জানায়, ‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন আচরণ সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা এসব ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা ও জড়িতদের চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা জোরদার করার পরিবর্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের তৎপরতা অগ্রহণযোগ্য।... (www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/হয়রানি-বন্ধ-করে-গুমের-শিকার-ব্যক্তিদের-ফিরিয়ে-দেওয়ার-দাবি-আসকের-304201)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের অসহায় পরিবারগুলোর হাহাকার অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
স্বজনদের জন্য অন্তহীন প্রতীক্ষা প্রতিটি মুহূর্তে তাদেরকে বিপর্যস্ত করে তুলছে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্তানদের শিক্ষা, পরিবারের ভরণ-পোষণ
সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা নিদারুণ কষ্ট পতিত হয়েছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয়শরও বেশি ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন।
তারপর, এ সকল অসহায় পরিবারগুলোকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন পক্ষের নির্মম স্বার্থের খেলা।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের আশীর্বাদপুষ্ট এই সরকারের দুর্বৃত্ত বাহিনী তাদেরকে গুম করছে।
যেমন, বিভিন্ন
সময় গুমের শিকার যেসকল ব্যক্তি ফেরত এসেছেন, তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলছেন না বলে অভিযোগ এসেছে।
আবার মুখ খুললেও পরবর্তিতে আইন-শৃংখলা
রক্ষাকারী(?) বাহিনীর কর্তৃক বাধ্য করা বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
যেমন, অপহরণ
এবং উদ্ধার হওয়ার ৫ মাসের মাথায় এক সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহার দাবি করেছিলেন যে তিনি আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সাজানো বক্তব্য দিয়েছেন।
এমনকি মুখ খুললে পরিবার-পরিজন-বাচ্চা-কাচ্চাদের প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন অনেকে, এমন অভিযোগও এসেছে।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার ঘটনা এখনো গুমের নির্মম সাক্ষ্য বহন করে।
তারপর সেই ঘটনাগুলোকে পুঁজি করে এই সাম্রাজ্যবাদীরাই আবার সরকারকে চাপে ফেলে বিভিন্ন কৌশলগত সুবিধা আদায় করতে চাচ্ছে।
এই কারণে তারা সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তখন সরকারী বাহিনী আবার গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানি করছে, যেন
তারা ‘গুম হননি’ ‘আত্মগোপন
করেছেন’ এমন লিখিত কাগজে সই করে।
অন্যদিকে কতিপয় এনজিও, মানবাধিকার সংগঠন কিংবা আদর্শহীন রাজনীতিবিদেরা অসহায় পরিবারগুলোর পাশে মলম বিক্রেতাদের মত দাঁড়ানোর ভান করে জনগণের আবেগ নিয়ে খেলছে।
আরো পরিতাপের বিষয় এই যে, যেসব
বাহিনী গুম-খুনের
সাথে জড়িত তারা তাদের নিকটই আবার গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে এবং গুম-খুনের
নির্দেশদাতা বর্তমান সরকারকে আলোচনার বাইরে রাখছে। যদি প্রকৃতপক্ষেই তারা এই গুম-খুনের বিষয়ে নিষ্ঠাবান হত,
তাহলে এই নিপীড়নের উৎসমূলে হাত দিত, তথা “ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক”
শাসনব্যবস্থাকে চিহ্নিত করে এটিকে অপসারনের পক্ষে মত দিত, কারণ এই শাসনব্যবস্থা
ক্ষমতাসীন সরকারকে সীমাহীন সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করেছে এবং তখন তারা তাদের
স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে দমন-নিপীড়নের বিভিন্ন হাতিয়ার প্রয়োগ করছে। তাই
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অপরাপর মুসলিম ভুখন্ডগুলোতে যালিম শাসকদের গুম-খুন ও নিপীড়ন হল
মূল সমস্যার ‘উপসর্গ’ মাত্র।
পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের আশীর্বাদপুষ্ট এই সরকার কিংবা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও এনজিও তারা কেউই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
কারণ তারা জনগণের দৃষ্টিকে মূল সমস্যা হতে আড়াল রাখতে পশ্চিমাদের বেধে দেয়া সীমানা অর্থাৎ গুম-খুন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধ নিয়ে কথা বলো কিন্তু অত্যাচারী শাসক তৈরির কারখানা পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিয়ে নয় - এই
নীতি অনুসরণ করছে।
এমতাবস্থায় তারা কি কখনো আমাদেরকে এই সরকারের জুলুম-নিপীড়ন-গুম-খুন
থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য কার্যকর কোন ভূমিকা পালন করতে পারবে? বরং তারা কেবলমাত্র আমাদের অসহায়ত্বগুলোকে পুঁজি করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করবে।
একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র আনুগত্যের শাসনব্যবস্থা খিলাফতের মধ্যেই প্রকৃত মুক্তি নিহিত।
কারণ, এই
শাসনব্যবস্থা সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলোর চাপিয়ে দেয়া অত্যাচারী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে নির্মূল করবে।
তাদের আনুগত্য করাতো দূরে থাক, তাদেরকে
অপমানজনকভাবে পদানত করবে।
এই শাসনব্যবস্থা তখন পুরো বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।
- মো: জহিরুল ইসলাম
“ঢাবিতে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের হামলা”
খবরঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে
(টিএসসি) আয়োজিত
কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বুধবার
(১২ জানুয়ারি)
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে টিএসসির পায়রা চত্ত্বরে এ
হামলার ঘটনা ঘটে৷ এখানেই কাওয়ালি অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়। আয়োজকদের অভিযোগ, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি গ্রুপ টিএসসি প্রাঙ্গণে আসে। সেখানে কোনো ধরণের কথাবার্তা ছাড়াই অনুষ্ঠানে আগত মানুষদের উপর হামলা করা হয়। (www.ittefaq.com.bd/310161/ঢাবিতে-কাওয়ালী-অনুষ্ঠানে-ছাত্রলীগের-হামলা)
মন্তব্যঃ
এই
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন
ও অফলাইনে বিভিন্ন রকমের প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত
হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ইসলামের উপর আঘাত। অর্থাৎ এরা মনে করছে কাওয়ালি গান ইসলামেরই অংশ। কারো কারো মতে কাওয়ালি যেহেতু উর্দু ভাষায় গাওয়া হয় তাই এটি বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অনেকে আবার বলেছেন, কাওয়ালি
অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া 'ক্যানসেল কালচারের'
নমুনা। 'ক্যানসেল
কালচার' বলতে তারা বুঝাচ্ছে,
‘যা আমার মত নয়, বা আমার মতের সঙ্গে যা মিলছে না, সেটিকে নাকচ করে দেয়া,
ক্ষেত্র বিশেষে ঠেকিয়ে দেয়া।’ অনেক বিশ্লেষকেরা আবার বলছেন, মুক্ত পরিবেশে
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন অনেক সময়ই সরকারদলীয়দের অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে, এ কারণেও সেগুলো বন্ধের চেষ্টা দেখা যায় অনেক জায়গাতেই।
কেউ আবার এই অনুষ্ঠানকে বলছে ইসলামপন্থীদের উত্থান হিসেবে।
এই আয়োজনের পেছনে হিযবুত তাহ্রীর ছিল বলে ফেসবুকে বেশ প্রচারণাও চালানো হয়েছিল।
বাস্তবতা হচ্ছে যে, কাওয়ালি গানের আসরে ছাত্রলীগের এই
আক্রমনের মূল কারণ হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। কাওয়ালি আয়োজকদের কয়েকজন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত। কোটা-বাতিল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৈরি এ
প্ল্যাটফর্মের নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্রলীগ এর
আগেও বেশ কয়েকবার প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী-বিএনপির কর্তৃত্বের লড়াইয়ের
মতই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে
নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্যই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং একে পন্ড করাও একই উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে
করা।
মূলত কাওয়ালি গানের প্রবর্তক দিল্লীর সূফী নিজামউদ্দীন আউলিয়ার শিষ্য আমীর খসরু।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ফার্সি,
আরবি, তুর্কি
এবং ভারতীয় ভাবধারার সংগীতের সংমিশ্রণে আমীর খসরু ভারতীয় উপমহাদেশে সূফী ঘরানার এই গানের প্রচলন
করেন। তুরস্ক এবং মধ্য এশিয়ার দেশসমূহে ‘সামা’ এবং বাংলা অঞ্চলে
‘বাউল সংগীত’
নামে এই
একই ধারার তথাকথিত ‘আধ্যাত্মিক’ বা ‘অতীন্দ্রি়বাদী’ গানেরও
অস্তিত্ব বিদ্যমান।
ফলে অনেকেই হাসান আলী চিসতি,
শাহ্ আলম সরকার, আব্দুর রহমান বয়াতি কিংবা লালনের গানকে ‘আধ্যাত্মিক’ কিংবা ‘ইসলামি’ ট্যাগ দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, এধরনের
আধ্যাত্মিকতাবাদ কিংবা এর মতবাদ থেকে উদ্ভুত কাওয়ালির সাথে ইসলামের ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নেই।
না আছে কাওয়ালি গাওয়ার মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের কোন দিকনির্দেশনা। মূলত এধরনের
আধ্যাত্মিকতাবাদ হচ্ছে সেকুলারিজমেরই অন্য এক
ভার্সন। সেকুলারিজম রাষ্ট্র
এবং বাস্তব জীবন থেকে ইসলামকে বিতাড়িত করে একে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তোলে,
পক্ষান্তরে এজাতীয় আধ্যাত্মিকতাবাদ ইসলাম থেকে রাষ্ট্র এবং বাস্তব জীবনকে আলাদা করে একে শুধুমাত্র ব্যক্তির উন্নতি সাধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখে।
তাও আবার ইসলাম যেভাবে বলেছে সেভাবে নয়, বরং তাদের সিলসিলার ধারা অনুযায়ী।
ইসলাম এজাতীয় আধ্যাত্মিকতাবাদের মত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধারণাকে
পরিত্যাগ করেছে।
ইসলামে আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি কাজ সম্পাদনের সময় আল্লাহ্
প্রদত্ত হুকুমকে সম্পৃক্ত করা। অর্থনৈতিক,
সামাজিক, রাজনৈতিক
ও শিক্ষাব্যবস্থা এবং পররাষ্ট্র নীতি ইত্যাদি এমন কোন বিষয় নেই যা
সম্পর্কে ইসলাম দিকনর্দেশনা প্রদান করেনি।
যেমন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন, “আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা”
(সূরা নাহল
– ৮৯)। সুতরাং ইসলামের সাথে আধ্যাত্মিকতাবাদী কাওয়ালি গানের সম্পর্ক খোজার কোন সুযোগ নেই।
তেমনি সুযোগ নেই কাওয়ালি গানের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ভ্রান্ত
চিন্তা করার।
ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখানো
পথে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মাধ্যমে। এই একই পদ্ধতিতে ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘হিযবুত
তাহরীর’ খিলাফত
প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
কাওয়ালি গানের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা
‘হিযবুত তাহরীর’
এর কাজ না।
-
মো. হাফিজুর রহমান
“বিদেশে
বসে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বক্তব্যদাতাদের
পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ”
খবরঃ
বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য যারা দিচ্ছে, তালিকা করে তাদের পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বুধবার সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, “বিদেশে থেকে দেখা গেছে অনেকে এমন মিথ্যাচার করছে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সেটা বলতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও যেগুলো বলছে, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহী। মন্ত্রী বলেন, তাদের তালিকা প্রস্তুত করা হোক, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো কারা করছে, কী কী করছে এবং কোনটা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যারা সক্রিয়ভাবে, অব্যাহতভাবে এ কাজ করে যাচ্ছে, তাদের পাসপোর্ট বাতিলের জন্য উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article1998828.bdnews)
মন্তব্যঃ
যতই সরকারের জুলুমের
শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ততই সে তার বিরুদ্ধে আওয়াজ
তোলা জনগণের কণ্ঠরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। তাই সরকারের যুলুম ও লুটপাটের বিরুদ্ধে
সরব প্রবাসীদের পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্তকে বর্তমান সরকারের নিপীড়নকারী নীতি
থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই, যা সে দেশের মধ্যে
প্রতিনিয়ত লেখক, সাংবাদিক, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকসহ ভিন্নমত পোষণকারী প্রতিবাদী পেশাজীবীদের কণ্ঠরোধ করার পরিকল্পিত কৌশল হিসেবে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ডিজিটাল সিকিুরিটি এক্টের মত কালো আইন প্রয়োগের
দ্বারা ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বজায় রাখার চেষ্টা করছে। শাসকগোষ্ঠী এটা
অনুভব করছে যে একের পর এক তাদের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে যার ফলে জনরোষের ভয়ে
ভীত সরকার এবার প্রবাসে অবস্থানরত সরকারের সমালোচনাকারীদের পাসপোর্ট বাতিলের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাচ্ছে।
নিঃসন্দেহে
প্রবাসে অবস্থান করেও সরকারের যুলুমের শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা অনেক প্রবাসী
ভাই-বোন ও সাহসী সাংবাদিকগণ ব্যাপক প্রশংসার দাবি রাখেন। কিন্তু তারা বারংবার জনগণের বাক
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকে বর্তমান দুরবস্থা ও সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তারা ঘুরেফিরে সেই গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থাতেই সমাধান ও প্রতিষেধক খোজার আহবান করছেন। তাদের দাবি হচ্ছে, সরকার যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় এবং জনগণের বাক-স্বাধীনতা যদি নিশ্চিত হয় তাহলে সরকারকে দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে
আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতাই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীকে একেকটি দানবে পরিণত করে, যারা নিজ দেশের জনগণকে দমন করে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী এবং সাম্রাজ্যবাদী কাফিরদের স্বার্থরক্ষার জন্য ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। তাই সমস্যার মূলে (ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা) হাত না দিয়ে বাক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টার মানে রোগের মাধ্যমে
প্রতিষেধক খোজার মতই নিরর্থক।
তাই সমগ্র মানবতা এমন এক রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে যে রাষ্ট্র জনগণকে জোড়পূর্বক নয়, বরং জনগণের হৃদয় ও মনকে জয় করার মাধ্যমে শাসন করবে। আল্লাহ্ আল-হাকিম (সর্বজ্ঞানী) প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ইসলামকে খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল তা অর্জন করা সম্ভব, যিনি এই শাসনব্যবস্থাকে শাস্তি হিসেবে নয় বরং মানবজাতির সকল সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান ও রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। ইসলাম বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা ও আলোচনার মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধান ও শাসকদের জবাবদিহি করাকে আবশ্যক করেছে এবং অত্যাচারী শাসকদের সামনে হক্ব কথা বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে আমরা দেখেছি মুসলিমরা কিভাবে খলীফাদেরকে জবাবদিহিতা করেছে এবং তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে। একবার উমর রা.) জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যদি ইসলাম দিয়ে শাসন না করি তাহলে তোমাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে? এর উত্তরে এক যুবক দাঁড়িয়ে বলে, “এই তরবারি তার জবাব দেবে”। শুধু তাই নয়, ইসলাম রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে রাজনীতি করতে দায়িত্বশীল করেছে, কারণ “...সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ...” (সূরা আলি-ইমরান: ১১০) প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। তাই একমাত্র নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিষ্ঠিতব্য আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রই উম্মাহকে মানবরচিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে চিরতরে মুক্ত করবে ইনশাআল্লাহ্।
-
মোহাম্মদ
সিফাত
“গাড়ির জ্বালানি
বিক্রির ওপর কর বসিয়ে সড়ক মেরামতের টাকা তোলার প্রস্তাব”
খবরঃ
বাংলাদেশের সড়ক পথে মোটরযানে যত
জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, সেসব জ্বালানির
মূল্য থেকে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল বাবদ প্রতি লিটার বা ইউনিটে এক টাকা করে আদায় করার প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ
তহবিল বোর্ড বিধিমালার যে খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে
এই প্রস্তাব রয়েছে। (www.bbc.com/bengali/news-60008556)
মন্তব্যঃ
২০১৩ সালে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল বোর্ড আইন গঠন করা হয়। সেই আইনের আওতায়ই মূলত এখন এই বিধি তৈরি করা হচ্ছে।
এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সড়ক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে আদায় করা হবে যেমন, মোটরযানে
ব্যবহৃত জ্বালানী অর্থাৎ পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল, সিএনজি, এলএনজি ইত্যাদি থেকে আদায় করা অর্থ, বিভিন্ন কর, জরিমানা, টোল ইত্যাদি। এই
তহবিল গঠনের যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যেহেতু বাংলাদেশের
বাজেটে সড়ক ও মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ
ও মেরামতের জন্য বরাদ্দ তহবিল খুবই অপ্রতুল (২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা)
সেহেতু এরকম একটি তহবিল গঠন ছিল সময়ের দাবী মাত্র। এই আইন বাস্তবায়ন হলে লিটার বা ইউনিট প্রতি এক টাকা হিসাবে প্রতিদিন আয় হবে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা, বছরে প্রায় পাঁচ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। তবে সরকারী ফান্ড ফুলে ফেপে উঠলেও এবং ফান্ডের অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারী কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের পকেট ভারী হলেও দিন শেষে অতিরিক্ত এই করের বোঝা বইতে হবে জনগণকেই। বাস ভাড়াবৃদ্ধি
পাওয়া এবং পণ্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পাবে স্বাভাবিকভাবে। এই আইন তৈরীর পেছনে পলিসি মেকারদের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে যে, যেহেতু বিশ্বের অনেক দেশেই সড়ক বা মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে এভাবে জ্বালানির মূল্য থেকে খরচ সংগ্রহ করা হয় সেহেতু বাংলাদেশেও এসকল দেশের উদাহরণ অনুসরণ করে একইরকম একটি ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। মূলত তারা বিদেশ বলতে বুঝাচ্ছেন তাদের চিন্তার উৎস পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশসমূহকে
যেখানে মানুষকে আইন প্রণয়নের অসীম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে এবং শাসকশ্রেণী নিজেকে
সর্বোচ্চ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে যেকোন প্রকার আইন তৈরী করতে উদ্যত হয়। সেই আইন জনগণের কল্যাণ বয়ে আনল নাকি জুলুম বয়ে আনল সেই ব্যাপারে তারা বিন্দুমাত্র খেয়াল রাখে না। ফলে এসকল রাষ্ট্র হয়ে উঠে জুলুমের প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানকারী। বাংলাদেশও এসকল দেশসমূহ থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয় যেহেতু এখানেও কতিপয় মানুষই আইন প্রণয়ন করছে যাদের চিন্তা—চেতনায়
রয়েছে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসরনের ব্যাধী।
ফলে আমরা দেখতে পাই প্রতিবছর বাজেটের পরপরই নতুন নতুন করের বোঝা আমাদের ঘাড়ে আপতিত হয়।
পক্ষান্তরে আমরা যদি এই জুলুমের ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ইসলামী ব্যবস্থাকে চিন্তা করি তাহলে দেখব যে, ইসলামের রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু উৎস যেখান থেকে রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। যেমন, যাকাত, উসর, খারাজ, জিজিয়া, যুদ্ধলব্ধ
সম্পত্তি, খনিজ সম্পদ থেকে প্রাপ্ত আয়, জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য মুসলিমদের নিকট থেকে আহরিত অর্থ ইত্যাদি। মূলত ইসলামে
জনগণের উপর আরোপিত বিভিন্ন কর
সুনির্দিষ্ট। খলিফা চাইলেও অতিরিক্ত কর
আরোপ করতে পারেন না কারণ তিনি শারীয়াহ্ দ্বারা
বাধ্য শুধুমাত্র সেসকল উৎস থেকেই অর্থ সংগ্রহ করতে যেসকল উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে ইসলাম তাকে অনুমতি দিয়েছে। মানবরচিত ব্যবস্থার মত নিজেদের খেয়ালখুশির
অনুসরণ করে জনগণকে জুলুম করার কোন সুযোগ ইসলামে শাসককে দেয়া হয়নি।
ইসলামে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতি জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত;
সেকুলার গণতন্ত্রের মতো কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর লোভ লালসা চরিতার্থ করার কোন মাধ্যম না।
খিলাফত রাষ্ট্রের বায়তুল মালে ‘মাসলাহা’ ও ‘ইরফাক’ নামে দুটি খাত আছে যার অর্থ জনগণের কাছ থেকে কোনরকম বিনিময় গ্রহণ করা ছাড়াই বিভিন্ন জনকল্যানমূলক খাতে ব্যয় করা হবে।
এসকল খাতের মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাট নির্মাণ, পানি সরবরাহ, মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণ এবং এধরনের অন্যান্য বিষয় যা
না থাকলে জনগণের জীবন ধারন কষ্টের সম্মুখীন হবে।
এক্ষেত্রে বায়তুল মালে যদি পর্যাপ্ত অর্থ না থাকে তবে তা রাষ্ট্রের ধনী নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে হলেও পূরণ করা হবে। কোনমতেই সাধারণ
জনগণের উপর এর ব্যয়ভার চাপিয়ে
দেয়া হবে না।
- মো. হাফিজুর রহমান
“দেড় হাজার কোটি টাকা মুনাফা, তবু কেন গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব?”
খবরঃ
তিতাস গ্যাস কোম্পানি গত চার বছরে ১৫০৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এই তিতাস এবং পেট্রোবাংলাসহ জালালাবাদ, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানী সবাই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ২১শ’ টাকা এবং এক চুলার জন্য দুই হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩.৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ১৩.৮৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাব অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ছে। (www.banglatribune.com/business/power-and-fuel/724117/দেড়-হাজার-কোটি-টাকা-মুনাফা-তবু-কেন-গ্যাসের-দাম)
মন্তব্যঃ
এই দামবৃদ্ধির প্রস্তাব স্পষ্টত অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় হলেও বর্তমান ব্যবস্থায় এই ধরণের মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী এবং নিয়মিত একটি বিষয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১লা জুলাই গ্যাসের বিভিন্ন ব্যবহারের উপর গড়ে ৪৬.৭৫% মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল। সেটি ছিল দশ বছরের মধ্যে সপ্তমবারের মত মূল্যবৃদ্ধি। এবারের প্রায় ১১৭% মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবও একই ধারাবাহিকতার ফল। প্রাকৃতিক গ্যাস একটি প্রাথমিক ও মৌলিক জ্বালানী যার দামবৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে মানুষের মৌলিক জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রে প্রায় একই হারে খরচ বৃদ্ধি পাওয়া। আর বিভিন্ন হাত ঘুরে জনগণের এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বড় অংশ সরকারের কাছে পৌঁছে। সরকার মুখে বলে যে এই টাকা দিয়ে সে ভর্তুকি মিটিগেট করে, জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি প্রাপ্তির ব্যপ্তি বাড়ায়, জ্বালানি অবকাঠামোর উন্নয়ন করে ও এর স্টেকহোল্ডারদের ভরণপোষণ করে। আরও কিছু ব্যয় আছে সরকারের যেটা তারা মুখে বলেনা, যার মধ্যে আছে সরকারের বিদেশী পার্টনারদেরকে খুশি করার জন্য বিদেশী কোম্পানীগুলোকে অযৌক্তিকভাবে কাজ দিয়ে তাদের কাছ থেকে বেশীদামে গ্যাস কেনা, ১৩% এর বেশী অফিশিয়াল সিস্টেম লস ও আরও অন্যান্য আনঅফিসিয়াল সিস্টেম লস, অবৈধ লাইন ব্যবসা ও দুর্নীতি কভারেজ ইত্যাদি।
সরকারের বাস্তবতা হলো এই যে, তারা পুঁজিবাদকে ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে, যা তাদেরকে বাধ্য করে দেশের মৌলিক জ্বালানিকে বিদেশী ও দেশীয় পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে গড়ে তুলতে। তাই পুঁজিবাদী সরকারের ‘জ্বালানি নিরাপত্তার’ মডেল হচ্ছে এমনভাবে জ্বালানি মিক্স ও উৎস নির্ধারণ করা যাতে বেশী বেশী বিদেশী পার্টনার রাষ্ট্র ও কোম্পানীকে এর আওতাভুক্ত রাখা যায়। আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণে বিনিয়োগ না করে এলএনজি আমদানি অবকাঠামোয় বিনিয়োগ করার পেছনে কারণ ছিল এটিই। অন্যদিকে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণেই সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী দেশসমূহকে তোয়াজ করে চলতে হয়। ফলে তারা চাইলেই জনগণের স্বার্থে ভর্তুকি দিতে পারে না। এই জন্যই আমেরিকার চাপে কিছুদিন আগে সরকারকে কৃষকের ডিজেলের দাম ব্যাপকভাবে বাড়াতে হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আরেকটা সমস্যা হচ্ছে এখানে কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না, সবাই কেবল সুবিধার ভাগ নিতে চায়। তাই ব্যবস্থাগতভাবে এখানে সুবিধার স্টেকহোল্ডার অনেক বেশী। গ্যাসের অনুসন্ধান করে এক কোম্পানী, উত্তোলন করে আরেক কোম্পানী, আমদানি করে এক কোম্পানী, বিতরণ করে আরেক কোম্পানী। জ্বালানি মন্ত্রনালয় আছে, আবার আছে আলাদা রেগুলেটরী বডি আবার সরকারেরই ভোক্তা অধিকার দেখার আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে যারা কিনা সরকারী কোম্পানিরই দামবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানী করে! সর্বোপরী এত এত স্টেকহোল্ডারের ভিড়ে কাকে রেখে কাকে মানুষ দায়ী করবে তা সে খুঁজে পায় না, বরং চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে সবই বোধহয় নিয়তি!
খিলাফত ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা সর্বোপরী খলিফার কিন্তু কাজগুলোকে আবার সুন্দরভাবে দায়িত্বশীলতার সহিত বিকেন্দ্রীকরণ করা। খিলাফতে দায়িত্বশীলদের এই কাজগুলো আবার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জান্নাত-জাহান্নামের সাথে যুক্ত করা। ফলে এখানে সবাই মিলে জনগণকে লুট করার প্রশ্নই আসে না, বরং এখানে একজন আরেকজনের সুরক্ষাকারী হিসেবে কাজ করে। ইসলামী শারীয়াহ্ অনুযায়ী তেল গ্যাসের মতো জ্বালানির মালিক হলো জনগণ আর খলিফা এবং তার প্রতিষ্ঠানসমূহ শুধুমাত্র এর আমানতদার ও দায়িত্বশীল। এই খলিফা যেহেতু শুধুমাত্র জনগণ দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত তাই তার আর কোন পার্টনার নাই। খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের পক্ষে এই সম্পদসমূহ দেখাশোনা করে এবং এগুলো থেকে প্রাপ্ত সুবিধাদি সকল নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করে। সুতরাং, এই সুবিধাগুলোর উপর কোন প্রকার ট্যাক্স আরোপ বা মুনাফা করা যাবে না, মূল্যবৃদ্ধি করাতো দূরের বিষয়। আসন্ন খিলাফত শারীয়াহ্ বিধান অনুযায়ী এধরনের সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ করবে এবং নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করবে। ফলে খলিফা ভর্তুকি ছাড়াই কম খরচে সহজে জনগণের কাছে জনগণের এই আমানত পৌঁছে দিবেন কারণ তাকে কোন বিদেশী দেশ, কোম্পানী বা সংস্থাকে খুশি করে চলতে হবে না।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“৯০ বছর বয়সে বিয়ে করে আলোচনায় আইনজীবি”
খবরঃ
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির পাঁচবার
নির্বাচিত সাবেক সভাপতি ও প্রবীণ আইনজীবী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ৯০ বছর বয়সে বিয়ে
করেছেন। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) তার
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।... (https://www.somoynews.tv/news/2022-01-17/৯০-বছর-বয়সে-বিয়ে-করলেন-প্রবীণ-আইনজীবী)
মন্তব্যঃ
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানবজাতির সবাইকে একসাথে পৃথিবীতে পাঠাননি। আল্লাহ্’র ইচ্ছায় এক প্রজন্মের পর অন্য প্রজন্মের আগমন
ঘটে। প্রজন্মের স্থানান্তরের জন্য একমাত্র
বৈধ উপায় হল, নর-নারীর একে অন্যের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সন্তান
জন্মদান করা। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রবল আকর্ষণ, সহচর্যের আকাঙ্ক্ষা, পিতৃত্ব-মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা এই স্থানান্তর প্রক্রিয়াকে সহজ ও
সাবলীল করেছে। তাই স্বামী বা স্ত্রীবিহীন জীবন-যাপন, যৌবনকাল থেকে
বৃদ্ধকাল পর্যন্ত যেকোনো মানুষের জীবনকে ভয়াবহ রকম নিঃসঙ্গ করে দেয়। অপূর্ণতার অভিশাপে প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্থতা তৈরি করে। তার স্বাভাবিক জীবন-যাপন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। বস্তুবাদী-ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বর্তমান এই সমাজব্যবস্থা মানুষকে
নিজের স্বার্থের দিকে এমনভাবে তাড়িত করে যে, সে তার জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সকল সম্পর্ককে বোঝা মনে
করতে থাকে। কারণ প্রতিটি সম্পর্কেরই স্থায়িত্বের
জন্য মানুষকে নিজের স্বার্থকে অনেক সময় ছাড় দিতে হয়। কিন্তু যারা স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পর্কগুলোকে অবহেলা
করে,
তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। এই আত্মকেন্দ্রিকতা তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, একাকী, অসহায়, বিকারগ্রস্থ করে তোলে। তখন এ বিকারগ্রস্ততা কাটাতে কেউ মাদকের আশ্রয় নেয়, কেউ ক্ষণস্থায়ী অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। লিভিং টুগেদার, সমকামিতা, পরকীয়া, সুগার ড্যাডি, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কালচার ইত্যাদির বিস্তার দেখা দেয়। কেউবা আবার নিঃসঙ্গতা কাটাতে কুকুর, বিড়াল, বানর ইত্যাদি পোষায় মনোযোগী হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির
নেতৃত্বদানকারী আমেরিকায় ৬৭% পরিবার কুকুর বিড়াল পোষায় অভ্যস্থ। আর আমাদের দেশে ভোগবাদী-আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যুক্ত হয়েছে মুশরিক-মূর্তিপূজারীদের সংস্কৃতি থেকে আমদানিকৃত যৌতুক প্রথার, যার মাধ্যমে বৈবাহিক পবিত্র সম্পর্ক সৃষ্টি করা এখন
পাহাড়সম বোঝা হয়ে গিয়েছে। আরও আমদানি করা হয়েছে বিধবা স্ত্রী
কিংবা বিপত্নীক স্বামীর একাকিত্বকে মহিমান্বিতকরণের মিথ্যা ও জঘন্য আবেগ, যার কারণে মৃত মানুষের প্রতি ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয় করে
জিন্দালাশের মতো জীবন বেছে নিতে হয়। আর বৃদ্ধ বয়সে বিয়েতো পুরোপুরি অপমানজনক। তখন ‘বুড়ো বয়সে
ভীমরতি’
মত অবমাননাকর কথা শুনতে হয়। অন্যদিকে এখানে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পুরুষের একের অধিক
বিবাহকে ‘নারীলোভী’ কিংবা ‘লুচ্চামি’র তকমা দেয়া হয়, যার কারণে মানুষ তার সহজাত প্রকৃতিকে অবদমন করে লোকলজ্জার
ভয়ে। এই সমাজে তাই নারীরা হয় অভিভাবকহীন, আর পুরুষরা সঙ্গীহীন অপূর্ণতার হতাশাগ্রস্ত
জীবনকে বেছে নেয়। আর বৃদ্ধ বয়সে যখন সন্তানেরা নিজেদের
সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সঙ্গীহীন
জীবনযাপন আরও ভয়াবহ দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে যায়। তখন বৃদ্ধাশ্রম হয় মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল। অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সঙ্গীহীন জীবন-যাপনকে পরিহার করতে বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা বিপত্নীক
পুরুষ কিংবা বিধবা নারী তাদের বিবাহ সম্পাদন
কর...”(সূরা আন-নুরঃ ৩২)। তাই আমাদের পূর্ববর্তী যুগে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায়
মুষ্ঠিমেয় ব্যতিক্রম ব্যতীত কেউ বিবাহবিহীন থাকতেন না। সমাজ ও রাষ্ট্র খুবই নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালন করতো।
স্ত্রী বা স্বামী ইন্তেকাল করলে তারা আবার দ্রুত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেন। আমাদের রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) স্বয়ং বিভিন্ন
বয়সের একাধিক নারীকে বিবাহ করেছিলেন। তাঁর অনুসৃত
পথে সাহাবারা (রা.) এবং পরবর্তী যুগের খলিফাদের শাসনের অধীনে এই উম্মতও এইক্ষেত্রে
দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছিলেন। তখন নারী কিংবা পুরুষরা সঙ্গীবিহীন
থাকতেন না। সমাজ ছিলো প্রশান্তিময়।
তাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া রইল এই প্রবীণ ব্যক্তির
জন্য,
যিনি এই সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের সমাজের প্রচলিত নোংরা দৃষ্টিভঙ্গিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একাকীত্ব হতে বেঁচে থাকার জন্য, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে রেহাই দেওয়ার
জন্য এই বয়সে নতুন জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছেন। এবং তিনি তার স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। আরও দোয়া রইল তাদের জন্য, যারা তাকে এই কাজে সহায়তা করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা) আমাদেরকেও সুযোগ দিন যেন আমরা পূর্বের ন্যায় খিলাফত
রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আবারও বসবাস করতে পারি, যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় থাকবে একটি প্রশান্তিদায়ক, রহমত এবং বরকতের সামাজিক ব্যবস্থাপনা।
- মো: জহিরুল ইসলাম
“অর্থের অভাবে কিডনি
বিক্রি করছেন সাধারণ আফগানরা!”
খবরঃ
কাজ হারিয়ে চরম আর্থিক
সঙ্কটে পড়েছে আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষ। এখন দু’বেলা
দু’মুঠো খাবার জোটাতে তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে শীরের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি। সেখানে ৪ থেকে ৮ হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে একেকটি
কিডনি। কেউ আবার বাধ্য হয়ে
বিক্রি করছে নিজের সন্তানকেই।
একদিকে পশ্চিমা সহায়তা
আসা বন্ধ, অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যাংকে আটকে দেওয়া হয়েছে
আফগানিস্তানের রিজার্ভের অর্থ। ফলে চরম অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে এরইমধ্যে ৫
বিলিয়ন ডলার অর্থসহায়তার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। (www.bd-pratidin.com/international-news/2022/01/13/730362)
মন্তব্যঃ
দুই
দশকের পশ্চিমা দখলদারিত্ব ও বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর ভুমি আফগানিস্থানে গত বছর
তালেবান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আমেরিকা কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকে
দেয়াসহ বিশ্বব্যাংক এবং IMF-এর বিলিয়ন ডলারের
সাহায্যের নির্মম স্থগিতাদেশ আফগানিস্থানের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে তীব্র ক্ষুধা এবং
দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য
কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে বলেছেন, ৯৫%
মানুষের পর্যাপ্ত
খাবার নেই এবং প্রায় ২৩ মিলিয়ন আফগানিস্তান ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন অতিবাহিত
করছে। পাশাপাশি ১৪ মিলিয়ন শিশু অনাহারে ভুগছে এবং অবিলম্বে জীবন রক্ষাকারী
চিকিত্সা ছাড়া ১ মিলিয়ন শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
অপুষ্টির দরুণ সন্তান জন্মদানের পর আফগান মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য পর্যাপ্ত
দুধ উৎপাদনেও ব্যর্থ হচ্ছেন। কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে কেউ বিক্রি করছেন শরীরের
অঙ্গও। কেউবা আবার বাধ্য হয়ে বিক্রি করছে নিজের সন্তানকেই। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাধারণ দারিদ্র্যের
মাত্রা বেড়েছে এবং মৌলিক জনসেবা ভেঙ্গে পড়ার কাছাকাছি। আফগানিস্তানের চলমান
অর্থনৈতিক সংকটকে তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশ পরিচালনায় ইসলামিস্টদের
ব্যর্থতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। এটা সত্যিই লজ্জাজনক! তালেবানের আবির্ভাবের আগে দেশটি কি নিরাপত্তা ও
সমৃদ্ধিতে ভরপুর ছিল?! বরং এই মানবিক
বিপর্যয় অর্থনৈতিক সাহায্য ও সহায়তার জন্য বিদেশী শক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের উপর
নির্ভরশীলতার সরাসরি ফলাফল। ২০ বছরের আন্তর্জাতিক সাহায্য আফগানিস্তানকে একটি ভগ্ন
অর্থনীতি এবং পশ্চিমা সাহায্য-নির্ভর রাষ্ট্র ছাড়া
অন্য কিছুই উপহার দেয়নি বরং বর্তমানে আফগানিস্তান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম
ক্ষুধার্ত মানুষের দেশে পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়
আফগানিস্তানে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ রুচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামের একটি
সংস্করণ বাস্তবায়নের এজেন্ডা হিসেবে তালেবান সরকারকে চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে ক্ষুধা
ও অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে,
যা তারা ২০ বছরের
সামরিক দখলদারিত্বের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি। জাতিসংঘের মত কুখ্যাত
উপিনিবেশবাদী সংগঠন কর্তৃক আফগানিস্তানের মুসলিমদের জন্য অর্থসহায়তার ঘোষণা
কুমীরের কান্না ব্যতীত কিছুই নয়, কারণ এই ধরনের
সাহায্যের ঘৃণ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক এবং
সামরিকভাবে মুসলিমদের উপর কাফির উপনিবেশবাদীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
অতএব, আফগানিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হল মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াকে খিলাফতের অধীনে একীভূত করা। খিলাফত রাষ্ট্র স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতি যেমনঃ যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি পরিস্থিতিতেও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মৌলিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করবে এবং এক্ষেত্রে কোন বিদেশী রাষ্ট্রের সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা শারীয়াহ্ অনুমোদিত নয়। আফগানিস্তানের মতো ভুখন্ড যা কিনা দুর্লভ earth mineral এ সমৃদ্ধ (১.৪ মিলিয়ন টন) তা দিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র বহির্বিশ্বের সাথে কৌশলগত সুবিধা অনায়সেই নিতে পারবে। আফগান জনগণের মৌলিক খাদ্য চাহিদা অপূর্ণ রেখে কাফির উপনিবেশবাদীদের অর্থনৈতিক স্বার্থে আফিম চাষকে প্রাধান্য দেয়া দূরে থাক। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র উপনিবেশবাদী অর্থনৈতিক ক্লাব যেমনঃ IMF, WB ইত্যাদির শেকল থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ডলারভিত্তিক অস্থিতিশীল মুদ্রাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসবে ফলে দেশের মুদ্রাব্যবস্থার উপর মার্কিনীদের অশুভ নিয়ন্ত্রণ নির্মূল হবে। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র মধ্য এশিয়া এবং দক্ষি
ণ এশিয়ার জনগণ ও
সম্পদসমুহ সম্মিলিত করে পৃথিবীর বুকে একটি একক নেতৃত্বশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে
আবির্ভুত হবে এবং মানবজাতিকে কাফির উপনিবেশবাদীদের শোষণ থেকে মুক্ত করবে ইনশাআল্লাহ্।
- মোহাম্মদ সিফাত
“টিকা
না নেওয়া জোকোভিচের স্বাধীনতা, তাকে
বের করে দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার স্বাধীনতা”
খবরঃ
নোভাক জোকোভিচকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যে নাটক চলছে, তাতে অন্য ভুবনের অনেকেই এ নিয়ে এক-দুটি মন্তব্য
করা থেকে বিরত থাকতে আর পারছেন না। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নই
যেমন;
টিকা না নেওয়া জোকোভিচের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলতে যাওয়ার
পর থেকে একের পর এক নাটক হলো, ওয়ার্নও একের পর এক
টুইটে সে নাটকের প্রতিক্রিয়ায় নিজের মন্তব্য জানিয়ে গেছেন। সে ক্ষেত্রে গতকালের ঘটনার পর ওয়ার্নের চুপ করে থাকার তো কথাই নয়। ওয়ার্ন চুপ
করে থাকেনওনি। গতকাল দ্বিতীয় দফায় জোকোভিচের ভিসা বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়ার
অভিবাসন মন্ত্রণালয়, কারণ দেখিয়েছে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিকে। এরপর
ওয়ার্ন পুরো ঘটনার জের টানা টুইটে সার্বিয়ান তারকাকে নিয়ে লিখেছেন, টিকা না নেওয়া যদি সার্বিয়ান টেনিস তারকার স্বাধীনতা হয়, সে ক্ষেত্রে দেশের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ারও অধিকার আছে
জোকোভিচকে বের করে দেওয়ার। (www.prothomalo.com/sports/tennis)
মন্তব্যঃ
স্বাধীনতা এমন একটি মানদণ্ড যা
কখনোই সমাজকে স্থিতিশীল হতে দেয়না কারণ একপক্ষ যেটাকে স্বাধীনতা ভাবে অন্যপক্ষের জন্য সেটা ক্ষতির কারণ হয়। ফলে সমাজের মধ্যে ভাল-মন্দ নির্ধারণ করাটা দুরুহ হয়ে পরে এবং কোন পক্ষই মানতে নারাজ যে তারা ভুলের মধ্যে আছে।
ফলে পশ্চিমা দেশগুলোতে এ নিয়ে অনবরত আন্দোলন লেগেই আছে যেমন ২০২১ সালে পোল্যান্ডে যখন গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয় তখন আন্দোলনরত
স্বাধীন চেতনাধারীদের বক্তব্য
ছিল, “আমার শরীর
আমার অধিকার”,
অন্যদিকে রাজনীতিবিদদের যুক্তি
ছিল, “যে ভ্রুণটিকে
গর্ভপাত করানো হচ্ছে
তারও জীবন আছে, অর্থ্যাৎ
জীবনকে হত্যা করা
হচ্ছে”। পশ্চিমাদের
এহেন সমস্যার পিছনে মূলত তাদের জীবনের মৌলিক ধারণাটি দায়ী। সেই মৌলিক ধারণা “স্বাধীনতাকে” তারা চারটি শ্রেণিতে
(freedom of ownership, freedom of
belief, freedom of speech, personal freedom) ভাগ করে জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে এখন নানা সমস্যায় পড়ছে।
তাই আমেরিকাতে
freedom of ownership মেনে মানুষ অস্ত্র কিনে gun violence করে শতশত মানুষ হত্যা করছে।
freedom of belief এর কারণে মানুষ Satanism
এর জনক ক্রাউলির “do as thou wilt, that is the law” এই বক্তব্য
বিশ্বাস করে নিজেকে ঈশ্বর ভেবে নিজের মত করে আইন বানাচ্ছে আর
ভাঙ্গছে। জোকাভিচের টিকা না নেয়ার ঘটনা তেমনি একটা।
যে সকল রাষ্ট্র পশ্চিমা গর্ভে প্রসূত স্বাধীনতাকে তাদের জীবনের মানদণ্ড হিসাবে নিয়েছে, ঐ সকল রাষ্ট্রগুলোতে মানুষকে পরিচালনা করার মত
কিছুই নেই,
কারণ যারা আইন প্রণয়ন করে তারাও নিজেদের স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার
দেয় আর
সাধারণ মানুষও স্বাধীনতার জন্য আইন ভঙ্গ করে। জোকাভিচের টিকা না নেয়ার এবং অস্ট্রেলিতা সরকারের তাকে সেদেশে ঢুকতে না দেয়ার স্বাধীনতাই
বলে দিচ্ছে পশ্চিমাদের লিবারেল দর্শন তাদের সমাজকে আসলে কখনই একত্রিত করতে সক্ষম না; ব্যক্তিগত
ও সামাজিক পর্যায়ে ভাঙ্গন অনিবার্য।
যখনই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র আদেশকে উপেক্ষা করে সেকুলার শাসনব্যবস্থা মানবজাতির
তথাকথিত “স্বাধীনতা” কে সমাজ চালনার মানদণ্ড হিসেবে বেছে নেয়, তখন অনৈক্য এবং বিশৃঙ্খলা হয় স্বাভাবিক পরিণতি।
এই মহাবিশ্বের গ্যালাক্সি
থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পরমাণুর গঠনও নির্দিষ্ট নিয়মের অধীন, আর মানুষের
জন্য নিয়ম থাকবে না? এটা কি বাস্তব?
মানুষের জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলা সুনির্দিষ্ট নিয়ম করে দিয়েছেন,
তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাই তিনিই আমাদের সম্পর্কে নির্ভুল আইন/নিয়ম দিতে পারবেন।
আল্লাহ্ বলেন “যিনি সৃষ্টি
করেছেন, তিনি কি
জানেন না? তিনি
সুক্ষদর্শী সম্মক অবগত” (সুরা মুলক আয়াত ১৪)। তাই আল্লাহ্ মানুষকে
সঠিকভাবে জীবন পরিচালনা করার জন্য কুর‘আন নাযিল করেছেন “আমি
আপনার প্রতি কিতাব
নাযিল করেছি যেটি
এমন যে তা
প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট
ব্যাখ্যা” (সুরা নাহল ৮৯)। যেহেতু
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মানবজাতির
জন্য বিধান দিয়ে দিয়েছেন, তাই মানুষের আর
আইন বানানোর প্রয়োজন নেই, শুধু আইন মেনে যাবার পালা, আর কেউ যদি সে আইন না মানে তাহলে আল্লাহ্ বলেন ’’ তবে কি
তোমরা কিতাবের কিছু
অংশ মান্য কর
আর কিছু অংশ
মান্য কর না।
যারা এরূপ করে
পার্থিব জীবনে দুর্গতি
ছাড়া তাদের আর
কোন পথ নেই।
কিয়ামতের দিন তাদের
কঠোরতম শাস্তির দিকে
পৌঁছে দেয়া হবে” (সুরা আল বাকারা ৮৫)।
- ইরফান আবিদ