Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 77


 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৭৭ তম সংখ্যা । ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


এই সংখ্যায় থাকছে:


“দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ”

“অর্থ বিভাগের মূল্যায়ন: চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি” 

“কত ভর্তুকি দেওয়া যায়, কেন দেবো: প্রধানমন্ত্রী”

“শর্ত পূরণে আগামী বছরেই অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে।”

“হিরো আলম খুলে দিলো রাজনীতির পেন্ডোরা বাক্স ?”

“সুইডেনের পর এবার ডেনমার্কে পোড়ানো হলো পবিত্র কুর‘আন” 

“‘ফারাজ’ চলচ্চিত্র: ভুল তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ অবিন্তার মায়ের”







“দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ”

খবরঃ

২০২১ সালে দেশে ৫০ কোটি ডলার বা ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিমাণের সম্পদ আছে—এমন ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ২১। আর করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। তখন মোট ২৮ হাজার ৯৩১ জনের সম্পদ ছিল ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ ডলারের মধ্যে (১০ কোটি ৭০ লাখ থেকে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা)। ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি করা তথ্যভান্ডারের সর্বশেষ প্রকাশিত ২০২২ সালের সংস্করণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ২০২১ সালে দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদধারী ব্যক্তির সংখ্যা ৪৩ শতাংশ বাড়লেও ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয় ১৯ শতাংশ। শঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশের ধনীর সংখ্যা বাড়লেও জিডিপির সাপেক্ষে রাজস্বের অনুপাত বাড়ছে না।... (https://sunbd24.com/246837/)

মন্তব্যঃ 

করোনা সংকটকালীন সময়ে যখন পণ্য উৎপাদন ও সেবা খাতগুলোতে স্থবির অবস্থায় ছিল তার মধ্যেও দেশের ধনীরা হয়ে উঠেছে অতিধনী, তাদের সম্পদের পরিমান বেড়েছে বহুগুণে। তারা কি সবাই আলাদিনের আশ্চার্য প্রদীপ পেয়েছে? এ চিত্র শুধু এ দেশেই নয় পৃথিবীর সব পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে করোনা মহামারিতে ধনীদের সম্পদের পরিমান বেড়েছে (www.dw.com/bn/করোনাকালেও-অতি-ধনীদের-সংখ্যা-বেড়েছে)। অন্যদিকে, এই একই সময়ের মধ্যে দেশের মধ্যবিত্তদের চলতে হয়েছে তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গে আর দরিদ্র মানুষগুলো হয়ে পড়েছে নিঃস্ব। এটা কোন দৈব্য ঘটনা না। এটা পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার একটা স্বাভাবিক পরিণতি। তাহলে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ঘোর দুর্যোগে পুঁজিপতি, অভিজাত ধনীদের তোষণ করে আর সাধারণ জনগণকে ছেড়ে দেয় তাদের ভাগ্যের উপর সে ব্যবস্থা কি আমাদের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির সমাধান দিতে পারবে? সে ব্যবস্থায় কি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা সম্ভব হবে?

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কিভাবে রাষ্ট্রের পুঁজিসমুহ গুটিকয়েক মানুষের হাতে পুঞ্জিভূত হয় তা একটু খতিয়ে দেখা যাক। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাষ্ট্রে দু‘ধরনের সম্পদ সৃষ্টি হয় প্রকৃত সম্পদ আর কৃত্রিম সম্পদ। প্রকৃত সম্পদ তৈরি হয় কৃষি-শিল্প উৎপাদন ও সেবা খাতের কর্মতৎপরতার মাধ্যমে। আর কৃত্রিম সম্পদ তৈরি হয় অযাচিতভাবে কাগুজে মুদ্রা ছাপানো, সরকারি বন্ড, ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রেডিট সৃষ্টির মাধ্যমে। সেই সাথে আছে বৈদেশিক ঋণ প্রাপ্তি। এই কৃত্রিম সম্পদের উপর পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর রয়েছে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। তারা পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্যতম সূত্র trickle-down effect (নিচে চোয়ানো বা উপরে ঢাল) নীতি অনুসরণ করে এই কৃত্রিম সম্পদ প্রণোদনা বা ব্যাংক লোন সুবিধা বা প্রকল্পের কমিশন ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজের উপরের স্তরের মানুষদের অর্থাৎ পুঁজিপতি-বৃহৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। আশা করা হয় যে এই সম্পদ ধীরে ধীরে চুয়ে চুয়ে সমাজের মধ্যবিত্ত হয়ে প্রন্তিক জনগণের কাছে পৌঁছাবে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে তা কখনোই সে অবধি পৌঁছায় না বরং উপর থেকেই উবে যায় বা পাচার হয়ে যায় দুবাই-লন্ডন-আমেরিকা-কানাডার বেগম পাড়াতে। যেহেতু করোনা সংকটকালীন সময় প্রকৃত সম্পদ সৃষ্টি ব্যহত হলেও বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে বাধাহীনভাবে তাই ধনীরা অতি-ধনী হয়ে উঠতে পেরেছে সহজেই। অন্যভাবে বলে গেলে ধনীদের সম্পদ বেড়েছে কিন্তু দেশের প্রকৃত সম্পদ বাড়েনি। বেড়েছে বৈষম্য, বেড়েছে দুর্ভোগ, বেড়েছে বিলাসী গাড়ি বিক্রি, বেড়েছে মাথাপিছু আয়, বেড়েছে টিসিবি’র লাইনের দৈর্ঘ্য, বেড়েছে বেকারত্ব, নিত্যপণ্যের মূল্য।

এই কৃত্রিম-বায়বীয়-স্ফীত অর্থনীতির নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ফিরে যেতে হবে ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। এ অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানা একমাত্র আল্লাহ্‌’র। মানুষ তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে সম্পদের আমানতদার। এক্ষেত্রে প্রথমত, হারাম-হালালের বিধান দ্বারা সম্পদ উপার্জন, উৎপাদন ও তা ভোগের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইসলামী অর্থনীতি প্রকৃত সম্পদের উপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে সম্পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়াতেই একটি সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “সম্পদ যেন শুধু ধনীদের মধ্যে কুক্ষিগত হয়ে না পড়ে” (সুরা হাশর -৭)। প্রশ্ন আসতে পরে তবে কি খিলাফত রাষ্ট্রে কোটিপতি হবার কোন সুযোগ নেই? অবশ্যই আছে তবে সে সম্পদ অর্জন করতে হবে পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে; দুর্নীতি, অবৈধ সুবিধা, লটারি পাওয়ার মত হুট করে অনায়াসে নয়। পণ্য ও সেবা উৎপাদন ব্যতিরেকে যেহেতু খিলাফত ব্যবস্থায় সম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব নয় তাই কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে রাতারাতি অতিধনী বনে যাওয়া অসম্ভব। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ধনী হতে হয় অন্যদেরকে ঠকিয়ে - কৃত্রিম মুদ্রার ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির যন্ত্রণা সমাজের সকলকে সইতে হয় আর অন্যদিকে, খিলাফত ব্যবস্থায় যিনি ধনী হবেন তিনি প্রকৃত সম্পদ সৃষ্টি করবেন যার ফলে পুরো সমাজ উপকৃত হবে। খলিফা প্রথমে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করবে এবং সেই সাথে উদ্যোগী, মেধাবী ও পরিশ্রমী ব্যক্তি যেন তার যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদ অর্জন করতে পারে সে সুযোগ তৈরি করে দিবে। 

-আবু যায়িদ 



“অর্থ বিভাগের মূল্যায়ন: চ্যালেঞ্জের মুখে অর্থনীতি”

খবরঃ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর ধাক্কায় কমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। নেতিবাচক ধারা বইছে আমদানি খাতে। কমেছে সরকারের বাজেটের অর্থ ব্যয়ের অঙ্কও। তবে এ সময় বেশ ভালো অবস্থানে আছে রাজস্ব ও প্রবাসী আয়। যা দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার চালক হিসাবে কাজ করছে। সার্বিক অর্থনীতিতে করোনা ও যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে অর্থ বিভাগের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চিত্র। সেখানে আরও বলা হয়, করোনায় এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। পাশাপাশি এখাতে আছে অস্থিরতাও। তবে সরকারের নানা পদক্ষেপে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু চলমান যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও। (www.jugantor.com/todays-paper/first-page/640198

মন্তব্যঃ

নিজেদের অর্থনীতির সার্বিক উন্নতির দিকে দৃষ্টিপাত না করে বিদেশনির্ভর আমদানি-রপ্তানীর কারণেই মূলত বাংলাদেশের বর্তমান এই দূরবস্থা। সরকার একদিকে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিদেশ থেকে সম্পূর্ণভাবে আমদানি করছে, অপরদিকে রপ্তানি পণ্যসমূহও আমাদের সক্ষমতার জায়গাকে প্রতিনিধিত্ব করছে না। বরং সাম্রাজ্যবাদীদের চাহিদা অনুযায়ী তারা পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানী করছে। একসময়কার পাট, চামড়া, চা, চিনি ইত্যাদি উৎপাদন ও রপ্তানি বাদ দিয়ে সরকার মনযোগী হয়েছে পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানি এবং শ্রমশক্তি রপ্তানির দিকে। ফলে, আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্য ও এর থেকে উৎপাদিত শিল্পখাত হয়ে পড়েছে পশ্চাদপদ। পাট ও চিনির মত শিল্পগুলো একে একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এর পরিবর্তে বড় হচ্ছে বিদেশনির্ভর পোশাক ও শ্রমখাত। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই দেশ একদিকে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে, আর অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপরদিকে যেহেতু আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সারাবিশ্বে ডলারের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে, সেহেতু ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক বাজারব্যবস্থার কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এই ফাঁদের বাইরে যেতে পারেনি। ফলে, আমদানি-রপ্তানির ভিত্তি হিসেবে ডলারই একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সবাই ডলার আয়ের দিকে মনযোগী। কারণ হাতে ডলার থাকলে আমদানি করা যাবে, অন্যথায় আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যদি শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব এই অর্থনৈতিক সংকটকে মূলত ডলারের রিজার্ভ না থাকার সংকটকে বুঝানো হচ্ছে। যদিও পাকিস্তান ও শ্রীলংকার রয়েছে ব্যাপক প্রাকৃতিক সম্পদ, রয়েছে বিশাল শ্রমশক্তি, শক্তিশালী কৃষি ও শিল্প ভিত্তি। কিন্তু তারপরও শুধুমাত্র ডলারের রিজার্ভ না থাকার কারণে এ দেশগুলোকে সংকটাপন্ন দেশ বলা হচ্ছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বলা হচ্ছে আইএমএফ এর কাছ থেকে আমেরিকান ডলার ঋণ করা! কি অদ্ভুদ এক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে এক টুকরো আমেরিকান কাগজের কাছে সারাবিশ্বের অর্থনীতি জিম্মি হয়ে আছে!

দেশের বর্তমান এই অর্থনৈতিক দূরবস্থা থেকে উত্তরণ পেতে হলে আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে এবং পাশাপাশি ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফাঁদ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে, যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব না। আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে খিলাফত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। তেল-গ্যাসের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহকে সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে না দিয়ে দেশের শিল্পায়নে কাজে লাগাবে। কৃষিতে যাতে সর্বোচ্চ পরিমাণে উৎপাদন নিশ্চিত করা যায় সেজন্যে কৃষকদেরকে বায়তুল মাল থেকে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হবে এবং সেচ, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি যাতে কৃষকের নাগালে থাকে সে ব্যবস্থাও করা হবে। উপরন্তু কৃষিভিত্তিক শিল্পেরও ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। ফলে এসকল পণ্য বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজনীয়তা লোপ পাবে। তাছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র যেহেতু সম্প্রসারণশীল রাষ্ট্র হবে সেহেতু দাওয়া ও জিহাদের নিমিত্তে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে তোলা হবে স্বাভাবিক বিষয়। ফলে, ভারী শিল্প যেমন, যুদ্ধাস্ত্র তৈরী, ট্যাংক, বিমান, জাহাজ ইত্যাদি উৎপাদনে ব্যাপক শিল্পায়ন সাধিত হবে। পক্ষান্তরে খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রা ব্যবস্থা স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক হবে, যার রয়েছে অন্তর্নিহিত মূল্য যা এক টুকরো কাগজী ডলারের সম্পূর্ণ বিপরীত। ফলে খিলাফত রাষ্ট্র যত শক্তিশালী হবে ততবেশী সারাবিশ্বের দেশসমূহ স্বর্ণ-রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাকে গ্রহন করবে এবং সারাবিশ্বের বৈশ্বিক বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য বিলুপ্ত হয়ে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে কারণ সব দেশই তখন স্বর্ণ-রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থায় বাণিজ্যে ইচ্ছুক থাকবে। সুতরাং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এই জুলুম থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র উপায় ইসলামী রাষ্ট্র তথা নব্যুয়তের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর জনপদের অধিবাসীরা যদি ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমীনের বরকতের দ্বারসমূহ খুলে দিতাম” (সূরাঃ আল-আ'রাফ-৯৬)

-মো. হাফিজুর রহমান



“কত ভর্তুকি দেওয়া যায়, কেন দেবো: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমি আবারও বলবো, গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া যাবে যদি ক্রয়মূল্য যা হয় সেটা সবাই দিতে রাজি থাকে। তাছাড়া কত ভর্তুকি দেওয়া যায়! আর এক্ষেত্রে কেন ভর্তুকি দেবো?' আজ রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত (বিডা) ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবো, আমরা পৌঁছে দিয়েছি।'….শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা যে বিদ্যুৎ দেই এটা উৎপাদন করতে ১ কিলোওয়াটে খরচ হয় ১২ টাকা। সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ৬ টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। ইংল্যান্ডে কিন্তু ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু এখনো সে পর্যায়ে যাইনি।' (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/politics/news-447541)

মন্তব্যঃ

গ্যাস-বিদ্যুতের ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়ার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও চলমান মূল্যস্ফীতিতে ঘি ঢালার আশংকা থাকলেও সরকার নব্য-সাম্রাজ্যবাদি প্রতিষ্ঠান আইএমএফের ঋণপ্রাপ্তির শর্ত পূরণ করার জন্য ক্রমান্বয়ে অতি-জরুরী সেবাখাত বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সকল খাত থেকে ভর্তুকি উঠিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে। অবস্থাদৃষ্ট মনে হচ্ছে সরকার সচেতনভাবে ভর্তুকি উঠিয়ে দেয়ার ফলে জনগণের উপর যে বিরূপ প্রভাব পরতে পারে তা পুরোপুরি উপেক্ষা করে শুধুমাত্র তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের তুষ্ট করার পথকে বেঁছে নিয়েছে। কারণ বর্তমান নব্য-উপনিবেশবাদী বিশ্বব্যবস্থায় তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের সম্পর্ক হচ্ছে প্রভু-ভৃত্যের মত। এই দেশগুলোতে যারা তাদের এসব সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের যত বেশী সন্তুষ্ট করতে পারে তারাই এই রাষ্ট্রগুলো শাসন করার ইজারা পায়। তাই আওয়ামী-বিএনপিগোষ্ঠী তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের খুশি করার জন্য জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না। বিনা প্রশ্নে তাদের পরামর্শ বা শর্তগুলো মেনে নিয়ে জনগণের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ নব্য সাম্রাজ্যবাদি প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফর পরামর্শে গৃহীত বিভিন্ন নীতি যেমনঃ বেসরকারীকরণ নীতি, আমদানী নির্ভর জ্বালানী নীতি, কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন। সরকার যদি জনগণের স্বার্থ বিচার করে গ্যাস-তেল অনুসন্ধান, স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত কয়লাসহ প্রকৃতিক সম্পদগুলো ব্যবহার, জ্বালানী খাতকে দেশী-বিদেশী বেসরকারী কোম্পানীর হাতে না ছেড়ে দিয়ে জ্বালানী খাত নিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতো তাহলো উৎপাদন খরচ অনেক কম হতো এবং ভর্তুকিরও কোন প্রয়োজনই হতো না। উল্লেখ্য যে, ভর্তুকির এই অর্থ ট্যাক্স-ভ্যাটের মাধ্যমে জনগণের নিকট থেকেই আদায় করা হয়। সংকটের প্রকৃত কারণগুলো সমাধান না করে এখন ভর্তুকি তুলে দিয়ে জনগণকে আরও বেশী অর্থনৈতিক দূর্দশার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। 

ইসলামের দৃষ্টিতে গ্যাস-কয়লা-তেল গণমালিকানা সম্পদ। বিদ্যুৎ গণমালিকানা সম্পদ থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য। এজাতীয় সম্পদ বা সেবাসমূহ বিনামূল্যে পাওয়া রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “তিন জিনিষের মাঝে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারণ ভূমি) এবং আগুন।” রাষ্ট্র এই সম্পদ বা সম্পদ থেকে উৎপাদিত পণ্য বা সেবাসমূহ কখনও জনসাধারণের নিকট বিক্রয় করতে পারবে না। এই সম্পদগুলোর মালিকানা কখনও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই সম্পদ বা সম্পদ থেকে উৎপাদিত সেবাসমূহ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের নিকট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক বিনামূল্যে এই সম্পদগুলো ব্যবহার করে তাদের জীবন-জীবিকাকে সহজ করতে পারে।

-মোঃ সিরাজুল ইসলাম    



“শর্ত পূরণে আগামী বছরেই অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে।”

খবরঃ 

রাজস্ব খাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে। এর পরের বছরগুলোতে এই আয় আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। পিআরআই বলছে, রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফের পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না পাওয়া গেলেও বাজেটের আগে ধাপে ধাপে তা আসবে। তবে আইএমএফের চাপে নয়; বরং নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতেই এই সংস্কার করা প্রয়োজন। (www.prothomalo.com/business/ap36n6sg59)

মন্তব্যঃ 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রাপ্তির নানাবিধ পূর্বশর্তের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে, অর্থ্যাৎ কর আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি করা। শর্তানুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৫০ কোটি ডলার পেতে হলে কর-জিডিপির পরিমাণ ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৩ শতাংশ করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে করতে হবে ৮.৮ শতাংশ, অর্থ্যাৎ ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, আর ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে করতে হবে ৯.৫ শতাংশ অর্থ্যাৎ ৯৬ হাজার কোটির টাকা। তার মানে, ৩ বছরে মোট ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে। এবং যা করতে হবে শুধুমাত্র কর আদায়ের মাধ্যমে। এর মানে হচ্ছে, শর্তপূরণে আগামী ৩ বছরে জনগণের উপর একের পর এক নানাবিধ করের বোঝা চাপিয়ে দিবে সরকার, যখন ইতিমধ্যে নানাবিধ করের কারণে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি ও জীবন-যাপনের মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণ অতিষ্ঠ। এমতাবস্থায়, পুঁজিবাদ ও সরকারের তাবেদার কতিপয় তথাকথিত বুদ্ধিজীবি ও অর্থনীতিবিদ কর নামক এই রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজিকে যুক্তিসঙ্গত করার প্রেক্ষিতে বলছেন, “করের হার একটি দেশের উন্নয়ন এবং শাসনের গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক। উচ্চ কর রাজস্ব মানে দেশ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার উন্নতিতে আরও বেশি ব্যয় করতে সক্ষম যা দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের চাবিকাঠি এবং দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক”। যেন জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে কর আদায় করা ছাড়া উন্নয়নের অন্যকোন পথ নাই।

এক্ষেত্রে, মানবরচিত পূঁজিবাদী অর্থনীতি থেকে বের হয়ে আমরা যদি সৃষ্টিকর্তা প্রবর্তিত ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আলোকে কোন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিভাবে হয় তা বুঝার চেষ্টা করি; তাহলে, সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অর্থব্যবস্থা দেখতে পাই যেখানে জনগণের উপর অর্থনৈতিক বোঝাকে ক্রমাগত লাঘব করা হয় যাতে এমন এক সময় আসে সমাজে যাকাত নেওয়ার মত লোকই খুঁজে পাওয়া না যায়। মূলত, ইসলাম সর্বপ্রথম কোন রাষ্ট্রে বিদ্যমান সম্পদগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করে যা পূঁজিবাদ করেনা। (১) ব্যক্তি-মালিকানাধীন সম্পত্তি, (২) গণ-মালিকানাধীন সম্পত্তি, (৩) রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। অর্থ্যাৎ, কিছু সম্পদ থাকবে যার মালিকানা যেকোন ব্যক্তিই অর্জন করতে পারবে। আর, কিছু সম্পদ এমন থাকবে যার মালিকানা সকল জনগণের, কোন ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র এর মালিক হতে পারবেনা। যেমনঃ সকল ধরণের জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, পানি, চারণভূমি এবং এদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি। রাষ্ট্র জনগণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি অর্থ্যাৎ বিভিন্ন অবকাঠামো, শিক্ষা, চিকিৎসার মত বিষয়গুলোর উন্নয়ন ও পরিচালনায় খুব সহজে এই গণ-মালিকানাধীন সম্পত্তির আয় থেকে ব্যায় করবে। ফলে, জনগণের উপর কোন করের বোঝা চাপাতে হবেনা। যদি সম্পদ উদ্বৃত্ত থেকে যায় তাহলে রাষ্ট্র সে সম্পদ আবার জনগণের মধ্যেই বিতরণ করে দিবে যাতে জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পূঁজিবাদ এটি করতে পারেনা কারণ, সে গণ-সম্পদগুলোকে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকের হাতে তুলে দেয়। আবার, ইসলামী রাষ্ট্রে কিছু সম্পদ এমন থাকবে যার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্র এই সকল সম্পদ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় খরচ ব্যয় করবে। পাশাপাশি রাষ্ট্র এই সকল সম্পদ থেকে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে তৎপর থাকবে, কেননা ইসলামে যা রাষ্ট্র তথা শাসকের উপর ফরয। ইসলামী অর্থনীতি জনগণকে শাসকের হাতে শোষণ থেকে রক্ষা করে কারণ ইসলামে রাষ্ট্রের আয় এবং ব্যায়ের খাত শরীয়াহ্‌ দ্বারা নির্ধারিত। কেউ চাইলেই এর সাথে ইচ্ছেমত নতুন কিছু সংযুক্ত করার ক্ষমতা রাখেনা। তবে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধি ক্রমবর্ধমান হওয়ার কারণে এই নির্ধারিত খাতগুলো থেকেই রাষ্ট্র বিপুল সম্পদ আয় করে যা থেকে তার সকল প্রয়োজনীয় খরচ যেমন মিটাতে পারে তেমনি জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বাড়াতে পারে। এভাবেই, ইসলাম আল্লাহ্‌ প্রদত্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপরেখা দিয়েছে যা কর-রাজস্ব নির্ভর না। সুতরাং, আমরা যদি বর্তমান পূঁজিবাদী সরকারের কর চাঁদাবাজির হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করতে চাই তবে অবশ্যই আমাদের খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা, খিলাফত ব্যবস্থা ছাড়া ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব না। 

-আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম



“হিরো আলম খুলে দিলো রাজনীতির পেন্ডোরা বাক্স ?”

খবরঃ

দেশের রাজনীতিতে হঠাৎ করেই ‘হিরো আলম ঝড়’ বয়ে যাচ্ছে। তাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি—দুই দলের নেতারা প্রতিপক্ষের ‘মান’ বোঝাতে হিরো আলমকে উদাহরণ হিসেবে টানছেন। সেই মান নিঃসন্দেহে ‘সম্মান’ নয়।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং তাদের অধীনে সুষ্ঠু ভোট যে সম্ভব নয়, তা ব্যাখ্যা করার জন্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সে আজ প্রমাণ করেছে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে জিততে হয়।’ অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।’ (www.youtube.com/watch?v=mzWpswpJgsg

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিরো আলমই যে শুধু হঠাৎ করে হিরো হয়েছে তা নয়, এমন অনেক আমলা, সেনা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফ কর্মকর্তা ইত্যাদি যেমন আছে, এমনকি অভিনেতা-অভিনেত্রী, গায়ক-গায়িকা ও খেলোয়াড়ও আছে যারা হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসে বিভিন্ন সময় হিরো হয়েছে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে রাজনৈতিক নেতার অভাব নাই কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে এরা জনগণকে তাদের সাথে যুক্ত করতে পারছেনা। দেশের বেশিরভাগ মানুষই মনে করে তাদের দুর্ভোগ-দুর্গতির জন্য বর্তমান রাজনীতিই দায়ী। এজন্য আমরা দেখতে পাই এখানকার শাসক ও বিরোধীদল সবাই জনগণমূখী না হয়ে আমেরিকা, বৃটেন, ভারত এবং আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। তাছাড়া, এসব শাসকেরা গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদ দ্বারা জনগণকে শাসন করেছে, যা তাদের ইসলামী আক্বিদার সাথে সাংঘর্ষিক, তাই এই রাজনীতিকরা চিন্তা ও আবেগগতভাবে কখনই মানুষদের কাছাকাছি যেতে পারেনি। মানুষের জীবনকে উন্নত সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে ব্যবস্থাকে এখানে পুশ করা হয়েছে তা উল্টো মানুষের মৌলিক চাহিদা ও সমস্যাগুলোরও সমাধান করতে পারেনি। এভাবেই দেশে দেশে গণতন্ত্র শাসক ও শাসন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের সংযোগ, সম্পর্ক ও আগ্রহকে কমিয়ে দিচ্ছে এবং তৈরি করছে চরম বিভক্তি, জুলুম ও নিপীড়নের পরিবেশ। যার ফলাফল হিসেবে জোকার-মোকার, নায়িকা-গায়িকা কিংবা সেলিব্রেটিরা রাজনৈতিক হিরো হয়ে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “....সেদিনগুলোতে রুয়াইবিদাহরা কথা বলবে। জিজ্ঞেস করা হলো রুয়াইবিদাহ কারা? তিনি (সাঃ) বললেন, নির্বোধ ব্যক্তি যে জনগণের বিষয়ে কথা বলে”। 

ইসলাম এমন একটি চিন্তা যা বিশ্বের যেকোন মানুষের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এই বিশ্বের সকল মানুষই দুর্বল, সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল এবং তাদের আল্লাহ্‌’র মত একটি আদি অন্তহীন আজালী সত্ত্বার মুখাপেক্ষীতা প্রয়োজন। ফলে ইসলামের আক্বিদা এবং আক্বিদা থেকে উৎসারিত ব্যবস্থা মানুষকে সঠিক চিন্তা ও আবেগ দিয়ে আবদ্ধ করতে পারে। শুধু তাই নয় যেহেতু ইসলামের সমাধানগুলো স্থান ও কাল ভেদে পরিবর্তন হয়না এবং মানুষের সমস্যা ও চাহিদাগুলোকে যথাযথভাবে সমাধান করতে পারে সেহেতু ইসলাম শুধু রাজনৈতিক শুন্যতা দূর করতে পারে তা নয় এটি এমন একটি দায়িত্বশীল ও ভিশনারী জনগণ তৈরি করে যারা সবাই মিলে রাষ্ট্র ও পৃথিবীকে সুরক্ষা করে। সত্যিকার ইসলামের চিন্তায় গঠিত ব্যক্তি কখনই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিকদের মত সুযোগ সন্ধানী হঠাৎ হিরো হওয়া কিংবা পশ্চিমাদের অন্ধ অনুগত দাস হয়ে ক্ষমতায় ঝুলে থাকার আকাঙ্ক্ষায় থাকবে না বরং তাদের ব্যক্তিত্ব হবে আল্লাহ্‌’র ভয়ে কম্পমান কিন্তু মানুষের সেবায় অবিচল। ইসলামের কারণেই খলিফা উমর (রাঃ) এমনভাবে ভাবতেন যে তিনি বলতেন, “যদি ইউফ্রেটিসের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা যায় তবে উমর সেজন্য দায়ী থাকবে”। ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক সংগ্রাম একদিকে যেমন এমন ব্যক্তিত্বের মানুষ তৈরি করবে অন্যদিকে এই রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্রে রাজনৈতিক শুন্যতাতো থাকবেইনা বরং সেই রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিকও হয়ে উঠবে দায়িত্বশীল বৈশ্বিক নাগরিক। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন, “এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় (ওয়াসাত উম্মাহ্‌) করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রাসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য”। 

-মোহাম্মদ তালহা হোসেন



“সুইডেনের পর এবার ডেনমার্কে পোড়ানো হলো পবিত্র কুর‘আন” 

খবরঃ 

সুইডেনে কট্টর ডানপন্থীদের পবিত্র কুর‘আন পোড়ানোর ঘটনায় নিন্দা ও সমালোচনায় মুখর মুসলিম বিশ্ব। এর মধ্যেই ডেনমার্কে পবিত্র কুর‘আন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের পাশে একটি মসজিদের সামনে ও দেশটিতে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে এসব ঘটনা ঘটেছে। কোপেনহেগেনে পবিত্র কুর‘আন পোড়ানোর ঘটনায় যুক্ত ছিলেন রাসমুস পালুদান নামের এক ব্যক্তি। …পালুদান সুইডেন ও ডেনমার্কের যৌথ নাগরিক। গত বছর এপ্রিলে পালুদান ঘোষণা দেন, পবিত্র রমজান মাসে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পবিত্র কুর‘আন পোড়াবেন। (www.prothomalo.com/world/europe/jht3di4ib2)

মন্তব্যঃ

মহিমান্বিত আল-কুর‘আন নাযিলের পর থেকেই আমরা দেখি কুর‘আন-কে অবিশ্বাস করা কাফির সম্প্রদায়ের এর প্রতি তীব্র ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ চলে আসছে। কিন্তু, পৃথিবীতে এতো গ্রন্থ থাকতে কেন আলাদাভাবে কুর‘আন-এর প্রতি কাফিরদের প্রচন্ড ঘৃণা এবং শত্রুতা? কারণ হচ্ছে, এই কুর‘আন নাযিলের মাধ্যমে মহাবিশ্বের পালনকর্তা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানবজাতির জন্য একমাত্র মনোনীত দ্বীন তথা জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করেন এবং অন্যান্য সকল মানবরচিত কুফর জীবনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেন। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে ব্যক্তিগত কিছু রীতিনীতির বাইরে সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতিসহ জীবনব্যবস্থার কোন নির্দেশনা নাই, যেটা একমাত্র এই কুর‘আনেই বিদ্যমান রয়েছে। কুর‘আন নাযিলের পর থেকে মক্কার কুরাইশদের প্রচলিত জীবনব্যবস্থা থেকে শুরু করে পশ্চিমাদের বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থা পর্যন্ত প্রতিটি মানবরচিত জীবনব্যবস্থাই পদে পদে কুর‘আন বর্ণিত জীবনব্যবস্থা দ্বারা চ্যালেঞ্জ এবং প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। যা কাফিরদের গাত্রদাহের প্রধান কারণ। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে কুর‘আনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে কাফিররা তাই এসব ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করছে।

মূলত, যখনই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পথভ্রষ্ট মানবজাতিকে পথনির্দেশ করার জন্য কোন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন তখনই তাঁর সত্যায়নস্বরূপ একটা মোজেজা প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি মোজেজা ছিল সমসাময়িক মানবজাতির জন্য চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। বিশেষ করে আল্লাহ্‌’র বিধানের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে চায় না সেসব কাফিরদের জন্য। আল-কুর‘আন মানবজাতির জন্য রাসূলুল্লাহ্‌(সাঃ)-এর নিয়ে আসা যেমন পথনির্দেশনা আবার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত মোজেজাও যা কিনা ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করে। অন্যান্য, মোজেজা থেকে আল-কুর‘আন মোজেজা হিসেবে ভিন্ন এবং পরাক্রমশালী। কেননা, এটি মানুষের বুদ্ধিভিত্তিক ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে অর্থ্যাৎ যে বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব, সেই বৈশিষ্ট্যকেই এই কুর‘আন চ্যালেঞ্জ করেছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “বল, যদি মানুষ ও জিন এ কুর‘আন-এর অনুরূপ হাজির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাজির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়” [আল-ইসরাঃ ৮৮]। “নাকি তারা বলে, ‘সে এটা রটনা করেছে? বল, ‘তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া যাকে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’” [হূদঃ ১৩]। “…যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক, যদি যদি তোমরা সত্যবাদী হও ” [বাকারাঃ ২৩]। কিন্তু, কুর‘আন-এর অলৌকিক ভাষাশৈলী এবং বর্ণনাভঙ্গির ফলে ১৪শ বছর পরেও মানুষ এই চ্যালেঞ্জকে প্রতিহত করতে পারেনি। যা কুর‘আন-এর সত্যতাকে যেমন সু-উজ্জল করে উপস্থাপন করে একইভাবে এই চ্যালেঞ্জে পরাজিত হওয়া কাফিরদের অন্তর্দহনকে আরও বেশি প্রজ্জলিত করে। যারই বহিঃপ্রকাশ পালুদানের (তার উপর আল্লাহ্‌’র লানত বর্ষিত হোক) মত এমন পরাজিত কাফির সম্প্রদায় করে যাচ্ছে। কার্যত, এর মাধ্যমে কাফিররা ভাবছে তারা ইসলামকে পরাজিত এবং অপমানিত করছে। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে এর মাধ্যমে তাদের পরাজয় ও অপমানজনিত ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই ঘটছে না।

মহাগ্রন্থ আল-কুর‘আন-এর আপন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আসমানি কিতাব হিসেবে প্রমাণিত। কেউ একে পুড়িয়ে যেমন এর সত্যতা প্রত্যাখ্যান করতে পারেনা একইভাবে ইসলামকেও পরাজিত করতে পারবেনা। কিন্তু, মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে এর পবিত্রতাকে রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে এহেন ঘৃণিত কাজকে প্রতিহত করা। প্রকৃতপক্ষে, আল-কুর‘আন-এর মর্যাদা রক্ষিত ছিল ততদিন যতদিন এ কুর‘আন রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়িত ছিলো। অর্থ্যাৎ, যতদিন খিলাফত ব্যবস্থা ছিল ততদিন। কেননা, ততদিন কুর‘আন রাষ্ট্রীয়ভাবে সুরক্ষিত ছিলো। আজকে সেইরকম রাষ্ট্র নাই তাই কুর‘আন-এর সুরক্ষা নাই। এখন, যদি সত্যিকার অর্থেই আমরা হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কুর‘আনকে সুরক্ষা দিতে চাই তাহলে অবশ্যই কুর‘আনকে পুনঃরায় খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আনতে হবে। 

-আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম



“‘ফারাজ’ চলচ্চিত্র: ভুল তথ্য উপস্থাপনের অভিযোগ অবিন্তার মায়ের”

খবরঃ

২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। তবে সেদিন সেখানে কী ঘটনা ঘটেছিল তার বিস্তারিত এখনও অজানা। কিসের ভিত্তিতে তাহলে ভারতীয় স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক ‘ফারাজ’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন? এমন প্রশ্ন রেখেছেন সেদিন জঙ্গি হামলায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। …তিনি বলেন, আমারও প্রাইভেসি থাকা দরকার, সেটাও তো নেই। আমার মেয়ের তখন বয়স ছিল ১৯ বছর। …যে ঘটনাকে বলা হয়েছে যে, আমার মেয়ের জন্য আরেকজন মানুষ তার জীবন দিয়ে দিয়েছে সে-ই হিরো। নো নো। দ্যাটস রং। আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ তার কোনো প্রমাণ নেই।… (www.banglatribune.com/entertainment/782148/ফারাজ-চলচ্চিত্র-ভুল-তথ্য-উপস্থাপনের-অভিযোগ)

মন্তব্যঃ

তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাফিরদের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হল মুভি কিংবা সিনেমাগুলো। শক্তিশালী মারনাস্ত্রের মাধ্যমে সামরিক অভিযানের মতো ‘হার্ড পাওয়ার’ প্রয়োগের পাশাপাশি মিডিয়া, মুভি, টিভি সিরিজ ইত্যাদি এই যুদ্ধে ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে কাজ করে। ১৯৮০’র দশকে ‘জোসেফ ন্যাই’ কর্তৃক এই ‘সফট পাওয়ার’-এর দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তনের পরে (যেটা হলো নিজের ইচ্ছামাফিক ফলাফল অর্জনে অন্যকে প্রতারণামূলকভাবে প্রভাবিত করা) সিআইএ, এফবিআই সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যাপকভাবে এই মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে শুরু করে। ইউএস ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন এক্ট এর নথিপত্র অনুযায়ী ১৯১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৮০০ টিরও বেশি ফিচার ফিল্ম মার্কিন সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স (ডি ও ডি) থেকে অনুদান পেয়েছে। অর্থাৎ ফিল্মগুলো তাদের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও তাদের স্বার্থে তৈরিকৃত। এসকল মুভিগুলোতে ইসলামের এক সুমহান ইবাদত ‘জিহাদ’সহ অন্যান্য হুকুম-এর বিকৃত উপস্থাপন সহজেই পরিলক্ষিত হয়। এখানে আলোচিত ‘ফারাজ’ মুভিটির প্রচারিত ট্রেইলারটি দেখলেই সহজেই অনুধাবন করা যায়, এটি পশ্চিমা মোড়কে প্রচারিত ইসলামের নতুন কোন ভার্সনের প্রদর্শনী ছাড়া আর কিছুই না। যেখানে, একদিকে একদল নৃশংস হত্যাকারীকে ভিলেন বানানো হয়েছে, যারা নিজেদেরকে সঠিক মুসলিম বলে দাবি করছে, অন্যদিকে হলি আর্টিজান ঘটনায় ভুক্তভোগী ‘পাতানো নায়ক’ ফারাজ (যে পশ্চিমা ফ্রি-মিক্সিং কালচারে অভ্যস্ত) নিজেকে ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করেছে। এভাবে খুব কৌশলে একদিকে জিহাদের বিকৃত উপস্থাপন করে ‘ইসলামোফোবিয়া’কে তৈরি করা হয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত তরুণকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বানানো হয়েছে। তার মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে, “আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ইসলাম থেকে আসে না, আমাদের সংস্কৃতি থেকেও আসে”। যেহেতু ইসলামের সংস্কৃতি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত ও এটি অপরিবর্তনীয়, সেহেতু মুসলিমরা এই পরিচয় আঁকড়ে ধরলে তাদের মধ্যে কুফরি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটানো সম্ভব নয়। তাই ইসলামী পরিচয়ের পাশাপাশি অন্য পরিচয় ধারণ করলে সেগুলোতে অনুপ্রবেশ করে মুসলিমদের মন ও মগজ কলুষিত করা সহজ হয়। মূলত এই লক্ষ্যেই এই মুভি চিত্রায়ন করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, যতদিন পর্যন্ত না রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন রাষ্ট্র ইসলামকে প্রটেক্ট করবে ততদিন পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সকল ‘সফট পাওয়ার’ ও ‘হার্ড পাওয়ার’ প্রয়োগ করা বন্ধ হবে না। বর্তমানে মুসলিমগণ ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালন করলেও রাষ্ট্র কর্তৃক এর মর্যাদাকে প্রটেক্ট করা হচ্ছে না। মুসলিম বিশ্বের শাসকরা বরং পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তারা এসকল মর্যাদাহানিকর মুভি কিংবা সিনেমা তৈরিতে সামান্য প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, বরং ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের পশ্চিমা ষড়যন্ত্রে তারা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করছে। এতে অবিন্তার মায়ের মতো ব্যক্তিরা ভুক্তভোগী হলেও তাদের কিছুই করার নেই। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বড় (?) স্বার্থের নিকট তার মৃত মেয়ের প্রাইভেসি এখানে নিতান্তই ক্ষুদ্র বিষয়। তাই এই মুভি বন্ধ করার জন্য শত চেষ্টা করেও তিনি এর মুক্তি বন্ধ করতে পারেননি। তাই পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বে দালাল মুসলিম শাসকদের অধীনস্থ রাষ্ট্রব্যবস্থায় থেকে কোন মৃত ব্যক্তির প্রাইভেসী রক্ষা পাওয়া কিংবা ইসলামের বিরুদ্ধে কাফিরদের ষড়যন্ত্র ও তাদের পরিচালিত অনন্ত যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এসব থেকে রক্ষা পাওয়া ও কাফিরদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা অপসারণ করে খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করা জরুরি, যেখানে একটি শক্তিশালী মিডিয়া ইসলামের সত্যকে প্রচার করবে, এর ন্যায়বিচার ও সামরিক বাহিনীর শক্তিকে প্রচার করবে। মানবরচিত সকল ব্যবস্থার অসারতা ও ইসলামের শত্রুদের দুর্বলতা উন্মোচন করবে।

-জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post