Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 78

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৭৮ তম সংখ্যা । ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩



এই সংখ্যায় থাকছে:


“রমজানে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম ৩০% পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা”

“ঢাবিতে চালু হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার কোটা”

“যদি আড়ি পাতা না যায় জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন করব কীভাবে”

“চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ? আমরা তোর কী করতে পারি জানিস?”

“ভূমিকম্পে তুরস্ক, সিরিয়ায় মৃত্যু ৪৫ হাজার ছাড়াল”

“আইএমএফ কি বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা” 

“আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক নেই”







“রমজানে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম ৩০% পর্যন্ত বাড়ার শঙ্কা”

খবরঃ 

বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এবছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এবছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।.... খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এরইমধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোও রয়েছে। যদিও রমজান মাস শুরু হতে আরো দেড় মাসের মতো বাকি রয়েছে। (https://www.bbc.com/bengali/articles/c51lx5ex7n2o

মন্তব্যঃ 

মুদ্রাস্ফীতি আমাদের কাছে  অতি সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর রমজান আসলে তো কথাই নেই। যেহেতু কিছু পণ্যের দাহিদা বেড়ে যায় তাই দামও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক বলে আমরা মেনে নেই। কিন্তু আসলে কি কেবল চাহিদা বেড়ে যাওয়াতেই এই মুদ্রাস্ফীতি? বিষয়টা একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। মোটাদাগে মুদ্রাস্ফীতি দুই ধরনের হতে পারে ১) প্রাকৃতিক ২) মানবসৃষ্ট। প্রাকৃতিক মুদ্রাস্ফীতি ঘটে যখন কোন প্রাকৃতিক কারণ যেমন বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প ইত্যাদি কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়, যোগান কমে যায়। অন্যদিকে, মানবসৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির কারণ (ক) দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা- যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়, যেমন উচ্চ সুদের হার, বিদ্যুৎ-জ্বালানীর উচ্চমূল্য, ঘুষ ইত্যাদি; আবার অস্বাভাবিক মুনাফার লোভে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও কিন্তু এই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অন্তর্গত একটা বিষয়। (খ) রাজস্ব নীতি- অর্থাৎ সরকারী আয়-ব্যয় নীতি; আয় বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্র যখন ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয় তখন উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। (গ) মুদ্রানীতি- অর্থাৎ অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ ও মুদ্রার বিনিময় মান সংক্রান্ত নীতি; অতিরিক্ত টাকা ছাপানো ও ব্যাংক কর্তৃক ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে যখন টাকার সরবরাহ পণ্য ও সেবা উৎপাদনের চেয়ে বেশি হয় তখন মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। আবার, দেখা যায় রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য কমে যায় ফলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।

মজার বিষয় হল, মানবসৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সাধারণত কেবল দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদগণ আলোচনা করে থাকেন। কারণ এক্ষেত্রে সহজেই সকল দোষ গুটিকয়েক ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আড়ালে রাখা যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণ রাজস্ব ও মুদ্রানীতি মানবসৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। মুদ্রাস্ফীতি একটা জুলুম আর এই জুলুমের মূলে আছে পুঁজিবাদী ভ্রান্তনীতি। মানবসৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি একটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাগত সমস্যা, তাই এই শাসন ও এর অর্থব্যবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে মানবসৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি ঘটবে না। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। খিলাফত রাষ্ট্র দ্রব্যের বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দিবে না। বরং সমাজের সামগ্রিক চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হবে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দুরীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো হবে। রাজস্ব নীতি হবে সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়– রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের খাতগুলো ইসলামী শারীআহ্‌ নির্দিস্ট করে দিয়েছে; তাই এখানে বাড়তি কর আদায় কিংবা আরোপের কোন সুযোগ নেই; পানি-বিদ্যুৎ-জ্বালানী গণমালিকানাধীন সম্পদ হওয়ায় মিলবে সুলভ মুল্যে। ফলে পণ্য উৎপাদন খরচ কমে আসবে। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে খলিফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হবে ইসলামী মুদ্রানীতি। খিলাফত রাষ্ট্র বর্তমানের ডলারভিত্তিক ফিয়াট কারেন্সি থেকে বেরিয়ে আসবে এবং রাষ্ট্রের মুদ্রা হবে স্বর্ন ও রৌপ্য ভিত্তিক। হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক কুর‘আন ও সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে প্রণীত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানে এবিষয়ে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে “রাষ্ট্রের মুদ্রা হবে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য, তা ছাপাযুক্ত হোক বা না হোক। অন্য কোন ধরনের মুদ্রার ব্যবহার অনুমোদিত নয়। রাষ্ট্র প্রয়োজনবোধে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার পরিবর্তে অন্য কোন ধরনের মুদ্রা প্রস্তুত করতে পারে তবে শর্ত থাকবে যে, সমপরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা থাকতে হবে ...” অর্থাৎ বর্তমানের শাসকদের মত পুঁজিপতিদের তুষ্ট করতে ইচ্ছেমত টাকা ছাপিয়ে সাধারণ মানুষদের জন্য মুদ্রাস্ফীতির দুর্ভোগ তৈরি করার কোন সুযোগ খিলাফত রাষ্ট্রে থাকবে না। 

    -    আবু যায়িদ 



“ঢাবিতে চালু হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার কোটা”

খবরঃ 

ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বে থাকা কোটাগুলোর সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডার কিংবা হিজড়া সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা এই প্রথম ট্রান্সজেন্ডার কোটা অন্তর্ভুক্তি করেছি। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের জন্য আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। (https://www.ittefaq.com.bd/627934)

মন্তব্যঃ

বেশ কিছুদিন ধরেই ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সমাজ বিনির্মাণের কথা বলে বাংলাদেশে কোমলমতি শিশুদের পাঠ্য বইয়ে লিঙ্গপরিবর্তনকারীর গল্প অন্তর্ভুক্তিকরণসহ বিভিন্ন এনজিও, মিডিয়া ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে  ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতাকে স্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চলছে। কিছু সংখ্যক বিকৃত চিন্তার রূপান্তরকামীদের জন্য কোটা নির্ধারণের মাধ্যমে সেই অপচেষ্টাকে আরো পাকাপোক্ত করলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্যুলার  প্রশাসন। জন্মগত লৈংগিকত্রুটি নিয়ে জন্মানো হিজড়াদের সাথে সার্জারি করে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী ট্রান্সজেন্ডারদের এক করে দেখানোর মাধ্যমে LGBTQ নামক ঘৃণিত ও কুফর তত্ত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়ার পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে 91.04% মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশে।

সামগ্রিকভাবে “এলজিবিটি” বলতে বোঝায় “লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল ও ট্রান্সজেন্ডার” অর্থাৎ, নারী ও পুরুষ সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামী। LGBTQ এর মানসিক বিকারগ্রস্থতাসম্পন্ন কুফর চিন্তাসমূহ বৈধতা দেয়ার জন্য সাধারণের কাছে যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করা হয় তার কয়েকটি এবং সেগুলোর বুদ্ধিবৃত্তিক ভ্রান্তি এখানে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমত বলা হয়, তাদের জীনগত ত্রুটি আছে, তাই তারা নারী দেহে পুরুষ অনূভুতি বা পুরুষদেহে নারী অনুভূতির স্বাদ পায়। অথচ, এখনও কোনো সায়েন্টিফিক গবেষণা জার্নালে এরকম কোনো জিনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরঞ্চ এটা “মনে হওয়া”-এর উপর নির্ভর করা একটা খামখেয়ালিপনামাত্র যেটার কোন বাস্তবিক ভিত্তি, প্রমাণ বা জীন কোনটিই নেই। সুইডিশ নিউরোলজিস্ট ইভানকা সেভিক তার দীর্ঘ গবেষণার পরও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি যে ট্রান্সজেন্ডারকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, এরকম জিনের উপস্থিতি রয়েছে, তাহলে সেটাকে কী স্বাভাবিক নাকি জেনেটিক ডিজঅর্ডার, কোন নামে ডাকা হবে? উদাহরণস্বরূপ মিথোম্যানিয়া, ক্লেপ্টোম্যানিয়া এসব সাইকোলজিক্যাল ডিজঅর্ডার অথবা হরমোনাল ইমব্যালেন্স থেকে মাদকাসক্তি, ট্রি ম্যান সিনড্রোম নামক জেনেটিক ডিজঅর্ডার নামকরণ ও চিকিৎসা দেয়া হয়। এখন, এসব রোগ থেকে আরোগ্যের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো তাদেরকে ‘জন্মগতভাবে মিথ্যাবাদী’, ‘জেনেটিকাল-চোর’ অথবা ‘মানুষ্য-গাছ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয় তবে তা কি কোনো স্বাভাবিক কাজ হতে পারে?! দ্বিতীয়ত,  প্রাণিজগতে রূপান্তরকামিতার উপস্থিতিকে তারা আরেকটি রেফারেন্স হিসেবে দেখাতে চায়। যৌনতার পরিবর্তন ঘটে এরকম প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে মাছি, কেঁচো, মাকড়শা, মাছ এবং জলজ ফ্লি ডাফনিয়াদের বিভিন্ন প্রজাতি। মানুষের চিন্তাধারা কতটা নিচু স্তরে নেমে আসলে তারা পশুপাখিদের রেফারেন্স হিসেবে দেখাতে পারে! একটা পশুর জন্য যা স্বাভাবিক একজন মানুষের জন্যও কি তা স্বাভাবিক? কুকুর, বিড়ালসহ অনেক পশু নিজের জননাঙ্গ মুখ দিয়ে পরিষ্কার করে, অনেক পশুপাখি তাদের নিজের সন্তানকে মেরে ফেলে, কিছু পাখি নিজের বিষ্ঠা নিজে ঠুকরে খায়। পশুপাখিদের এই আচরণ কী মানুষের গাইডলাইনের ভিত্তি হতে পারে?! তৃতীয়ত, এই ধরনের নোংরা ও বিভ্রান্তিমূলক দর্শনের জন্মদাতা পশ্চিমাদের সেক্যুলার জীবনব্যবস্থা, যেখানে বলা হয় ব্যক্তিগত জীবনে প্রত্যেকেই স্বাধীন; নিজস্ব গন্ডিতে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থা, মিডিয়া এবং এনজিও কালচারের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকেও এতটাই বিভ্রান্তিতে রাখে যে বায়োলজিক্যালি নারী বা পুরুষ হয়ে জন্মালেও তাকে শেখানো হয় জেন্ডার হল সমাজের আরোপিত নিয়ম বা ‘সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট’। তাদের বহুলপ্রচলিত 'know thyself' নামক বিভ্রান্তিমূলক আলোচনার মাধ্যমে ব্যক্তি, নারী না পুরুষ তার বায়োলজিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে ইচ্ছেমত লিংগ নির্ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে! এই চিন্তার ফলাফলস্বরূপ, কেউ কেউ এখন নিজেকে নন-বাইনারি বা পুরুষ-নারী কোন পরিচয়ই নেই বলতে পছন্দ করছে! এমনকি কেউ যদি মনে করে সে ভুল শরীরে জন্ম নিয়েছে, সে আসলে মানুষ না! স্বভাবে কাক, কুকুর বা গাছ! তাহলে তার স্বাধীনতা আছে পছন্দমত লিঙ্গ বা শরীর বেছে নেওয়ার! এরকম উদ্ভট বাস্তবতা বিবর্জিত তত্ত্ব তাদের সম্পূর্ণ সামাজিক ব্যবস্থাকেই  ধ্বংস করে দিচ্ছে। হাস্যকর হলো, যে পশ্চিমা সমাজ নিজেদের জন্ম বা লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে এতটা বিভ্রান্ত, যেখানে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত, তাদেরকেই কিনা আমাদের কপর্দকহীন বুদ্ধিজীবীরা উন্নতি, সমৃদ্ধি ও প্রগতির কর্ণধার মনে করে অন্ধ অনুসরণ করেন।

মানবজাতির সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্যান্য প্রতিটা বিষয়ের মত লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়েও আমাদের বিভ্রান্তিতে রাখেননি, বরং সূক্ষাতিসূক্ষ ব্যাপারেও তিনি আমাদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ্‌’র দেয়া জীবনব্যবস্থায় ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে কারো পরিচয় নির্ধারিত হয়না, বরং তা হয় বাস্তবিক শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে। এমনকি জন্মগতভাবে ত্রুটি নিয়ে বড় হওয়া হিজড়া গোষ্ঠীও তাদের প্রকট লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে নারী বা পুরুষরুপে চিহ্নিত হয় এবং চিহ্নিত পরিচয়ের ভিত্তিতেই তাকে সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হয়, একই সাথে আরোপ হয় তার জন্য সুনির্দিষ্ট হুকুম-আহকাম। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা সহনশীলতার নামে বিকৃত মানসিকতা ইসলামী শারীআহ্‌ অনুযায়ী কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এ ব্যাপারে আমাদের স্পষ্টভাবে সতর্ক করেন, “সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার (আল্লাহ্‌’র) বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব। আমি তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণোচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহ্‌’র সৃষ্টি বিকৃত করবেই। (আল্লাহ্‌ বলেন) যে কেউ আল্লাহ্‌’র পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়” (সুরা: নিসা, আয়াত: ১১৮-১১৯)

    -    নুহা ইসলাম



“যদি আড়ি পাতা না যায় জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন করব কীভাবে”

খবরঃ

বৃহস্পতিবার চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এটা ঠিক। এরমধ্য দিয়ে আবার দেখা যায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে বোমা বানাবে, জঙ্গিবাদ করবে, সেগুলো দেখায়। এগুলো যদি আড়ি না পাতা যায় আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন করব কীভাবে? তাদের এ সমস্ত তথ্য আমরা পাব কীভাবে? কাজেই আমাদের তো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, 'আড়ি পাতা নিয়ে অনেকে কথা বলেন। কারণটা কী? ঠিক কোন রহস্যের কথা বলবেন যেটা সরকার শুনে ফেললে সমস্যা হবে? সরকার শোনে না। এটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস এধরনের কর্মকাণ্ড সেগুলো রোধ করার জন্য যেটুকু করার সেটুকুই করে। তার বেশি আর কিছু করে না। আর এটা করা যায় বলেই এটা আইনসিদ্ধ। এটা করা যায় বলেই এটা সব দেশে আছে।' (bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-449316)

মন্তব্যঃ

শেখ হাসিনার এই বক্তব্য মূলত গত ৫ই ফেব্রুয়ারী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে করা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে করা। ‘বাংলাদেশে অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে পিটার হাস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণয়ন করা প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।” ২০২২ সালের এপ্রিলে এই ডেটা সুরক্ষা আইনটির খসড়া তৈরি হলে দেশি-বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, “এই বিলে অস্পষ্ট ও অতিবিস্তৃত বিধান কর্তৃপক্ষকে এমন সক্ষমতা ও বৈধতা দেবে, যাতে শারীরিকভাবে বা দূর থেকে ব্যক্তিগত যন্ত্রে নজরদারি করতে পারবে। ফলে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন হবে। এর মধ্য দিয়ে সরকার মানুষের ডিজিটাল লাইফ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।” এই আইনকে মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বর্ধিতাংশ।

পূর্বে যেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কারও সম্পর্কে তথ্য জানতে হলে ঐ নির্দিষ্ট ডিজিটাল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্মরনাপন্ন হতে হত সেখানে এই আইন পাশ হলে ডেটার স্থানীয়করণ করা হবে ফলে সরকার চাইলে যেকোন মূহুর্তে ঐ ডেটাতে মনিটরিং ও এক্সেস করতে পারবে। অপরদিকে যেসকল বিদেশী আপ্লিক্যাশন যেমন ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ জনগণ ব্যবহার করে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা হ্রাস পাবে ফলে তাদের ব্যবসাও নিম্নমুখী হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তার বিষয় এটিও। পিটার হাসের মতে, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, যদি ডেটা স্থানীয়করণের শর্তকে কঠোরভাবে আরোপের মাধ্যমে ডেটা সুরক্ষা আইন পাস করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানী বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে এখানকার ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে।” যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যাথা অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা হরণের ব্যাপারে না বরং তাদের দেশের কোম্পানীগুলোর ব্যবসায় ক্ষতি হওয়াকে নিয়ে। অপরদিকে এধরনের আইনে অ্যামেরিকার ডাটা হারানোর সম্ভাবনা তৈরী হবে। ফলে বৈশ্বিকভাবে তাদের যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ চলছে তাতে কিছুটা হোচট খেতে পারে। অর্থাৎ তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুইদিক থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে আর এজন্যেই তারা এই আইনের বিরোধীতা করছে। এ যেন ঠিক আমেরিকার RAB-এর উপর স্যাংশন দেওয়ার মত পেক্ষাপট, যেখানে  তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলামের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য নিজেরাই তা তৈরী করেছিল। অপরদিকে জনগণকে ভয়ের মধ্যে রেখে তাদের পিছনে গোয়েন্দাগিরি করা হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়। 

এই হচ্ছে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেতা-নেত্রীদের অবস্থান, যারা জনগণকে গিনিপিগ বানিয়ে ব্যবসা করে কিংবা রাজনৈতিক ফায়দা লুটে কিংবা দমন-নিপীড়নকে আরও কঠোর করে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমাদেরকে অবশ্যই সমাধান হিসেবে ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থার দিকেই ফিরে যেতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রও নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করবে তবে তা তাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্যে না, বরং তাদের দেখভাল ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য। যেমন, হযরত উমার (রা.) তার খিলাফতকালে জাতীয় রেজিস্টার বা নাগরিক তালিকা তৈরী করেছিলেন। উপরন্তু নাগরিকদের সর্বাঙ্গীন কল্যানের জন্যও নাগরিকদের তথ্যসমূহ রাষ্ট্রের কাছে থাকা জরুরী। খিলাফত রাষ্ট্র নাগরিকদের তথ্য বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাকে হুমকীর মুখে ফেলবে না। না কোন বিদেশী কোম্পানিকে এসকল তথ্য ব্যবহার করে ব্যবসা করতে দিবে। খিলাফত রাষ্ট্রে নাগরিকদের উপর গোয়েন্দাগিরি করাও সম্পূর্নভাবে নিষেধ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না” (আল-হুজুরাতঃ১২)। তবে যদি কাউকে এমন মনে হয় যে, তার সাথে শত্রু রাষ্ট্রের সম্পর্ক রয়েছে তবে তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা যাবে। এবং শত্রুরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি করা বাধ্যতামূলক একটি কাজ।

    -    মো. হাফিজুর রহমান  



“চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ? আমরা তোর কী করতে পারি জানিস?”

খবরঃ

‘ওনারা আমার মুখ চেপে ধরেন এবং সজোরে থাপ্পড় মারতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, “চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ? আমরা তোর কী করতে পারি জানিস তুই? কোনো আইডিয়া আছে আমাদের সম্পর্কে?”’ নির্যাতনের এমন ভয়াবহ বর্ণনার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। গত রোববার দিবাগত রাত ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন তিনি।... তারপর তারা বলতে থাকেন, “জামা খোল”, জামা খুলতে না চাইলে তারা আবার মারধর শুরু করেন এবং জোর করে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন।’... (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/3maaopazia)

মন্তব্যঃ

স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি সমাজে বসবাস করে এর থেকে আর কি ভাল মানুষ আমরা আশা করতে পারি! আমরা জানি, মানুষের প্রবৃত্তি ও চাহিদাগুলোকে কোন নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ না করলে তা তাকে সীমালংঘনের দিকে ধাবিত করে, কারণ প্রবৃত্তি শুধু পূরণের দিকে তাড়িত করে যার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। এক্ষেত্রে ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে গড়ে উঠা মানুষদের সুবিধা হলো, তারা সৃষ্টিকর্তার ভয়ে প্রবৃত্তির প্ররোচনায় সীমালংঘন করা থেকে বিরত থাকে। অন্যদিকে, মানুষের আরেকটি প্রবৃত্তি হলো, সে সবসময় প্রশংসিত হতে চায়, সম্মানিত হতে চায় এবং কখনোই সমালোচিত হতে চায় না। সে আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে জবাবদিহিতার ভয় করে। এ কারণে গোপনে অপরাধ করলেও, প্রকাশ্যে অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে মানুষের কাছ থেকে নিন্দিত হওয়ার ভয়ে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এই দুইটি বাধাকে সিস্টেমেটিকভাবে অপসারণ করে মানুষকে স্বেচ্ছাচারী হিসেবে গড়ে তোলে। এটি ধর্মের ভূমিকাকে ব্যক্তির ইচ্ছাধীন করে দেয় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের এর ভূমিকাকে পুরোপুরি অস্বীকার করে। ফলে সৃষ্টিকর্তার সাথে ব্যক্তিমানুষের আর কোন সম্পর্ক উপলব্ধি না করলেও চলে। তখন, ব্যক্তি মানুষের অপরাধ প্রবণ হতে আর কোনো বাধা থাকে না। অন্যদিকে, ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদা বা বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত তথাকথিত ব্যক্তির স্বাধীনতার ধারণা ব্যক্তিকে সমালোচনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। এটি বিশ্বাস করে, একজন ব্যক্তি যা খুশি তাই করুক যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্যের স্বাধীনতায়(?) হস্তক্ষেপ করে। ফলত, সমাজে এই আক্বিদা বাস্তবায়ন হলে, একজন পাপী মানুষের আর আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষীদের দ্বারাও ভুল শোধরানোর কোন সুযোগ থাকে না। আবার, সেই অপরাধপ্রবন মানুষ যখন ক্ষমতা অর্জন করে কিংবা ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থাকে তখন সে তার চারপাশে চাটুকার, মোসাহেব ও তল্পিবাহক দ্বারা পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় থাকে। সমাজের অন্যরা তখন ভয়ে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখেও চুপ থাকে, যেমনটি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটির ক্ষেত্রে হয়েছে। এখানে ছাত্রলীগ নেত্রী ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে জঘন্য অপরাধ করলেও এক্ষেত্রে সাধারণ ছাত্রীরা, এমনকি হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত তার ভয়ে চুপ ছিল। এভাবে, একজন মানুষ নারী কিংবা পুরুষ হোক, ক্ষমতা পেলে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ব্যবস্থায় সে ‘যা খুশি তাই’ করার (সৃষ্টিকর্তার অধিকার) ভোগ করতে থাকে। কিন্তু সে তো আর সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না! সে এই নেত্রীর মত (তার ভাষ্যমতে ‘খারাপ’) একটা দানবে পরিণত হয়। এখানে আলোচিত ছাত্রলীগ নেত্রীর মতো ‘পাতি দানব’রা সাধারণ ছাত্রীদের বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে ভিডিও করে, প্রধানমন্ত্রীর মত বড় দানবেরা মানুষকে গুম-খুন করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, আর বাইডেন-পুতিনের মত মহাদানবেরা সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। 

তাই যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এসকল দানবের আঁতুড়ঘর, সেই ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সমাজ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন রেখে এদের জন্ম ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে, সেই সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে যেখানে মানুষ সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র ভয়ে প্রকাশ্য অপরাধ থেকে তো বটেই, গোপন অপরাধ থেকেও বিরত থাকবে। এ সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের ফরজ দায়িত্ব ব্যাপকভাবে উৎসাহিতকরণ করা হবে ও পালিত হবে। মানুষ তখন তার ভুল শোধরানোর সুযোগ পাবে এবং ‘আয়না স্বরূপ’ মু’মিন ভাই-বোনেরা তখন একে অন্যের দোষ-ত্রুটি শুধরিয়ে দিবে। সমাজে আল্লাহ্‌’র ভীতির সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে চালু হবে। এখানে সবচেয়ে আল্লাহভীরু মানুষেরাই এই সমাজের নেতৃত্ব গ্রহণ করবে, যাদের কাজ হবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র হুকুমগুলো সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা। এই সমাজে তৈরি হবে মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির মত নিষ্ঠাবান সেনাপতি ও সুশাসক যার সুশাসনের অধীনের ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের পীরপালের মানুষ অমুসলিম হলেও, তিনি মাটিতে শুয়ে আছেন বলে শত শত বছর পাড় করে তার সম্মানার্থে খাট বা চৌকিতে না ঘুমিয়ে আজও মাটিতে ঘুমায় (দেখুন: কালের কন্ঠ, ২ জুন, ২০২২)। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্দেশিত এই ব্যবস্থাটির নাম হল ‘খিলাফত’ রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এর কোন বিকল্প নেই।

    -     জহিরুল ইসলাম


“ভূমিকম্পে তুরস্ক, সিরিয়ায় মৃত্যু ৪৫ হাজার ছাড়াল”

খবরঃ

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫০০০ ছাড়িয়ে গেছে। ৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর কাছেই ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। এই দুই ভূমিকম্পের ফলে হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে দেশ দুটির প্রায় লাখো মানুষ আহত, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ভূমিকম্পের ১১ দিন পর শুক্রবার তুরস্কে ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিন ব্যক্তিকে জীবিত বের করে এনেছেন উদ্ধারকারীরা। ভূমিকম্পে দেশটিতে প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধসে পড়ায় এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। (https://bangla.bdnews24.com/world/idk56tolxq

মন্তব্যঃ

অনেকেই এধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মানুষের কৃতকর্মের ফল হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং বিপর্যস্ত অঞ্চলের কোন কোন মুসলিমের বিচ্ছিন্ন কিছু অপরাধকে উল্লেখ করে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকে আল্লাহ্‌’র গজবের সাথে তুলনা করে। কেউ কেউ আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শাসকদের প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়টি আড়াল করতে এসব ঘটনাকে কেয়ামতের আলামত বলে চালিয়ে দেয়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে দুর্বল, সীমাবদ্ধ সত্ত্বা মানুষের পক্ষে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিপদ-আপদ, বিপর্যয়, পরীক্ষা কোনটি কার উপর কেন দেয়া হয়েছে তা বুঝা কখনই সম্ভব নয়। দৈবভাবে আপতিত এসব ঘটনাকে মুসলিমরা ক্বাদা/তাক্বদীর (পূর্বনির্ধারিত) হিসেবে দেখে এবং এগুলোকে মেনে নিয়ে এসব পরিস্থিতিতে আল্লাহ্‌’র প্রতি সন্তুষ্ট থাকে। মানুষ তার স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি ব্যবহার করলেই বুঝতে পারে যে জন্ম, মৃত্যু, রিজিক, অসুখ-বিসুখ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এমন অনেককিছুই তাদের উপর আপতিত হয় যেসব ক্ষেত্রে তার নিজের কোন ভুমিকা নেই, এসবই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা, যা আমাদেরকে ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করতে হবে এবং বেশী বেশী করে আল্লাহ্’কে স্মরণ করতে হবে। 

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভূমিকম্পের এই বিপর্যয় প্রকাশ করেছে ইসলাম মুসলিমদের অন্তরের গভীরে অবিচল অবস্থানে রয়েছে, যা আমাদের জন্য আশাব্যাঞ্জক আর মুসলিমদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের জন্য হতাশাব্যাঞ্জক। উদ্ধারকারীরা যখন তাদের ভাই-বোনদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তারা তাক্ববীর ধ্বনী দিচ্ছিলেন। তাদের জিহ্বায় তাক্ববীর বলা বন্ধ হয়নি, বিশেষ করে যখন তারা একটি নবজাতক শিশুকে বাঁচাচ্ছিলেন, যার মা তাকে জন্ম দেয়ার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে মারা যায়। ধ্বংসস্তূপে ঢেকে থাকা এমন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয় যিনি নামাজরত অবস্থায় ছিলেন কিংবা এমন ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে যিনি তজবী হাতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র মহিমা ঘোষণা করছিলেন। ভাঙ্গা ভবন থেকে একজন মহিলাকে উদ্ধারের সময় তার আকুতি ছিল যেন তাকে মাথার চুল ঢাকার জন্য কাপড় দেয়া হয়, যাতে তার পর্দার খেলাফ না হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচে আকটে পড়া একজনকে ডাক দেয়া হলে তিনি তাকে উদ্ধারের পূর্বে নামাযের জন্য অজুর পানির জন্য আকুতি জানান যাতে ওয়াক্ত চলে না যায়। উদ্ধারকৃত একটি বোন এই বলে প্রচন্ড দুঃখ প্রকাশ করছিলেন যে, তিনি সেদিন নামাজ পড়তে পারেননি। এই হচ্ছে মুসলিম জাতি! রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) প্রকৃতই বলেছেন: “মু’মিনের বিষয়টি কতইনা চমৎকার; সবকিছুতেই তার জন্য কল্যাণ বিদ্যমান এবং এটি শুধুমাত্র মু’মিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যদি সে সাফল্য লাভ করে তবে আল্লাহ্’র নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করে এবং এটি তার জন্য কল্যাণকর; এবং যদি তার উপর কোন বালা-মুসিবত আপতিত হয় তবে সে ধৈর্য্য সহকারে তা মোকাবেলা করে এবং এটা তার জন্য আরও কল্যাণকর” [সহীহ্ মুসলিম]। হে আল্লাহ্‌! ভূমিকম্পে নিহত প্রত্যেক মুসলিমের প্রতি আপনি রহমত করুন; তাদেরকে আখেরাতে শহীদদের অন্তর্ভুক্ত করুন; এবং আহতদের আরোগ্য দান করুন, এবং বেঁচে থাকা প্রতিটি মুসলিমকে এমন একটি উত্তম জীবন দান করুন যা তিনি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর আনুগত্যে ব্যয় করতে পারেন। আমিন।। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “শহীদ হলো পাঁচ প্রকার: মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বসের নীচে পতিত হয়ে মৃত, আর হলো আল্লাহ্‌’র রাস্তায় শহীদ” (বুখারী, মুসলিম)।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 


“আইএমএফ কি বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা” 

খবরঃ

আইএমএফ মোটেও জনপ্রিয় কোনো সংস্থা নয়। দেশে-দেশে আইএমএফের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও কম হয়নি। তারপরও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার পেতে অনেক দেশকেই যেতে হয়েছে তাদের কাছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আইএমএফ কি আসলেই অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা। (prothomalo.com/business/economics/6fj759m7ad

মন্তব্যঃ

আইএমএফ কোনভাবেই অর্থনীতির উদ্ধারকর্তা নয়, দেশে দেশে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ যার প্রমাণ। কিন্তু তারপরও আমরা দেখি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় যখনই কোন একটি দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছে যায় তখন সেই দেশটির শাসকগোষ্ঠী ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ অনুসন্ধান না করেই আইএমএফ মুখী হয়। পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দালাল হিসেবে এরা সবসময় এটা নিশ্চিত করে যাতে জনগণ এই ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে আইএমএফের চাপিয়ে দেয়া কাগুজে মুদ্রা ‘ডলার’। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমানে চলমান বৈশ্বয়িক অর্থনৈতিক সংকটের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছাপানো নতুন ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার যা কোভিড-১৯ প্রণোদনার নামে সেই দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল (বিস্তারিত জানতে পড়ুন: Where $5 Trillion in Pandemic Stimulus Money Went, the New York Times, March 11, 2022)। কোন প্রকার সম্পদ উৎপাদন ব্যতীত ছাপানো এই ৫ ট্রিলিয়ন ডলার প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়, এবং পরবর্তীতে এই মূল্যস্ফীতি সারাবিশ্বে বিশেষ করে অতিআমদানীপ্রবণ দেশগুলোর মুদ্রার উপর ব্যাপক পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করে। আইএমএফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গোটাবিশ্ব থেকে সম্পদ লুট করার প্রতিষ্ঠানিক সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। যেহেতু ডলার ছাপানোর একচ্ছত্র অধিকার শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের, তাই তারা কোনপ্রকার সম্পদ উৎপাদন ব্যতীত মাত্র কয়েক সেন্ট খরচ করে ডলার ছাপানোর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে নামমাত্র মূল্যে সম্পদ আমদানি করার মাধ্যমে বাকী দেশগুলোর জনগণের কষ্টে অর্জিত সম্পদ খুব সহজেই লুটপাট করতে পারে। শুধু তাই নয়, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের অর্থনৈতিক চাপ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানী করার সুযোগ পায়। কিন্তু আইএমএফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অনৈতিক ডলার ছাপানোকে কোন প্রকার প্রশ্ন করে নাই কারণ আইএমএফ আর্ন্তজাতিক মোড়কে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান যার বেশীর ভাগ মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রেরই হাতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রেটন উডস চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট আইএমএফ, যার মূল দায়িত্ব হচ্ছে আর্ন্তজাতিক মুদ্রা হিসাবে ডলারের আধিপত্য তৈরি এবং তা বজায় রাখা। তাই আইএমএফের নীতি সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্মই হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য রক্ষার জন্য এবং যার নীতিমালা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে তৈরি করেছে, তার প্রেসস্ক্রিপসনগুলো কখনও বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রাণকর্তা হতে পারে না। বরং তার প্রেস্ক্রিপসনগুলো জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশাকে আরও চরমে নিয়ে যাবে। 

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উদ্ধার করার জন্য ডলারভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থাসহ আইএমএফের সকল নীতিমালাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালু করতে হবে যা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীসহ সকল সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্ত করবে। এই ব্যবস্থায় সম্পদ উৎপাদন ব্যতীত রাষ্ট্র মুদ্রা ছাপানোর সুযোগ পাবে না। তাই জনগণ তাদের উৎপাদিত পণ্য এবং সেবার ন্যায্য মূল্য পাবে। উল্লেখ্য, স্বর্ণ এবং রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা মুসলিমদের জন্য শুধুমাত্র একটি বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থাই নয়, বরং একমাত্র মুদ্রাব্যবস্থা যা বাস্তবায়ন করা সকল মুসলিমের শারীআহ্‌ বাধ্যবাধকতা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হুকুম পালনের মধ্যেই মুসলিমদের কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমান ও যমীনের যাবতীয় নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” (সূরা আল-আ‘রাফ:৯৬)

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    



“আইএমএফের ঋণের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্পর্ক নেই”

খবরঃ

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের ঋণের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেছেন, আইএমএফ ঋণ না দিলেও কিছু কিছু জায়গায় আমাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো। আইএমএফ আমাদের মোট জিডিপির তুলনায় যে ঋণ দিয়েছে সেটার পরিমাণ খুবই কম উল্লেখ্য করে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফের শর্তে দ্রব্যের দাম বাড়েনি। আইএমএফ ঋণ না দিলেও আমাদের ভর্তুকি কমাতে হতো এবং কিছু জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে হতো। সুতরাং আইএমএফের ঋণের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। (www.deshrupantor.com/national/2023/02/14/408679/)

মন্তব্যঃ

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের ঋণের কোনো সম্পর্ক নেই, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের এই বক্তব্য একটি নির্ভেজাল মিথ্যা এবং এর দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক কার্যাবলীর উপর নব্য-সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ নিয়ন্ত্রণকে আড়ালের অপকৌশল ছাড়া আর কিছু নয়। এবারের ঋণ প্রাপ্তির অন্যতম শর্ত ছিল জ্বালানি ও কৃষি খাতে ভর্তুকি বন্ধ করা। এসব সংস্কারের কাজ ঋণ পাওয়ার আগেই শুরু হয়েছিল। প্রথমে সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপর জ্বালানী তেলের দাম দেশের ইতিহাসে এক লাফে সর্বোচ্চ বাড়ানো হয়, যদিও বিশ্ববাজারে তখন তা কম ছিল। এরপর গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফ সহ অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণ পেতেই এটা করা হচ্ছে (বিবিসি নিউজ বাংলা; ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩)। একটি দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করাসহ জীবনযাত্রার ব্যয়কে লাগামহীন করতে আইএমএফ-এর চাপিয়ে দেয়া পুঁজিবাদী নীতিসমূহ মুলত: দায়ী, যা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রমাণ হয়েছে। সবাই অবগত যে, আইএমএফ’র কাছ থেকে ঋণ পেতে হলে সব দেশকেই শর্ত পূরণ করতে হয়। বাংলাদেশ যে এবারই প্রথম আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে তা নয়। ছোট-বড় আকার মিলিয়ে সংস্থাটি থেকে মোট ১০ বার ঋণ নিয়েছে আগে। প্রথমবার নেয় ১৯৭৪ সালে, এরপর ১৯৮০-৯০ সময়ে ঋণ নেওয়া হয় পাঁচবার। তখনও ঋণ নেবার সময় ভর্তুকি তুলে নেয়া সহ নানা ধরণের সংস্কারের শর্ত বাংলাদেশকে মানতে হয়েছিল। ১৯৯০ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফের শর্তের কারণে চালু করা হয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। ২০০৩ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে শর্ত ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান কমিয়ে আনার। ফলে তখন আদমজী পাটকল সহ লোকসানি সকল পাটকলগুলো বন্ধ করা দেয়া হয়েছিল। এক দশক পর ২০১২ সালে নেওয়া ঋণের বিপরীতে শর্ত ছিল নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা। এরই ধারাবাহিকতায় এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তির পর যে ৩৮টি শর্তের কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়নের পর অবস্থা আরও নাজুক হবে। আর এর পাশাপাশি অর্থনীতিকে ধ্বংসকারী মুদ্রানীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, বেসরকারীকরণ, আমদানী নির্ভরতার মত তাদের আরও যেসব পুঁজিবাদী নীতি রয়েছে সেগুলোর কথাতো বলাই বাহুল্য।

সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সিস্টেমেটিকভাবে চাপিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নীতিসমূহ হতে মুক্তি পেতে আমাদেরকে ইসলামী ব্যবস্থায় ফিরে যেতে। ইসলামের দৃষ্টিতে জ্বালানি খাতকে গণমালিকানার অন্তর্ভূক্ত। বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস উৎপাদন, বিতরণ রাষ্ট্র সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে এবং বিনামূল্যেবা নামমাত্র মূল্যে তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের জনগণ উপকৃত হবে। এছাড়াও যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের সামান্য পরিবর্তনেও প্রতিটি দেশের মুদ্রার অবনমন ঘটে ও দ্রব্যমূল্যের উপর তার মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেহেতু খিলাফত রাষ্ট্র শারী’আহ্‌ প্রদত্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসবে। শারী’আহ্‌ খিলাফত রাষ্ট্রকে ইচ্ছামত টাকা ছাপানোর অনুমোদন দেয় না। ফলে রাষ্ট্রের হাতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ তথা ইচ্ছামত সংকোচন ও সম্প্রসারণের নীতি অনুসরণের কোন হাতিয়ার নেই। শারী’আহ্‌ মুদ্রা প্রণয়নে সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম প্রদান করেছে, আর তা হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা। খিলাফত রাষ্ট্র তার বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় কোনকিছু আমদানীনির্ভর হতে দেবে না যার স্বল্প সরবরাহ অভাব সৃষ্টি করবে এবং দাম বাড়াবে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে, রাষ্ট্র তাদের কাছে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নিবে। উদাহরণস্বরূপ দুর্ভিক্ষের সময় খলিফা উমার (রা.) জিনিসপত্রের মূল্য যাতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে না যায় সেজন্য তিনি মিশর ও সিরিয়া থেকে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়াও খলিফা আবদুল হামিদ (প্রথম) (১৭৭৪-১৭৮৯) এর শাসনামলে ইস্তাম্বুলে মাংসের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে সেখানে কসাইরা মাংসের দাম বাড়াতে শুরু করে, এমনকি এটি বিক্রি করা থেকে বিরত থাকে। তখন তিনি Thrace, Europe থেকে কসাইদের ইস্তাম্বুলে এসে কসাইখানা খোলার নির্দেশ দেন। এভাবে বর্ধিত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে, দাম আবার একটি সাশ্রয়ী মূল্য স্তরে নেমে এসেছিল। এছাড়াও খিলাফত রাষ্ট্র অনৈতিক বিক্রয়ের জন্য জরিমানা ও শাস্তি কার্যকর করবে। এভাবেই খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রানীতি ও পণ্য সরবরাহের উপর গুরুত্বারোপের ফলে মুদ্রাস্ফীতি কিংবা মূল্যস্ফীতি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না, ফলে জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে।

    -    সুজন হোসেন


Previous Post Next Post