Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 94

 

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯৪ তম সংখ্যা । ০৯ জুলাই, ২০২৩



এই সংখ্যায় থাকছে: 


“সুইডেনে কোরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের”

“দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মানুষের গরু কেনার সাধ্য তো আরও বেড়ে গেছে: কাদের”

“ক্ষমতায় থাকার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দেব না: প্রধানমন্ত্রী”

“চামড়ার দাম কমায় যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা”

“মূল্যস্ফীতি বাগে আনার মুদ্রানীতি”

“হাজতি নির্যাতন: কাশিমপুর থেকে কুমিল্লা কারাগারে ‘বিশেষ নজরে’ পাপিয়া”

“মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীঃ ওবায়দুল কাদের” 

“ইনসাফ কায়েম কমিটির গণসমাবেশে বক্তারা; জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে”






“সুইডেনে কোরআন অবমাননার তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের”

খবরঃ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন, সুইডেনে কোরান শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকায় দেশটির চার্জ দ্য এ্যাফেয়ারর্স-সিএডিকে ডেকে নিন্দা ও জড়িত ব্যক্তির শাস্তি দাবি করা হয়েছে। রাষ্ট্রদুত জানিয়েছেন সুইডেন সরকার এজন্য ক্ষমা চেয়েছে এবং যে ব্যক্তি কাজটি করেছে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই লোকটি বলেছিলো সে শুধু তার বক্তব্য প্রকাশ করবে। কিন্তু সেখানে সে কোরআন পোড়াবে তা বলেনি। (https://samakal.com/india/article/2307181441/)

মন্তব্যঃ

সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর মত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এই বছরের শুরুর দিকে, একজন উগ্র ডানপন্থী সুইডিশ রাজনীতিবিদ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কানিদাতা রাসমুস পালুদান সুইডেনে তুর্কি দূতাবাসের সামনে সুইডিশ সরকারের সুরক্ষায় একই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজ করেছিল। সুইডেন এবং পাশ্চাত্যের সরকারী প্রতিক্রিয়া ব্যাপকভাবে অনুমানযোগ্য: ‘কোরআন পোড়ানো বাক স্বাধীনতা এবং তাই এই পশ্চিমা মূল্যবোধগুলোকে মুসলিমদের ক্রোধ হতে সুরক্ষিত রাখতে হবে’। কিন্তু মুসলিম দেশের মেরুদণ্ডহীন এবং দালাল শাসকদের প্রতিক্রিয়া কোনকালেই ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের উপর কোন প্রভাব ফেলেনি। বাংলাদেশসহ মুসলিম শাসকদের মুখ নিসৃত অর্ধহৃদয় ও অর্থহীন নিন্দা নিছক একটি রুটিন ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামী উম্মাহ্‌ও তাদের এই নিন্দাকে গুরুত্বের সাথে নেয় না। এই শাসক ও তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মুসলিমদের কোনো আশা নেই। এগুলো প্রকৃতপক্ষে ইসলামী আক্বীদার উপর আক্রমন ও অসম্মানকে রক্ষা করে এবং মুসলিম ভূমির উপর নৃশংস পশ্চিমা দখলদারিত্ব ও শোষণকে আইনি আবরণ প্রদান করে।

উম্মাহ্‌’র একমাত্র আশার কেন্দ্র হচ্ছে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ। তারাই সেই সমস্ত লোক যারা মুসলিমদের ঢাল, খিলাফত প্রতিষ্ঠায় নুসরাহ্‌ (সামরিক সহায়তা) প্রদানের মাধ্যমে কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরিস্থিতিকে তারা উম্মাহর পক্ষে ঘুরিয়ে দিতে পারে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা হল একটি ঢাল, যার পেছনে তোমরা যুদ্ধ কর এবং যার দ্বারা তোমরা রক্ষা পাও” [মুসলিম]। ইসলামী উম্মাহ্‌ তার সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে একজন সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-কে খুঁজছে যিনি উঠে দাঁড়াবেন এবং ইসলামের ঢাল-খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন, যা আমাদের আক্বীদার অপবিত্রতার প্রতিশোধ নেবে এবং পশ্চিমাদের নিকট আমাদের যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরাধীনতা রয়েছে তার অবসান ঘটাবেন। খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণাই এই কাপুরুষ কাফিরদের আত্মগোপনে ফিরে যেতে বাধ্য করবে। পশ্চিমা কাফেররা সমস্ত রেডলাইন অতিক্রম করেছে এবং বিষয়টি আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর কার্টুন এবং পশ্চিমা সরকারের সুরক্ষায় পবিত্র কুরআন পোড়ানোর মত প্রকাশ্যভাবে ইসলামের পবিত্রতাকে অসম্মান করার মধ্যে ফুটে উঠেছে। ইসলামী আক্বীদা ও উম্মাহকে রক্ষা করার জন্য খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে অগ্রসর হতে অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য আর কী প্রয়োজন? 

প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার পদ্ধতিই হচ্ছে সামরিক প্রতিক্রিয়া, যা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর শাসনকালসহ পরবর্তীতে বিভিন্ন খলীফাদের পদক্ষেপ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “তারা যদি চুক্তি করার পর তাদের শপথ ভঙ্গ করে আর তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধে কটুক্তি করে, তাহলে কাফিরদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে লড়াই কর, শপথ বলে কোন জিনিস তাদের কাছে নেই, (কাজেই শক্তি প্রয়োগ কর) যাতে তারা (শয়তানী কার্যকলাপ থেকে) নিবৃত্ত হয়” (সূরা তওবাহ্‌: ১২)। কাফির পশ্চিমা বিশ্ব একটি আদর্শিক অবস্থান নিয়েছে যা ইসলামের প্রতি তাদের ঐতিহাসিক বিদ্বেষ ও হীনমন্যতা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এটি সভ্যতার সংঘর্ষ যা দালাল মুসলিম শাসকদের অকেজো বক্তব্য এবং নামমাত্র পদক্ষেপ দ্বারা জয় করা যায় না। ইসলামের আত্মরক্ষার জন্য এবং ইসলামের মহান আলো-কে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্র প্রয়োজন। মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং ইসলামের পবিত্রতা নষ্টকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল, এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তিতে তেরশ বছর যাবত এই ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফতই ইসলামের পবিত্রতা রক্ষা করে গেছে। তখন কেউই এই ধরণের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পেতো না। এমনকি ১৮৯০ সালে খিলাফত যখন বেশ দুর্বল তখনও তৎকালীন খলিফা আব্দুল হামিদ এক সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে অবমাননা করে ফ্রান্সে তৈরি করা ফিল্ম ফ্রান্স-লন্ডন কোথাও প্রচারিত হতে দেননি। তখন তিনি হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ‘বনু উসমানের শাসন নরকে যাক; যদি আমি এই নাপাক ফিল্মটা বন্ধ করতে না পারি’! তিনি যুদ্ধের পোশাক পরে অস্ত্র হাতে নিয়ে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ‘লে কমট ডে মন্টেবেল্লো’কে বলেছিলেন, “তোমার সরকারকে বোলো—যদি ফিল্মটি সম্প্রচার করা হয়, তাহলে ফ্রান্সের সাথে উসমানি খেলাফতের সবধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হবে”। 

    -     মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মানুষের গরু কেনার সাধ্য তো আরও বেড়ে গেছে: কাদের”

খবরঃ

…’এবার ঈদের একটি বিষয় খুবই লক্ষ্যনীয়, এখন যে বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া; সেখানে দেখুন এবার ১ কোটি ৫১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। গত ঈদে সেটা ১ কোটির নিচে ছিল। এটা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করাই ভালো, আমরা অর্থনৈতিক অবস্থা এমনটা হয়নি; ঈদুল আজহার সময় গরু কোরবানির বিষয়টা, ঈদের আনন্দ উপভোগের মতো সাধ্য আমাদের দেশে এখনো আছে।'… (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/politics/news-492816)

মন্তব্যঃ

যেখানে শত শত ট্রাকে করে গরুর পাল নিয়ে অবিক্রীত অবস্থায় ব্যাপারীরা ফেরত গেছে, এমনকি কোরবানির আগে হাটের শেষ সময়ে গরুর দামে ধ্বস নামলেও তা মানুষকে কুরবানী দিতে আকৃষ্ট করতে পারেনি, সেখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ। অবস্থাদৃষ্টে এমন হয়েছে, কোন কোন বিক্রেতা তার আনা গরুর অর্ধেকও বিক্রি করতে পারেনি। (জাগো নিউজঃ ২৯ জুন ২০২৩)। এরপর, এই অবাস্তব পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে শাসকদের গর্ব করা হলো ক্ষুধার্ত জনগণের মুখে খাবার তুলে না দেওয়ার ব্যর্থতা আড়াল করার প্রয়াস মাত্র। কারণ এদেশের ৩০ শতাংশ মানুষ বর্তমানে খাদ্য সংকটে রয়েছে। (বিশ্বব্যাংক সমীক্ষাঃ অক্টোবর ২০২২)। এবং এর জন্য মূলত দায়ী শাসকগোষ্ঠী ও পুঁজিপতিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা লুটেরা গোষ্ঠী। যারা হাল আমলের পেঁয়াজের বাজার থেকে ১৫০০ কোটি টাকা, চিনির বাজার থেকে প্রতিদিন ১৭ কোটি টাকা, ব্রয়লার মুরগির বাজার থেকে গত দেড় মাসে দেড় হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে। অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপন্য যেমন, চাল, তেল, ডিম প্রতিটি ক্ষেত্রে সীমাহীন লুটপাট চলছে। তারপর জুলুমের শিকার জনগণের সাথে তারা বর্তমান বিশ্বের বহুল চর্চিত প্রতারণামূলক ‘পরিসংখ্যানের রাজনীতি’ করছে। পরিসংখ্যানের উন্নতি দেখিয়ে তারা জনগণের মধ্যে এক ধরনের ‘মিথ্যা আশা’ তৈরি করে, ‘যে পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে’, ‘অনেকের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে’, ‘আপনার অবস্থারও পরিবর্তন হবে’- এভাবে তাদের লুটপাট ও জুলুমের শাসন আরো দীর্ঘায়িত করে। এসব সমস্যার বীজ মূলত লুকায়িত আছে বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভিতরে। এই ব্যবস্থা বিশ্বাস করে একজন ব্যক্তি তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য শুধুমাত্র নিজের জন্য সমাজে কাজ করে। ফলতঃ সমাজের স্বার্থ বাদ দিয়ে ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে ওঠে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবল ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তি থেকে অধিক সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। তখন একদিকে মুষ্টিমেয় লোক তাদের চাহিদার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সম্পদ কুক্ষিগত করতে পারে, অন্যদিকে বাকি সবাই তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পর্যন্ত পূরণ করতে পারে না। তারপর এভাবেই জনগণকে মিথ্যা বুঝ দিয়ে তাদের এ জুলুমের শাসনব্যবস্থা চলতে থাকে। 

এ সকল সমস্যার অবসানে আমাদের এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় ফেরত যেতে হবে। যেখানে সমাজের মানুষগুলোকে একটি দেহের অঙ্গের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা হয়। হাত যেমন শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, হাতের যত্নের মাধ্যমে শরীরের যত্ন নেয়া হয় এবং বিপরীতভাবে শরীরের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে হাতের মত শরীরের অঙ্গগুলোকেও সুস্থ রাখা হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি যতই বৃদ্ধি পাক না কেন ইসলামের দৃষ্টিতে এই পরিসংখ্যানের কোন মূল্য নাই,  বরং একজন ব্যক্তিও যদি না খেয়ে থাকে এর জন্য খলীফা শাসক হিসেবে আল্লাহ্‌’র নিকট দায়বদ্ধ ও দুনিয়াতে জবাবদিহিতার সম্মুখীন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “কোনো জনপদের মানুষ যখন এমন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে যে তাদের মধ্যে কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি থাকে, তখন তারা যেন আল্লাহর সাথে চুক্তি ছিন্ন করে ফেললো” (আহমদ)। একইভাবে ইসলাম একটি সুষম বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে যাতে সমাজের সবশ্রেণীর মানুষের মধ্যে সম্পদের প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে” (সুরা হাশরঃ ৭)। 

    -    মো: জহিরুল ইসলাম




“ক্ষমতায় থাকার জন্য সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দেব না: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ 

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ ও জনগণের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করতে হয় এমন ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ। সুইজারল্যান্ড এবং কাতারে তার সাম্প্রতিক সফরের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চাই না। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। আর আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে এটাক করবে- এই ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না”। শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তার সরকার পূর্ব ও পশ্চিম উভয়ের সঙ্গেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে কাজ করে চলেছে। (https://www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-153562

মন্তব্যঃ

মিথ্যা ও প্রতারণাই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার শাসকদের প্রকৃত নীতি, যা যুগ যুগ ধরে দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করে আসছে। শেখ হাসিনার এই প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্যও এর বাইরে নয়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার সরকার দেশের একের পর কৌশলগত সম্পদ মার্কিন-ভারতের কাছে হস্তান্তর করে আসছে। তিনি নিজেকে সার্বভৌমত্বের তথাকথিত ধারক হিসেবে প্রমাণের জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রসঙ্গ এনেছেন, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে “ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক” ঘোষণা করে, মার্কিন কোম্পানী এক্সনমোবিলকে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রসীমায় অবস্থিত ১৫টি (প্রায় সবকটি) হাইড্রো-কার্বন ব্লক তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং মার্কিন মিত্র জাপানের কাছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর হস্তান্তর করে তিনি কোন সার্বভৌমত্বের আপোসহীন নেত্রী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন? ইতিপূর্বে শেখ হাসিনা “২০০১ সালে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মার্কিন প্রস্তাবে রাজি হয়নি বলে ক্ষমতায় আসতে পারিনি” বলে একইভাবে জনগণের নিকট নিজেকে মেকীভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিল। তারপরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা, তার নিজের মুখের বক্তব্য হচ্ছে, “আমরা ভারতকে যেটা দিয়েছি তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে”। একইভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের ভণ্ডামীও অত্যন্ত পরিষ্কার। তারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে সরব হিসেবে উপস্থাপন করে, অথচ বাস্তবে তারা কখনও অশুভ মার্কিন-ভারত মৈত্রী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় এদেশে মার্কিনীদের নব্য উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার নীলনক্সাকে সমালোচনা করে না। বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা অনলাইন ও অফলাইনে জনগণের হাসিনা সরকারবিরোধী প্রচণ্ড ক্ষোভকে তাদের ঘৃণ্য স্বার্থ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণঅধিকার পরিষদের নূর-রেজা কিবরিয়ার দ্বন্দ্বেও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার ধারক-বাহক রাজনীতিবিদদের প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। একপক্ষ আরেকপক্ষ ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সাথে বৈঠকের অভিযোগ তুলে এটিকে মুসলিমদের চেতনাবিরোধী কাজ হিসেবে উপস্থাপন করছে, অথচ তারা উভয়েই আবার দেশের রাজনীতিতে ইসরাইল রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করছে।

কার্যত, আওয়ামী-বিএনপি নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিকগোষ্ঠী হচ্ছে পশ্চিমা সমর্থিত ম্যাকিয়াভেলিয়ান রাজনীতির ফসল। তাদের রাজনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘End Justifies the Means’। ফলশ্রুতিতে তারা মিথ্যা, প্রতারণা, ভন্ডামী, ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা যাওয়াই এই রাজনীতির শেষ কথা এবং এজন্য যেকোন পন্থাই তাদের দৃষ্টিতে বৈধ বা তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে গণ্য। তাই, দেশের সার্বভৌমত্ত্ব বিকিয়ে দেয়া, পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের স্বার্থরক্ষা করা, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে জনগণের সম্পদকে কুক্ষিগত করা, এমনকি শয়তানের সাথে আঁতাত করা এই রাজনীতির একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে গণ্য। 

 আওয়ামী-বিএনপিগোষ্ঠী যেখানে দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রিতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে সেখানে খিলাফত ব্যবস্থা এমন শাসক ও নেতৃত্ব তৈরি করেছিল যারা ছিলেন ‘নীতিতে অটল’ শাসক। জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণের জান, মাল ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ এবং প্রয়োজনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। খিলাফত রাষ্ট্র শের-ই-মহীশুর বা “মহীশুরের বাঘ” খ্যাত সুলতান টিপু সুলতানের মত নেতৃত্ব তৈরি করেছিল যিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন। ভারতের এক ইঞ্চি মুসলিম ভূমি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের কড়ালগত হওয়া ঠেকাতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। বৃটিশদের ভারত দখলের পথে সর্বশেষ প্রতিরোধ হিসেবে ১৭৯৯ সালে চতুর্থ এঙ্গলো-মহীশুরুরের যুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত ‘শহীদ’ হন উম্মাহর সাহসী এই মুসলিম বীর। এছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র তৈরি করেছিল খলীফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের মত শাসক যিনি ১৯০১ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের অনুমতি প্রদানের বিনিময়ে ইহুদীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ লাভের লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ফিলিস্তিনের ভূমি অপবিত্র ইহুদীদের কাছে তুলে দেয়ার চেয়ে নিজের শরীরকে তরবারির আঘাতে জর্জরিত করাকে পছন্দ করেছিলেন। ১৪০০ বছরের অধিক সময় ধরেই খিলাফত রাষ্ট্র এরকম নেতৃত্ব তৈরি করেছিল যারা কোন উপনিবেশবাদী শক্তির কাছে তটস্থ হননি, তাদের কাছে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করা তো দুরের বিষয়। তারা রাজনীতিকে একটি মহৎ কর্তব্য হিসেবে, একটি ‘ইবাদাহ্ হিসেবে, মানুষকে মানবরচিত জীবনব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দেয়ার উপায় হিসেবে, এবং পৃথিবীতে আল্লাহ্’র দ্বীনকে প্রচার ও বিজয়ী করার পন্থা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন (জীবনব্যবস্থা)) সকল দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” [আস-সাফ: ৯]

    -    সিফাত নেওয়াজ



“চামড়ার দাম কমায় যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা”

খবরঃ

চলতি বছর দেশে কোরবানির চামড়ার দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও দাম গতবছরের তুলনায় খুব একটু বেড়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। যার কারণে মাদ্রাসা ও এতিমখানার মতো প্রতিষ্ঠান যাদের আয়ের একটি অন্যতম উৎস কোরবানির পশুর চামড়া, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। এতিমখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তারা গতবারের তুলনায় কিছুটা কম চামড়া সংগ্রহ করেছেন। আর দামও ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৫০ টাকার মধ্যেই উঠানামা করেছে। যার কারণে খুব একটা আয়ের মুখ তারা দেখতে পারেননি। (bbc.com/bengali/articles/clkd8le41nno)

মন্তব্যঃ

সুদীর্ঘকাল ধরে মাদ্রাসা-এতিমখানা ইসলাম শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনামলে শাসক এবং নিষ্ঠাবান মুসলিমরা এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যাপক পরিমাণ ভূমি ওয়াকহ করে ছিলেন। বাংলার মোট ভূমির চার ভাগের এক ভাগ ছিল এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায়। এই সম্পদ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত মানের শিক্ষা প্রদানের সাথে সাথে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণও প্রদান করতে। কিন্তু, উপনিবেশবাদী ব্রিটিশরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করার পর এই অঞ্চলে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ইসলাম শিক্ষার সুযোগকে হ্রাস করার চেষ্টা শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ব্রিটিশ সরকার ১৭৯৩ সালের রেগুলেশন—১৯, ১৯১৮ সালের রেগুলেশন—২, এবং রিজামসান ল অব ১৮২৮ (লাখেরাজ ভূমি পুনঃগ্রহণ আইন) বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পূর্ববর্তী মুসলিম শাসক এবং নিষ্ঠাবান মুসলিমদের কর্তৃক ওয়াকহকৃত ভূমিগুলো ছিনিয়ে নিয়ে জমিদার এবং তালুকদার নামক ধনিক শ্রেণীর কাছে অর্পণ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতা পুরুপুরি ধ্বংস করে দান-সাদাকা নির্ভর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে। বৃটিশদের চাপিয়ে দেয়া আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর সময়েও এই ধারাবাহিকতা চলমান। তাই বর্তমানে কোরবানির চামড়া এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীও ব্রিটিশদের মত মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করার জন্য ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর সাথে যোগসাজোশ করে চামড়ার মূল্য কমিয়ে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। কারণ এই শাসকগোষ্ঠীর কাছে ইসলাম শিক্ষা বা গরিবের হক রক্ষা নয় বরং চামড়া ব্যবসায়িদের স্বার্থ রক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ।

শুধুমাত্র দান-সাদাকার উপর ভিত্তি করে ইসলাম শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চলতে পারে না কারণ শিক্ষা একটি উন্নত জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। খিলাফত রাষ্ট্র তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এবং রাষ্ট্রীয় আর্থিক সহায়তায় সকল নাগরিকদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। বায়তুল মাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হবে। শিক্ষা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যদি বায়তুল মালের নির্ধারিত উৎস থেকে পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়া যায় তাহলে সামর্থবান নাগরিকদের উপর প্রয়োজন অনুযায়ী করও ধার্য করা যাবে। খলিফা শিক্ষার জন্য সামর্থবান নাগরিকদের দান-সাদাকা করতে উৎসাহিত করবেন। কোরবানির পশুর চামড়া যা দরিদ্রদের হক তার সঠিক মূল্য যাতে দরিদ্র নাগরিকরা পায় রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সহায়তা নিয়ে কোন প্রকার সিন্ডিকেট তৈরি করার কোন সুযোগ নাই। উম্মাহর অভিভাবক হিসাবে খলিফা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে দায়িত্বশীল।  রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।  অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।  …..” (বুখারি, হাদিস নং: ৭১৩৮)

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম  



“মূল্যস্ফীতি বাগে আনার মুদ্রানীতি”

খবরঃ

মূলত বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনার জন্যই দেওয়া হয়েছে সংকোচনমূলক এই মুদ্রানীতি। যেহেতু মূল্যস্ফীতি একটি মুদ্রাজনিত বিষয়, তাই এই মুদ্রানীতিকে নানা কায়দায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে নীতি সুদের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয় তার সুদ ৫০ বেসিস পয়েন্ট (০.৫ শতাংশ) বাড়ানো হয়েছে। আবার বাজারে যে তারল্য আছে তাকে শুষে নেওয়ার জন্য বিপরীত রেপো বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখা ব্যাংকের আমানতের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। মুদ্রানীতি আরো বলছে, ডলার-টাকার একাধিক বিনিময় হারের পরিবর্তে একক বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। সত্যি বলতে, এমন নীতি পরিবর্তন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। একক বিনিময় হার না থাকায় গুজবের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছিল। নতুন মুদ্রানীতিতে মুদ্রার বিনিময় হার বেঁধে না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা রিজার্ভ সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকাই রাখবে। বাজার ইতিবাচক ইঙ্গিত পাবে। আর একক বিনিময় হারের আশপাশেই বৈদেশিক মুদ্রার বাজার সক্রিয় থাকবে বলে আশা করা যায়।(https://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2023/06/25/1293081

মন্তব্যঃ 

যদিও অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতিগুলোর কোনোটিই মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অস্থির বিনিময় হার সমস্যা সমাধান করতে পারেনি, কিছু তথাকথিত অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংক বিশ্লেষকগণ নতুন মুদ্রানীতিকে স্বাগত জানিয়ে বলছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত এই নতুন মুদ্রানীতি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবাহ সৃষ্টি করবে। অথচ তারা মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিময় হারের অস্থিরতার প্রকৃত কারণ হিসেবে ফিয়াট মুদ্রাব্যবস্থাকে চিহ্নিত করতে না পারার মতই অন্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজেট সহায়তার নামে গত জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ৫০,০০০ কোটি টাকারও অধিক নতুন টাকা ছাপিয়েছে। এছাড়া সরকার চলতি অর্থবছরে ৭০,০০০ কোটি টাকা নতুন ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে শরণাপন্ন হয়েছে, এই ঋণ নতুন টাকা ছাপিয়ে নিতে হয় কারণ আইএমএফ-এর সাথে চুক্তির শর্ত মোতাবেক সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নিতে পারে না। এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটিয়েছে এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে। এমতাবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা ছাড়া পুঁজিবাদী মনিটারি পলিসিতে অন্যকোন সমাধান অবশিষ্ট নেই। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো ও কমানোর এই পুঁজিবাদী নীতি বারবার ব্যর্থ হয়েছে। সুদের হার বেশি হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর করে, কারণ সুদের হার বৃদ্ধির কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং অন্যদিকে অধিক সুদের আশায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ না করে মানুষ ব্যাংকে আমানতের দিকে বেশী মনযোগী হয়। আবার সুদের হার কম হলে ঋণ নেওয়ার চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এটি মুদ্রাস্ফীতির দিকে পরিচালিত করে। এভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি এবং হ্রাসের মধ্যে একটি ফাঁদে পড়ে যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র।

 অন্যদিকে, ডলার-টাকার একক বিনিময় হার নির্ধারণ করা কিংবা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ করলেও বাংলাদেশে মুদ্রা স্থিতিশীলতা অর্জিত হবে না। এই উভয় ধারণাই একই ফিয়াট মুদ্রাব্যবস্থার দুটি সংস্করণ, যেখানে মুদ্রার কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য নেই। ফিয়াট মুদ্রাব্যবস্থায় মুদ্রার মূল্য নির্ধারিত হয় মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদা এবং মুদ্রা ইস্যুকারী সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর ভিত্তি করে, মুদ্রার অন্তর্নিহিত মূল্যের (Intrinsic Value) উপর ভিত্তি করে নয়। যখন চাহিদা বৃদ্ধি পায়, তখন টাকার মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং অতিমূল্যায়িত (Overvalued) হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে, ফেডারেল রিজার্ভ আক্রমনাত্মকভাবে নীতি সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। ডলারের এর উচ্চ চাহিদার কারণে ডলারের মূল্য বাড়ছে আর দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার চাহিদা কমছে৷ ফলস্বরূপ, সারাবিশ্বে স্থানীয় মুদ্রা ধ্বসে পড়ছে। এটি ফিয়াট মুদ্রাব্যবস্থায় মুদ্রা বিনিময় হারের প্রকৃত সমস্যা -প্রভাবশালী মুদ্রা সবসময় অন্যান্য মুদ্রাকে দুর্বল করে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রা ঝুঁকিকে ত্বরান্বিত করে।

 প্রকৃতপক্ষে ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দাসত্ব থেকে আমাদের মুদ্রাব্যবস্থাকে মুক্ত না করা এবং ইসলামী শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি স্থায়ীভাবে নির্মূল করা যাবে না এবং মুদ্রার স্থিতিশীলতা অর্জন করা যাবে না। খিলাফত রাষ্ট্র দ্বি-ধাতু (bi-metalic) মুদ্রানীতি অনুযায়ী কেবল স্বর্ণ ও রৌপ্য মজুদের ভিত্তিতে মুদ্রা ছাপাবে, যা সম্পদ এবং পণ্যের অতিরিক্ত ফিয়াট মুদ্রা মুদ্রণের ফলে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি দূর করবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিনিময় হারের হের-ফের বন্ধ করবে। এই মুদ্রাব্যবস্থার স্থিতিশীল বিনিময় হার বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রা ঝুঁকিকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং বিশ্বব্যাপী ডলারের আধিপত্য স্থায়ীভাবে ভেঙে দেবে। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুর্দশা ও কষ্টকে নীরবে সহ্য করা আমাদের জন্য একটি বড় লজ্জা যেখানে আমাদের মহান দ্বীন মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রা স্থিতিশীলতার প্রকৃত সমাধান দিয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই জেগে উঠতে হবে এবং নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে এই অত্যাচারী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কবল থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার কাজ করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ” [সূরা ত্বহা: ১২৪]

    -    সিফাত নেওয়াজ




“হাজতি নির্যাতন: কাশিমপুর থেকে কুমিল্লা কারাগারে ‘বিশেষ নজরে’ পাপিয়া”

খবরঃ

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতিকে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগে কারাবন্দি বহিষ্কৃত মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে পাপিয়াকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারাগার কর্তৃপক্ষ। কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লা আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যেহেতু তার আচরণে সমস্যা ছিল, বন্দিদের মারধর করতো, তাই এখানে যেন ওই ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য পাপিয়ার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হয়েছে।’ (bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/crime-justice/news-493321)

মন্তব্যঃ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকে লেখা ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ’; অর্থাৎ দাবী করা হয় এটা অপরাধীদের জন্য সংশোধন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে অপরাধীরা তাদের অপরাধের চর্চাকে অব্যাহত রাখার সবরকম সুযোগ-সুবিধা পায় এবং এমনকি কারাগার হতে বের হয়ে আরও বড় অপরাধে জড়িত হয়। মানুষের এই অপরাধ প্রবণতা শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নেতৃত্বাদানকারী তথাকথিত সভ্য পশ্চিমা দুনিয়াতেও বিরাজমান। www.pewresearch.org এর তথ্যমতে ২০১৯ সালে FBI এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ১ লক্ষ লোকের মধ্যে ২১০০ জন সম্পদ সম্পর্কিত অপরাধের সংগে যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে চুরি, ডাকাতি, মটরচালিত যানবাহন চুরি ইত্যাদি। অপরদিকে ধর্ষণ কিংবা মার্ডারের মত অপরাধের সাথে যুক্ত প্রতি ১ লাখের মধ্যে ৩৮০ জন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১ লাখে ৬.৫ জন মানুষ ২০২০ সালে খুনের শিকার হয়েছেন এবং ১৫-২০ শতাংশ নারী তাদের সারা জীবনে অন্তত ১ বার হলেও ধর্ষনের শিকার হন।

প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে মানুষ কেন অপরাধপ্রবণ হয়ে থাকে? এই ব্যবস্থার আক্বিদা অর্থাৎ সেকুলারিজমই মানুষের এই অপরাধ প্রবণতার মূল কারণ। কারণ সেকুলারিজমের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জীবন থেকে ধর্মকে আলাদা করে ফেলা হয়। ফলে মানুষ হয়ে যায় আধ্যাত্মিকতাশূণ্য ভোগবাদী পশু। ফলে নিজের ভোগকে সুনিশ্চিত করার জন্য সে যা প্রয়োজন তাই করে থাকে। এতে অন্যের ক্ষতি হলো কিনা তা ধর্তব্য নয়। মূলত এর ফলশ্রুতিতেই সমাজে অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে শেখ হাসিনা কিংবা পাপিয়ার মত মানুষরা যখন ক্ষমতার স্বাদ পায় তখন নিজের ভোগকে পূরণ করার স্বার্থে নানারকম অপরাধে এরা লিপ্ত হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা একটি জুলুমের ব্যবস্থা হওয়ায় এখানে বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যতার মধ্যে জীবনযাপন করে যা তাদেরকে জীবন ধারনের জন্য অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। তাই আমরা দেখি এই অপরাধীদের যখন সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেও তারা তাদের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। কারণ এর মাধ্যমে কেবল ব্যক্তিকে সমাজ থেকে আলাদা করা হয়েছে কিন্তু ব্যক্তির চিন্তাকে পরিশুদ্ধ করা হয়নি। ফলে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় হাজার বছর জেলে থাকলেও মানুষ পরিশুদ্ধ হবে না কারণ জেলখানার মধ্যেও সেই ব্যক্তি একই পুঁজিবাদী চিন্তা দ্বারা তার কাজকর্মকে পরিচালিত করবে।

অপরদিকে ইসলাম এমন এক জীবন দর্শনের সাথে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয় যা তাকে জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভংগি প্রদান করে। ফলে ভোগবাদের মত নিচু চিন্তা থেকে মুক্তি লাভ করে মানুষ এক আধ্যাত্মিকতার সন্ধান লাভ করে যা তাকে একইসাথে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ এবং এ জীবনে কিভাবে বিভিন্ন বিষয় পরিচালিত করতে হবে তার দিক নির্দেশনা দেয়। ফলে পরকালে সফলতার চিন্তা মানুষকে অপরাধ হতে বিরত রাখে। পাশাপাশি পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামী ব্যবস্থা অর্থাৎ খিলাফত রাষ্ট্রে বিচার কার্যক্রমও দ্রুত সম্পন্ন হয় ফলে সম্ভাব্য অপরাধীরা অপরাধ করার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায়। অপরদিকে ইসলাম প্রধান অপরাধসমূহ যেমন চুরি, খুন, জিনা, মুর্তাদ ইত্যাদির জন্য হুদুদ-এর (আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি) ব্যবস্থা রেখেছে। এবং এই হুদুদ বাস্তবায়িত হতে হবে প্রকাশ্যে জনতার সামনে যাতে সাধারণ জনগণও অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে এবং অপরাধের ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে অপরাধ করার ইচ্ছাকে রহিত করতে পারে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহ’র বিধান কার্যকরের কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহ’র প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলিমদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে”। (সূরা: আন-নুর, আয়াত: ২)

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীঃ ওবায়দুল কাদের” 

খবরঃ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারের এখন অগ্রাধিকার হলো সাধারণ মানুষের জীবনটাকে স্বস্তিদায়ক করা। এখন যে সমস্যা চলছে তা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন মানুষের জীবনযাত্রা স্বস্তিদায়ক করার চেষ্টা করতে হবে। আমরা সেটা করছি। (https://www.banglatribune.com/national/806232/মানুষের-জীবনযাত্রায়-স্বস্তি-আনতে-নির্দেশ-দিয়েছেন

মন্তব্যঃ 

যখন মানুষের জীবনযাত্রায় অস্বস্তির মূল কারণ সরকার এবং সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা। তখন  শুধুমাত্র একজন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়ে জনজীবনে স্বস্তি আনার বিষয়টা নিশ্চিত প্রতারণা ছাড়া আর কিছুইনা। কারণ একটি দেশ বা রাষ্ট্র পরিচালিত হয় একটি সিস্টেম বা ব্যবস্থা দ্বারা এবং যদি সেই ব্যবস্থাতেই গলদ থাকে তবে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কোন চেষ্টাই তা জনগণের কল্যান সাধনে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না, ঠিক যেমনটি একটি মোটরগাড়ীর ইঞ্জিনে যদি গলদ থাকে তবে ড্রাইভার এখানে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ব্যর্থ হবে। পশ্চিমাদের গোলামি করে সরকার যখন ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ বিবর্জিত পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তখন এই রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি সাব-সিস্টেম বা উপ-ব্যবস্থার কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ধাপে ধাপে অস্বস্তি বিরাজ করছে। যেমন, সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে দেশ ও জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। এই ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্য, ধারাবাহিকভাবে চিরাচরিত টাকার মান কমে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য, চক্র-বৃদ্ধি সুদে ঋণভিত্তিক রাষ্ট্রীয় বাজেট প্রণয়ন ব্যবস্থার ফলে দিন দিন মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমতে থাকে। যার ফলে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-২৩ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ ডলার বলা হলেও বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারেন না, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি কারণে। যা মোট জনসংখ্যার ৭৩ শতাংশের বেশি। তাছাড়া পূঁজিপতিদের কাছে সম্পদ কুক্ষিগত থাকার বৈশিষ্ট্যেরর ফলে এই ব্যবস্থায় শুধু ক্ষুদ্র পূঁজিপতি শ্রেণীর মানুষের সম্পদ ও আয় বৃদ্ধি পেলেও ধারবাহিকভাবে সাধারণ জনগণের আয় কমতে থাকে। বিআইডিএস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালেই নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দরিদ্র শ্রেণীতে যুক্ত হয়েছে। অথচ, একই সময়ে বেড়েছে ধনী থেকে অতি ধনী হওয়ার হার। এর পাশাপাশি, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার ব্যক্তিস্বাধীনতা নির্ভর ভোগবাদী সমাজের আগ্রাসনে দেশে পারিবারিক বন্ধনগুলোও দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে খোদ রাজধানী ঢাকাতেই প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে তালাক হচ্ছে। এসব কিছুর সাথে, ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর একের পর এক দূর্নীতি, লুটপাট এবং পশ্চিমা দালালী করে ক্ষমতার টিকে থাকার নীতিতো দেশের কৌশলগত সম্পদ ও সার্বভৌমত্বকেই হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। গত ৫২ বছর ধরে আওয়ামী-বিএনপি’র মত প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ধারাবাহিকভাবে তেল, গ্যাসের মত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় খণিজ সম্পদগুলোকে বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিছুদিন আগেও হাসিনা সরকার গভীর সমুদ্র বন্দরের ২৫টি হাইড্রো-কার্বন ব্লককে মার্কিন কোম্পানি এক্সন-মোবিলের হাতে তুলে দিয়েছে। সফলতার হার বেশি এবং সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও বাপেক্সকে দুর্বল রেখে বিদেশি কোম্পানিগুলোকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ খণিগুলো দিয়েছে এইসব সরকার। ফলশ্রুতিতে নিজের সম্পদ থাকা স্বত্ত্বেও আমরা জ্বালানি সংকটে পড়ছি। শুধু তাই নয়, এদের পশ্চিমা তোষণনীতির ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক কিংবা আকসা এবং জিসোমিয়া চুক্তির ভিত্তিতে যখন আমেরিকার মত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমাদের উপকূলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরে তার সামরিক ঘাটি স্থাপনের দিকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে; তখন প্রশ্নতো করাই যায় প্রধানমন্ত্রীকে দেশ বিক্রি করে দিয়ে দেশের মানুষকে স্বস্তিতে রাখার নির্দেশ দিয়ে কেন ধোঁকা দিতে চাচ্ছেন? 

প্রকৃতপক্ষে, দেশের মানুষ স্বস্তিতে তখনই আসবে, যখন আমরা বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং এর ধারক-বাহক দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব। কেননা, ইসলাম সেই মহান সৃষ্টিকর্তা থেকে প্রেরিত জীবনব্যবস্থা, যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনিই একমাত্র জানেন কিভাবে চললে মানবজীবনে শান্তি বিরাজ করবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী ও সব বিষয়ে ভালভাবে অবগত” (সূরা-মূলকঃ ১৪)। সুতরাং, জীবন পরিচালনা করার জন্য আমাদের আল্লাহ্‌’র কোন কোন বিধানকে অযোগ্য বলে মনে হয় (!), যার কারণে আমরা এই ধরণের পশ্চিমা দালাল শাসক এবং তাদের গৃহীত পশ্চিমা কুফর ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থার মধ্যে স্বস্তি খুঁজবো?

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম।




“ইনসাফ কায়েম কমিটির গণসমাবেশে বক্তারা; জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে”

খবরঃ

জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির উদ্যোগে রাজধানীতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ...এসময় ইনসাফ কায়েম কমিটির নেতারা জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের জোর দাবি জানান। ...জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটির আহ্বায়ক কবি ফরহাদ মজহার বলেন, এই মুহূর্তে দরকার জাতীয় সরকার। ইনসাফ কমিটি এমন একটা সরকার চাইছে যেখানে জনগণের সরকার ও ইনসাফের সরকার কায়েম করতে পারি। ...আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন জানাই আপনারা একত্র হন।... (https://mzamin.com/news.php?news=60928)

মন্তব্যঃ

ইনসাফ কায়েমের লক্ষ্যে কমিটি গঠন করে সেখান থেকে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-এর হুকুম বাদ দিয়ে সকল কার্যক্রম চালালে এর মাধ্যমে কোন ‘অদ্ভুত’ ইনসাফ কায়েম হবে সেটা আর বলার অপেক্ষায় রাখে না। এই কমিটির তথাকথিত জাতীয় সরকারের রূপরেখা; অতঃপর তার অধীনে আরো একটা তথাকথিত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া কখনোই মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে না। কারণ, বাংলাদেশে ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো, যেমন ২০০১, ২০০৮- সেগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে সুষ্ঠু বলে মনে করা হলেও সেগুলো যে পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ সেটা বর্তমানে প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন যে, গ্যাস বিক্রয়ের মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছে, আর এখন যে সেন্টমার্টিন বিক্রি করবে সেই ক্ষমতায় থাকবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতার পালাবদল আমাদের নিকট এক মিথ্যা নাটকের মঞ্চায়ন। এখানে প্রকৃত ক্ষমতার পালাবদল হয় উপনিবেশবাদী তথা মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতকে কৌশলগত মূল্যবান সম্পদ দিয়ে দেওয়ার চুক্তি করার মাধ্যমে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমান নির্বাচনমুখী তথা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণভাবে তাদের স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি করে, যেখানে ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যই থাকে নিজেদের সুবিধা আদায় করা। এখানে মুখে যে যাই বলুক, তারা কখনোই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-এর হুকুম বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতায় যায় না। কেউ চাইলেও এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে তা সম্ভব না। ইতিপূর্বে যারাই এধরনের কথা বলে ক্ষমতায় গিয়েছে বা বর্তমানে আছে তারা কেউই কোন দেশেই তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, সেটা তুরস্কে এরদোগান, মিশরের মুরসী কিংবা বাংলাদেশের ২০০১-২০০৫ পর্যন্ত বিএনপির-জামাত সরকারই হোক না কেন। দিনশেষে তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে গঠিত মানবরচিত শাসনব্যবস্থা দ্বারাই জনগণকে জুলুম করেছে। তাই স্বার্থের ভিত্তিতে গঠিত এসব ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর একত্রিত হলে কোন কিছুরই পরিবর্তন হবে না। এরা কোন উপনিবেশবাদী এজেন্ডাকেই চ্যালেঞ্জ করবে না, আমাদেরকে বরং তাদের পদতলে আরো নিষ্পেষিত করবে। জনগণের কোন অধিকার কিংবা ইনসাফই বাস্তবায়ন হবে না।

তাই কেউ যদি প্রকৃতই ইনসাফ কায়েম করতে চায়, তাহলে তার ‘জাতীয় সরকার’ কিংবা ‘নির্বাচন’-এসকল উপনিবেশবাদী নাটকের দৃশ্যগুলো মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলে সঠিক কোন সমাধান খুঁজে বের করা উচিত, যেটা কোন সীমাবদ্ধ মানব মস্তিষ্কপ্রসূত হবে না। কারণ সীমাবদ্ধ মানবমস্তিষ্ক সমগ্র দেশবাসী তো দূরে থাক, তার নিজের জন্যই কোন সমাধান বের করতে অক্ষম। মানুষের সকল সমস্যার সঠিক সমাধান একমাত্র আল্লাহ্‌ আল-হাকীম এর কাছ থেকে আসা সম্ভব। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন, “তাহলে কি তারা অজ্ঞতার যুগের বিধান কামনা করে? আর দৃঢ় বিশ্বাসীদের কাছে বিধান প্রণয়নে আল্লাহ্‌ হতে কে অধিক শ্রেষ্ঠ?” (সূরা মায়েদাঃ ৫০)। আর আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত শাসনব্যবস্থা হল খিলাফত ব্যবস্থা, যেটা তিনি তার রাসূলের (সঃ) পবিত্র হাত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং ১৪০০ বছর ধরে তা মানবজাতিকে ইনসাফের পথ দেখিয়েছিল। 

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম

Previous Post Next Post