Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৯৩ তম সংখ্যা । ২০ জুন, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“ইচ্ছাকৃত কর ফাঁকিতে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ড”
“পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ”
“ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে”
“শর্ত মেনে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে”
“ইচ্ছাকৃত কর ফাঁকিতে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ড”
খবরঃ
ইচ্ছাকৃতভাবে আয়কর ফাঁকি দিলে বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আয়কর আইনের বিলে। নতুন আইনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কর পরিহারের চেষ্টা করলে সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। কেউ আয়ের বিবরণ গোপন করলে, কর কমাতে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি, দায় ও ব্যয় সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিলে, হিসাব বা অন্য বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দিলে বা দিতে বাধ্য করলে, ইচ্ছাকৃতভাবে কর ফাইলের তথ্য বা বিবৃতি বিলুপ্ত করেন বা করান এবং আয়কর পরিশোধ না করতে অন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করলে শাস্তির আওতায় পড়বেন। যদি কোনো ব্যক্তি রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে অর্থদণ্ডসহ সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি কেউ মিথ্যা সনদপত্র দেন, তাহলে সর্বনিম্ন ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অন্যের টিআইএন ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আয়কর কর্তৃপক্ষের কাজে বাধা দিলে অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (www.jugantor.com/todays-paper/first-page/683118)
মন্তব্যঃ
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিভিন্ন প্রকার করারোপের বিষয়টি মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হচ্ছে, সে কঠোর পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করে তা সে তার নিজের জন্য, পরিবার ও আত্নীয় স্বজনের জন্য ব্যয় করতে চায়। ফলে রাষ্ট্র যখন তার কষ্টার্জিত অর্থে ভাগ চায় তখনই সে নানারকম ছল-ছাতুরীর আশ্রয় নেয় যাতে তাকে কম কর দিতে হয়। উপরন্তু মানুষ যখন দেখে যে তার থেকে করের নামে অর্থ ডাকাতি করা হয় এবং তা দিয়ে শাসকশ্রেণী বিলাসী জীবনযাপন করে এবং জনগণের কল্যানে সিকি পয়সাও ব্যয় করে না তখন জনগণ স্বাভাবিকভাবেই কর দিতে অনীহা প্রকাশ করে। জনগণ ও শাসকশ্রেণীর মধ্যে যে এই অবিশ্বাস ও দূরত্ব তৈরী হয় এটিই মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এবং এই দূরত্বের কারণেই মূলত শাসকশ্রেণী জনগণের উপর চড়াও হয় বিভিন্ন প্রকার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। কিন্তু আরেকটি স্পষ্ট বাস্তবতা হচ্ছে এসকল আইন মূলত ক্ষমতাহীন সাধারণ নাগরিকদের উপর বাস্তবায়নের জন্য। সালমান এফ রহমান কিংবা ইলন মাস্কদের মত পুঁজিপতিদের জন্য এসকল আইন না। তারা দেদারসে কর ফাঁকি দিলেও শাসকশ্রেণী তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। অর্থাৎ এসকল আইনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ভীতি তৈরী করে সর্বোচ্চ পরিমাণ কর আদায় করা এবং তা দিয়ে শাসকশ্রেণী ও তাদের সহোদর ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠীর নিরবচ্ছিন্ন আরাম-আয়েশের বন্দোবস্ত করা!
অন্যদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রকার গণমালিকানাধীন সম্পত্তি যেমন, তেল-গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ ইত্যাদিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন করা হয়। ফলে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি ফুলে-ফেঁপে উঠলেও রাষ্ট্র বিশাল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যয় মেটানোর জন্য রাষ্ট্র জনগণের উপর চাপ প্রয়োগ করে। অপরদিকে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ নিজেদের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সহায়তাও নিয়ে থাকে। ফলে এসকল ঋণের কিস্তি প্রদান ও এর সুদ বাবদ যে অর্থ প্রয়োজন হয় তার ভারও বহন করতে হয় সাধারণ জনগণের। অপরদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস, বেকারত্ব ইত্যাদি কারণে যখন মানুষের নাভিশ্বাস তখন রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ক্রমবর্ধমান করের বোঝা মানুষকে বাধ্য করে তা হতে নিষ্কৃতি পাওয়ার বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করার। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে মানুষদের কর প্রদানে যে অনীহা তা খুব বেশী অযৌক্তিক নয়। কারণ যারা নিজেরাই ঠিকমত খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে পারে না তাদের উপর অসম্ভব করের বোঝা আরোপিত করলে তারা যে তা বিভিন্নভাবে ফাকি দেয়ার চেষ্টা করবে তাতো অস্বাভাবিক কিছু না।
অপরদিকে ইসলাম রাষ্ট্রের আয়ের উৎসের ব্যাপারে খুবই সুনির্দিষ্ট। শারীয়াহ কর্তৃক সুনির্ধারিত উৎস বাদে নতুন কোন আরোপিত উৎস থেকে রাজস্ব আদায় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি এই রাজস্ব আদায় জনগণের উপর জুলুম করে না। যেমন, একজন ব্যক্তির নিজস্ব খরচ শেষে যে পরিমাণ সম্পদ উদ্বৃত্ত থাকে শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই যাকাত এর নিসাব পরিমাণ সম্পদ অতিক্রম করলে তাকে যাকাত দিতে হবে। উপরন্তু যাকাতের এই অর্থ শাসকের বিলাসীতার জন্যে নয় বরং শারীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত আটটি খাতেই ব্যয় করতে হবে। অপরদিকে জিজিয়ার মত ব্যক্তিগত করের বিষয়গুলোও শুধুমাত্র সক্ষম অমুসলিমদের জন্য রাখা হয়েছে এবং তার পরিমাণ এত বেশী না যে তা তাদেরকে জুলুমের শিকার করবে। অপরদিকে একজন মুসলিম শুধুমাত্র তার তাকওয়ার কারণেই যাকাত কিংবা অন্যান্য শারীয়াহ নির্ধারিত কর রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে। এজন্য কোন প্রকার পুলিশ কিংবা জেল বা আইনের প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি খিলাফত রাষ্ট্রের থাকবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করের বাইরেও অন্যান্য রাজস্বের উৎস। যেমন, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, খনিজ সম্পদ ইত্যাদি। এগুলো থেকে যে রাজস্ব উপার্জিত হবে তা দিয়েই সহজে রাষ্ট্রের ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। ব্যক্তির উপর চাপ দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর যদি কখনো রাষ্ট্রের অর্থের জরুরী প্রয়োজন পড়ে যেমন যুদ্ধ কিংবা দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে তখন কেবলমাত্র ধনীদের উদ্ধৃত্ব সম্পদ থেকে তা সংগ্রহ করা হবে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ”
খবরঃ
কয়লা না থাকায় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। ডলার-সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তিন বছর আগে উৎপাদনে আসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারপর এবারই প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এতে বাড়তে পারে লোডশেডিং। এর আগে ডলার-সংকটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন উৎপাদনে রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। আগে এক দিনের জন্যও বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় পার্থক্য তৈরি হবে। এ কারণে লোডশেডিং বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে এখন অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/snmf5cohli)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে উন্নতমানের কয়লা মজুদ থাকা স্বত্বেও হাসিনা সরকার আমদানিরনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ার ফলে বিদ্যুৎ সংকট আরো তীব্রতর হচ্ছে এবং লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণের জীবনযাত্রাকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলছে। বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আসা সকল পুঁজিবাদী সরকারগুলো দেশে মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ কয়লা উত্তোলনে এবং এই খনিজ সম্পদকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় ব্যবহারের কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত পাঁচটি (বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী, দীঘিপাড়া, খালাশপীর ও জামালগঞ্জ) কয়লা খনিতে মজুদকৃত কয়লার পরিমাণ এখন প্রায় ৭৫০ কোটি টনে দাঁড়িয়েছে, (সুত্রঃ প্রথম আলো ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬)। এই কয়লা খনিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মজুদটি অবস্থিত জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে যার সম্ভাব্য মোট পরিমাণ ৫৫০ কোটি টন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর এক-দশমাংশও (৫৫ কোটি টন) যদি উত্তোলন করা যায়, তাহলেও খনিটি উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুদের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ খনির তালিকায় উঠে আসবে। এই কয়লা খনির অর্ধেক অর্থ্যাৎ, ২৫০ কোটি টন কয়লা যদি উত্তোলন করা যায় তাহলে দেশের বর্তমান কয়লা চাহিদা অনুযায়ী আগামী ১৫২ বছরের কয়লা চাহিদা এই জামালগঞ্জ কয়লা খনি থেকেই মেটানো সম্ভব হবে।
অথচ, হাসিনা সরকার ও পূর্ববর্তী ক্ষমতায় থাকা দলগুলো পশ্চিমা কাফিরদের খুশি রাখতে তাদের নব্যউপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কর্তৃক জ্বালানী খাতে প্রস্তাবিত বেসরকারীকরণ নীতি অনুসরণ করেছে এবং “Production Sharing Contract” এর মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানীগুলোকে আমাদের তেল-গ্যাস-কয়লা খনিগুলোকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দিয়েছে। ইতিপূর্বে আওয়ামী সরকারের অধীনেই ১৯৯৮ সালে ব্রিটিশ কোম্পানী এশিয়া এনার্জির সাথে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্র থেকে কয়লা আহরণের জন্য Production Sharing Contract চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যে চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলিত কয়লার মাত্র ৬% পাবে বাংলাদেশ, ৯৪% পাবে এশিয়া এনার্জি, যার ৮০% এশিয়া এনার্জি রপ্তানি করবে। হাসিনা সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় কয়লার মজুদ ও পরিচ্ছন্ন কয়লার ব্যবহারকে অবহেলা করেছে এবং বেসরকারীকরণ নীতি অনুসরণ করে দেশী-বিদেশী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রতিবছর ব্যয়বহুল দরে কয়লা আমদানি করছে। অধিকন্তু, সরকার এখন ভারতের আদানি গ্রুপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ পেতে ৪ গুণ বেশি অর্থ দিতেও প্রস্তুত যে বিদ্যুতের জন্য আগামী ২৫ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে গুনতে হবে (১১.০১ বিলিয়ন ডলার)। এতোকিছুর পরও প্রতারণপূর্ণভাবে সরকার নিজের অপরাধ ঢাকতে বিশ্বব্যাপী গ্যাস-কয়লার অভাবের ভয় দেখিয়ে চরম লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণকে আবারো নির্লজ্জভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
পশ্চিমা কাফিরদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর অনুসৃত পুঁজিবাদী নীতির অধীনে আমাদের জ্বালানী সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের আশা একটা নিরাশা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের ইসলামী জ্বালানী নীতি বাংলাদেশের বিশাল জ্বালানী মজুদ এবং তার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পরনির্ভরশীলতা হতে মুক্ত করবে। খিলাফত রাষ্ট্র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কিংবা জনগণের পক্ষে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে তেল, গ্যাস ও কয়লার মত গণমালিকানাধীন সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহারের উপযোগী করবে যাতে এগুলো ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে বেসরকারীকরণ কিংবা বিদেশী কোম্পানির মালিকানায় দেয়া ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। খিলাফত রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ তেল, গ্যাস ও কয়লাকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করবে যার ফলে রাষ্ট্র রাতারাতি বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে এবং বিদেশ নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসবে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে শুধুমাত্র তেল, গ্যাস ও কয়লার উপর নির্ভর না করে খিলাফত রাষ্ট্র হাইড্রো কার্বন জ্বালানী অনুসন্ধান সহ নবায়নযোগ্য জ্বালানী যেমনঃ সোলার ইলেক্ট্রিসিটি, বায়ু বিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, জলবিদ্যুৎ সহ সম্ভাব্য অন্যান্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জ্বালানী সার্বভৌমত্ব অর্জন করবে।
- সিফাত নেওয়াজ
“ভোটে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে”
খবরঃ
আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়ার পরামর্শ এসেছে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা থেকে। আর ভোটে নির্দিষ্ট কোনো দলের অংশগ্রহণের থেকেও দেখার বিষয় হলো, জনগণ ভোট দিতে পারছে কিনা- বলেছেন আলোচকরা। ‘নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু। (https://ekattor.tv/news/article?article_id=46337)
মন্তব্যঃ
দেশে চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যম “নির্বাচন”-কে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য কিংবা ভালো করার ব্যাপারে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো সবাই মিলে গুরুত্বারোপ করছে। সবাই বলার চেষ্টা করছে একটি “ভালো নির্বাচন” হলে এবং জনগণ বিনাবাধায় তার ভোট দিতে পারলেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফেরত আসবে, রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। কেউ কেউ এমনও বলছে ভোটাধিকার রক্ষায় বা ভোটাধিকার ফিরে পেতে আমেরিকা, ভারত কিংবা ইসরাইল কেন, এমনকি শয়তানের সহযোগিতা পেলেও তা আমাদের জন্য, দেশের জন্য মঙ্গল! এদিকে ইতিহাস বলছে ভোটাধিকারের জন্যই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হলো, ৩০ লক্ষ প্রাণ চলে গেলো, সেই ঘটনার ৫০ বছরের বেশী পার হওয়ার পর আজও রাষ্ট্র কতিপয় পুঁজিপতি ও কাফির-উপনিবেশবাদীদের কুক্ষিগত।
এটা এখন ওপেন সিক্রেট যে নির্বাচনের আগেই তারা ঠিক করে দেয়, কে ক্ষমতায় আসবে, কে বিরোধী দলে থাকবে। এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বারবারই বলেছে যে, ২০০১ সালে গ্যাস দিতে রাজি হয়নি বলে তার দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তিনি ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে বলেছিল তার সরকার (আমেরিকা-বৃটেন-ভারতের মধ্যকার) সমঝোতার ফসল। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বাইডেন-ঋষী-মোদীদের আলোচনা, ডোনাল্ড লূ-অ্যান মারি-জয়সংকরদের তৎপরতা, বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কাছে রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়াদৌড়িতেও এটি আজ স্পষ্ট যে নির্বাচনের আগেই এই পরাশক্তিরাই সবকিছু ঠিক করে দেয়। তাই নির্বাচন ভালো কিংবা মন্দ, গ্রহণযোগ্য কিংবা অগ্রহণযোগ্য এই আলোচনাগুলো এখানে নিরর্থক। দ্বিতীয়ত, যখন থেকে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, ঠিক তখন থেকেই রাষ্ট্রের মালিকানাও জনগণের হাত থেকে লুট হয়ে গেছে, তাই এখানে ভোট প্রদানের তথাকথিত অধিকার অর্জন করেও কোন লাভ নেই। ভালো কিংবা মন্দ যে প্রকারেই নির্বাচিত হোক না কেন, এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদ যেহেতু নির্বাচিতদের যেকোন ধরণের আইন পাশের সুযোগ বা ক্ষমতা দেয় সেহেতু তারা বিভিন্ন আযুহাতে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ও কতিপয় পুঁজিপতিদের স্বার্থে রাষ্ট্রের যেকোন কিছুকে এমনকি সার্বভৌমত্বকেও বিসর্জন দিয়ে দিতে পারে। এটিই আমরা এতদিন দেখতে পেয়েছি কিভাবে এযাবৎকালের আওয়ামী-বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো একের পর এক এমনসব আইন ও নীতি পার্লামেন্টে পাশ করিয়ে নিয়েছে যার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি-সমাজনীতি এমনকি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, সমূদ্র বন্দর, নদী ইত্যাদির উপর কাফির উপনিবেশবাদী ও তাদের আঞ্চলিক দোসর মুশরিকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা বলে জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়, কারণ প্রকৃতপক্ষে এই প্রক্রিয়ায় সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব দেশী-বিদেশী লুটেরাদের হাতে চলে যায়। অন্যদিকে, ইসলাম সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে, সার্বভৌমত্ব হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্’র, কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মানুষের ভাল-মন্দ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন এবং সেই অনুযায়ী তিনি কুর‘আন-সুন্নাহ্-কে আমাদের জন্য আইন হিসেবে পাঠিয়েছেন, কিন্তু ইসলাম রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দিয়েছে জনগণের হাতে, তাই শাসক কখনোই জনগণের মেন্ডেড (বাইয়াত) ছাড়া ক্ষমতা আসতে পারবে না। শাসককে নিয়োগ দেয়াই নয় বরং কুর‘আন-সুন্নাহ্ প্রণীত আইন দ্বারা তিনি দেশ পরিচালনা করছেন কিনা সে বিষয়ে তাকে প্রতিনিয়ত জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা মুসলিমদের ঈমানী দায়িত্ব। অর্থাৎ ইসলামে জনগণই রাষ্ট্রের মূল রক্ষক, অতন্দ্রপ্রহরী ও নিয়ন্ত্রণকারী। ফলে শারীয়াহ্ দ্বারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা এবং জনগণের অতন্দ্র পাহারায় থাকা খলিফার (রাষ্ট্রপ্রধান) পক্ষে কখনই অন্যের চাপে কিংবা নিজের ইচ্ছায় এমন কিছু করা সম্ভব নয়, যাতে রাষ্ট্রের উপর বিদেশীদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং, আমাদের রাষ্ট্রটিকে সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণ থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পথ সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, বরং এর একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করে ইসলামী তথা খিলাফত ব্যবস্থা দ্বারা রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত করা।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“শর্ত মেনে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে”
খবরঃ
দীর্ঘ দশ বছরেরও বেশি সময় পর ঢাকায় সরকারের অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী।... দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গতকাল সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত।... (https://mzamin.com/news.php?news=59845)
মন্তব্যঃ
যেখানে ইসলাম সাংঘর্ষিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংসদে ২-৩ টা সিটের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কখনোই ইসলাম প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হতে পারেনা, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলেই কি বা না থাকলেই কি? পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই কোন ইসলামী দল কুফর শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে কিংবা সেই ব্যবস্থার অধীনে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, বরং তারা উপনিবেশবাদী নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে। যেমনটি বর্তমানে তুরষ্কে এরদোগান করছে, যাকে দিয়ে আমেরিকা সিরিয়া আসাদবিরোধী আন্দোলনকে নশ্চাৎ করাসহ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন জায়গায় তার নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে। ইতিপূর্বে মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতায় এনে সেখানকার জনগণের ইসলাম প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খাকে বিলীন করেছিল, কারণ তিনি ইসলামের বদলে ধর্মনিরপেক্ষ মিশর উপহার দিয়েছিলেন। এবং যখন উপনিবেশবাদীদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে তখন তারা সকল শাসকদের নোংরা টিস্যু পেপারের মত ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। সাময়িক সুবিধা অর্জনের জন্য কিংবা জুলুম থেকে বাঁচার জন্য কুফরি শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ শুধুমাত্র এসব দলের নিষ্ঠাবান নেতা-কর্মী ও সাধারণ মুসলিমদের হতাশাগ্রস্থ করেছে এবং খিলাফত (ইসলামী শাসনব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠার পথকে আরো দীর্ঘায়িত করছে। কারণ যেকোন রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাঠামোর ভিত্তি হল সে রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী যখন কোন সরকারকে সমর্থন করে না তখন কোনোভাবেই আর তার ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হয় না। যেমনটি আমরা দেখেছি মোহাম্মদ মুরসির বেলায় কিংবা আলজেরিয়ার ‘ইসলামিক সালভেসন ফ্রন্ট’ এর বেলায় (যারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও নির্বাচনের পরপরই সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়েছিল)। এই কারণেই যেকোন উপনিবেশবাদী শক্তির প্রথম টার্গেট হলো, তার উপনিবেশের সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই লক্ষ্যে যেমন আমেরিকা বাংলাদেশ জেনারেল সিকিউরিটি অফ মিলিটারি ইনফর্মেশন এগ্রিমেন্ট (GSOMIA) চুক্তির জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে কিংবা জাতিসংঘ শান্তি মিশন (যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণকে উপনিবেশবাদী স্বার্থে ব্যবহার করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়) বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে, হাসিনা সরকারও বাংলাদেশে অতীতের যেকোন সরকারের চেয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে তাদের সমর্থনে তার অপশাসন আরো দীর্ঘায়িত করছে। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য হোক কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হোক, সামরিক বাহিনীর সমর্থন খুবই জরুরী। আমাদের রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) নিজেও মদিনায় সামরিক বাহিনীর সমর্থনে (যার নেতৃত্বে ছিলেন সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)) মদিনার মসনদে অধিষ্ঠিত হয়ে সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তাই ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ কিংবা ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, এসব দাবি-দাওয়া করে সমাবেশ আয়োজন শুধুমাত্র নিষ্ফল নাটকের মঞ্চায়ন এবং ইসলামবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অসহ্য প্রহর আরো দীর্ঘায়িত করার মাধ্যম মাত্র। কারণ এসব নির্বাচন-নির্বাচন খেলায় ব্যস্ত রেখেই কুফর শক্তি আমাদের শোষণ করে যাচ্ছে। এজন্য এখন প্রয়োজন এসকল খেলা বাদ দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সংগ্রাম করা এবং সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অংশের সমর্থনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
“ঢাকায় ৪০ মিনিটে ১টি তালাক”
খবরঃ
দেশে সংসার ভেঙে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি। গত বছর ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে তালাক হয়েছে। বিচ্ছেদ বাড়ছে ঢাকার বাইরেও। বিচ্ছেদের আবেদন নারীরা বেশি করছেন। নির্যাতন-পীড়ন থেকে আত্মমর্যাদাবান নারীরা তালাকে খুঁজছেন মুক্তি। ঢাকার দুই সিটি মেয়রের কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিলো মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি।…২০২০-২১ সালেও আবেদনের সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের বেশি। প্রায় সব আবেদনেই বিচ্ছেদের কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া। এর বাইরে আছে পারিবারিক কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, যৌতুক, মাদক সেবন করে নির্যাতন, প্রবাসী স্বামীর সংঘে বিচ্ছিন্নতা, যৌন অক্ষমতা, সন্দেহ, উদাসীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাতসহ আরও কিছু অভিযোগ। (https://www.prothomalo.com/amp/story/bangladesh/capital/qjwwnm3jms)
মন্তব্যঃ
দেশব্যাপী সংসার ভাঙার ঝড় প্রকৃতপক্ষে সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অশনি সংকেত। কেননা, কোন সমাজব্যবস্থাই টিকে থাকে না যদি উক্ত সমাজে পারিবারিক কাঠামো সুরক্ষিত না থাকে। সমাজব্যবস্থার কোন মূল্যই থাকে না যদি সেখানে নারী-পুরুষের পারস্পরিক সহঅবস্থান বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সম্মান, মায়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর না হতে থাকে। বৈবাহিক বন্ধন এবং পারিবারিক কাঠামো যে বিষয়গুলোর মূল রক্ষাকবচ। অর্থ্যাৎ, বৈবাহিক বন্ধন ও পরিবার টিকে না থাকলে সমাজে নারী-পুরুষের সহবস্থান মূলত সংঘাতে রূপ নেয়। যে সংঘাতে পুরো সমাজব্যবস্থা যেমন ভেঙে পড়ে তেমনি উক্ত সমাজে নতুন প্রজন্মের বেড়ে উঠাও হুমকির মুখে পড়ে। বাস্তবতা মানতে কষ্ট হলেও উপরের খবর বলছে আমরা সেই দিকেই অগ্রসর হচ্ছি। প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে কেন এমন ঝড় শুরু হলো? কি হয়েছে আমাদের সমাজের যেখানে এখন বিবাহ কিংবা পরিবার টিকিয়ে রাখা যাচ্ছেনা?
এর কারণ হচ্ছে, আমাদের সমাজব্যবস্থার পশ্চিমাকরণ। অর্থ্যাৎ, যখন থেকে আমাদের সমাজ নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ থেকে সরে গিয়ে পশ্চিমাদের সৃষ্টিকর্তা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে তখন থেকেই ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের মত আমাদের সমাজও পরিবারহীন সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে। মূলত, পশ্চিমা জীবনধারাতে সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিষয়ে এমনকিছু মৌলিক উপাদান আছে যেগুলো সংসার ভাঙার মৌলিক কারণ। ইসলাম যেখানে নারী-পুরুষের সম্পর্কের বিষয়কে মানবজাতির অস্তিত্বের স্বার্থে বংশবিস্তারের প্রয়োজনে বৈবাহিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, সেখানে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতায় নারী-পুরুষের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে যৌনতাকেন্দ্রিক। নারী-পুরুষ একে অপর থেকে যৌনআনন্দ পেলেই যথেষ্ট, বৈবাহিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে, ১৯৬০ সালে পশ্চিমারা জন্মনিয়ন্ত্রক পিল ডেভেলপমেন্ট করে যাতে নারীরা নির্দ্বিধায় অবাধে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারে। এরপর থেকেই তাদের সমাজে বৈবাহিক সম্পর্ক কমতে থাকে এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইসলাম নারী-পুরুষকে একে অপরের সহযোগী হিসেবে দেখে; আর, পশ্চিমারা নারীকে পুরুষের যৌনদাসী হিসেবে দেখে। পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানী এরিস্টটলের মতে, “নারীরা হচ্ছে পুরুষের দাস সুলভ...এবং নারী একজন অসমাপ্ত পুরুষ”। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে নারীকে সবসময় শোষণ ও হেয় প্রতিপন্য করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় নারীবাদ (ফেমিনিজম), নারী-সমতা, নারী-অধিকারের মত বিভিন্ন ইস্যু এবং আন্দোলন ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে বজায় থাকে। নারীকে অনেক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করা লাগে সেও পুরুষের সমান। ফলশ্রুতিতে, এখানে নারী-পুরুষ সহজে বনিবনা হয়না। এবং পারিবারিক কলহ, শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের মত বিভিন্ন বিষয় ব্যাপক আকার ধারণ করে। অথচ, ইসলামে আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকাকে আলাদা করা হয়েছে তাই এমন অসম তুলনা করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়না এবং পারিবারিক বন্ধন টিকে থাকে। এছাড়াও, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ যখন আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবনের উদ্দেশ্য, বিধিনিষেধ, কর্মের মানদন্ড, বিচারের মানদন্ড থেকে সরে গিয়ে ভোগবাদী জীবনের উদ্দেশ্য, লাভ-ক্ষতি, সুবিধা-অসুবিধার ভিত্তিতে কর্ম এবং বিচারের মানদন্ড গ্রহণ করে তখন থেকে মানুষের সম্পর্কের ভিত্তিগুলো নষ্ট হওয়া শুরু করে এবং এরই ফলশ্রুতিতে আজকে আমাদের পরিবারের গিটগুলো খুলে যাচ্ছে। আর সংসার ভাঙার এই দূরাবস্থা যখন ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা মোকাবেলা করতে পারছেনা তখন তারা “সমস্যাকে বৈধকরণ নীতি”র আলোকে ব্যক্তিস্বাধীনতার দোহায় দিয়ে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। সুতরাং, আমরা যদি আমাদের বৈবাহিক বন্ধন তথা আমাদের পরিবার কিংবা নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাদের ইসলামের ভিত্তিতে পুনরায় সমাজব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে। কেননা এতেই রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নির্দশন রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে” [সূরা-রূমঃ ২১]।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“এক দেশে ১২ রকমের শিক্ষা”
খবরঃ
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে। বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। (deshrupantor.com/first-page/2023/06/11/431431)
মন্তব্যঃ
এই দেশে বিভিন্ন ধারা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন হয় মূলত উপনিবেশবাদী বৃটিশ শাসনামলে। বৃটিশরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে উপমহাদেশের ইসলামী শাসন ব্যবস্থার পতনের পর ৫০০ শত বছরের অধিক সময় ধরে চলমান সুলতানি আমলের একমুখী ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাতিল করে। সুলতানি আমলে মক্তবভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি ছিল শক্তিশালী মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মাদরাসাগুলোতে (মাদরাসার বাংলা অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) চিকিৎসাবিজ্ঞান, রসায়ন, জ্যামিতি, ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয় পড়ানো হতো। কিন্তু বৃটিশরা এই অঞ্চলে তাদের উপনিবেশের ভিত্তিকে পাকাপোক্ত করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ প্রশাসনের জন্য অনুগত কর্মচারী এবং তাদের জীবনাদর্শের প্রতি অনুরক্ত শ্রেণী তৈরি করা। তারা ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থার আদলে ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিসং কর্তৃক কলকাতায় আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করে। বৃটিশদের এই উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতিবাদে এবং উম্মাহর ঈমান-আকীদাকে রক্ষার তাগিদে আলেম সমাজ শুধুমাত্র ইসলামী ব্যক্তিত্ব তৈরি করার জন্য স্বতন্ত্র মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, যা কওমী শিক্ষা নামে পরিচিত। এভাবে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন ধারায় বিভিক্ত হয়ে যায়, যা আজও চলমান। বিভিন্ন বিদেশী ইংরেজী মাধ্যমের কারিকুলামগুলো যেমনঃ এ্যডেক্সল, ক্যামব্রিজ, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান ইত্যাদি আমদানি করা শিক্ষার ধারাগুলো সংখ্যাত্বক বৃদ্ধি ছাড়া শিক্ষার মানে বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ কোন ভূমিকা রাখতে পারে নাই। প্রত্যেক শিশুর জন্য একই ধারার বা একমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই বোঝে। বিভিন্ন সময় শিক্ষাব্যবস্থাকে একমুখী করার জন্য অনেকগুলো কমিশন গঠন করা হলেও তারা বৃটিশদের চাপিয়ে দেয়া ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার বাহিরে চিন্তাই করতে পারে নাই। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউএসএইডসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক দাতা ও ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের প্রকল্পগুলো অর্ন্তভুক্তিকরণের নামে যৌন শিক্ষা, সমকামিতাসহ বিভিন্ন পশ্চিমা মূল্যবোধ পাঠ্যপুস্তকে আমদানী করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা লাভ করে না, তাই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিতরা চাকরি না পেয়ে বেকার থাকতে বাধ্য হয়। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন ৬৬ শতাংশ শিক্ষিত বেকার, প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১)। অন্যদিকে, দেশের তৈরি পোষাক, আইটি খাতসহ বিভিন্ন খাতে ৫ লাখেরও বেশী ভারতীয় নাগরিক কর্মরত রয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বাংলাদেশে চাকরি করছে ৫ লাখ ভারতীয়, অধিকাংশের নেই ওয়ার্ক পারমিট!, জাগো নিউজ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২০)।
একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের চিন্তা ও চেতনায় মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন বিভিন্ন ক্ষেত্রের দক্ষ কর্মী। খিলাফত রাষ্ট্র তার নাগরিকদের ইসলামী চিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ এবং বাস্তব জীবেনের বিষয়গুলো দক্ষতার সম্পাদন করার জন্য একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করবে। রাষ্ট্র তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সকল নাগরিকদের জন্য উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। উল্লেখ্য, ব্যাক্তিমালিকানাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে কিন্তু শর্ত হচ্ছে ঐ সকল বিদ্যালয়গুলোকেও খিলাফত রাষ্ট্রের কারিকুলাম অনুসরণ করতে হবে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি কোরআন, হাদীস, শারীয়াহ, বিজ্ঞান, গণিত, সমরবিদ্যাসহ প্রায়োগিক সকল বিষয়ে পাঠদান করবে যাতে বৈশ্বয়িক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে ও উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম