Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১০০ তম সংখ্যা । ২৮ আগস্ট, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“‘বিশেষ বিবেচনায়’ বেক্সিমকোকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ”
“বিটিআই কীটনাশক আমদানিতে জালিয়াতি: শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে সিটি করপোরেশন”
“জনগণ খারাপ অবস্থায়, কিন্তু বুদ্ধিজীবিরা ভূমিকা রাখছেন না”
“কর্মসংস্থান নিয়ে জটিলতায় হাজারো কওমি আলেম”
“ঢাকার হারিয়ে যাওয়া দুই নদ কনাই ও পাইনার”
“সাঈদীকে নিয়ে প্রবাসী ছেলের লেখালেখি, খুলনায় মা গ্রেপ্তার”
“শরীয়তপুরে ৫ হাজার টাকার মামলায় অজ্ঞান চালক”
“‘বিশেষ বিবেচনায়’ বেক্সিমকোকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ”
খবরঃ
নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিশাল অঙ্কের ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ...বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এই ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। হিসাব অনুযায়ী, এর মাধ্যমে তারা কেবল একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯.৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু কোনো একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও ননফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই।... পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দেশের রপ্তানি খাতে বেক্সিমকো গ্রুপের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়- ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট নিরসনে অবদান রাখছে। এছাড়া এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। (https://www.al-ihsan.net/details/বিশেষ-বিবেচনায়’-বেক্সিমকোকে-২২-হাজার-কোটি-টাকা-ঋণ/7923)
মন্তব্যঃ
হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকোর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ সমস্ত আইন লঙ্ঘন করে মোটা অংকের ঋণ পাওয়ার ঘটনা আশ্চর্যজনক হলেও তা এই পূঁজিবাদী ব্যবস্থার স্বাভাবিক ঘটনা। এর আগেও আমরা দেখে আসছি বেক্সিমকো গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে (দেখুনঃ বেক্সিমকো গ্রুপকে আবারও সুবিধা)। শুধু বেক্সিমকো গ্রুপই না পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত ক্ষুদ্র পূঁজিপতিগোষ্ঠী তাদের ব্যবসায়িক মুনাফাকে পাহাড়সম করতে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে (দেখুনঃ খেলাপিরাও এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন)। যেহেতু এসব কোম্পানিগুলো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শাসকগোষ্ঠীর অংশ তাই এদের প্রয়োজনে আইনকে সংশোধন কিংবা অকার্যকর করার সার্বভৌম ক্ষমতাকে শাসকগোষ্ঠী ব্যবহার করে। দেশে হাজারটা শক্ত আইন থাকতে পারে; কিন্তু, তা অন্য সবার জন্য বাস্তবায়ন হলেও এসব কোম্পানির প্রয়োজনে তা রহিত হয়। সাধারণ জনগণ পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে, কাদের রক্ষার্থে, কাদের সুবিধার্থে এই ব্যবস্থাকে তৈরি করা হয়েছে এসব বিষয়ে না জানার কারণে অল্পতেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধারক-বাহক বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবিদের তাত্ত্বিক আলোচনার ধোঁকায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
সাধারণ জনগণকে বুঝানো হয় বেক্সিমকোর মত বড় পূঁজির কোম্পানিগুলো হচ্ছে দেশের আপামর জনগণের ত্রাণকর্তা। অর্থ্যাৎ, এসব কোম্পানি লাভবান হলে জনগণ লাভবান হবে। কেননা, জনগণ এদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে তাদের জীবনধারনের খরচ জোগাড় করে। তাই তথাকথিত এসব ত্রাণকর্তাদের যদি সুরক্ষিত করা না হয় তাহলে জনগণ না খেয়ে মরবে। যেমনটা বলা হচ্ছে, বেক্সিমকো দেশের মুদ্রার রিজার্ভ সংকট দূর করবে কিংবা ৬০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। পূঁজিবাদী অর্থনীতির ভাষায় এই পদ্ধতিকে তারা সাপ্লাই-সাইড ইকোনমি কিংবা ট্রিকল-ডাউন ইকোনমি বলে। অর্থ্যাৎ বড় কোম্পানিগুলোর মুনাফার সাপ্লাই অত্যাধিক হলে তা থেকে কিছু অর্থ চুইয়ে চুইয়ে রিজিক অন্বেষণকারী লোকদের (সাধারণ জনগণ) কাছে যাবে পারশ্রমিক হিসেবে। আর এভাবে মনিব (বড় কোম্পানি) টিকে থাকলে ভৃত্যও (সাধারণ জনগণ) টিকে থাকবে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যবস্থার সকল আইন মনিবের স্বার্থে পরিবর্তন হতে বাধ্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে জনগণের অর্থের ভক্ষণকারী কিভাবে জনগণের ত্রাণকর্তা হতে পারে অর্থ্যাৎ যে কোম্পানি নিজেই ঋণ-খেলাপি (জনগণের টাকা নিয়ে ফেরত দেয়নি) সে কোম্পানি কিভাবে দেশ ও জনগণের সংকট নিরসন করে? প্রকৃতসত্য হচ্ছে, দেশের সংকট দূর করার জন্য নয় বরং দেশে সংকট আছে এই যুক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনগণের সম্পদকে শুধুমাত্র একটা বিশেষ ব্যবসায়িক শ্রেণীর কাছে তুলে দেওয়ার জন্য বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এমতাবস্তায়, ইসলামকে ফিরিয়ে এনে আমরা যদি ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে জনগণের সম্পদকে সুরক্ষিত না করি তাহলে অচিরেই এসব কোম্পানি জনগণকে পথে বসিয়ে দিয়ে হলেও দেশে বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে নিজেদের মুনাফার সাম্রাজ্য গড়তে থাকবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তোমরা পরস্পর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার জন্য তা বিচারকদের কাছে পেশ করো না” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“বিটিআই কীটনাশক আমদানিতে জালিয়াতি: শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে সিটি করপোরেশন”
খবরঃ
মশার লার্ভা নিধনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমদানি করা বিটিআই কীটনাশক নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে। এই কীটনাশক সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল লিমিটেডের প্রস্তুত করা বলে দাবি করলেও সেটা সত্য নয় বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এদিকে গত ৭ আগস্ট গুলশান-২ নম্বরের ৪৭ নম্বর সড়ক এলাকায় মেয়র আতিকুরের উপস্থিতিতে মশানিধনে বিটিআইয়ের প্রয়োগ শুরু করে ঢাকা উত্তর সিটি। সেখানে লি শিয়াং নামের একজনকে বেস্ট কেমিক্যালের রপ্তানি ম্যানেজার ও বিটিআই বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। অথচ সিঙ্গাপুরের বেস্ট কেমিক্যাল জানিয়েছে এই ব্যক্তি তাদের কর্মী নয়। (www.youtube.com/watch?v=lS410jW-6_8)
মন্তব্যঃ
শত শত ও বিশাল সব দুর্নীতির ভিড়ে এই সামান্য দুর্নীতি আমাদেরকে এখন আর আগের মত বিক্ষুব্ধ করে না। আমাদের এই গাঁ সওয়া মনোভাবের কারণেই দেশের দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করেছে ও বিশাল সব দুর্নীতি করার স্পর্ধা দেখাতে পারছে। ভুয়া বিটিআই আমদানির খবর বেরিয়ে পরার কারণে এই দুষ্কর্মের সহযোগী ব্যবসায়ীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সাধু সাঁজার চেষ্টা করছে মেয়র আতিকুর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। মূলত: দেশের বিদ্যমান আল্লাহ্দ্রোহী শাসনব্যবস্থার (যা সেকুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামে পরিচিত) তৈরী শাসকগোষ্ঠী হল মিথ্যুকরোগে আক্রান্ত (pathological liar) যারা মিথ্যা ছাড়া কথাই বলতে পারে না এবং একাজে লজ্জা হওয়াতো দূরে থাক ক্রমাগত মিথ্যা বলে ও জনগণকে ধোঁকা দিয়ে তারা চরম পুলক অনুভব করে। মেয়র আতিকুর বলেছে, “আমরা এতকিছু করছি, এরপরও মশা কেন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না তা আমরাও জানি না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়েছি”। অথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডিএনসিসি’র ৫,২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেটের মধ্যে মশা নিধনে সে বরাদ্দ দিয়েছে মাত্র ১২২ কোটি টাকা! (প্রথম আলো, ২৪ জুলাই ২০২৩)। আর এই টাকাও যে কিভাবে ব্যয় হয় তার নমুনা হল তার এই ভুয়া বিটিআই আমদানি এবং বস্তি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৫ লাখ টাকায় কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বপরিবারে তার আমোদফুর্তি (কালবেলা, ৩ আগস্ট, ২০২৩)।
এই শাসনব্যবস্থার কিছু কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থ হলেও এখনো অনেক সৎ ও ভাল রাজনীতিবিদ রয়েছে, এই কথা বলে মূলত: আসল সত্যকে আড়াল করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার কাঠামো বা ডিজাইনটিই জনগণের স্বার্থবিরোধী যেখানে দুর্নীতি ও লুটপাট হল এই শাসনব্যবস্থার মূল জীবনীশক্তি। ঢাকায় দুটি সিটি করোপরেশন তৈরী, নতুন নতুন শহরকে সিটি করোপরেশন ঘোষণা, মন্ত্রনালয়ের সংখ্যা বাড়াতে বাড়াতে ৪০টিতে নেওয়া, সংসদের নির্ধারিত আসন সংখ্যা ইত্যাদি সবকিছুই করা হয়েছে সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ নামধারী দুর্বৃত্তদেরকে পদায়ন ও পুরষ্কৃত করার জন্য। এদেরকে ক্ষমতা, গাড়ি-বাড়ি, পাইক-পেয়াদার স্বাদ আস্বাদন করানোর জন্যই এই শাসনকাঠামো তৈরী করা হয়েছে যা জনগণের অর্থ আইনগত ও আইনবহির্ভূত সবভাবেই লুটপাট করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এই দুর্নীতি ও লুটপাট দিন দিন তার পরিধি বাড়িয়েই চলেছে; আগে গুটিকয়েক লোক বড় মাপের লুটপাট করত আর এখন রাজনীতির পিরামিডের সবনিম্নে অবস্থানকারীরাও হাজার কোটি টাকা লুট করছে, এমনকি পবিত্র কোরআন ছাপানোর অর্থও লুটে নিচ্ছে তারা। আল্লাহদ্রোহী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাকে যতই সময় ও সুযোগ দেওয়া হবে ততই আরো সর্বগ্রাসী হয়ে উঠবে এবং জনগণের জীবনকে আরো সঙ্কটময় করে তুলবে। “আর যারাই আমার নির্দেশনার অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের জীবন-জীবিকা হবে সঙ্কীর্ণ ও সঙ্কটময় এবং কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব” (সূরা ত্ব-হা: ১২৪)।
- রিসাত আহমেদ
“জনগণ খারাপ অবস্থায়, কিন্তু বুদ্ধিজীবিরা ভূমিকা রাখছেন না”
খবরঃ
… ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা: চিন্তক-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে রাষ্ট্রচিন্তা। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জনগণ খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা তাদের ভূমিকা রাখছেন না। … ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—এ দুই বিষয়ে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, চিন্তক, সাংবাদিকসহ সবার ঐকমত্য থাকতে হবে বলে মনে করেন সাহিত্যিক ও সম্পাদক রাখাল রাহা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র যে মতাদর্শ ও চিন্তাধারায় পরিচালিত হোক না কেন, আমাদের এ দুই জিনিস লাগবে। এ দুই জিনিস যদি না থাকে, তাহলে আজ যদি শিক্ষায় সর্বনাশ করে, স্বাস্থ্যে সর্বনাশ করে, আদালতে সর্বনাশ করে—কোথাও আমরা কিছু করতে পারব না, বলতে পারব না।’… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/9u6fjr6zgx)
মন্তব্যঃ
বুদ্ধিজীবীগণের জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা অবশ্যই পালন করা উচিত, কিন্তু সেটা যদি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কাছ থেকে ধার করা দৃষ্টিভঙ্গি ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র ভিত্তিতে হয়, সেটা অবশ্যই বর্জনীয়। কারণ এই পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর উৎপত্তি হয়েছে চার্চ ও রাজাদের নির্যাতনের ফলে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ। তাদের ওপর যখন স্কাফিজম, ইনকুইজিশন, পিল্লোরি, হোলো মেটাল বুল, কাঁটাযুক্ত চেয়ার, পানিতে ডুবিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে কিংবা বিষ প্রয়োগে হত্যার মত অবর্ণনীয় জুলুম করা হত, তখন এর থেকে বাঁচার জন্য তারা সৃষ্টিকর্তা কিংবা রাজাদেরকে বাদ দিয়ে আইন ও বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা জনগণের তথাকথিত প্রতিনিধির হাতে তুলে দেওয়াটাই সমাধান মনে করতে থাকে। এই কারণে তাদের আদর্শে গণতন্ত্র তথা ভোটাধিকার প্রয়োগ ও মত প্রকাশের অবাস্তব স্বাধীনতাকে মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু এখানেই বাঁধে বিপত্তি! এখানে যে তথাকথিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার নামে বিধান ও আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে এবং এই প্রতিনিধিরা নিজেদের খেয়াল খুশি অনুযায়ী জনগণকে শাসনের নামে জুলুম করছে! অবশেষে নতুন বোতলে পুরান মদের মতই জুলুম ফেরত এসেছে, শুধুমাত্র বোতলের লেভেলে ‘রাজা’ ও ‘গির্জা’ এর বদলে ‘মেম্বার অফ পার্লামেন্ট (এমপি)’ ও ‘পুঁজিপতি’ শব্দের পরিবর্তন এসেছে। এই ‘মেম্বার অফ পার্লামেন্ট’ রূপী ‘রাজা’ ও ‘পাদ্রী’রা আগের মতই কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি জুলুম করছে বর্তমানে। গণতন্ত্রের বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তিন কোটি মানুষের হত্যাযজ্ঞ, গোয়ান্তানামো বে, আবু গারিব ও বাগরাম কারাগারগুলোতে নির্যাতনসহ অন্য সকল অন্যায় কাজের নির্মম সাক্ষ্য বহন করে। আর বাংলাদেশের মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের অণুচর ‘শেখ হাসিনা’ কিংবা তার পূর্ববর্তী শাসকেরাও এখানে গুম, খুন ও জুলুম-নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের অন্যায় কাজের অনুসরণে নিষ্ঠা প্রদর্শন করছে।
তাই, যে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র মাধ্যমে ‘মেম্বার অফ পার্লামেন্ট’দের নিকট সার্বভৌম ক্ষমতা তুলে দেওয়াটাই হলো বর্তমানের সকল জুলুমের মূল কারণ, সেগুলোকে ভিত্তি বানিয়ে কিভাবে শেখ হাসিনার জুলুম থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে। আর এগুলোর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য বুদ্ধিজীবীদেরকে আহ্বান করা তো নিতান্তই মূর্খজীবিত্ব, কখনোই বুদ্ধিজীবীত্ব নয়। কারণ ১৭৫৭ সালে উপনিবেশবাদী বৃটেনের কবলে পরার আগ পর্যন্ত এখানে ছিল ইসলামের ন্যায়ের শাসন এবং প্রশান্তিময় এক ইতিহাস। এই শাসনব্যবস্থার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক কোন মানুষ নন, কোন মানুষ এখানে বিধান প্রণয়ন করতে পারে না, স্বয়ং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এখানে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। এই শাসনব্যবস্থার অধীনে গোলা ভরা ধান, গোয়ালভরা গাভী এবং পুকুর ভরা মাছ এই অঞ্চলের সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের ইতিহাস পশ্চিমাদের ন্যায় জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার ইতিহাস নয়। ৩ টাকায় গরু ও টাকায় ৮ মন চাল এখানে সুখ স্বাচ্ছন্দের ইতিহাসের প্রমাণ। সুলতান আলমগীর কিংবা গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ-এর ন্যায়-বিচারের কাহিনী এখনো মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে। তাই বিশ্ব জালেম পশ্চিমাদের থেকে ধার করার জীবনব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’, ‘স্বৈরতন্ত্র’ কিংবা ‘রাজতন্ত্র’ থেকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে তাদের দেওয়া সমাধান ‘গণতন্ত্র’ বাস্তবায়নে কিভাবে আমাদের মুক্তি আসবে, যেখানে আমরা এর তুলনায় বহুগুণ শ্রেষ্ঠ খিলাফতের মধ্যে নিকট অতীতেই সুখে শান্তিতে ছিলাম? একারণে আমাদের অবশ্যই পূর্বের ন্যায় খিলাফত ব্যবস্থায় ফেরত যেতে হবে। সেটাকে বরং আরো দৃঢ়ভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এবং খিলাফতে রাশেদাহ্’র ন্যায় বাস্তবায়ন করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “…এরপর আসবে জুলুমের শাসন, তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন। তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন, অতঃপর আবার ফিরে আসবে খিলাফত, নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহ্মদ)।
- মো: জহিরুল ইসলাম
“কর্মসংস্থান নিয়ে জটিলতায় হাজারো কওমি আলেম”
খবরঃ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সর্বাধিক পছন্দের পেশা শিক্ষকতা। ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার কাজে লেগে থাকাকে ‘সবচেয়ে মহান পেশা’ মনে করেন তারা। সম্প্রতি এই পেশা থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশ। হাজারো তরুণ আলেম যুক্ত হচ্ছেন অন্যান্য পেশায়। এতে করে তাদের পড়তে হচ্ছে নানা জটিলতায়ও। কওমি থেকে পাস করা এই শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে খাপ খাওয়াতে নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। আলেমরা বলছেন, মাস্টার্স সমমান সনদ থাকলেও অংশ নিতে পারছে না কোনও সরকারি পরীক্ষায়। ইচ্ছে হলেই উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরের কোনও দেশে যেতে পারছেন না। ফলে তাদের মসজিদ-মাদ্রাসার বাইরের কর্মস্থানে পা বাড়াতে হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং, ব্যবসা, চাকরি, চাষাবাদের মতো পেশাকেও বেছে নিচ্ছেন অনেক তরুণ। কিন্তু মাদ্রাসার বর্তমান সিলেবাসে পড়াশোনা করে তারা বাইরে গিয়েও তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না। পেলেও এমন কাজে সুযোগ পাচ্ছেন, এত কম বেতন, যা মানানসই নয়। (www.banglatribune.com/others/religion/813038)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের কওমি ঘরানার মাদ্রাসাগুলোর জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এরা রাষ্ট্রের প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে সম্পূর্ণ আলাদা একটি শিক্ষাব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা মুসলিমরা অনুভব করলেও যেহেতু বর্তমান সেক্যুলার ব্যবস্থার রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় এর কোন অবদান নেই সেহেতু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কোন আবেদনও নেই। ফলে বর্তমানে শিক্ষার এই ক্ষেত্রটি যে অবহেলিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্যুলার ব্যবস্থায় কওমী শিক্ষার স্বীকৃতি চাওয়া আম গাছ থেকে কাঠাল আশা করার মতই দুরাশা। কারণ সেক্যুলার ব্যবস্থায় ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা হয়েছে সচেতনভাবে। শুধু ব্যক্তিগত কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি বাদে জীবনের কোন ক্ষেত্রেই যেন ধর্মের অনুপ্রবেশ না ঘটে সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে সুচারুভাবে। তাই বাংলাদেশের আলেমরা যদি মনে করেন যে, দাওরা হাদীসকে মাস্টার্সের সমমান দিলেই তারা রাষ্ট্রের মেইনস্ট্রিমে প্রবেশ করতে পারবেন তা নিতান্তই ভুল ধারণা। সেক্যুলার রাষ্ট্র কখনোই ধর্মকে তার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দিবে না। সুতরাং এই ব্যবস্থায় আলেমদের সম্মান ও জীবিকা দুটোই ভূলুণ্ঠিত হবে।
আলেমরা যদি সত্যিকার অর্থেই তাদের হারানো সম্মান ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ফিরে পেতে চায় তাহলে তা প্রত্যাশা করার একমাত্র স্থান হচ্ছে খিলাফত রাষ্ট্র। সেই রাষ্ট্রের জন্যই তাদের কাজ করতে হবে। কারণ আলেমরা যে জ্ঞান অর্জন করছেন সেই একই জ্ঞান ও আদর্শ অর্থাৎ ইসলাম দিয়েই খিলাফত রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। খিলাফত রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা, পররাষ্ট্র নীতি- সবকিছুই পরিচালিত হবে ইসলামের আদর্শের ভিত্তিতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এসকল বিষয়ের জ্ঞানকে রাষ্ট্র পরিচালনায় বাস্তবিকভাবে প্রয়োগের জন্য খলিফাকে অসংখ্য আলেমের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই প্রচুর মুজতাহিদ (ফিকাহ্ শাস্ত্রের সর্বোচ্চ পণ্ডিত যিনি কুর‘আন-সুন্নাহ্ হতে আল্লাহ্’র হুকুমকে বের করে আনতে সক্ষম) প্রয়োজন হবে। তাছাড়া যেহেতু খিলাফত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ভাষা হচ্ছে আরবি সেক্ষেত্রেও আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ তৈরী হবে। মূলত খিলাফত ব্যবস্থায় আলেমরা হবেন জাতির শিক্ষক যেমনটি ছিলেন ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক ইবনে আনাস, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ-শফিয়ি, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এবং অন্যান্যরা। সুতরাং আলেমদের উচিত বর্তমান সেক্যুলার ব্যবস্থা কর্তৃক বেঁধে দেওয়া মসজিদ আর মাদ্রাসার গন্ডি থেকে বের হয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল-এর সেই আহ্বানে সাড়া দাও যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে" (সুরা আনফাল-২৪)।
- তাহসিন মাহবুব
“ঢাকার হারিয়ে যাওয়া দুই নদ কনাই ও পাইনার”
খবরঃ
স্বাধীনতার পরও রাজধানীর উত্তরের টঙ্গী খাল থেকে শুরু হয়ে তুরাগ নদ পর্যন্ত বহমান ছিল কনাই নদ। গত চার দশকে ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়েছে নদটি। মূলত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আবাসন প্রকল্পগুলোই নদটি বিলুপ্ত হওয়ার কারণ বলে দাবি গবেষকদের। একই সময়ে রাজধানী থেকে বিলীন হয়েছে আরো একটি নদ। যার নাম ছিল পাইনার। বুড়িগঙ্গা থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও কলাতিয়া ইউনিয়ন হয়ে ধলেশ্বরী নদীতে মিলেছিল এ নদ। অপরিকল্পিত আবাসন ও উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ধীরে ধীরে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে পাইনার নদও। (bonikbarta.net/home/news_description/351065/ঢাকার-হারিয়ে-যাওয়া-দুই-নদ-কনাই-ও-পাইনার)
মন্তব্যঃ
এই নদী দখলদারদের তালিকার মধ্যে বৃহৎ শিল্পগ্রুপ থেকে শুরু করে শাসকগোষ্ঠীর স্থানীয় পাতি রাজনৈতিক নেতা এমনকি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এ যেন মিলেমিশে নদী ভাগ করার মহাউৎসব! এসকল দস্যুদের কাছে নদ-নদীর বিশেষ কোন মর্যাদা নাই। যদিও নদ-নদীকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয় একটি সমৃদ্ধ জনপথ। নদী মানুষের সুপেয় পানি, খাদ্যের যোগান, টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা, এবং জীব বৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত। শুধুমাত্র নদ-নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে একটি সমৃদ্ধ জনপথ ধ্বংস হয়ে পরিণত হয় পরিত্যাক্ত জনপথে। যেখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল এসকল দখলদারদের কবল থেকে নদীকে রক্ষা করা, কিন্তু তা না করে তারা তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে উল্টো নদী দখল করছে, এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে নদী দখলদারদের সুরক্ষা দেয়ার মত জঘন্য কাজও করে যাচ্ছে। বিপুল পরিমাণ (২৯ কোটি) অর্থ ব্যয় করে নদীর দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হলেও প্রভাবশালী নদীর দখলদারদের স্বার্থে সরকার এই তালিকা প্রকাশ করে নাই (www.prothomalo.com/bangladesh/1tad99evzc) । নদীসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো দখল হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টির কারণে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্বাভাবিক জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে, যার ভয়াবহতা আমরা ইতিমধ্যে অবলোকন করেছি। পুঁজিপতিদের স্বার্থে নদী দখল করে জীব-বৈচিত্র্য এবং জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া শুধুমাত্র এই দেশের ঘটনা নয় বরং বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোতেও একই চিত্র দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুঁজিপতিরা নদীকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনকে বিপদসঙ্কুল করছে (www.theguardian.com/us-news/2022/nov/04/push-to-dismantle-dams-us-rivers-environmentalists )। সুতরাং, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজিপতি এবং শাসকদের দুষ্ট চক্রের হাত থেকে নদ-নদীকে রক্ষা করা চিন্তা একটি আকাশ কুসুম চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ইসলামে নদী একটি গণমালিকানাধীন সম্পদ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “আগুন, পানি এবং চারণভূমি এই তিনটি জিনিসের মালিকানা জনগণের” (মুসনাদে আহমদ)। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের এই প্রকারের সম্পদ থেকে সুবিধা ভোগ করার অধিকার রয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষ এমনকি রাষ্ট্রেরও এই প্রকারের সম্পদ থেকে জনগণের সুবিধা পাওয়ার সুযোগকে সীমিত করার অধিকার নাই। তাই খিলাফতের ১৩০০ বছরের ইতিহাসে কোন গোষ্ঠী বা রাষ্ট্র কর্তৃক নদীর ধ্বংসের উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনার তথ্য পাওয়া যায় না। বরং, রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে একটি উন্নত নদী ব্যবস্থাপনা চিত্র দেখা যায়। খিলাফত রাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইসলামের নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদীর সুবিধা রাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নাগরিকদের নিকট পৌঁছে দিতে সচেষ্ট ছিল। ইতিহাসের পাতায় তার অসংখ্য উদাহরণ বিদ্যমান। যেমন, আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে নদীগুলোর সুবিধা রাষ্ট্র নাগরিকদের নিকট পৌঁছে দিতে বহুমূখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস, দজলাসহ খিলাফতের প্রধান নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য অসংখ্য বাঁধ, খাল নির্মান করা হয়। এই সকল স্থাপনা নির্মানের ফলে রাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ সারা বছর যেমন সুপেয় পানির সুবিধা পেতো তেমনি নদীগুলোর প্রবাহও ঠিক থাকতো। খিলাফত রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত ইসলামের নদী সংক্রান্ত নীতিসমূহ বাস্তবায়নের ফলে সেই সময়ের জনপথগুলো হয়েছিল উন্নত ও সমৃদ্ধ।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“সাঈদীকে নিয়ে প্রবাসী ছেলের লেখালেখি, খুলনায় মা গ্রেপ্তার”
খবরঃ
বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণারত তানজিলুর রহমানের অভিযোগ, তিনি সাঈদীর জানাজায় সুখরঞ্জন বালীর উপস্থিতি নিয়ে ফেসবুকে লেখেন। এরপর গত রোববার দুপুরে তার নানাবাড়িতে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা পুলিশ নিয়ে হাজির হয়ে তাণ্ডব চালায় ও লুটপাট করে। দুটি ল্যাপটপ ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। তার ছোট মামা সিদ্দিক শহীদকে বেদম মারধর করে। তার মা আনিছা সিদ্দিকা প্রতিবাদ জানানোয় তাকে খালিশপুর থানায় ধরে নিয়ে যায়। দু’জন ভাড়াটিয়া এগিয়ে আসায় তাদেরও সঙ্গে নিয়ে গেছে। (https://samakal.com/politics/article/2308191290/)
মন্তব্যঃ
নিরপরাধ একজন মুসলিম নারী এবং এক মায়ের প্রতি এমন অন্যায় আচরণ আবারও প্রমাণ করলো যে, এই শাসকগোষ্ঠীর জুলুম ইসলাম পূর্ববর্তী আইয়ামে জাহিলিয়ার বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। সেই সময়ের শাসকগোষ্ঠীর জুলুমের মধ্যেও কিছুটা নীতি এবং লজ্জার উপস্থিতি ছিল, কিন্তু এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে এর কোনটাই আর অবশিষ্ট নাই। তখন একজনের অপরাধের জন্য আরেকজনকে শাস্তি দেয়া হতো না, কিংবা রাতের বেলায় দরজা ভেঙ্গে কারো ঘরে প্রবেশ করা হতো না বরং ভোর না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হতো। আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হিজরতের সময় কুরাইশরা তাঁকে (সাঃ) হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ঘরের বাইরে অপেক্ষমান ছিল এবং ভোর হওয়ার পর যখন আলী (রা.)-কে তাঁর বদলে শয়নকক্ষে পেল কিন্তু তারা তাকে হত্যা করেনি। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর এরকম বর্বর ঘটনা যে এটাই প্রথম তা নয় তারা এটা নিয়মিতই করছে। বিশেষত, ইসলামের রাজনীতিকে দমন করতে ইসলামের রাজনৈতিক কর্মীদের ঘরে নির্লজ্জের মতো তাণ্ডব চালানো থেকে শুরু করে নিরপরাধ মুসলিম নারী, সম্মানিত মা-বোনদের হাতে হাতকড়া পরাতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তাদের এসব নির্লজ্জ অপরাধকে জায়েজ করে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের কাছ থেকে ধার করা দর্শন দিয়ে। ইউরোপের মধ্যযুগীয় কালো ইতিহাসের বাস্তবতায় ধর্মকে একটি খারাপ বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করে পশ্চিমারা সমাজে, রাষ্ট্রে ধর্মকে আনার চেষ্টাকে প্রগতি ও আলোর পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে। কারণ তারা রাজা ও চার্চ কর্তৃক ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিষিকাময় অত্যাচারের অভিজ্ঞতাকে ভুলতে পারে না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, একই সময়ে মুসলিমরা ইসলামী জীবনাদর্শের শাসন তথা খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে ন্যায়ের শাসন ও প্রগতির চরম উৎকর্ষতা অর্জন করেছিল। পশ্চিমারা তাদের প্রতিক্রিয়াশীলভাবে গৃহিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাঁচিয়ে রাখতে বিশ্বজুড়ে ইসলামের উত্থান ঠেকাতে মুসলিমদের দমনে এমনসব ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত নাই যা স্থাপন করে নাই, যা তাদের মধ্যযুগের রাজা ও যাজকশ্রেণীর বর্বরতাকেও হার মানায়। আবু গারিব, গোয়ান্তানামে বে, বাগ্রাম কারাগার যার কিছু উদাহরণ মাত্র। আর এই ধরণের অপকর্মেরই এক্সটেনশন এখন করছে মুসলিমদেশগুলোর ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী, যারা নিজেরা পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা প্রশিক্ষিত, নিজেদের দলকেও এই আদর্শ দিয়ে তৈরি করেছে এবং দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীকেও পশ্চিমাদের এই চিন্তা দ্বারা প্রশিক্ষণ করিয়েছে।
ইসলাম শাসকদেরকে জালেম হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ্ ভীতি এবং মুসলিম জনগণ কর্তৃক শাসককে জবাবদিহি করার শারীআহ্ বাধ্যবাধকতার কারণে কোন শাসক চাইলেও এমন জালেমে পরিণত হতে পারবে না। কারণ ইসলাম এমন এক আলো যা মানুষকে অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে। ইতিহাসে অত্যাচারী হিসেবে তুলে ধরা হয় এমন শাসকের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ পাওয়া যায় যে কিভাবে ইসলাম তাকে অত্যাচারী হওয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে। যেমন সুলাইক ইবনে সালকাহ নামে এক ব্যক্তি একবার হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের দরবারে এসে অভিযোগ করে যে মূলত তার এক ভাইয়ের অপরাধের কারণে তাকে অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তার বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং তার ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাজ্জাজ তাকে এক কবির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে কখনো কখনো যেমন পাঁচড়াযুক্ত উটের কারণে সুস্থ সবল উটও আক্রান্ত হতে পারে তেমনই আত্মীয় হওয়ার কারণে নিরপরাধ ব্যক্তিও পাকড়াও হতে পারে! তখন সুলাইক সূরা ইউসুফের ৭৮-৭৯ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বললো বরং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এটার বিপরীত কথা বলেন। [……তিনি (ইউসুফ) বললেন- যার কাছে আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা থেকে আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন]। হাজ্জাজ সাথে সাথে বললেন, “আল্লাহ্ সত্য বলেছেন, কবি মিথ্যা বলেছে”। অতঃপর তিনি অনতিবিলম্বে সুলাইককে অপরাধীর তালিকা থেকে বাদ দিলেন, ভাতা চালু করলেন এবং ঘর মেরামত করে দিলেন।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“শরীয়তপুরে ৫ হাজার টাকার মামলায় অজ্ঞান চালক”
খবরঃ
শরীয়তপুরে পাঁচ হাজার টাকা মামলা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন এক মোটরসাইকেলচালক। পৌরসভার মনোহর বাজার মোড় এলাকায় সোমবার এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মো. নেছার উদ্দিন জমাদ্দার শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মাছুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, নেছার উদ্দিন ঘটনার দিন বিকালে শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে গোসাইরহাটের দিকে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলে তিনজন যাত্রী থাকায় পৌরসভার মনোহর বাজার মোড়ে তাকে দাঁড় করান টিএসআই ফজলুল করিম। দেখতে চান কাগজপত্র। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও নেছার উদ্দিনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল। তাই টিএসআই ফজলুল করিম তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার টাকার অংক দেখে নেছার উদ্দিন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে সঙ্গে থাকা দুই যাত্রী তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। নেছার উদ্দিন বলেন, গরিব মানুষ, ভাড়ায় গাড়ি চালাই। এতো টাকা কোথা থেকে দেব, এই চিন্তায় অজ্ঞান হয়ে যাই। (www.jugantor.com/todays-paper/bangla-face/709852)
মন্তব্যঃ
সাধারণ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করলেও শাসকশ্রেণীর জোঁকের মত রক্তচোষা বন্ধ হয়নি। তারা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় প্রকারেই মানুষদেরকে বাধ্য করছে কষ্টার্জিত অর্থ তাদের হাতে তুলে দিতে। আয়কর, ভ্যাট, অন্যান্য বাহারি ট্যাক্স, বিভিন্নরকম টোল, ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক জুলুমের পাশাপাশি যোগ হয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অনানুষ্ঠানিক চাঁদাবাজি। অটোরিক্সা, বাস, ট্রাক, সিএনজি, মটরসাইকেল – ইত্যাদি সবকিছু চালাতেই সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অনুমোদন বাধ্যতামুলক। ফলে, একজন সাধারণ মানুষ যা আয় করে তার বেশিরভাগই চলে যায় সরকার আর তার পেটোয়া বাহিনীর পেটে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী বাজার হাইজ্যাক করে তাদের লুটপাটকে জারি রেখে জনগণকে আরেক দফা বিপদে ফেলে। ডিমের বাজার, ব্রয়লার মুরগীর বাজার, সয়াবিন তেলের বাজার – ইত্যাদিকে অস্থির করে তুলে পুঁজিপতিরা তাদের মুনাফাকে বহুগুণে ঘরে তোলে। মূলত শাসকশ্রেণী, তাদের সাপোর্ট স্টাফ আর পুঁজিপতিরা একত্রে পুঁজিবাদী শোষণের বাস্তুসংস্থানকে টিকিয়ে রাখে যেখানে সাধারণ মানুষ হচ্ছে শোষণের বিষয়বস্তু।
সাধারণ মানুষের অবস্থা যতটাই বেগতিক হোক না কেন এই শোষকগোষ্ঠী কিন্তু তাদের শোষণের কার্যক্রম বন্ধ করবে না। বরং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। তারা তাদের কাজ ঠিকই করে যাবে। কারণ তারা তাদের ক্ষমতাকে জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতা পালনের উপলক্ষ হিসেবে দেখে না বরং লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে দেখে। সেক্যুলার-পুজিবাদী ব্যবস্থায় এর থেকে বেশী কিছু কিইবা আশা করা যায়! পক্ষান্তরে একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা খিলাফত ব্যবস্থার শাসক অর্থাৎ খলীফাদের কাছ থেকেই কেবলমাত্র দায়িত্বশীলতার আশা করা যেতে পারে। কারণ আল্লাহ্’র প্রতি তাদের আনুগত্য ও তাকওয়া তাদেরকে জনগণমুখী করে তোলে এবং জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালনে তারা সচেষ্ট থাকেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।”
তাই আমরা দেখতে পাই ইসলামের ইতিহাসে খলিফাগণ শুধুমাত্র মানুষের প্রয়োজন পূরণেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। উপরন্তু বনের পশু-পাখি কিংবা কুকুরের মত প্রাণিদের ব্যাপারেও সতর্ক ছিলেন। খলিফা উমার ইবনে আবদুল আজিজ বলেছিলেন, ‘পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পাখিদের জন্য খাদ্য ছিটিয়ে দাও। মুসলিম শাসনের অধীনে একটি পাখিও যেন না খেয়ে মারা না যায়।’ খলীফা উমার (রা.) মদীনার দুর্ভিক্ষের সময় বলেছিলেন, “আজ যদি ফোরাতের তীরে একটা কুকুর না খেতে পেয়ে মারা যায়, তবে তার জন্য আমি উমর আল্লাহ্’র কাছে দায়ী থাকব।” মূলত এরকমই ছিল খিলাফতের শাসকগণ। জনগণের প্রতি এরা ছিলেন সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল। সুতরাং এখন সময়ের দাবি বর্তমান সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দায়িত্বহীন শাসকদেরকে অপসারণ করে খিলাফত ব্যবস্থার আনয়ন করা।
- মো. হাফিজুর রহমান