Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১০১ তম সংখ্যা । ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার চায় এনবিআর”
“ব্রিকসে যোগ দিতে ছয় দেশকে আমন্ত্রণ, ডাক পায়নি বাংলাদেশ”
“প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশকে ওএসএতে যুক্ত করেছে জাপান”
“বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক রাতেই আ.লীগকে শেষ করে দেবে: কাদের”
“চাঁদে পা রেখে ইতিহাস গড়ল ভারতের চন্দ্রযান-৩”
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে গুলিতে ৪,৭৫২ শিশু নিহত”
“করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার চায় এনবিআর”
খবরঃ
কর ফাঁকি রোধ করার লক্ষ্যে একটি সংহতিমূলক উদ্যোগের আওতায়– বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে করদাতাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্যে সরাসরি প্রবেশাধিকার চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।... কোম্পানী আইনের বিশিষ্ট আইনজীবী তানজীব-উল আলম বলেন, ‘বর্তমানে কাস্টমস ও ভ্যাট আইনে কর আদায়ের লক্ষ্যে এনবিআরকে এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। এখনকার আইনে রাজস্ব বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া আছে। তাই একসময় ব্যাংকের যে গোপনীয়তা ছিল, তা আর নেই’। এনবিআরের তথ্য বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জিডিপিতে রাজস্বের অবদান (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) না বেড়ে উল্টো কমতির দিকে,... অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে এই অনুপাত ১২.৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এসব লক্ষ্য অর্জনে সক্রিয়ভাবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন করছে এনবিআর। (https://www.tbsnews.net/bangla/অর্থনীতি/news-details-164782)
মন্তব্যঃ
আইএমএফের দেয়া অন্যতম শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশকে তার ঋণ পেতে কর-জিডিপির অনুপাত (করের মাধ্যমে রাজস্ব অর্জনের পরিমাণ) বাড়াতে হবে (সূত্রঃ শর্ত পূরণে আগামী বছরেই অতিরিক্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে হবে)। তাই সরকার এখন মরিয়া হয়ে একদিকে যেমন জনগণের উপর নানাভাবে করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে (সূত্রঃ টিন থাকলেই দিতে হবে ২০০০ টাকা আয়কর); অন্যদিকে, কর দাতার পরিমাণ বাড়াতে নানাবিধ আইন বানাচ্ছে (শুধু টিআইএন নয়, করদাতা বাড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর)। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১৬.১৪ লাখ কোটি টাকা। মাথাপিছু হিসেবে যা ৯৫ হাজার ১৯ টাকা, জিডিপির অনুপাতে যা ৪২.১ শতাংশ। এবং এটি ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার যদি এই মুহূর্ত থেকে যেকোন ধরণের ঋণ নেওয়া বন্ধ করে তাহলেও বর্তমান ঋণ শোধ করতেই ২০৬২ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে। এমতাবস্থায়, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভর অর্থনীতির বিপরীতে ডলার রিজার্ভ সংকট থাকায় সরকার না পারছে ভালোভাবে ঋণ পরিশোধ করতে, না পারছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাকা ঠিকভাবে সচল রাখতে। এই দূরাবস্থায় সুদ-ভিত্তিক ঋণের বেড়াজালে আটকিয়ে যাওয়া মানুষকে আরও নিঃস্ব করতে সরকার দ্বারস্থ হয়েছে নব্য-সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিষ্ঠান আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে নতুন করে ঋণ পাওয়ার আশায়। যা কিনা দেশের অর্থনীতিকে আরো পঙ্গু করে দেওয়ার পদক্ষেপ। কেননা, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঋণের ক্ষেত্রে টাকার অংক যত না বড় হয় তার চেয়ে বেশি বড় হয় ঋণ দেওয়ার শর্ত। যে শর্তগুলো দিয়ে তারা মূলত একটি দেশের অর্থনীতির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে যাতে তারা আর কখনো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে। পৃথিবীর ইতিহাসেও এমন নজীর নেই যে আইএমএফ এর ঋণ নিয়ে কোন দেশ উন্নত হয়েছে।
এখন, আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত আর কত আইন পাস হলে আমরা বুঝবো এইবার আমাদের ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে? একদিকে যেখানে প্রতিনিয়ত দ্রব্যমূল্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র, মৌলিক চাহিদা পূরণে আমরা হিমশিম খাচ্ছি, তার উপর আবার সেখানে ইনকাম না থাকাও স্বত্ত্বে কর দিয়ে ঋণ আর সুদের টাকা পরিশোধ করার জন্যই কি সাধারণ জনগণের বেঁচে থাকা! আমরাতো দেখছি সরকার দেশের বড় বড় পূঁজির কোম্পানীকে কর প্রধানে ছাড় দিচ্ছে। বিদেশী কোম্পানীকে কর ছাড় দিচ্ছে। তাহলে, এই দায় কি শুধু জনগণের? ইসলামতো সুদে ঋণ নেওয়াকে হারাম করেছে। ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট, জেনেরাল সার্ভিস ট্যাক্সের মত কর আদায় করাকে হারাম করেছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “কর আদায়কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (আহমদ)। তাহলে, কেন আমরা এই দায় নিবো? যদি আমরা এই দায় নিতে না চাই তাহলে অচিরেই আমাদেরকে পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইসলামিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“ব্রিকসে যোগ দিতে ছয় দেশকে আমন্ত্রণ, ডাক পায়নি বাংলাদেশ”
খবরঃ
সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়াকে নতুন সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিকস জোটে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি টুইটে লিখেছেন, “ব্রিকসের ১৫তম বার্ষিকীতে আমরা এই ফোরামকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারত বরাবরই এই সম্প্রসারণকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে এসেছে। এ ধরণের সম্প্রসারণ ব্রিকসকে আরো শক্তিশালী এবং কার্যকর করবে”। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, "ব্রিকসভূক্ত দেশগুলোর জন্য একটি একক মুদ্রা চালুর বিষয়টি “কঠিন প্রশ্ন” তবে “এ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আমরা সামনে এগিয়ে যাবো”। বাংলাদেশও এই জোটে যোগ দিতে পারে বলে এর আগে আভাস পাওয়া গেলেও নতুন ছয়টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২শে অগাস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যান। এ বছর জুনের মাঝামাঝি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, অগাস্টে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোট -ব্রিকসের সদস্য পদ লাভ করতে পারে। (www.bbc.com/bengali/articles/c16kg9g6rzdo.amp)
মন্তব্যঃ
পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার নাগপাশ থেকে মুক্তির জন্য যখন বিশ্ববাসী ব্যাকুল হয়ে আছে, তখন ব্রিকস-এর মত জোটকে ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অনেকে আশার আলো দেখছে। তাই ব্রিকসে যোগদানের ডাক না পাওয়ার বিষয়টিকে সরকারবিরোধীরা সরকার পূর্ব-পশ্চিম দুই দিক থেকেই প্রত্যাখ্যাত হিসেবে দেখিয়ে মজা পেয়েছে, আর অন্যদিকে সরকারপন্থীরাও আশাহত হয়েছে। নির্বাচনের আগমুহুর্তে সরকার চেয়েছিল ব্রিকসে যোগদানের বিষয়টিকে তার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতাকে উপস্থাপন করতে এবং ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে বর্তমান রিজার্ভ সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও কতিপয় বুদ্ধিজীবিরা চিন্তার দিক থেকে এতটাই দেউলিয়া যে, সমাধানের জন্য হয় পশ্চিমা নির্ভরতা, না হয় পূর্ব নির্ভরতা, এর বাইরে তাদের কাছে আর কিছু নাই। বাস্তবতা হচ্ছে, যদিওবা এই ব্রিকস গঠন করা হয়েছে মূলত পশ্চিমা নির্ভর অর্থনীতি থেকে মুক্তি লাভের আশায় কিন্তু তা পশ্চিমা হেজেমনিকে আদৌ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।
ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো মনে করে, তারা হচ্ছে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক শক্তি। পশ্চিমা নির্ভরতা থেকে মুক্তি লাভের আশায় ব্রিকস বিশেষ করে চীন কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। যেমন, চীন ২০১৫ সালে IMF এর বিকল্প হিসেবে Contingent Reserve Arrangement এবং World Bank এর বিকল্প হিসেবে New Development Bank এর সূচনা করে। একই সাথে একই বছর চীন তার মুদ্রা ইউয়ান ভিত্তিক আন্তঃব্যাংক মেসেজিং সিস্টেম Cross Border Interbank Payment System (CIPS) প্রতিষ্ঠা করে যাকে SWIFT এর বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। অপরদিকে, চীন ও রাশিয়া অনেকদিন ধরেই de-dollarisation এর চিন্তা করে আসছে। এর মানে এই না যে ডলারকে একদম বাদ দিয়ে দেয়া হবে, বরং ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করা হবে। অন্যদিকে তারা ব্রিকসের সদস্যদের মধ্যে একটি নতুন মুদ্রা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্রিকসের দেশসমূহের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত একাত্মতা নেই বরং ভারত এবং চীন বর্তমানে যুদ্ধরত। তাই এক মুদ্রা প্রবর্তন দিবাস্বপ্নের থেকে বেশি কিছু না।
অপরদিকে ব্রিকসের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্রিকস সদস্যাদের মধ্যে আদর্শিক কোন বন্ধনের অভাব। এখানে চীন এবং রাশিয়ার পশ্চিমাবিরোধী অবস্থান থাকলেও ভারত ও ব্রাজিল পশ্চিমের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। ফলে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গীর ভিন্নতার কারণে এদের একই উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কাজ করে যাওয়ার সম্ভাবনা দুর্বল। অন্যদিকে নতুন দেশসমূহও মূলত এখানে যোগদান করছে অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য কোন আদর্শিক কারণে না। তাছাড়া, সৌদি আরব কিংবা মিশরের মত দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার রাষ্ট্র।
সুতরাং পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার সারাবিশ্বের মানুষদের যে আকাঙ্ক্ষা তা এসকল স্বার্থকেন্দ্রিক ও আদর্শহীন জোট গঠনের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। পশ্চিমা পুঁজিবাদী আদর্শের বিপরীতে অবশ্যই বিকল্প আদর্শের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা বর্তমান এই বিশ্বব্যবস্থাকে পরিবর্তিত করে এক নতুন বিশ্বব্যবস্থার প্রবর্তন করবে। এবং একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত খিলাফত রাষ্ট্র বিশ্ববাসীকে সেই নতুন বিশ্বব্যবস্থা উপহার দিবে। সুতরাং আমাদের উচিত এসকল জোটের দিকে তাকিয়ে না থেকে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকল্পের দিকে মনযোগ দেয়া। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে তিনি এটাকে সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন (সূরাঃ আল ফাতহ: ২৮)
- মো. হাফিজুর রহমান
“প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশকে ওএসএতে যুক্ত করেছে জাপান”
খবরঃ
ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করতে বাংলাদেশকে সরকারি নিরাপত্তা সহায়তা (ওএসএ) প্রকল্পে যুক্ত করেছে জাপান। নতুন এই কর্মসূচিতে প্রথম বছর যে চার দেশকে জাপান যুক্ত করেছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।... জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশকে ওসিএতে যুক্ত করা হয়েছে। ওই রূপরেখার আওতায় সহযোগিতা বাড়াতে বিশেষ করে সমরাস্ত্র বিনিময় ও প্রযুক্তি বিনিময়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।... (https://www.prothomalo.com/bangladesh/aw390mu0s0)
মন্তব্যঃ
যে দেশ নিজের প্রতিরক্ষা নিজেই দিতে পারে না, সে কিভাবে অন্য দেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা করবে? প্রতিবেশী বৈরীরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া ও চীনের কারণে জাপান তার ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে এমনিতেই বিপদে আছে, তার উপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর থেকে জাপান মূলত মার্কিন উপনিবেশে পরিণত হয়েছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে বাধ্য করে আইন করে চিরদিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার পরিত্যাগ করতে। জাপানের সংবিধানের ৯ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধ করা জাতির সার্বভৌম অধিকার—এ ব্যাপারটি জাপানের জনগণ চিরকালের জন্য পরিত্যাগ করেছে’। আবার আইন করে তাদের সংবিধানের ৫ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে আমেরিকাকে তাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫৬ হাজার সেনা সদস্য রয়েছে যা অন্য যেকোন দেশের চেয়েও বেশি। তারপর চরিত্রহীন মার্কিন বাহিনী কর্তৃক সেখানে ধর্ষণ, হত্যাসহ জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, যার কারণে জাপানি নাগরিকগণ অতিষ্ঠ। অর্থাৎ যে জাপান তার নাগরিকদের নুন্যতম নিরাপত্তাটুকুও দিতে পারছেনা, সে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতা করতে আসছে! অন্যদিকে আমরা ভালোভাবেই জানি, উপনিবেশবাদীদের করতলগত কোন রাষ্ট্র কখনোই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। তাই বর্তমানে আমরা মার্কিন ইশারায় জাপানে নয়া সামরিকবাদের উত্থান এবং এখাত নিয়ে তাদের ব্যাপক পরিকল্পনা প্রত্যক্ষ করছি। জাপান বাংলাদেশের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কর্তৃত্ব হাতে নিয়েছে, যার কৌশলগত ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম এবং যা আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ। অন্যদিকে আমরা জানি ন্যাটোর ন্যায় সামরিক জোট কোয়াডে (অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, জাপান ও আমেরিকার সম্মিলিত সামরিক জোট) মার্কিনীরা বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চায়। এই লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশকে ACSA ও GSOMIA চুক্তি সম্পাদনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তাই বলা যায় যে, তথাকথিত বন্ধু জাপান কর্তৃক বাংলাদেশের ও.এস.এ প্রকল্পে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সুখকর কোন বিষয় নয়। বরং এটা শুধুমাত্র জাপানি বন্ধুত্বের মোড়কে মার্কিন কর্তৃত্ব বৃদ্ধির অপপ্রয়াস মাত্র। আর একাজের দোসর হলো আমাদের দেশের দালাল শাসকগণ।
তাই আমরা বলতে পারি, যতদিন আমরা আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা অন্যকোন উপনিবেশবাদীদের দালাল শাসকদের কর্তৃত্বের মধ্যে থাকবো, ততদিন আমরা আমাদের নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি কিংবা নেতৃত্ব-কোন কিছুই অর্জন করতে পারবো না। বরং জাপানের মতো উপনিবেশবাদীদের উপনিবেশ কর্তৃক ও.এস.এ যুক্ত হওয়ার মত দাসত্বকেও আমাদের নিকট মর্যাদাপূর্ণ ও সুখকর হিসেবে দেখানো হবে। আমাদেরকে সমৃদ্ধশালী ও নেতৃত্বশীল জাতি হতে হলে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা অর্জন করতে হলে অবশ্যই পূর্বের ন্যায় খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থায় ফেরত যেতে হবে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সুসংবাদ অনুযায়ী এই রাষ্ট্র জাপান কিংবা আমেরিকাসহ সমগ্র পৃথিবীকে আবারো ইসলামের একক ছায়াতলে নিয়ে আসবে। ১৯২৪ সালে ধ্বংস হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ে এই খিলাফত দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপ, উত্তর রাশিয়া, কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও আফ্রিকার শৃঙ্গজুড়ে, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চল সহ বিস্তৃত একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল। আবারো খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, সেটা পৃথিবীর বাকি অংশকেও ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে নিয়ে আসবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “আল্লাহ্ আমার সামনে পৃথিবীর সমস্ত প্রান্তগুলো একত্রিত করেছেন, আমি দেখেছি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত অংশে আমার উম্মতের কর্তৃত্ব পৌঁছে গেছে…” (ইবনে মাজাহ)।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
“বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক রাতেই আ.লীগকে শেষ করে দেবে: কাদের”
খবরঃ
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে বলে অভিযোগ করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচনে শেখ হাসিনা হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। গরিব মানুষদের বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে জেতাতে হবে। (www.jugantor.com/politics/awami-league/711064/)
মন্তব্যঃ
ক্ষমতায় থাকা গোষ্ঠী বলছে ক্ষমতা হারালে বিএনপিগোষ্ঠী তাদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে, আবার বিরোধীগোষ্ঠী বলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীগোষ্ঠী তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য গুম, খুন, মামলা, হামলা ইত্যাদি করছে। একে এপরের প্রতি বিরোধ ও ঘৃণা ছড়িয়ে এই দুইগোষ্ঠী জনগণকে নিজেদের দলে ভিড়াতে চায়। যেহেতু তারা কোন চিন্তার ভিত্তিতে এক হয়নি, তাই অন্যদেরকেও চিন্তার ভিত্তিতে তাদের দলে ভিড়াতে পারে না। তাই নিজেদের দলের লোকদের একত্রিত ও উজ্জীবিত রাখতে তাদের সবসময় একটি শত্রুগোষ্ঠী তৈরী করতে হয়। দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব না থাকলে এই ধরণের গোষ্ঠীবাদ টিকে থাকে না। এই গোষ্ঠীবাদেরই অপর নাম জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ সংঘাত, হিংসা, ভীতি ও অনিরাপত্তা তৈরি না করে টিকে থাকতে পারে না। একারণেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বাঙালী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি কিংবা বিএনপির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নেই, মূলত এটা এসেছে দুটি পরিবার বা গোষ্ঠীর মধ্যকার সামন্তবাদী বা কর্তৃত্বস্থাপনের প্রতিযোগিতার কারণে। এই গোষ্ঠীবাদ বা জাতীয়তাবাদ একটি ধ্বংসাত্মক চিন্তা, এটি কখনই কোন দেশকে উন্নত করতে পারে না। এখানে যদি কোন ক্ষণস্থায়ী ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় তাও হয় আতংক বা ভীতির কারণে, এবং তা অর্জিত হয় দমন পীড়নের মাধ্যমে যা স্বল্প সময়ের মধ্যেই উবে যায় এবং নতুন সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। যেমনটা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি এই দেশে। ধ্বংসাত্মক জাতীয়তাবাদের দিকে যারাই জনগণকে নিয়ে যেতে চাইবে তাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) চরম ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেন, “সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে আসাবিয়্যাতের (জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, গোত্রবাদ) দিকে আহ্বান করে। সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে আসাবিয়্যাতের জন্য লড়াই করে। সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে আসাবিয়্যাতের জন্য মৃত্যুবরণ করে” (আবু দাউদ)।
দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে খিলাফত ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে আজ মুসলিমরা সারা বিশ্বে জাহিলিয়াতের এই ঘৃণ্য নিম্ন মানের চিন্তা দ্বারা নিজেরা বিভক্ত হয়ে আছে। এই বিভক্তি ইতিমধ্যে আমাদের ব্যাপক ধ্বংস নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশের জাহেল এই রাজনীতিবিদদের কথায়ও এটি স্পষ্ট। এখনই সময় এই ধ্বংসাত্মক চিন্তার বিভক্তি থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, যেভাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আহ্বানে মদীনার আওস ও খাজরাজ গোত্র তাদের দীর্ঘকালের জাতীয়তাবাদী ও গোষ্ঠীগত সংঘাতকে বিলীন করে দিয়ে ইসলামী আদর্শকে আকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক ইসলামী উম্মাহ্-এর গোড়াপত্তন করেছিল। এই রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো আমাদেরকে বিভক্ত ও ধ্বংসের দিকে ডাকে আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে ঐক্য ও শক্তির দিকে ডাকে। আমাদের উচিত জাতীয়তাবাদের রাজনীতির এই সকল গোষ্ঠীকে পরিত্যাগ করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-এর ডাকে সাড়া দেয়া। তিনি সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর এবং একে অপরের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না, নতুবা তোমাদের শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে” (সূরা আল-আনফাল ৪৬)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“চাঁদে পা রেখে ইতিহাস গড়ল ভারতের চন্দ্রযান-৩”
খবরঃ
মহাকাশে দীর্ঘ এক মাস নয় দিনের যাত্রা শেষে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-থ্রি চাঁদের বুকে অবতরণ বা ‘সফট ল্যান্ডিংয়ের’ প্রথম লক্ষ্য আজ সফলভাবে অর্জন করছে, যা ভারতকে বিশ্বের এলিট ‘স্পেস ক্লাবে’ জায়গা করে দিল। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এদিন লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে ইসরো-র মিশন সেন্টারে চন্দ্রযান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। (www.newsbangla24.com/science/230563/Indias-Chandrayaan-3-landed-on-the-South-Pole-of-the-Moon)
মন্তব্যঃ
চন্দ্রায়ন—৩ প্রকল্প হল ভারতের অযোগ্য মুশরিক শাসকশ্রেণীর ‘জাতে’ উঠার বাসনা। মূলত আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে একবার ব্রিটেন ও আরেকবার আমেরিকার স্বার্থরক্ষার গুঁটি হয়ে থাকা ভারতকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা চীনের মুখোমুখী দাড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং টোপ হিসেবে ভারতের মিসাইল সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামরিক সাহায্য প্রদানের কথা বলে আসছে, যার উদ্দেশ্য হল চীনের সাথে ভারতের একটি সামরিক প্রতিযোগীতা বা আর্মস রেস তৈরী করা যেন চীনের মনোযোগকে এখানে আটকে রাখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০-৬০ বছরে সামান্য একটি আর্টিলারী হাউইটজার কিংবা চলনসই কোন ট্যাঙ্ক বানাতে ব্যর্থ হওয়া ভারত চাঁদে মহাকাশযান পাঠায়! এর পূর্বেও আমরা ‘কোল্ড ওয়ার’-এর সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার মধ্যে আর্মস রেস প্রত্যক্ষ করেছি যেখানে আমরিকার ফাঁদে সোভিয়েত ইউনিয়ন বোকার মত পা দেয় এবং এই প্রতিযোগীতায় জিততে গিয়ে তার অর্থনীতির বারটা বাজিয়ে ফেলে। আমেরিকার মূল উদ্দেশ্যই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিকে দূর্বল করা যার জন্য সে কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ ও কিছু প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বিভ্রান্ত করে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ১৯৬১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্টকে বলেছিল, ‘Do we have a chance of beating the Soviets by putting a laboratory in space, all by a trip around the moon? And are you working 24 hours a day on the existing programs?
মোদ্দাকথা হলো এসকল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র জনসাধারণের কল্যানের জন্যে নয়, বরং জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে ভূরাজনৈতিক ও পুঁজিবাদী স্বার্থ হাসিল করতে চায়। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করার ক্ষেত্রে এসকল প্রকল্পের কোন অবদানতো থাকেই না, বরং এগুলোর অর্থসংস্থান করতে গিয়ে জনগণের উপর শোষণমূলকভাবে করের বোঝা চাপানো হয়। ২০২১ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারত ১০১তম স্থানে রয়েছে, যা ক্ষুধার ‘তীব্র’ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ও এর অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে ব্যাপকমাত্রার অভাবের মধ্যে রয়েছে। ইসলামী শাসনামলের সমৃদ্ধশালী ভারত থেকে ব্রিটেন ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমান সম্পদ লুটে নিয়ে এর জনগণকে অভাবে ফেলে দিয়ে যায়; আর এরপর যাও অবশিষ্ট ছিল এই হিন্দু শাসকগোষ্ঠী ধীরে ধীরে তাও শুষে নিচ্ছে। সম্পদে ভরপূর ভারতের এই বিশাল ভূখন্ড ও এর সোয়া’শ কোটি মানুষকে সঠিকভাবে শাসন করার সক্ষমতা রয়েছে একমাত্র ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফতের। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই পারে এই ভূখন্ডের মানুষকে প্রকৃত অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে এবং নব্য সাম্রাজ্যবাদি ব্রিটেন-আমেরিকার কবল থেকে একে উদ্ধার করে এর বিশার সম্পদভান্ডার ও এখানে বসবাসরত অন্তত ৪০ কোটি মুসলিমকে বিশ্বের দরবারে ইসলামী দাওয়াকে পৌছে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আন-এ বলেন, “আলিফ লাম রা। (হে রাসুল) আমি এই কিতাব (কুর‘আন) আপনার উপর এজন্য নাযিল করেছি যেন এর দ্বারা আপনার রবের অনুগ্রহে আপনি পুরো মানবজাতিকে (জুলুমের) অন্ধকার থেকে (ইসলামের) আলোতে বের করে আনতে পারেন (সুরা ইব্রাহিম: ০১)।
- আহানান রাতুল
“যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে গুলিতে ৪,৭৫২ শিশু নিহত”
খবরঃ
‘আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক’ (এএপি) প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে গুলিতে রেকর্ড সংখ্যক শিশু নিহত হয়েছে। ... এতে দেখা গেছে ২০২১ সালে গুলিতে ৪,৭৫২ শিশু নিহত হয়েছে, যা ২০২০ সালের চেয়েও বেশি। গুলিতে ওই বছরগুলোতে ৪,৩৬৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে গুলিতে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩,৩৯০। ২০২০ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ বন্দুক সহিংসতা। (https://www.prothomalo.com/world/usa/n8xw1hunal)
মন্তব্যঃ
বিশ্বব্যাপী শিশু অধিকার রক্ষা করার কথা ফেরি করে বেড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যে শিশুদের বেঁচে থাকার সুযোগটাই দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেটা আবারও প্রমাণ হলো। প্রকৃতপক্ষে সুন্দর সুন্দর কথার আড়ালে পুঁজিবাদ সাধারণ মানুষের জীবনকে পুঁজি করে কিছু সংখ্যক পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের সম্পদ বৃদ্ধি ও মুনাফাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমরা দেখেছি ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সে ক্ষমতায় আসলে তার দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানীগুলোকে মুনাফা লাভের আরো সুযোগ করে দিবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার বন্দুক ও অস্ত্র কোম্পানীগুলো ফুলেফেপে উঠে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র কোম্পানীগুলোর ২৮ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট শেয়ার রয়েছে এবং শুধুমাত্র তিনটি বন্দুক কোম্পানী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের ৫৮% তৈরি করছে৷ পুঁজিবাদী শাসক এবং পুঁজিপতি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে গিভ এন্ড টেক সম্পর্ক রয়েছে, একদিকে শাসকরা তাদের পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থ দেখে, আর অপরদিকে তারা শাসকদেরকে নির্বাচনী তহবিল দান এবং ভোটে জয়লাভের নিশ্চয়তা দেয়। যেমন, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুনাফা লাভের সুযোগ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্র তার সংবিধানে আইনের মাধ্যমে সবাইকে অস্ত্র বহন করাকে অধিকার হিসেবে বৈধতা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন নাগরিকের মধ্যে চারজনেরই বন্দুক আছে (Pew Research Centre, June 2021)। একদিকে বন্দুকের সহজলভ্যতা তৈরি এবং অপরদিকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা জীবনকে যেভাবে ইচ্ছা উপভোগ করার সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পুঁজিবাদী আদর্শের অনুসারী প্রতিটি রাষ্ট্রে ফান-ফুর্তি করার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয় সুখ অর্জন করাই জীবনের উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। আর এই ফান-ফুর্তির মজাও যখন শেষ হয়ে যায়, তখন জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে ব্যর্থ মানুষগুলো হতাশ হয়ে হয়তোবা মাদক সেবন করছে, অ্যান্টি ডিপ্রেসন পিল খাচ্ছে, কিংবা নিজে বন্দুক দিয়ে মরে আত্মহত্যা করছে অথবা আরেকজনকে মারার মাধ্যমে নতুন মজা খোঁজার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে ইসলাম এসেছে মানবসৃষ্ট ব্যবস্থার ফাঁদ থেকে সমগ্র মানবজাতির জীবন, সম্পদ এবং সম্মান রক্ষা করতে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক মনোনীত একমাত্র জীবনাদর্শ ইসলামী ব্যবস্থায় মানুষের জীবনকে পুঁজি করে মুনাফা লাভের কোন সুযোগই নেই। ইসলামে বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা হলো কবিরা গুনাহ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি, কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফ্যাসাদ সৃষ্টির অভিযোগ ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সব মানুষকে হত্যা করল” (সূরা মায়েদা-৩২)। খিলাফত রাষ্ট্র অস্ত্রশিল্পকে ব্যক্তিগত মালিকানায় ছেড়ে দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে মুনাফা লাভের সুযোগ করে দিবে না, বরং রাষ্ট্র তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এসব বিষয় দেখভাল করবে। খিলাফত ব্যবস্থা পুঁজিবাদের ভ্রান্ত আকিদা ধর্মনিরপেক্ষতাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাকওয়া পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে যেখানে জনগণের যাচ্ছেতাই ভাবে স্বাধীনতা ভোগের এবং স্বেচ্ছাচারিতার কোনো সুযোগ নাই। তারপরও যারা সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন বিশ্বাসীকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ্ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে অভিসম্পাত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন” (সূরা নিসা-৯৩)। এভাবেই আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থা শরিয়াহভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহিংসতাকে সমূলে নির্মূল করবে, ইনশাআল্লাহ্।
- জারা ইসলাম