Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১০৩ তম সংখ্যা । ১৭ অক্টোবর, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে :
“হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশে দেশে মিছিল”
“ইসরাইলকে সহযোগিতায় সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র”
“দেশকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলা বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ”
“শিক্ষিত পরিবারে খুন বেড়েছে কেন?”
“আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”
“দুই নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের”
“হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশে দেশে মিছিল”
খবরঃ
দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সূদীর্ঘ অমানবিক অত্যাচার, জাতিগত নিধন ও ক্রমাগত নির্বিচার হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে শনিবার সকালে আকস্মিক অভিযান শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে হামাসের এই বিশাল অভিযান শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন মুসলিম দেশের জনগণ হামাসের পক্ষ নিয়ে বিশাল বিশাল বিজয় মিছিল করেছেন। ইসরায়েল-হামাস চলমান যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোতেও। সংকটের স্থায়ী সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে দেশে-দেশে। যুগ-যুগ ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছেন সেসব দেশের সাধারণ মানুষ। (https://www.youtube.com/watch?v=Z6Qz04zrVmA)
মন্তব্যঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কাফির বৃটিশরা মুসলিমদের পবিত্র ভূমি (আল-কুদস) ফিলিস্তিনকে দখল করে নেয়। এই দখল আগ্রাসনে বৃটিশ বাহিনীকে সরাসরি সৈন্য পাঠিয়ে সহায়তা করেছিল কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। উসমানী খিলাফতের ৭ম ও ৮ম আর্মির (7th army and 8th army) ২৫,০০০ বীর সেনানী রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পবিত্র ‘আল-ইসরা ওয়াল-মিরাজ’ এবং খলিফা উমার (রা.)-এর আল-আক্বসা বিজয়ের স্মৃতিবিজরিত আল-কুদসকে রক্ষায় প্রাণপণ যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন। কাফির বৃটিশদের ২০,০০০ সৈন্য নিহত হলেও ভূ-রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় আল-কুদস দখল করে নেয় বৃটিশরা। তখন থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত সরাসরি বৃটিশ দখলদারিত্ব ও বৃটিশদের দ্বারা ১৯৪৮ সালে অবৈধভাবে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্ণনাতীত অত্যাচার ও নিপীড়নের মধ্যে রয়েছেন আল-কুদসের মুসলিমরা। এই সময়ের মধ্যে বৃটেন-আমেরিকা ষড়যন্ত্র করে আল-কুদস বা ফিলিস্তিন ইস্যুকে মুসলিম উম্মাহ্’র জীবন-মরণ ইস্যু (life and death issue) থেকে প্রথমে একটি আরব ইস্যু (Arab issue), তারপর আরব ইস্যু থেকে একে ফিলিস্তিনী জনগোষ্ঠীর একটি নিজস্ব ইস্যুতে (issue of an independent Palestinian State) পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেছে। সেখান থেকে তা আজ হামাসের একটি দলীয় ইস্যুতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। অর্থাৎ, পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনকে অপবিত্র কাফিরদের হস্তগত হওয়া প্রতিহত করতে যা একসময় ছিল ‘পুরো মুসলিম উম্মাহ্ বনাম পশ্চিমা কাফির শক্তি’ তা এখন ‘হামাস বনাম ইসরাইল’ সংঘাত নামে নিছক একটি আঞ্চলিক ইস্যু হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের প্রতি সারাবিশ্বের সাধারণ মুসলিমদের সমর্থন ও বিজয় মিছিল প্রমাণ করে এই উম্মাহ্’র মধ্যে ঈমানী শক্তি এখনো অটুট রয়েছে এবং পুরো উম্মাহ্‘কে একত্রিত রাখার রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসলামী খিলাফতকে ১৯২৪ সালে বৃটিশরা ধ্বংস করলেও ইসলামী আক্বীদার শক্তিশালী বন্ধন পুরো উম্মাহ্ এখনো অনুভব করেন, সুবহান‘আল্লাহ্। বৃটিশদের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা কাফির রাষ্ট্রগুলো খিলাফতকে ধ্বংস করতে পেরেছিল ‘জাতীয়তাবাদ’ নামক কুফর চিন্তা দিয়ে উম্মাহ্’কে বিভক্ত করার মাধ্যমে। জাতীয়তাবাদী চিন্তার ‘স্বাধীনতা’ নামক ‘মরণ-বিষ’ দিয়ে প্রথমে বলকান অঞ্চল, তারপর আরব ও তুরস্ক এবং পরববর্তীতে পুরো মুসলিম উম্মাহ্‘কে ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে, যার প্রভাবেই এখনো সাধারণ মুসলিমরা আল-কুদসের মুসলিমদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেও তাদের মানসপটে থাকে ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশে ‘স্বাধীন একটি ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র নামক জাতীয়তাবাদী চিন্তা(!), অথচ যেখানে ইসরাইল হচ্ছে একটি দখলদারগোষ্ঠী। সুতরাং, এক উম্মাহ্কেন্দ্রিক চিন্তা ছাড়া ফিলিস্তিনসহ দখলকৃত অন্যান্য মুসলিম ভূ-খন্ডের সমস্যার সমাধান আসবে না। ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাহ্উদ্দীন আইয়ূবী মুসলিমদের সংগঠিত করে ক্রুসেডারদের কাছ থেকে আল-কুদসকে খিলাফতের অধীনে পুনরায় মুক্ত করেছিলেন, যদিও তিনি ফিলিস্তিনী নয় রবং কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর লোক ছিলেন। এক উম্মাহ্কেন্দ্রিক চিন্তা তাকে জেরুজালেমকে মুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “মুমিনদের পরস্পরের ভালোবাসা, অনুগ্রহ, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহ বা শরীরের মতো। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়,তখন সারা দেহের সবগুলো অঙ্গই নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে এবং কষ্ট-যন্ত্রণায় জরাগ্রস্ত ও কাতর হয়ে পড়ে” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। আজকেও মুসলিম উম্মাহ্’র সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া আল-আকসা মুক্ত হবে না, যদিও ফিলিস্তিনী মুজাহিদীনরা অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের দম্ভ ও অপরাজেয়তার বেলুনকে চুপসে দিয়েছে। তাই এখনই প্রয়োজন এই জাতীয়তাবাদ নামক ‘মরণ-বিষ’-কে পুরোপুরি পরিত্যাগ করে উম্মাহ্’র শক্তিমত্তার একমাত্র ও কার্যকর প্রতীক খিলাফতকে অতিদ্রুত পুণঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা আল-কুদস‘কে পুণরায় উম্মাহ্’র জীবন-মরণ ইস্যু হিসেবে ঘোষণা করবে এবং তা মুক্ত করতে মুসলিম ভূমিগুলোকে একত্রিত করে এর বিশাল সেনাবাহিনীকে অভিযানে প্রেরণ করবে।
- রিসাত আহমেদ
“ইসরাইলকে সহযোগিতায় সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র”
খবরঃ
ইসরাইলকে সহযোগিতায় সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।.. এক দশকের মধ্যে শনিবার ইসরাইলের ভূখণ্ডে স্মরণকালের ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরাইলকে সহযোগিতা করার জন্য যুদ্ধাস্ত্র প্রদান করা হবে। এছাড়া রোববার থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়া হবে। পেন্টাগন ওই অঞ্চলে যুদ্ধ বিমান পাঠাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রোববার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এ সময় বাইডেন ইসরাইলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথা জানান। (https://www.jugantor.com/international/726861/ইসরাইলকে-সহযোগিতায়-সামরিক-জাহাজ-ও-যুদ্ধবিমান-পাঠাল-যুক্তরাষ্ট্র%C2%A0)
মন্তব্যঃ
সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের প্রতি তার নোংরা অবস্থানকে পরিস্কার করেছে। ১৯৪৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ফিলিস্তিনে ১০০,০০০ বাস্তুচ্যুত ইহুদীকে আশ্রয় প্রদানের সুপারিশ করে এবং প্রকাশ্যে একটি ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের জন্য তার সমর্থন ঘোষণা করে। এরপর ডেমোক্র্যাট-বিপাবলিকানদের মধ্যে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা সবাই এটিকে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় সহায়তা প্রদান করেছে। একইভাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনও তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্টদের মত অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করা সহ তাদেরকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে এবং ২০২২ সালে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগের সাথে বৈঠকের সময় বাইডেন ১৯৮৬ সালে সিনেটে দেয়া তার বক্তব্যটি আবারও পুনরাবৃত্তি করে বলে, “The U.S. sees Israel as a critical “strategic ally” in the Middle East. If there were not an Israel, we’d have to invent one (Middle East Monitor, October 27, 2022)”। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে এ অঞ্চলের ব্যাপক সম্পদরাজি, ভূমি ও অপরিশোধিত তেলের সর্ববৃহৎ উৎসের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ইসলাম তথা খিলাফত রাষ্ট্রের উত্থান ঠেকানো। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তার স্বার্থের প্রতি হুমকির মোকাবিলায় এবং আরব বিশ্বের একীভূত হওয়াকে প্রতিরোধ করতে ইহুদী রাষ্ট্রকে একটি সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ইসলামী বিশ্বের হৃদপিণ্ডে স্থাপন করেছে এবং প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের রক্ষক ও পৃষ্ঠপোষক, যা বাইডেনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে উঠে এসেছে: “United States stands with the people of Israel in the face of this terrorist assaults. Israel has the right to defend itself and its people. Full stop.” আমেরিকাসহ পশ্চিমারা কোন রাখঢাক না রেখে সুস্পষ্টভাবে শেষ কথা (ফুল স্টপ) বলে দিয়েছে যে, ইহুদীরা, খ্রীস্টান ও মুশরিকরা পরস্পরের মিত্র এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই আমেরিকাকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের কাণ্ডারী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আওয়ামী-বিএনপি উভয়েই মার্কিনীদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সবকিছু উজার করে দিচ্ছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে পবিত্র কুর‘আন-এ এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক করেন, “তোমরা ইহুদী এবং খ্রিস্টানদেরকে তোমাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অন্যের অভিভাবক” (সুরা মায়িদাঃ ৫১)। মুসলিমদের জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত এই সতর্কতাই শেষ কথা (ফুল স্টপ), কোন পরিস্থিতি, সময়, কাল, প্রেক্ষাপটের দোহাই কোনকিছুই এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং, মুসলিম হিসেবে আমরা কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোন কাফির শক্তিকেই ফিলিস্তিন সংকট, আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংকট সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতাকারী কিংবা আমাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে বিবেচনা করতে পারি না।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহ্’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না [সূরা আলি-ইমরানঃ ১০৩]। আল্লাহ্’র রজ্জু হচ্ছে আল্লাহ্ প্রদত্ত ইসলামী জীবন বিধান, যা খিলাফত রাষ্ট্রের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। সুতরাং, খিলাফত রাষ্ট্রকেই আকড়ে ধরার মাধ্যমেই মুসলিমদের ঐক্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব, যা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ইহুদী, খৃষ্টান ও মুশরিকদের আগ্রাসনকে নিশ্চিহ্ন করবে। মুসলিমদের পাজরে বিদ্ধ থাকা পশ্চিমাদের অবৈধ সন্তান ইহুদী রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী মুসলিম সেনাবাহিনীকে জিহাদে প্রেরণ করবে, যতক্ষণ না এই অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান হয় এবং তাদের শেষ সৈনিকটিকে হত্যা কিংবা এ ভূখন্ড থেকে বহিষ্কার করা হয়। মুজাহিদদের ক্ষুদ্র একটি দল দ্বারা পরিচালিত আল আকসা ফ্লাড অভিযান প্রমাণ করেছে ইহুদী সত্তা একটি ভঙ্গুর সত্তা, যা বেঁচে থাকার জন্য পশ্চিমা শক্তির উপর নির্ভরশীল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাপুরুষ ইহুদী বাহিনীকে পরাস্ত করার সক্ষমতা মুসলিম সেনাবাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান। অল্প কিছু বীর মুসলিম যদি এক সকালে খুব সহজেই ইহুদীবাদী দখলদারিত্বের ভিতকে নাড়িয়ে দিতে পারে, তাহলে একটি সম্পূর্ণ সংগঠিত এবং সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর সামনে তাদের কি পরিণতি হবে? যুদ্ধরত মুজাহিদিনরা যে স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে, আল্লাহ্’র সাহায্যে স্ফুলিঙ্গটি মুসলিম সেনাবাহিনীতে শিখা প্রজ্বলিত করবে যাতে তারা দালাল মুসলিম শাসকদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারে এবং এই বরকতময় ভূমিকে ক্রুসেডার মার্কিনীদের আধিপত্য ও ইহুদীবাদী দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করে গৌরবোজ্জ্বল খিলাফতে রাশিদাহ্’র অধীনে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। আর নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহ্’র জন্য সহজ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর বিজয় একমাত্র আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়” [সূরা আল-আনফাল: ১০]।
- সিফাত নেওয়াজ
“দেশকে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলা বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ”
খবরঃ
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্য করায় সংশ্লিষ্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ অসাংবিধানিক বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। আমি প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। (www.dhakapost.com/law-courts/228757)
মন্তব্যঃ
দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিপক্ষে যায় এমন বক্তব্য দিয়ে সরকারের রোষানলের শিকার হয়েছেন। তাদের অনেকে বিষয়টিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিংবা মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং এজন্য ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীকে এই বলে দোষারোপ করেন যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে যে ক্ষমতার ভারসাম্যের বিধান রয়েছে তারা তা লঙ্ঘন করছেন। পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শাসনের অনুকরণে তৈরি হওয়া দেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় এটা মনে করা হয় যে, শাসন ক্ষমতাকে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বন্টন বা ভাগ করে দিতে পারলে সরকার বা সরকার প্রধান একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ভোগ করতে পারবে না। মধ্যযুগের ইউরোপের রাজারা চার্চের অনুমোদনক্রমে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়ে, যা তাদেরকে সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নিয়ে যায়। সেই বাস্তবতায় তৎকালীন চিন্তাবিদ মন্টেস্কিঊ ‘Separation of Power' এর ধারণা দেয়। পরবর্তীতে ইউরোপের বিপ্লবের মাধ্যমে একটি স্যেকুলার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই ধারণার বাস্তবায়ন হয়। ইউরোপিয়ানদের সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা আমাদের এখানেও রফতানি হলো, এবং নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে পৃথক করার মাধ্যমে সবাইকে ধারণা দেয়া হলো যে, এখন আর শাসকের পক্ষে অত্যাচারী ও একচ্ছত্র ক্ষমতাবান হওয়া সম্ভব হবে না।
কিন্তু আমরা দেখলাম এটি কাল্পনিক তত্ত্ব হিসেবেই রয়ে গেল, কারণ শাসকের একচ্ছত্র ক্ষমতা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে এখনও বিদ্যমান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগকে ব্যবহার করে সরকার বা সরকারপ্রধান অত্যাচার-নিপীড়ন চালায়, বরং এই 'Separation of Power' এর বদৌলতে সরকার তার জুলুমের দায়ভার অন্য আরেকটি বিভাগের উপর চাপিয়ে এড়ানোর সুযোগ পায়। সংসদকে ব্যবহার করে নিজের মত সংবিধান বানিয়ে বলা হয় আমরা কেউ সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে যাকে ইচ্ছা তাকে সাজা-মৃত্যদন্ড দিয়ে বলা হয় আইন নিজস্ব ধারায় চলে আমার কিছু করণীয় নাই। লুটের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন করায় দুই উপসচিবকে বরখাস্ত করা, প্রধান বিচারপতিকে পদচ্যুত ও দেশছাড়া করা সহ এরকম অসংখ্য ঘটনা প্রমাণ করে যে 'Separation of Power' একটি কাল্পনিক ধারণা।
দেশের বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী, সচেতন নাগরিক সমাজসহ সকল প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গকে বুঝতে হবে যে, পশ্চিমাদের অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত স্যেকুলার-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা 'Separation of Power' সহ নানা প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতির উপর দাড়িয়ে আছে। এগুলো শুধু অবাস্তবই নয় বরং এগুলোই জুলুমের কারণও বটে। ইসলাম একটি বাস্তবিক ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রদান করে, যেখানে খলিফা একমাত্র ব্যক্তি যিনি জনগণের সকল বিষয়ে দায়িত্বশীল। এই দায়িত্ব পালনের স্বার্থে সে সকল বিষয়ে ক্ষমতাবানও বটে। কিন্তু খলিফার এই ক্ষমতা শারিআহ্’র সীমারেখায় আবদ্ধ। তিনি একচুলও শারিআহ্’র বাইরে যেতে পারবেন না। আর এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জনগণের, বিশেষত সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের। বরং ইসলামী ব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তা, বিচারক, সাধারণ জনগণ সবাই ইসলামী শারিয়াহ্’র ভিত্তিতে খলিফাকে জবাবদিহি করবেন, কারণ ইসলাম ‘সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ’-কে ফরজ করেছে। খলিফার নিরংকুশ ক্ষমতা এই জবাবদিহিতায় কোন বাধা হতে পারে না। আবু বকর (রা.) খলিফা হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেন, “হে লোকসকল, আমাকে তোমাদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি তোমাদের সর্বোত্তম নই। সুতরাং যদি আমি সঠিক কাজ করি তবে আমাকে সাহায্য কর এবং যদি আমি ভুল করি তবে আমাকে সংশোধন করে দিও। সততা একটি পবিত্র আমানত এবং মিথ্যা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা। তোমাদের দুর্বলরা ততক্ষণ পর্যন্ত সবল যতক্ষণ পযন্ত আমি তাকে তার অধিকার আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ এবং তোমাদের শক্তিশালীরা ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্বল যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের কাছে থেকে পাওনা আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ” (আনাস ইবন মালিক বর্ণিত)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“শিক্ষিত পরিবারে খুন বেড়েছে কেন?”
খবরঃ
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে শিক্ষিত পরিবারেও অপরাধপ্রবণতা ঢুকে গেছে।...ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল ...বলেন, শিক্ষিত পরিবারের খুন বা সহিংসতার অন্যতম কারণ হলো পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যাওয়া ও নৈতিক শিক্ষার অভাব। মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে...মানুষ সবসময় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। এই আত্মকেন্দ্রিকতা কখনও কখনও শিক্ষিত মানুষকেও অপরাধী বানিয়ে দেয়। অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, মানুষ যত বেশি শিক্ষিত হচ্ছে, তেমনি তাদের মধ্যে লোভ, মাদকাসক্তি, অসহিঞ্চুতা বেড়ে গেছে। আগের মতো এখন আর পারিবারিক বন্ধন নেই। একক পরিবার বেড়েছে। আগে পরিবারে কোনও সমস্যা হলে সবাই মিলে তা মিটিয়ে ফেলতো। এখন পারিবারিক দ্বন্দের কারণে খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে। (www.banglatribune.com/others/819659/শিক্ষিত-পরিবারে-খুন-বেড়েছে-কেন)
মন্তব্যঃ
শিক্ষিত পরিবারে খুন বাড়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে সমাজ কাঠামোর জন্য উদ্বেগজনক, যা সুনিশ্চিতভাবে সমাজ কাঠামোর অবক্ষয়কে নির্দেশ করে। কিন্তু, এই অবক্ষয়ের কারণ যদি নৈতিক শিক্ষার অভাব, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যাওয়া, বিচারহীনতার সংস্কৃতির ব্যবহার, স্বার্থপরতা হয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষিত মানুষরা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে কি শিক্ষা নিয়ে এবং কি ধরনের ব্যক্তিত্ব নিয়ে বের হচ্ছে? একটি রাষ্ট্রের শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিকের মধ্যে কর্মদক্ষতা তৈরির পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা, যাতে রাষ্ট্রের বস্তুগত উন্নতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ তৈরি হয়।
কিন্তু বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ অর্থ্যাৎ সৃষ্টিকর্তা বিবর্জিত সমাজব্যবস্থায় একজন মানুষ জীবন সম্পর্কে ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে উঠে। ফলে, বস্তুগত উন্নতি সংক্রান্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষা লাভ করলেও এমন ব্যক্তিত্বে গড়ে উঠা মানুষ জীবন সম্পর্কিত হেডোনিস্টিক তথা ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে। আর এই ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি একজন মানুষকে স্বার্থপর-আত্মকেন্দ্রিক করে গড়ে তোলে। তাই সে নিজের স্বার্থে ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কাজের মানদণ্ড “উপযোগিতাবাদ(লাভজনকতা)” এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয় কি করবে আর কি করবে না। এমন চিন্তার একজন মানুষ যখন কাউকে খুন করার মধ্যে নিজের লাভ খুঁজে পায় তখন সে তাকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করে না। আর বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে লাভ দেখলে বাঁচিয়ে রাখে। সে গ্রাহ্য করে না এক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার কোন বক্তব্য আছে কিনা। যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তাকেই গ্রাহ্য করে না, সে বিচারবিভাগকে গ্রাহ্য করবে এমনতো অস্বাভাবিক। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিচারবিভাগও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত, যেটাতে বিচার টাকা দিয়ে কিনা সম্ভব। তাই, জীবন সম্পর্কিত হেডোনিস্টিক তথা ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বহনকারী তথাকথিত শিক্ষিত বা আধুনিক মানুষের মধ্যে শুধু বাহ্যিক বস্তুগত চাকচিক্যই দেখা যায়, কিন্তু তার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাকি সবগুলো মূল্যবোধই বিলীন হয়ে যায়।
ইসলামে শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রথমত: নাগরিকদের মধ্যে ইসলামী ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা, এবং দ্বিতীয়ত: দক্ষ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের বস্তুগত উন্নতির লক্ষ্যে নাগরিকদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষিত করে তোলা। ইসলামী ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী এবং যাবতীয় চিন্তা ও কাজকে ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়। অর্থাৎ আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁর প্রদত্ত হারাম-হালাল আমাদের প্রতিটি কাজের মাপকাঠি। ফলে, ইসলামী সমাজে একজন শিক্ষিত মানুষ, রাষ্ট্রের বস্তুগত উন্নতিতে যেমন ভূমিকা রাখেন, ঠিক তেমনি সর্বজ্ঞানী-সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধানকে মেনে চলায় তার মধ্যে আধ্যাত্মিক, নৈতিক, মানবিক মূল্যবোধগুলো প্রস্ফুটিত হয়, ফলে সামাজিক ভারসাম্যও রক্ষা পায়।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”
খবরঃ
বাংলাদেশের রিজার্ভ এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব বিষয়ে বেশি কথা বলা হলে তিনি সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবেন। .. সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রিজার্ভ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন আমদানি ও রপ্তানি, যাতায়াত ও যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ বেড়ে গিয়েছিল। তবে করোনার পর অর্থনৈতিক সব কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার পর আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ আবার কমে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাকে বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো। ইলেকশনের পরে যদি আসতে পারি আবার করবো।” “যদি বলেন যে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেই, পানি বন্ধ করে দেই, সার বন্ধ করে দেই, রিজার্ভ ভাল থাকবে।” (www.bbc.com/bengali/articles/cq5l4dqd455o)
মন্তব্যঃ
সেক্যুলার-পূজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, স্বার্থই তাদের স্থায়ী মিত্র, বাকি সব আপেক্ষিক। ফলে তাদের মধ্যে কখনোই নির্দিষ্ট মূল্যবোধ গড়ে উঠে না, বরং প্রতিনিয়ত স্বার্থের পরিবর্তনের সাথে সাথে তা পরিবর্তিত হয়। যেমন, তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার বুলি শোনালেও এই মূল্যবোধটি শাসকের স্বার্থ দ্বারা আবর্তিত, অর্থাৎ সরকারের প্রশংসা করতে পারবেন কিন্তু সমালোচনা করতে পারবেন না। তাদের মানবিক মূল্যবোধও স্বার্থের চক্রে আবর্তিত, যেমন ভারতকে খুশি রাখার স্বার্থে বর্তমান সরকার কাশ্মিরের মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদী ভারতের নির্মমতাকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে অভিহিত করেছিল; এবং ইহুদী রাষ্ট্রের মিত্র আমেরিকাকে বিব্রত করার স্বার্থে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আবার জনগণকে দমন করার স্বার্থে ও পশ্চিমাদের খুশি করার স্বার্থে ইসরাইলের কাছ থেকে নজরদারী সরঞ্জাম ক্রয় ও পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরাইল ব্যতীত’ শব্দ দু‘টি বাদ দিয়েছে।
মূলত বিশ্বের সকল সেক্যুলার-পূজিবাদী দেশেই একই অবস্থা বিদ্যমান। যেমন, ফ্রান্সে ব্যক্তি স্বাধীনতা, ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের স্বার্থ দ্বারা আবর্তিত। তাই মুসলিম নারীদের নিকাব কিংবা আবায়া তাদের স্বার্থবিরোধী। আমরা দেখেছি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমনের পর পশ্চিমারা মানবতার বুলি শুনিয়ে যেভাবে ইউক্রেনের পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ঠিক এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বর্তমানে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উপর ইহুদী দখলদারদের নির্মমতার প্রেক্ষিতে। এটাই সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং এর শাসকদের প্রকৃত চরিত্র, স্বার্থ ছাড়া এখানে আর কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড নাই।
পক্ষান্তরে ইসলামি আদর্শে শাসকসহ সাধারণ মুসলিমদের কথা ও কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন, নিজের স্বার্থকে নিশ্চিত করা না। ফলে, শাসক ও জনগণের কথা ও কাজের সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড হচ্ছে শারীআহ্, যা সময় কিংবা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে কখনোই পরিবর্তন করা যায় না। এখানে, শারী‘আহ্ তথা আল্লাহ্’র বিধানই শেষ কথা। ফলে শাসকের সাথে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ মুসলিম নাগরিক ও অ-মুসলিম নাগরিকদের সম্পর্ক, রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্কের ধরন কিয়ামত পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট থাকবে। কোন শাসক তা পরিবর্তনের চেষ্টা করলে সে ক্ষমতাচ্যুত হবে, কিন্তু রাষ্ট্র শারীআহ্‘চ্যুত হবে না। তাই আমরা দেখি, ওমর (রা.)-কে খলিফা থাকা অবস্থায় সাধারণ মুসলিম জবাবদিহীতা করে বলেছিল, রাষ্ট্রের সবাই এক টুকরো কাপড় পেয়েছে তাহলে আপনি কিভাবে দুই টুকরো কাপড় পেলেন? উল্লেখ্য যে, ইবনে ওমর (রা.) তার অংশটুকু তাকে দিয়েছিলেন। যেমন, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হুদুদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তারা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রিয় ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ “তুমি কি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত হুদুদের ব্যাপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহ্’র কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম”।
- মো. হাফিজুর রহমান
“দুই নদী পেরিয়ে স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের”
খবরঃ
নিকলীর গোড়াদিঘা গ্রামে মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। পঞ্চম শ্রেণীর পর পড়তে চাইলে গ্রামের শিক্ষার্থীদের দুটি নদী পেরিয়ে যেতে হয় দূরের গ্রামে। ...মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতে দিনে সময় লাগে ২ ঘণ্টা, খরচ হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এতে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পঞ্চম শ্রেণীর পর ঝরে পড়ে। সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভোগে গোড়াদিঘার শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের কাছে বহুবার দাবি জানানোর পরও গ্রামটিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হয়নি। ..নিকলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান হাবিব বলেন, গোড়াদিঘায় এখন পর্যন্ত নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় করার পরিকল্পনাও নেই। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/gpvs3ro7ke)
মন্তব্যঃ
শিক্ষার অবকাঠামোর এই বেহাল দশা শুধুমাত্র নিকলীর গোড়াদিঘা গ্রামেরই নয় বরং সমগ্র দেশেরই চিত্র। আমরা দেখি, একদিকে উন্নয়নের গালগল্প করার জন্য মেগা অবকাঠামোগত প্রজেক্ট নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা (যদিও তা মেগা দুর্নীতির লক্ষ্যে) চলছে, অন্যদিকে গোড়াদিঘার মত বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রামগুলোতে শিক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করে শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে, যেমন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে (https://bangla.thedailystar.net/youth/education/news-488571)।
প্রশ্ন হল, শিক্ষা খাতের মাধ্যমে তৈরি প্রজন্মের গুণগত মানের সাথে যেখানে দেশের উন্নয়নের গভীরতম সম্পর্ক, সেখানে এই খাতের প্রতি বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী শাসকদের চরম উদাসীনতার কারণ কি? কারণ হলো, পুঁজিবাদের অন্যান্য নীতির মতোই শিক্ষা ব্যবস্থার নীতিগুলোও নির্ধারিত হয়েছে পশ্চিমাদের ফর্মুলা অনুযায়ী যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মুসলিম দেশগুলোতে তাদের তাবেদারী করার জন্য উন্নত মানের কেরানী শ্রেনী তৈরি করা, যার শুরু হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে। যার ফলে আমরা দেখি, শিক্ষাখাতে অবকাঠামোহীনতার পাশাপাশি মানহীন শিক্ষার উপকরণ, কারিগরি শিক্ষার অভাব, দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রতি অনীহা, গবেষণা খাতের উন্নয়ন না করা, মেধাবীদেরকে দেশের উন্নয়নের জন্য অবদান রাখার ব্যবস্থা করে না দিয়ে 'মেধা পাচার' করে দিয়ে পশ্চিমাদের উন্নয়নকে শক্তিশালী করা।
শিক্ষা ব্যবস্থার এই করুণ ভগ্ন দশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের বাধ্যতামূলক দরকার আদর্শভিত্তিক খিলাফত ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থার আছে দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভিশন। সেই ভিশন থেকেই আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা শিক্ষাখাতে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি আমাদের জন্য এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করবে যা তরুণ প্রজন্মকে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দক্ষ করে গড়ে তুলবে। আর আল্লাহ্ ইসলামকে দুনিয়াতে নেতৃত্বশীল থাকার জন্যই পাঠিয়েছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুর‘আন-এ বলেন, “কিছুতেই আল্লাহ্ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” (সূরা আন নিসা: ১৪১)। প্রকৃতপক্ষে খিলাফত রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য শিক্ষার যেকোন ধাপে গুণগতমান সম্পন্ন ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক বিষয়। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৭৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “একটা ফরজকে সম্পূর্ণ করতে যা কিছু করা প্রয়োজন সেটাও ফরজ”। খিলাফত রাষ্ট্র এই বাধ্যবাধকতার দায়িত্ব থেকেই আমরা দেখেছি যে, এমন একটা কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল যেখান থেকে ইবনে সিনা (চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক), জাবের ইবনে হাইয়ান (রসায়ন বিজ্ঞানের জনক), ইবনে খালদুন (আধুনিক অর্থনীতির জনক), আব্বাস ইবনে ফিরনাস (বিমান চালনার জনক), আল বিরুনী (আধুনিক ফার্মেসীর জনক) এর মত অসংখ্য স্কলার তৈরি হয়েছিল যারা এখনও পশ্চিমাদের কাছে আদর্শ।
- জারা ইসলাম