দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে: উপদেষ্টা মাহফুজ



খবরঃ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্তব্য করেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি একটি ছদ্ম-যুদ্ধ চালাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সে যুদ্ধ অন্য জায়গা থেকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়তে হবে। (www.ittefaq.com.bd/722774/দেশে-এখন-যুদ্ধ-পরিস্থিতি-বিরাজ-করছে-উপদেষ্টা)

মন্তব্যঃ

হাসিনা গোষ্ঠীর যুলুম-বৈষম্য-নিপিড়ন থেকে বাঁচার জন্য ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে গণ-অভ্যুত্থান করেছে। গত নয় মাসে নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা সকল কিছুর অবস্থার উন্নতির বিপরীতে অবনতি হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দিল্লি না ঢাকা - ঢাকা, ঢাকা; দালালী না মুক্তি – মুক্তি, মুক্তি, যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও বিদেশী আধিপত্য থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় গত ১৫ বছরের সংগ্রাম ও হাজার-হাজার ছাত্র-জনতার জীবন দানের পর একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি’ মাহফুজ বলেছে এবং প্রফেসর ইউনুসও একই কথা কয়েকবার বলেছে। এতে স্পষ্ট যে, ব্যর্থতাকে ঢাকতে মাহফুজগংরা গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি- বিপক্ষের শক্তির মধ্যে যুদ্ধের কথা বলে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’-এর একটি ন্যারেটিভ তৈরি করছে, যেমনটি যালিম হাসিনাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি-বিপক্ষের শক্তি ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল ও এটাকে নিপিড়নের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পার্থক্য হচ্ছে হাসিনা চোখ রাঙিয়ে ন্যারেটিভ রচনা করতো আর ইউনুস-মাহফুজরা ইন্টেলেকটুয়াল ঢংগে কিছুটা ভোলা-ভোলা ভাবে কিছুটা অনভিজ্ঞতা দেখিয়ে বরং আরও ভয়ংকর কথা বলছে। তারা জেনে বুঝেই সুপরিকল্পিতভাবে ‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি’র মত এই ভয়ংকর ন্যারিটিভ তৈরি করছে।

‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি’র কথা বলে তারা শুধু রাষ্ট্রের সরকার, প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সন্দেহ, অস্থিরতা ও অবিশ্বাস উস্কে দিচ্ছে তা নয়। তারা মব পালছে এবং একপক্ষকে মুসলিমদের আক্বিদায় আঘাত করতে প্রশ্রয় দিচ্ছে। আবার প্রতিক্রিয়া দেখানোয় ‘তৌহিদি জনতা’কে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এরা এমনকি ইসলামের সত্য-সঠিক রুপকে পরিবর্তন করে বংগীয় ইসলাম, সুফী ইসলাম, ইসলামী জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি ধারণা গ্রহণ করার জন্য মুসলিমদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে এবং একইসাথে ইসলাম বিদ্বেষের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, এলজিবিটিসহ ভয়ংকর সব পশ্চিমা সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করেছে।

আমেরিকা-ভারতের দালালরা যখন দেশকে অকার্যকর করার ধ্বংসাত্মক প্রকল্প নিয়ে এগোচ্ছে তখন ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা স্পষ্ট করেছে যে তারা ইসলাম চায়। তারা হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নিজেদের ইসলামের আবেগ ও চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল এবং অভ্যুত্থানের পর তারা কালেমার পতাকা তুলে ধরে, মার্চ ফর খিলাফত ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে ইসলামি ব্যবস্থার দাবিও স্পষ্ট করেছে। মদিনায় যখন প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মুসলিম ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ কিংবা তারও কম। ভারতবর্ষেও ৮০০ বছরের মত ইসলামের শাসন ছিল এবং পুরো সময় জুড়ে মুসলিমরা এখানে সংখ্যালঘু ছিল। অর্থাৎ ইসলাম একটি রাষ্ট্রের জনগণকে ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ করে দ্রুততম সময়ে উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। খিলাফত রাষ্ট্র নাগরিকদের মাঝে শাসন, বিচার-ফয়সালা এবং বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যবস্থাপনায় কিংবা এইধরনের অন্যান্য বিষয়ে কোন প্রকার কোন বৈষম্য করেনা, বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করে। ফলে খিলাফত রাষ্ট্রে শাসক কোন অযুহাতেই জনগণের মধ্যে বিভক্তি ছড়াতে পারবে না, বৈষম্য করতে পারবেনা। অতঃপর ছাত্র-জনতার উচিত ইসলামের শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামি ব্যবস্থা তথা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রকল্পকে একমাত্র রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে বিপ্লবকে পরিপূর্ণ করা।     

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন 

Previous Post Next Post