ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিলে গণতন্ত্রের কবর হবে: তারেক রহমান



খবরঃ

রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতার মাহফিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। এতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, জাতীয় পার্টিসহ (জাফর) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের র্শীষ নেতারা অংশ নেন। বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা এবং চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা পরিচয় দিলে, উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপরদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। দেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র সমুন্নত রাখতে চরমপন্থা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। (https://www.jugantor.com/politics/931349)

মন্তব্যঃ

তারেক রহমানের এই বক্তব্যটি একেবারেই পুরনো ধাঁচের রাজনৈতিক ন্যারেটিভ। সাধারণত, মার্কিন-বৃটিশ উপনিবেশবাদীরা ইসলামপন্থী রাজনৈতিক তৎপরতাকে “ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা” ও “চরমপন্থা” হিসেবে উপস্থাপন করে। যা মুলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” ভাষা। এই ভুয়া ন্যারেটিভ দিয়ে তারা ইরাক, আফগানিস্তান বিশ্বব্যাপী কয়েক মিলিয়ন মুসলিমকে হত্যা করেছে। ইসলামবিদ্বেষী এই পশ্চিমারা আবু বকর (রা.), ওমর (রা.)-এর প্রদর্শিত ইসলামী খিলাফত শাসনব্যবস্থাকে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ, চরমপন্থা ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে মুসলিমদের ইসলামী শারীআহ্‌ দ্বারা শাসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে আক্রমণ করে আসছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার পশ্চিমা প্রভুদের হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতি ও রাজনীতিবিদসহ আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের এধরণের ট্যাগ দিয়ে যুলুম-নির্যাতন করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে, জনগণ দ্বারা ঘৃণিত হয়ে তার লেজগুটিয়ে পালাতে হয়েছে। তারেক রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, আমেরিকার তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মত পুরনো রাজনৈতিক প্রকল্প যদি হয় বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, তাহলে বুঝতে হবে তারা হাসিনার পতন হতে শিক্ষা নেয়নি। 

সেকুলার রাজনীতিবিদরা হাসিনা পতনের আন্দোলনে ইসলামপ্রিয় জনগণ ও ইসলামপন্থীদের শক্তিকে কাজে লাগাতে খোড়া যুক্তি দিয়ে বলেছিল, আমেরিকা বিশ্বের অন্যত্র ইসলামের বিরুদ্ধে থাকলেও বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষে থাকবে এবং ভারতকে মোকাবেলায় আমাদের আমেরিকাকে পাশে লাগবে। কিন্তু, সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, আমেরিকা ও ভারত মুসলিমদের শাসনব্যবস্থা খিলাফতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এবং ভারতকে মোকাবেলায় আমেরিকা পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা বরং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের মতই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া অভিযোগ করেছে। আর তাই এখন সেকুলার রাজনীতিবিদরাও তাদের মার্কিন-ভারত নতজানু রাজনীতির কারণে খোলস পাল্টে সেই পশ্চিমাদের ঠংয়েই কথা বলছে। জনগণকে বাদ দিয়ে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল এসব রাজনীতিবিদদের হাতে দেশ একেবারেই নিরাপদ নয়। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে” [সূরা আল-মায়িদাঃ ৫১]।

বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতির কাঁধে ভর করে সবসময় সেকুলার রাজনৈতিকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসীন হয়েছে, এবং তারপর পশ্চিমাদের স্বার্থে দেশ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পূর্বে বিএনপি-আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পর্যন্ত প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। তাই দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ ও ইসলামপন্থীদের সচেতন হওয়া উচিত যাতে তারা সেকুলারদের ক্ষমতাসীন হওয়ার সিড়ি না হয়ে, ইসলামকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন করার রাজনীতি তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হন এবং এই লক্ষ্যে দেশের সকল রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন। “মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে তাদের সাথে আল্লাহ্‌’র কোন সম্পর্কে থাকবে না”[সূরা আলি-ইমরানঃ ২৮]

    -    রাশিদ হাসান মেহেদী


Previous Post Next Post