শরিয়া আইনে ধর্ষণের বিচার দাবি



খবরঃ

‘ধর্ষণ প্রতিরোধে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা আমাদের জন্য প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক একজন জন্মগত পুরুষকে ‘অদম্য নারী’ পুরস্কার সুকৌশলে সমাজে পশ্চিমা বিকৃত যৌন মতবাদ প্রসারের সচেতন প্রচেষ্টা চলছে। এ ধরনের প্রয়াস অবক্ষয়ের পথকে আরও প্রশস্ত করবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামি শরিয়ার বিধান প্রকাশ্য ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ধর্ষণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের চেয়ে বেশি কার্যকর।’ সোমবার (১০ মার্চ) ওলামা-জনতা ঐক্য পরিষদের আয়োজনে ধর্ষণ ও অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ধর্ষণের বিচার শরিয়া আইনে করলে শিশু আছিয়ার মতো আর কেউ ধর্ষিতা হতো না বলে মন্তব্য করেন তারা। (https://www.kalbela.com/politics/170681

মন্তব্যঃ

সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণের সংবাদগুলো সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের আবেগকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিচ্ছে। জনগণ ধর্ষণের বিচারে দেশের প্রচলিত আইন এবং প্রশাসনিক কাঠামোর উপর বিন্দুমাত্র আস্থা রাখতে পারছে না। সমাজের সকল শ্রেণীর কাছ থেকে ধর্ষণের বিচার আইনের অমূল পরিবর্তন দাবী উঠছে। উল্লেখযোগ্য অংশ দাবী করছে শরিয়া আইনে ধর্ষণের বিচার হচ্ছে একমাত্র সমাধান। কিন্তু, ধর্ষক তৈরির কারখানা পুঁজিবাদি ব্যবস্থা যেখানে নারীকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে দেখানো হয় তা অটুট রেখে শুধুমাত্র শারিয়া আইন বাস্তবায়ন করে কি ধর্ষণের মত বিভৎস নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো থেকে মুক্তি সম্ভব? শারীয়া আইন ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি অংশ যা মূলত অপরাধের শাস্তির বিষয়াদি কাভার করে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে বাস্তবায়ন না করে কি ইসলামি ব্যবস্থার আউটপুট বোঝা সম্ভব? ইসলামে নারীকে দেখা হয় সম্মানের প্রতীক হিসাবে এবং নারীর সম্ভ্রমহানী যুদ্ধ ঘোষণার মত গুরুতর অন্যায়। ইসলামি সমাজে নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশা এবং নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে মুনাফা অর্জন বৈধ নয়। রাষ্ট্র নারীদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থানের পৃথক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাধ্য। নারীদের অভ্যন্তরীণ স্পেসে মাহরাম (যার সাথে বিয়ে বৈধ নয়) পুরুষ ব্যাতীত অন্য কারও প্রবেশ করার সুযোগ নাই। তারপরেও, যদি কেউ অন্যায়ভাবে নারীদের অভ্যন্তরীণ স্পেসে প্রবেশ করে বা কোন অন্যায় করে শারীয়া তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সম্মুখীন করে কোন প্রকার সময়ক্ষেপণ এবং পক্ষপাতিত্ব ব্যতীত। সামগ্রিকভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন না করে শুধুমাত্র শারীয়া আইন বাস্তবায়ন নারীদের সম্মান শুধুমাত্র রক্ষা করা অসম্ভব হয় না বরং নতুন নতুন অনেক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের তথাকথিত ইসলামি বিপ্লবের পরে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীয় আইন বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন না করার কারণে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার সুফল দৃশ্যমান নয়। ফলে ইরানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগণ সরকারের বিরোধীতা করতে গিয়ে শারীয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ইরান: হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সারা দেশ, নিহত ৯, বিবিসি বাংলা, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২। খন্ডিতভাবে ইসলাম গ্রহণ করলে ইসলামের সৌন্দর্য্য যেমন দেখা যায় না তেমনি বাস্তবায়নকারীরাও আল্লাহর আদেশ পালনে ব্যর্থ হন, “..তাহলে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? অতএব তোমাদের যারা এমন করে তাদের পার্থিব জগতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কী প্রতিদান হতে পারে..“ (সূরা বাকারা ৮৫)।

সুতরাং, মুসলিমদের খন্ডিতভাবে ইসলাম বাস্তবায়নের উপনিবেশবাদীদের ট্র্যাপ থেকে বেরিয়ে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম বাস্তবায়নের দাবি করতে হবে। “হে মু‘মিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু” (সূরা বাকারা: ২০৮) 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post