খবরঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করা নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র লক্ষ্য দেশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। সেকেন্ড রিপাবলিকে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে মূলধারায় তুলে আনা হবে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের রিপাবলিকে সাধারণ মানুষ, একমাত্র সাধারণ মানুষই হবে ক্ষমতার সর্বময় উৎস। আমরা রাষ্ট্রে বিদ্যমান জাতিগত, সামাজিক, লিঙ্গীয়, ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও বৈচিত্র্য রক্ষার মাধ্যমে একটি বহুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই। (www.prothomalo.com/politics/cwxtxpi2vt)
মন্তব্যঃ
জাতীয় নাগরিক পার্টি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অটুট রেখে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ করতে চায়! অথচ গণতন্ত্র, নির্বাচন, সরকারের জবাবদিহিতা, ইত্যাদি ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই ছাত্র-জনতা পরিবর্তনের জন্য রক্ত দিয়েছে। যালিম হাসিনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান এবং আইনকানুন ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনগণের উপর চেপে বসেছিল। ইউরোপের রেনেসার পর পশ্চিমা এই আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া বিশ্বের সব রিপাবলিকই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পুরণে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স, স্পেন, পোল্যান্ড, ঘানা ইত্যাদিতে এই ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ শব্দযুগল ব্যবহার করে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। বলাবাহুল্য সেসব উদ্যোগও ব্যর্থ হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশসমূহের শাসক যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদী, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এদেরকে দেখলেও আমরা বুঝতে পারি যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেমন শাসক তৈরি করে। অথচ ‘জানাপা’র নেতারা সেই ‘Dead Horse’ কেই জাগিয়ে তুলতে চাচ্ছে?
বাস্তবতা হচ্ছে সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদ এগুলো শোষণমূলক পুঁজিবাদী জীবনাদর্শেরই অংশ। এই মতবাদগুলো রাষ্ট্রকে শাসকগোষ্ঠী, কতিপয় পুঁজিপতি, এবং উপনিদেশবাদীগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে ঠেলে দেয়। গণতন্ত্রে মানুষের হাতে আইন-প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতা অপব্যবহার করে কারও স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে অন্য কারও উপর বৈষম্য করে, বৃহত্তর জনগণকেই মাইনরিটিতে পরিণত করে, আইন-প্রণয়নের স্বাধীনতা মানুষের হাতে রেখে দিলে কোন ধরণের চেক এন্ড বেলেন্সই কাজ করে না, সেটা গত ২৫০-৩০০ বছরের ইতিহাসেও পরিষ্কার। তাই, এই ব্যবস্থা বজায় রেখে ফার্ষ্ট, সেকেন্ড কেন হাজার বার রিপাবলিক গঠন করলেও যুলুম, বৈষম্যের অবসান হবে না, জনগণের প্রকৃত মতামত, শাসকের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
তাই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, অবশ্যই বিদ্যমান পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিলুপ্তি ঘোষণা করতে হবে এবং ইসলামী ব্যবস্থা দ্বারা রাষ্ট্রকে সাজাতে হবে। ইসলামী ব্যবস্থায় আইন দাতা একমাত্র আল্লাহ্, আর কর্তৃত্ব জনগণের। শাসন করার জন্য মুসলিমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে খলিফা নিয়োগ করবেন যিনি শুধু এবং কেবলমাত্র আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন (কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও কিয়াস) তার ভিত্তিতে শাসন করবেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যেকেউ এটা সুস্পষ্টভাবে দেখবে যে, ইসলামের শাসনে সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষেরই অধিকার, মর্যাদা সুরক্ষিত ছিল। ইসলামী ব্যবস্থার মধ্যেই আছে কার্যকর প্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতার সুযোগ। খিলাফত ব্যবস্থায় আছে শাসকের আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করার ভয়, আছে মজলিশ-আল-উম্মাহ (জনগণের প্রতিনিধি পরিষদ), মাহকামাতুল মাজালিম (শাসককে বিচারের আদালত) এর মত প্রতিষ্ঠান ফলে দুর্বলতম ব্যক্তিও রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত থাকে এবং তার অধিকার নিশ্চিত হয়।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন