এখন রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন: নাহিদ ইসলাম

 


খবরঃ

সরকারে থাকার চেয়ে এখন রাজপথে থাকা বেশী প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পদত্যাগ করা অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, সে আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণঅভ্যুত্থানে যেসব ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে সেই শক্তিকে সংহত করতে আমি পদত্যাগ করেছি।” প্রসঙ্গত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে নাহিদ ইসলামকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। (https://www.kalbela.com/national/167192)

মন্তব্যঃ

তথাকথিত গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করা নাহিদ ইসলাম কী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া (!) অনুসরণ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা হয়েছিলেন? আর পদত্যাগের পর তিনি যে নতুন রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সেটিও কী তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া (!) অনুসরণ করে হয়েছে? নাকি সমঝোতা ও জোর খাটানোর মাধ্যমে তিনি উপদেষ্টা ও দলের নেতা হয়েছেন? মূলত: কথা ও কাজের অমিল সেকুলার রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের একটি পুরোনো রোগ, এবং নাহিদ ইসলাম প্রমাণ করেছে তিনিও এই রোগ থেকে মুক্ত নন। দেশের মধ্যে এক ধরনের ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং কয়েক দশকের অথর্ব ও ব্যর্থ রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের নেতিবাচক জনমতের উপর ভর করে প্রায় ২০ কোটি জনগণের পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণ ও তত্ত্বাবধানের কোন জ্ঞান ও যোগ্যতাবিহীন কতিপয় ছাত্রনেতাদের দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার চিন্তাটি একটি আত্মঘাতী চিন্তা। কারণ সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, দেশের ৯৯.৯৯% ছাত্র আন্দোলনকারীদেরকে বঞ্চিত করা, ছাত্রজনতার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা ও সরকারী সুযোগসুবিধা কুক্ষিগত করা এবং সম্প্রতি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় এই গুটিকয়েক ছাত্রনেতারা ইতিমধ্যেই নিজেদেরকে বিতর্কিত এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপির শিশু-ভার্সন হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর নাহিদ ইসলামের তত্ত্বাবধানে মোবাইল ইন্টারনেট নিয়ে গ্রাহকদের সাথে কোম্পানীগুলোর চরম স্বেচ্ছাচারিতা ও অযাচিত মূল্যবৃদ্ধি প্রমাণ করে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার কোন স্বদিচ্ছা ও সামর্থ্য তার নেই।

মূলত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার পর এই অভিযোগকে পাশ কাটানোর জন্য নাহিদ ইসলাম পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু জনগণের সাথে চালাকি করে তিনি তার বাকি দুই ছাত্র সহযোগীকে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে রেখে দিয়েছেন যেন দলগঠন পরবর্তী ও নির্বাচনকেন্দ্রীক কর্মকান্ডে সরকারের ক্ষমতা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে রাখতে পারেন। ঠিক যেভাবে চালাকি করে আমেরিকার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যস্বরূপ সমকামী ও LGBTQ-নেতা মুসতাসির-কে নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিবের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার সময়ে তারা মনে করেছিল জনগণ তা টের পাবে না! তাছাড়া, জেলা প্রশাসকদেরকে দিয়ে সরকারীভাবে বাস রিকুইজিশন করে সারাদেশ থেকে দল ঘোষণার অনুষ্ঠানে মানিক মিয়া এভিনিউতে লোকসমাগম এবং নাগরিক পার্টির নেতাদের পুলিশের প্রটোকল প্রাপ্তি প্রমাণ করে সরকারী ক্ষমতার অপব্যহার তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। 

নাহিদের এই পদত্যাগকে মহান হিসেবে মনে করার নূন্যতম কোন কারণ নেই। রাজপথে অবস্থান ও আন্দোলন মূলত শাসককে জবাবদিহিতার উদ্দেশ্যে করা হয়। নাহিদের পদত্যাগ বা নতুন দল গঠন কোনটিই অন্তবর্তী সরকারের অপশাসনকে জবাবদিহি করার জন্য গঠিত হয়নি, বরং অন্তবর্তী সরকারের হয়েই রাজনীতির মাঠ দখলে রাখা ও সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে আগামীতে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখা অথবা অন্তত ক্ষমতার সামান্য ভাগ হলেও তা নিশ্চিত করতেই এই পদত্যাগ ও নতুন দল গঠনের প্রজেক্টটি সামনে আনা হয়েছে। তারা মুখে ভারতপন্থী-পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির কবর রচনার (যার প্রবক্তা মাহফুজ আবার উপদেষ্টা হিসেবে সরকারে বসে আছে) কথা বলে দেশের মধ্যে আমেরিকাপন্থী রাজনীতির জোয়ার ঘটাতে চাচ্ছে, যা আরো বড় আকারের গাদ্দারীর নমুনা। নতুন রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, তবে এই শক্তি হতে হবে সাম্রাজ্যবাদ ও কুফর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিরোধী ‘আদর্শিক ইসলামের’ ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক শক্তি; যারা বিদেশি হস্তক্ষেপকে চিরতরে নির্মূল করবে এবং সেকুলার রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থাকে শিকড়সহ উপড়ে ফেলবে। 

    -    রিদোয়ান আহমেদ


Previous Post Next Post