খুব ভালো আছেন’ তামিম, দুদিন পর যেতে পারবেন বাসায়




খবরঃ

হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কোল থেকে ফেরার পর এখন ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে তামিম ইকবাল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ৪৮ ঘণ্টা পর বাসায় ফিরতে পারবেন দেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার।… (https://bangla.bdnews24.com/cricket/a2957ecfec20)

মন্তব্যঃ

জনপ্রিয়  ক্রিকেটার তামিম ইকবালের দ্রুততম সময়ে আকস্মিক গুরুতর হৃদরোগের চিকিৎসার পরে তার সুস্থ হওয়াতে দেশের মানুষ যেমন খুশি হয়েছে, তেমনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তামিমের জায়গায় নিজেদের অসহায় ভোগান্তির কথা চিন্তা করে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কারণ তামিমের এই দ্রুত ও কার্যকরী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও ঠিক উল্টা ব্যপারটি ঘটে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে। দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার এতই দুরবস্থা যে, কেউ একজন যদি কিডনি, হার্টজনিত কিংবা অন্য কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়, তবে এর চিকিৎসা করাতে ধার-দেনা করে রীতিমত ভিটে-মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। তারপরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা নামক নুন্যতম মৌলিক অধিকারটুকু অপ্রাপ্য সোনার হরিণই থেকে যায়। (দেখুন, চিকিৎসায় অবহেলার শিকার প্রতি তিনজনে একজন: বিবিএসের জরিপ) আবার, দেশের জনগণের টাকায় সরকারি হাসপাতালগুলো তৈরি করা হলেও, সেগুলোকে অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পঙ্গু করে রেখে সাধারন মানুষকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই সুযোগে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রমরমা গলাকাটা বাণিজ্য চলছে। মানুষের অসহায়ত্বকালীন এই সুমহান সেবা পাওয়ার জায়গা, ‘ডাক্তারখানা’গুলো আজকে ‘কসাইখানা’তে পরিণত হয়েছে। (দেখুন, বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে সম্পূর্ণ মুনাফা-ভিত্তিক বাণিজ্য চলছে: টিআইবি) এখানে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ গলাকাটা বাণিজ্য যুগের পর যুগ ধরে চলছে, যে স্বত্ত্বাটির জনগণের অসহায়ত্বকালীন অভিভাবক হওয়ার কথা, সেই রাষ্ট্র নামক স্বত্ত্বার পৃষ্ঠপোষকতায়। আর এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং পুঁজিবাদী বিশ্ব মোড়ল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও চিকিৎসা ব্যবস্থার এই বেহাল দশা। (দেখুন, The State of Health Insurance Coverage in the U.S.) অর্থাৎ মানুষের সবচেয়ে অসহায় মুহূর্ত ‘অসুস্থতা’কে কেন্দ্র করে ফাঁদ পেতে এই বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী একটা মানবিক সংকট তৈরি করেছে। 

এর কারণ হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে অন্যান্য যেকোন প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করাকে একমাত্র মুনাফা লাভের উপায় হিসেবেই দেখা হয়। যেকারণে এখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠাপোষকতায় সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থাটিকে গুটিকয়েক পুঁজিপতি গোষ্ঠীকে তাদের মুনাফা লুটের হাতিয়ার হিসেবে তাদের নিকট তুলে দেয়া হয়। আর এটাও সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সরকারসমূহ বিভিন্ন পুঁজিপতিগোষ্ঠী কর্তৃক নিয়োগকৃত হয়। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ০.০১% পুঁজিপতিগোষ্ঠী মার্কিন নির্বাচনের তহবিলে ৪০% এরও বেশি ডলার বিনিয়োগ করে।

 তাই যে ব্যবস্থাটি মানুষের চরম অসহায়ত্বের মুহূর্তকে কিছু লোকের ‘মুনাফা লুটের সুযোগ’ মনে করে, সেই ব্যবস্থাটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। সেই সাথে আমাদের এমন একটা ব্যবস্থা দরকার, যে ব্যবস্থাটি চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে অভিভাবকত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবে। আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল”। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা (খিলাফত) ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাকে অভিভাবকত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে। ইতিপূর্ব খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন থাকার সময়ও এভাবেই দেখা হতো। এই ব্যবস্থার অধীনে ১৯২৪ সালে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত প্রায় ১৪০০ বছর ধরে বাগদাদের আদাদী হাসপাতাল, দামেস্কের নুরি হাসপাতাল, মনসুরী হাসপাতাল, মরক্কোর মারাকিশ হাসপাতালসহ হাজার হাজার হাসপাতালগুলোতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কোনরকম বৈষম্য ব্যতিরেকেই। এমনকি রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর রিলিজের সময় তাকে ভাতাও প্রদান করা হতো, যেন সে কর্মক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারে। শুধুমাত্র কর্ডোভাতেই ৫০টিরও বেশি হাসপাতাল ছিল। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইচ্ছায়, অতি শীঘ্রই আবার যখন এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনো তাই করা হবে (অভিভাবকত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হবে)। এই লক্ষ্যে সবার আগে নাগরিকদের স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন নিশ্চিত করা হবে। তারপর ওষুধ এবং মেশিনারীজ তৈরিতে প্রয়োজনীয় গবেষণায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হবে। যেকোনো রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। সর্বোপরি একটি মুনাফাকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যেখানে ওষুধ কোম্পানি, হাসপাতাল ব্যবসায়ী কিংবা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত লোকজন এটাকে শুধুমাত্র তাদের মুনাফা লাভের হাতিয়ার মনে করবে না।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post