খবরঃ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি পালনের দিনে হঠাৎ কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতার সফর নিয়ে আলোচনা চলছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার কিছু পর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান এনসিপি’র নেতারা। পাঁচ নেতা হলেন- দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। বিমানবন্দর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে সরাসরি কক্সবাজারের ইনানীস্থ হোটেল সি-পার্লে পৌঁছান তারা। তখনই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠক’ করছেন এনসিপি নেতারা। এই খবরে হোটেলের সামনে অবস্থান নেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতারা। যদিও পরে পরিষ্কার হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে নেই। এছাড়া এনসিপি নেতারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি কাটাতে তারা সেখানে যান। তবে অনেকে প্রশ্ন করেছেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া নেতারা বিজয়ের বার্ষিকীর দিনের এই সফরের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা। (https://mzamin.com/news.php?news=174172)
মন্তব্যঃ
২০২৪ এর ৫ আগস্ট ভারতের মদদপুষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নের পর বহু মানুষের আশা ছিল, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে এইবার সত্যিকারের সার্বভৌমত্ব অর্জন করবে। আর কোন ঔপনিবেশিক শক্তির কালো ছায়া আর এই অঞ্চলে পড়বে না। জনগণ আশা করেছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই তরুণ নেতৃত্ব এবং তাদের তৈরি দল সেই জনআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করবে। কিন্তু ওয়াশিংটন মদদপুষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং মার্কিন এম্বেসীতে ভিক্ষারত রাজনৈতিক দলগুলোর মত নবগঠিত এনসিপির নেতৃত্বও যে আসলে ভিন্ন কিছু না, তাই স্পষ্টভাবে প্রমাণ হল। মূলতঃ এটাই স্বাভাবিক বিষয় যে উপনিবেশবাদী আদর্শের মধ্যে থেকে ওয়াশিংটন, লন্ডন কিংবা দিল্লীর দাসত্ব না করে ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরের বিষয়, ক্ষমতায় যাওয়ার দৌড়েও টিকে থাকা যায় না।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর এক সম্ভাবনাময় সময়ে এই তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমেই যখন আদর্শিক পরিবর্তন আনার সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি হয়েছিল, তখন তারা জনগণের আবেগ এবং বিশ্বাস থেকে ইসলামের আদর্শকে ধারণ না করে হয়ে উঠল খিলাফত ধ্বংসে ষড়যন্ত্রকারী “ইয়াং টার্ক”-দের মত, যারা উম্মাহ্’র আবেগ ও বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করেছিল, এবং ব্রিটেনের সাথে যোগসাজস করে কামাল আতাতুর্ককে সহায়তা করেছিল মুসলিমদের রক্ষাকবচ খিলাফতকে ধ্বংস ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাস্তবায়ন করতে।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সময় থেকে যুগে যুগে তরুণরা ইসলামের ছায়াতলে উম্মাহ্-কে বারবার নিয়ে আসাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কারণ তারা আল্লাহ্-কে রব ও তাঁর বাণীকে চিরসত্য এবং তাঁর পুরষ্কারের ওয়াদার উপর ভরসা করে শত অত্যাচার, সম্পদ ও ক্ষমতার লোভ লালসাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পেরেছিলেন। যেমন ১০৪৬ সাল থেকে ১১৪৭ এর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল আল মুরাবিতুন দলের হাত ধরে। সেসময় আফ্রিকায় ধর্ম হিসেবে ইসলাম আসলেও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তরুণ নেতাদের হাত ধরেই আফ্রিকা থেকে ধীরে ধীরে খ্রিষ্টান ক্রুসেডারদের কাছ থেকে স্পেনের আন্দালুস খিলাফতের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হয়। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি তরুণ নেতাদের জন্য। ১০০ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেল পুরো বিশ্ব অভিভাবকহীন অবস্থায় দাঁড়ানো। ব্রিটেন আমেরিকার এই অপমানজনক দাসত্ব থেকে বের হয়ে বিশ্বকে আলোর দিকে, ইসলামের দিকে, খিলাফতের দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাই হতে পারে তাদের এই অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে সম্মানিত হওয়ার একমাত্র উপায়। “সমস্ত মর্যাদা তো আল্লাহ্’র জন্য, এবং তাঁর রাসূলের জন্য, এবং মুমিনদের জন্য; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সূরা আল-মুনাফিকুন: 8)
- জাবির জোহান
