বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার লাইটনিং-২০২৫’ শুরু



খবরঃ 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের ছয় দিনব্যাপী যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার লাইটনিং-২০২৫’ আজ শুক্রবার সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে শুরু হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আজ শুক্রবার সকালে প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড প্রাঙ্গণে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল মেজর জেনারেল অ্যাসকট এ উইন্টার। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, এই মহড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড ও যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা ন্যাশনাল গার্ডের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এটি চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিধান, সন্ত্রাস দমন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মানবিক সহায়তা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে (https://www.prothomalo.com/bangladesh/oef66zydng)। 

মন্তব্যঃ 

বাংলাদেশে ‘টাইগার লাইটনিং–২০২৫’ শীর্ষক বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌ গাজায় চলমান নজিরবিহীন গণহত্যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে, আমেরিকার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ শুধু দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি চরম অবমাননাই নয়, বরং ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত আমেরিকার বহুমুখী যুদ্ধে নিজেদেরকে আত্মসমর্পণকারী অনুগত সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠারই নামান্তর। অথচ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে (কাফের এবং মুশরিকদেরকে) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না,  তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ক্রটি করবে না; তারা যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে” ( সূরা আলি ইমরানঃ ১১৮)। এর মাধ্যমে মার্কিন অনুগত শাসকগোষ্ঠী আল্লাহ্‌, তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করার পথ প্রশস্ত করছে।

ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থায় এটি বারবার প্রতীয়মান যে, রাজনৈতিক দালালগোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কিংবা ক্ষমতায় আরোহন করতে বৈদেশিক শক্তির কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে। যেভাবে যালিম হাসিনা একসময় বলেছিল, “আমি ভারতকে যা দিয়েছি, ভারত তা আজীবন মনে রাখবে,” তেমনি বর্তমান মার্কিন অনুগতগোষ্ঠীও দেশের সার্বভৌমত্ব মার্কিন স্বার্থে উৎসর্গ করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে, সর্বস্তরের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও মার্কিন উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়কে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। আমেরিকার সাথে সামরিক মহড়ার এই আয়োজন মার্কিন বাহিনীকে আমাদের সামরিক বাহিনীর কাছে ‘স্বাভাবিক’ করে তোলার প্রক্রিয়ার একটি অংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকা তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে  চীনকে প্রতিহত করা এবং মিয়ানমারের ব্রিটিশ-সমর্থিত সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আমাদের বাহিনীকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এত ত্যাগ, এত রক্তের বিনিময়েও এদেশের জনগণ উপনিবেশবাদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারে নাই, এর মূল কারণ জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে শুধুমাত্র দালাল পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু দালাল তৈরির কারখানা এবং উপনিবেশবাদের মূল শেকড় ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার মূলোৎপাটন হয়নি, যার কারণে আমরা উপনিবেশবাদীদের এক দালাল সরিয়ে আরেক দালালকে ক্ষমতায় বসানোর দুষ্ট চক্রে বন্দী।

এই বাস্তবতা আমাদের স্পষ্ট শিক্ষা দেয় যে, কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা মুক্তির আন্দোলন শুধুমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব নয় বরং এর জন্য প্রয়োজন একটি আদর্শভিত্তিক, জীবনব্যবস্থাগত পরিবর্তন। আমাদের মুক্তির একমাত্র পথ হল ইসলামী আদর্শভিত্তিক খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করা। খিলাফত রাষ্ট্র কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শভিত্তিক ব্যবস্থা, যা রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক উপনিবেশবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে সক্ষম। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছে ঢালস্বরুপ, যার নেতৃত্বে  মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের রক্ষা করে”  (মুসনাদে আহমদ)।  খিলাফত রাষ্ট্র আমেরিকাসহ সকল উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোকে মোকাবিলা করবে “আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা” অর্থাৎ, আল্লাহ্‌’র জন্য বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার নীতির ভিত্তিতে। খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামী আক্বিদার ভিত্তিতে মুসলিম সামরিক বাহিনীগুলোকে একটি ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল বাহিনীতে রূপান্তর করবে, যারা আধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে বিশ্বমঞ্চে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এই বাহিনীর উপস্থিতি এমন হবে, যা আমেরিকাসহ সকল কুফরি শক্তির অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলবে। মুসলিম বাহিনী খিলাফত রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকানসহ বিশ্বের সকল দখলকৃত মুসলিম ভূমিকে মুক্ত করার অগ্রসেনানী হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “আর তোমরা তাদের (শত্রুদের) মোকাবিলার জন্য তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী শক্তি প্রস্তুত রাখো, আর প্রস্তুত রাখো অশ্ববাহিনী, যাতে তোমরা তা দ্বারা আল্লাহর শত্রু এবং নিজেদের শত্রুদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে পারো। আর এমন আরও অনেককে ভয় দেখাতে পারো, যাদেরকে তোমরা চিনো না, কিন্তু আল্লাহ্‌ তাদের চেনেন।” (সূরা আনফাল: ৬০)।  

    -    মোঃ জাফর আহমেদ 


Previous Post Next Post