খবরঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের উপকূল অঞ্চল অফুরন্ত সম্ভাবনার আধার। সমুদ্র, উপকূলীয় অঞ্চলের সম্পদ ও পরিবেশের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। (https://www.ittefaq.com.bd/745590/)
মন্তব্যঃ
দেশের মানুষ নানাভাবে বঙ্গোপসাগরের উপর নির্ভরশীল এবং এটার সাথে দেশের কৌশলগত সামর্থ্য, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব জড়িত। ফলে মানুষ বঙ্গোপসাগরের কথা ভুলে না। কিন্তু ডঃ ইউনুস, যিনি সেন্টমার্টিনকে কার্যত অবরুদ্ধ করে সেখানকার মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা নষ্ট করেছেন এবং নিউ-মুরিং টার্মিনালকে বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন, তিনি কেন তার শাসনের এক বছর পূর্তির এমন গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে বঙ্গোপসাগরকে এত বেশী করে স্মরণ করলেন তা চিন্তার উদ্রেক করে। দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এবং কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য বঙ্গোপসাগরের উত্তম ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী সন্দেহ নাই। কিন্তু দেশের মানুষ বারবার দেখেছে আমাদের শাসকরা তা না করে এটিকে বিদেশীদের খুশী করার জন্য ব্যবহার করেছে। ড. ইউনুসের বক্তব্যে বঙ্গোপসাগর নিয়ে বন্ধু দেশসমূহের সাথে আলোচনার কথা শুনলে সেই আশংকা আবার জেগে উঠে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার ‘Burma Act’ প্রণয়ন এবং আরাকান আর্মিকে মিয়ানমারে তার স্বার্থে প্রক্সি শক্তি হিসেবে ব্যবহার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা। এবং ইউনুস সরকারের জাতিসংঘের মহাসচিবকে কক্সবাজারে নিয়ে এসে আরাকান করিডরের পরিকল্পনা তুলে ধরার প্রেক্ষাপটে দেশের মানুষের মধ্যে একটা আশংকা বিরাজ করছে যে হাসিনা যেভাবে তার বন্ধু ভারতকে চট্রগ্রাম ও মংলা বন্দরে কৌশলগত প্রবেশাধিকার দেয়ার চেষ্টা করেছে, ড. ইউনুসও একইভাবে তার বন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখানে প্রবেশ করাতে চাচ্ছে কি না? এক্সন মোবিল ও এক্সিলারেট এনার্জির মত মার্কিন কোম্পানীগুলো ইতিমধ্যে এখানে কাজ করা শুরু করেছে। এই অঞ্চলকেন্দ্রিক যুক্তরাষ্ট্রের মহাপরিকল্পনা Indo Pacific Strategy এর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই South China Sea এর পাশাপাশি Bay of Bengle এদেশটি তার নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চায়। বলাবাহুল্য একই সাথে চীনও মালাক্কা প্রণালীর বিকল্প রুট হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে মরিয়া। অন্যদিকে, ভারতের সেভেন সিস্টারের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্যও বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধু বলে যেকোন বিদেশীকে এখানে প্রবেশ করানো দেখলেই মানুষ ভয় পায়।
অতীতে আমরা দেখেছি কিভাবে মোঘল শাসকদের সরলতা ও ভুলের সুযোগে ব্রিটিশরা ব্যবসা ও উন্নয়নের কথা বলে কলকাতা, মাদ্রাজ ইত্যাদি বন্দরে প্রবেশ করে পরবর্তীতে পুরো ভারতবর্ষকে ২০০ বছরের উপনিবেশ করে রেখেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের Mediterranean, Persian Gulf, Arabian Sea, Red Sea, Suez Canal ইত্যাদি কেন্দ্রিক সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকার মত উপনিবেশবাদী দেশগুলো কি না করেছে! এই বিস্তৃত মুসলিম ভুমিকে সাইকোস-পিকো চুক্তি দিয়ে বিভক্ত করা, অসংখ্য যুদ্ধ তৈরি করা, ভুমি ও সম্পদগুলো উপনিবেশবাদীদের দালাল শেখদের হাতে তুলে দিয়ে এগুলোকে লুটে নেয়া, ইসরাইল প্রতিষ্ঠা, অসংখ্য মিলিটারী বেজ তৈরি করা, পেট্রো-ডলারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, অসংখ্য আন্তর্জাতিক আইন করা, অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করাসহ অনেক কিছু তারা করেছে এবং করছে। অর্থাৎ মুসলিম ভুমিগুলোর এই সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থানে বিদেশীদের প্রবেশ সমৃদ্ধিতো দূরে থাক এনেছে লাঞ্ছনা, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও গ্লানী।
মুসলিমরা একই ভুল বারবার করতে পারে না। তাই আমাদের অবশ্যই এধরণের যেকোন উদ্যোগকে প্রতিহত করতে হবে। এছাড়া আমাদের এমন একটা শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দরকার যা এই সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থানের সুরক্ষা ও সঠিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। খিলাফতই সেই ব্যবস্থা কারণ প্রথমতঃ সমুদ্র, নদী, বন্দর ইত্যাদি শারীআহ্ অনুযায়ী গণ-মালিকানাধীন সম্পদ। এগুলোকে সরকার লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা অন্যকোন উদ্দেশ্যে দেশী-বিদেশী কোন ব্যক্তি বা কোম্পানীর হাতে তুলে দিতে পারবে না। দ্বিতীয়তঃ যেকোন কৌশলগত সম্পদ কাফের উপনিবেশবাদীদের নিয়ন্ত্রণে দেয়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। কারণ আল্লাহ্ সুবাহানাহু তাআলা বলেন, “আর তারা যদি তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তবে তারা হবে তোমাদের শত্রু এবং তারা তাদের হস্ত ও রসনা প্রসারিত করে তোমাদের অনিষ্ট সাধন করবে……” (সুরা আল-মুমতাহিনা ২)। উসমানী খিলাফতের সময় ১৭৯০ সালের দিকে আমেরিকা জিব্রাল্টার প্রণালী ও ভুমধ্যসাগরে জাহাজ চলাচল করানোর জন্য আলজিয়ার্স, তিউনিস ও ট্রিপলীকে বছরে ১ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ট্যাক্স দিতো যা তৎকালীন মার্কিন ফেডারেল বাজেটের ১০-২০% ছিল।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
