খবরঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ সংসদীয় আসনের এক সভায় মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেওয়া বক্তব্য তাঁর দলীয় নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে প্রতিপক্ষকেও চমকে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে মামলা করেছে, আমরা সেভাবে মামলা করতে চাই না। যদি মামলা হয়ে থাকেও, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি– সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে’… অন্যদিকে দেশের প্রায় সর্বত্র জামায়াত এ দাবিও করে বেড়াচ্ছে– আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে তারা কোথাও কোনো মামলা দেয়নি। তাই শেষোক্তরা তাদের হাতেই নিরাপদ।… নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আন্তর্জাতিক মহলের পাশাপাশি জাতীয় স্তরেও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রসঙ্গ বেশি করে উঠছে। টকশোগুলোতেও ভোটে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ঘুরেফিরে উঠছেই। সরকার যুক্তি দিচ্ছে বটে- বিচার শেষ না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সুযোগ পেতে পারে না; কিন্তু ইতোমধ্যে সবাই তো আওয়ামী ভোটারদের কাছে পেতে চাইছে।… (https://samakal.com/opinion/article/324951/বিএনপি-জামায়াত-কেন-নৌকার-ভোটার-পেতে-চায়)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের জনগণ যতই ঘৃণা করুক না কেন, মার্কিন-ব্রিটেন-ভারত নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সেকুলার রাজনীতিতে হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রয়োজন ততদিন থাকবে যতদিন না এই উপনিবেশবাদীদের প্রয়োজন ফুরাচ্ছে। কারণ আওয়ামীলীগ হল, আল্লাহ্বিবর্জিত সেকুলার রাজনীতির আইকনিক দল। দেশের জনগণের নিকট চরমভাবে ঘৃণিত আওয়ামীপ্রধান হাসিনার মতো গণহত্যাকারীর সাক্ষাৎকার উপনিবেশবাদীদের পত্রিকাগুলোতে ছাপা হওয়া জুলাই গণহত্যার পক্ষে তাদের সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। (পড়ুন, তিন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন শেখ হাসিনা)। আর বাংলাদেশে অন্যান্য সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু তথাকথিত আন্তর্জাতিক শক্তির নামে উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর তোষণনীতির রাজনীতি করে, সেহেতু আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে তাদের পক্ষে সেক্যুলার রাজনীতি করাও সম্ভব না। (পড়ুন, জামায়াতকে কি ক্ষমতায় দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?) কারণ ‘আওয়ামীলীগ মুক্ত বাংলাদেশ’ চাইলে তাদেরকে ব্রিটেন-ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে, (পড়ুন, আ. লীগকে নির্বাচনে আনতে ইউনূসের ওপর ব্রিটেন-ভারতের চাপ বাড়ছে) যা ব্রিটিশ লিগ্যাসি অনুসরণ করার শাসন ব্যবস্থার কোন সেক্যুলার রাজনৈতিক দলের জন্য কঠিন। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে ব্রিটিশ লিগ্যাসি বহন করছে, তা আমাদের বর্তমান ধর্ম উপদেষ্টার স্বীকারোক্তিতেই উঠে এসেছে। আর যেহেতু ব্রিটেন-ভারত ও তাদের অনুগত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচরণ করা সম্ভব নয়, তাই তারা (সেক্যুলাররা) সুযোগ বুঝে তাদের দলের ভেতর আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ব্রিটেন-ভারতের আনুগত্য পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে শাসন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিছু আওয়ামী ভোট পেলেও মন্দ কি? এখানে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আওয়ামীলীগের গণহত্যার বিচার চাওয়া জনগণের দিকে কেউ খেয়াল করছে না। উল্টো আওয়ামী লীগ ব্রিটেনের সুপরিচিত আইনি সেবাদানকারী সংস্থা ডাউটি স্ট্রিট চেম্বারসের এক জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ দিয়েছে। তাই যতদিন এদেশে উপনিবেশবাদী বৃটেন-আমেরিকা-ভারত নিয়ন্ত্রিত স্রষ্টা বিবর্জিত রাজনীতি চলবে, ততদিন গণহত্যাকারীরা বারবার ছাড় পেয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তারা এদেশের রাজনীতিতে উপনিবেশবাদীদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায়, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পুনর্বাসিত হবে। এক্ষেত্রে জনগণ প্রত্যাশা সবসময় উপক্ষিত থাকবে।
এ অবস্থার সমাধানের জন্য কাফির-মুশরিকদের নিয়ন্ত্রিত সেকুলার রাজনীতি বাদ দিয়ে আমাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্দেশিত জনগণকে তত্ত্বাবধানের ও কাফের-মুশরিকদের হুমকি ও ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেয়ার ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমেরিকা-ব্রিটেন-ভারতের মতো কুফর রাষ্ট্রগুলো ‘শত্রুরাষ্ট্র’ হিসেবে বিবেচিত, তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও মিত্রতার সম্পর্ক রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত সত্য কোনও উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ র বান্দা ও তার রসূল...।” [সুনান আত তিরমিজি]। একারণে আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ)-এর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রায় ১৪শত বছর ধরে কুফর শক্তিগুলোর নিকট ছিল এক আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক আজও তারা বয়ে বেড়াচ্ছে, যার কারণে তারা এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাটির পুনরুত্থানের বিরুদ্ধে ‘ওয়ার এন্ড টেরোর’-এর নামে সর্বাত্মক ক্রুসেডের ডাক দিয়েছে। এই ক্রুসেডের ভয়ে সেক্যুলার রাজনীতিতে ঢুকে পড়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ঘটানো কখনোই মুসলিমদের পক্ষে সমীচীন নয়। তাহলে তারা কাফিরদের আনুকুল্য পাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও মুসলিমদের দ্বারা ঘৃণিত হবে।
- মো: জহিরুল ইসলাম
