বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা

 


খবর:

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ মূলধারার গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিক্ষোভ করছেন। বেশি আলোচনা হয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে। অনেকেই বলছেন জীবন বাজি রেখে তিনি দলের জন্য কাজ করে গেছেন। দিনের পর দিন পার্টির অফিসে রাত কাটিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দেয়া উচিৎ ছিলো। পি এম শোহেদুল ইসলাম নামে l ফেসকুকে লিখছেন, আমার মতে সেলিনা রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। তারিকুল ইসলাম নামে একজন ফেসকুকে লিখছেন, এরা সবাই অযোগ্য। দলীয় সূত্র জানায়, একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে মনোনয়ন না দেওয়ার নীতির কারণে অনেকে মনোনয়ন পাননি।(https://www.amadershomoy.com/political/article/164074/%E#gsc.tab=0)

মন্তব্য:

সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়ন ঘোষনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যমান সেকুলার গনতান্ত্রীক শাসনব্যবস্থা নিয়ে সমাজের কিছু মানুষের ভুল দৃষ্টিভঙ্গী ও নিরর্থক বিশ্লেষনের বিষয়টি আবারো সামনে হাজির হয়েছে। এই সেকুলার রাজনীতির সুবিধাভোগী কিছু মানুষ বারবার করে জনগনের সামনে উপস্থাপন করে যে, “দেশের বিদ্যমান মানবরচিত শাসনব্যবস্থাকে যদি শিক্ষিত, সৎ, ত্যাগী ও জনদরদী এমপি-মন্ত্রীদের দিয়ে ঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় তাহলে এই ব্যবস্থা দিয়েই বাংলাদেশের সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে অনেক সময় দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-এমপিদের কারণে ও পরিবারতন্ত্র চর্চার ফলে জনগনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।” এই দৃষ্টিভঙ্গি জনগনের মধ্যে বারবার করে পুশ করে এই ধরনের সেকুলার সুবিধাভোগীরা জনগনের কাছ থেকে আড়াল করে রাখে যে সমস্যার মূল আসলে ব্যক্তিতে নয়, মূল সমস্যা হল মানুষের হাতে আইনপ্রনয়নের (legislative) ক্ষমতা প্রদান। মানুষের হাতে আইন প্রনয়নের ক্ষমতা দিয়ে রেখে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরী বা শাসকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ শাসকদের নতুন আইন তৈরীর ক্ষমতা, বিদ্যমান আইনের ফাঁক-ফোকর, অস্পষ্টতা ও সুবিধামাফিক ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগের কারণে বাস্তবিক অর্থে শাসককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা অসম্ভব। আর কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যক্তিবিশেষকে বলির পাঠা বানিয়ে শাসক ও শাসনব্যবস্থাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়।

হাসিনার বিরুদ্ধে গনমানুষের ক্ষোভ ও বিস্ফোরন ছিল মূলত দেশের সেকুলার শাসনব্যবস্থার প্রতি মানুষের অনাস্থার সাহসী বহি:প্রকাশ। হাসিনার পতন পরবর্তী বিভিন্ন সভাসেমিনার, মিছিল-মিটিং ও সামাজিক মাধ্যমে মানুষের কথোপকথন থেকে এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার। কিন্তু বিগত ১৪ মাস ধরে জনগনের সেই অনাস্থা ও নতুন শাসনব্যবস্থার আকাঙ্থাকে ধীরে ধীরে অবদমিত করে এখন নির্বাচনী আলোচনা বাজারে ছেড়ে মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে যে দেশের মানুষ একটা প্রকৃত ও সামগ্রীক পরিবর্তন চেয়েছিল। নারী প্রার্থী, সংখ্যালঘু প্রার্থী, সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া না দেওয়ার বিষয়গুলিকে সামনে এনে এখন জনগনকে আবারো সেই পুরোনো হতাশা ও আক্ষেপের বৃত্তে বন্দি করার আয়োজন করা হচ্ছে। জনগনকে বলা হচ্ছে হয় ‘পরাজয় মেনে নাও’ অথবা ‘আমাদের অংশিদার হয়ে যা পার নিয়ে নাও, এটাই লাভ’। কিন্তু বাস্তবতা হল আইনপ্রনয়নের (legislative) ক্ষমতা মন্ত্রী-এমপিদের হাতে বহাল রাখার এই নির্বাচন ও সেকুলার শাসনব্যবস্থা বহাল রাখার এই অপচেষ্টা বাংলাদেশের জনগনকে নতুন দুর্গতি ছাড়া কিছুই উপহার দিতে পারবে না। এটা নিশ্চিত। কারন, ‍যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? এজন্যই আইনপ্রনয়নের (legislative) ক্ষমতা আল্লাহ নিজের হাতে রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের একমাত্র রব…., সৃষ্টি করা ও বিধান দানের কর্তৃত্ব একমাত্র তারই জন্য। এবং সকল বরকত তারই হাতে, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক” (সূরা আল-আরাফ:৫৪)।


    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post