Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৪১ তম সংখ্যা । ১৪ জানুয়ারী, ২০২২
“যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেওয়ার খবরটি গুজব: পলক”
খবরঃ
বাংলাদেশের কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্য মিথ্যা মিলিয়ে নানা তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। এই ধারাবহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নামও এসেছে। ফেসবুকে বিভিন্ন আইডি থেকে দাবি করা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় সফরে থাকার পরও পলক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেননি। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। (samakal.com/bangladesh/article/220191932/যুক্তরাষ্ট্রে-ঢুকতে-না-দেওয়ার-খবরকে-গুজব-বলছেন-পলক)
মন্তব্যঃ
ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের শাসক-বুদ্ধিজীবী
কিংবা একই আক্বিদায় বিশ্বাসী তাদের প্রতিপক্ষরা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদেরকে তাদের প্রভু মনে করে, এটা
আরেকবার জনগণের সামনে নির্লজ্জভাবে উপস্থাপন করলেন।
তারা যখন ক্ষমতায় আসে পশ্চিমাদেরকে সন্তুষ্ট করে ক্ষমতায় আসে।
যেমন, ২০০৮
সালে বর্তমান সরকার মার্কিন-ব্রিটেনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় আসে।
তারপর, প্রথমে তারা তাদের স্বার্থের প্রধানতম বাধা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মেধাবী ও নিষ্ঠাবান অফিসারদেরকে হত্যায় মুশরিক রাষ্ট্র ভারতকে সহযোগীতা করে। আমাদের কৌশলগত সম্পদসমূহ এবং সার্বভৌমত্ব সাম্রাজ্যবাদী কাফির-মুশরিকদের হাতে সমর্পন করে এবং এর জন্য প্রয়োজনে দায়মুক্তি আইন (২০১০ সালে) তৈরি
করে।
এর বিনিময়ে তারা পায় পাশ্চাত্যের অনুগ্রহে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার সুযোগ।
সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা দেশের মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে পশ্চিমা দেশগুলোতে জমা করে।
তাদের সন্তানেরা সেখানকার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পায়।
সেখানে বাড়ি-গাড়ি-ব্যবসা-চাকরি এবং নিরাপদে বসবাসের সুযোগ পায়।
এমনকি তারা প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলেও সেখানে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পায়।
অথচ পশ্চিমাদের জঘন্যতম অপরাধ পুরো পৃথিবীতে সর্বজনবিদিত।
সম্প্রতি গ্লোবাল রিসার্চঃ সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন প্রকাশিত এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ৭৬ বছরে আমেরিকার হাতে নিহত হয়েছে ৩ কোটির বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছে আরো ৩০ কোটির বেশি মানুষ।
তার এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে ৩৭ টি জাতি।
আর এসব অঞ্চলে কোটি কোটি মানুষ তাদের বাস্তু হারিয়েছেন।
এবং সেখানে দরিদ্রতা, অপরাধ, বর্ণবাদ, সহিংসতা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
কত নিকৃষ্ট তাদের এই রব(?) যার
আনুগত্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা করছে! আর
কতই না নির্বোধ এই মিথ্যা রবের দাসেরা! এই নির্বোধেরা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে নিজেরা প্রতিযোগিতা করে, কে
কত বেশি পাশ্চাত্যপ্রেমী হতে পারে।
এই কাজে এরা এতটাই হিংস্র হয়ে যায় যে, একপক্ষ
ক্ষমতার স্বাদ পেলে অন্যপক্ষকে সমূলে বিনাশের নৃশংস খেলায় মেতে ওঠে, যেন
তারা তাদের প্রভুদের কাছে একমাত্র দাস হিসেবে টিকে থাকতে পারে।
যেমন, বাংলাদেশের
বর্তমান সরকারের জুলুম, নিপীড়ন এবং নির্যাতনের কারণে পালিয়ে গিয়ে পশ্চিমে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিপক্ষের অনেকে।
সরকারের কতিপয় কর্মকর্তাদের উপর সামান্য এক নিষেধাজ্ঞায় তারা বর্তমানে মহা আনন্দে সরব হয়ে উঠেছে।
আর অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী পলক-এর
মত সরকারপন্থিরা বিরোধীদেরকে ভুল প্রমাণে ব্যস্ত।
এভাবে তারা জনগণকেও এক অর্থহীন বিতর্কে লিপ্ত রেখেছে।
তাই এই ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃবৃন্দ কিংবা বুদ্ধিজীবী যাদের রব হল আমেরিকা এবং যাদের কিবলা হোয়াইট হাউস, তাদের
নিকট আমাদের কখনই কোন আশা থাকতে পারে না।
তারা কখনোই আমাদেরকে বর্তমান জুলুমের শাসন থেকে মুক্তি দিবে না।
কারণ জুলুমের বিষবৃক্ষ হচ্ছে শাসকদের কর্তৃক পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের আনুগত্য।
আমাদের একমাত্র আশা ভরসার স্থল হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা
প্রদত্ত খিলাফত শাসন ব্যবস্থা।
যে খিলাফত ব্যবস্থা ইতিপূর্বে আমেরিকার আনুগত্য করা তো দূরে থাক, তাকে
বরং ভূমধ্যসাগরে তাদের জাহাজ চলাচলের জন্য কর প্রদানে বাধ্য করেছিল।
আল্লাহ্’র ইচ্ছায় অতি শীঘ্রই তা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “...এরপর
আসবে জুলুমের শাসন... এরপর
আবার আসবে খিলাফত,
নবুয়তের আদলে”। তারপর এই খিলাফত পূর্বের ন্যায় রোমান ও পারস্যের মতো পৃথিবীর সমস্ত পরাশক্তিকে পদানত করবে।
সকল জুলুমের কবর রচিত হবে।
সকল মানুষকে একক রাষ্ট্রের অধীনে একক পতাকাতলে একত্রিত করে ন্যায়বিচারকে ছড়িয়ে দিবে।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
“সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি, স্বাস্থ্যবিধি বেহাল, বিধিনিষেধ আসছে”
খবরঃ
দেশে ফের করোনার সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বেড়েছে মৃত্যুও। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকেরা জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আবারো বিধিনিষেধ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিধিনিষেধের আওতায় থাকছে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন, খোলা আকাশে সভা সমাবেশ, ভ্যাকসিন ছাড়া রেস্টুরেন্টে ঢুকতে না দেয়া ইত্যাদি। (mzamin.com/article.php?mzamin=309774&cat=2)
মন্তব্যঃ
বিশ্ব যখন নতুন এক প্রাণঘাতি ও দ্রুত সংক্রমণশীল ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলো তখন স্রষ্টা বিবর্জিত পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার শাসকেরা বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন-ইউরোপ সাময়িক সমাধান হিসেবে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপর নানা ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল এই যে, এসব বিধিবিষেধ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য, জীবন বাঁচানোর জন্য, স্বাস্থ্যখাতকে ভাইরাস মোকাবেলায় সামর্থবান করে গড়ে তোলার জন্য এবং টিকা আবিস্কার ও প্রয়োগের জন্য মূল্যবান সময় বের করার সুযোগ হিসেবে। তারা বলেছিল বিধিনিষেধ-লকডাউন মূলত হচ্ছে ‘Flattening The Curve’ এর জন্য এবং ‘Buying Time’ এর জন্য। এরই মধ্যে দুই বছর পার হয়ে গেল, এই ধরণের বিধিনিষেধ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় জীবন ইত্যাদি ধ্বংস করে দিল ঠিকই, কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কোন কিছুই কমেনি বরং বেড়েছে। আমেরিকান বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের আগেই প্রথম টিকা বাজারে আসে, অতঃপর সে বলেছিল ‘বিজ্ঞানের’ সহযোগিতায় সে ১০০ দিনের মধ্যে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে এবং এক বছর পর সে কোভিড মুক্ত দেশ উপহার দিবে। অথচ বাইডেন ক্ষমতা গ্রহনের আগে আমেরিকায় কোভিডে মারা গিয়েছিল ৩৯৬৮৩৭ জন আর বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আরও মারা গেছে অন্তত ৪৪২১৬৩ জন। এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকরা নিজেদের ‘বিজ্ঞানের’ উৎকর্ষকারী মনে করলেও তারা টিকার কার্যকারিতা প্রমাণে ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈনতা কাটানোতে ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি তারা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি আস্থাশীল করতেও ব্যর্থ হয়েছে। এটি বলাবাহুল্য যে এই ব্যর্থতা কোন একজন শাসক বা কোন একটি দেশের নয়, বরং এটি পশ্চিমাদের চিন্তার পদ্ধতি তথা ‘অভিজ্ঞতালব্ধ সমাধানের (Empericism)’ ব্যর্থতা। আমাদের চিন্তাহীন পশ্চিমনির্ভর সরকারগুলো পশ্চিমা মানবরচিত সমাধানের অন্ধ অনুসরনকারী। আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা’র রহমতে বাংলাদেশে অনেকটা প্রাকৃতিক প্রতিরোধের কারণে ভাইরাসটি খুব বেশি ক্ষতি করতে সক্ষম না হলেও পশ্চিমাদের এসব মানব মস্তিস্ক প্রসুত সমাধানের অন্ধ অনুকরণের ফলে মানুষ ব্যবসা-চাকরি-আয় হারিয়েছে, ঋণগ্রস্থ হয়েছে, সামাজিক-পারিবারিক বিশৃংখলায় আক্রান্ত হয়েছে, শিক্ষা-মনস্তাত্বিক ইত্যাদি নানা সমস্যায় পর্যবসিত হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশ সরকার এখনও একই ধরণের বিধিনিষেধমূলক সমাধানের দিকেই যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় দেশের মানুষ এখন আর করোনা আতংকে থাকে না, তারা মূলত বিধিনিষেধ-লকডাউন আতংকে আছে।
অতঃপর বাস্তবতার গভীর অনুভূতি ও উপলদ্ধি থেকে এটি স্পষ্ট যে মানুষের মস্তিস্ক প্রসূত চিন্তা মানুষের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম নয়। কারণ মানুষ এবং এই মহাবিশ্বের সকল বস্তু দুর্বল, সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল। আদি অন্তহীন আজালি সত্ত্বা স্রষ্টা ছাড়া এই দুর্বল, সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল মানুষের পক্ষে তার সমস্যাবলীর সমাধান করা সম্ভব নয়। সকল ক্ষমতার অধিকারী ও সর্বজ্ঞানী স্রষ্টার অত্যন্ত দুর্বল ও ক্ষুদ্র একটি সৃষ্টি করোনা ভাইরাস এটিকে আরও স্পষ্ট করেছে। ‘বিজ্ঞান’ সত্যিকার অর্থে সমাধান নয়, বিজ্ঞানকে সমাধান বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়। স্রষ্টাকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্নকারী ধর্মনিরপেক্ষ শাসকরা এটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তারা আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা’র প্রেরিত সুরক্ষিত
ও সংরক্ষিত জীবনব্যবস্থা ইসলামে সমাধান না খুঁজে বিভ্রান্তের
মত trial and error, পূর্ব-অভিজ্ঞতা, তথাকথিত বৈজ্ঞানিক ও ডাক্তারী বিশেষজ্ঞ অভিমতে সমাধানে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। অতঃপর এসব ত্রুটিযুক্ত ও
অনুপযুক্ত সমাধান প্রয়োগে সময়, অর্থ ও প্রচেষ্টা ব্যয় হয় এবং এটি মানুষের জীবনকে আরও নতুন সমস্যায় পর্যবসিত করে। ইসলামী ব্যবস্থায় শাসক আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলা
প্রদত্ত শারীয়াহকে অনুসরণ করে রোগী নয় রোগকে কোয়ারিন্টিন
করতেন, সুস্থদের
বিনা বাধায় স্বাভাবিক কাজ কর্ম করতে দিতেন এবং মহামারিকালীন বিশেষ দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করতেন।
তিনি বিজ্ঞানকে স্রষ্টা বিবর্জিত শাসকদের মত রাজনৈতিক ও
অর্থনৈতিক স্বার্থে নয়, বরং আল্লাহ্’র সৃষ্ট বস্তুগুলোর সঠিক ও
স্বার্থহীন ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহ্’র সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ্ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি” (সহীহ্ বুখারী)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“নারী ও শিশু মাদকসেবী বেড়েছে তিন গুণ”
খবরঃ
দেশে গত তিন বছরে নারী ও
শিশু মাদকাসক্ত বেড়েছে তিনগুণ। অপরিকল্পিত গর্ভপাতসহ
বিভিন্ন কারণে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন নারীরা। উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীদের মধ্যে এ
নিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বাড়লেও,
মধ্য ও
নিম্নবিত্তের মধ্যে তা বাড়েনি। সামাজিক
ও অর্থনৈতিক চাপে এখনও অধিকাংশ মাদকাসক্ত নারী চিকিৎসার বাইরে। দেশের সরকারি
ও বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে এ তথ্য।
(www.banglatribune.com/others/722292/নারী-ও-শিশু-মাদকসেবী-বেড়েছে-তিন-গুণ)
মন্তব্যঃ
একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য মাদকাসক্তি অন্যতম
নিয়ামক। আর
তা যদি নারী ও শিশুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা শুধুমাত্র বর্তমান প্রজন্মকেই ধ্বংস করবেনা বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে
নারীদের মাদক গ্রহণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে বন্ধুদের চাপ, হতাশা, অর্থনৈতিক
কারণ, পাশ্চাত্য
সংস্কৃতির অনুসরণ,
প্রেমের সম্পর্কে টানাপোড়েন, মাদক ব্যবহারের
পারিবারিক ইতিহাস,
শারীরিক ও
মানসিক সমস্যা,
মা-বাবার কলহ, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন,
বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন- সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্ব বৈকল্য,
বিষণ্নতা ইত্যাদি।
আপাতদৃষ্টিতে
এগুলোকে নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তির কারণ হিসেবে ধরা হলেও বিশেষজ্ঞরা যে বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন না তা হচ্ছে, পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আমাদের সমাজে এমন সব মূল্যবোধ সরবরাহ করেছে যার মূল কথা, আমাদের
জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শুধুমাত্র সুখের অনুসন্ধান করা যা কেবলমাত্র ভোগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয়গত সুখ লাভ করার মধ্য দিয়েই অর্জন করা সম্ভব। টেলিভিশন,
সিনেমা, নাটক, নাইট-ক্লাব কালচার ইত্যাদি সবকিছুর মধ্যেই আমরা পশ্চিমাদের এই জীবন ব্যবস্থার প্রচারণা দেখতে পাই। মূলত এধরনের
বস্তুগত মূল্যবোধ অর্জনের মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে এমন এক
অসাড় ও
পক্ষাঘাতগ্রস্ত প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে যারা জীবনের বাস্তবতা কিংবা চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে অনিচ্ছুক। তারা এমন এক অলীক
‘সুখ’ এর পিছনে ছুটছে যা
তাদেরকে মরীচিকার মত প্রতারিত করছে কারণ তারা নিজেরাও জানে না সুখ বলতে তারা কি
বোঝাচ্ছে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে জীবন সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব।
পশ্চিমারা জীবনের মূল উদ্দেশ্যকে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ফলে আমরাও তাদের দেখানো পথে হেটে জীবনের বস্তুগত অর্জনকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য মনে করা তা
না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছি।
মূলত অন্ধভাবে এই পশ্চিমা জীবনব্যবস্থার অনুসরণই এই প্রজন্মকে হতাশাগ্রস্ত করে কিংবা সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয়গত সুখ লাভের আকাংখাই তাদেরকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পশ্চিমাদের
চর্চিত এই
জীবনব্যবস্থা যেমন স্ব-ধ্বংসাত্বক তেমনি ধ্বংসাত্বক তাদের প্রস্তাবিত সমাধানসমূহ। যেমন, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে মাদকবিরোধী পুলিশি
অভিযান চালানো হয়। ফলে কিছু ইয়াবা বা
আইস আটক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে যে মাদক এতটাই সজলভ্য যে
যেকোন বয়সের লোকজনই তা চাইলে হাতের মুঠোতেই পেতে পারে। আরেকটি সমাধান
হিসেবে মনে করা হয় মাদকাসক্তদের নিরাময়ের
জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে তোলা। তবে এসকল নিরাময় কেন্দ্রের বাস্তবতা হচ্ছে যে
কালেভদ্রে দু-একজন আরোগ্য লাভ করলেও বেশিরভাগই আবার তাদের আসক্তিতে ফিরে যায়। উপরন্তু,
সারাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক মাদক নিরাময় কেন্দ্র না থাকায় বেসরকারী মাদক নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে যা মাদকাসক্তদের নিয়ে ব্যবসার আরেক মাধ্যম এবং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে এসকল প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে মাদকের ব্যবসা করার লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু দেখা যায় অনেক পশ্চিমা দেশেই বিভিন্ন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা হয় যার মাধ্যমে
একই সাথে মাদক ব্যবহারকারীরা তাদের মাদক গ্রহন করতে পারে আবার রাষ্ট্রের ট্যাক্স আদায়ও সহজ হয়। যেমন,
নেদারল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কফিশপগুলোতে উন্মুক্তভাবেই গাঁজা বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশেও একই পশ্চিমা দর্শন অনুসরন করে দেশে মাদকের ব্যবহার কমাতে অ্যালকোহল, মদ, গাঁজা ইত্যাদিতে ছাড় দেওয়ার মতামত এসেছে সংসদীয় কমিটিতে।
মূলত মানবরচিত এই
ব্যবস্থা এর
চেয়ে ভাল আর কিইবা করতে পারে! পক্ষান্তরে
ইসলাম মানুষদের জীবন সম্পর্কে একটি আলোকিত জীবনদর্শন দেয়,
সুখের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে,
ভোগের সীমারেখা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে পশু হওয়া থেকে মুক্ত রাখে। ফলে মানুষের মধ্যে হতাশা ভর করার সুযোগ দূরীভূত হয়। পাশাপাশি ইসলাম মাদককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এ সমস্যাকে মূল থেকে বিনাশ করেছে।
-
মো. হাফিজুর রহমান
“ঢাবিতে অন্তত ১ হাজার আসন কমানোর উদ্যোগ”
খবরঃ
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা
অন্তত ১ হাজার কমিয়ে ৬ হাজারে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উচ্চশিক্ষাকে প্রয়োজন ও দক্ষতাভিত্তিক করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি
কর্তৃপক্ষের। (www.prothomalo.com/education/ঢাবিতে-অন্তত-১-হাজার-আসন-কমানোর-উদ্যোগ)
মন্তব্যঃ
দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে
মেধাবীদের জায়গা হচ্ছে না “খাওয়া-থাকা-পড়া” এর মত অবকাঠামো না থাকার কারণে।
সমাধানঃ অবকাঠামো না বাড়িয়ে মেধাবীদের ভর্তি কর্তন। এ ধরনের সিদ্ধান্তে তখনই আসা
সম্ভব যখন একটি রাষ্ট্র ও তার শিক্ষাব্যবস্থার দেশকে নিয়ে কোন ভিশন বা লক্ষ্য না
থাকে। নইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে মেধাবীদের দায়ভার নিতে অপারগতা জানায়!
কিভাবে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে শত শত কোটি টাকা খরচ করে অথচ
শিক্ষার্থীদের মানসম্মত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে না! কিভাবে সে নিজদেশে
বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রয়োগের বিন্দুমাত্র সুযোগ তৈরি না করে, ছাত্রছাত্রীদের ঠেলে
দেয় বিসিএস নামক হতাশা তৈরির কারখানায় নয়তো ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নামের খুনী তৈরির
কারখানায়! নিজেকে অথবা অন্যকে খুন করাই এখন আমাদের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিয়তি।
এর থেকে বেঁচে গেলে একমাত্র সুযোগ পশ্চিমা দেশে নিজের মেধা ও শ্রম স্থানান্তর।
অর্থাৎ বাংলাদেশের মত ভিশনহীন রাষ্ট্রগুলোর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে রাখা
সর্বোচ্চ সাফল্য হচ্ছে পশ্চিমা কর্পোরেট কোম্পানিতে ‘কেরানী’ হিসেবে
নিয়োগপ্রাপ্তি। যেহেতু এই নতজানু রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বশীল জাতি হিসেবে তৈরি হওয়ার
কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, পশ্চিমাদের পদলেহন করে চলাই শাসকদের লক্ষ্য। তাই ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মেধাবি ছাত্রদের নিয়েও তাদের কোন সুপরিকল্পনা নেই। তাদের এই
‘পরিকল্পনাহীনতা’কে ঢাকার জন্যই শিক্ষার্থীদের আসনসংখ্যা কমানোর মত আপাতদৃষ্টিতে
চটকদার কিন্তু একটি ‘অন্তঃসারশূণ্য’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
একটি জাতিকে নেতৃত্বশীল
অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বুদ্ধিবৃত্তিক রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের সাথে
সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা অপরিহার্য। একটি নেতৃত্বশীল অবস্থানে যাওয়ার
উচ্চাকাঙ্ক্ষাই রাষ্ট্রকে তার পরনির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে উৎসাহিত করবে এবং
রাষ্ট্র তার মেধাবীদের ব্যবহার করবে জনগণের মৌলিক অধিকার থেকে শুরু করে সামরিক
সক্ষমতায় স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে। এখানেই শিক্ষাব্যবস্থা মেধাবীদের পৃষ্ঠপোষক
হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের রাষ্ট্র এবং শিক্ষাব্যবস্থা আমরা দেখতে পাই খিলাফতের
শাসনামলে। যখন শিক্ষাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছানোর জন্য অনেক পাঠাগার স্থাপন
করা হত। খলিফা আল-মামুনের সময় বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গভীর গবেষণার জন্য
প্রতিষ্ঠা করা হয় বায়তুল হিকমাহ যা ইতিহাস প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও আল
আজহার এবং আল কারাউইন এর মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল যেখানে ইউরোপ থেকেও মানুষ
জ্ঞানার্জনের জন্য আসত মুসলিমদের কাছে। মুসলিমদের খলিফা রাষ্ট্রের মেধাবীদের
সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করতেন। কারণ শুধু মুসলিমদেরই ছিল পুরো বিশ্বের উপর
বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য। আজকে ১০০ বছর হল আমরা যা হারিয়েছি। আসন্ন নবুওয়াতের আদলে
খিলাফতই পারবে মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে এবং সেই মেধা ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে
পুনরায় মুসলিমদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতে।
- জীবন চৌধুরী
সমকামিতা নিয়ে বিবিসি নিউজ বাংলা পোর্টালে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের
নিন্দা ও যুক্তিখণ্ডনঃ
“ভুল দেহে' জন্ম নিয়ে লিঙ্গ ও
যৌন পরিচয়ের বিড়ম্বনায় নিশাত”
খবরঃ
ধরে নেই, তার নামটি নিশাত।
নিরাপত্তার কারণেই এখানে তার নামটি পাল্টে দেয়া হলো। বাংলাদেশেরই কোন একটি জেলার
গ্রামে তার জন্ম। বেড়ে ওঠাও সেখানেই। জৈবিক গঠন অনুযায়ী
নিশাত এখন একজন যুবক। তবে মন, আবেগ আর যৌন
পরিচয়ের দিক থেকে নিজেকে একজন নারী হিসেবে অনুভব করেন তিনি।... নিশাত বলেন, “ক্লাস এইটে পড়ার
সময় একটি ছেলেকে ভাল লাগতো। আমার লাইফে কখনো কোন মেয়েকে ভাল লাগেনি। কোন মেয়ের
প্রেমেও পড়িনি।” নিশাত মনে করেন, ভুল দেহে জন্ম হয়েছে তার। ছোটবেলা থেকেই নারী হতে চেয়েছেন
তিনি। তবে সমাজ আর পরিবারের ভয়ে সব সময়ই নিজেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। নিশাত জানান, পুরুষ হলেও নারীদের
প্রতি কোন ধরণের আকর্ষণ বোধ করেন না তিনি। বরং পুরুষের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন।...বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরা এখন একমত যে, একজন মানুষ কোন ধরনের যৌনতার প্রতি ঝুঁকবেন, তিনি একই লিঙ্গের কারোর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন নাকি বিপরীত
লিঙ্গ বা উভয় লিঙ্গের প্রতি সেটি চাইলেই বদলে দেয়া যায়না। এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি
নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তিষ্ঠাতা জয়া শিকদার বলেন, রাষ্ট্রের উচিত এই
মানুষগুলোকে স্বীকৃতি দেয়া এবং তাদের সাথে যাতে কোন ধরণের বৈষম্যমূলক আচরণ না হয়
তার ব্যবস্থা করা।
(www.bbc.com/bengali/news-59855975)
মন্তব্যঃ
পশ্চিমা
দেশসমূহের পর মুসলিম দেশগুলোতে সমকামিতার মত বিকৃত যৌনতাকে স্বাভাবিকীকরনের প্রচেষ্টা
পশ্চিমা উদারপন্থীদের অন্যতম জঘন্য এজেন্ডা। দেশে বিগত বছরগুলো থেকে কতিপয় পশ্চিমা
মদদপুস্ট দালাল মিডিয়া এবং এক শ্রেণীর উদারবাদীগোষ্ঠী এই যুক্তি দিচ্ছে যে LGBTQ (Lesbian,
Gay, Bi-sexual, Transgender and Queers) এর
মত যৌন পছন্দ আর ট্যাবু নয়, বরং বিপরীত লিঙ্গের
প্রতি যৌন আকর্ষণের মতই এটা একটা স্বাভাবিক যৌন আচরণ। তারা LGBTQ কে সমাজে গ্রহণযোগ্য করানোর খোড়া যুক্তি হিসেবে সাধারণত
যেসব বিষয় উপস্থাপন করে তা হচ্ছে- ১। এলজিবিটিকিউ লোকেরা এই বৈশিষ্ট্যতেই জন্মগ্রহণ করে (LGBTQ people
born that way), ২। সমকামিতার প্রাকৃতিক প্রমাণ ( Nature is a
proof) ৩। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ (Scientific
proof) ইত্যাদি। লিবারেলদের এসকল যুক্তিকে নিম্নোক্ত উপায়ে
খন্ডন করা যায়ঃ
১ম যুক্তিঃ এলজিবিটিকিউ লোকেরা
এই বৈশিষ্ট্যতেই জন্মগ্রহণ করে (LGBTQ people born
that way): এই মতের পক্ষে
লিবারেলরা যেটা দেখানোর চেষ্টা করে সেটা হচ্ছে সমকামীদের জন্মগতভাবেই এই স্বভাবজাত
যৌন বৈশিষ্ট্য থাকে। কিন্তু আজ অবধি এই যুক্তির স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক সম্মতি বা Peer Reviewed
Scientific Concensus (একই দক্ষতা সম্পন্ন
এক বা একাধিক লোকের কাজের মূল্যায়ন) কিংবা বৈজ্ঞানিক
ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে সমকামিতা মানুষের স্বভাবজাত কোন বৈশিষ্ট্য। বরং
মানবজাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এটাই স্বাভাবিক এবং পরীক্ষিত যে মানুষের স্বভাবজাত
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষ সমলিঙ্গে নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে
বিপরীত লিঙ্গের প্রতিই আকৃষ্ট। তাই সমকামিতার অস্তিত্ব মানুষের জিনে নয় বরং এর
অস্তিত্ব ব্যক্তির ধারণকৃত সংস্কৃতি বা আদর্শে (Ideology)। তাছাড়া মানুষের যৌন বৈশিষ্ট্যের দিকে মনোযোগ দিলে
লিবারেলদের এই দাবিটি রহিত হয়ে যায় কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের এই বৈশিষ্ট্যটি
এমনভাবে তৈরি করেননি যে এই বৈশিষ্ট্য মানুষকে কোন বিশেষভাবে (যিনা, পরকীয়া, সমকামিতা, সমলিঙ্গে বিয়ে) ব্যবহার করতে বাধ্য করে। একজন পুরুষ আরেকজন নারীর প্রতি
আকর্ষণ অনুভব করে তার মানে এই বৈশিষ্ট্য এমন নয় যে তা কাউকে যিনা করতে বাধ্য করে।
এই বৈশিষ্ট্য এমন নয় যে তা কোন ব্যক্তিকে গার্লফ্রেন্ড বা বিবাহ-বহির্ভুত উপায়ে যৌন চাহিদা পূরনে বাধ্য করে। তাই যদি কোন
নারী বা পুরুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেও থাকে
তাহলে তা কিভাবে সমলিঙ্গের বিয়ে বা সমকামিতাকে বৈধতা দিতে পারে? এই আকর্ষণ কি তাকে সমকামী হতে বাধ্য করে? বরং মূল সত্য হচ্ছে এটাই, যৌন চাহিদাকে
মানুষের ইচ্ছার (Desire) উপর ছেড়ে দেওয়া লিবারেল দর্শনই এলিজিবিটিকিউ নামক যৌন
বিকৃতির প্রসার ঘটিয়েছে।
২য় যুক্তিঃ
সমকামিতার প্রাকৃতিক প্রমাণ (Nature
is a Proof) : সমকামিতাকে
প্রাকৃতিক প্রমাণ করার জন্য লিবারেলরা বিভিন্ন পশুর আচরণের উপর সমকামি আখ্যান
চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের যুক্তি, অনেক পশুই সমকামি
তাই সমকামিতা একটা প্রাকৃতিক ব্যাপার। তাদের এই যুক্তি পশুর প্রজনন নীতির সাথে
সাংঘর্ষিক। পশুরা যদি সমকামিই হত তাহলে তাদের বংশবিস্তার কিভাবে হত? তাই এটা কখনোই একচেটিয়াভাবে প্রমাণিত নয় যে পশুরা সমকামি।
তাছাড়া, পশুর আচরণ কিভাবে
মানুষের আচরণের নির্দেশিকা হতে পারে? অনেক পশু নিজের
মলমূত্র নিজেই খায়। বিড়াল নিজের যৌনাঙ্গ লেহন করে। সিংহ নিজেই তার বাচ্চাদের হত্যা
করে। বানর উকুন বাছাই করে ও উকুন খায়।
যেটা এক পশুর জন্য স্বাভাবিক তা অন্য পশুর জন্য স্বাভাবিক নয়, মানুষের জন্য তো দূরে থাক। তাহলে যারা সমকামিতাকে
ন্যায়সঙ্গত করার জন্য পশুর আচরণকে ব্যবহার করে তারা কি উকুন খায়? তার কি নিজেদের বাচ্চাদেরকে হত্যা করে? তারা কি নিজদেরকে পরিস্কার করার জন্য নিজেই নিজেকে লেহন করে? প্রকৃতি কখনোই মুসলিমদের জন্য ভুল-সঠিক নির্ধারণ করার উসুল (Principle) নয়। প্রকৃতি কুকুর এবং ভেড়া উভয়ই উৎপাদন করে, তার মানে এই নয় যে উভয়ই খাওয়া জায়েয। মূলত, পশুদের আচরণ তাদের প্রকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়, অন্যদিকে মানুষের আচরণ তার ধারণকৃত মূল্যবোধ দ্বারা
নির্ধারিত হয়। তাই, Nature is a proof of LGBTQ- এই মন্ত্রটি কেবল
নিজের ইচ্ছাকে (Desire) অনুসরণ করার বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা
মাত্র।
৩য় যুক্তিঃ
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
(Scientific Proof): লিবারেলরা দাবি করে সমকামিদের Gay gene (গে জিন) থাকে। বাস্তবে গে
জিনের কোন অস্তিত্ব নাই। যদি ধরেও নেয়া হয় গে জিনের অস্তিত্ব আছে, সেটা কি প্রমাণ করে? বিজ্ঞান চূড়ান্তভাবে
একজন মানুষ নারী না পুরুষ এটা প্রমাণ করতে পারে কিন্তু মানুষ কোন কাজ করবে সেটা
নির্ধারণ করতে পারে না। জিন (Gene) একজন ব্যক্তিকে
কিভাবে পোশাক পরতে হবে বা কিভাবে যৌন চাহিদা পূরণ করতে হবে তা বলতে পারে না। যদি
বিজ্ঞান প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি সমকামি তার মানে এই নয় যে বিজ্ঞান এটা প্রমাণ
করতে পারে যে কোন ব্যক্তি সমকামি সম্পর্কে প্রবেশ করবে নাকি না। বিপরীত লিঙ্গের
প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তির ডিএনএ এটা প্রমাণ করে না যে ঐ ব্যক্তি একটি বিয়ে করবে নাকি
বহুবিবাহ করবে। জিন (Gene) সমকামিদেরকে সমকামী
হতে বাধ্য করে না। একইভাবে জিন (Gene) মুসলিমদেরকে মুসলিম
হতেও বাধ্য করে না। প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে একজন ব্যক্তির যাবতীয় কর্মকান্ড তার
ধারণকৃত মূল্যবোধ থেকেই নির্ধারিত হয়। মুলত, LGBTQ প্রবক্তারা
সমাজের মধ্যে সমকামিতার মত বিকৃত যৌনতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানকে ব্যবহার
করে।
LGBTQ হচ্ছে
এমন একটি চিন্তা যা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসংলগ্ন, মানবজাতির
প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও বিকৃত যৌনাচার যা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত। মুসলিম ভুখন্ডে LGBTQ এর ধারণার প্রচার প্রসার পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের
সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটি প্রকল্প যার মাধ্যমে তারা চায় মুসলিমরা তাদের অসভ্য
সভ্যতার বশ্যতাকে স্বীকার করুক এবং তাদের কলুষিত জীবনধারা অনুসরণ করুক। পশ্চিমা
বিশ্ব সর্বক্ষণ মুসলিম ভূখন্ড হতে মুসলিমদের মহিমান্বিত ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে
একের পর এক নির্মূল করার ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছে। সমকামিতার মত এই
দূষিত জীবনধারা মুসলিম ভূখন্ডসহ পুরো মানবজাতিকে গ্রাস করার পুর্বেই LGBTQ চিন্তার অসারতাকে জনগণের সামনে তুলে ধরে এর প্রকৃত চেহারা
উন্মোচিত করে দেয়ার পাশাপাশি জনগণের সামনে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক যৌক্তিকতাকে
জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সর্বোপরি, মানবজাতির
সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য LGBTQ এর মত গর্হিত
চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার
মাধ্যমে।
- মোহাম্মদ সিফাত