Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৪৭ তম
সংখ্যা । ৬ মার্চ, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“মাসে ২০ হাজার ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ”
“সার্বজনীন পেনশন শুরু ‘এক বছরের মধ্যে’, সুবিধা মিলবে ১০ বছর পর”
“খাদ্যনিরাপত্তায় ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বেড়েছে”
“‘সাঁতার শিখতে’
১৬
কর্মকর্তা যাবেন বিদেশে!”
“গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রীর”
“ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া”
“মাসে ২০ হাজার ডলারে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও বেগবান করতে ‘নেলসন মুলিন্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘লবিস্ট’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান। এ সময় তিনি বলেন, …গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট রিলেশন মেইন্টেইন করার জন্য আমরা নেলসন মুলিন্স নামে একটি সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছি।’ …প্রতিষ্ঠানটির কাজ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মার্কিন প্রশাসন একটা বড় জায়গা। আমাদের এখানে যেমন বিদেশ থেকে কেউ এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বললেই হয়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের স্ট্রাকচার অন্যরকম। দূতাবাসের ৪-৫ জন কূটনৈতিক দিয়ে এটা মেইনন্টেইন করা যায় না। তাই গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট রিলেশন আরও শক্তিশালী করতে, যোগাযোগের জায়গাগুলো বের করতে এই প্রতিষ্ঠান।’ (https://www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/মাসে-২০-হাজার-ডলারে-যুক্তরাষ্ট্রে-লবিস্ট-প্রতিষ্ঠান-নিয়োগ-318801)
মন্তব্যঃ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর ও বেগবান করতে ‘লবিস্ট’ প্রতিষ্ঠান
নিয়োগ করাকে বাংলাদেশ সরকার যতই বিচক্ষণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে বুঝানোর চেষ্টা করুক না কেন,
মূলতঃ এর
মাধ্যমে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোলামী করার বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। আসলে, গত ৫০ বছর ধরে আমাদেরকে স্বাধীনতার মূলা খাওয়ানো হলেও কার্যত আমরা কখনোই স্বাধীন ছিলাম না
এবং এখনও না। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর সময় থেকে আজ
পর্যন্ত আমরা পশ্চিমা বিশ্বের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই আছি।
১৮৫৮-১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আমরা শাসিত হয়েছি ঔপনিবেশিক কায়দায় আর
এখন শাসিত হচ্ছি নব্য-ঔপনিবেশিক
কায়দায়। পার্থক্য হচ্ছে তখন পশ্চিমারা সরাসরি এসে আমাদের শাসন করত আর
এখন পশ্চিমারা তা করছে তাদের দালাল শাসকদের দ্বারা। যেমন, আমাদের
এই অঞ্চলে অর্থনীতির চাকা ঘুরে পশ্চিমা সংস্থা আই.এম.এফ এবং বিশ্বব্যাংকের ঠিক করে দেওয়া রাস্তায়। এর উল্লেখযোগ্য
উদাহরণ হচ্ছে,
বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারীকরণ কিংবা বন্ধ করা শুরু করে যখন থেকে আইএমএফ ঋণ
প্রদানের মাধ্যমে শর্ত-আরোপ করা শুরু করে।
২০০৩ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়া,
২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্কের
আইন প্রণয়নের মত অনেক জনবিরোধী
সিদ্ধান্তের পিছনে আইএমএফ এর শর্ত মূল কারণ। আবার,
এই অঞ্চলে ক্ষমতায় কে বসবে তাও নির্ধারণ হয়
কে বেশী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের স্বার্থরক্ষা করতে পারবে তার ভিত্তিতে। তাইতো, কিছুদিন
আগেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস বেচতে রাজি
(পশ্চিমাদের কাছে)
না হওয়ায় ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।” একইরকমভাবে, কিছুদিন আগে
RAB-এর উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে গত
৩ মাস ধরে দেশে সরকারী সংস্থা দ্বারা গুম-খুন না
হওয়ার ঘটনাও এই সত্য প্রকাশ
করে যে, পশ্চিমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে এই অঞ্চলের শাসকদের
আচরণ পরিবর্তন হয়। এযেন মনিবের প্রতি তার গোলামের একনিষ্ঠ দাসত্ব।
তাই স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতায়
টিকে থাকতে এই শাসকরা পশ্চিমাদের
সাথে সম্পর্ক গভীর ও বেগবান করাকে অত্যাধিক প্রয়োজনীয় মনে করে, তা উম্মাহ্’র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হোক কিংবা উম্মাহ্’র কষ্টার্জিত
টাকা খরচ করে।
আমাদেরকে এই সত্য অবশ্যই
বুঝতে হবে স্বাধীনতা মানে ৫০
বছর পূর্তি পালন, বা ঝাক-ঝমকপূর্ণভাবে “বিজয় দিবস” পালন বা “বড় পতাকা”
প্রদর্শনের সক্ষমতাকে বুঝায় না। বরং,
যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা পশ্চিমাদের
কর্তৃত্বের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রকৃত মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। আর
পশ্চিমাদের কর্তৃত্বের বলয় থেকে আমরা কখনোই মুক্ত হতে পারবোনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর অপসারণ করে আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলা প্রদত্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করি। আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলা বলেন,
“তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তা অন্য
সকল দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে” [সূরা আত-তাওবা: ৩৩]
-
আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“সার্বজনীন পেনশন শুরু ‘এক বছরের মধ্যে’, সুবিধা মিলবে ১০ বছর পর”
খবরঃ
আগামী এক বছরের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিকের জন্য অবসরকালীন সুবিধা বা পেনশন চালু করতে যাচ্ছে সরকার; তবে নিবন্ধিতরা এর প্রত্যক্ষ সুফল পাওয়া শুরু করবেন ১০ বছর পর থেকে। ১৮ থেকে ৫০ বয়স সীমার নাগরিকরা প্রতিমাসে ধারাবাহিকভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিলে ৬০ বছরের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ভোগ করতে পারবেন। বর্তমানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর উপর শিশু ও বৃদ্ধদের নির্ভরতার যে হার, আগামী দিনে তা বাড়তে থাকবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “এই ডিপেন্ডেন্সি রেশিও বা যাদের কর্মক্ষমতা নেই তাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব কে বহন করবে? সেই দায়িত্বটি সরকার নিচ্ছে এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার মাধ্যমে।” (https://bangla.bdnews24.com/economy/article2019596.bdnews)
মন্তব্যঃ
মানুষ যখন নিজে কর্মক্ষমতা হারায় তখন কেউ তার দায়িত্ব নিবেনা এবং কেনইবা নিবে এরকম একটা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের একধরণের অনিরাপদ ও আতঙ্ককর ভবিষ্যতের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী পেনশন স্কীমের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রের সংবিধানের কথা উল্লেখ করে মস্ত্রী বলেন, অক্ষম শিশু ও বৃদ্ধদের সাহায্যে এগিয়ে আসা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব, তাই এই স্কীম। কিন্তু স্কীমটির গভীরে গেলে দেখা যায় যে এটি মূলত একটি বিশাল আকৃতির অর্থ উত্তোলন প্রকল্প। সরকারের আইনি সুবিধা নিয়ে এখানে একটি কোম্পানী বা কর্তৃপক্ষ ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে থাকা দেশের প্রায় ১০ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষের কাছ থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে এই স্কীমের আওতায় আনলে প্রতিজন নূন্যতম ১০০০ হাজার টাকা করে মাসে জমা দিলে বছরে ঐ কর্তৃপক্ষ পাবে ১লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশী। পেনশন আকারে টাকা ফেরত দেয়া শুরু করার আগে ১০ বছরেই সরকার হাতে পেয়ে যাবে ১২ লক্ষ ৩০ হাজার কোটিরও বেশী টাকা।
কর্মে অক্ষম অসহায়দের জন্য সরকার যদি সত্যিই দায়িত্ব অনুভব করতো তাহলেতো তাদেরকে সরকারের এমনিই সাহায্য করার কথা। সরকারতো এর আগে জনগণের কাছ থেকে বিপুল ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়েছে তার আমানত কি তারা রক্ষা করেছে? আর এটি যদি একটি লাভজনক বিনিয়োগ অথবা কল্যাণকর বীমাই হবে তাহলে এটিকে কেন বাধ্যতামূলক করা হবে?! মানুষ যেখানে প্রচুর পরিশ্রম করেও বর্তমানের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে পারছেনা সেখানে সরকার কেন মনে করছে সবাই এই সুদের কারবারে জড়িয়ে খুশি হবে, যখন জনগণ জানে যে টাকার মান প্রতিবছর কমছে? এসব প্রেক্ষাপটে এটা অনেকটাই পরিস্কার যে, স্কীমটি অক্ষম অসহায়দের অসহায়ত্ত্ব দুর করাকে সামনে এনে প্রস্তাব করা হলেও মূলত এটি সরকার এবং তার আশপাশের ক্ষুদ্র সুবিধাভোগী কতিপয় পুঁজিপতিদের জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক অর্থ তুলে নেয়ার নতুন একটি পঞ্জি স্কীম। এই বিপুল অর্থ মানুষের কতটুকু কাজে লাগবে তা বড় কথা নয়, বরং বড় কথা হচ্ছে এটি সরকারের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠীকে বিনিয়োগের নামে ব্যাপক টাকা হস্তগত করার সুযোগ দিবে এবং অন্যদিকে এটা উন্নয়নের নামে দূর্নীতি লুটতরাজের জন্য সরকারকে ব্যাপক অর্থের যোগান দিবে। এইধরণের পঞ্জি স্কীম পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র স্বাভাবিকই নয়, বরং ব্যাপক প্রশংসিতও হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডঃ ইউনুস ‘দারিদ্র’কে পুঁজি করে ক্ষুদ্রঋণের পঞ্জি স্কীম চালু করে ব্যাপক অর্থশালী হন এবং নোবেলও জিতে নেন কিন্তু দারিদ্রতা আরও বৃহদাকার ধারণ করেছে।
মানবরচিত ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পরিবারের বন্ধনকে দিনে দিনে হালকা করে। ফলে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা হয়ে পড়ে অসহায়। শুধুমাত্র আর্থিক নিরাপত্তা তাদেরকে পরিবারের সক্ষম দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পারে না। ইসলামের পবিত্র দায়িত্বশীলতার সম্পর্কই দিতে পারে সত্যিকার সামাজিক নিরাপত্তা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতার
বিষয়ে
জিজ্ঞাসিত
হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার
ব্যাপারে
জবাবদিহী
করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল।..” (বুখারী/মুসলিম)। একারনেই ইসলামী খিলাফতে কোনভাবেই এইধরণের দায়িত্বহীনতা ও সূদের
বিস্তার হয় না। সেখানে আল্লাহ্ভীতির পরিবেশ থাকে
যা নারী, শিশু, বৃদ্ধদের জন্য পরিবারিক
আশ্রয়কে সুরক্ষিত রাখে। আবার খলিফা তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে
সকল নাগরিককে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতে বাধ্য।
- - মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“খাদ্যনিরাপত্তায় ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতা বেড়েছে”
খবরঃ
গত
কয়েক দশকে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বড় অগ্রগতি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়, বাংলাদেশ
এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদিও প্রতি বছরই দেশে খাদ্যশস্যের আমদানি বাড়ছে।
খাদ্যশস্যের মধ্যে এতদিন মূলত চালই আমদানি করা হতো।
পণ্যটি প্রধানত ভারত থেকেই আমদানি করা হয় বেশি।
এখন গম
আমদানিরও সিংহভাগ আসছে ভারত থেকে।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ হলো রাষ্ট্রীয় সংস্থার খাদ্যশস্যের সাফল্য এখনো বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি-বেসরকারি তথ্য বলছে, বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা এখন অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়
বিষয়টিকে দেশের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। (https://bonikbarta.net/home/news_description/292055/খাদ্যনিরাপত্তায়-ভারতের-ওপর-বাংলাদেশের-নির্ভরতা-বেড়েছে)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের বর্তমান
শাসকগোষ্ঠী একদিকে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সারাবিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমাদের অবস্থান শীর্ষ ৫ বা
১০ এর
মধ্যে বলে গর্ব করে, আবার অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের
জন্য ভারতের আমদানির উপর নির্ভর করে! দেশে ধান-চাল-পেয়াজের
ফলন ও
মজুদ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত থাকার পরেও এগুলোকে নিয়মিতভাবে ভারতের
আমদানির উপর নির্ভরশীল করে তোলার মাধ্যমে সরকার আমাদের কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোকে
মুসলিমবিদ্বেষী এই
শত্রুরাষ্ট্র হাতে সমর্পণ করেছে। চাল-ডাল-পেয়াজের
পর এখন আরেকটি কৌশলগত পণ্য গমের ক্ষেত্রেও তা
করে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্বকে কাফির-মুশরিক রাষ্ট্রসমূহের হাতে সমর্পণ করার ক্ষেত্রে এই শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকার যেন কোন সীমা-পরিসীমা নাই।
এছাড়া সমুদ্রবন্দর, রেলপথ ও সড়ক অবকাঠামোর মত কৌশলগত সম্পদসমূহও ভারতের হাতে তুলে দিতে পিছপা হচ্ছে না এই
শাসকগোষ্ঠী। তারা শুধু আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, পাশাপাশি
আমাদের সকল প্রকার আত্মনির্ভরশীলতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, যাতে আমাদের মুক্তির পথ ইসলামী রাষ্ট্র
তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা যেন বিশ্বের বুকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভুত না হতে পারি।
এমতাবস্থায় এই দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ
করে যখন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন এটি খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা এবং আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে রুপান্তর করতে শারী‘আহ্ প্রদত্ত
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ ও তা
বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে। উত্পাদন ও দক্ষ বিতরণের
উপর জোর দিবে। শুধুমাত্র খাদ্যের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে নয়, খাদ্যের বৈশ্বিক
চাহিদা মেটাতেও খিলাফত রাষ্ট্র সমগ্র কৃষি কার্যক্রমের আধুনিকীকরণে কৃষকদের
সহায়তার মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করবে।
খিলাফত রাষ্ট্র জমির মালিকানা তার চাষের সাথে সংযুক্ত করবে এবং এর
ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
কেউ টানা ৩ বছর জমি চাষ না
করে ফেলে রাখলে রাষ্ট্র তার কাছ থেকে জমি নিয়ে নিবে এবং চাষাবাদে সক্ষম ব্যক্তিকে প্রদান করবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “ নিজে জমিটি
চাষ কর অথবা
এটা তোমার ভাইকে
প্রদান কর।“
সর্বোপরি, খিলাফত
রাষ্ট্র আমাদের কৃষিখাতকে সকল বিদেশী নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার নীতি বাস্তবায়ন করবে।
এবং কাফির-মুশরিক শত্রু রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পাদিত দাসখতের চুক্তিগুলো বাতিল করে একটি স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের দিকে অগ্রসর হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা বলেন,
“সুতরাং
অবশ্যই আমার পক্ষ
থেকে তোমাদের কাছে
হেদায়েত আসবে, অতঃপর
যে আমার হেদায়েত
অনুসরণ করবে, সে
পথভ্রষ্ট হবে না
এবং কষ্টেও পতিত
হবে না” (সূরা ত্বা-হা: ১২৩)।
- - মোহাম্মদ সিফাত
“‘সাঁতার শিখতে’
১৬
কর্মকর্তা যাবেন বিদেশে!”
খবরঃ
দেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুহার কমানোর উদ্দেশে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেওয়া ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় সাঁতার শিখতে ১৬ জন কর্মকর্তা দুটি দলে ভাগ হয়ে বিদেশে যাবেন। এর পেছনে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যম সময়ের আলো জানায়, মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) নাসিমা বেগম জানান, দুটি দলে ৮ জন করে ১৬ জন কর্মকর্তা বিদেশে যাবেন। এর জন্য ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর বাকি টাকা পরবর্তী সময়ে বিদেশে কোনো সেমিনার হলে সেখানে পাঠানোর জন্য রাখা হয়েছে। (https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/2022/02/23/1645601429214)
মন্তব্যঃ
পানিতে ডুবে শিশু মারা যাওয়াতে সাঁতার শিখতে বিদেশে যাবেন
কর্মকর্তারা, কিন্তু
কেন এত পরিমান শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়; এটা জানতে কোথায় যাবেন কর্মকর্তারা? আমরা এই
তথ্য জানতে একটু বন্যাকালীন সময়ে চলে যাই “কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে ১৪
শিশুর মৃত্যু” ( জাগোনিউজ
২৩, জুলাই,২০২০)। এছাড়া কুড়িগ্রাম ত্রান ও পুনর্বাসন বিভাগ
সুত্রে জানা যায়,
২০১৯ সালের বন্যায় জেলায় ২১ টি মৃত্যুর মধ্যে ১৬ টি শিশু মৃত্যু ছিল; “পানি বন্দী
লাখো মানুষ, ১০
শিশুর মৃত্যু” (যুগান্তর
১৫ জুলাই, ২০১৯) এবং দেশে
প্রতি বছর ১৯ হাজার ২৪৭ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, এর মধ্যে
দুই-তৃতীয়াংশ
শিশু। সাধারণত ১-৫
বছর বয়সী শিশুরা বন্যার সময় ঘরের মেঝে অথবা উঠানে ডুবেই মারা যাচ্ছে। যে বন্যার
কারণে এত শিশু মারা যাচ্ছে সেই বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যকর কোন পদক্ষেপ
নেয়া হয় না। আর যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয় সেখানে দুর্নীতি আর অনিয়মের জেরে কোন কিছুই
টেকসই হয় না।“ দিনাজপুরে
বালু দিয়ে কোটি টাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ!” (ইনকিলাব, ১৭ জুলাই, ২০১৮)। তাই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু কমাতে চাইলে
সাঁতার শিখিয়ে কি হবে যেখানে কিনা বন্যায় নিজ ঘরে গলা সমান পানি থাকে।
আমাদের দেশে সরকার ও প্রশাসন সবসময় “মানিয়ে চলা” নীতি
মেনে নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতিকে মানিয়ে নিয়ে স্পিড
মানি আখ্যায়িত করেছে। যানজট না কমিয়ে, রাস্তা না বাড়িয়ে পাঠাও সার্ভিস দিয়ে
যানজট সমস্যার সামাধান দিচ্ছে, ঠিক তেমনি করে নিজ উঠানের বন্যার পানি না সরিয়ে সাতাঁর
শিখার জন্য বিশাল বাজেট পাশ করিয়ে শিশু মৃত্যু কমাতে চাইছে। যা মুলত পশ্চিমাদের
থেকে ধার করা অভিযোজন নীতির প্রয়োগ। আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থার ভিত্তি (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ) যেখানে
পশ্চিমাদের কাছ থেকে নেয়া,
তাই স্বাভাবিকভাবে আমরাও মূল সমস্যার গোঁড়ায় পৌছাতে কখনই সক্ষম হব না। কারণ পশ্চিমা
সভ্যতায় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উৎপত্তিই হয়েছিল মিথ্যার সাথে সমঝোতার ভিত্তিতেই।
তারা জানত (এখনও
জানে) মানব
মন সীমাবদ্ধ, এবং
এই মন দ্বারা সমাজ চালানো কখনই সঠিক সমাধানের দিয়ে নিয়ে যাবে না। কিন্তু তারপরও
তারা অসীম সৃষ্টিকর্তার আইন দ্বারা সমাজ চালাতে নারাজ কারণ তাতে মুষ্টিমেয় এলিট
শ্রেণীর কর্তৃত্ব বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছিল। সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার ওপর আশ্রয় নেয়া
এই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের দ্বারা সমাজ পরিচালনার পরিণতি তাই এরুপ হতে বাধ্য - সর্বদাই মূল
সমস্যাকে এড়িয়ে চলে জোড়াতালি দিয়ে সমাধানের চেষ্টা পূর্ব-পশ্চিমের সকল
ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের সহজাত বৈশিষ্ট্য।
ইসলাম কখনো এমন জোড়াতালি
সমাধান দিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করে না। তাই খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামী সমাধানের অনন্য
বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে প্রত্যেকটা সমস্যার মূলকে নির্ধারণ করবে এবং অসীম সত্তা
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র প্রদত্ত
নির্দেশনা অনুযায়ী সমাধান করবে। খলিফা বন্যা নিয়ন্ত্রন করার জন্য
বন্যার জন্য দায়ী বাধঁ অপসারণ, নদী খনন, নদীর তীর রক্ষা, গাইড বাঁধ, ও বনায়ন এর
মত কর্মসুচি প্রণয়ন করবেন,
অন্যদিকে জণগণের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সাতাঁরের মত কায়িক ব্যায়ামকে উৎসাহিত
করবেন, কারণ জনগণের সকল
বিষয়াদি দেখাশুনা করার জন্য খলিফা হলো জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন “ইমাম (খলীফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে
দায়িত্বশীল” (বুখারী)। আর খলিফা যদি এই মহান দায়িত্ব পালনে কোনরূপ অবহেলা বা গাফেলতি প্রদর্শন করে তার জন্য “যদি কোন
ব্যক্তি মুসলিম জনগণের শাসক নিযুক্ত হয়, অতঃপর
সে তাদের কল্যাণকর নিরাপত্তা বিধান করল না, সে
বেহেশতের গন্ধও পাবে না” (মিশকাত: ৩৫১৮)। তাই আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে আল্লাহ্ ভীতির
কারণে আমরা বুদ্ধিদীপ্ত শাসক এবং তড়িৎ সমাধান পাব,
ইনশাআল্লাহ্।
-
ইরফান আবিদ
“গ্যাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রীর”
খবরঃ
বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি
কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক খাত
বিশেষ করে যেখানে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে এসব স্থানে ধীরে ধীরে গ্যাস ও
বিদ্যুতে ভর্তুকির কমাতে বলেছেন তিনি।... (https://www.bd-pratidin.com/national/2022/02/22/743217)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নিয়ে দেশের মানুষ সম্পূর্ণ ধোঁয়াশার মধ্যে থাকে। এই সম্পদগুলোর
প্রকৃত চিত্র কখনোই জনগণের সামনে উন্মোচিত হয় না। আমাদের
শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোতে অতিগুরুত্বপূর্ণ এসব কৌশলগত সম্পদগুলো সম্পর্কে
প্রয়োজনীয় গবেষনা সবসময় অবহেলিত থাকে।
বাংলাদেশের
সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পুরো জাতিকে অন্ধকারে রেখে এ খাতগুলোকে সম্পূর্নভাবে বিদেশি শক্তি
নির্ভর করে ফেলা হয়েছে।
এমনকি
গ্যাস-বিদ্যুতের উপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ প্রদানের বিনিময়ে এখানে ক্ষমতায় আরোহনের
পথ সুগম হয়। যেমন
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কয়েক বছর আগে (২০১৭ সালে) স্বীকার করেছেন, বিদেশীদের কাছে গ্যাস
বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরেছেন। বাংলাদেশের
রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কিংবা বাপেক্স এর সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে গ্যাসক্ষেত্রগুলি
অনুসন্ধান ও এগুলোর থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিদেশি কোম্পানীগুলোর কাছে ইজারা দেয়া
হয়। তারপর সেই গ্যাস উত্তোলনের পর কমবেশি ৮০% মালিকানা বিদেশী কোম্পানীগুলোর
কাছে দিয়ে দেয়া হয়।
অবশেষে
সেই গ্যাস অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর জন্য জনগণের টাকা
থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার বিদ্যুতের
ঘাটতি দেখিয়ে তেলভিত্তিক ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়
স্বল্পমেয়াদে। তারপর
দায়মুক্তি আইন করে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে তাদের সুবিধা ভোগের জন্য এটাকে তুলে দেয়া
হয়। তারপর
দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সেটা ১৬ বছর করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের
মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহার করা হয়, বাকি ৫৭ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র
অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া হয়। এমনকি, এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎও
উৎপাদন না করেই বেসরকারী কোম্পানীগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গত ১০ বছরে উঠিয়ে নিয়েছে
৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। তারপর সেই
বিদ্যুৎ তাদের কাছ থেকে বেশী দামে কিনে ভর্তুকি দিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছানো হয়। এখন ‘সভ্য দেশের সমাধান নয়’ বলে সেটাও
উঠিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে।
এমনিতেই
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তারপর এই ভর্তুকি
উঠিয়ে দেওয়া হলে তা হবে মরার উপর খরার ঘাঁ।
ইসলামে
তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মতো কৌশলগত সম্পদগুলো গণমালিকাধীন সম্পদ বলে বিবেচিত। যেহেতু
খিলাফত ব্যবস্থা ফিরে আসবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ করে তাদের দালাল শাসকদের
অপসারণের মাধ্যমে, তাই ক্ষমতায় আরোহনের জন্য বিদেশী কোম্পানীর হাতে এই সম্পদ তুলে দেওয়া
কিংবা গুটিকয়েক ব্যক্তির সুবিধার ভোগের জন্য দিয়ে দেওয়ার কোন স্থান আমরা সেখানে
দেখতে পাব না। বরং
খিলাফত শাসনব্যবস্থা অতি অল্প খরচে জনগণের কাছে এসব সম্পদের উপকার পৌঁছে দিতে
বাধ্য থাকবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্
(সাঃ) বলেছেন, “তিনটি বিষয়ে সকল মানুষ শরিক। আগুন, পানি
ও চারণভূমি। এবং
এগুলোর বিনিময় মূল্য গ্রহণ করা হারাম” (ইবনে
মাজাহ্)। এই শাসনব্যবস্থায়
আল্লাহ্ভীরু খলিফাগণ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে শারিয়াহ্ অনুযায়ী জনগণকে শাসন
করেন। তাদেরকে
বিদেশী শক্তির তাবেদারী করে ক্ষমতায় আরোহণ করতে হয় না বা ক্ষমতায় টিকে থাকতে হয়
না। তাই
এখানে জনগণ গণমালিকানাধীন সম্পদে তাদের পূর্ণ অধিকার ভোগ করে।
- - মো: জহিরুল ইসলাম
“ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া”
খবরঃ
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া।
অভিযানে রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা শুরু করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা
মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলার কথা অস্বীকার করে বলেছে,
শুধুমাত্র সেখানকার সামরিক স্থাপনা, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও 'ধ্বংসাত্মক অস্ত্রধারী'
বিমান বাহিনীকে লক্ষ্য করা হচ্ছে।
(www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বিশ্ব/ইউরোপ/ইউক্রেনে-যুদ্ধ-শুরু-318491)
মন্তব্যঃ
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সামরিক হামলা সারাবিশ্বের সামনে পশ্চিমাদের প্রতারণা ও
দ্বৈত চরিত্রকে প্রকাশিত করে দিয়েছে।
এই হামলাকে যদি আমরা একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাব-
এক, ইউক্রেন
সমস্যার মূল হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা
এবং বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রসমূহের প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা। আমেরিকা ও ইউরোপ, একদিকে
পূর্ব ইউরোপের
(পাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নভূক্ত) দেশগুলোকে রাশিয়া জুজু’র ভয় দেখিয়ে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে
উষ্কে দিয়ে ক্রমাগত ন্যাটোভূক্ত করছে এবং অন্যদিকে এর
ফলে রাশিয়ার জাতীয়তাবাদী আগ্রাসী চেতনাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কারণ রাশিয়ার নিকট ইউক্রেন ন্যাটোভূক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে রাশিয়ার দ্বারগোড়ায় আমেরিকা ও ইউরোপের উপস্থিতি, যা রাশিয়া
‘রেডলাইন’ হিসেবে
ক্রমাগত হুশিয়ারী দিয়ে আসছে। আমেরিকা ও ইউরোপ পশ্চিমাপন্থী
বর্তমান ইউক্রেন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দিলেও এখন কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
দুই, ইউরোপ ও আমেরিকা বিশ্বব্যাপী তাদের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী স্বার্থকে পূরণ করতে যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন তৈরী করেছিল তা তখনই ব্যবহার করে যখন তার স্বার্থ উদ্ধার হয়। যেমন,
ইরাক ও
আফগানিস্তানে আমেরিকা ও তার মিত্ররা
জাতীয় নিরাপত্তার ধোয়া তুলে আন্তর্জাতিক আইন (জাতিসংঘ রেজুলেশন)
ব্যবহার করে আক্রমণ করে। কিন্তু এখন রাশিয়াও যখন একই জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে তখন তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
তিন, পশ্চিমা
দেশ ও
তাদের মিডিয়াগুলো রাশিয়ার
এই হামলাকে আধুনিক সভ্যতার বর্বরতা,
খ্রীস্টান, স্বেতাঙ্গ
ও সভ্য জনগোষ্ঠীর উপর বর্বোরচিত হামলা আখ্যা দিচ্ছে,
অথচ তারা ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইয়েমেন, ইরাক, আফগানিস্তানের মুসলিমদের উপর হামলার ক্ষেত্রে তা বলছে না, এমনকি এই একই রাশিয়া যখন সিরিয়ায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তখনও তা তাদের নিকট বর্বরতা মনে হয়নি, কারণ এই জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা হচ্ছে মুসলিম।
চার, আমরা দেখেছি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমন করলেও আমেরিকা কিংবা ইউরোপের কোন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি। বরং কিছু নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছে।
কারণ রাশিয়ার সাথে ইউরোপের শক্তিশালী দেশ জার্মানী-ফ্রান্সের
অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত এবং অন্যদিকে আমেরিকার রাশিয়ার সাথে রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ জড়িত। আমরা জানি, আমেরিকা তার সিরিয়ান দালাল বাশার আল-আসাদকে
রক্ষায় রাশিয়াকে ব্যবহার করেছিল। এখন চীনের সাথে রাশিয়ার দুরত্ব সৃষ্টিতে চাপ তৈরি করতে এই
হামলাকে ব্যবহার করবে।
পরিশেষে, পশ্চিমাদের
প্রতারণা ও
দ্বিমূখীতা এখন পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় আরও স্পষ্ট।
তাই মুসলিম বিশ্বের যেসব শাসক-রাজনীতিক কিংবা বুদ্ধিজীবিরা পশ্চিমাদেরকে ত্রাতা হিসেবে মনে করেন তাদের জন্য এখানে শিক্ষা রয়েছে। পশ্চিমাদের পুঁজিবাদী
বিশ্বব্যবস্থা পৃথিবীকে লুণ্ঠন ও বিভক্তি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি, যা থেকে মুক্তির জন্য সারাবিশ্বের মানুষ এখন বিকল্প অনুসন্ধান করছে এবং বিভিন্ন দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনগুলো থেকে তা দৃশ্যমান।
১৪শত বছর পূর্বে ইসলাম যেমন পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের অত্যাচার থেকে মানুষদেরকে মুক্তি দিয়েছিল একইভাবে এখনও পশ্চিমাদের স্বার্থবাদী
বিশ্বব্যবস্থা থেকে মুসলিমসহ সারাবিশ্বের মানুষদেরকে একমাত্র
ইসলামই মুক্তি দিতে পারে। কারণ ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে, এখানে সংকীর্ণ
জাতীয়তাবাদ ও
হীনস্বার্থ চরিতার্থের কোন স্থান নাই।
বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে ইসলামী আদর্শকে গ্রহণ কিংবা ইসলামী রাষ্ট্রের বলয়ের মধ্যে থাকার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে এই
বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অধিভূক্ত নওমুসলিমরা জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। এবং যারা অমুসলিম অবস্থায় ইসলামী রাষ্ট্রের জিম্মায় থাকতে চাইবে তারাও শারীআহ্ অনুযায়ী একই অধিকার ভোগ করবে।
- মো. হাফিজুর রহমান