Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 79


Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৭৯ তম সংখ্যা । ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩



এই সংখ্যায় থাকছে:


“গুলশানের সেই ভবনে ‘সব ছিল’, তারপরও …”

“খরচ বাড়ায় হজযাত্রায় ভাটা, নিবন্ধন মাত্র ১০ হাজার”

“চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব, মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত: দুদককে সংসদ সদস্য নজিবুল”

“লেখাপড়া করতে গিয়ে এ কোন বিপদে পড়ল ছেলেটা”

“ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ” 





“গুলশানের সেই ভবনে ‘সব ছিল’, তারপরও …”

খবরঃ 

ঢাকার অন্য এলাকার মতো গায়ে গা লাগা অট্টালিকার ভিড় নেই আশপাশে, বাড়ির চারদিকে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা, সামনে প্রশস্ত নগর সড়ক, ছিল অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাও। তবুও গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ১০৪ নম্বর বাড়িটি লাগা আগুন নেভাতে লেগে গেছে প্রায় পাঁচ ঘণ্ট। সেই বিভীষিকার মুহূর্তে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন, একজন গুরুতর অবস্থায় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এর বাইরেও কয়েকজন চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন।... আগুন লাগলে কী করতে হবে তা নিয়ে যে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না বাড়ির বাসিন্দা ও কর্মীদের।… সেই আক্ষেপ ঝরেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের কণ্ঠেও। ভবনটি পরিদর্শনে এসে সোমবার দুপুরে তিনি বললেন, “অ্যাওয়ারনেস, অ্যাওয়ারনেস, অ্যাওয়ারনেস।… (https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/fjx56dxzau)

মন্তব্যঃ

যে সমাজ মানুষের প্রবৃত্তি প্রসূত Greed বা ‘লোভ’কে স্বীকৃতি দান করে এবং এর ভিত্তিতে গড়ে উঠে, সে সমাজে এমন দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী নিতান্তই একটি স্বাভাবিক বিষয়। বিখ্যাত মার্কিন স্টক ব্যবসায়ী এভান বয়স্কী’র মতে, “আমি মনে করি লোভ করা ভালো ও স্বাস্থ্যকর। আপনি লোভী হলে নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করতে পারেন”। বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তো ‘লোভ’ ও ‘পুঁজিবাদ’কে এতই ভালোবাসেন যে, তিনি এগুলোকে কোভিড পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়ে দিয়েছেন! আবার আমেরিকাতে ‘মাত্রাহীন লোভের’ বিরুদ্ধে ‘ওয়াল স্ট্রীট’ বিক্ষোভও হয়েছিলো, যেহেতু এর কারণে সেই দেশটিতে ৯৯% মানুষের সম্পদ মাত্র ১% মানুষের হাতে চলে গেছে। তাই বলা যায়, ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা সমাজ এবং তার আদলে গড়ে ওঠা আমাদের সমাজের ভিত্তি হলো ‘লোভ’। এখানে প্রতিটি মানুষকে এই সমাজ লোভী করে গড়ে তুলতে চায়, কারণ সে মনে করে এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি ঘটে। ফলে আমরা দেখি, একজন ব্যক্তি যখন বহুতল বিল্ডিং তৈরি করে, তখন কোটি কোটি টাকা বাড়ি নির্মাণের খরচ করলেও, সামান্য কিছু অতিরিক্ত টাকা সে অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য খরচ করে না। এমনকি দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারী দলের আগমনের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তার জায়গাটুকু পর্যন্ত ছাড়তে চায় না। আবার অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে চায় না। আবার রক্ষণাবেক্ষণ করলেও এসব ব্যবস্থার জন্য প্রশিক্ষিত লোক নিয়োগ দিতে চায় না, যেমনটি এক্ষেত্রে ঘটেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের লোভী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ‘ফায়ার সার্ভিস-এর এই বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও এর কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে ‘নন কমপ্লায়েন্স’ বিল্ডিংগুলোকে ‘কমপ্লায়েন্স’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়। আবার আতিকের মতো লোভী দায়িত্বজ্ঞানহীন মেয়রেরা বিল্ডিং তৈরীর সময় তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করে ও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ‘জনগণ সচেতন না’ এই দোহাই দিয়ে দূর্ঘটনার পর পাড় পেয়ে যায়। এভাবে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটছে। নিমতলী, চকবাজার, এফআর টাওয়ার, গুলশান… এভাবে চলছেই। 

তাই এসব দূর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত মানুষের মন মগজ ও চিন্তা চেতনা থেকে শুরু করে পুরো সমাজব্যবস্থা থেকে ‘লোভ’কে সমূলে উৎপাটন করা না যায়। আর এজন্য দরকার ইসলামী ‘তাকওয়া’ ভিত্তিক সমাজ পুনর্নির্মাণ করা। যে সমাজে মানুষ লোভের বশবর্তী হয়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য তার তৈরিকৃত ভবনটিকে ‘সম্ভাব্য অগ্নিকুণ্ড’ বানাবে না। তার লোভের কারণে নিজের ও অন্যের জীবন ও সম্পদকে হুমকির মুখে ফেলবে না। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সকল কাজ সম্পাদন করবে। মানুষ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশ মেনে সম্পদ অর্জন করবে এবং তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে তা ত্যাগ করবে। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে যাদের প্রচুর সম্পদ ছিল এবং তারা এর সুবিধা ভোগ করছিলেন, কিন্তু সেগুলো আল্লাহ্‌’র পথে কোরবানি করার প্রয়োজন পড়লে এক মুহূর্তও দ্বিধা করেননি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষকে দুনিয়ার সম্পদের প্রতি লোভী হতে নিষেধ করেছেন এবং এক্ষেত্রে কঠোর সতর্কবাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আর যে লোভ করে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে, অথবা যা উত্তম তা অমান্য করে, আমি তার জন্য কঠিন পথ (অর্থাৎ অন্যায়, অসত্য, হিংসা ও হানাহানের পথ) সহজ করে দিব” (সূরা লাইলঃ ৮-১০)। তাই যেখানে ব্যক্তির জন্যই ‘লোভ’ করা নিষিদ্ধ, সেখানে এর ভিত্তিতে সমাজ গঠনের তো প্রশ্নই উঠে না!

    -    জহিরুল ইসলাম



“খরচ বাড়ায় হজযাত্রায় ভাটা, নিবন্ধন মাত্র ১০ হাজার”

খবরঃ

বাংলাদেশের মুসলমানদের তীব্র আগ্রহ থাকার পরও খরচ বেড়ে যাওয়ায় হজের নিবন্ধনে ভাটা পড়ছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। অথচ ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ৩৫২ জন হজের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। নিবন্ধনের শেষ সময় ২৩ ফেব্রুয়ারি থাকলেও বাড়ানো হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্যাকেজের খরচ না কমালে এ বছর পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানো নিয়ে শঙ্কায় হজ এজেন্সিগুলো। কেন আগ্রহীরা নিবন্ধন করছেন না, জানতে চাইলে ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর আসছে, খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরে হজে যেতে পারবেন না। এবছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। হাব নির্ধারিত হজ প্যাকেজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। (www.banglatribune.com/others/religion/786746/

মন্তব্যঃ

২০২২ সালের হজ্জের প্যাকেজের সাথে ২০২৩ এর প্যাকজের তুলনা করলে দেখা যায়, এক বছরেই খরচ বেড়েছে প্রায় ৩০%। যদিও বলা হচ্ছে এই ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ টাকার মান কমা কিন্তু প্যাকেজ দুটিতে একচেঞ্জ রেটের পার্থক্য দেখা যায় ১৭%। অর্থাৎ এখানে রিয়াল-টাকার বিনিময় মূল্যের থেকেও আরও বড় কারণ আছে, আর তা হচ্ছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের দুই সরকার। বাংলাদেশ-সৌদি আরব-বাংলাদেশ বিমান ভাড়ার জন্য প্রত্যেক হজ্জ যাত্রী থেকে দুইদেশের সরকারী বিমান সংস্থা ও সরকার আয় করবে ১৯৭,৭৯৭ টাকা করে। স্বাভাবিক সময়ের ডাইরেক্ট ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত ৬০,০০০/- টাকার মত হয়। অর্থাৎ একজন হাজীকে হজ্জের জন্য সাধারণের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি ভাড়া দিতে হবে। সেই হিসেবে দুই দেশের দুই বিমান সংস্থা বাংলাদেশের (কোটা পূর্ণ হলে) হজ্জ যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত আয় করবে ১৭৫২ কোটি টাকা। সৌদি সরকার মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় অবস্থানের জন্য প্রতি হাজী থেকে টাকা নেয় যাকে মুয়াল্লিম ফি বলা হয়। এবার হাজী প্রতি মুয়াল্লিম ফি ১৬০৬৩০ টাকা যা গত বছরের তুলনায় ১৬২% এরও বেশি। ২০২৩ সালের প্রতি হাজী থেকে বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য আয় বাদ দিয়ে শুধু ভ্যাট থেকেই আয় হচ্ছে ৮৯,০০০ এর বেশি। সেই হিসেবে কোটার সমপরিমাণ হজ্জ যাত্রী থেকে সরকারের ভ্যাট হতে আয় হবে প্রায় ১১৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ স্পষ্টত দুই দেশের সরকার হাজীদেরকে তাদের আয় বাড়ানোর মোক্ষম উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

রাষ্ট্রের কাজ হচ্ছে জনগণের চাহিদাগুলোর তত্ত্বাবধান করা, ব্যবসা করা নয়। কিন্তু ইসলামবিবর্জিত এসব মুসলিম শাসকেরা সবকিছুকেই ব্যবসা বা পুঁজি সম্প্রসারণের উপকরণ হিসেবে দেখে, যে দৃষ্টিভঙ্গী তারা পুঁজিবাদ হতে গ্রহণ করেছে। পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী আধ্যাত্মিক মূল্য, নৈতিকমূল্য, মানবিকমূল্য বলতে কিছুই নেই, এখানে সবকিছুকে বস্তুগত উপযোগিতার পাল্লায় মাপা হয়। তাই এসব শাসকেরা পবিত্র মসজিদগুলোকে এবং মিনা-আরাফাহ এর মত পবিত্র ভূমিগুলোকে ব্যবহার করে তাদের আয় বাড়িয়ে নেয়ার কোন সুযোগকেও হাতছাড়া করছে না। তাই পবিত্র কা’বা আর প্রিয় নবী (সাঃ)-এর মসজিদ তাদের কাছে কেবলই একেকটি পর্যটন কেন্দ্র এবং হাজী সাহেবানরা কেবলই একেকজন পর্যটক। 

অথচ ইসলামের প্রকৃত শাসক খলিফারা হজ্জ এবং হজ্জ যাত্রাকে সহজ ও সাশ্রয়ী করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। খোলাফায়ে রাশেদাহ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ওসমানী খলিফাদের সময়ের এমন নানা উদ্যোগের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে। এমনই একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের নাম ‘দার্ব যুবাইদাহ’। এটি আব্বাসী খলিফাহ হারুনুর রশিদ বাস্তবায়ন করেন এবং তার স্ত্রীর নামে নামকরণ করেন। এটি ছিল অত্যন্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন মহাসড়ক যা মক্কা থেকে ইরাকের কুফা-বাগদাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি আফ্রিকা থেকে চায়না পর্যন্ত একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। এই মহাসড়কের পাশে কিছুদূর পরপর সরাইখান তথা রেষ্টহাউজ ইত্যাদি স্থাপনা ছিল, যেখানে বিনামূল্যে খাবার, পানি, থাকার ব্যবস্থা ছিল। এই রুট ও মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা হাজীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়। এই ‘দার্ব যুবাইদাহ’ এতই গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক যে এটিকে UNESCO World Heritage হিসেবে ঘোষনা করেছে। উসমানী খলিফাহ আব্দুল হামিদের ‘হিজাজ রেলওয়ে’ ছিল এরকমই একটি প্রজেক্ট যা মাত্র পাঁচ দিনে হাজিদের ইস্তাম্বুল থেকে মক্কায় নিয়ে আসতে সক্ষম ছিল। বৃটিশদের ষড়যন্ত্রে যা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যেহেতু ইসলাম ব্যবস্থাগতভাবে খলিফাকে কেবলমাত্র আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টির মুখাপেক্ষী করে গড়ে তোলে সেহেতু একমাত্র ভবিষ্যত খলিফাই পারবে মক্কা, মদিনাসহ পবিত্র স্থানসমূহকে আল্লাহ্‌ সন্তুষ্টি সন্ধানীদের জন্য সুরক্ষিত, পবিত্র ও সামর্থ্যের মধ্যে রাখতে।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন



“চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব, মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত: দুদককে সংসদ সদস্য নজিবুল”

খবরঃ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। এই সংসদ সদস্য বলেছেন, ‘দুদক নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে চেনে নাই। যা তা কমেন্ট করছেন সহকারী পরিচালক। চামড়া সব ছিঁড়ে ফেলব। মাইজভান্ডারীর গায়ে হাত!’... প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে নজিবুল বশরের দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তার এ দুই ছেলে হলেন তরীকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী ও সৈয়দ আফতাবুল বশর। ... নজিবুল বশর প্রথম আলোকে আরও বলেন, “আমি দুদকের বিরুদ্ধে রিট করব। পাশাপাশি তাদের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলব। কারণ, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। দুদক কী করছে। দুদক আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস কোথায় পেল? নিশ্চয়ই কারও ইন্ধন থাকতে পারে। বাংলাদেশে মাইজভান্ডারী দরবার শরিফ মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ছিল। আজও আছে। সরকারের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নাই। আমি ১৪ দলের জোটে আছি। এখনো আছি।” ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশে নজিবুল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি কী অবস্থা করেছিল? আমেরিকা কী করেছিল? সেটা ঠেকিয়েছে কে? সরকার আপনি? না, আপনাকে আমি সহযোগিতা করেছি। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। এক মাসও হয়নি আপনার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি আপনাকে বলেছি, এবারও আপনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, নির্বাচন হয়ে যাবে।’ (https://www.prothomalo.com/politics/7qsyj1ls2y)

মন্তব্যঃ

তরীকত ফেডারেশনের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির বহির্ভূত কিছু নয়। সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় রাজনীতি করার একমাত্র উদ্দেশ্যই থাকে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করা। সে প্রেক্ষিতে এধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এসকল অপরাধ সংঘটিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। হোক সে দল তরীকত ফেডারেশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি। এরা সবাই মূলত একই রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চা করা গোষ্ঠী। শুধুমাত্র বিভিন্ন নাম দিয়ে এরা জোট গঠন করে। হাসিনা সরকারের সাথে তরীকত ফেডারেশনের সখ্যতাই প্রমাণ করে শেখ হাসিনার দলের লোকজন যেসকল অপরাধের সাথে জড়িত নজিবুল বশরের লোকজনও একই অপরাধে সংযুক্ত। কারণ দিনশেষে এদের রাজনৈতিক দর্শন এক ও অভিন্ন; আর তা হচ্ছে সেকুলার-পুঁজিবাদী রাজনীতি।

এধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যারা রাজনীতি করে তাদের ঐক্যের দর্শন যেমন এক, ঠিক তেমনি তাদের বিবাদের দর্শনও এক। অর্থাৎ যতদিন তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ অটুট থাকবে ততদিন তাদের মধ্যে বন্ধনও অটুট থাকবে। পক্ষান্তরে যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত আসবে তখনই তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি করবে। বিএনপি-আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটগুলোর ভাঙ্গা-গড়া, ডিগবাজির রাজনীতি আমাদের সবার জানা। কিন্তু এরা যখন নিজেদের স্বার্থের কারণে আলাদা হয়ে যায় তখন এই বিভাজন শুধুমাত্র এদের নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তা জনগণকেও বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করে ফেলে। ফলে জনগণের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট হয়ে দেশ হয়ে পড়ে বিভক্ত, যা দেশের উন্নতি ও প্রগতির পথে অন্যতম অন্তরায়। এই বিভক্তির মূল কারণ হচ্ছে এসকল দলসমূহ কোন নির্দিষ্ট সঠিক আদর্শকে আকড়ে ধরে রাজনীতি করে না। ফলে বিভাজন তৈরী হয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় লুটপাট আর বিভাজনই হচ্ছে শেষ পরিণতি। এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণ করতে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে আগাতে হবে যেখানে রাজনীতির উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং জনগণের কল্যান করা। আর সন্দেহাতীতভাবেই সেই ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠা খিলাফত ব্যবস্থা যেখানে রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়া কল্পনাতীত ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ, খলিফা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, ‘বায়তুল-মাল থেকে আপনি কতটুকু গ্রহণ করা নিজের পক্ষে বৈধ মনে করেন?’’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘শীত ও গ্রীষ্মের জন্য দু’খান কাপড়, হজ্জ-ওমরার জন্য সওয়ারীর জন্তু এবং আমার ও পরিবারবর্গের জন্য কুরাইশের কোন মাঝারি পরিবারের সমমানের খাদ্য। এরপরে আমি সাধারণ মুসলিমের মতই একজন মুসলিম। তারা যা পাবে আমিও তাই পাব।” এর পাশাপাশি ইসলামী ব্যবস্থায় রাজনীতির উদ্দেশ্য জাতির বিভাজন নয়, বরং জাতিকে একত্রিত করে সারাবিশ্বে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এবং তোমরা সবাই আল্লাহ্‌’র রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হও না” (সুরা আলি ইমরান, আয়াত: ১০৩)

    -    মো. হাফিজুর রহমান                 



“লেখাপড়া করতে গিয়ে এ কোন বিপদে পড়ল ছেলেটা”

খবরঃ

‘অনেক কষ্ট করে, টিউশনি করে, নিজের আয়ে ছেলেটা আমার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। সামান্য বেতনের চাকরি করে এক ছেলে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে গিয়ে এ কোন বিপদে পড়ল ছেলেটা। বড় ভাইদের সালাম না দিলে গায়ে হাত তুলবে, এটা কোন ধরনের আচরণ!...। কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেনের বাবা মফিজুর রহমান। রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের স্থাপত্য বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বিভাগের কতিপয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন রিয়াদ। এরপর ওই দিন রাতেই দিনাজপুর ত্যাগ করে রিয়াদ ঢাকার বাড়িতে চলে যান।... (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/vf2ba6fjq5)

মন্তব্যঃ 

কেবল হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিয়াদ হোসেন না, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলপরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইশতিয়াক হাসান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীসহ সম্প্রতি সংঘটিত নির্লজ্জ ও নিষ্ঠুর র‌্যাগিংয়ের ঘটনাগুলো উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠাজনক। জাতীয় দৈনিকে স্থান পাওয়ায় এনিয়ে তোলপাড় তৈরি হলেও এরকম অসংখ্য অপ্রকাশিত ঘটনা রয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত র‌্যাগিংয়ের নামে চলছে নবীন শিক্ষার্থীদের উপর নানাবিধ নির্যাতন, যা হতে ছাত্রীরাও রেহাই পাচ্ছেনা। তথাকথিত পরিচয় পর্বের কারণে মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যাওয়া, এমনকি আত্মহননের পথ বেছে নেয়ারও নজির রয়েছে।

বাংলাদেশে র‌্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে “পরিচয় পর্ব” অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য প্রচলিত প্রথা। তবে পরিচয় পর্ব বলতে সাধারণত আমরা যা বুঝি র‌্যাগিং এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু, অর্থাৎ র‌্যাগিং মানে হচ্ছে কি কি অভিনব পন্থা অবলম্বন করে পুরাতন শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে পারে, সেই ঘৃণ্য প্রতিযোগীতা। তাই কখনো নবীন শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় সহজ টাস্ক, কখনো কঠিন। ফ্রেসার ছাত্রকে অভিহিত করা হয় “মুরগি” নামে। সবাই মিলে কিভাবে এ মুরগির কাছ থেকে মজা নেয়া যায় সেটাই থাকে র‌্যাগিংয়ের মূল ধান্ধা। কেউ কেউ আরো একটু এগিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় অশ্লীলতার, শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

দক্ষিন এশিয়াতে র‌্যাগিং হিসেবে পরিচিত শব্দটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন ব্রিটেনে বুলিং, আমেরিকায় হ্যাজিং, ফ্রান্সে বিজুটেজ। নাম ভিন্ন হলেও সব জায়গাতেই এর ধরন একই। এই বর্বর রীতির প্রথম উদ্ভাবন হয় প্রাচীন গ্রীকে। গ্রীক কালচারে নতুন খেলোয়ারদের অপমান ও টিজ করা হতো, কালক্রমে তা খেলার মাঠ থেকে মিলিটারী হয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ঢুকে যায়। ১৮ শতকের দিকে ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটিগুলোতে র‌্যাগিংয়ের হাতেখড়ি। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিগুলোতে এর প্রচলন ঘটে গ্রীক লেটার অর্গানাইজেশনগুলোর (Greek Letter Organizations-GLO) হাত ধরে। GLO হচ্ছে এক ধরনের গোপন ছাত্র সংস্থা যাদের নাম হতো গ্রীক বর্ণ অনুসারে যেমন আলফা, পাই, বিটা ইত্যাদি। এগুলোতে সদস্যদের সাহসের পরিচয় নিতে র‌্যাগিং নেয়া হতো যা ছিলো বর্বরতায় পরিপূর্ণ। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বর্বর অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের হাত ধরে। প্রথমত, ইংলিশ স্কুলগুলোতে সাদা চামড়ার ছাত্রদের সাথে লেখাপড়া করতো কিছু সংখ্যক উচ্চবর্ণীয় ভারতীয় দালালদের সন্তানরা। ব্রিটিশরা এসব ভারতীয়দের র‌্যাগিংয়ের মাধ্যমে অপদস্থ করতো যাতে তারা সবসময় ব্রিটিশদের সামনে মাথা নত করে রাখে। দ্বিতীয়ত, ৪৭ পরবর্তী এসব উচ্চবর্ণীয় ভারতীয়রা একই কায়দায় বর্বরতা চালায় নিম্নবর্ণের হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের উপর। র‌্যাগিংয়ের ইতিহাসের আগাগোড়াই হচ্ছে ক্ষমতাবানগোষ্ঠী কর্তৃক নিরীহদের উপর প্রভাব বিস্তারের ইতিহাস। র‌্যাগিংয়ের ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, এটি হচ্ছে ক্ষমতাবানের কর্তৃত্ব বজায় রাখার একটা হাতিয়ার। জঙ্গলের শক্তিশালী পশু যেমন তার কর্তৃত্ব বজায় রাখতে দুর্বল পশুর উপর অত্যাচার করতে দ্বিধাবোধ করে না, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্ষমতাবানরাও আজ দূর্বলকে তার সমগোত্রীয় মনে করে না। তাছাড়া এদেশের শিক্ষানীতি প্রণীত পশ্চিমা জীবন আদর্শের ভিত্তিতে এবং যার লক্ষ্য ‘গ্লোবাল সিটিজেন’ তথা পশ্চিমা চিন্তা-চেতনার যার অন্যতম স্তম্ভ ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা করা, যা মানুষকে স্বেচ্ছাচারী ও খেয়াল-খুশীর দাসে পরিণত করে; তাই এমন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং নামক পশ্চিমা অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।

ইসলামের দৃষ্টিতে র‌্যাগিং অত্যন্ত মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “অপরাধ না করা সত্ত্বেও যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে” (আহযাব ৩৩/৫৮)। রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেন, “যারা ছোটদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না তারা আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়” (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৪২)। ইসলামের এই মহান শিষ্টাচারের আলোকে যদি সামাজিক সম্পর্কগুলো গড়ে উঠে, শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য যদি হয় ‘ইসলামী ব্যক্তিত্ব’ তৈরি করা তাহলে সে সমাজে র‍্যাগিং নামক ব্যধি বাসা বাঁধতে পারবে না। আসলে একটা দায়িত্বশীল, জ্ঞানী ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন খিলাফতের মত একটি সঠিক আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। খলিফার রাজনৈতিক ভিশন এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং সর্বোপরি জ্ঞান বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার আকাঙ্ক্ষার আলোকে এবং কোরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে খেলাফতের শিক্ষানীতি প্রণীত। তাই কেবল মাত্র খেলাফত রাষ্ট্রই শিক্ষালয় থেকে তাঁবে-তাবেইন এর মত সোনালি প্রজন্ম তৈরি করতে পারবে যারা শুধু এ দেশকেই নয় পুরো পৃথিবীকে জ্ঞান ও হেদায়তের আলোর দিশা দেতে পারবে। 

    -    আবু যায়িদ



“ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ” 

খবরঃ

বর্তমানে বাংলাদেশে যে শ্রম আইন রয়েছে তা আরও যুগোপযোগী ও শ্রমিকবান্ধব করে সংশোধনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সরকার বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে যে শ্রম আইনের সংশোধন করলেই কেবল বন্ধ থাকা ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’ বা (জিএসপি) সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা চালু হবে। ঢাকায় সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দেশটির এ অবস্থান জানিয়ে যান বলে নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। দেশ রূপান্তরকে তারা বলেন, এখনই শ্রম আইন সংশোধন করার সুযোগ সরকারের হাতে নেই। (deshrupantor.com/first-page/2023/02/19/409555/

মন্তব্যঃ

যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিএসপি সুবিধাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ দিয়ে শ্রম আইন সংশোধন করার শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারী খাতে শ্রমিকদের মাত্র ৬ শতাংশ ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাচ্ছে, বিস্তারিত দেখুন: (Trade unions in America: The times they are a-changin’, https://cepr.org/ May 28, 2021)। মূলত ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর অসহযোগিতা এবং বিভিন্ন ধরণের আইনি ও প্রশাসনিক বাধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন কারার সুযোগ পায় না। শুধুমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠিত করার অপরাধে পুঁজিপতিদের গর্বের প্রতিষ্ঠান আমাজান, টেসলারমত প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী চাকরিচ্যুতির শিকার হয়। বিস্তারিত দেখুন: (Group: Tesla workers fired after union push at NY plant, Feb. 16, 2023, 9:23 PM ET, Associated Press)। সুতরাং, শ্রমিককের জন্য নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শ্রম আইনে শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করার যে সুযোগের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে তা একটি প্রতারণাপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এসকল ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে ব্যবহার করে তারা তাদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম হাতিয়ার বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে সরকার যখন দেশের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন দলমত নির্বিশেষে ক্রিয়াশীল ট্রেড ইউনিয়নগুলো কোন প্রকার প্রতিবাদ না করে পাটকলটি বন্ধে বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

তাছাড়া যেহেতু, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিকের অধিকার এবং মালিকের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট নয়, সেহেতু পুঁজিপতি শিল্প মালিকদের শোষণ থেকে শ্রমিকদের আত্মরক্ষার জন্য সংগঠিত শক্তি হিসাবে ট্রেড ইউনিয়নকে একটি সমাধান হিসাবে দেখানো হয়। বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের মত তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি প্রদর্শনের হাতিয়ার ছাড়া শ্রমিকদের কল্যাণে কোন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এমন প্রমাণ খুব একটা পাওয়া যায় না। তাইতো ৩০০ বছরেরও বেশী ট্রে্ড ইউনিয়ন চর্চার রক্তাক্ত ইতিহাসে হাজার হাজার শ্রমিকের রক্তের উপর দিয়ে অনেক রাজনৈতিক পটপরির্তন হলেও শ্রমিকদের নূন্যতম দাবি, ন্যায্য মজুরি এবং নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ আজও তিমিরেই রয়ে গেছে। ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে আরও ৩০০ বছর ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা করা হলেও শ্রমিককের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না, কারণ মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ধর্মনিরেপেক্ষ ব্যবস্থায় শ্রমিকদের অধিকার থেকে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।  

একমাত্র ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার ছায়াতলেই শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হবে কারণ ইসলামী শারীআহ্‌ অনুযায়ী শ্রমিক এবং মালিকের দায়িত্ব, অধিকার এবং কর্তব্য সুনির্দিষ্ট। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বিদায় হজের ভাষণে মালিককে শ্রমিকদের জন্য কি রকম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে এই সম্পর্কে বলেন “তোমাদের অধীনস্তদের প্রতি খেয়াল রাখবে। তোমরা যা খাবে তাদেরও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে তাদেরও তা পরাবে” (মুসলিম, তিরমিজি)। শ্রমিকদের সময়মত মজুরি প্রদানের বিষয়ে সর্তক করে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঘোষণা করেন, ‘কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। এক ব্যক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করল। আরেক ব্যক্তি, যে কোনো স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। ব্যক্তি, যেকোন শ্রমিক নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পারিশ্রমিক দেয় না” (বুখারী, হাদিস নং ২২২৭)।  সুতরাং, খিলাফত ব্যবস্থায় “কালেক্টিভ বারগেইনিং” করার জন্য বা মালিকদের চাপ দিয়ে শ্রমিকদের দাবি আদায় করার জন্য ট্রেড ইউনিয়নের মত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হবে না।

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    


Previous Post Next Post