Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 80

 

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৮০ তম সংখ্যা । ১০ মার্চ, ২০২৩




এই সংখ্যায় থাকছে:


“গরীবের মাংস, ব্রয়লার মুরগির দামও আকাশ ছুঁয়েছে! মানুষ খাবে কী!”

“বিস্ফোরণের দায় নেবে কে?”

“পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের জলসা কেন্দ্রীক সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার বেড়ে ১৬৫ জন”

“লাভের ভাগ আদানির, লোকসান বাংলাদেশের”

“ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার, যা বললেন ভুক্তভোগী”

“পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল”








“গরীবের মাংস, ব্রয়লার মুরগির দামও আকাশ ছুঁয়েছে! মানুষ খাবে কী!”

খবরঃ

এ যাবতকালের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এরইমধ্যে কেজিপ্রতি মুরগির দাম ছাড়িয়েছে আড়াইশো টাকা। গরীবের মাংস হিসেবে পরিচিত এ খাবারের দাম বাড়ায় রীতিমতো দিশেহারা ক্রেতারা। অনেককেই চাহিদার বিপরীতে কম পরিমাণে মাংস কিনতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানায়, হুঁ হুঁ করে পোল্ট্রি মুরগির দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়ে তাদের বেচাবিক্রিতেও ভাটা পড়েছে। (www.youtube.com/watch?v=DmFMaxs6nD4)

মন্তব্যঃ

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষদের জীবনযাত্রার-ব্যয় বহনের সংকট ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী তথাকথিত ‘উন্নয়নের’ বাগাড়ম্বরপূর্ণ প্রচারণা চালালেও, প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের পক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিদিনের ন্যূনতম খাবার জোগাড় করাও অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে, স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা তো দূরের বিষয়। সংবাদপত্রসমূহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডের আকাশ ছোঁয়া দামের কারণে বাংলাদেশের বহু ছোট পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে (“মুরগি এবং ডিমের দাম বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশের অনেক ছোট পোল্ট্রি ব্যবসার জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে”, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে ‘https://bdnews24.com’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন)। ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী পুঁজিপতি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীর সাথে আঁতাত করে দেশের সমগ্র খাদ্য শিল্পকে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজসহ গুটিকয়েক দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী মহলের হাতে তুলে দিয়েছে। এ.সি.আই গোদরেজ এগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেড, প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড, ব্র্যাক সীড, আফতাব হ্যাচারি লিমিটেড, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড, ইত্যাদির মতো গুটিকয়েক কর্পোরেট জায়ান্ট কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, বীজ ও সার, পোল্ট্রি, দুগ্ধ ও মৎস্য শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ফিড ও বাচ্চা, এবং মূলধন ও উৎপাদন সরঞ্জামাদি থেকে শুরু করে বিক্রয় ও বিপণন পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা তাদের মুনাফাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহজেই বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে, অথচ প্রান্তিক কৃষক ও ছোট কৃষি খামারীকে দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এটি একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি, কারণ একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যখন কয়েকটি লোভী বহুজাতিক কর্পোরেট হাউসের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়, তখন জাতির সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে এবং সমগ্র জনগণ তাদের জিম্মি হয়ে যায়। 

সকল নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য নিশ্চিত করা শাসকের অন্যতম দায়িত্ব। নিষ্ঠাবান শাসকেরা কোনো স্বার্থান্বেষী মহলকে এই অত্যাবশ্যকীয় খাত দখল করার সুযোগ দিতে পারে না। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী কখনো জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব নেয় না, বরং তারা পুঁজিপতি অভিজাত শ্রেণীকে বাজার দখলে সহায়তা করে এবং বাজারকে একটি গোষ্ঠীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিণত করে। সরকার খাদ্যের দুর্মূল্যকে শুধুমাত্র কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর ‘সিন্ডিকেটের’ সমস্যা হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করলেও এটি প্রকৃতপক্ষে সুদীর্ঘ সময় ধরে দেশ শাসনকারী পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত রয়েছে। এই পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আসলে ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী ও পুঁজিপতি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতার সমন্বয়ে তৈরি, যেখানে শাসকেরা তাদের খেয়াল-খুশি, আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ অনুযায়ী আইন তৈরি করে। ফলে, এই ব্যবস্থায় আমরা মারাত্মক নিয়মতান্ত্রিক দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করি, যার মাধ্যমে পুঁজিপতি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থ নিশ্চিত করা হয় এবং উম্মাহ্’র প্রয়োজনসমূহ পূরণের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়, অথচ জনগণের দেখাশোনা করা শাসকদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতে আমাদের অবশ্যই যুলুমের এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং সাথে এর জোরপূর্বক বাস্তবায়নকারী শাসকগোষ্ঠীকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে, এবং নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধুমাত্র খিলাফতই বর্তমান ব্যবস্থার কারণে সৃষ্ট অসহনীয় দুর্দশা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। এটি আমাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র শারী‘য়াহ্ দ্বারা শাসন করবে এবং পুঁজিপতি ক্ষুদ্র অভিজাত শ্রেণীকে তাদের কায়েমী স্বার্থ নিশ্চিতকারী ব্যবস্থাসহ অপসারণ করবে। শারী‘য়াহ্ অনুযায়ী উৎপাদন ও কৃষি আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রতি জনগণের অগাধ আস্থা আবারও ফিরে আসবে। স্বদেশী জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তার উপর ভিত্তি করে খিলাফত রাষ্ট্রের কৃষি সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরী করা হবে, যা বাংলাদেশের কৃষি, পোল্ট্রি ও পশুসম্পদ, এবং মৎস্য খাতকে স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাবে, সেইসাথে অন্যান্য দেশের চাহিদা পূরণেও সক্ষমতা অর্জন করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: “এমন কোন গভর্নর (ওয়ালী) নেই যে মুসলিমদের দায়িত্ব নেয় এবং তাদের সাথে প্রতারণা করে মারা যায়, অন্যথায় আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন" [বুখারী]  

    -    ইমাদুল আমিন


 

“বিস্ফোরণের দায় নেবে কে?”

খবরঃ 

ঢাকার সাইন্সল্যাব এলাকায় একটি তিনতলা বাণিজ্যিক ভবনে ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি অক্সিজেন কারখানায় বড় বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া শরীরে পোড়া ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন হাজারো মানুষ। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানের কাছে সিদ্দিকবাজারের নর্থ-সাউথ রোডে ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এখন প্রশ্ন- এ ধরণের দুর্ঘটনার দায় কার? এই তিন ঘটনার বাইরেও বিগত কয়েক বছরে বড় ধরণের বিস্ফোরণের খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। তবে সবকটি বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে ‍‍‘জমে থাকা গ্যাসের‍’ বিষয়টিকে দায়ী করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্তে কর্তৃপক্ষের অবহেলা প্রকাশ্যে এলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বেশিরভাগ সময় দায় চাপিয়ে দেয়া হয় ভবন মালিকের উপর। ....এভাবে গ্যাস থেকে একের পর এক আগুনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব ঘটনায় মারা যাচ্ছেন অনেকে। এর দায় কার? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে এর দায়ভার নিতে চায় না কেউই। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের দায় এড়ানোর চেষ্টার মধ্যেই একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। (https://www.ekusheysangbad.com/special-report/news/380841)

মন্তব্যঃ

জনগণের বিষয়াদি দেখাশুনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে এই ঘটনাগুলো তার নির্মম স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারী যেসকল প্রতিষ্ঠান এসকল নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখভালের জন্য দায়িত্বশীল সেটাকে ধরাছোয়ার বাইরেই রাখা হচ্ছে। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন নাটক মঞ্চস্থ হয়। এরপর প্রতিবেদনে তদন্তের ফলাফল সামনে এলেও দুর্ঘটনার সকল দায় শেষ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি, ভবন মালিক, কারখানা মালিক বা মসজিদ কর্তৃপক্ষের উপরেই চাপানো হয়। অথচ একটি ভবনের নকশা অগ্নি নিরাপত্তা মেনে করা হয়েছে কিনা, আগুন নেভানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আছে কিনা, সেইসাথে কেমিকেল মজুদ বা কারখানার লাইসেন্স দেয়ার সময় পর্যাপ্ত নজরদারি ছিল কি না, কোন ভবনে অবৈধ বিদ্যুৎ আর গ্যাসের সংযোগ কিভাবে এলো, কোন অক্সিজেন কারাখানা নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছিল কিনা, কন্টেইনার ডিপোতে এতো ক্যামিকেলের মজুদ কিভাবে হল, সেগুলো নিয়মিত তদারকি করার দায়িত্ব সরকারি সংস্থাগুলোর। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিস্ফোরণ পরিদপ্তর, পরিবেশ অধিদফতর এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ইত্যাদি। এসব বিষয় তদারকি করা সরকারি সংস্থাগুলোর দায়িত্ব হলেও, তারা তাদের অবহেলার বিষয়টি ঢাকতে বার বার দায় এড়াতে দেখা যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই যে জনগণের ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিদের চূড়ান্ত অবহেলা এর মূল কারণ কি? কারণ বর্তমান সেক্যুলার-পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় দায়িত্বকে বস্তুগত লাভের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যদিও এই বস্তুগত লাভকে কোন সীমা-পরিসীমা দ্বারা আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। এখানে যার যত বড় দায়িত্ব তার সম্পদের পরিমাণও ততবেশী। এখানে জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি কর্তাব্যক্তিদের আর্থিক লাভের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এখানে সরকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত পিয়ন থেকে শুরু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের অধিকারীরা জনগণের বিষয়াদী দেখভালের ক্ষেত্রে যে চূড়ান্ত অবহেলা প্রদর্শন করবে এটাই বাস্তবতা। কারণ না আছে এদের জনগণের নিকট কোন জবাবদিহিতা, না আছে পরকালের কোন জবাবদিহিতা। এই সেকুলার ব্যবস্থা যতদিন টিকে থাকবে ততদিন আমাদেরকে আগুন আর বিস্ফোরণে এভাবেই মারা যেতে হবে। 

ইসলামী ব্যবস্থায় দায়িত্বকে পরকালের জবাবদিহিতার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন” (বুখারী)। আখিরাতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র সম্মুখে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবার ভয় রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে কর্তাব্যক্তিদেরকে নিজেদের কাজের ব্যাপারে সদা সচেতন রাখে। এবং এটা কোন কাল্পনিক কথা নয়, এমনটাই বজায় ছিল খুলাফায়ে রাশেদিন থেকে শুরু করে সর্বশেষ উসমানী খিলাফতের খলীফাদের শাসনকাল পর্যন্ত। এই বাংলাদেশেই শতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত সুলতানী আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য কিংবা উসমানী খিলাফত আমলে প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য ভবন এখনো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কারণ ইসলামী শাসনব্যবস্থার শাসকরা নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সুতরাং আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থার খলীফা তার নিজের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন থেকেই নাগরিকদের নিরাপত্তার সকল বিষয়েই খেয়াল রাখবেন এবং অন্যান্যরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করছেন কিনা তা নিশ্চিত করবেন। সঠিক নগর পরিকল্পনা, সঠিক বিল্ডিং কোড প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটর করা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে উন্নত ট্রেনিং ও আধুনিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করা ইত্যাদি সবই খলীফার দায়িত্ব। এবং তিনি তা করবেনও কারণ তার দায়বদ্ধতা রয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি। 

    -    মো. হাফিজুর রহমান



“পঞ্চগড়ে কাদিয়ানীদের জলসা কেন্দ্রীক সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার বেড়ে ১৬৫ জন”

খবরঃ

সম্প্রতি দেশের পঞ্চগড়ে আহমদিয়া/কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা আয়োজনের প্রতিবাদ করতে গেলে সাধারণ মুসলিমদের উপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। ঘটনায় ২ জন নিহত হয় এবং আরও অনেকে হতাহত হয়। ঘটনার প্রেক্ষাপটে হওয়া সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় নাম উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬৫ জনে। এখন জেলা জুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পুলিশের পাশাপাশি গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে র‍্যাব ও বিজিবি। (https://swadeshbarta.com.au/news/সারাদেশ/26877/পঞ্চগড়ের-সংঘর্ষের-ঘটনায়-গ্রেফতার-বেড়ে-১৬৫-জন

মন্তব্যঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর মাধ্যমে যে নব্যুয়তের সমাপ্তি হয়েছে এবং ওহির দরজা বন্ধ হয়েছে, এটি কাদিয়ানীরা বিশ্বাস করে না। তারা তাদের আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী ও আল্লাহ্‌র কাছ থেকে প্ররিত ব্যক্তি মনে করে (নাউজুবিল্লাহ্)। ফলে কাদিয়ানীরা স্পষ্টত অমুসলিম। কিন্তু কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করে এবং এমনকি তাদের জামাতকে সত্যিকারের ইসলাম (True Islam) দাবি করে এবং নিজেদেরকে ইসলামের পূণঃর্জাগরণকারী দল মনে করে। অথচ এদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “……নিশ্চয়ই সে সুদূর বিপথে বিভ্রান্ত হয়েছে” (সুরা নিসা ১৩৬)। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য থেকে অনেক মিথ্যাবাদির উদ্ভব ঘটবে যারা প্রত্যেকেই মনে করবে যে, সে নবী, অথচ আমি নবীদের শেষ, আমার পরে আর কোন নবী নেই” (আত-তিরমিযী)। এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উত্থান ও পৃষ্ঠপোশকতাকারী ছিল বৃটিশরা যারা তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষসহ বিশ্বজুড়ে ইসলামের বিপক্ষে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্ররত ছিল। এই বৃটিশদের ব্যাপারে মির্জা কাদিয়ানী বলেছিল, “আমার ১৭ বছরের লেখনীতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে আমি আমার চিন্তা ও আবেগে পরিপূর্ণভাবে বৃটিশ সরকারের প্রতি বিশ্বস্থ এবং নিষ্ঠার সাথে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছি। আমি এমন এক পিতার সন্তান যিনিও ছিলেন বৃটিশ সরকারের বন্ধু। আমার বিশ্বাস হচ্ছে বৃটিশ সরকারের প্রতি অনুগত থাকা এবং তাদের লোকদের ভালোবাসা।  আমার শিষ্য ও অনুসরণকারীরাও এই শর্তেই আমার সাথে শপথ বদ্ধ” (কিতাবুল বারিয়্যা, পৃষ্ঠা ৯)। বৃটিশদের প্রতি এমন নিষ্ঠা ও আনুগত্যের কারণে গোলাম কাদিয়ানীকে ‘British Prophet’ও বলা হয়ে থাকে। ভারতবর্ষে মুসলিমদের বৃটিশবিরোধী এবং বিখ্যাত খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই কাদিয়ানী আন্দোলনকে বৃটিশরা জন্ম দিয়েছিল মূলত দুটি উদ্দেশ্যে: ইসলামী আক্বিদার ভিত্তি নব্যুয়তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক ও ইসলাম বাস্তবায়নের বাস্তবিক ব্যবস্থা খিলাফতের ধারণাকে দুষিত করা। এছাড়াও ইসলামের শত্রু এই মিথ্যাবাদি কাদিয়ানী ‘জিহাদের’ পবিত্র ধারনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যও কাজ করেছে।

বৃটিশরা এই অঞ্চল থেকে চলে যাওয়ার পরও তাদের রেখে যাওয়া জীবন বিশ্বাস যে স্যেকুলারিজমের ভিত্তিতে এখনও আমাদের দেশ পরিচালিত হচ্ছে সেই স্যেকুলারিজমের অন্যতম ভিত্তি “বিশ্বাসের স্বাধীনতা”-এর কাঁধে ভর করেই ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত এই আন্দোলন এখনও কাজ করে যাচ্ছে। বৃটিশ পরবর্তী স্যেকুলার সরকারগুলো বিশ্বাসের স্বাধীনতার অযুহাত দেখিয়েই কাদিয়ানীদের পৃষ্ঠপোশকতা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু বর্তমান সরকার কেন কোন ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার উম্মাহর দীর্ঘদিনের দাবিকে মেনে নেয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতায় যেকোন ধর্ম পালনের স্বাধীনতা আছে উল্লেখ করে এই সরকারগুলো কাদিয়ানীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের অধিকার আছে বলছে এবং তাদেরকের প্রকাশ্যে প্রচারনা চালাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। অথচ মুসলিমদের শাসনের দায়িত্ব নেয়া এই শাসকদের সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিল এই মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাসের মূল ভিত্তি বা আক্বিদার সুরক্ষা দেয়া। অথচ তারা নিজেরাতো তা করছেই না, এমনকি সাধারণ মুসলিম জনগণের প্রতিবাদকে দমন করার জন্য তাদের উপর গুলি চালাচ্ছে ও হত্যা করছে, এবং অসংখ্য মামলা ও জেল জরিমানা নিয়ে উম্মাহর উপর ঝাপিয়ে পড়েছে!

খিলাফত রাষ্ট্রে ভিন্ন ধর্মের লোকেরা নিরাপদে ধর্মপালন করতে পারবে কিন্তু সকল ধর্মকে অবশ্যই তাদের আক্বিদা বা বিশ্বাসকে আগে থেকেই স্পষ্ট করতে হবে। কাদিয়ানীদের আক্বিদা অনুযায়ী তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হবে এবং অমুসলিম হিসেবে তারা তাদের ধর্মকর্ম তাদের নিজস্ব গন্ডিতে নির্বিঘ্নে করতে পারবে। কিন্তু এরপরও যাদি তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করতে থাকে এবং একইসাথে ইসলামের আক্বিদার মূলস্তম্ভকে অস্বীকার করতে থাকে তাহলে তাদের উপর মুরতাদের শাস্তি কার্যকর করা হবে।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 


“লাভের ভাগ আদানির, লোকসান বাংলাদেশের”

খবরঃ

লাভের ভাগ গৌতম আদানির আর লোকসানটা বাংলাদেশের-ভারতীয় এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিটিকে এক কথায় এভাবেই বলা যেতে পারে। আদানির সঙ্গে হওয়া এই চুক্তিটি সরকারিভাবে গোপন রাখা হলেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কেউ কেউ এই গণমাধ্যমকে দিয়েছেন। ‘চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল, একপেশে এবং বাংলাদেশের জনগণের টাকায় এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনীর পকেট ভরার চুক্তি’, এমন বিশ্লেষণ সিডনিভিত্তিক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির, যিনি এই খাতে ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন। দ্য ডেইলি স্টারের সংগ্রহ করা চুক্তিটি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ……বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এমন একটি চুক্তি সই করেছে, যেখান থেকে আদানি পাওয়ার কয়লা ক্রয় থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ রপ্তানি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে ‘অতিরিক্ত’ লাভ করার সুযোগ পাবে। এমনকি আদানি যদি চুক্তির কোনো শর্ত না মানে, তবু বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি থেকে বের হওয়ার পথটা অনেক কঠিন। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-455401)

মন্তব্যঃ 

সত্যিই আমরা খুব আশ্চর্য হই যখন এধরণের অস্বাভাবিক চুক্তির খবর আমাদের সামনে আসে। আমরা কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারিনা কিভাবে জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একটি অঞ্চলের সরকার এধরণের চুক্তি করতে পারে(!)। সাম্প্রতিককালের কিছু চুক্তি বিষয়ক খবর, যথা “ডলারে চুক্তি, খেসারত দিচ্ছে পিডিবি”, “ভারতের সাথে চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে লিখে পদ হারালেন আ’লীগ নেতা” “মার্কিন কোম্পানির ওপরই নির্ভর সরকার” “বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর” “আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তি দেশের ক্ষতির কারণ হতে পারে” “উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি ২০১৯- সরকার বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে” – পড়লে যে বিষয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠে তা হচ্ছে, কিভাবে সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ক্রমাগত একের পর বৈদেশিক চুক্তি করে যাচ্ছে কিংবা চুক্তির ক্ষেত্র তৈরি করছে। কিন্তু, কার স্বার্থে, কোন উদ্দেশ্যে এই গোলামি?

সরকারের এই গোলামি করার কারণ বুঝতে হলে আমাদের বুঝা জরুরী – বাংলাদেশের রাষ্ট্র হিসেবে কি ধরণের। পৃথিবীতে বর্তমানে ৪ ধরণের রাষ্ট্র বিদ্যমান। (১) আদর্শিক রাষ্ট্র – এরা যেকোন চুক্তি করে নিজস্ব আদর্শিক উদ্দেশ্যকে বা স্বার্থকে সামনে রেখে, যেমন- আমেরিকা, ব্রিটেন; (২) স্যাটেলাইট বা অরবিটাল রাষ্ট্র – এরা সাধারণত নিজস্ব স্বার্থ অথবা কোন আদর্শিক রাষ্ট্রকে অনুসরণ করে নিজেদের চুক্তির উদ্দেশ্য সাঁজায়, যেমন- অস্ট্রেলিয়া আমেরিকাকে অনুসরণ করে; (৩) স্বাধীন রাষ্ট্র – এরা সাধারণত নিজস্ব স্বার্থকে মাথায় রেখে কোন চুক্তির উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে, যেমন- ডেনমার্ক; (৪) এজেন্ট বা দালাল রাষ্ট্র – এই ধরণের রাষ্ট্র সাধারণত কোন আদর্শিক কিংবা শক্তিশালী রাষ্ট্রের গোলামি করে। এরা উক্ত রাষ্ট্রগুলোকে প্রভুর মত দেখে। কেননা, এসব রাষ্ট্রের শাসকরা সাধারণত তাদের প্রভুদের আশির্বাদে ক্ষমতায় টিকে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে এই রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বাধীন-সার্বভৌম দাবী করলেও মূল নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রভু রাষ্ট্রগুলোর হাতে। এই নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বছরের পর বছর দালাল রাষ্ট্রগুলোর শাসকদের দালালি করে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কারণে। এজন্য এসব রাষ্ট্রের চুক্তি সাধারণ উক্ত প্রভু রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ রক্ষাকে কেন্দ্র করে হয়। বাংলাদেশ ঠিক এমনি একটা দালাল রাষ্ট্র। “কারো সাথে বৈরিতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব” মূলত দালালির সর্বোচ্চ উদারতামূলক পররাষ্ট্রনীতি। আর এই দালালিরই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে, আদানির সাথে এমন অস্বাভাবিক চুক্তি। যা স্পষ্ট হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে, “শেখ হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ করেছিঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী”। 

এখন এই অঞ্চলের মুসলিম উম্মাহ্‌‘কে এমন দালাল শাসকদের কবল থেকে রক্ষা করতে হলে, বাংলাদেশকে অচিরেই ইসলামের ছায়াতলে এনে একটি আদর্শিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। যা হবে পৃথিবীর বুকে দ্বিতীয় খিলাফাহ্‌ রাশিদার প্রত্যাবর্তন। খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্রের ভিত্তি মূলত “আল্লাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব” প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। তাই এই রাষ্ট্রের প্রতিটি পদক্ষেপের পিছনে আল্লাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব তথা এই সার্বভৌমত্বের সাথে সম্পর্কিত ইসলামী শরীয়াহ্‌’র সার্বভৌমত্ব তথা মুসলিম উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবং এটিই খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্রের যেকোন পররাষ্ট্র চুক্তির আদর্শিক ভিত্তি, বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের যা নেই। এজন্য, খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্র এমন কোন পররাষ্ট্র চুক্তি সম্পাদন করবেনা, যাতে রাষ্ট্র, ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ খর্ব হয়। খলিফা ২য় আব্দুল হামিদ এর সময়ে যখন ইহুদীরা চওড়া অংকের টাকার বিনিময়ে ফিলিস্তিনকে তাদের কাছে বিক্রি করে দিতে বলে, তখন তাঁর প্রতিউত্তর ছিলো, “… আমি এই অঞ্চলের এক ইঞ্চিও বিক্রি করবোনা…যতক্ষন আমি বেঁচে আছি, ফিলিস্তিনের একটুকরো জমিও ইসলামিক রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বরং আমার কাছে নিজের শরীরে তরবারি চালানো শ্রেয়”। তাছাড়া খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র চুক্তির বিষয়াদি শরীয়াহ্‌ দ্বারা নির্ধারিত যাতে ইসলাম বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকে।   

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম



“ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ ছাত্রীকে হল থেকে বহিষ্কার, যা বললেন ভুক্তভোগী”

খবরঃ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ জনের আবাসিকতা বাতিল করা হয়েছে। হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমার পর এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।... সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভুক্তভোগী মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, ‘তাদের যেটা প্রাপ্য, সেটা তারা পাওয়া শুরু করেছে। আরও প্রাপ্য থেকে থাকলে সেটাও পাবে। তারা এই যোগ্যতাই অর্জন করেছে। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য পাবে।’... প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।... (www.banglatribune.com/my-campus/787436/ছাত্রলীগ-নেত্রীসহ-৫-ছাত্রীকে-হল-থেকে-বহিষ্কার-যা)

মন্তব্যঃ

একজন নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করার মত জঘন্য অপরাধের পর ‘দল থেকে বহিষ্কার’, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার’ কিংবা ‘হল থেকে বহিষ্কার’-এর মতো ‘লঘু শাস্তি’র মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় যে, এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নারীর সম্মান রক্ষার্থে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে ‘তদন্তাধীন বিষয়’, ‘বিচারাধীন বিষয়’ ইত্যাদি নাটকের আড়ালে অপরাধীদেরকে সিস্টেমেটিকভাবে পাড় পাওয়ার রাস্তা সহজ করা হয়েছে মাত্র। কোন অপরাধীকে তার কৃত অপরাধের কারণে ‘লঘু শাস্তি’ কিংবা ‘মাফ করে দেওয়া’ হলে এটা তার জন্য একটি বড় পুরস্কার এবং ভুক্তভোগীর জন্য জুলুমের নামান্তর। এখানে আলোচিত ছাত্রলীগের অপরাধীরা সরকারি দলের অংশ হওয়ায় একজন নারীকে চার ঘন্টা ধরে নির্যাতন ও অসম্মান করলেও এটার জন্য এই লঘু শাস্তি! এর আগেও আমরা দেখেছি মাদক, চাঁদাবাজি, জুয়াসহ অন্যান্য জঘন্য ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত সম্রাট-খালেদরা কিছুদিন পরেই জামিনের মুক্তি পেয়ে এখন সরকারি দলের সাথেই রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে। আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাঈদ (ক্যাসিনো সাঈদ হিসেবে পরিচিত) এর গ্রেফতার অভিযানের সময় সে বিদেশে পলাতক থাকলেও জানুয়ারিতে দেশে ফিরেই সে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ পুরস্কার পেয়েছে। সরকারঘনিষ্ট বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভিরকে মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের পর সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। এভাবে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নারীদের সম্ভ্রমহানী, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া ব্যবসায়ীদের পুরস্কৃত করে থাকে। এরা এখানে ‘জনগণ সর্বময় ক্ষমতার উৎস’ এই স্লোগান দিয়ে একটা নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতায় গিয়ে ‘সর্বময় ক্ষমতা’ ভোগ করে। নিজেরা শত অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। সমগ্র শাসকগোষ্ঠীই অপরাধী বাহিনীতে পরিণত হয়।

অন্যদিকে ইসলামী ব্যবস্থায়, ইসলামী আক্বিদার ভিত্তিতে খিলাফত শাসন ব্যবস্থার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর সম্মান, অপরাধ ইত্যাদি সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হয়। সেটা হল সকল কিছুই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার হিসাবের মধ্যে রয়েছে এবং তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের হিসাব নিবেন। এখানে শাসকগণের কোন দলীয় অপরাধী বাহিনী পোষার প্রয়োজন হয় না। আবার অন্যদিকে বিচারকগণও আল্লাহর ভয়ে অপরাধীদেরকে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি হলেও ছাড় দেন না। এভাবে নারীকে সিস্টেমেটিকভাবে নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি, এখানে নারীর সম্মানের বিষয়টিকে ‘একটি জীবন মরণ ইস্যু’ হিসেবে দেখা হয়। এটি রক্ষার জন্য রাষ্ট্র প্রয়োজনে সেনাবাহিনী প্রেরণ করতেও এক মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বিধা করে না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মদিনার প্রভাবশালী ইহুদি গোত্র ‘বনু কাইনুকা’র বিরুদ্ধে এই অপরাধের কারণে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন যে, তারা একজন মুসলিম নারীর ওড়না ধরে টান দেওয়ার মত স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি তাদের সমগ্র গোত্রকে মদিনা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, কারণ তারা অপরাধী ইহুদীর পক্ষ নিয়েছিল।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম



“পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল”

খবরঃ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত ছিলেন’—আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসা এমন অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান নন, আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন সরকার পরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে—-এমনটাই জোর দিয়ে দাবি করেছেন তিনি।.... মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ এবং তৎকালীন সরকার জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং তাদের চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, বাংলাদেশকে একটা দুর্বল, নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্যে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যও এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।’....বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের সমালোচনা করে সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি আসলেই আওয়ামী লীগের এই সরকারের হৃৎকম্পন শুরু হয়। (www.ajkerpatrika.com/260513/পিলখানা-হত্যাকাণ্ড-ঘটিয়েছে-আ.-লীগ-মির্জা-ফখরুল%C2%A0)

মন্তব্যঃ

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৫ ও ২৬ তারিখ জুড়ে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের এই নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর সত্যনিষ্ট দল হিযবুত তাহ্‌রীর দ্রুত জনগণের সামনে উন্মোচন করে দেয় যে, এর পেছনে মূল হোতা হচ্ছে পার্শবর্তী শত্রু রাষ্ট্র ভারত এবং ক্ষমতাসীন হাসিনা সরকার হচ্ছে এর প্রত্যক্ষ সহযোগী। বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবিরা এতদিন পর সরকারের সম্পৃক্ততার কথা বললেও, ভারতের কথা মুখে আনতে নারাজ। কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে সুগম রাখতে তারা এখন ভারতের বিরাগভাজন হতে চায়না। অপরদিকে সরকার এই ঘটনার ১৪ বছর পার হওয়ার পরও সেই ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পনাকারীদের বের করার কোন উদ্যোগ না নিয়ে তার ও তার ভারতীয় প্রভুর দিকে যে অভিযোগ ছিল তারই সত্যতা প্রমাণ করেছে। শুধু তাই নয় পিলখানা হত্যাকান্ডের পর ‘বিজিবি আইন ২০১০’ এর মাধ্যমে আমাদের সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনীকে নখদন্তহীন করা, বর্ডারে বিএসএফের ‘শুট টু কিল’ নীতির বিপরীতে বিজিবির ‘গুলি না করার নীতি’ ইত্যাদির মাধ্যমেও এটি স্পষ্ট হয়েছে যে ক্ষমতাসীন সরকার এই দেশের দায়িত্বে থাকলেও পিলখানা থেকে দেশের প্রতিটি সীমানায় দেশের নিরাপত্তার পরিবর্তে ভারতের মত প্রভু দেশগুলোকে খুশি রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য। তাই এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা, যারাই ক্ষমতায় থাকুক না কেন কখনও ভারত কিংবা ভারতের দালালদের বিচারের সম্মুখীন করবে না।

এখানেই শেষ নয়, এসব ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা ও অপরাধ ঢাকতে এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী দেশের ও দেশের নিরাপত্তাবিহিনীসমূহের ‘শত্রু’র সংজ্ঞাও পরিবর্তন করে ফেলেছে। যেমন ‘বিজিবি আইন ২০১০’ অনুযায়ী ‘‘শক্র’’ অর্থ ‘দেশ ও বাহিনীর সদস্যগণের জন্য হুমকি স্বরূপ সকল প্রকারের বিদ্রোহী, দাঙ্গাকারী, সন্ত্রাসী, জলদস্যু এবং অস্ত্রধারী’। অর্থাৎ এই দেশের ‘শত্রু’ এই দেশের বাইরের কেউ হতেই পারে না, সব ‘শত্রু’ যেন দেশের জনগণ থেকেই উদিত হয়! এই আইন দ্বারাই বিজিবিকে বর্ডারে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষায় গুলি চালাতে না দিলেও দেশের অভ্যন্তরে নির্বাচন ও অন্যান্য সময়ে দেশের জনগণের উপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের এই ‘শত্রু’ পরিবর্তনের নীতি আরও স্পষ্ট হয় পিলখানা হত্যাকান্ডের ১৪ বছরপূর্তির পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে। দেশের নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক মিটিংএ রোহিঙ্গাদের কর্তৃক কাঁটাতারের বেড়া কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া কাটলেই গুলি চালায়। এখানে তারের বেড়া কাটলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে।’ এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় কিভাবে এই শাসকরা একদিকে ভারত কর্তৃক নিজের মানুষদের অপমানজনক হত্যাকে যুক্তিযুক্ত করছে, অন্যদিকে অসহায়, ভিটাহারা, ভুখা-নিরস্ত্র রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে ‘শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরছে! এভাবে তারা মূল শত্রুকে ঢাকতে একের পর এক ডিফ্যাক্টো শত্রু তৈরি করতে থাকে। একইভাবে পিলখানা হত্যাকান্ডের পর আল-জাজিরায় সজিব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া বক্তব্য “হত্যাকান্ডের পিছনে (যোয়ানদের) অভিযোগের বৈধতা ছিল” অফিসারদেরকে সৈনিকদের ‘শত্রু’ বানিয়ে হত্যাকেই বৈধতা দেয়। 

দুঃখজনক হলেও সত্য শুধু বাংলাদেশ নয় বর্তমান বিশ্বের সব মুসলিম দেশের শাসকরাই এরকম নির্লজ্জভাবে আমেরিকা, বৃটেনসহ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর তাবেদারী করছে। এবং সর্বোপরি তাদের ষড়যন্ত্র অনুযায়ী নিজ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দিনদিন দুর্বল করতে ও এই বাহিনীগুলোর ‘শত্রু’র সংজ্ঞা পাল্টে বাহিনীগুলোর কাজের ফোকাস পরিবর্তন করে ফেলার জন্য দিনরাত কাজ করছে। তেমনই এক বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘শান্তি মিশন’, যার নামে আমাদের দেশের বাহিনীগুলোর মূল মনোযোগ ও সফলতার সংজ্ঞাই যেন তারা আজ পাল্টে দিচ্ছে। সবাই জানে যে ‘শান্তি মিশন’ আসলে আমেরিকা, বৃটেনের মত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর ‘উপনিবেশবাদী জুলুমের মিশন’, তথাপি আমাদের বাহিনীগুলোকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কৌশলে সেই দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে। 

আমাদের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে দ্রুতই দেশ ও দেশের নিরাপত্তার জন্য মূল শত্রু হিসেবে এই বিশ্বাসঘাতক দাস মিরজাফরদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের উচিত অনতিবিলম্বে এই ঘৃণ্য শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের ও তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য নব্যুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার শর্তে নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীরের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কারণ একমাত্র খলিফাই পারে সত্যিকার শত্রুর সাথে লড়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ও জনগণকে একসাথ করতে। রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বলেন, “ নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ যার পিছনে থেকে জনগণ যুদ্ধ করে এবং যার মধ্যমে জনগণ নিজেদেরকে রক্ষা করে”। 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন



Previous Post Next Post