Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 81


 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৮১ তম সংখ্যা । ২৭ মার্চ, ২০২৩




এই সংখ্যায় থাকছে:

“শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব: বগুড়ায় পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন জজ”

“সোনার ছেলে সাকিব আল হাসান ও আয়নাবাজি”

“কর্নেল অলির জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা”

“আন্তনদী - তিস্তার পর কি ধরলার পানিও হারাচ্ছে বাংলাদেশ”

“ঢাকার যানজট মূলত সমস্যা নয়, এটি রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ: মেয়র আতিক” 

“বিশ্বব্যাংকের ‘লক্ষ্য’ - আয়কর ও ভ্যাটে আড়াই লাখ কোটি টাকা আদায়ের চাপ”

“সাহস নিয়ে প্রতিবাদ, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়”

“দেশপ্রেমের পরীক্ষা’ দিচ্ছে চারঘাটের ১৭ হাজার শিক্ষার্থী”






“শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব: বগুড়ায় পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন জজ”

খবরঃ

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিয়মানুসারে পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। কিছুদিন আগে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সোমবার শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল তার। জজের মেয়ে হওয়ায় সে ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায়। ওই রাতে ফেসবুকে সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে ও তার মা জজ উল্লেখ করে সে পোস্ট দেয়। এছাড়া সহপাঠীদের মাকে তার মায়ের মতো জজ হতে বলে। এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চার ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের কক্ষে যান। এ সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও জেলে পাঠানোর হুমকি-ধমকি দেন। এ ছাড়া দুই অভিভাবককে তার পা ধরে ক্ষমা চাইতে তিনি বাধ্য করেন। (www.jugantor.com/todays-paper/last-page/657548)

মন্তব্যঃ

সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন ও তার মেয়ের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন কিংবা সমসাময়িক সময়ে রংপুরের ডিসি ড. চিত্রলেখা নাজনীন কর্তৃক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক সহকারী অধ্যাপককে ‘স্যার’ বলতে বাধ্য করা - এগুলো কোনটিই নতুন কিংবা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর পূর্বে আমরা দেখেছি এসিল্যান্ডদেরকে স্যারের বদলে ভাই বা আপা ডাকলে জনগণের প্রতি উষ্মা প্রকাশ কিংবা করোনাকালীন সময়ে মাস্ক না পড়লে বৃদ্ধদেরকে কান ধরে উঠ-বস করানো ইত্যাদিও আমাদেরকে গলাধঃকরণ করতে হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা এসকল সরকারী চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তারা কেন নিজেদেরকে সাধারণ জনগণ থেকে সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করেন?

মূলত সিভিল সার্ভিসের এসকল কর্মচারীদের বেপরোয়া আচার-আচরনের মূল কারণ হচ্ছে, তারা মনে করছেন যেহেতু তারা শাসকগোষ্ঠীর আশির্বাদপুষ্ট সেহেতু তারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। বর্তমান সেক্যুলার ব্যবস্থা শাসকশ্রেণী ও তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত গোষ্ঠীকে অনেক ক্ষমতার অধিকারী এবং নিজেকে সকল প্রকার দায়বদ্ধতা-জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে মনে করতে শেখায়। ফলে নিজেদের মধ্যে গড-মেন্টালিটি তৈরী হয়ে জনগণকে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ফলে, তখন নিজের স্বার্থরক্ষা হয়ে পড়ে তাদের প্রধান কর্তব্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে লুটপাট ও দুর্নীতি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর সাধারণ জনগণ হয়ে পড়ে অবহেলিত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক তা হোক সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রের বয়োবৃদ্ধ নাগরিক অথবা অবলা প্রানী- কারোরই মুক্তি নেই সেক্যুলার ব্যবস্থার এই স্বঘোষিত ঈশ্বরদের দানবীয় আচরণ থেকে।

অন্যদিকে, ইসলামে রাজনীতির অর্থ হচ্ছে জনগণের বিষয়াদীর দেখভাল করা। ইসলামী তথা খিলাফত রাষ্ট্রে বর্তমান রাজনীতির যে মূল দর্শন রয়েছে সেটিই পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেখানে শাসকশ্রেণী নিজেদেরকে জনগণের সেবক ছাড়া অন্য কিছুই ভাবে না। “তোমাদের প্রত্যেকেই রাখাল এবং নিজের মেষপালের জন্য দায়িত্বশীল। জনগণের নেতা একজন অভিভাবক এবং সে তার অধীনস্তদের জন্য দায়িত্বশীল” [বুখারি/মুসলিম]। অতীতে যত খলিফারা এসেছেন তারা তাদের দায়িত্বের অবহেলার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা’র কাছে জবাবদিহিতার ব্যাপারে ভীত থাকতেন। এজন্যে নিজেদের কাজের তদারকির পাশাপাশি খলিফারা বিভিন্ন ওয়ালীদের কাজও সূক্ষভাবে পর্যালোচনা করতেন। যেমন, খলীফা উমারের সময় মিশরের গভর্নর ছিলেন আমর ইবনুল আস। তার এক ছেলে একদিন জনৈক মিশরীয় খৃস্টানের ছেলেকে প্রহার করলো। কিন্তু দরিদ্র মিশরীয় গভর্নরের কাছে তার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেল না। তাই নীরবে হজম করলো। কয়েকদিন পর তার জনৈক প্রতিবেশি মদীনা হতে ফিরে এসে জানালো যে, খলিফা ওমর অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক। তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করেন এবং কেউ কারো ওপর যুলুম করেছে জানলে কঠোর শাস্তি দেন। এ কথা শুনে ঐ মিশরীয় খৃস্টান মদীনায় খলিফার কাছে পৌছলো এবং গভর্নরের ছেলের বিপক্ষে মোকদ্দমা দায়ের করলো। হযরত উমর (রা.) তৎক্ষণাত হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) এবং তার ছেলেকে মদীনায় ডেকে আনলেন। অতঃপর বিচার বসলো। সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা হযরত আমর ইবনুল আসের (রা.)-এর ছেলে দোষী প্রমাণিত হলো। খলিফা ওমর (রা.) অভিযোগকারীর ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, সে তোমাকে যেভাবে যে কয়বার প্রহার করেছে তুমিও সেই কয়বার তদ্রুপ প্রহার কর। ছেলেটি যথাযথভাবে প্রতিশোধ নিল। তারপর খলিফা বললেন, “প্রজারা শাসকের দাস নয়। শাসকরা প্রজাদের সেবক। প্রজারা ঠিক তেমনি স্বাধীন যেমন তাদের মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হবার সময় স্বাধীন”। 

    -    মো. হাফিজুর রহমান



“সোনার ছেলে সাকিব আল হাসান ও আয়নাবাজি”

খবরঃ

আরাভ খান নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে মিডিয়া জগতে তোলপাড়। ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাইয়ে থাকা এই ব্যক্তির আরাভ জুয়েলার্স নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান৷ যদিও আরাভ খানের আসল পরিচয় তিনি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ছেলে রবিউল ইসলাম৷ চার বছর আগে ঢাকায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি৷ (www.dw.com/bn/সোনার-ছেলে-সাকিব-আল-হাসান-ও-আয়নাবাজি/a-65005805)

মন্তব্যঃ

রবিউলের আরাভ খান হয়ে যাওয়া, বাংলাদেশির ভারতীয় বনে যাওয়া, প্রতারক খুনের আসামির হঠাৎ বড় সোনার ব্যবসায়ী বনে যাওয়া যেমন আয়নাবাজি; ঠিক তেমনি সোনার ছেলে সাকিবসহ আরও অনেক তারকার সেই পঞ্জি ব্যক্তির পঞ্জি ব্যবসার প্রচার এন্ডোর্সমেন্ট করাও সত্যিই আয়নাবাজি। আবার চার্জশিটভুক্ত আসামীকে সীমান্ত পার হতে দেয়া, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদগুলো তার কাছে পৌঁছে তাকে রাতারাতি ধনকুবের বানিয়ে দেয়া এবং এই সবকিছুতেই এতদিন নিশ্চুপ থাকা মিডিয়া, পুলিশ সবার সরব হয়ে উঠা সবই সত্যিই যেন এক আয়নাবাজি। এমনকি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, সরকারি কর্মকর্তা এবং লুটেরা ব্যবসায়ীদের চুরি-প্রতারণা-লুটের সম্পদ জমা হয়ে দুবাইয়ের মত শহরে গিয়ে বৈধ প্রাসাদ-বাণিজ্যে পরিণত হওয়াও স্পষ্টত আয়নাবাজিরই উদাহরণ। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বিস্তৃত লুকোচুরি কিংবা প্রাতরণামূলক কর্মকাণ্ডের আয়নাবাজি আসলে কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? একটু চিন্তা করলে আমরা দেখবো এটি শুধুমাত্র একজন চালাক প্রতারক আরাভ কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিমান লাভসচেতন সাকিবের বিষয় নয়। আল্লাহ্‌বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই এধরণের ব্যাপক চক্র তৈরীর একমাত্র কারণ। এই ব্যবস্থায় বস্তুগত লাভই শেষ কথা, এখানে এছাড়া আর কোন মূল্যবোধ বা values থাকা বস্তুত নিষিদ্ধ। এই ব্যবস্থার শাসক, প্রশাসন কিংবা ব্যবসায়ী-তারকা তারা যদি কখনও কোন মানবিক, সামাজিক, এমনকি ধর্মীয় কাজ করে তাও হতে হবে ‘বস্তুগতভাবে লাভজনক’; কারণ এই ভিত্তিতেই তাদের রাজনীতি ও শাসন সামলাতে হয় কিংবা ব্যবসায়িক পার্টনারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা যখন স্রষ্টা বা ধর্ম নামক মানদন্ডকে বস্তুগত বা পার্থিব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো তখন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হলো উইন-উইন সিচুয়েশন বা বস্তুগত লাভ বা লাভের জোট। এটি বাহ্যিকভাবে প্রকাশিত হয় অর্থনীতিতে। এই নীতির কথাই বলেছেন ডাচ অর্থনীতিবিদ Jelle Zijlstra তার Introduction to Economics বইতে, “Alcohol and opium are commodities just like food and clothing according to the economic concept.”। তাই সোনার ছেলে, সোনার ব্যবসায়ী কিংবা সোনার চোরাকারবারি সবই এখানে জায়েজ যদি সেটা উইন-উইন সিটুয়েশন অর্জন করতে পারে। এই ধারণা এতটাই ভয়ংকর যে অর্থনীতির গন্ডি পেরিয়ে এই win-win policy রাজনীতি, সংবাদমাধ্যম বা পুলিশ সবকিছুকেই ‘স্বার্থের চক্রে’ বেঁধে ফেলতে পারে। বাহ্যিকভাবে স্বাভাবিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কিন্তু অতিদ্রুত অধিক সম্পদের বা অধিক লাভ করা যায় এধরনের বিষয়ে একজোট হওয়া চক্রকেই আবার বলা হয় ‘মাফিয়া চক্র’। কিন্তু এধরণের চক্রের মধ্যেও সবসময় চলতে থাকে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও দ্বন্দ্ব, যার কারণে চলতে থাকে আয়নাবাজি। বস্তুত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদের বিশ্বাসটাই একটি আয়নাবাজি। এখানে লাভের জন্য স্রষ্টা আছে আবার লাভের জন্যই নাই! বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অসৎ এই চিন্তার win-win খেলায় আজ শুধু আমাদের দেশ নয় পুরো বিশ্ব ফেঁসে গেছে। মাঝে মাঝে আরাভ, সাকিব, স্বর্ণের ব্যবসা ইত্যাদির মত বিষয় থলের বিড়ালের মত বেরিয়ে আসলেই এটি উন্মোচিত হচ্ছে তা নয়। এই ব্যবস্থার বিশ্বে বাংলাদেশের মত দেশের চুরি-লুট-প্রতারণা কিংবা স্মাগলিং, মাফিয়াবৃত্তির সম্পদ দুবাই- বাহামস, কানাডা-আমেরিকার অফশোরে গেলে কিংবা সুইস ব্যাংকের লকারে গেলে বৈধ হয়ে যাওয়া এবং এসব অর্থের মাধ্যমে সেসব দেশের লাভবান হয়ে চুপ করে থাকা সবই ওপেন সিক্রেট।

ইসলাম স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক মনের সৎ অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখে যে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা চিরস্থায়ী, চিরঞ্জিব, সর্বজান্তা। তিনি যে বৈধ-অবৈধ নির্ধারণ করেন তা স্থির ও অপরিবর্তনীয়। ইসলামী ব্যবস্থায় শাসক, প্রশাসন, জনগণ সবাই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির মানদন্ডে আবদ্ধ। Win-win কিংবা বস্তগত লাভের পরিবর্তনে অবস্থান পরিবর্তনের কোন সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলামী খিলাফত চুরি, প্রতারণা, চোরাচালান ইত্যাদিকে সমূলে উৎপাটন করে। ইসলামে চুরির মাল কেনাবেচা ও তাকে এন্ডোর্স করাও স্পষ্টত অপরাধ। এসব স্পষ্টতার কারণেই ইসলামী ব্যবস্থায় অবৈধ কাজের উদ্দেশ্যে এরকম দেশী-বিদেশী শাসক-কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী মিলে স্বার্থের অবৈধ চক্র গড়ে উঠা অসম্ভব। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “সৎকাজ ও তাক্বওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহ্‌‘কে ভয় কর, আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর” (সুরা মা‘য়িদাহ্‌: ২)। 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন



“কর্নেল অলির জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা”

খবরঃ

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রমকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার এক ই-মেইল বার্তায় মোদি তাকে এ শুভেচ্ছা জানান। এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন রাজ্জাক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার প্যাডে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, প্রিয় ড. কর্নেল অলি আহমদ, শুভ জন্মদিন। এ বছরটিতেও আপনার জীবন সুখ ও সাফল্যে ভরে উঠুক- নরেন্দ্র মোদি।… (https://www.jugantor.com/politics/654200/কর্নেল-অলির-জন্মদিনে-ভারতের-প্রধানমন্ত্রীর-শুভেচ্ছা%C2%A0)

মন্তব্যঃ

তথাকথিত ‘ভারতপন্থী’ (আওয়ামী লীগ) ও ‘ভারত বিরোধী’ (বিএনপি) রাজনৈতিক মেরুকরণের দেশ বাংলাদেশে রাজনৈতিক ‘ডিগবাজি’ একটি সাধারণ ঘটনা। এখানে রাজনৈতিক দল কিংবা জোট যখন গঠিত হয়, তখন অংশগ্রহণকারীরা যদি প্রভাবশালী হয় তিনি কোন পন্থী তা যাচাইয়ের চেয়ে তার অংশগ্রহণকেই বেশী মূল্যায়ন করা হয়। যার কারণে আমরা দেখতে পাই, তথাকথিত ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নেতৃত্বে ভারতপন্থী লোকে ভরপুর; একইকথা তথাকথিত মার্কিনবিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ফলে কাঠামোগতভাবেই দল বা জোটের মধ্যে এসব ভিন্নপন্থীদের দ্বারা দল বা জোট ভাঙ্গণের হুমকিতে থাকে, কারণ এসব ব্যক্তিদের চূড়ান্ত আনুগত্য তার প্রভুরাষ্ট্রের প্রতি। যেমন এক্ষেত্রে কর্নেল অলি দেখিয়েছেন। সবচেয়ে নির্লজ্জজনক হচ্ছে, আগে এগুলো রাখঢাক রাখা হতো, এখন প্রেসরিলিজ দিয়ে জানানো হয়! তাছাড়া এসব দল বা জোটের আরেকটি কাঠামোগত দূর্বলতা হচ্ছে এগুলো একপাল সুবিধাবাদী লোক নিয়ে গঠিত, এখানে দেখা যায় ‘ভারতপন্থী’ রাজনীতিবিদ সুবিধা পেয়ে ‘ভারতবিরোধী’ রাজনীতি শুরু করেন। যেমন মওদুদ আহমদের মত লোকেরা ‘ভারতপন্থী’ রাজনীতি থেকে ‘ভারতবিরোধী’ রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। কারো কারো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেতো একাধিকবার ডিগবাজির ঘটনাও ঘটেছে। যেমন, ডঃ কামাল হোসেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রতিবার ‘ডিগবাজি’ দেওয়ার পরও দলগুলো এসকল পরিচয় সংকটে ভোগা সুবিধাবাদী লোকগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে। শুধু তাই নয়, তারা তাদেরকে দলের মধ্যে উচ্চপদে পদস্থিত করে। এর কারণ হলো, তাদের পেশাগত মর্যাদা কিংবা সামাজিক অবস্থান। যেহেতু দলগুলোর কোন সুনির্দিষ্ট আদর্শ নেই, সেহেতু ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতাসম্পন্ন লোকদের সাথে একই রাজনৈতিক প্লাটফর্মে রাজনীতিবিদরা দিনের পর দিন রাজনীতি করতে থাকে। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো হয়েছে অত্যাচারীদের সামান্য বস্তুগত স্বার্থের জন্য জনবিচ্ছিন্ন এক মিলন মেলা মাত্র। তাই সামান্য স্বার্থেই তাদের মধ্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এসকল ভাঙ্গন আবার অনেক সময় তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয়। যেমনটি দেখা গিয়েছিল শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সময়। আবার যেহেতু এসব দলের নিকট জনগণের কোনো আশা কিংবা কিছুই চাওয়ার থাকে না, সেহেতু জনগণ এসকল ‘ভাঙ্গন ও ডিগবাজি’র নাটকের দর্শকের ভূমিকা অবতীর্ণ হয় এবং যেকোন পক্ষের পতনেই নির্মল আনন্দ উপভোগ করে। যেমন, শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর দেশের মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছিল। আবার এক-এগারো পরবর্তী সরকার যখন উভয়পক্ষকেই জেলে ঢুকিয়েছিল, তখনও দেশের জনগণ খুশি হয়েছিল। 

কিন্তু জনগণের সবকিছু হারিয়ে, নির্যাতিত হয়ে এসকল নাটকের দর্শক হয়ে সামান্য আনন্দ নেওয়ার নির্মমতা আর কতদিন চলবে? রাজনীতিতো মানুষের জীবনে সকলক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে! সকল সুবিধাবাদীদের হাতে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণের বৈঠা তুলে দিয়ে চুপ করে বসে থাকা শুধু ভোগান্তি বাড়াবে। তাই এই সমস্যা নিরসনকল্পে একটি সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে, একটি সঠিক রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে, একটি সত্যিকারের জনবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরী, যেখানে সস্তা ‘ভারত বিরোধীতা’ কিংবা ‘ভারতপক্ষের’ রাজনৈতিক মেরুকরণের অস্তিত্ব থাকবে না। থাকবে না সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের দৌরাত্ম ও তাদের ‘ডিগবাজি’র নাটক। রাজনৈতিক দলটিতে রাজনীতিবিদদের অবস্থান হবে আদর্শের প্রতি আনুগত্যের ও নিষ্ঠার ভিত্তিতে। এবং সঠিক আদর্শটি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা-র নিকট হতে আগত ‘ইসলাম’ ব্যতীত আর কিছুই হতে পারে না। আর বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একমাত্র সঠিক রাজনৈতিক দল হলো ‘হিযবুত তাহ্‌রীর’। এ দলটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী যালিম শাসকদের শত জুলুম-নিপীড়ন সত্ত্বেও ইসলামী আদর্শ থেকে একচুল নড়েনি। এই দলে কখনো সামাজিক অবস্থানের কারণে সুবিধাবাদী লোকদেরকে এর কাঠামোতে স্থান দেওয়া হয়নি। একজন ব্যক্তির আল্লাহ্‌ভীরুতা, সর্বাঙ্গীণ ইসলামী জ্ঞান ও পরিপূর্ণ ইসলামী চরিত্র গঠন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই দলে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারে না, তার সামাজিক কিংবা আর্থিক অবস্থান যতই উচু হোক না কেন। যার কারণে সমগ্র বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মত এই দলটির ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী নেতৃত্বে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সত্য ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী ‘দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠা’র পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

    -    জহিরুল ইসলাম



“আন্তনদী - তিস্তার পর কি ধরলার পানিও হারাচ্ছে বাংলাদেশ”

খবরঃ

২০১৪ সালের আগে তিস্তার শুকিয়ে কাঠ হওয়ার রূপ কেউ দেখেনি। ওই বছর ভারত তিস্তার পানি সবটুকুই একতরফা প্রত্যাহার করেছিল। তারপর থেকে বাংলাদেশে যে সামান্য পানি আসে, তাতে না হয় সেচ প্রকল্পের কাজ, না বাঁচে তিস্তা। ভারত নতুন করে দু’টি খাল খনন করছে কৃষি সেচের জন্য। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আর ন্যূনতম পানি পাবে বলেও মনে হয় না। ভারত পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় সেচ প্রকল্প চালু করার পর থেকে বাংলাদেশে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি আসত, তা ন্যায্য পাওনার চেয়ে অনেক কম। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে কখনোই তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তেমন কোনো শক্ত পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি, বরং চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৪ সাল থেকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার শুরু করেছে। ভারত দীর্ঘমেয়াদি যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ পানিশূন্য হয়ে পড়বে। তারই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তিস্তায়। এতে তারা বেশ ভালোভাবেই সফল হয়েছে। প্রথমে ‘চুক্তি’ নামের একটি মুলা ঝুলিয়েছে। এরপর একতরফা পানি প্রত্যাহার করেছে। ভারত ইতিমধ্যে যে পানি প্রত্যাহার করছে, সে পানির উপযোগিতা সেখানে তারা তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার কোনো পানিই সম্ভবত বাংলাদেশ পাবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সামান্য পানি আসে, এর সবটুকু প্রত্যাহার করে নিলেও ভারতের নতুন এক লাখ কৃষকের জমিতে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাবে না। সেজন্য ভারতের জলঢাকা (বাংলাদেশে তা ধরলা) নদীর পানি প্রত্যাহারের পথ ধরবে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারতের পত্রিকায়। এরপর উজানের অন্যসব নদীর পানি ভারত প্রত্যাহার করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণের আশঙ্কাই যেন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আন্তসীমান্ত নদীর প্রশ্নে ভারত কোন পথে হাঁটছে, তা পরিষ্কার। (www.prothomalo.com/opinion/column/o0wicjopbj)

মন্তব্যঃ

অভিন্ন নদীতে ভারতের একের পর এক আগ্রাসী পরিকল্পনায় পানি নিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ। তিস্তার পানিবণ্টনের চুক্তি এক দশক ধরে ঝুলিয়ে রেখে গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে একতরফা পানি প্রত্যাহার করছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে নতুন খাল খননের মাধ্যমে ধরলা ও তিস্তার পানি সরানোর সিদ্ধান্ত। এতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে। শুধু তিস্তায় পানি না থাকার কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৩৩টি ছোট-বড় নদনদী এবং এর শাখা খালগুলো প্রাণ হারাচ্ছে। পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না, মিলছে না মাছ, বিপাকে পড়েছে চাষাবাদ, যার উপর নির্ভরশীল ছিল প্রায় ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা। অন্যদিকে তিস্তার পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনও অগ্রগতি না হলেও ফেনী নদী থেকে ভারতের সেচ ও গৃহস্থালি ব্যবহারের জন্য ১.৮২ কিউসেক পানি দিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ, প্রতিবছর পানি প্রত্যাহারে সৃষ্ট কৃত্রিম খরায় ও পানি আটকে রেখে হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ার কারণে সৃষ্ট বন্যায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যে পরিমান ক্ষতি হয়, (আর্থিক মূল্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকা) ভারতের সেই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে সরকার কোনো টু শব্দ করে না। ফারাক্কা কিংবা গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে মরণফাঁদ সৃষ্টি বাংলাদেশের প্রতি হিন্দুত্ববাদী ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বহিঃপ্রকাশ, যে আচরন সম্পর্কে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “তুমি মানবজাতির মধ্যে ইয়াহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলিমদের সাথে অধিক শত্রুতাপরায়ণ পাবে” [সূরা আল-মায়িদাহঃ ৮২]। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই ভারত সর্বদা আমাদেরকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করেছে। উম্মাহ্’র বিষয়াদি তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মেরুদন্ডহীন শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিবর্তে ভারতকে তোষামোদ করা ছাড়া তাদের থেকে আর কিছুই পরিলক্ষিত হয় না; উপরন্তু তারা প্রতারণাপূর্ণভাবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল পথ সুগম করে দেয়। কারণ এসব মেরুদন্ডহীন শাসকরা বিশ্বাস করে যে ক্ষমতায় থাকার জন্য মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের আশীর্বাদের প্রয়োজন এবং তাই ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকার জন্য এই শত্রুরাষ্ট্রের প্রতি আজ্ঞাবহ থাকাকেই তারা অধিকতর পছন্দনীয় মনে করে।

পানি সংকট মুশরিক রাষ্ট্র ভারত দ্বারা তৈরি একটি রাষ্ট্রীয় আগ্রাসন, যা রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রয়োগ ব্যতীত বন্ধ করা সম্ভব হবে না। একমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত রাষ্ট্র (খিলাফত) ব্যবস্থাই উম্মাহ্‌’র স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের আধিপত্যবাদী আগ্রাসন মোকাবেলায় যথাযথ নীতি গ্রহণ করবে। খিলাফত রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের বাইরে মূল নদীর কিছু অংশ যদি অন্যত্র প্রবাহিত হয়, তবে নদীর ব্যবহারকে সংগঠিত করার জন্য খিলাফত রাষ্ট্র আহ্‌কাম শারী‘আহ্‌’র নির্দেশ অনুসারে সেই রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি আহ্বান করবে। কোনো রাষ্ট্র যদি আগ্রাসন বা শত্রুতাবশতঃ মূল নদীর পানির প্রবাহকে খিলাফত রাষ্ট্রে পৌঁছাতে বাধা দেয় বা এমনভাবে এর পানি ব্যবহার করে যার ফলে মুসলিমদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তা দূর করবে। উম্মাহ্‌’র স্বার্থরক্ষার জন্য আগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার দ্বারা তা মুক্ত করবে এবং দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে প্রয়োজনে ঐ আগ্রাসী রাষ্ট্রকে খিলাফত রাষ্ট্রের একটি অংশে পরিণত করবে। যেহেতু, শারী‘আহ্‌ অনুযায়ী নদী সকল মানুষের জন্য সর্বজনীন সম্পত্তি, সেহেতু খিলাফত রাষ্ট্র কাউকে এর থেকে উপকৃত হতে বাধা দেবে না। শারী‘আহ্‌’র এই মূলনীতি অনুযায়ী খিলাফত রাষ্ট্র জিহাদ ঘোষনার মাধ্যমে ফারাক্কা, তিস্তাসহ সকল বাঁধ অপসারণে মুশরিক রাষ্ট্র ভারতকে বাধ্য করবে, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে ভারতকে পদানত করবে। 

    -    সুজন হোসেন



“ঢাকার যানজট মূলত সমস্যা নয়, এটি রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ: মেয়র আতিক” 

খবরঃ

ঢাকার যানজট মূলত সমস্যা নয়, এটি রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজধানী শহর ঢাকার যানজট মূলত সমস্যা নয়, এটি রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ঢাকায় মানুষ আসছে। যারা অধিকাংশই রিকশাচালক কিংবা হকার হিসেবে কাজ করছে। এদের নিয়ন্ত্রণ রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ, তাই দরকার সমন্বিত ব্যবস্থাপনা।’ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে ওয়াশিংটন ডিসির বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে দুদিনের ট্রান্সপোর্টেশন সামিটের প্রথম দিন শেষে এসব জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। মেয়র আতিক বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য মেগাসিটির গণপরিবহন ব্যবস্থার সংকট উত্তরণের উপায় ও জ্বালানি সাশ্রয়ী আগামীর পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে, বাস রুটে র‌্যাশনালাইজেশনের মাধ্যমে সিটি বাস সার্ভিসকে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে। পরবর্তী ধাপে ঢাকার রাস্তায় জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মেট্রোরেলের স্টেশনকেন্দ্রিক করিডোর ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএনসিসিকে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দিবে বিশ্বব্যাংক।' (https://www.dhakatimes24.com/2023/03/15/302509

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদি ব্যবস্থার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধরণ হচ্ছে দেশের প্রাপ্ত সকল সম্পদের উপর পুঁজিপতিদের অবাধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, কারণ তারা মনে করে পুঁজিপতিরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে অধিক দক্ষ। যেহেতু পুঁজিপতিরা মূলত রাজধানী শহরে বসবাস করে সেহেতু  পুঁজিবাদি রাষ্ট্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ প্রয়োজনীয় সকল সেবা অবকাঠামোগুলোও রাজধানীকেন্দ্রিকই হয়। তাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এমনকি অতিজরুরী চিকিৎসা সেবা পাওয়ার জন্য গোটা দেশের মানুষকে রাজধানী শহর ঢাকামুখী হতে হচ্ছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪ থেকে ৫ লাখ লোক লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে চেপে ঢাকায় আসেন বিভিন্ন সেবা নিতে (বিস্তারিত জানতে পড়ুন: আইসিইউতে রাজধানী, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও উৎপল রায়, দৈনিক মানব জমিন, আগস্ট ১৮, ২০১৮)। জলবায়ুগত পরিবর্তন ঢাকামুখী এই জনস্রোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের ৫৫ শতাংশই জীবন-জীবিকার জন্য ঢাকা শহরে আসে। যদিও পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এবং সামান্য কিছু ইন্টারভেনশেন-এর (যেমনঃ সুপেয় পানি, সেচ, জলবায়ু সহিঞ্চু শস্যের জাত ও কৃষি প্রযুক্তি ইত্যাদি) মাধ্যমে জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জীবন-জীবিকা যেমন রক্ষা করা যেত তেমনি বিকেন্দ্রিক সেবা অবকাঠামোর মাধ্যমে থাকলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের ঢাকামুখী হওয়ার প্রয়োজন হতো না এবং ঢাকা শহরেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো না। পুঁজিবাদি শাসকগোষ্ঠী দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে যেমন আন্তরিক নয় তেমনি ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানেও উদাসীন। বরং, ঢাকার সংকট কাজে লাগিয়ে মুনাফা করার চেষ্টা করছে। তাইতো তারা যানজটের মূল কারণ ঢাকামুখী জনস্রোত নিয়ন্ত্রণ না করে তথাকথিত বাস রুটে র‌্যাশনালাইজেশন, লোকাল বাসে ই-টিকিটিং, লোকাল বাসগুলোকে গুটিকয়েক কোম্পানীর মাধ্যমে পরিচালনা, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাস নামানোর মাধ্যমে ঢাকার গণপরিবহনখাতকে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে ছেড়ে দেয়ার পায়তার করছে। সাম্রাজ্যবাদি প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক থেকে সৌন্দর্যবর্ধন (বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক, দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৩ ২০২২), মেট্রোরেলের স্টেশনকেন্দ্রিক করিডোর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের জন্য ঋণ গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠীকেও ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির এসকল প্রকল্পগুলোর ফলে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধানতো হচ্ছেই না বরং প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যানজট অসহনীয় মাত্রায় চলে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, টংঙ্গী-উত্তরা বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত ১০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিমান বন্দর সড়কে তীব্র যানজট থাকলেও প্রকল্পটি যানজট কমাতে আদৌ কোন ভূমিকা রাখবে কিনা জনগণের নিকট তা এক বিরাট প্রশ্ন। 

অন্যদিকে ইসলাম সম্পদ সকল নাগরিকদের নিকট বিতরণকে প্রধান অর্থনৈতিক সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করে, তাই খিলাফত রাষ্ট্রে উন্নয়ন হয় বিকেন্দ্রিক। রাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সকল অঞ্চলের নাগরিকদের জীবন-জীবিকা এবং প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবার ব্যবস্থা করা খিলাফত রাষ্ট্রের দায়িত্ব। খলীফার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর (উলাই‘য়াহ্‌) প্রধানেরা জনগণের প্রয়োজনের নিরিখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করবেন যাতে জনগণের জীবিকা এবং প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পূরণ হয়।  মা’কিল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “এমন আমীর যার উপর মুসলিমদের শাসনভার অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ্‌ তাকে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না” (মুসলিম)। খলিফারা রাষ্ট্রের নাগরিকদের এই অধিকার পূরণে সচেষ্ট ছিলেন তাইতো খিলাফতের ইতিহাসে নাগরিকগণ উন্নত নাগরিক সেবার জন্য শুধুমাত্র রাজধানীমুখী ছিল না বরং তারা খিলাফতের রাজধানী ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলের শহরগুলোতে উন্নত নাগরিক সেবা নিয়ে বসবাস করতো। 

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    



“বিশ্বব্যাংকের ‘লক্ষ্য’ - আয়কর ও ভ্যাটে আড়াই লাখ কোটি টাকা আদায়ের চাপ”

খবরঃ

বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার শর্ত মেনে সরকারকে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরও বেশি পরিমাণে আদায় করতে হবে। তিন বছরে বাড়তি প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আয়কর ও ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কোভিডের প্রভাব কাটাতে এবং টেকসই উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় ৭৫ কোটি ডলার পেতে চুক্তিবদ্ধ হয় সরকার। ইতিমধ্যে দুই কিস্তিতে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। তবে শেষ কিস্তি এখনো মেলেনি। চলতি অর্থবছরের মধ্যে বাকি ২৫ কোটি ডলার পাওয়ার কথা থাকলেও তা আরও কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। (https://www.prothomalo.com/business/76h7aa22vg)

মন্তব্যঃ

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান দু’টি উৎস হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার এবং রপ্তানি আয় ৪৬৩ কোটি (৪.৬৩ বিলিয়ন) ডলার [দৈনিক ইত্তেফাক, ০৩ মার্চ, ২০২৩] এবং প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় মিলিয়ে কমবেশী ৬ বিলিয়ন ডলার আসছে, যা বিশ্বব্যাংকের ঋণের চেয়ে কিংবা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সম্মিলিত ঋণের চেয়েও বেশী। তাছাড়া এই ঋণের সমুদয় টাকাও একমুঠোয় পাওয়া যাবে না, বরং বিশ্বব্যাংকের নিকট থেকে তিন অর্থবছরে তিনটি কিস্তিতে ৭৫ কোটি ডলার কিংবা আইএমএফের নিকট থেকে ৪২ মাস ধরে (সাড়ে তিন বছরে) মোট সাত কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। তাহলে ঋণের এই ডলার কিভাবে আমাদের রিজার্ভের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে যেখানে আমাদের প্রতি মাসের অর্জিত ৬ বিলিয়ন ডলার তা পারে না? বাজেট সহায়তা কিংবা রিজার্ভ স্থিতিশীলতার জন্য নয় বরং প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমাদের শাসকরা সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপনের হাতিয়ার World Bank, IMF এর থেকে ঋণ নেয়ার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার রাস্তা তৈরি করে দিতে চাচ্ছে। আর এদেশের শাসকদের এটা করার পিছনের কারণ হলো তাদের সাথে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের সম্পর্ক হচ্ছে দাস ও মনিবের মত। দাস হিসেবে যেই দাস তাদের সাম্রাজ্যবাদী মনিবদের যত বেশী সন্তুষ্ট করতে পারে সেই ক্ষমতায় আসার টিকেট পায়। তাই যদিও এই শাসকরা জানে যে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্মই হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তৃত ও রক্ষার জন্য এবং এদের প্রণীত নীতিমালাই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের তৈরি করেছে, সুতরাং তাদের থেকে প্রাপ্ত ঋণ দ্বারা কখনোই বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়া সম্ভব না।

খিলাফত রাষ্ট্রের শাসক/খলিফা ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করা কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কোনো ব্যক্তি/রাষ্ট্র কর্তৃক চারিত্রিক সনদের মুখাপেক্ষী থাকবে না, বরং সে সমগ্র জাহানের রব আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক সর্বোচ্চ পর্যায়ের মু’মিন, সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং এর দ্বারা জান্নাতের সনদ হাসিলের চেষ্টায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। ইতিহাস এর স্বাক্ষী, পূর্ববর্তী খলিফা/শাসকগণ শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই মুসলিমদের সকল বিষয়াদি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন; এমনকি উম্মাহ্‌ ও ইসলামের স্বার্থকে রক্ষা করার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। উসমানীয় খিলাফতের শেষ দিকে এক ইয়াহুদী যখন খলিফা আবদুল হামিদের (দ্বিতীয়) কাছে এসে প্রস্তাব দেয় যে, তারা উসমানীয় খিলাফতের সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দেবে, খিলাফতের জন্য বিনা সুদে ৩ কোটি ৫০ লাখ লিরা ঋণ এবং উসমানীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি অত্যাধুনিক নৌঘাঁটি তৈরি করে দেবে এবং এর বিনিময়ে বায়তুল মাকদিসে নির্বিঘ্নে ইয়াহুদীদের প্রবেশ, অবস্থানের সুযোগ এবং জেরুজালেমের কাছে একটি ছোট্ট ইয়াহুদী বসতি স্থাপনের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে তখন খলিফা আবদুল হামিদ উত্তরে বলেছিলেন - “অভদ্র ইয়াহুদীদের জানিয়ে দাও, …… যে ভূমি আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার ইবন্‌ আল-খাত্তাব (রা.) জয় করেছেন, আমি সে ভূমি তোমাদের বসবাসের জন্য খুলে দেব, এটা ভাবার দুঃসাহস করলে কীভাবে! এটা গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌’র সম্পদ। ইয়াহুদীদের কাছে ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রি করে ইতিহাসে ঘৃণিত এবং উম্মাহ্‌ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না ……” একই সময়ে থিওডোর হার্জল খলিফার সাথে দেখা করতে এলে তিনি তাকে সাক্ষাৎ প্রদানে রাজি হননি। পরবর্তীতে হার্জল ২০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রদানের বিনিময়ে ইয়াহুদীদেরকে সারা বছর বায়তুল মাকদিসে প্রার্থনা করতে দেয়ার অনুমতি চায়, এমনকি খলিফা আবদুল হামিদকে ফিলিস্তিন বিক্রি করার জন্য ১৫০ মিলিয়ন স্টার্লিং সমপরিমান স্বর্ণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। খলিফা হার্জলের এই প্রস্তাবও নাকচ করে দেন। ফিরতি চিঠিতে তিনি লেখেন, “তারা যেন এই পরিকল্পনা নিয়ে আর অগ্রসর না হয়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিনিময়ে আমাকে যদি পুরো পৃথিবীর সমুদয় স্বর্ণও দান করা হয়, তবুও আমি তা গ্রহণ করব না। আমি এক মুষ্টি মাটিও তাদের দেব না, যেহেতু আমি এর মালিক নই। এটা মুসলিম উম্মাহ্‌’র সম্পদ। মুসলিমরা এই ভূমিকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছেন এবং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ পবিত্র ভূমির মর্যাদা রক্ষা করেছেন। ইয়াহুদীদের কোটি কোটি টাকা তাদের কাছেই রাখুক। কোন দিন যদি খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যায় সেদিন তারা বিনা পয়সায় ফিলিস্তিন দখল করতে পারবে। কিন্তু আমি যতদিন বেঁচে থাকবো আমি আমার বুক তলোয়ারে বিদ্ধ হওয়া পছন্দ করবো, তবুও ফিলিস্তিনের ভূমি ইয়াহুদীদের হাতে থাক সেটা মানবো না। এটা কখনোই হবে না; আমি জীবিত থাকতে আমার দেহের (খিলাফত রাষ্ট্র) অঙ্গকে (ভূমি) বিচ্ছিন্ন হতে দেবো না।” এটাই ছিল ১৩৪২ বছরের খিলাফতের খলিফাদের শাসনকালের চিত্র। 

    -    সুজন হোসেন



“সাহস নিয়ে প্রতিবাদ, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়”

খবরঃ

সৎ, সত্যের পথে থেকে নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় জানালেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহস, সংগ্রাম ও সাফল্যের পরিচয় দেওয়া নারীরা। তাদের অভিনন্দিত করলেন অগ্রজ ও কৃতীরা। নবীন–প্রবীণের উষ্ণ প্রীতির নিবিড় বন্ধনের ফাল্গুনের পড়ন্ত বেলায় আনন্দ প্রেরণায় প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে উঠেছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান। গতকাল সোমবার ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল প্রথম আলো। এতে এবার সহযোগিতায় ছিল নারীদের জন্য সিটি ব্যাংকের বিশেষায়িত সেবা ‘সিটি আলো’। বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল রেকর্ডে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গাওয়া ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে গানটি বাজিয়ে শোনানোর সঙ্গে মঞ্চের নেপথ্যে ডিজিটাল পর্দায় আলোকচ্ছটার দৃশ্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে’। গানের সঙ্গে মিলনায়তনে অংশগ্রহণকারীরও কণ্ঠ মেলান। প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান এগিয়ে চলে গান, সাহসী, প্রতিবাদী, সফল, সংগ্রামী নারীদের নিজেদের কথা, তাঁদের অভিনন্দিত করা ও অতিথিদের বক্তব্যের ভেতর দিয়ে।…. (prothomalo.com/bangladesh/qpv6y1ssit

মন্তব্যঃ

পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অধিকতর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবছর আর্ন্তজাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। নারী দিবসে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশের মত বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসা হলেও এর পিছনে রয়েছে পশ্চিমা সমাজের গর্ভে জন্ম নেয়া “নারীবাদি চিন্তা”।  ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা সমাজে নারীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম অধিকারগুলোও প্রদান করা হত না। নারীদের অধিকার বঞ্চিত করার বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি ছিল নারীর প্রতি গ্রিক দর্শন এবং খ্রিস্টান চার্চের অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল নারী প্রসঙ্গে বলেন, “নারীরা পুরুষের কাছে দাসীর মত, জ্ঞান-বুদ্ধিতে পিছিয়ে পরা, গ্রীকের কাছে অসভ্য। একজন নারী একজন অসমাপ্ত পুরুষ, যা উন্নয়নের মাপকাঠিতে একটি নিম্ন ধাপে থমকে আছে।” অন্যদিকে, বাইবেলিক আদম-ইভের গল্পে শয়তান কর্তৃক প্ররোচিত হয়ে নিষিদ্ধ আপেল খাওয়ার দায় পুরোপুরি ইভের উপর চাপনো হয়। তাই পশ্চিমা সমাজে স্বল্পবুদ্ধি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অজুহাতে, নারীদের তালাক প্রদান, শাসক নির্বাচন এমনকি নিজের সম্পদ ব্যবহার করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে, উনিশ শতকে পশ্চিমা নারীরা তাদের প্রতি সমাজের অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদ এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগঠিত হয়ে নারী আন্দোলন শুরু করে। পশ্চিমা সমাজে যে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নারীবাদে জন্ম হয়েছিল মুসলিম সমাজে ইসলামী শারীয়াহ্‌ দ্বারা নারীদের প্রাপ্য অধিকারসমূহ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত এবং সংবিধিবদ্ধ। ইসলামী শারীয়াহ্‌ মুসলিম নারীদের ব্যক্তিগত সম্পদ অর্জন, উচ্চাশিক্ষা গ্রহণ, চাকুরি, ব্যবসায় এমনকি খলিফাকে নির্বাচিত করার অধিকার দিয়েছে। শারীয়াহ মুসলিম শাসকদের জন্য নারীদের এই অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করেছে।  মুসলিম উম্মাহর ১৩০০ বছরের ইতিহাসে মুসলিম নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষকে প্রতিপক্ষ বনাতে হয় নাই। খিলাফতের ছায়াতলে মুসলিম নারী-পুরুষে একে অপরের পরিপূরক হিসাবে প্রশান্তির জীবন অতিবাহিত করে আসছিলেন। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর গৌরবোজ্জ্বল খিলাফত রাষ্ট্রের পতনের পর কাফির মুশরিকরা মুসলিমদের ইসলামের প্রতি আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু করে। ইসলামের সাথে বিন্দুমাত্র সম্পর্কহীন তথাকথিত “নারীবাদ” হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের সেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একটি অন্যতম হাতিয়ার।  নারীবাদের নামে পশ্চিমাদের অন্ধ গোলামেরা পশ্চিমাদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে হিজাব, পর্দাসহ বিভিন্ন শারীয়াহ হুকুমকে কঠাক্ষ করা শুরু করে। এমনকি তারা ভাড়াটে অমুসলিম নারীদের ব্যবহার করে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করার অনৈতিক চেষ্টাও চালায়। মিশরের দখলদার ব্রিটিশ কন্ট্রোলার জেনারেল (১৮৮৩-১৯০৭) এভলিন বারিং মুসলিম নারীদের প্রকাশ্যে হিজাবে প্রত্যাখানের ক্যাম্পেইন ঘোষনা করে কিন্তু মুসলিম নারীদের থেকে কোন প্রকার সাড়া না পেয়ে তাদের নারীদের দিয়ে হিজাব প্রত্যাখানের নাটক মঞ্চাস্থ করে। বর্তমানেও পশ্চিমাদের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা মোহচ্ছান্ন তথাকথিত নারীবাদি নেতা-নেত্রী, মিডিয়া, এনজিও এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ পশ্চিমাদের চিন্তা-চেতনা এবং জীবন ব্যবস্থা মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নারীবাদ এবং নারী দিবসকে ব্যবহার করছে। 

মুসলিম নারী-পুরুষদের অবশ্যই পশ্চিমা কুফর নারীবাদি চিন্তা এবং দিবসকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করতে হবে এবং ইসলামের হুকুম অনুযায়ী জীবন যাপন করতে সচেষ্ট হতে হবে।  আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌’র অনুগত হও এবং রাসূলের অনুগত হও এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিগণের; যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রসূলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ এবং আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক; এটাই উত্তম এবং সুন্দরতম মর্মকথা” [সূরা আন নিসা ৫৯]। উল্লেখ্য, মুসলিমদের ভূমিসমূহে নারী নির্যাতন বা নারীদের অধিকার খর্বের কারণ পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া সেকুলার জীবন ব্যবস্থার লিবারেল মূল্যবোধ। সুতরাং, নারীর যথাযথ সম্মান রক্ষার জন্য খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা ইসলামের সমাজ ব্যবস্থার শারীয়াহ নীতিমালাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি প্রণবন্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে। ইনশা’আল্লাহ।   

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    


“দেশপ্রেমের পরীক্ষা’ দিচ্ছে চারঘাটের ১৭ হাজার শিক্ষার্থী”

খবরঃ

পরীক্ষায় ১৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘তোমার এলাকার তিনজন জীবিত ও দুজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখ।’ পরীক্ষার আগেই এই প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে যায়। এ কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভেতরে দেশের জন্য ভালোবাসা তৈরি হবে। এমন প্রত্যাশা থেকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার প্রায় ১৭  হাজার শিক্ষার্থীকে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহরাব হোসেন। ইতিমধ্যে সে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/6ilellz1pq)

মন্তব্যঃ

‘স্বদেশপ্রেম’ নামক বিষয়টি হল জাহেলী যুগের মূর্তির ‘আধুনিক ভার্সন’ যাকে পবিত্রকরণ করে এর আড়ালে শাসকগণ জনগণের উপর তাদের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেয় ও নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। জাহেলী যুগে কাবায় মূর্তির আমদানিকারকরা সমাজে কর্তৃত্ব করতো। তারপর জনগণকে এগুলো কেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও দিবসে পালনে বাধ্য রেখে তারা সমাজে ওজনে কম দেওয়া, কন্যা সন্তানকে জীবন্ত দাফন করা, এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা, গোত্রবাদ ইত্যাদির মতো কু-প্রথা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। যেহেতু মূর্তিসমূহ বিধান প্রণয়নের অক্ষম, সেহেতু তাদেরকে সামনে রেখে জাহিলি শাসকগণ এই সুযোগ নিয়েছিল। আর আজকের সমাজেও আমাদেরকে ‘স্বদেশপ্রেম’ নামক মূর্তি কেন্দ্রিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে ও দিবসে (স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি) ব্যস্ত রেখে সমাজে পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুটিকয়েক মানুষের সব মানুষের সম্পদ দখল, স্বাধীনতা চর্চার নামে নারীর অসম্মান, জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার নামে মুসলিম উম্মতের মধ্যে বিভক্তি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যেহেতু ‘দেশপ্রেম’ থেকে কোন জীবন ব্যবস্থা উৎসারিত হয় না কিংবা বিধি বিধান আসে না, তাই তারা এই সুযোগ নিয়েছে। 

উপনিবেশিক ব্রিটেন ও ফ্রান্স যখন খিলাফত শাসনে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম ভূমিসমূহে আক্রমন চালায় এবং সেগুলো দখল করে খন্ড-বিখন্ড করে যুলুম ও নিপীড়ন চালায়, তখন নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জাতিসমূহে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন ও সংগ্রাম পরিলক্ষিত হয়। তখন এই আন্দোলনের নেতারা মানুষের প্রবৃত্তি থেকে উদ্ভূত ‘স্বদেশপ্রেম’-এর আবেগকে পুঁজি করে আন্দোলনগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করে যেহেতু তারা চিন্তা-চেতনায় উপনিবেশিক আদর্শ লালন করতেন। এবং তাদের অধিকাংশই উপনিবেশিক ব্রিটেনের বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তাদের চিন্তা ও চেতনায় বেড়ে উঠেছিলেন (যেমন, এই উপমহাদেশে গান্ধী এবং জিন্নাহ)। এরপর স্বদেশী আন্দোলনের নামে প্রচুর মানুষকে এই সকল আন্দোলন সংগ্রামে বলি দিয়ে এটাকে পবিত্রকরণ করা হয়েছে। তারপর এসব আন্দোলনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসমূহে ‘স্বদেশপ্রেম’কে অবাস্তব ভিত্তি বানিয়ে উপনিবেশবাদীদের ও তাদের চিন্তা চেতনায় বেড়ে ওঠা দালাল শাসকদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমাদেরকে স্বদেশপ্রেমের আবেগে ভাসিয়ে রেখে, আমাদের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে, আমাদের কৌশলগত জ্বালানি খাত ও বিদ্যুৎ খাত আজকে উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রসমূহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দখলকৃত, আমাদের শাসন ব্যবস্থায় তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি হয়েছে ব্রিটিশ আইন। শুধু তাই নয়, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সাংস্কৃতিকব্যবস্থা কিংবা মিডিয়ায় পর্যন্ত তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশেষে সর্বক্ষেত্রে পরাধীনতায় আমরা নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছি। 

কিন্তু বিপরীতক্রমে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি যদি এমন একটি আদর্শ হতো, যার থেকে সঠিক বিধি বিধান উৎসরিত হতো এবং প্রত্যেকেই এ সম্পর্কিত শিক্ষা অর্জন করতো কিংবা এর সম্পর্কে অবগত থাকতো, তাহলে আর উপনিবেশবাদীরা ও তাদের দালালেরা আমাদের উপর কর্তৃত্ব করার সুযোগ পেত না। আর সঠিক আদর্শটি হল ইসলাম, কারণ এটা সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে আগত। ইসলামের রয়েছে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনায় অর্থনীতি, রাজনীতি, শাসন, বিচার, বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সঠিক নির্দেশনা-যেগুলোর মাধ্যমে সমাজে প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হয়। আর যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এগুলোকে বাস্তবায়ন করে তার নাম হলো খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এ রাষ্ট্রব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) কর্তৃক মদীনায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ১৯২৪ সালে পতনের আগ পর্যন্ত ইসলামের কর্তৃত্বকে বহন করেছিল এবং ইসলামী উম্মত ইসলামকে ধারণ করে তাদের সমস্যাগুলোকে সমাধান করেছিল। তাই যে স্বদেশপ্রেমের চেতনা বিভক্তি, পরাধীনতা এবং নিপীড়নের পথকে প্রশস্ত করে সেটার পরীক্ষা দিয়ে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। বরং ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে পুনর্জাগরণের প্রচেষ্টা করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

    -    জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post