Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৮৩ তম সংখ্যা । ৯ এপ্রিল, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“বাধা না এলে বঙ্গবাজারে ভালো মার্কেট তৈরি করে দিতে পারতাম: প্রধানমন্ত্রী”
“আল আকসায় মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলের হামলা”
“আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা নেই এই শহরে”
“‘ডেথ স্কোয়াড’ – র্যাবের ভেতরের কথা”
“বিদেশী অপারেটরদের হাতেই যাচ্ছে বন্দর ব্যবস্থাপনার ভার”
“বাধা না এলে বঙ্গবাজারে ভালো মার্কেট তৈরি করে দিতে পারতাম: প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বঙ্গবাজার মার্কেটে একবার ১৯৯৫ সালে আগুন লাগে। এরপর আবার ২০১৮ সালে আগুন লাগে। তারপর আমরা এখানে সুপরিকল্পিত মার্কেট করার প্রকল্প গ্রহণ করি। তখন বেশ কিছু লোক বাধা দেয়। শুধু বাধা নয়, একটা রিটও করে। পরে হাইকোর্ট এটাকে স্থগিত করে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘সে সময় যদি এটা স্থগিত না করতো, আমরা এখানে একটা ভালো মার্কেট তৈরি করে দিতে পারতাম। তাহলে আজ এই ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতো না।’ (www.banglatribune.com/national/793004/)
মন্তব্যঃ
বঙ্গবাজার শুধু ঐতিহ্যবাহী মার্কেটই নয় এখানকার ব্যবসায়ীরা সাধারণত ক্ষুদ্র থেকে মাঝারী ব্যবসায়ী এবং এখানকার ক্রেতারাও মূলত নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের মানুষ। কাঁচাপাকা মার্কেটটিতে ব্যবসায়ীদের খরচ কম হওয়ার ফলে সারাদেশের সাধারণ মানুষ এখান থেকে তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথায় একটা ক্ষোভ স্পস্ট যে এই মার্কেট এতদিন কেন ছিল? অনেক আগেই এটা বহুতল আধুনিক মার্কেট হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। মেয়রের কথায়ও এটি স্পস্ট যে বাজারটি পোড়ার ফলে বাঁধা দূর হলো, “এতদিন করা যায়নি এখন যেহেতু জায়গাটি খালি হয়েছে। এখানে নতুন মার্কেট হবে”। তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকেও ভবনের নকশাটি আমরা দেখাবো”। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জায়গাটি ঘুরে দেখে এসেছেন। সর্বোপরী এটা পরিষ্কার আগুনটি কিভাবে লেগেছে, এর জন্য কে দায়ী, আশপাশের যেসব মার্কেট পুড়লে বহুতল মার্কেট ভালোভাবে হয় সেসব পোড়ার আগে নেভানো গেল না কেন, কারা কি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এসব ছাপিয়ে এই শাসক ও বৃহৎ পুঁজিবাদী ব্যবসায়ী জোট ইতিমধ্যে শহরের এই প্রাণকেন্দ্রে পোড়া ধ্বংসস্তুপের উপর স্কাইস্ক্যাপার্স অত্যাধুনিক সুপার মল দেখতে পাচ্ছে।
পুঁজিবাদী শাসক ও ক্ষুদ্রগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত এধরণের লোলুপ ভিশন নিয়েই তার চারপাশের সবকিছুকে দেখে। এধরণের ভিশনারিদের পুঁজিবাদ ব্যাপক প্রশংসায় ভাসায়। এসব দ্রুত টাকা বানানোর প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে যেকোন বাঁধাকে পুঁজিবাদ শুধু অপছন্দ করে তা নয় এটাকে তারা একটা বড় অপরাধ মনে করে যা এত ঘৃণ্য যে অনেক সময় এসব উন্নয়ন বিরোধীদের তারা দেশবিরোধীও বলে থাকে। এজন্য যেসব জায়গায় এরকম ব্যাপক বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে গরীব জীর্ণ-শীর্ণ সাধারণ মানুষের প্রয়োজন সারানো অনেক আয়োজনকে তারা ঘৃণার চোখে দেখে এবং তারা দ্রুত সেসব জঞ্জাল সরানোর জন্য তারা উদ্যত হয়। এতে কত রক্তক্ষরণ কিংবা অশ্রুবিয়োগ হল কিংবা কত মানুষ সর্বস্ব হারালো তা বড় কথা নয়। অর্থাৎ এরকম নিষ্ঠুর আচরণ শুধু নির্দয়-হাসিনা, ধূর্ত-তাপস এবং অর্থবাবা-সালমানের যৌথ উদ্যোগের ফল নয় বরং এটির মূল কারণ পুঁজিবাদী চিন্তা ও ব্যবস্থা। সবকিছুকে এমনকি আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হওয়াকেও লাভের দৃষ্টিতে দেখার এই চিন্তা মূলত আসে যখন মানুষ তার চিন্তা, জীবন ও ব্যবস্থা থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্কে আলাদা করে ফেলে। দুর্বল, সীমাবদ্ধ, নির্ভরশীল মানুষ যখন এরকম একটি সর্বশক্তিমানের কাছে জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত হয়ে যায় তখন তার কাছে ইচ্ছা-আকাংখাই মূল বিষয়। আর শাসকদের ও পুঁজিপতিদের উপর যেহেতু আর কারো টক্কর দেয়ার ক্ষমতা নাই তাই এই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসন বা দায়িত্ব হয়ে পড়ে এরকম সম্পদ বানানো ও ভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ। শেখ হাসিনা-তাপস-সালমান ত্রয়ী এবং তাদের মানুষের রক্ত-ঘামের উপর উন্নয়নের প্রাসাদ বানানোর ভিশন উভয়েই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদেরই ফল। একই কারণে অতীতেও আমরা দেখতে পেয়েছি কিভাবে নিলক্ষেত, কারওয়ানবাজার, মিরপুর ইত্যাদি স্থানে আগুন ছোট ব্যবসায়ী এবং বস্তিবাসীদের সরিয়ে উঁচু ভবনের জন্য পথ উন্মোচন করে দিয়েছে। ফলত এসব কারণেই পুঁজিবাদী শাসকরা পকেটমুখী বা লাভমুখী হতে গিয়ে দিনে দিনে জনগণ বিমূখ হতে থাকে। এক পর্যায়ে জনগণ কখনই আর এসব শাসককে বিশ্বাস করতে পারে না। ফলে এই ধরণের সরকারের পক্ষে জনগণকে কোন উদ্যোগে এমনকি ঐ উদ্যোগ আপাত ভালো উদ্দেশ্যে হলেও তাতে একসাথ করতে পারে না। এভাবে একটি রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে পড়ে। বঙ্গবাজারের আগুন বর্তমান সরকারের এমন বাস্তবতাকে আরেকবার উন্মোচন করে দিয়েছে।
অপরদিকে ইসলাম আল্লাহ্ ভীতির উপর দাঁড়িয়ে। ইসলামে শাসক, ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ মানুষ সকলে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কাজের জন্য আল্লাহ্র কাছে মুখাপেক্ষী। ফলে ইসলাম পুঁজিবাদের মত ‘মূল্যবোধহীন নিষ্ঠুর সম্পদ-ভোগে লোলুপ মানুষ’ নয় বরং তৈরি করে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক। ভোগবাদী ব্যক্তি খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিজেকে মানানসই হিসেবে দেখতে পায় না। ইসলামী রাজনীতিতে (সিয়াসাহ) এরুপ ব্যক্তি আকৃষ্ট হয় না, তাই গোঁড়া থেকেই ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা রাজনীতির বিষয়ে গণমুখী মানসিকতা তৈরি করে। ইসলামে রাজনীতি হল আমানত; ক্যারিয়ার গড়ার সোপান না যেরূপটা আমরা পুজিবাদি ব্যবস্থায় দেখি। ইসলামে শুধু নিষ্ঠাবান বা সত্যবাদী হওয়াটাই একজন রাষ্ট্রনায়কের জন্য যথেষ্ট না, বরং তাকে হতে হবে জনগণের সেবার বিষয়ে ইস্পাত কঠিন মানসিকতার অধিকারী। তাই আমরা দেখি তার প্রিয় সাহাবা আবু যর গিফারির (রা.) ব্যাপারে যে আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) বলেছিলেন, “আবু যরের চেয়ে অধিক বিশ্বস্ত অথবা সত্যবাদী কোন মানুষকে এই পৃথিবী ধারন করেনি”, সেই একই আবু যর যখন আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় পদ চেয়েছিলেন যাতে তিনি মানুষের বেশী সেবা করতে পারেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ বলেছিলেন, “আবু যর, তুমি দুর্বল এবং কর্তৃত্ব হল একটি আমানত। আর বিচার দিবসে তা (কর্তৃত্ব) অসম্মান ও অনুশোচনার কারণ হবে তারা ব্যতীত যারা দুনিয়ায় তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে” (মুসলিম)। তাই ইসলামের রাজনীতি এমন মানুষ তৈরি করে যারা সকল কিছুতে চিন্তা করে কিভাবে জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায় কিভাবে জনগণের জীবনকে আরও সহজ ও সুন্দর করা যায়। ফলে ইসলামের উন্নয়ন হয় জনগণমুখি। এবং ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে থাকে কার্যকর ও অত্যন্ত শক্তিশালী। শুধু খিলাফতে রাশিদাহ্ কিংবা দ্বিতীয় ওমরের আমলেই নয়, বরং খিলাফতের ১৪০০ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন দুর্বলতা বা অসম্পূর্ণতা থাকা সত্বেও আমরা দেখেছি খিলাফতের রাষ্ট্রনায়কেরা জনকল্যানের বিষয়ে গাফিল ছিলেন না।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“আল আকসায় মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলের হামলা”
খবরঃ
ইসলামের তৃতীয় পবিত্র মসজিদ আল আকসায় নামাজরত মুসল্লিদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। বুধবার ভোরে সেখানে থাকা শত শত মুসল্লির ওপর আকস্মিক হামলা চালায় তারা। এ সময় মসজিদের ভেতরে ঢুকে মুসল্লিদের গ্রেফতার, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রমজানের রাতে ইবাদত করতে আসা বহু ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইসরাইলি পুলিশের হামলায় সাত ফিলিস্তিনি রাবার-টিপড বুলেট এবং মারধরে আহত হয়েছেন। এতে আরও বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী চিকিৎসকদের মসজিদে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। মসজিদের বাইরে থাকা এক বয়স্ক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে রয়টার্সকে বলেন, আমি একটি চেয়ারে বসে (কুরআন) তিলাওয়াত করছিলাম। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তারা স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, এটি আমার বুকে আঘাত করেছে। এ ঘটনা ফিলিস্তিনসহ বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জর্ডান ও মিশর— উভয়ই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করার জন্য সাম্প্রতিক মার্কিন-সমর্থিত প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছে। দুই দেশই এ ঘটনার নিন্দা করে পৃথক বিবৃতি জারি করেছে। (www.jugantor.com/international/662366)
মন্তব্যঃ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ইসরা ও মিরাজের স্থান এই পবিত্র আল-আকসা যা আমাদের প্রথম কিবলা ও হাশরের ময়দান। এই ভূমিকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বরকরময় হিসেবে ঘোষনা করেছেন, “পবিত্ৰ মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত” (সূরা আল-ইসরা-০১)। এমনকি এ স্থানে বসবাস করা মুসলিমদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে, শত্রুর মনে পরাক্রমশালী থাকবে, দুর্ভিক্ষ ব্যতীত অন্যকোন বিরোধী পক্ষ তাদের কিছুই করতে পারবে না; আল্লাহ্’র আদেশ তথা কেয়ামত পর্যন্ত তারা এমনই থাকবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তারা কোথায়? রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, ‘তারা বায়তুল মাকদিস এবং তার আশেপাশে” (মুসনাদে আহমদ)। সুতরাং এই ভূমি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনের মুসলিমদের নয় বরং এর সাথে রয়েছে পৃথিবীর সকল মুসলিমদেরই আক্বীদাগত যোগসূত্র। তাই যখনই দখলদার ইসরাইলী বাহিনী এ অঞ্চলের মুসলিমদের উপর কোন রকম নিপীড়ন চালায় তখনই দেখি সারাবিশ্বের মুসলিমগণ ক্ষোভে ফেটে ওঠে এবং বিভিন্নভাবে তাদের উষ্মা প্রকাশ করে। মসজিদের মিম্বার থেকে শুরু করে চায়ের দোকান কিংবা ফেসবুক-টুইটার সর্বত্রই মুসলিম উম্মাহ’র আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে যায় ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর দখলদার বাহিনীর নির্মমতা।
তবে, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, পৃথিবীর সবচেয়ে কাপুরুষ জাতি এই ইহুদীরা যখন সুযোগ বুঝে সিংহের মত গর্জন করে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে তখন সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর বংশধরেরা গৃহপালিত পোষা প্রাণীর মত মিলিটারী ব্যারাকে বন্দী হয়ে আছে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের মুসলিম বিশ্বের মেরুদন্ডহীন শাসকদের নিষ্ক্রিয়তা ও নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা। যেমন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে Abraham Accords এর মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং এর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সুদান, মরক্কো, ওমান, বাহরাইন ও জর্ডানের সাথে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ হয়। এবং খুব শীঘ্রই ইন্দোনেশিয়া, নাইজার, মৌরিতানিয়া এবং সোমালিয়াকে স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ বানাতে পরিকল্পনা চলছে। সৌদি আরব, তুরস্ক আর মিশরের সাথে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই ভাল ছিল। একইভাবে বাংলাদেশের সাথেও এই স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা চলছে। যেমন, গত মার্চে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক পরিচালক জোসেফ রোজেন তার এক আর্টিকেলে লিখেন, “Bangladesh may become a key regional and global player as well as develop cooperation with Israel as an outcome of the landmark Abraham Accords.” এর পূর্বে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের কাছ থেকে Mass Surveillance Equipment ক্রয়ের মাধ্যমে এবং পাসপোর্ট থেকে ‘Except Israel’ শব্দটি তুলে দিয়ে বাংলাদেশ তার আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং এটি দিবালোকের মত পরিষ্কার যে এই মেরুদন্ডহীন পরজীবী শাসকদের দ্বারা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।
আমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে ফিলিস্তিনের সমগ্র ভূমিকে ইহুদী দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা যাতে এক ইঞ্চি ভূমিও দখলদারদের দখলে না থাকে। আর এজন্য আমাদেরকে অবশ্যই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে এবং রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) দেখানো পথে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ, একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাতেই খলিফার পক্ষে সম্ভব পশ্চিমাদের ভয়ভীতি এড়িয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলিমদেরকে মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করা। কারণ খলীফা আমেরিকা কিংবা বৃটেনের দাস হবেন না। তিনি হবেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দাস এবং আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র দেয়া বিধান অনুসারেই ফিলিস্তিন অভিমুখে মুসলিম সামরিক বাহিনীকে পরিচালিত করা হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দেখানো পথে খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই গত ৭০ বছরেরও অধিক সময় ধরে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া একমাত্র Global Islamic Political Party হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর নিকট থেকে নুসরাহ’র অনুসন্ধান করতে হবে যাতে তারা হিযবুত তাহরীরের নিকট খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা অর্পন করে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা নেই এই শহরে”
খবরঃ
ধরুন ঢাকা শহরের মধ্যে আগুন লেগেছে। ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছে কোথাও পানির উৎস খুঁজে পাচ্ছে না। ভাবছেন শহরজুড়ে পানি আছে, আসলে কিন্তু নেই।…পরিস্থিতি কল্পনা করার কথা বলা হলেও, এই ঢাকা শহরে অহরহ ঘটছে এমন ঘটনা। কোনও একটি আগুনের ঘটনা একটু তীব্র হলেই নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারার কারণ হিসেবে প্রথম শোনা যায় ‘পানি সংকট’-এর কথা। …এদিকে ঢাকার মতো জনবহুল শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল) লাগাতে না পারাকে দুষছেন নাগরিক সমাজ। …পুরো ঢাকা শহরই আগুনের ওপর রয়েছে। (www.banglatribune.com/others/792933/আগুন-নেভানোর-প্রাথমিক-ব্যবস্থা-নেই-এই-শহরে)
মন্তব্যঃ
একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে এই বিষয়টা সুস্পষ্ট যে, পুরো ঢাকা শহর যেন আসলেই আগুনের উপর অবস্থিত। যদিও দেশব্যাপী বার্ষিক আগুন লাগার পরিসংখ্যানের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝা যায় এই অবস্থা প্রায় দেশের সব শহরেরই। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শুধু বর্তমান হাসিনা সরকারের আমলেই গত ১৩ বছরে সারাদেশে আগুন লাগার সংখ্যা ২ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৯১ টি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে দেশে আগুন লাগার সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার। আর ২০২০-এর পর থেকে গড়ে ২২ হাজারের বেশি আগুন লাগছে। এসব অগ্নিকান্ডে প্রচুর মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও অনেক ব্যাপক। শুধু গত ৪ এপ্রিল’২৩ বঙ্গবাজারে আগুন লাগার ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকার উপরে। এই চিত্রই বলে দেয় দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা কতটা দুর্বল। এবং দিনকে দিন যা আরও দুর্বল হচ্ছে, অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলছে। অথচ, বর্তমান সরকার উন্নয়ন উন্নয়ন করে ফেনা তুলছে। বড় বড় মেগা প্রকল্পের আড়ালে মেগা লুটপাটকে ন্যায়সঙ্গত করতে কিছু লোকদেখানো উন্নয়নতো হয়েছে। কিন্তু, এসব ইট-পাথরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের নীচে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার উন্নয়ন যে বিসর্জিত হয়েছে তাও সুস্পষ্ট। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা সবসময় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা অবহেলিত? কেন প্রতিবছর এত সংখ্যক অগ্নিকাণ্ড লাগার পরেও এটিকে সমাধান করতে কিংবা আকৎসিক অগ্নিকাণ্ডকে মোকাবেলা করতে সরকার পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেনা?
এই অবহেলার কারণও সু-স্পষ্ট। ধর্মনিরপেক্ষ পূঁজিবাদী ব্যবস্থার “মুনাফা ভিত্তিক রাজনৈতিক মূলনীতি”। এই “মুনাফা” মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই বর্তমান পূঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয় কোন বিষয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিবে। যদি কাউকে আগুন থেকে বাঁচানোর মধ্যে এই গোষ্ঠী মুনাফা খুঁজে পায় তাহলে তাকে তারা আগুন থেকে রক্ষা করবে। আর যদি কাউকে আগুনে পোড়ানোর মাঝে এরা মুনাফা দেখে তখন তাকে তারা আগুনে পুড়িয়ে মারবে। তাইতো কোথাও আগুন লাগলে প্রায়ই শুনা যায়, “জায়গা দখল মুক্ত করতে আগুন লাগানোর অভিযোগ (দেখুন- আগুন লাগানো হয়েছে, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের)”। একই নীতির ফলেই শহর জুড়ে আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থার প্রকল্পও অবহেলিত।
এখন, এই অবহেলিত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন ইসলামের মত এমন এক ব্যবস্থার যেখানে রাজনীতির মানে হচ্ছে, “উম্মাহ্’র দেখাশুনা” করা। অর্থ্যাৎ, উম্মাহ্’র প্রয়োজনীয় বিষয়াদির খোঁজ খবর রাখা এবং সেগুলোর সমাধান করা। শহরজুড়ে আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা করা যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন। ইসলাম বিষয়টাকে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদি হিসেবে দেখবে এবং তড়িৎ গতিতে এটিকে সমাধান করার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। শুধু তাই নয়, ইসলামে এধরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা শাসকের জন্য ফরজ দায়িত্ব। পাশাপাশি আগুন নিভানোর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্যও আগুন নিভানোর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে কাজ করাও ফরজ। তাই বিষয়টাকে শাসক থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস কর্মী পর্যন্ত সবাই আল্লাহ্’র সামনে জবাবদিহিতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে প্রয়োজনীয় সবকিছু করে দ্রুত সমাধান করবে। বঙ্গবাজারের মত শুধু নোটিশ দিয়েই দায়মুক্তির চেষ্টা করবে না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং সকলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে”। তাছাড়া, আমরা প্রায়ই শুনি আগুন নিভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছে উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে, শহরজুড়ে পানি সংকট রয়েছে, ইত্যাদি। ইসলাম এই বিষয়গুলোকে দ্রুত সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে “গণমালিকাধীন সম্পদ” থেকে যে অর্থ জমা হবে সেগুলো থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় করে ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থাপনাকে দ্রুত উন্নত করে তুলবে। যা পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় অনুপস্থিত। এছাড়া, ইসলামে “কাজি আল-হিশবা” কোর্ট রয়েছে। যে কোর্টের বিচারক প্রতিনিয়ত উম্মাহ্’র স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির খোঁজ খবর নিবে এবং এই ধরণের বিষয়ে অবহেলার কোন ছাপ দেখামাত্রই তা বিচারের আওতায় এনে দ্রুত সমাধান করবে। আর যদি খোদ শাসকগোষ্ঠীর অবহেলা থাকে তাহলে ইসলামে রয়েছে “মাজালিম কোর্ট” যা শাসকগোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় এনে উম্মাহ্কে এই ধরনের জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করবে।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“‘ডেথ স্কোয়াড’ – র্যাবের ভেতরের কথা”
খবরঃ
বাংলাদেশের অভিজাত সন্ত্রাসবিরোধী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত, জানাচ্ছে ডয়চে ভেলে এবং নেত্র নিউজের এক নতুন অনুসন্ধান। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই এসব হত্যার অনুমতি দেন। প্রতিটি অপারেশন খুব সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়, কখনও কখনও কয়েক মাস সময় নিয়ে। টার্গেটের প্রতিটি কাজ বিশ্লেষণ করা হয় এবং বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের ১৫টি ইউনিটের একটি তার উপর নজরদারি চালায়। ভিকটিমদের সাধারণত গভীর রাতে তুলে নেয়া হয় এবং বিশেষ এই বাহিনীর কার্যালয়ে বা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। (www.dw.com/bn/ডেথ-স্কোয়াড-বাংলাদেশের-র্যাবের-ভেতরের-কথা)
মন্তব্যঃ
“War on Terrorism” এর নামে “War on Islam” এর জন্য ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনায়ই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন তাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দিয়েছে, এটা কোনো গোপন তথ্য নয়। সরকারের কথা থেকেই এটার আরো সুনিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় [বণিক বার্তা, ২২ জানুয়ারি, ২০২২; প্রথম আলো, ০৬ অক্টোবর, ২০২২]। তারা মুসলিম ভূমিসমূহে দালাল শাসক ও এই ধরণের বাহিনীর মাধ্যমে “War on Terrorism” এর নামে ইসলামের কর্মীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে ইসলামের পুনরুত্থানকে ঠেকাতে চায়। যেমনটি ‘নাইন-ইলেভেন’ ঘটনার পর কথিত “War on Terrorism” এর নামে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন বিভিন্ন দেশে সামরিক অভিযান শুরু করে গ্রেফতারকৃত লোকদের “গুয়ানতানামো বে” কারাগারে বিনাবিচারে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন ও হত্যা করতো, সেই একই কাজ তাদের প্রশিক্ষিত বাহিনীরা ইসলামের পুনরুত্থানকে ঠেকাতে আমাদের দেশেও করেছে। সেই একই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আইনের শাসন অনুপস্থিত’ বা ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ এর অভিযোগ তুলে র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যাতে করে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্যকে পিছনে রেখে জনগণকে প্রতারিত করে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, তারা জনগণের ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক। তাই যখন আল-জাজিরার ‘All the Prime Minister's Men’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পরে ২০২১ সালে র্যাব এবং এর সাত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করে মার্কিন রাজস্ব বিভাগ, তখন কিছু মানুষ আশান্বিত হয়ে মনে করেছিল যে, এই নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়বে এবং এর দ্বারা হয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন এই শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নিষেধাজ্ঞায় থাকার পরও বেনজির আহমেদ খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই সফর করেছে। শুধু তাই নয় এসকল নৃশংস কাজের পেছনের রাজনৈতিক শক্তি তথা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছে। কারণ তারা তাদের মনিব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন এর অনুগত হিসেবে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পরে এবারও কিছু মানুষ হয়তো মনে করবে যে, এবার হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন কিংবা আন্তর্জাতিক সংগঠনসমুহ হয়তো একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এই ধরণের জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটবে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন এইসব নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মাধ্যমে দালাল শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করে তাদের বলয়ে রেখে কাজ আদায় করে এবং এই দালাল শাসকেরা তাদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে তাদের মনিব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন এর স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করে। যদিও প্রয়োজনে এই দালাল শাসকেরা তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ ও মুনাফা অর্জনের স্বার্থে এই বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে, একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন তাদের স্বার্থে যখন প্রয়োজন হয় তখন এই ধরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের নামে এই শাসকগুলোকে চাপে/বেকায়দায় ফেলে তাদের স্বার্থ আদায় করে নেয়। যেমনটি আমরা দেখেছি ২০২১ সালে র্যাব এবং এর সাত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করে এই সরকারকে তার ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)-এ অংশগ্রহণে বাধ্য করেছে। কিন্তু দিনশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে বাস্তবে রূপদান করাই তাদের দালাল শাসকদের প্রধান কাজ, আর তা হলো “War on Terrorism” এর নামে এসকল বাহিনীর দ্বারা মুসলিম ভূমিগুলোতে যেভাবেই হোক ইসলামী আন্দোলনগুলোর কন্ঠরোধ করা।
এই জুলুম-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে এসব দালাল শাসকদের অপসারণ করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত ব্যবস্থা খিলাফত বাস্তবায়ন করা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন কর্তৃক আমাদের দালাল শাসকদের উপর নিয়ন্ত্রনকে বিছিন্ন করে জনগণের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে এবং আদল (ন্যায়) প্রতিষ্ঠা করবে। খিলাফত রাষ্ট্রে মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। খলিফা কেবল তাই করতে পারেন যা শারী’আহ্ কর্তৃক অনুমোদিত। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ধারা ১৩ অনুযায়ীঃ “প্রতিটি ব্যক্তি নিরপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অপরাধ প্রমাণিত হয়। আদালতের রায় ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া যাবে না। কারও উপর অত্যাচার (torture) করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কেউ কারও উপর অত্যাচার করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।” অর্থাৎ, অপরাধ প্রমাণের পূর্বে কোন ব্যক্তিকে জেলে রাখা কিংবা শাস্তি দেয়া যাবে না।
- সুজন হোসেন
“বিদেশী অপারেটরদের হাতেই যাচ্ছে বন্দর ব্যবস্থাপনার ভার”
খবরঃ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমদানিরফতানি কার্যক্রম আরো দক্ষভাবে সম্পন্ন করতে দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপারেটরদের যুক্ত করতেই আগ্রহ বেশি। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথম সারির ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও অনেকে আবার নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে এনেছেন।বিশ্বব্যাংকের বন্দরসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার জন্য দায়ী করা হয়েছে শতভাগ সরকারি ব্যবস্থাপনাকে। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো বন্দর এভাবে চলে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামই দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বন্দর, যেটি ‘টুল পোর্ট’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ বন্দর পরিচালনার সব গুরুদায়িত্ব সরকারের হাতে। বিশ্বের সব উন্নত বন্দর যদিও পরিচালিত হয় ‘ল্যান্ডলর্ড’ মডেলে, যার বেশির ভাগ কাজ চলে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। সরকার শুধু নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশেও এ মডেলে বন্দর চললে খরচ কমবে ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে বন্দর ব্যবস্থাপনায় ৭ শতাংশ গতি বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। (bonikbarta.net/home/news_description/336407/বিদেশী-অপারেটরদের-হাতেই-যাচ্ছে-বন্দর-ব্যবস্থাপনার-ভার)
মন্তব্যঃ
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মত কৌশলগত স্থাপনা বিদেশী অপারেটরের কাছে ছেড়ে দেয়ার ফলে উম্মাহ্’র নিরাপত্তা ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। তারপরেও নব্য সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যংকের পরামর্শে ধর্মনিরেপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে বিদেশীদের কাছে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু ঠিক এই সময় বিদেশীদের নিকট বন্দর ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়াটি কেন শুরু করা হচ্ছে? এর সাথে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কোন সম্পর্ক রয়েছে কি? আমরা যদি ভালভাবে লক্ষ করি তবে দেখতে পাবে, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ আনাগোনা যেমন বেড়েছে (বিস্তারিত জানতেঃ নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় বিদেশি কূটনীতিকরা, জুলাই ২২, ২০২৩, বাংলা ট্রিবিউন) তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি জোটেরও সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের কূটনেতিকদের কাছে ধর্না দেয়ার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী কিভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ একে অন্যের চেয়ে বেশী করতে পারবে এই আশ্বাস দেয়ার রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ রক্ষার নগ্ন প্রতিযোগিতারই বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার “ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে” বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার খায়েস খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করেছে। আবার চীনও তার “ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড” কৌশলে বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উপর তার আধিপত্য বিস্তার করার ইচ্ছাকে গোপন রাখে নাই। নির্বাচনের পূর্বে উম্মাহ’র কৌশলগত সম্পদ চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী ব্যবস্থাপয় ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সমর্থন আদায় করার হীন চেষ্টা ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে। বন্দর ব্যবস্থাপনা কি এতটাই কঠিন কাজ যার সক্ষমতা আমরা তথাকথিত স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অর্জন করতে পারি নাই? বাস্তবতা হচ্ছে বন্দরের মূল কাজ লোডিং-আনলোডিং এবং ওয়ারহাউস ব্যবস্থাপনা খুব সাধারণ কাজ। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এই লোডিং-আনলোডিং এবং ওয়ারহাউস ব্যবস্থাপনাকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করে তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক গুন্ডা বাহিনীকে তথাকথিত শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ করে দিয়েছে যারা তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ধর্মঘট, অবরোধ এবং বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বন্দর ব্যবস্থাপনাকে অদক্ষ করে রেখেছে। আর এখন শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য বা আরোহন করতে উম্মাহ্’র নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে নিলামের ডাকে তোলার পায়তারা করেছে।
নিঃসন্দেহে এটা নির্বুদ্ধিতা এবং উম্মাহ্’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাদের এই নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে সর্তক করে বলেছিলেন, জাবের (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, একদা নবী (সাঃ) কা’ব বিন উজরাহকে বললেন, “আল্লাহ তোমাকে নির্বোধ (আমীর) দের শাসনকাল থেকে আশ্রয় দিন।’’ কা’ব বললেন, “নির্বোধ (আমীর) দের শাসনকাল কি?” তিনি (সাঃ) বললেন, “আমার পরবর্তীকালে এক শ্রেণীর আমীর হবে; যারা আমার আদর্শে আদর্শবান হবে না এবং আমার তরীকাও অবলম্বন করবে না। সুতরাং যারা (তাদের দ্বারে দ্বারস্থ হয়ে) তাদের মিথ্যাবাদিতা সত্ত্বেও তাদেরকে সত্যবাদী মনে করবে এবং অত্যাচারে (ফতোয়া ইত্যাদি দ্বারা) তাদেরকে সহযোগিতা করবে তারা আমার দলভুক্ত নয় এবং আমিও তাদের দলভুক্ত নই। তারা আমার ’হওয’ (কাওসারের) পানি পান করার জন্য উপস্থিত হতে পারবে না”। আমাদের উচিত বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরেপেক্ষ এই সকল নির্বোধ শাসকগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আদর্শ অনুসরনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক কর্মীদের সথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই নির্বোধ শাসকদের দুঃশাসনের অবসান করা।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম