Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৮৪ তম সংখ্যা । ১৫ এপ্রিল, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী”
“প্রথম আলো আওয়ামী লীগের, গণতন্ত্রের, দেশের মানুষের ‘শত্রু’: প্রধানমন্ত্রী”
“অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে বেআইনি ধর্মঘটের সাজা জেল–জরিমানা”
“আমাদের ট্যাব চুরি করার ক্ষমতা আছে করেছি”
“যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
আমেরিকা চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেছেন, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “তারা আমাদেরকে এখন গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে। কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলছে। তাদের দেশের অবস্থাটা কী?” (www.banglatribune.com/national/793767/)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটা আবার স্পষ্ট হয়েছে যে, দেশে কে ক্ষমতায় থাকবে বা আসবে তা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও প্রতিষ্ঠানসমূহই মূলত নির্ধারণ করে। প্রধানমন্ত্রী সেটাই বলেছেন। এবং এটি যে নতুন কিছু নয় তাও আমরা জানি, ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর হাসিনার বক্তব্য ‘এই সরকার একটি সমঝোতার সরকার’ এতেও নির্বাচন তথা গণতন্ত্র যে একটা নাটক তা স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু হাসিনা নিজেই এই পুতুল নাচের রাজনীতির অংশ হয়ে ওপেন সিক্রেট পেন্ডোরা বাক্স নিজেই খুলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে এবং তার নানা পরিকল্পনা এবং সেইসব পরিকল্পনার নানা গুটিকে উন্মোচন করে দিয়ে মরিয়া হয়ে নিজেদের দেউলিয়াত্বেরই প্রমান দিচ্ছে। এদিকে হাসিনার বক্তব্যের মাত্র একদিন আগে তার ছেলে ও উপদেষ্টা জয়ও একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে ‘ভন্ডদের আখড়া’ বলে গালি দিয়েছে। কিন্তু আবার যেদিন প্রধানমন্ত্রী এইকথা বলছে সেদিনই তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করার উদ্দেশ্যে আমেরিকায় আছে। এই বৈঠকের ব্যাপারে হাসিনার পরারষ্ট্রমন্ত্রী বলেছে “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু, তাদের সাথে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হবে”। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে ভন্ড শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় ভন্ড আসলে হাসিনার সরকারও কারণ একদিকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আবার প্রকাশ্যে তাদেরকেই খুশি করতে ব্যস্ত। আর বর্তমান স্যেকুলার রাজনৈতিক ব্যবস্থার সরকার বিরোধী শক্তির বিএনপি বা এরকম যারা আছে তারাও হাসিনা এন্ড গং এর মতই রাখঢাক না রেখেই এই ভন্ড আমেরিকা তথা পশ্চিমাদের পিছনেই ছুটোছূটি করছে। এই তিন ভন্ডের মধ্যে শেষের দুই ভন্ডের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রথম ভন্ডের হাতের সেই গুটি হওয়া যাকে তারা ক্ষমতায় আসীন রাখবে বা করবে।
সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তি এবং বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী গোষ্ঠীর ভন্ডামীই যে শুধু আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে তা নয় বরং এদের সবার রাজনৈতিক দর্শন তথা ধর্মনিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্রের ভন্ডামীও আজ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশী স্পষ্ট। এই কলুষিত রাজনৈতিক দর্শনের মূলনীতি হচ্ছে ‘Machiavellianism’ তথা ‘End Justifies the Means’। পশ্চিমা দার্শনিকরা একে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেঃ “a trait that denotes cunningness, the ability to be manipulative, and a drive to use whatever means necessary to gain power”. অর্থাৎ এদের সবার নীতি অথবা ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে যে-ই রাজনীতি করবে তাদের নীতি অনুযায়ী ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বা ক্ষমতায় থাকার জন্য বা রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতারণা, মিথ্যা, দুর্নীতি, গোলামী, সার্বভৌমত্ত্ব বিকিয়ে দেয়াসহ যেকোন কিছু করা শুধু জায়েযই নয় বরং যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত থাকা বাধ্যতামূলক। নৈতিকতা এখানে Objective বিষয় নয়, বরং Subjective যা প্রয়োজনে ভণ্ডামির আশ্রয় নেয়াটাকে রাজনৈতিক দক্ষতা এবং সফলতা হিসেবে দেখে। এই নীতির ধারকবাহকদের ভান্ডামী প্রকাশিত হওয়ার লজ্জাও এক পর্যায়ে আর থাকেনা; তারা সবাই নির্লজ্জ ভাবেই নিজের স্বার্থ অর্জন করার জন্য একেরপর এক ভন্ডামীর চাল চালতে থাকে। তাই হাসিনার এই বক্তব্য কোন আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা এবং হাসিনার স্যেকুলার বিরোধীগোষ্ঠী সবাই একইরকম নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্য ভন্ডামীর মাধ্যমেই রাজনীতি করছে। এখন এরা সকলে একে অপরকে নেংটা করে হলেও নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। এবং যাদেরকে তারা ভন্ড বলছে সেই ভন্ডদের সাথে প্রয়োজনের তাগিদে তারা সমঝোতা করতেও পিছপা হয় না, কারণ কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) হল এই পশ্চিমা মদদপুষ্ট সেকুলার রাজনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি।
এতকিছুর পরও কি আমরা এই ভন্ড ও নির্লজ্জ চিন্তা ধর্মনিরপেক্ষতা এবং তার ধারকবাহকদের হাতে দেশটাকে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবো? জনগণের মধ্যে বিশেষত যাদের চিন্তাবুদ্ধি আছে তাদের উচিত বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অনৈতিক-ভন্ড এবং নির্লজ্জ-অষাড় এই চিন্তা ধর্মনিরপেক্ষতাকে এবং সেই চিন্তার ব্যবস্থা গণতন্ত্র এবং তার বাহকদেরকে ছুঁড়ে ফেলে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সম্পূর্ণ প্রশ্নাতীত চিন্তা ইসলাম এবং তার ব্যবস্থা খিলাফতকে গ্রহণকরা এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ইসলামী রাজনীতির লক্ষ্যটা যেমন আল্লাহ্র দেয়া শারিয়া থেকে আসতে হবে তেমনি লক্ষ্য অর্জনের পদ্ধতিও শারিয়া থেকেই আসতে হবে। এবং শারিয়া যেহেতু স্থির এই লক্ষ্য ও পদ্ধতিও স্থির, সময় ও স্থানভেদে এটি পরিবর্তিত হবে না। আর এই লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আভ্যন্তরীন ও বহিঃস্থ বিষয়াদির দেখাশোনা করা এবং পদ্ধতি হচ্ছে জনগণ ‘বায়া’ এর মাধ্যমে তার শাসক নিয়োগ করবে। ইসলাম বিদেশী শক্তির কাছে জনগণের রাজনীতি তথা বিষয়াদিকে তুলে দেয়াকে হারাম করেছে এবং এই দায়িত্বের সাথে অবহেলা করাকে অথবা বিশ্বাসঘাতকতা করাকেও কঠোরভাবে হারাম করেছে। ইসলাম শাসন বা রাজনীতিকে একটি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এখানে ভন্ডামীরতো প্রশ্নই আসেনা, দায়িত্বে অবহেলারও কোন সুযোগ নাই। এই দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারীরা দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানে লাঞ্চিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হাশরের ময়দানে প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তির পশ্চাতদেশে একটি পতাকা বাঁধা থাকবে, এটি তাদের বিশ্বাসঘাতকতার মাত্রা অনুসারে উত্তোলিত হবে। অধিকন্তু, জনগণের আমিরের বিশ্বাসঘাতকতার চেয়ে বড় কোন বিশ্বাসঘাতকতা নেই”। (মুসলিম)
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“ওয়াশিংটনে মোমেন–ব্লিঙ্কেন বৈঠক; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়”
খবরঃ
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তার দেশের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়, তা নিশ্চিতের বিষয়ে সবার মনোযোগ রয়েছে।” ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতে ব্লিঙ্কেন এ প্রত্যাশার কথা জানান। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আব্দুল মোমেন জানান, “যে বিষয়গুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। একটা মডেল নির্বাচন করতে হবে। আমি বলেছি, অবশ্যই। এটা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরাও একটি মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।” (www.prothomalo.com/bangladesh/ofg2r01h9q)
মন্তব্যঃ
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে নানাভাবে চাপে রেখেছে এটি বলাই বাহুল্য। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর আমেরিকা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা প্রদান ও তৎপরবর্তী সময়ে র্যাব কর্তৃক গুম-খুন কমে যাওয়ায় আমেরিকা বুঝতে পেরেছে যে, এধরনের চাপে আসলে কাজ হয়। অর্থাৎ সরকারের কাছ থেকে আমেরিকা তার ঘৃণ্য স্বার্থগুলো আদায়ে সরকারের অপকর্মগুলোর দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে চাপ প্রয়োগ নীতি। কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছ রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর সমন্বয়ক সানজিদার বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গমনও সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময় নির্বাচনসহ মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের মতামত জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে তথাকথিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের আসলে কি বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করছে?
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে চীনের উত্থান এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে নাড়া দিয়েছে। ফলে দক্ষিন এশিয়ার দেশসমূহ ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীন বধের পরিকল্পনা করছে। এতে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য দেশকে পাশে ভিড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। আর এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন বাংলাদেশের একনিষ্ঠ আনুগত্য। এর জন্যই বাংলাদেশের উপর এত চাপ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মত সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ আনাটাও গুরুত্বপূর্ণ আর এজন্য আই.এম.এফ আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লোন দিয়ে সেসকল দেশকে পরনির্ভরশীল করে রাখাও আরেকটা নব্য-উপনিবেশবাদী কৌশল মাত্র। আর এতেও যুক্তরাষ্ট্র সফল হচ্ছে। উপরন্তু বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশে বিদ্যমান ইসলামী আন্দোলনসমূহ দমাতে ও আসন্ন খিলাফতের উত্থান ঠেকাতেও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। অপরদিকে বিএনপির মত দলগুলো যারা যুক্তরাষ্ট্রের এম্বাসী নির্ভর রাজনীতি করে এবং যেকোন রাজনৈতিক গাইডলাইনের জন্য ওয়াশিংটনের দিকে তাকিয়ে থাকে তারা সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এসকল স্যাংশন বা বকাঝাকাতে খুবই আনন্দিত হয়। কারণ এরা মনে করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূ হয়তোবা তাদের প্রতিপক্ষের প্রতি নাখোশ হয়ে এবার তাদের দিকে মনোনিবেশ করবে এবং তাদেরকে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করাবে। এরা যুক্তরাষ্ট্রের মত সাম্রাজ্যবাদী দেশের পদলেহন করে ক্ষমতায় বসতে চায় নিজেদের আখের গোছানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনোতিক, অর্থনৈতিক ও আদর্শিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতি করে। হাসিনা যেমন আক্ষেপ করে বলেছিল যে ২০০১ সালে সে তেল গ্যাস দিতে রাজী হয়নি বলে ক্ষমতায় আসতে পারেনি বরং বিএনপি তেল-গ্যাস দেওয়ার চুক্তি করে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিল। ঠিক একইভাবে যারা এভাবে এখনও মুচলেকা দিতে পারবে তারাই ক্ষমতায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে আওয়ামী-বিএনপির নেতা কর্মীদের পকেট ভারী হলেও আর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকলেও এসকল সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কোন লাভ হবে না।
এর থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে নবুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যার থাকবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের হাত থেকে মুক্ত থেকে নিজেদের স্বাধীন পলিসি বাস্তবায়নের নীতি। ফলে স্বাভবিকভাবেই অন্য কোন সাম্রাজ্যবাদী দেশ খিলাফত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলানোর সাহস ও সুযোগ খুজে পাবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর মুসলিমদের উপর কাফেরদের কর্তৃত্ব করার কোন পথই আল্লাহ্ অবশিষ্ট রাখেননি” [সূরা আন-নিসা : ১৪১]। অন্যদিকে খিলাফত ব্যবস্থায় মুসলিমরা থাকবে ইসলামি আদর্শের ব্যাপারে এক ও অভিন্ন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এবং তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হও না” (সুরা আলি ইমরান, আয়াত: ১০৩)। উদাহরণস্বরূপ, হযরত আলী (রা) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে চলা ঝামেলার সময়ে এর ফায়দা লুটার জন্য রোমান সম্রাট হিরাকল মুয়াবিয়ার কাছে রোমান চিঠি লিখেন, “আমরা জানি তোমার ও আলীর মধ্যে কি ঘটেছে। এবং আমরা এটাও দেখছি যে তুমিই খিলাফত পাবার জন্য অধিক যোগ্য। সুতরাং তুমি যদি চাও তাহলে আমি এমন এক বাহিনী প্রেরণ করব যা আলীর মাথা তোমার কাছে নিয়ে আসবে।” তখন মুয়াবিয়ার উত্তর ছিল, “দুইজন ভাই একটা বিতর্কে জড়িয়েছে, এর মধ্যে তোমার কি যায় আসে? তুমি যদি চুপ না কর, আমি তোমার বিরুদ্ধে এমন এক বাহিনী প্রেরণ করব যার এক প্রান্ত থাকবে তোমার দিকে আর অন্য প্রান্ত থাকবে আমার দিকে। এবং এরা তোমার মাথা নিয়ে আসবে আমার কাছে এবং আমি তা আলীকে উপহার হিসেবে প্রদান করব।”
- মো. হাফিজুর রহমান
“প্রথম আলো আওয়ামী লীগের, গণতন্ত্রের, দেশের মানুষের ‘শত্রু’: প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দৈনিক প্রথম আলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু, প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু।” স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ও ফটো কার্ড নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা বক্তব্য ও কর্মসূচির মধ্যে প্রথমবারের মত বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। । গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ২৯ মার্চ ভোরে তার সাভারের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি।সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ যে বিধানের কারণে বন্ধ, বাংলাদেশের সংবিধানের সেই ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবির বিপক্ষে নিজের অবস্থান প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এই ৭০ অনুচ্ছেদটাই কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের একটা স্থায়ীত্বের সুযোগ এনে দিয়েছে। যার ফলে দেশটা উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে। (https://bangla.bdnews24.com/media_bn/3n41iqolfg)
মন্তব্যঃ
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সরকার তার ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্রমশই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক শোলের সফর থেকে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় টিকে থাকার ইতিবাচক সিগনাল পাওয়ার পর শেখ হাসিনা এখন সরকার বিরোধী যেকোন মনোভাব দমনে আরও মরিয়া। ইতিপূর্বে সরকার নিজেদেরকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দাবি করে সোসাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল প্রকার ইলেক্ট্রনিক-প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে শাসকদের দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারের ভিন্নমতাবলম্বীরা সরব হলে তাদেরকে গ্রেফতার, হয়রানিসহ সহ অত্যন্ত কঠোর হস্তে দমন করছে। লেখক, সাংবাদিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সরকারের ভিন্নমত পোষণকারী প্রতিবাদী পেশাজীবীদের কন্ঠরোধ করার মাধ্যমে জনগণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করার পর বর্তমানে সরকার তার ন্যুনতম সমালোচনাকারী যেকোন গণমাধ্যমকেও তার শত্রু হিসেবে গ্রহণ করছে। প্রকৃতপক্ষে, এটাই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যালিম শাসকদের প্রকৃত চেহারা যে ব্যবস্থার গর্ভেই এদের জন্ম হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং সর্বদা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকে যেখানে শাসকেরা তাদের খেয়াল-খুশি, আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ অনুযায়ী আইন তৈরি করে। আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতাই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীকে একেকটি দানবে পরিণত করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা যালিম তৈরির কারখানায় পরিণত হয়। মানবরচিত মতবাদগুলো যখনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে তখন তারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করে এবং যেকোন ভিন্নমত দমন করতে বর্বরতার আশ্রয় নেয় এবং জনগণের উপর নিত্য নতুন যুলুমের খড়্গ চাপিয়ে দেয় যদিও তারা নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক বলে দাবী করে। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করলাম আইন প্রণয়নে ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখার জন্য শেখ হাসিনা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবিকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে। সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদের ফলে সংসদ সদস্যগণ নিজ দলের বিরুদ্ধে এবং প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের জন্য অনাস্থা ভোট দিতে পারে না যার ফলে ক্ষমতাসীন দল তাদের ক্ষমতাকে সুসংহত করার একচ্ছত্র অধিকার অর্জন করে। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে শাসকদের এই সার্বভৌমত্বের চিত্র বিশ্বব্যাপীই বিদ্যমান। ইতিপূর্বে আইনের উর্ধ্বে থাকা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান সংবিধানে প্রদত্ত প্রেসিডেন্টের আবশ্যিক ক্ষমতার জোরে দম্ভের সুরে বলেছিল, “Then I have an Article 2, where I have the right to do whatever I want as president." আমরা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কর্তৃক তার বর্ধিত শাসনকাল শেষ হওয়ার পরেও নিজেকে আইনের উর্ধ্বে রাখার জন্য একটি নতুন আইন প্রবর্তন করার ঘটনাও দেখেছি।
এই যুলুম ও নির্যাতন থেকে সত্যিকারের মুক্তি খুজতে হলে দেশের জনগণ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক সমাজকে অবশ্যই হাসিনা ও তাকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদানকারী ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অপসারণ করে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। কারণ ইসলাম মানুষকে “সার্বভৌম” ও “স্বাধীন” ঘোষণা দিয়ে তাদের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করে না। খিলাফত রাষ্ট্রে খলীফা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হলেও তার আইন তৈরির ক্ষমতা নাই, তিনি কুর’আন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এই চারটি উৎস কর্তৃক ইতিমধ্যে নির্ধারিত আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত শরীয়াহ আইনে আমরা কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অন্যায়-অবিচার দেখতে পাই না। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের শাসক তার অধীনস্ত জনগণকে শত্রুভাবাপন্ন মনে করে না কিংবা ভীতি প্রদর্শন ও নির্যাতনের মাধ্যমে শাসন করে না। তারা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কিংবা মৃত্যু-পরবর্তী জবাবদিহিতাকে ভয় করে জনগণকে অত্যাচার করা থেকে বিরত থাকে। আর জনগণও আল্লাহ্র ভয়ে শাসকের আনুগত্য করে। অন্যদিকে ইসলাম শাসকদের জবাবদিহিতা করাকে আবশ্যক করেছে এবং অত্যাচারিত শাসকদের সামনে হক্ব কথা বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে অতীতে আমরা দেখেছি মুসলিমরা কিভাবে খলীফাদেরকে জবাবদিহিতা করতে অনুপ্রেরণা খুজে পেয়েছে এবং তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছে। একবার এক ব্যক্তি যখন উমর (রাঃ) কে প্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করতে বলে তখন উমর (রাঃ) এর উক্তি ছিল “তোমাদের মধ্যে কোন কল্যান নেই যদি তোমরা এটা না বল(অর্থ্যাৎ ভয়ে চুপ করে থাক), আর আমাদের(শাসকদের) মধ্যে কোন কল্যাণ নেই যদি না আমরা তা শুনি”। সুতরাং, কাল বিলম্ব না করে জনগণ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক সমাজকে অবশ্যই হাসিনা সরকারের এই সার্বভৌম ক্ষমতা ও যালিম তৈরির কারখানা ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে।
- সিফাত নেওয়াজ
“জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী”
খবরঃ
জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। ফলে, ৭ এপ্রিল ২০২৩ বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট যেমন অস্টিনের ‘রাজার আদেশই আইন’ তত্ত্বের সীমানা পেরিয়ে হয়ে ওঠে আইন তৈরির মহান কর্তৃপক্ষ, তেমনি আমাদের সংসদও আইন তৈরির মহান কর্তৃপক্ষ। গেল পঞ্চাশ বছরে সংসদে প্রায় বারো শতাধিক আইন প্রণীত হয়েছে যুগের প্রয়োজনে। বিদেশী ডিগ্রি বা খেতাবধারী কেউ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সমর্থক হলে বা রাষ্ট্রকে বিশ্বমহলে হাসির পাত্র বানালে বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে সে সাধু কথা বললেও তার রাজনীতি করার বা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনে তার নাগরিকত্ব থাকবে কি-না তা-ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে। আমাদের শাসনতন্ত্র/সংবিধান যেমন ৭(২) অনুচ্ছেদ মোতাবেক জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং এর রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য, তেমনি সংবিধানের সৃষ্টিকারী ‘জাতীয় সংসদের’ মর্যাদা রক্ষা করাও আমাদের মহাপবিত্র কর্তব্য।
(https://www.dailyjanakantha.com/opinion/news/683873)
মন্তব্যঃ
‘বাংলাদেশ সংবিধান’ কোনভাবেই দেশের জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি নয়। কারণ স্পষ্টতই গত ৫০ বছরে এই সংবিধান না পেরেছে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নূন্যতম কোন ঐক্য তৈরী করতে, আর না পেরেছে তাদের নূন্যতম মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে। এই সংবিধানের প্রশ্নে জনগণ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দ্বিধাবিভক্ত এবং এটা সবাই জানে যে শাসকদল পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের স্বার্থে এই সংবিধানের চেহারাও বারবার পরিবর্তন হয়েছে এবং হবে। দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক শূণ্যতা বিরাজ করছে এই সংবিধান তার কোন সমাধানই করতে পারছে না; এবং এই সংবিধান বিগত ৫০ বছরের কোন সংকটেরই সমাধান করতে পারেনি। বরং সকল সংকটের জন্য এই সংবিধানই দায়ী, কেননা এই সংবিধানকে ব্যবহার করেই জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল অন্যায়-অত্যাচারকে জায়েজ করা হয়েছে। তো এমন একটা ‘সংবিধান’ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হয় কী করে! এই সংবিধান হল দেশ পরিচালনায় অযোগ্য আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর রক্ষাকবচ। এই সংবিধানের সৃষ্টিকারী জাতীয় সংসদকে দুই দলই অত্যন্ত পবিত্র স্থান হিসেবে সমালোচনার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। কেননা এই সংসদই তাদেরকে জনগনের থেকে আলাদা একটি ‘এলিট’ শ্রেণী হিসেবে স্বাতন্ত্র বজায় রাখতে সহায়তা করে, যার মাধ্যমে জনগনের উপর জুলুম জারি রাখার মাধ্যমে তাদের রুটিরুজির ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এই ধারণা থেকেই হাসিনা সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সংসদভবন এলাকাকে ঘিরে ফেলে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে যেন তাদের এই ‘এলিটিজম’ বজায় থাকে।
আইন তৈরির ‘মহান’ কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংসদকে মেনে নেওয়ার অর্থ হল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার উলুহিয়াত (আল্লাহ ছাড়া কোন ‘ইলাহ’ নেই)-এর সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ; কারণ তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন: “সৃষ্টি করা ও বিধান/আইন দেওয়া শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্ধারীত। আল্লাহর হাতেই সকল বরকত, যিনি বিশ্বজগতের একমাত্র প্রতিপালক” (আল-আরাফ: ৫৪)। সংসদ সদস্যদেরকে যদি কেউ জেনে বুঝে ‘আইনপ্রণেতা’ হিসেবে মেনে নেয় তাহলে সে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার উলুহিয়াতে শরিক স্থাপন করল; তিনি (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন, “নিশ্চয়ই শিরক হল জুলমুন আযীম (সবচেয়ে বড় ও জঘণ্যতম জুলুম)” (লুকমান:১৩)। এবং তিনি সুবহানাহু ওয়া তাআলা আরো বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সথে ‘শিরক’কারীকে কখনোই ক্ষমা করবেন না; তাছাড়া অন্য যেকোন গুনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা করবেন ক্ষমা করে দিবেন (নিসা:৪৮)। সুতরাং এই জঘণ্যতম অপরাধ যে স্থানে সংঘটিত হয় সেই সংসদ কোন পবিত্র স্থান হতে পারে না বরং একে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম স্থান হিসেবে গণ্য করা উচিত। এই নিকৃষ্টতম স্থানে দাড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘নাচন-কুদন’ টাইপের ভাষা ব্যবহার করবে, তার বিরোধীরা তার ব্যাপারে বলার অযোগ্য ভাষায় গালি-গালাজ করবে এটাই কী স্বাভাবিক নয়! এখানে নর্তকীরা পসরা সাজাবে, গায়ীকারা গাইবে আর দেশের সমস্ত ভাড়রা একত্রিত হয়ে ভাড়ামোর প্রতিযোগীতা করবে এটাইতো স্বাভাবিক। বিতর্কীত ডিশ-ব্যবসায়ীর সংসদ নির্বাচনে দাড়ানোকে যারা সংসদের জন্য অবমাননাকর মনে করে তাদের জানা উচিত একটি মুসলিম দেশের বুকে আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য এই-রকম একটি ‘আইনসভা’র অস্তিত্ব থাকাটাই এর মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য অবমাননাকর এবং তা তাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য ভয়ংকরও বটে!
আরেকটা বিষয়ে কথা না বললেই নয়, সেটি হল সুবর্ণজয়ন্তী বা golden Jubilee, যা দেশের রাজনীতি ও অভ্যন্তরীন নানা পরিসরে হরহামেশাই পালিত হচ্ছে। এটি একটি নিরীহ উদযাপন হিসেবে মনে হলেও এর শিকড় গিয়ে মিলেছে আল্লাহর লা’নতপ্রাপ্ত ইহুদিবাদীদের উদ্ভাবিত ধর্মীয় আয়োজনের সাথে। সপ্তাহের সপ্তম দিনকে ইহুদিরা ‘ছ্যাবাট’ বা ‘ছাব্বাত’ নামে সম্বোধন করে। ইহুদিবাদীদের মতে, সাত বছরে এক ‘ছাব্বাত-বছর চক্র’ (Sabbat year cycle) হয় ও সাত ‘ছাব্বাত-বছর চক্র’ বা ৪৯ বছর পূর্ণ হলে ইহুদিরা ৫০তম বছরে তাদের ধর্মীয় Yom Kippur-এর দিনে yôbēl বা ভেড়ার শিং দিয়ে তৈরী ট্রামপেট বাজিয়ে যে ধর্মীয় উদযাপন করে তা তাদের কাছে yôbēl উৎসব বা Jubilee celebration নামে পরিচিত। হায়! খিলাফত ব্যবস্থার অবর্তমানে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু এই আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে সংসদ বা ‘আইনসভা’ নামক প্রকাশ্য গুনাহ মেনে নিতে বাধ্য করছে এবং বিভিন্ন জয়ন্তী বা Jubilee উদযাপনের নামে আল্লাহর লা’নতপ্রাপ্ত ইহুদিবাদীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমাদেরকে দিয়ে উদযাপন করিয়ে সুকৌশলে ও গোপনে আমাদের ঈমান-আক্বীদাকে কলুষীত করছে! কুরআন নাযিলের কারণে মহিমান্বিত এই ‘রমজান’ কী হবে এদেশের মুসলিমদের ঘুরে দাড়ানোর এবং আল্লাহর উলুহিয়াতের স্মারক কুরআন-সুন্নাহর আইন বাস্তবায়নের উপলক্ষ! জাহান্নাম থেকে নাজাতের নির্ধারীত এই সময়ে সকল মুসলিমদের আকাঙ্খা হোক আল্লাহর উলুহিয়াত (আল্লাহ ছাড়া কোন ‘ইলাহ’ নেই) বাস্তবায়নকারী খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজে সর্বশক্তি নিয়ে নিজেকে আত্মনিয়োগ করার। আমীন।
- রিসাত আহমেদ
“অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে বেআইনি ধর্মঘটের সাজা জেল–জরিমানা”
খবরঃ
সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনো অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে। কোনো ব্যক্তি বেআইনি ধর্মঘট শুরু করলে বা চলমান রাখলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এসব বিধান রেখে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল–২০২৩ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।... (https://www.prothomalo.com/bangladesh/94y3aexw0y)
মন্তব্যঃ
‘গণতন্ত্র’ নামক ব্যবস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, যেকোন শাসক যাই করুক না কেন, এর নামে চালিয়ে দেওয়া যায়। যেমন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন-ধর্মঘট বন্ধ করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সংসদকে ব্যবহার করে আইন তৈরি করে। এভাবেই সে নাকি সংসদীয় প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক ধারাকে অনেক ‘চড়াই-উৎরাই’ পার করে এগিয়ে নিয়ে যায়! আবার বিরোধী দল আন্দোলন সংগ্রামের অধিকার চায়। তারা বলে এটা নাকি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এখানে জনগণ ভোট দিতে পারলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, আবার রাতের বেলা পুলিশ দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরলে, সেটাও গণতন্ত্র। আবার বৈশ্বিকভাবে আমরা দেখি, সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে লক্ষ মানুষ হত্যা করলে, সেটাও নাকি গণতন্ত্র, যেমনটি মার্কিনিরা ইরাক আগ্রাসনের সময় দাবি করেছিল। তাই বর্তমান শাসক দল কিংবা বিরোধীদল প্রত্যেকেরই নিজেদের স্বার্থে গণতন্ত্রের নিজস্ব একটি সংজ্ঞা রয়েছে। এর কারণ হলো, গণতন্ত্রের নিজস্ব সঠিক কোন সংজ্ঞা নেই। এমনকি এই ব্যবস্থার প্রবক্তা ও দার্শনিকরাই এর সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞায় একমত হতে পারেনি। আর এর প্রয়োগকারী শাসক হাসিনা-খালেদা-ট্রাম্প কিংবা বাইডেন- এদের কারোরই এই শাসনব্যবস্থার সংজ্ঞা সম্পর্কে একমত হওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। এর মূল কারণ হলো, এর উৎপত্তি সীমাবদ্ধ মানব মস্তিষ্ক থেকে। সীমাবদ্ধ মানব মস্তিষ্কের দুর্বলতা হলো, এটি সব সময় নিজের প্রবৃত্তি ও প্রয়োজন পূরণে মানুষকে তাড়িত করে। ফলে এখান থেকে আগত যে কোন আইন-কানুন, দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ব্যবস্থা- সব সময় মানুষকে নিজের তাৎক্ষণিক স্বার্থ উদ্ধারে প্ররোচিত করে। যেমন, নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার তাৎক্ষণিক স্বার্থে তৈরিকৃত ধর্মঘট বন্ধের এই আইনটি ‘আওয়ামী লীগ’ বিরোধী দলে গেলে বাতিল করতে চাইবে, যেমনটি তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ১৯৯৬ সালে নিজেদের তাৎক্ষণিক স্বার্থে আন্দোলন করেছিল। আবার ক্ষমতায় এসে তারাই সেটা নিজেদের তাৎক্ষণিক স্বার্থে বাতিল করে দেয়। তাই এ শাসনব্যবস্থা দিনশেষে একটি জনবিচ্ছিন্ন শাসন ব্যবস্থা। কারণ, বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ‘নো ভ্যাট’ আন্দোলন, ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলন কিংবা ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ সহ ব্যাপক জনসম্পৃক্ত আন্দোলনগুলো এই গণতান্ত্রিক সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তাই ভবিষ্যতে এসব আন্দোলন দমনে চড়াই-উৎরাই পার হয়ে গণতান্ত্রিক সংসদে তাদের এই আইন পাশ। এবং দিনশেষে তাদের সকল কর্মকান্ডই গণতান্ত্রিক বলে বিবেচিত হয়। এভাবে মানব মস্তিষ্কপ্রসূত শাসন ব্যবস্থার ধারণা ‘গণতন্ত্র’ হলো শাসকদের তাৎক্ষণিক স্বার্থ সমূহ উদ্ধারের হাতিয়ার মাত্র।
পক্ষান্তরে ইসলামী শাসনব্যবস্থা ‘খিলাফত ব্যবস্থা’ কোন দুর্বল মানব মস্তিষ্ক হতে আগত নয়। এটা সর্বজ্ঞানী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা থেকে আগত বিধান। কোন শাসক চাইলে একে নিজের স্বার্থ অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত ও এর প্রয়োগ করতে পারে না। এই শাসনব্যবস্থায় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী মজলিস আল উম্মাহ ও শক্তিশালী মাযালিম আদালত এবং সর্বোপরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে জবাবদিহিতার ভয়, শাসকদেরকে সব সময় জনগণের অধিকার আদায়ের সঠিক পথে পরিচালিত করে। এখানে জনগনকে অধিকার আদায়ে ‘আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়ে না, আবার শাসকেরও জনগণকে দমনে আইন বানানোর প্রয়োজন পড়ে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “এবং এই সম্প্রদায়গুলোর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে” (সূরা মায়িদাঃ ৭৭)
- জহিরুল ইসলাম
“আমাদের ট্যাব চুরি করার ক্ষমতা আছে করেছি”
খবরঃ
নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় প্রতিবাদকারীর ওপর ক্ষুব্ধ হন সহকারী শিক্ষক মো. আকরামুল ইসলাম। এ সময় তার দেওয়া বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। পরে তিনি ট্যাব ফেরত দিলে প্রকৃত প্রাপককে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষক বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমাদের চুরি করার ক্ষমতা আছে, চুরি করেছি, আমাদের ছেলেমেয়েদের ট্যাব দিয়েছি, তাতে আপনার কি?’(jugantor.com/country-news/663826/আমাদের-ট্যাব-চুরি-করার-ক্ষমতা-আছে-করেছি-ভিডিও)
মন্তব্যঃ
নাটরের স্কুল শিক্ষকের “চুরির কারার ক্ষমতা আছে করেছি” বেফাঁস বক্তব্যটি নিয়ে ব্যাপক সমালচনা হলেও বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষকদের অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানো নতুন কিছু নয় বরং খুব সাধারণ একটি ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম আমাদের এই বিষয়টি আর একটু স্পষ্টভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। “জাল সনদে হাজারো শিক্ষক” দেশ রূপান্তর ২ অক্টোবর, ২০২২,“বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী বরখাস্ত” বাংলা নিউজ২৪.কম, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২, “অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ফেলের হুমকি ঢাবি শিক্ষকের”, দৈনিক কালবেলা, ২৯ জানুয়ারি,২০২৩, “ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল” প্রথম আলো ২১ জানুয়ারি, ২০২০, ”ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার অভিযোগপত্রে বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর” প্রথম আলো, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। এই সংবাদগুলো প্রমাণ করে সমাজে অনৈতিক কর্মকান্ড এতটা ব্যপকভাবে ছড়িয়ে গেছে সমাজ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজ যাদের সমাজের অন্যান্য শ্রেনী থেকে বেশী নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হিসাবে বিবেচনা করা হয় তারাও নিজেদের অনৈতিকতার গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে মুক্ত রাখতে পারছে না। স্রষ্টা বিবর্জিত পুঁজিবাদী-ধর্মনিরেপেক্ষ আদর্শ আখেরাতকে গৌণ মনে করে। তাই তাদের কাছে দুনিয়াতে যেকোন উপায়ে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তি অর্জনের উপাদান বা সম্পদ অর্জন করাই তাদের জীবনের লক্ষ্য। আমাদের শিক্ষক সমাজও এই পুঁজিবাদি বাস্তবতার উর্ধ্বে নয়। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত তাদের আত্নীয়-বন্ধুদের নিকট এবং সমাজ (peer) থেকে ‘সফল’ (অধিক অর্থ উপার্জন) হওয়ার চাপ অনুভব করে। তাই তারাও বিভিন্ন অনৈতিক কাজের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছে এই পুজিবাদি ব্যবস্থার ইদুর দৌড়ে। কিন্তু, এই সংকটটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য পশ্চিমা লিবারেল ভ্যালুস কোন সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয় না। বরং পশ্চিমা সমাজের মূল্যবোধ (values) এই সংকটটিকে আরও উসকে দিচ্ছে। পশ্চিমা লিবারেল মূল্যবোধ (values) হচ্ছে Subjective অর্থাৎ কোন কিছুর ভাল-মন্দ সুনির্দিষ্ট নয়, বরং কাজটির ফলাফলের উপর নির্ভর করছে কাজটির গুরুত্ব; ভাল নাকি মন্দ এখানে বিবেচ্য না। তাই আমরা দেখতে পাই এই আদর্শের রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন কাজ বা বস্তুকে খারাপ মনে করলেও সে তা গ্রহণ করে যদি সে সেখানে তার ব্যাক্তিগত কল্যাণ দেখতে পায়। পুঁজিবাদী সমাজের লিবারেল ভ্যালুসের এই অর্ন্তদ্বন্ধের কারণে পুঁজিবাদী সমাজে অন্যায় এবং অনৈতিকতা করোনা মহামারির থেকে অধিক হারে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
অন্যধিকে, ইসলামে মূল্যবোধ (values) হচ্ছে Objective অর্থাৎ তা শারীয়াহ দ্বারা চালিত। সীমাবদ্ধ মানুষের পক্ষে কল্যাণ এবং অকল্যাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই ইসলাম ভাল মন্দ নির্ধারনের জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র মুখাপেক্ষী হয়। আল্লাহ বলেন, “…বস্তুতঃ তোমরা এমন বিষয়কে অপছন্দ করছ যা তোমাদের পক্ষে বাস্তবিকই মঙ্গলজনক, পক্ষান্তরে তোমরা এমন বিষয়কে পছন্দ করছ যা তোমাদের জন্য বাস্তবিকই অনিষ্টকর এবং আল্লাহই (তোমাদের ভাল-মন্দ) অবগত আছেন এবং তোমরা অবগত নও” [সূরা আল বাকারাহ ২১৬]। যেহেতু, ইসলামী সমাজের মূলভিত্তি তাকওয়া এবং লক্ষ্য হচ্ছে শারীয়াহর অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন। খলিফা থেকে সাধারণ জনগণ সবাই একই লক্ষ্যে কাজ করে তাই ইসলামি সমাজে দুর্নীতি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড গোঁড়া থেকেই নিরুৎসাহিত হয়। অনেক দুর্বলতার পরেও ১৪০০ বছরের খিলাফত রাষ্ট্রে কখনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মত এত ব্যাপক হারে দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ড দেখা যায় না। এছাড়াও খিলাফত রাষ্ট্র যুগে যুগে তৈরি করেছিল ইমাম আবু হানিফা, আহম্মদ ইবনে হাম্বল এর মত উন্নত চরিত্রের অসংখ্য শিক্ষক ও জ্ঞ্যানি (ফুকাহা) এবং সালাউদ্দিন আইয়ুবি, সুলেমান কানুনির মত উন্নত চরিত্রের শাসক যারা ছিল সকল ধরণের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং শিশু-কিশোরদের উন্নত চরিত্র গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের খলিফা উন্নত আকলীয়া (মানসিকতা) এবং ন্যাফসীয়ার (চরিত্র) ইসলামী ব্যক্তিত্বদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিবেন যারা নেতৃত্বশীল মুসলিম উম্মাহ তৈরির জন্য আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইসলামী জ্ঞান দ্বারা গড়ে তুলবেন। ইনশা’আল্লাহ্।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“DW এর বিশেষ তথ্যচিত্রঃ “‘ডেথ স্কোয়াড’ - র্যাবের ভেতরের কথা” ভিডিও এর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর বক্তব্য”
খবরঃ
“আমরা এই ... ভিডিওতে থাকা অভিযোগ অত্যন্ত সাবধানতার সাথে খতিয়ে দেখব এবং আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকারও তাই করবে ... মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।” – বেদান্ত প্যাটেল, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর উপ-প্রধান মুখপাত্র, এপ্রিল ৬, ২০২৩ (https://web.facebook.com/bangladesh.usembassy/?_rdc=1&_rdr)
মন্তব্যঃ
“‘ডেথ স্কোয়াড’ - র্যাবের ভেতরের কথা” ভিডিও প্রকাশের পরে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর উপ-প্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল এর উপরোক্ত Facebook post রাজনৈতিক মহলে আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিরোধী দল থেকে শুরু করে অনেকেই এই কথায় খুব উৎফুল্ল হচ্ছে, কারণ এরা বিশ্বাস করে যে পশ্চিমারা চাইলেই ক্ষমতার পট পরিবর্তন করতে পারে। তারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, যেন তারা এদের জন্য কিছু করবে। তারা চিন্তার দিক থেকে এতোটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে এবং এমনভাবে পশ্চিমাদের চিন্তার দাসত্ব করছে যে, তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন বিলুপ্তির/সঙ্কটের মুখে। আমরা জানি যে, আমাদের দেশের এসব দালাল শাসকেরা শাসন ও রাজনীতির বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে না। বরং তারা আমাদের দেশে পশ্চিমাদের হুকুম বাস্তবায়নকারী দালাল মাত্র, আর তাই মার্কিন দূতাবাস যেকোন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। শাসন ও রাজনীতির বিষয়, যেগুলো পশ্চিমাদের দ্বারা নির্ধারিত হয়, তা কখনোই উম্মাহ্’র কল্যাণের জন্য নয়, বরং তা পশ্চিমাদের স্বার্থ নিশ্চিতের বিনিময়ে অর্জিত হয়; যা দালাল শাসক শেখ হাসিনার আক্ষেপ থেকে প্রতীয়মান হয়, ‘গ্যাস বেচতে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি’ [আরটিভি নিউজ, ১৬ অক্টোবর, ২০২১] তখন গ্যাস বিক্রির প্রতিশ্রুতি দ্বারা যেমন বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, এরপর এর চেয়ে অধিক স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। উভয়ই পশ্চিমা উপনিবেশিকদের রাজনৈতিক দালাল। তারা উম্মাহ্’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে এবং উম্মাহ্ কয়েক দশক ধরে এসব দালাল শাসকদের কর্মফল ভোগ করছে। পশ্চিমারা সকল রাজনৈতিক দলের (সরকার ও বিরোধী দল) উপর চাপ সৃষ্টি করে রাখে, যাতে করে রাজনৈতিক সমঝোতায় তারা মোড়ল হিসেবে অবতীর্ণ হতে পারে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষাই হয় দলগুলোর শেষ কথা। এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে এই অঞ্চলে তার প্রভাব বজায় রাখতে এই অঞ্চলের সংস্কারের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস। তাই, বর্তমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করার জন্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরও বেশি হস্তক্ষেপ করবে। আর, দালাল শাসকরা, তাদের মনিবদের এজেন্ডাগুলিকে কে কতো বেশী বাস্তবায়নে সম্মত হয়ে আস্থা অর্জন করে ক্ষমতা নিশ্চিত করবে, সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। অতএব, এইসব দালাল শাসকদের দ্বারা আর যাইহোক, উম্মাহ্’র জীবন-সম্পদ-সম্মানের নিরাপত্তা অর্জিত হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আজ পশ্চিমারা আমাদের প্রতিটি ছোট-বড় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে যখন খুশি প্রবেশ করে, চষে বেড়ায় এবং তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিকল্পনা আটতে থাকে ও তাদের এইসব দালাল শাসকেরা তা বাস্তবায়িত করে। সুতরাং, এইসব দালাল শাসকদের একে অপরের দ্বারা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনোই সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব নয়, কারণ এরা প্রত্যেকেই পশ্চিমাদের বলয়ে থেকে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে নিজেদের ক্ষমতায় থাকাকে পাকাপোক্ত করতে চায়।
সত্যিকারের পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হল পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামি আদর্শের ভিত্তিতে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই উম্মাহ্’কে, প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মানবতাকে এই দুর্দশা থেকে বের করে আনতে ও উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনতে পারে এবং সর্ব বিষয়ে পশ্চিমা শক্তি ও তাদের দালালদের হস্তক্ষেপ স্থায়ীভাবে/চিরতরে বন্ধ করতে পারবে। নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ ইসলামি জীবন ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করবে, উম্মাহ্’কে একজন শাসকের (খলিফা) পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করবে, পশ্চিমা দেশগুলি এবং তাদের স্থানীয় দালালদের কর্তৃত্ব খর্ব করে ইসলামের মহান আলোর দ্বারা বিশ্বকে নেতৃত্ব প্রদান করবে। সেই নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সত্যিকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব/পথপ্রদর্শক হচ্ছে হিযবুত তাহ্রীর, যে উম্মাহ্’কে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় না এবং উম্মাহ্’র স্বার্থ রক্ষার্থে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার আদেশ অনুযায়ী দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করছে। সুতরাং, এই উম্মাহ্র দায়িত্ব হছে হিযবুত তাহ্রীরকে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সেই আহ্বানে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে এমন কোনো বিষয়ের দিকে আহ্বান করা হয়, যা তোমাদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করে।” [সূরা আল-আনফালঃ ২৪]
- সুজন হোসেন