Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৮৫ তম সংখ্যা । ২৩ এপ্রিল, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা – বড় ষড়যন্ত্রের ছোট প্রকাশ”
“আগামী বাজেটে ব্যবসায়িরা খুশি হবেন: অর্থমন্ত্রী”
“একের পর এক অগ্নিকাণ্ড: যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী”
“টিকিট দেখিয়ে ঢুকতে হবে রেলস্টেশনে”
“রামগড় সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিএসএফের শুভেচ্ছা বিনিময়”
“বিবিএসের জরিপের তথ্য: দেশের এক–তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত”
“মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতা – বড় ষড়যন্ত্রের ছোট প্রকাশ”
খবরঃ
পহেলা বৈশাখের সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংযুক্তি খুব বেশি দিনের নয়। তবে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরোধিতার নামে আবারও একদল মানুষ বাঙালি সংস্কৃতির বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবটিকে বিঘ্নিত করতে মাঠে নেমেছে। কেন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে আইনি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। …মঙ্গল শোভাযাত্রার এই বিরোধিতা আসলে একটা বড় ষড়যন্ত্রের অংশ, প্রকাশটা আপাতত ছোট মনে হলেও। (https://bangla.bdnews24.com/opinion/jnndr7dy19)
মন্তব্যঃ
“মঙ্গল শোভাযাত্রা”কে বাঙালি সংস্কৃতির বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব বলে বিভিন্নভাবে জাহির করার চেষ্টা করা হলেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এটিকে সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক ডয়েচভেলের অনুসন্ধান অনুযায়ী নববর্ষকে ঐতিহ্যবাহী ও সার্বজনীন সংস্কৃতি হিসেবে দেশের ৮১ শতাংশ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। কোন সংস্কৃতিকে যখন দেশের প্রায় সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠী প্রত্যাখ্যান করছে তখন উক্ত সংস্কৃতি অটোমেটিক সমাজ থেকে বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার কর্তৃক এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জোর প্রয়াস থাকায় এর আনুষ্ঠানিকতা এখনো পরিলক্ষিত হয়। গত ১৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “যতদিন আওয়ামী লীগ থাকবে ততদিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে…এই অনুষ্ঠান কে পালন করলো, আর কে করলো না – তা নিয়ে আমাদের তাকানোর সময় নেই।” পহেলা বৈশাখ নিয়ে বর্তমান সরকারের এমন অবস্থানে যে বিষয়টা সুস্পষ্ট তা হচ্ছে, “সরকার চাচ্ছে নববর্ষ কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে দ্বন্দ্ব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে টিকে থাকুক”। সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব নামে অভিহিত করা এই দ্বন্দ্বের একপক্ষ থাকবে দেশের বৃহত্তম সাধারণ মুসলিম উম্মাহ্ আর অন্যপক্ষে সরকারের বিশেষ মদদপুষ্ট সেক্যুলার(ধর্মনিরপেক্ষ) গোষ্ঠী। সরকারের ভাষায় মৌলবাদী বনাম প্রগতিশীল।
মূলত, এমন সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব তৈরি করা এবং টিকিয়ে রাখা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেননা, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব যদি সমাজে নাই থাকে তাহলে, কথিত অসাম্প্রদায়িকতাকে ফেরি করা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কিভাবে টিকে থাকবে? রাজনীতি কি নিয়ে করবে? ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থানই হয়েছে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব বিরাজমান ইউরোপ থেকে। যেখানে ক্যাথলিক খ্রিস্টান আর প্রটেস্টান খ্রিস্টানদের মধ্যেকার সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বকে পূঁজি করে অসাম্প্রদায়িকতার নামে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান হয়। আপাতদৃষ্টিতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব দূর করতে আবির্ভূত হয়েছে মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে এই সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব না থাকলে অসাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি অচল। তাই, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী এমন সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব টিকিয়ে রেখে তাদের রাজনীতিকে সচল রাখে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে। উদাহরণ হিসেবে আমরা যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখবো বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল পৃষ্ঠপোষক ইউরোপে-আমেরিকার রাজনীতিতে এমন সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখা নিত্যদিনের ব্যাপার। ২০২০ সালের আমেরিকায় ট্রাম্প এবং বাইডেনের নির্বাচন রাজনীতির মূল অস্ত্র ছিলো ইমিগ্রেন্ট এবং নন-ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে তৈরি করা দ্বন্দ্ব। ইউরোপের রাজনীতিতেও যা স্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। অতীতেও, ব্রিটিশরা বিভিন্ন অঞ্চলকে তাদের “Divide and rule” নীতি অনুসারে বিভক্ত করে শাসন করত। ভারতীয় উপমহাদেশে ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজ চলাকালীন হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে তৈরি করা দ্বন্দ্ব ছিলো এই অঞ্চলকে শাসন ও শোষন করার অন্যতম অস্ত্র। নিকট অতীতে খিলাফত রাষ্ট্র ধবংসের পর ইরাক-ইরানের মত মুসলিমভূমিগুলোতে পশ্চিমাদের তৈরি করা শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বও ঠিক একইরকম অস্ত্র। আমাদের অঞ্চলে যেমন আওয়ামী-বিএনপি দ্বন্দ্ব। ঠিক একইরকমভাবে এই পশ্চিমাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী দেশের অভ্যন্তরে মৌলবাদ-প্রগতিশীল দ্বন্দ্বের মত নানা দ্বন্দ্বের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এই বিভক্তির রাজনীতি প্রমান করে এই মতবাদ প্রকৃতিগতভাবেই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবতাকে একই কাতারে একত্রিত করতে অক্ষম। বিভক্তি, জাতি-শ্রেণী বিদ্বেষ ও ভীতির মাধ্যমেই এই মতবাদ বেচে থাকে।
অথচ, আমরা যদি ইসলামের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো ইসলাম যেই অঞ্চলে গিয়েছে সেই অঞ্চলে এই ধরণের দ্বন্দ্বকে সম্পূর্ণরূপে নির্মুল করেছে। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর অভ্যন্তরীণ আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, মক্কা বিজয়ের পর মদিনা ও মক্কার মধ্যেকার দ্বন্দ্ব এমন সবকিছুকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ করেন। যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে খিলাফতের শাসন আমলেও পরিলক্ষিত হয়। খিলাফতের ইতিহাসে ক্ষমতা গ্রহণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকারের অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্ব সংঘর্ষের ঘটনা পরিলক্ষিত হলেও, বিভিন্ন যুগে খিলাফতের শাসনে দুর্বলতা দেখা দিলেও জাতিকে বিভক্ত করে রাজনীতি করা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতিকে বিভক্তির রাজনীতি কখনোই ছিল না। তাই এইধরণের দ্বন্দ্ব প্রকৃতপক্ষে সমাজ থেকে নির্মূল করতে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছাড়া অন্যকোন পথ নেই। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর তোমরা সবাই আল্লাহ্র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিভক্ত হয়োনা…” (সূরা আলি-ইমরানঃ ১০৩)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“আগামী বাজেটে ব্যবসায়িরা খুশি হবেন: অর্থমন্ত্রী”
খবরঃ
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়িরা খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যবসায়িদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আপনারা ঠকবেন না।’ আজ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এনবিআর এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। (bonikbarta.net/home/news_description/337522)
মন্তব্যঃ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে এনবিআর এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই এর যৌথ আয়োজনের এই অনুষ্ঠান এটাই প্রমাণ করে যে, সরকার ও ব্যবসায়ীরা দেশের আইন প্রণয়নে কিভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সরকার বাজেট কেমন হবে কিংবা রাষ্ট্রের আয়ের উৎস কি হবে অর্থাৎ ভ্যাট কিংবা ইনকাম ট্যাক্স কত হবে তা সাধারণ জনগণের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে না বরং সরকারের আলোচনা হয় ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর সাথে যারা দিনশেষে দেশের বাজেটের রূপরেখা কেমন হবে তা নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করেন। যেমন, এনবিআর চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো এবং এনবিআর সেই আলোকে নীতি প্রণয়ন করবে যাতে ব্যবসায়িরা উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে সক্ষম হয়। উপরন্তু আমরা যদি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের বাজেট প্রস্তাবনা দেখি তাহলে দেখা যাচ্ছে যে তারা একদিকে নিজেদের ব্যবসা কার্যক্রমে যাতে সুবিধা হয় সেধরণের প্রস্তাবনা প্রদান করছেন এবং অন্যদিকে তাদের উপর থেকে করের বোঝা হস্তান্তর হয়ে তা যাতে সাধারণের উপর আরোপিত হয় তার ব্যবস্থা করছেন। যেমন তাদের প্রস্তাবনা মতে, শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে খরচ কমাতে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা, সকল প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় তালিকাভুক্ত ভোগ্য পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতা বহির্ভূত রাখা (যা বর্তমানে ২ শতাংশ), পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান ৫ শতাংশ হারের মূসক কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করা, কর্পোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো, ম্যানমেইড ফাইবারের উপর আরোপিত সকল ধরনের শুল্ক কর প্রত্যাহার করা, সিইটিপি ও ইটিপির যন্ত্রপাতির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা ইত্যাদি। এখন স্বাভাবিকভাবেই এসকল খাত থেকে কর কমানো হলে সরকারের জন্য বিকল্প করের উৎসায়ন জরুরী হয়ে পড়বে। এই বিষয়টিও এসকল ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা মাথায় রেখেছেন এবং সরকার যাতে জনগণকে আরো করের বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে তার প্রস্তাবনা দিয়েছেন। যেমন, পণ্য ও সেবাখাতে মূল্য সংযোজন ভিত্তিক একক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ (যা বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্নরকম), মূসকের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যন্ত ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ভ্যাটের নেটের আওতা বাড়ানো, করদাতাদের ব্যবসা পরিচালনা ও মূসক কর্তৃপক্ষের তদারকি সহজ করতে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিল, রিফান্ড, অডিটসহ সকল কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অটোমেশন নিশ্চিত করা।
ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামাফিক এসকল প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রীর রয়েছে একচ্ছত্র ক্ষমতা। যেমন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১১১(২) বিধি অনুযায়ী, “সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে অর্থমন্ত্রী যেরূপ উপযোগী মনে করেন, সেই আকারে বাজেট সংসদে পেশ করিবেন।” অর্থাৎ বাচ্চাদের স্কুলের ‘যেমন খুশি তেমন সাজ’র মতো অর্থমন্ত্রীরও ক্ষমতা রয়েছে ‘যেমন খুশি তেমন বাজেট’ প্রণয়নের। মূলত পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এখানে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কিছু মানুষের হাতে গচ্ছিত থাকে যারা নিজেদের হাওয়া (whims and desires) মাফিক আইন প্রণয়ন করে থাকে। এবং অপরদিকে ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী এসকল আইনপ্রণেতাদেরকে ক্ষমতায় আনতে তাদের নির্বাচন থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ বহন করে থাকে। যা আমরা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময়েও দেখতে পাই। এ বিষয়টিকেই হিযবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা আমীর শায়খ তাক্বি উদ্দিন আন-নাবাহানী (রহ্.) তার ‘ইসলামি ব্যবস্থা’ বইয়ের ‘ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব’ অধ্যায়ে ব্যখ্যা করেন, ‘যদিও গণতন্ত্র পুঁজিবাদের একটি অংশ, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে কম উল্লেখযোগ্য। কারণ পশ্চিমের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সরকারকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে, প্রকৃতপক্ষে পুঁজিপতিরাই (পুঁজির অধিকারী) কার্যকরভাবে পুঁজিবাদী জীবনাদর্শ গ্রহণকারী দেশগুলোর প্রকৃত শাসকের ভূমিকা পালন করে।’ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
অপরদিকে ইসলামী ব্যবস্থায় আইন প্রণয়নের একমাত্র একচ্ছত্র অধিকারী আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। খলিফার না আছে নিজের ইচ্ছানুযায়ী নতুন কোন আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আর না আছে ইচ্ছামত কোন আইনকে বাতিল করার ক্ষমতা। খলিফার দায়িত্ব শুধুমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দেয়া আইনকে বাস্তবায়ন করা এবং হুকুম শরিয়াহর নির্দিষ্ট উৎস (কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা সাহাবা, কিয়াস) থেকে ইজতিহাদের মাধ্যমে নতুন আইন প্রণয়ন করা। ইসলামী ব্যবস্থায় আইন সুনির্দিষ্ট, হোক সেটা অপরাধ সংক্রান্ত আইন কিংবা রাষ্ট্রের অর্থায়ন সংক্রান্ত আইন। এখানে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে খলিফার পক্ষে আইন পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধনের সুযোগ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন–যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ্ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন” (আল-মায়িদাঃ ৪৯); অর্থাৎ কোন মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলামের বিধান পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই, হোক সে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোন বড় ব্যবসায়ী কিংবা সম্ভ্রান্ত কেউ। আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রিয় ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন তিনি (সাঃ) বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত হদের ব্যপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর তিনি (সাঃ) দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন, বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহ্’র কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও যদি চুরি করতো, তবে নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম।” আর এভাবেই ইসলাম আইন বাস্তবায়নে ক্ষমতাশীলদের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিজের মূলনীতিতে অবিচল থাকে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“একের পর এক অগ্নিকাণ্ড: যেসব নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমত, বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। দ্বিতীয়ত, দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তৃতীয়ত, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। চতুর্থত, মার্কেট সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিজস্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে বলেছেন। পঞ্চমত, ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর সময় অযথা ভিড় করা যাবে না বলে হুশিয়ার করে তিনি বলেন, কোনও প্রকার বাধা দেওয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (www.banglatribune.com/national/794554/)
মন্তব্যঃ
যেখানে শাসকের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের দেখভাল করা, জানমালের নিরাপত্তা দেয়া, বিপদগ্রস্থ মানুষগুলোকে পূনঃরুদ্ধার করা সেখানে প্রধানমন্ত্রীর উপরের নির্দেশনাগুলোর প্রতিটি যেন জ্বলন্ত মানুষগুলোর গায়ে লবনের একেকটি প্রলেপ। তথাকথিত “উন্নয়নের সরকার” এর প্রধান হয়ে একের পর এক আগ্নিকান্ডের ঘটনা প্রতিরোধে চরম ব্যর্থতা এবং গাফিলতির পরিচয় দিয়ে দায় স্বীকার করার পরিবর্তে শেখ হাসিনার এরকম অবহেলাপূর্ণ ও নির্দয় আচরণ কিন্তু নতুন নয়। অতীতে অনেকবারই এই ধরণের আচরণ প্রকাশিত হয়েছে। নিরাপত্তা দাবি করা ছাত্র-শিক্ষকের উপর সে হেলমেট বাহিনী লেলিয়েছে, এর আগেও চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর মামলা-হামলা করেছে, ঈমান-আক্বিদার দাবিতে আন্দোলনরত উম্মাহ্ ও আলেমদের উপর সে গুলি চালিয়েছে, গরীব অক্ষম কৃষকদের সে ঋণের দায়ে জেলে পুরেছে, করোনার সময়ও পরবর্তীতে অনেকবার সে ভুখা-নাঙ্গা মানুষদের উপর হামলা নিপীড়ন চালিয়েছে; এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যাদের উপর দায়িত্বশীল তাদেরকেই শত্রু প্রতিপন্ন করা এবং তাদের নিরাপত্তা, দুঃখ-কষ্টে ও অধিকার-দাবির প্রশ্নে উল্টো তাদেরকেই দোষারোপ করা এবং তাদের উপর হামলে পড়া শুধু হাসিনার সমস্যা নয়। গভীরভাবে অনুধাবন করলে আমরা দেখবো এমন চরিত্র সকল স্যেকুলার শাসকেরই আছে। এরদোগানকে আমরা দেখেছি ভুকিকম্পে ধ্বংস হওয়া মানুষগুলোর উপর মামলা-গ্রেফতার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে। আমরা দেখেছি সবাইকে লকডাউন করে জনগণের মৌলিক চাহিদাপূরণ স্থগিত করে বরিস জনসনকে পার্টি করতে। ফ্রান্সে জনগণের ট্যাক্স কমানোসহ মৌলিক অধিকারের দাবিতে আন্দোলন দমনে সাধারণ মানুষকে পেটাতে ও আটক করতে পুলিশকে দেয়া হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা। আমেরিকাতে দুর্বল কালোদের আন্দোলনে ক্ষমতাবান সাদারা, পুলিশ প্রশাসন সবাই হামলে পড়ে। ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের এই সাধারণ চরিত্রের মূল কারণ হচ্ছে স্রষ্টাকে তাদের দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করা বা স্রষ্টার প্রতি কোন জবাবদিহিতা না থাকা বা তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে স্রষ্টার প্রতি ভয়ের কোন উপাদান না থাকা।
অনেকেই ‘স্রষ্টার প্রতি জবাবদিহিতা বা স্রষ্টাভীতি’ এই স্পিরিটকে কেবলই একটি ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক বিষয় মনে করে এবং এর কোন বাস্তব প্রভাব আছে বলে মনে করেনা। কিন্তু এটা যে ব্যাপক পার্থক্য তৈরি করে তা আজ বিশ্বজুড়ে স্পষ্ট হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতায় শাসকরা দায়িত্বের ক্ষেত্রে বিশেষত দুর্বল সাধারণ শ্রেণির বিষয়াদি দেখভালের ক্ষেত্রে দায়িত্ব নয় বরং একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করে। সে দেখেনা যে এব্যাপারে কেউ তাকে জবাবদিহিতায় ফেলতে পারে বা এতে তার কোন ক্ষতি হবে তাও সে মনে করেনা, ফলে সে কোন পিছুটান অনুভব করেনা। সে দেখে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষগুলো নিতান্তই অতিব দুর্বল এবং তাদের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার তথাকথিত জবাবদিহিতার উপকরণ বা মাধ্যমগুলো যেমন মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি, আদালত, ভোট ইত্যাদির কোনটিই ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। ফলে সে দেখে তাদের দাবি পূরণ না করে বরং অত্যাচার বাড়িয়ে দিলে এবং তাদের বাস্তবতাকে আরও কঠিন করে ফেললে তারা প্রতিবাদটুকু করারও শক্তি ও মনোবল হারাবে এবং সে প্রতিদিনের জীবনের সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে। এভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ শাসক দুর্বল সাধারণ মানুষের দাবী-দাওয়াকে একটা ঝামেলা, জঞ্জাট মনে করে এবং দ্রুত এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে তাদের উপর অত্যাচার বাড়িয়ে তাদেরকে নিশ্চুপ/স্তব্ধ করে দেয়। ফলে অবধারিতভাবেই একেকজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক নির্দয় পাষান অমানবিক হয়ে উঠে এবং জনগণ থেকে দিনে দিনে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে।
ইসলামের ইতিহাস আমাদের চোখে আঙ্গূল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আল্লাহ্ ভীতি কিংবা আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহি করার বিষয়টি শাসনকার্যে কতটা বাস্তব প্রভাব রাখে। ইসলামী খিলাফতের তেরশ বছরের ইতিহাসে এমনটি মোটেই দেখা যায় না যে, শাসকেরা সাধারণ মানুষকে স্তব্ধ করতে তাদের উপর হামলা-মামলা-হুমকি, নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। বরং এরকম অসংখ্য নজির আমরা দেখি যেখানে একজন অসহায়ের বা অধিকারের দাবিকারী নাগরিকের প্রশ্নের মুখে খলিফারা লজ্জিত হয়েছেন এবং দ্রুত তাদের অধিকার আদায় করেছেন। ন্যায়পরায়নতার জন্য বিখ্যাত খলিফাদের ক্ষেত্রে এমন সংখ্য উদাহরণ আছে, এমনকি অনেক শাসক যাদেরকে অনেকসময় ইতিহাসে অত্যাচারী হিসেবে তুলে ধরা হয় তাদের ক্ষেত্রেও এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন সুলাইক ইবিনে সালকাহ নামে এক ব্যক্তি একবার হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের দরবারে এসে অভিযোগ করে যে মূলত তার এক ভাইয়ের অপরাধের কারণে তাকে অপরাধী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তার বাড়িঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং তার ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাজ্জাজ তাকে এক কবির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে কখনো কখনো যেমন পাঁচড়াযুক্ত উটের কারণে সুস্থ সবল উটও আক্রান্ত হতে পারে তেমনই আত্মীয় হওয়ার কারণে নিরপরাধ ব্যক্তিও পাকড়াও হতে পারে! তখন সুলাইক সূরা ইউসুফের ৭৮-৭৯ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বললো বরং আল্লাহ্ তার বিপরীত কথা বলেছেন। [……তিনি (ইউসুফ) বললেন- যার কাছে আমাদের মাল পেয়েছি, তাকে ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করা থেকে আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন।] হাজ্জাজ সাথে সাথে বললেন, “আল্লাহ্ সত্য বলেছেন, কবি মিথ্যা বলেছে”। অতঃপর তিনি অনতিবিলম্বে সুলাইককে অপরাধীর তালিকা থেকে বাদ দিলেন, ভাতা চালু করলেন এবং ঘর মেরামত করে দিলেন।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“টিকিট দেখিয়ে ঢুকতে হবে রেলস্টেশনে”
খবরঃ
টিকিটবিহীন যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, টিকিটবিহীন তথাকথিত যাত্রীদের আর ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ নেই। প্রত্যেক যাত্রীকে টিকিট দেখিয়ে স্টেশনে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। রবিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী এ কথা বলেন। সোমবার (১৭ এপ্রিল) থেকে ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হবে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো শতভাগ অনলাইন মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। যাত্রীরা টিকিট প্রদর্শন করেই স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড় টিকিটবিহীন যাত্রী প্রবেশ বন্ধে ঢাকামুখী ট্রেনগুলো এবার বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে থামবে না বলেও জানান রেলমন্ত্রী। (banglatribune.com/national/794711/টিকিট-দেখিয়ে-ঢুকতে-হবে-রেলস্টেশনে)
মন্তব্যঃ
ত্রুটিপূর্ণ পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শনের ফলাফলস্বরূপ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শহরকেন্দ্রীক। তাই জীবিকার খোঁজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষকে পরিবার পরিজনকে গ্রামে রেখে হতে হয় শহরমুখী। ঈদ বা সামান্য দীর্ঘ ছুটি পেলেই পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য মানুষ হয় গ্রামমুখী। বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন একসাথে গ্রামমুখী হয়, তৈরি হয় ট্রেনসহ অন্যান্য যানবাহনের টিকিট সংকট। সুদীর্ঘকাল ধরে এই দেশের মানুষ এই সংকটের মধ্যেই আছে। সড়ক পথে চলমান অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প থেকে উৎসরিত ধুলা-বালি, যানজট এবং তীব্র গরম থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য অনেকে ট্রেনের টিকিট খুঁজছিলেন। কিন্তু ১ কোটি ২০ লাখ ভ্রমণ ইচ্ছিক যাত্রীর জন্য ট্রেনের মোট টিকেটের সংখ্যা মাত্র ২৫,৭৭৮ টি। তাই খুব কম সংখ্যক যাত্রী ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছে। সরকার জনগণের প্রয়োজন মিটানোর জন্য পর্যাপ্ত ট্রেনের টিকিটের ব্যবস্থা করার ব্যর্থতাকে ঢাকতে অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রয়, বাঁশ দিয়ে ট্রেন ষ্ট্রেশনে প্রবেশ প্রতিবন্ধকতা তৈরির মত অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনভোগান্তিকে আরও চরমে নিয়ে গিয়েছে। সংকটের মূল কারণ শহরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে বিকেন্দ্রিকরণ না করে পুঁজিবাদী সরকার টিপিকাল থার্ড ওয়াল্ড দেশের মত সাম্রাজ্যবাদী ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান (বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা) এবং ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী তোষণের প্রকল্প (পিপিপি) গ্রহণ করছে। নিষ্ঠাবান নগর পরিকল্পনাবিদরা এই সকল অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল প্রকল্পের বিরোধীতা করলেও সরকার তাদের ভাল পরার্মশগুলো উপেক্ষা করছে যার ফলে জনগণের পরিবহন ব্যায় বৃদ্ধি পেলেও কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না।
ইসলামের অর্থনীতির অন্যতম মূল আইডিয়া হচ্ছে সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ। সম্পদকে বিকেন্দ্রিকরনের মাধ্যমে এবং পাশাপাশি নাগরিক সুযোগ সুবিধা এবং নগরায়নও বিকেন্দ্রীভূত হতে বাধ্য। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “..সম্পদ যেন কেবল (তোমাদের) ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়” (সূরা আল-হাশর: ৭)। এছাড়াও, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “বাস করার জন্য একটি গৃহ, আব্রু রক্ষার জন্য এক টুকরা কাপড়, আর খাওয়ার জন্য এক টুকরা রুটি ও একটু পানি এসবের চেয়ে অধিকতর জরুরী কোন অধিকার আদম সন্তানের থাকতে পারে না” (তিরমিযী)। খলীফা রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে যেমন বাধ্য তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা করার জন্য দায়িত্বশীল। তাই খিলাফত রাষ্ট্রে জনগণ দেশের যে প্রান্তেই থাকুক সেখানে তাদের সম্মানজনক জীবন-জীবিকা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে বাধ্য। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে মানুষের ঢাকামুখী ঢল আর থাকবে না। দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় যখন উন্নত মানের স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ সবরকমের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে, দূর দূরান্তে কৃষিকাজের পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে টেকশই এবং বৃহৎ শিল্পে জনগণ সম্মানজনক আয়ের নিশ্চয়তা পাবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগণ ঢাকামুখী আর হতে ইচ্ছুক হবে না। তাইতো ১৪০০ বছরের খিলাফতের ইতিহাসে কখনও রাজধানীকেন্দ্রিক এই রকম অতি-জনস্রোত দেখা যায়নি। বরং, খিলাফত রাষ্ট্রের নাগরিকরা খিলাফতের বিভিন্ন উলা‘ইয়াহ্ (প্রদেশে) উন্নত নাগরিক সেবাসহ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নেতৃত্বে খন্দকের যুদ্ধে ইসলামের প্রথম আনসারী নারী সাহাবী নার্স ‘রুফাইদা আল-আসালমিয়া’ ‘মোবাইল হাসপাতাল’-এর ধারনার জন্ম দেন। পরবর্তীতে এই ধারনার আলোকে প্রথম যথাযথ হাসপাতাল তৈরি করেন উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদ। খিলাফতের সব যুগে বিশেষ করে আব্বাসি এবং সেলজুক সময়ে খিলাফত ভুমির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে এরুপ হাসপাতাল যেগুলোকে বলা হতো ‘বিমারিস্থান’, যা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিককে বিনামুল্যে চিকিৎসা প্রদান করত। ৬৮২ খ্রিষ্টাব্দে কায়রোর “আল মারস্থান আল মান্সুরি” হাসপাতাল দিনে ৪০০০ রোগীকে সেবা দিত এবং তার মান এতই উন্নত ছিল যে পর্যটক ইবন বতুতা বলেছিলেন, “বর্ণনাকারী এর উৎকর্ষতা সম্পর্কে বর্ণনা করতে অপারগ”। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের ইসলামী অর্থনীতি এবং নগরায়নের বিকেন্দ্রিকরণ নীতি বাস্তবায়নের ফলে আমরা এমনিতেই রাজধানীমুখী চাপ আর দেখতে পাব না, তাই ঈদ কেন্দ্রীক ট্রেনের টিকিট সংকটের মূল কারণের আস্তত্বই থাকবেনা। এছাড়াও, খলীফা উন্নত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে নিষ্ঠাবান নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করে বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক বাস্তবতার নিরিখে নৌ, সড়ক, এবং আকাশপথের উন্নয়নে কাজ করবে যাতে জনগণ স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“রামগড় সীমান্তে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে বিএসএফের শুভেচ্ছা বিনিময়”
খবরঃ
খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ব্রিজের কাছে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান এবং বিএসএফের উদয়পুর সেক্টরের ডিআইজি শ্রী শেখর গুপ্তার মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। এ সময় উভয়পক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/hr44et74ue)
মন্তব্যঃ
মুসলিমদের জন্য বিজয়ের মাস হিসেবে পরিচিত পবিত্র এই রমজান মাসে যখন মুসলিম সেনাপতি মুশরিক সৈন্যের সাথে হাত মিলায় তখন মুসলিম সৈনিকগণ ও সাধারণ মুসলিমগণ খুব অসহায় বোধ করে। কারণ এই উম্মত তার বর্ডার গার্ডকে মুশরিক রাষ্ট্র ভারত ও তার অপবিত্র সৈন্যদের নিকট থেকে নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত করেছে। বাংলাদেশ-ভারতের সমগ্র সীমান্তজুড়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অপরাধ, হত্যাযজ্ঞ ও নির্মমতা সর্বজনবিদিত। তারপরও বাংলাদেশের এই মুসলিম সেনাবাহিনীর সেনাপতি বা মহাপরিচালক যখন খুনি-মুশরিক বাহিনীর এক নগণ্য সেক্টর ডিআইজির সাথে হাত মেলায়, তখন তার নেতৃত্বাধীন মুসলিম সৈনিকের মনে এই বার্তা পৌঁছে যে, তারা এই শত্রু বাহিনীর আজ্ঞাবহ ও অধীনস্থ। তখন তারা ও সাধারণ জনগণ খুব হতাশা অনুভব করে। প্রকৃতপক্ষে নব্য উপনিবেশবাদের এই যুগে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হলো ‘দালাল’ বা ‘পুতুল’ শাসক। এরা কার্যত তাদের প্রভু রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে এই ভুমিগুলো শাসন করছে এবং প্রভু রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এদের নির্দেশেই বর্তমান বাংলাদেশের সরকার ভারতীয় আধিপত্যবাদের আনুগত্য করছে। এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে তাদের আনুগত্য করতে বাধ্য করছে, যা এই তথাকথিত ‘শুভেচ্ছা বিনিময়’ কর্মসূচির মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।
মূলত হাজারো বছরের খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় ঐক্যবদ্ধ মুসলিম সেনাবাহিনী তখনই এই লজ্জাজনক অবস্থায় পতিত হয়েছে যখন এই পবিত্র শাসন ব্যবস্থাটি ধ্বংস হয়ে যায়। এই বাহিনী তার অভিভাবক খলিফাকে হারায়। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম হচ্ছেন ঢালস্বরূপ, যার পেছনে দাঁড়িয়ে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের রক্ষা করে” (সহীহ্ মুসলিম শরীফ)। ইতিপূর্বে এই খিলাফত শাসন ব্যবস্থা যুগে যুগে খালিদ বিন ওয়ালিদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, সাইফুদ্দিন আল কুতুজ-দের মত জেনারেলদের তৈরি করেছিল, যারা উম্মতকে বিজয়ী জাতি হিসেবে এই পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার লাভ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বিজয়ের মাস রমজানে মুসলিম বাহিনীগুলো পরিকল্পনা করতো, তারা আর কোন অঞ্চল বিজয় করবেন এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দ্বীন সেখানে পৌঁছে দিবেন, আর কাফেররা ভয়ে তটস্থ থাকতো, কখন, কোন দিক দিয়ে না জানি বিজয়ী মুসলিম বাহিনী আক্রমণ করে বসে। আর আজকে সেই বাহিনীর উত্তরসূরীদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে মুশরিক শত্রু বাহিনীর আজ্ঞাবহ হতে, শত্রুবাহিনীর নিম্ন পদের সৈনিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই কাপুরুষ মুশরেক বাহিনীর পূর্বসূরী কুরাইশরা বদরের প্রান্তরে এই রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সংখ্যালঘিষ্ঠ বাহিনীর সাথে সংখ্যাগুরু হয়েও লজ্জাজনকভাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সাহায্যে পরাজিত হয়েছিল। এই একই রমজানে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আমরা মুশরেক-পৌত্তলিক-মূর্তি পূজারীদেরকে পুরো আরবের বুক থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করেছিলাম। তাই পশ্চিমা উপনিবেশবাদের অধীনে আমরা যতদিন থাকবো, ততদিন মুশরেক শত্রুরা আমাদেরকে তাদের অধীন করে রাখবেই। এই অবস্থা হতে রক্ষা পেতে, রমজানকে পূর্বের বিজয়ী মাসের রূপে ফিরিয়ে দিতে, অতীতের ন্যায় ইসলামী শাসন ব্যবস্থা তথা খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিকল্প নেই।
- জহিরুল ইসলাম
“বিবিএসের জরিপের তথ্য: দেশের এক–তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণগ্রস্ত”
খবরঃ
দেশের মানুষের পরিবার প্রতি ধার বা ঋণ করা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকা। সেটি ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ৫০৬ টাকা। এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ধার করে জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৩৭ শতাংশ পরিবার গত এক বছরে হয় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নয়তো বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ঋণ বা ধার করেছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপকালে গড়ে ৩৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পরিবার ঋণ বা ধারের কথা জানিয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপে ধার বা ঋণ করে চলা পরিবার ছিল গড়ে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত ৬ বছরে দেশে ধার করে চলা পরিবারের সোয়া ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি বেড়েছে। (www.prothomalo.com/business/economics/bw0ncefnye)
মন্তব্যঃ
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও তার ফলে সৃষ্ট দারিদ্রতার জন্য কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আড়াল করার প্রচেষ্টা সরকার বহুদিন ধরে করছে। অথচ বর্তমান এই দুর্দশার পেছনে মুলতঃ দায়ী সরকারের পুঁজিবাদী নীতি ও সীমাহীন দুর্নীতি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পুঁজিপতিদেরকে জনগণের সম্পদ লুটের জন্য সুদহার কমিয়ে সস্তা ঋণের সুবিধা দেয়া হয়েছে ও এর প্রেক্ষিতে খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির (এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা) বর্তমান পরিসংখ্যানই এর প্রমাণ। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে খেলাপি ঋণ পুনঃশ্রেণিবিন্যাসের (rescheduling) সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণকে গায়েব করে ফেলা হয়েছে। ফলস্বরূপ পুঁজিপতিদের সম্পদ প্রতিনিয়ত বাড়ছে আর প্রতিটি পণ্য এবং মৌলিক পরিষেবার উপর ভারী কর বসিয়ে সাধারণ জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। এই ট্যাক্স গরীবের জন্য বোঝা হলেও পুঁজিপতিশ্রেণীর জন্য নয়, কারণ এটি ধনীদের সম্পদের উপর নয় বরং পণ্য ও পরিষেবার উপর ধার্য করা হয় যা তাদের স্পর্শও করে না। এমনকি যা ‘কর্পোরেট ট্যাক্স’ নামে পরিচিত তাও পুঁজিপতিদের সম্পদকে স্পর্শ করে না, কারণ পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক দর্শনের প্রতারিত ভাষ্যমতে, যদি ধনী ব্যক্তিদের উপর কম ট্যাক্স ধার্য করা হয় তবে তারা উত্পাদনে বেশি ব্যয় করতে পারবে এবং অর্থনীতিতে একটি ‘ট্রিকলডাউন’ প্রভাব পড়বে। এছাড়াও অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় যখনই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, তার সিংহভাগই বরাদ্দ থাকে পুঁজিপতিদের প্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোকে সহযোগিতার জন্য। অর্থাৎ, প্রণোদনা প্যাকেজের প্রণোদনা/ভর্তুকি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে বড় শিল্পগ্রুপ ও প্রভাবশালীদের দেয়ার মাধ্যমে তাদের পুঁজিকে রক্ষা করা হয়। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যখন জীবন ও জীবিকার সংকটে ভোগে, তখন পুঁজিপতিদের সম্পদ বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। একারণেই দেশে যখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা জীবন যাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক তখন একটি শ্রেণীর আয়ের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি [বাংলা ভিশন নিউজ, ২১ মার্চ, ২০২৩]। আর তাদের সম্পদ বৃদ্ধির উপর ভর করেই চলছে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উল্লম্ফন। সরকারী ভাষ্যমতে দেড় দশকে দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন), মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। দেশের বিশাল সাফল্যের এই গল্পে সফলতার সুফল কিন্তু সবাই সমানভাবে ভোগ করতে পারছে না! চার কোটিরও বেশী মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়ে গেছে। উন্নয়নের ‘ট্রিকল ডাউন’ বা ‘চুইয়ে পড়া’ তত্ত্ব কোনো কাজে আসেনি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তিন গুণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অভুক্ত/ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার স্পষ্ট ইঙ্গিত। দারিদ্র্যের প্রকৃত কারণ পুঁজিবাদের বাস্তবায়ন হওয়া সত্ত্বেও, বুদ্ধিজীবী এবং রাজনীতিবিদরা এই সত্যটিকে অস্বীকার করে/চেপে যায়। এরা এর ধারক বাহক হওয়ায় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে অন্য কোনো বিকল্প মডেলের সন্ধানও করে না।
অন্যদিকে, ইসলাম মানুষের চাহিদাগুলোকে সামষ্টিকভাবে না দেখে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদাগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে বিচার করে। তাই স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পূরণ না করে সামগ্রিকভাবে পুরো সমাজের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করা তথা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খিলাফত রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা খিলাফত রাষ্ট্রের উপর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা - এসব মৌলিক চাহিদা পূরণকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেনঃ “বাস করার জন্য একটি গৃহ, আব্রু রক্ষার জন্য এক টুকরা কাপড়, আর খাওয়ার জন্য এক টুকরা রুটি ও একটু পানি এসবের চেয়ে অধিকতর জরুরী কোন অধিকার আদম সন্তানের থাকতে পারে না” [তিরমিযী]। রাষ্ট্রের নাগরিকের এই মৌলিক চাহিদা পূরণে খলিফা বাধ্য। কিছু বিশেষ ক্ষেত্র বাদে জনগণের কাছ থেকে করারোপ (Tax) করে সম্পদ হরণ করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে, যেমনঃ জিহাদ বা দূর্ভিক্ষের সময় মুসলিমের উপর কর (Tax) দেয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। আর এ করারোপ করা হবে সে সম্পত্তির উপর, যা সাধারণত একজন ব্যক্তি তার মৌলিক অধিকার ও বিলাসসামগ্রী পূরণের পর উদ্বৃত্ত থাকে। খিলাফত রাষ্ট্র দুর্নীতিকে সমূলে বিনাশ করার মাধ্যমে পুঁজিপতিদের জন্য বিশাল লাভের/সম্পদ কুক্ষিগত করার পথকে বন্ধ করে। পুঁজিবাদের বিপরীতে সম্পদের সঞ্চালন নিশ্চিত করা ইসলামী অর্থনীতির একটি মৌলিক লক্ষ্য। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ “আর সম্পদ যেন শুধুমাত্র তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়।” [সূরা আল-হাশরঃ ৭]
- সুজন হোসেন