Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৮৬ তম সংখ্যা । ২ মে, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“চট্টগ্রাম, ঢাকা ঘুরেও হাসপাতালে ভর্তি করা গেল না শাহীনকে, গেল না বাঁচানো”
“মাতাল’ হয়ে বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে ধরা, প্রাইভেট কারের সেই তরুণ-তরুণী জামিনে মুক্ত”
“মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল কাজ পাচ্ছে”
“আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা”
“সেপ্টেম্বরে শুরু আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ”
“রাজসিক সংবর্ধনায় সিক্ত বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ”
“চট্টগ্রাম, ঢাকা ঘুরেও হাসপাতালে ভর্তি করা গেল না শাহীনকে, গেল না বাঁচানো”
খবরঃ
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মো: শাহীনকে বাঁচানোর আশা নিয়ে তার স্বজনেরা গতকাল মঙ্গলবার রাতে এসেছিলেন ঢাকায়। মুমূর্ষু শাহীনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাতভর তারা ঘুরেছেন এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে। কিন্তু কোথাও তাকে ভর্তি করতে পারেননি। অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মারাই গেলেন শাহীন। স্বজনেরা জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় শাহীনকে প্রথমে ফেনী শহরের জেড ইউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর জীবন বাঁচানোর জন্য এই হাসপাতালের চিকিৎসা-সরঞ্জাম যথেষ্ট নয়। তাঁরা দ্রুত রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। এ অবস্থায় অক্সিজেন লাগিয়ে শাহীনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাঁকে ভর্তি করা যায়নি। কারণ, এই রোগীর জন্য যে আইসিইউ সুবিধা দরকার, সেই শয্যা চট্টগ্রাম মেডিকেলে ফাঁকা নেই। তখন শাহীনকে শহরের সিএসটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা আছে। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে সেখানকার চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা অন্য কোথাও নিতে।... স্বজনদের একজন এই প্রতিবেদককে জানান, সব শুনে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ শাহীনকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে ঘণ্টায় ৭৮ হাজার টাকা বিল আসে। কর্তৃপক্ষ ছাড় দিয়ে এই বিল ৬০ হাজার টাকা করে। স্বজনেরা দোটানায় পড়েন শাহীনকে বাড়ি নেবেন, নাকি ঢাকায় আনবেন। তাঁরা ঢাকায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে রওনা হন।.. রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহীনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায় নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ভেতরের ফটকে। চিকিৎসকেরা জানান, তাদের আইসিইউর শয্যা খালি নেই।... স্বজনদের পীড়াপীড়িতে একজন চিকিৎসক অ্যাম্বুলেন্সে এসে শাহীনকে দেখে যান। অবস্থা দেখে তিনি পরামর্শ দেন রোগীকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার। এর মধ্যে কেটে যায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা। হতাশ হয়ে স্বজনেরা ঢাকা মেডিকেলে যান। ...রোগীর অবস্থা দেখে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানান, তার আইসিইউ সুবিধা লাগবে। এই মুহূর্তে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। শাহীনকে আবার ঢোকানো হয় অ্যাম্বুলেন্সে। হন্যে হয়ে স্বজনেরা নানা মাধ্যমে এই হাসপাতাল, ওই হাসপাতালে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। ... ঢাকার কোনো হাসপাতালেই শাহীনের জায়গা হয়নি। রাজ্যের হতাশা নিয়ে স্বজনেরা রাত দেড়টায় আবার ফেনীর উদ্দেশে রওনা দেন। ভোর পাঁচটার দিকে তাঁরা ফেনী সদর হাসপাতালে পৌঁছান। তবে শাহীনকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অক্সিজেন দিয়ে রাখা যায়—এটুকুই। কিন্তু ভর্তি করা যায়নি। সব চেষ্টা বিফলে যায়। হতাশ স্বজনেরা তখন ক্লান্ত, অবসন্ন, বিমর্ষ। কোথাও ঠাঁই না পাওয়া শাহীন দুপুর ১২টায় ফেরেন নিজ গ্রামে। জীবনযুদ্ধে হেরে বেলা সাড়ে তিনটায় চিরবিদায় নেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর ফেনী থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়—চার দিনে এই জীবন–মরণ লড়াইয়ে শাহীনের সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী ও বন্ধু শফিউল আজম (দীপু)। তিনি ফেনীর পূর্বাঞ্চলে একজন ভালো ফুটবলার হিসেবে পরিচিত। আক্ষেপ করে শফিউল আজম প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাব্যবস্থায় গরিব মানুষেরা যে কতটা অসহায়, তা বুঝিয়ে দিলেন শাহীন। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/9dgm9590fe)
মন্তব্যঃ
পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবাকে কাগজে-কলমে মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, বাস্তবে এটা হল মানুষের চরম অসহায়ত্বের সুযোগে পুঁজিপতিদের টাকা বানানোর মেশিন। পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সমাজের সম্পদশালীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিলে সমাজের ধনী-দরিদ্র সবাই তার সুফল ভোগ করবে। কারণ, ধনী ব্যক্তিরা সম্পদ বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। একারণে এই তথাকথিত সম্পদশালী বা পুঁজিপতিদের হাতে এই ব্যবস্থায় মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল অত্যাবশ্যকীয় খাতসমূহ তুলে দেওয়া হয়। তখন পুরো জাতি তার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে গুটিকয়েক পুঁজিপতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। তারপর এর আরো ভয়ংকর পর্যায় হয়, যখন শাসক ও পুঁজিপতিরা এক হয়ে যায়, যেটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এটাকে স্বজনতোষী ‘পুঁজিবাদ’ নামে অভিহিত করা হয়। এখানে সরকারসমূহ তাদের নিজেদের তৈরি করা নীতি-নৈতিকতার ঊর্ধ্বে উঠেও সরকার-ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদেরকে সর্বোচ্চ সহায়তা দান করে। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাই, খোদ মার্কিন মুল্লুকেও প্রতি ১০ জনে ৪ জন ব্যক্তি খরচের অভাবে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে না কিংবা গ্রহণ করতে বিলম্ব করে। তারা স্বাস্থ্য সেবাকে বানিয়েছে তাদের জাতীয় আয় বৃদ্ধির অন্যতম খাত। ২০২০ সালে তাদের জাতীয় আয়ের ১৮% এসেছে স্বাস্থ্যসেবা খাত থেকে। আর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশাতো আলোচ্য খবরটির মাধ্যমেই উঠে এসেছে। এখানে একদিকে সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক করে রাখা হয়েছে, অন্যদিকে পাঁচ তারকা মানের বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে, যেগুলো ৮ শতাংশেরও বেশি নিট মুনাফা করে। এখানে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্যসেবা, যেমন আইসিইউ কিংবা ভেন্টিলেশন প্রযুক্তি পর্যন্ত তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে আইসিইউ বেডের সংখ্যা জনসংখ্যা প্রতি লাখে মাত্র ০.৭ টি এবং এই অপ্রতুলতার দরুন এর ভাড়া বাবদ হাসপাতাল ভেদে প্রায় ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশের ৮০ভাগ পরিবারেরই মাসে ১০,০০০ টাকা আয় নেই, যাদের পক্ষে এই খবরে বর্ণিত ভুক্তভোগী মোঃ শাহিন এর মত কখনোই আইসিইউ বেডে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
তাই যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাস্তবায়ন মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা হাতের নাগালে বাইরে যাওয়ার অন্যতম কারণ, সেই অকল্যানকর-অমানবিক ব্যবস্থা অবশ্যই পরিত্যাজ্য এবং একটি সঠিক ও মানবদরদী ব্যবস্থা দ্বারা এর প্রতিস্থাপন করা জরুরী, যেখানে চিকিৎসাসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা প্রত্যেক মানুষের জন্য নিশ্চিত করা হবে। এই ব্যবস্থাটি হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানের (খলিফা) উপর জনগণের জন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ফরজ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” (বুখারী)। যেহেতু, খলিফা জনগণের অভিভাবক, সেহেতু তার ওপর জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক। তাইতো অতীতে ১৯২৪ সালে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত ১৪০০ বছর ধরে বাগদাদের আদাদী হাসপাতাল, দামেস্কের নুরি হাসপাতাল, মনসুরী হাসপাতাল, মরক্কোর মারাকিশ হাসপাতালসহ হাজার হাজার হাসপাতালগুলোতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কোনরকম বৈষম্য ব্যতিরেকেই। এমনকি রোগীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর রিলিজের সময় তাকে ভাতাও প্রদান করা হতো, যেন সে কর্মক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারে। সেখানে একমাত্র কর্ডোভাতেই ৫০টিরও বেশি হাসপাতাল ছিল। তাই আবার যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার ইচ্ছায় খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে তখন পূর্বের ন্যায় সেই মানবদরদী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনা হবে। সামান্য আইসিইউর জন্য শাহিনের মত অসহায় রোগীকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হবে না। কোন পুঁজিপতিকে মানুষের এই চরম অসহায়ত্বকে পুঁজি করে অঢেল টাকা কামানোর সুযোগ দেওয়া হবে না।
- মো: জহিরুল ইসলাম
“মাতাল’ হয়ে বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে ধরা, প্রাইভেট কারের সেই তরুণ-তরুণী জামিনে মুক্ত”
খবরঃ
রাজধানীর মালিবাগে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণ-তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুক্ত হলেন আদালত থেকে জামিন পেয়ে। রোববার রাত ৯টার দিকে ঢাকার আবুল হোটেল ক্রসিং সংলগ্ন মালিবাগ চৌধুরীপাড়া মক্কা বিরিয়ানির সামনে থেকে গ্রেপ্তারের সময় তারা মাতাল ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাসাপাতালের তাদের পরীক্ষা করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, তারা দুজনই নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য পান করেছে। ফলে তারা দুইজনই মাতাল ছিল।” এসআই শাহরিয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, হাসপাতাল থেকে ‘ওয়াশ’ করে থানায় আনার পর জানায় যে গুলশানের একটি বারে তারা মদপান করেছিলেন। মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে পথচারীদের উপর মারমুখী আচরণসহ জনসাধারণের শান্তি বিনষ্ট করার অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (৫) ধারায় মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় দুজনকে সোমবার সকালে ঢাকার আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । আদালত থেকে তারা জামিন পেয়েছেন বলে পরে জানান রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। (https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/933r8fvcnk)
মন্তব্যঃ
মদ খেয়ে তরুণ-তরুণীদের এমন মাতলামী করা এবং সেই সাথে সহিংস অপরাধে জড়ানো ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা হতে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরাই পশ্চিমা উদারনৈতিক সংস্কৃতিকে আমদানি করার লক্ষ্যে সংসদে বসে মদ জুয়ার লাইসেন্স দিয়ে এদেশের তরুণ সমাজকে এই ধরনের উশৃঙ্খল জীবনযাপনের সুযোগ প্রদান করেছে। তারা দেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে তা নয়, অর্থনৈতিক লাভ ও ট্যাক্সের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বিবেচনায় এগুলোর উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি ও বিক্রির বৈধতা দিয়েছে। মাদকের ব্যবহার সহজলভ্য করার জন্য তারা বারংবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করেছে। মায়ানমার ও ভারত সীমান্তে মাদকের প্রবেশদ্বারগুলো উন্মুক্ত করে এবং সরকার মদদপুস্ট মাদক সিন্ডিকেট ও মাদক সম্রাটদেরকে অস্পৃশ্য রেখে লোকদেখানো মাদকবিরোধী অভিযান চালু রেখেছে! মাদককে উত্তরোত্তর প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী মদ ও মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করেছে। সকল প্রকার মদকে হালাল করার জন্য বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ হাইকোর্ট মদকে মাদকদ্রব্য হিসেবে বিবেচনা করাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক পৌছে দেয়ার জন্য সরকারের নীতি নির্ধারকরা সকল প্রকার মাদকদ্রব্যে আ্যলকোহলের পরিমাণ ৫% এর নিচে নামিয়ে এনে সেগুলোকে বৈধ করার পরামর্শ দিচ্ছে। মাদকের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন মাদককে বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপিত করার প্রস্তাবনা আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন শিথিল করে কোন এলাকায় ১০০ জন দেশি বা বিদেশি মদপানকারী থাকলেই অ্যালকোহল বিক্রয়ের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। মদ উৎপাদন ও বিক্রিতে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাভ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি দেশের রাষ্টায়ত্ত চিনিকল কেরু এন্ড কোম্পানি একদিকে চিনি উৎপাদন ও বিক্রিতে লোকসান করছে কিন্তু অন্যদিকে মদ উৎপাদনে ও বিক্রিতে রেকর্ড মুনাফা করে যাচ্ছে! অথচ বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী সমাজে মাদকের ভয়াবহতা এবং ইসলামে এর হালাল-হারামকে কোনভাবেই বিবেচনায় আনছে না। উপর্যুপরি মদ খেয়ে মাতলামির করে নানাবিধ সহিংস অপরাধে জড়ানো স্বত্বেও অপরাধীদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশে মদ ও মাদক সেবন, জুয়া সহ সকল প্রকার ফাহিশা ও মুনকার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করছে।
কার্যত, আল্লাহ্ ও তার বিধানকে যখন সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে আলাদা করা হয়, একটা রাষ্ট্র যখন ধর্মনিরপেক্ষবাদের মত স্রষ্টাহীন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আইন প্রণয়ন, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সংক্রান্ত বিধানগুলোর উৎস হয় যায় মানবমস্তিষ্ক। আর সীমাবদ্ধ মানবমস্তিষ্ক কর্তৃক ভাল-মন্দ নির্ধারণের মানদন্ড খুব স্বভাবতই ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়, বস্তুগত লাভ-লোকসান দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং বৈপরীত্যে পরিপূর্ণ হয়। তাই স্রস্টাহীন ভিত্তর উপর প্রতিষ্ঠিত এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে মদ-জুয়া প্রাতিষ্ঠানিক রুপ লাভ করবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? সকল প্রকার ফাহিশা ও মুনকার সমাজকে একে একে ছেয়ে ফেলবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? মানুষের খেয়াল খুশির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে কখনোই মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাল মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, ও হালাল-হারামের উৎস হিসেবে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রদত্ত বিধানকে মেনে নেয়া যিনি সর্বজ্ঞানী-সর্বজ্ঞ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সবকিছুর মাপকাঠি হিসেবে হুকুম শরীয়াহ থেকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন যা কখনো পরিবর্তনশীল নয়, পরিবেশ পরিস্থিতি এমনকি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থ দ্বারাও প্রভাবিত নয়। ইসলাম সকল প্রকার আ্যলকোহলকে হারাম ঘোষণা করার মাধ্যমে মাদকের ব্যাপারে সমাজকে একটি স্থায়ী মানদন্ড প্রদান করেছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনে রাখ নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, পূজার বেদি, লটারি ইত্যাদি ঘৃণিত ও শয়তানের কাজ। অতএব, তোমরা তা সম্পূর্নভাবে বর্জন করো” (সূরা মায়িদা: ৯০)।“ এছাড়া সকল প্রকার মদ নিষিদ্ধের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, প্রত্যেক নেশাকর বস্তুই হারাম এবং যে বস্তুটির বেশি পরিমাণ নেশাকর তার সামান্যটুকুও হারাম (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ)।“ তাই খিলাফত রাষ্ট্রে মাদকের সংজ্ঞায় কখনো পরিবর্তন হয় না কিংবা বস্তুগত সুবিধা ও কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর মুনাফার দোহাই দিয়ে মদকে হালাল করার সুযোগ নেই। উপরন্তু ইসলামী আক্বীদা এমন ব্যক্তিত্ব উপহার দেয় যারা উচ্চতর জীবনদর্শন ও জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা রাখে এবং প্রতিটা কাজের সাথে পরকালের পুরস্কার ও শাস্তির বিষয়টি সংযোগ করে। কারণেই মদ-জুয়ার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আয়াত নাযিলের সাথে সাথে সাহাবীগণ(রা.) তাদের মজুদকৃত সকল মদ একযোগে ধ্বংস করেন এবং কেউ কেউ জোরপূর্বক বমি করে পেট থেকে মদ উদ্গীরণ করেন। মদিনার রাস্তায় মদের স্রোত দেখা গিয়েছিল, যখন নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়, “অতএব, তোমরা কি এখনও নিবৃত্ত হবে না? (মায়িদাঃ ৯১); জবাবে উমর (রা.) বলেন, আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম” (আহমাদ)।
- সিফাত নেওয়াজ
“মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল কাজ পাচ্ছে”
খবরঃ
গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। কোম্পানিটি সাগরের ১৫টি ব্লকে এই অনুসন্ধান চালাতে চায় বলে সরকারের কাছে লিখিল প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবের ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।… এদিকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির অনুসন্ধানের আগ্রহকে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দরকষাকষির ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ও বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দেন তারা। (https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/668152/মার্কিন-কোম্পানি-এক্সন-মবিল-কাজ-পাচ্ছে)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলের অনুসন্ধানের আগ্রহকে নেহায়েত জ্বালানি ইস্যু হিসেবে না দেখে ভূ-রাজনৈতিক এবং মার্কিন আধিপত্যনীতির প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে এই প্রকৃত বাস্তবতা আমাদের সামনে পরিষ্কার হবে যে, আদৌ কি এটি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় নাকি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের জন্য। উল্লেখ্য, চীনের উত্থানকে মোকাবেলায় আমেরিকা এই অঞ্চলে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’-এর অংশ হিসেবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে কোয়াড গঠন করে। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. মার্ক টি. এসপার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে টেলিফোন করে বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে অংশীদার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র”। আবার, ভারত মহাসাগরে মেরিটাইম ডোমেইন ফিউশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, যার মূল উদ্দেশ্য ভারত মহাসাগরে উপস্থিতি বাড়ানো। ২০১৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি ড্যানিয়েল এন রোজেনব্লুম বাংলাদেশকে এই সেন্টারে যোগদানের প্রস্তাব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ এপ্রিল’২৩ বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ ঘোষণা করেছে। একই সময়ে ১৫ দিনের জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই, এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোন যৌথ কার্যক্রমকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রসীমার পুরোটা জুড়ে মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিলের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাওয়া এরই অংশ। কেননা, বাংলাদেশ প্রণীত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখার’ ১৫টি অভিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে ২ টি লক্ষ্য হচ্ছে, “ভৌত, প্রাতিষ্ঠানিক, জ্বালানি, ডিজিটাল এবং মনুষ্য পর্যায়ে সংযুক্তির প্রসার…” এবং “সকলের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর…”। এ সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়কে এভাবে সামনে আনলে প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হয় আসলে সম্ভাবনা কার জন্য(!)। সুতরাং, এই বিষয়কে বিচ্ছিন্নভাবে দেখে বিশেষজ্ঞদের কথায় বিভ্রান্ত না হওয়াই শ্রেয়। বিষয়টা যতটা না বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা পূরণের অংশ তার চেয়ে বেশি মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের নেটওয়ার্ক সুদৃঢ় করা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক এসময়ে সরকারের মার্কিন আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হওয়ার এমন দৌড়ঝাপ কেন? বিষয়টাও খুব সু-স্পষ্ট হয় যদি কিছুদিন আগের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমরা লক্ষ্য করি। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে হটিয়ে দিয়ে সরকার বদলের চেষ্টা করছে”। তাই যেকোন চিন্তাশীল ব্যক্তিরই এই বিষয়টা বুঝতে বাকি রবেনা যে, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ দালাল সরকার দেশের সম্পদ, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা আমেরিকার হাতে তুলে দিতে নূন্যতম দ্বিধা করছে না। এবং এটি বাস্তবায়নে এধরণের দালাল শাসকগোষ্ঠী কোন ধরণের ষড়যন্ত্র, নাটক ও বিশ্বাসঘাতকতায় লিপ্ত হতে কার্পণ্য করে না। এই অবস্থায় উম্মাহ্’র সচেতন ও নিষ্ঠাবান অংশ যদি এটিকে রুখে না দাঁড়ায় তাহলে উম্মাহ্র ধ্বংস অনিবার্য। তাই আমাদেরকে অবশ্যই সর্বশক্তি দিয়ে এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় রুখে দাঁড়াতে হবে। যা সম্ভব শুধুমাত্র ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে। কেননা, খিলাফত ব্যবস্থাই উম্মাহ্’র বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্রে ইসলাম প্রবর্তিত ঢাল। যা উম্মাহ্কে কাফের সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থের হাতিয়ার হওয়া থেকে রক্ষা করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম (খলীফা) হলো সে ঢাল যার পেছনে দাড়িয়ে মুসলিমরা লড়বে এবং কাফেরদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে”- (মুসলিম)। আল্লাহ্ সুবাহানাহু তা’আলা বলেন, “এবং আল্লাহ্ কখনো মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না” [সূরা-নিসা-১৪১] । যার বাস্তবতা আমরা পরিলক্ষিত করবো শুধুমাত্র খিলাফতের মাধ্যমে। কারণ, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা পেতে হলে তাঁর দেওয়া দ্বীন তথা ইসলামের অধীনেই চলতে হবে। না হয় কখনোই আল্লাহ্’র নিরাপত্তার বলয় আমাদের উপর থাকবেনা।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা”
খবরঃ
সোমবার (২৪ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক, জ্ঞান-ভিত্তিক, উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য রাখে। এক্ষেত্রে দেশের ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে ইন্দো-প্যাসিফিকের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক’ হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশ তাই এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকলের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি অবাধ, উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক কার্যক্রম এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার প্রচেষ্টাও থাকবে বাংলাদেশের। (www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-145282)
মন্তব্যঃ
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কিংবা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধীদলগুলোর নিকট একমাত্র আশা সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা, তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধী দলগুলো কিভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ একে অন্যের চেয়ে বেশী আদায় করতে পারবে এই আশ্বাস দেয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। তাই ব্রিটেনপন্থী হাসিনা সরকার ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনায় যোগদানে সম্মতি দিতে দীর্ঘ সময় গড়িমসি করলেও আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে “আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা” করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব দালাল শাসক ও রাজনীতিবিদরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবীর কাছে নতি স্বীকার করবে এটাই স্বাভাবিক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে একটি ঘুঁটি হিসাবে বিবেচনা করছে কারণ চীনের প্রভাব ঠেকাতে এই অঞ্চলে ভারতকে শক্তিশালী করতে এটি তার প্রয়োজন। ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশ এখন নব্য উপনিবেশিকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, সাম্রাজ্যবাদীদের ব্যাপক আনাগোণা সেই উদ্বেগের বিষয়টিরই জানান দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও সম্পদ মার্কিন-ভারতের স্বার্থে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য ছিল এই অঞ্চলে ভারত ও জাপান উভয় দেশের প্রভাবের ক্ষেত্র বাড়ানো এবং সেইসাথে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এর মোকাবিলা করা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, বাংলাদেশে চীনের অর্থায়নের বিপরীতে জাপানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা অনুমোদন করেছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা বাস্তবায়নের অন্যতম প্রজেক্ট। এই বন্দরের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি লক্ষ্যই পূরণ করতে চায়। এই বন্দরটি ভারতের উত্তর-পূর্বে সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটকে সংযুক্ত করবে এবং কৌশলগত বন্দরটির নিয়ন্ত্রণ চীনের সামরিক কার্যকলাপের পথও অবরুদ্ধ করবে ও বঙ্গোপসাগরের যেকোনো স্থানে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বাধা তৈরি করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত লক্ষ্যগুলো হল চীনের প্রভাবকে খর্ব করা এবং উন্মুক্ত সমুদ্র এলাকা ও নৌ চলাচলের স্বাধীনতার নামে চীনকে ঘিরে সমুদ্রকে সামরিকীকরণ করা, হোক সেটা সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ, অথবা এশিয়ান চীন-বিরোধী সংযোগ, যেমন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং অন্যান্যদের প্রত্যক্ষ সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে। তবে মার্কিন নৌবাহিনীর মোতায়েন এবং প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং লোহিত সাগর পর্যন্ত তার ঘাঁটির বিস্তার শুধুমাত্র চীনের প্রভাব সীমিত করার জন্যই নয়, বরং এই অঞ্চলে ইসলামি শক্তি “খিলাফত রাষ্ট্র” এর পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করতেও। এই অঞ্চলের অন্যান্য দালাল সরকারগুলোর মতো বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন (হাসিনা সরকার) ও বিরোধী দলগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অংশীদারিত্ব বা চুক্তির নামে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে বাধাগ্রস্ত করা এবং এই অঞ্চলে ইসলামি শক্তি “খিলাফত রাষ্ট্র” এর পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করতে যা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত!
এসব দালাল শাসক ও রাজনীতিবিদদের নিজস্ব রূপরেখা তৈরির দৃষ্টি বা ইচ্ছা নেই, বরং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সম্পূর্ণরূপে সাম্রাজ্যবাদীদের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য উম্মাহ্’র এখন এসব দালাল শাসকদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নবুওয়্যাতের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। খিলাফত রাষ্ট্র কখনোই অন্য রাষ্ট্রের আধিপত্য মেনে নেবে না। উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খিলাফত রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। এসব রাষ্ট্রের সাথে উম্মাহ্’র স্বার্থবিরোধী যে সমস্ত চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করবে এবং অন্য রাষ্ট্রের সাথে এমন কোন সামরিক চুক্তি কিংবা অর্থনৈতিক চুক্তি করবে না যাতে উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব খর্বিত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র খিলাফত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ “এবং আল্লাহ্ কখনোই মু’মিনদের বিরুদ্ধে কাফিরদের (জয়লাভের) জন্য কোন পথ রাখবেন না।” [সূরা আন-নিসাঃ ১৪১]।
- সুজন হোসেন
“সেপ্টেম্বরে শুরু আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ”
খবরঃ
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে কলকাতায় ট্রেনে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩২ ঘণ্টা। আগামী সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই সময় কমে দাঁড়াবে ১০ ঘণ্টা। আগরতলা থেকে কলকাতার শিয়ালদহতে ট্রেন পৌঁছাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ে মাত্র ১০ ঘণ্টায়। নব-নির্মিত আগরতলা-আখাউড়া লাইন দিয়ে এই ট্রেন যাবে। ত্রিপুরার পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় দূরদর্শন। সুশান্ত জানিয়েছেন যে, আগরতলা-আখাউড়া রেললাইনের ভারতের দিকে ৮৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের দিকে ৭৩ শতাংশ কাজ হয়ে গেছে। বাকি যেটুকু কাজ আছে তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে হয়ে যাবে বলে তার নিশ্চিত ধারণা। উল্লেখযোগ্য, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে কলকাতায় আসতে এখনও বিমানপথই ভরসা। কারণ, ট্রেন চলে অনেক ঘুরপথে। আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ট্রেন চললে যাত্রীরা আগরতলা থেকে কলকাতায় অনেক কম সময়ে পৌঁছাতে পারবেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হয়ে। (mzamin.com/news.php?news=52346)
মন্তব্যঃ
নিঃসন্দেহে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথটি ভারতের জন্য একটি লাভজনক প্রকল্প। প্রকল্পটি ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে ত্রিপুরার রাজ্যের যোগাযোগকে আরও সহজ করবে যার ফলে ভারতের নাগরিকদের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের যাতায়ত ও পণ্য পরিবহণ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলেও প্রকল্পটি বাংলাদেশর জন্যে একটি অলাভজনক এবং ক্ষতিকর প্রকল্প। বর্তমানে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অন্যতম রফতানি গন্তব্য হচ্ছে ত্রিপুরার রাজ্য। শুধুমাত্র ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে থেকে ৭১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকার পণ্য ত্রিপুরা রাজ্যে রফতানি করা হয়। কিন্তু এই ট্রেন পথটি চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের পণ্য রফতানিকারকরা শুধুমাত্র এই রাজ্যের বাজার হারাবেনা বরং এই পথটি অতি ব্যবহারের ফলে রেল পথের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, রেলজট এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সরকার নানা অজুহাতে দেশের জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় এবং আর্থিকভাবে লাভজনক রেল প্রকল্পগুলো গ্রহণ করছে না, অথচ ভারতের স্বার্থে ভারত থেকে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভ-ক্ষতির হিসাব একবারে উপেক্ষা করে জনগণকে ঋণ পরিশোধের দায় এবং রেলপথ নির্মানের জন্য কৃষিজমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে। নতজানু এই সরকার এখানেই ক্ষন্ত হয় নাই বরং প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ দিয়েছে একটি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সম্যাকোকো। সুতরাং, বাংলাদেশের জনগণের টাকায়, উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিযুক্ত, অর্থিকভাবে অলাভজনক, নতজানু বিশ্বাসঘাতকতার অবকাঠামো প্রকল্পের একটি উদাহরণ হচ্ছে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথ প্রকল্প। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দিবালোকের মত সুস্পষ্ট এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রকল্পটি সরকার কেন গ্রহণ করছে? কারণ সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরি করা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সেই সকল রাজনৈতিক দলগুলোকেই ক্ষমতায় বসানো হয় যারা সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থরক্ষায় নিবেদিত প্রাণ। ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়কে মেনে নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তাই মুখে যাই বলুক তাদের পক্ষে এই বলয় থেকে বের হওয়ার কোন পাথ থাকে না। গত ১০ই এপ্রিল সংসদে শেখ হাসিনার বলে, “যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে”। তাই এই সকল নতজানু ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনীতিবিদদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু কি আসা করা যায়? বিশ্বাসঘাতক এই সকল রাজনীতিবিদ এবং নতজানু প্রকল্প থেকে মুক্তি পেতে হলে ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনীতিকে প্রত্যাখান করে ইসলামের রাজনীতি (সিয়াসত-উম্মাহ্’র বিষায়াদি রক্ষণাবেক্ষণের) গ্রহণ করার মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের তৈরি করা দাসত্বের বিশ্বব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রের ছায়াতলে মানবজাতি সাম্রাজ্যবাদসহ সকল প্রকার দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরও বলেন: “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে পাঠিয়েছি সত্যসহ, সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী হিসেবে” [সুরা আল বাকারা: ১২৯]।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“রাজসিক সংবর্ধনায় সিক্ত বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ”
খবরঃ
বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে দুই মেয়াদে দীর্ঘ সময় অর্থাৎ ১০ বছর ৪১ দিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর অবশেষে সোমবার বঙ্গভবন ছাড়লেন সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।..এ সময় বঙ্গভবনে তাকে দেওয়া হয় বিদায়ী গার্ড অব অনার। লাল গালিচা সংবর্ধনার পাশাপাশি পুষ্পশোভিত গাড়িতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় জানানো হয় তাকে। প্রথমবারের মতো কোনো রাষ্ট্রপতি এমন রাজসিক আয়োজনে বঙ্গভবন ছাড়লেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার যেটুকু সাফল্য, সেজন্য তিনি দেশের মানুষের কাছে, এলাকার মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেজন্য তার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। (www.jugantor.com/national/668029)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি, কিন্তু অদ্ভুদ বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি চাইলেই কিন্তু কোনরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। মূলত এই পদটি একটি অলংকারিক পদ। এবং এখানে যারা আসন গ্রহন করেন তারা নিঃসন্দেহে ক্ষমতাসীন দলের অতি আস্থাভাজন। এবং এই আসন হচ্ছে তাদের দলের প্রতি তাদের অন্ধভক্তির পুরস্কারস্বরূপ। সুতরাং এই পদে যারা আদিস্ট হয় তারা সরকারের জুলুম-নির্যাতন এবং অন্যান্য অপরাধের নিরব সম্মতি প্রদানকারী। তাই এই পদে ১০ বছর কেন ১০ হাজার বছর থাকলেও কোন কৃতিত্বের স্থান নেই। আর্থিক সুবিধা, নিরাপত্তা আর বিলাসবহুল জীবন-ই হচ্ছে এসকল পদের মূল আকর্ষন। বস্তুত সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাজনীতি করার উদ্দেশ্যই মূলত ভোগ বিলাস আর ক্ষমতার রশি ধরে নিজের ভবিষ্যতকে আলোকিত করে তোলা। সেখানে রাষ্ট্রপতির পদও দিনশেষে একটি লাভজনক ভেঞ্চার ছাড়া আর কিছু নয়।
সদ্য সাবেক এই প্রেসিডেন্ট জনাব আব্দুল হামিদের নাম সর্বশেষ শক্তিশালী উসমানী খলীফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদের নামানুসারে। কিন্তু হায়! কোথায় সেই শক্তিশালী খলীফা আবদুল হামিদ আর কোথায় এই সেক্যুলার ব্যবস্থার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ! নিম্নবর্ণিত এই তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো প্রকৃতপক্ষে আমাদের কোন ধরণের শাসকের প্রয়োজন।
জাতীয়তাবাদ এবং সেক্যুলারিজমের রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশী আবদুল হামিদরা নিজের দেশের জনগণের কাছেই সম্মান পান না। আল্লাহ’র দেয়া জীবনবিধান পরিত্যাগ করে এরা মানুষের তৈরী জীবনবিধান বাস্তবায়নে সিদ্ধহস্ত। তাই এদেরকে লোকজন জালিম ছাড়া আর কিছুই মনে করে না। অন্যদিকে, খলীফা আবদুল হামিদ ছিলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের একজন শাসক। যিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আইন দ্বারা মুসলিমদের শাসন করতেন। যিনি ছিলেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহ’র অভিভাবক। উসমানী খিলাফতের অধীন অঞ্চলসমূহ যেমন, তুরস্ক, ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, হেজাজ, বলকান, উত্তর আফ্রিকা এবং উসমানী খিলাফতের বাইরের মুসলিম ভূমিসমূহ যেমন, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি এমনকি পশ্চিমা দেশসমূহ এবং চীনের মুসলিমদের কাছেও তিনি ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি Shaikh William Henry Abdullah Quilliam’কে (যিনি ১৮৮৭ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং লিভারপুলে বৃটেনের প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন) British Isles and Dominions এর জন্য শায়খ-উল ইসলাম হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এবং Mohammed Alexander Russell Webb’কে New York এর Honorary Consul হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।
সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদদের নিকট রাষ্ট্রপতির এই পদটি একটি চাকরি বৈ আর কিছুই নয় যেখানে রয়েছে নিরাপত্তা আর ভোগের সকল সমাহার। বোবা পাখির মত দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে চুপ করে থাকলেই জীবন সুন্দর। সংসদে আর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাস্যকর বক্তব্য দেয়া কিংবা বলিউডের নায়িকাদের নিয়ে নিম্নমানের জোকস বলা আর দুই ঈদে বিদেশী কূটনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী আর সেলিব্রেটিদের সাথে করমর্দন আর কুলাকুলি করা যার কর্ম তার কাছ থেকে এর বেশী চাওয়াটাও অন্যায়। অন্যদিকে খলীফা আব্দুল হামিদ ছিলেন তার সময়কার সেরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদ যার ছিল দুর্লভ রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি। উসমানী খিলাফতকে অস্থিতিশীল করার পশ্চিমা ষড়যন্ত্রসমূহকে তিনি সফলভাবেই নস্যাৎ করতে সক্ষম হন। এমনকি পশ্চিমাদের পাতা বিভিন্ন ফাঁদ থেকেও তিনি খিলাফতকে রক্ষা করেন। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইউরোপের অন্যতম একজন সেরা রাষ্ট্রনায়ক Otto Von Bismark বলেন, “Of all the intelligence in Europe, 90% is in Abdul Hamid, 5% in myself, and 5% in everyone else.” জার্মানির Kaiser Wilhelm বলেন, “I have learned politics from Abdul Hamid.”
ফ্রান্স, ভারত কিংবা অন্যান্য কাফির রাষ্ট্রসমূহ যখন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ), আল-কুরআন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় তখন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদদের মত সেক্যুলার শাসকরা বাকস্বাধীনতা আর অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ধোঁয়া তুলে নিজেদের পিঠ বাচানোর চেষ্টা করে। এরা নিজেদের ক্ষমতার গদিকে ঠিক রাখতে ইসলামের অপমানের সময়ও অপমানকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে কুন্ঠাবোধ করে না। কিন্তু খলীফা আব্দুল হামিদ রাসুলুল্লাহ্’র সম্মান রক্ষার্থে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে ফরাসী লেখক Henri de Bornier একটি এন্টি ইসলামিক নাটক রচনা করেন যার নাম ছিল “Mahomet”। ফরাসী সরকার খলিফাকে বলেন যে, এই নাটক ফরাসী দখলকৃত মুসলিম ভূমি আলজেরিয়া ও তিউনিশিয়াতে মঞ্চস্থ করা হবে না। ফরাসী সরকার উসমানী রাষ্ট্রদূতকে নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যে, এই নাটকের মাধ্যমে ইসলামের উপর কোন আঘাত আসবে না। তথাপি, খলীফা আবদুল হামিদ ফ্রান্সের উপর এত বেশী পরিমাণ কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেন যে, ফ্রান্স অবশেষে ফ্রান্সের মধ্যেই এই নাটক মঞ্চস্থ করা নিষিদ্ধ করে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সেক্যুলার সরকার যেখানে দখলদার ইসরাইলীদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে, জনগণের পিছনে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য প্রযুক্তি ক্রয় করে, ইসরাইলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাসপোর্ট থেকে ইসরাইলের নাম মুছে দেয়, সেখানে খলীফা আবদুল হামিদ তার জীবিত অবস্থায় ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে অভিশপ্ত ইহুদীদের বসতি স্থাপনের অনুমতিই দেননি। ১৯০১ সালে যখন জায়নবাদী নেতা থিওডর হার্জল ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের প্রস্তাবনা নিয়ে আসে (যার বিনিময়ে সে খলিফাকে বিশাল পরিমানে অর্থ প্রদান করার প্রস্তাবনা দেয় যা দিয়ে উসমানী খিলাফতের মোট ঋণের ২০ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব) তখন তিনি সেই প্রস্তাব আপোসহীনভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সুলতান আব্দুল হামিদ বলেন, “I cannot sell even a foot of land, for it does not belong to me, but to my people. My people have won this empire (i.e. the Khilafah) by fighting for it with their blood and have fertilised it with their blood. We will again cover it with our blood before we allow it to be wrested away from us… The Turkish Empire (i.e. the Khilafah) belongs not to me, but to the Turkish people (i.e. the Ummah). I cannot give away any part of it. Let the Jews save their billions. When my Empire is partitioned, they may get Palestine for nothing. But only our corpse will be divided. I will not agree to vivisection.”
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তার দল এবং তাদের দালাল সতীর্থ মোহাম্মাদ বিন সালমান যখন একযোগে হজ্জ যাত্রার খরচ বাড়িয়ে হজ্জকে তুলনামূলকভাবে মুসলিমদের জন্য কঠিন করে তুলেছে ঠিক তখনই মুদ্রার উল্টাপিঠে আমরা দেখতে পাই খলীফা আবদুল হামিদের হাজীদের সুবিধার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা। তিনি হজ্জ যাত্রাকে সহজ করার জন্য হেজাজ রেলওয়ে প্রজেক্ট হাতে নেন যা মদিনাকে ইস্তাম্বুলের সাথে সংযোগ স্থাপন করাতে সক্ষম হতো। তখনকার সময়ে হাজীদের জন্য দীর্ঘ যাত্রার কষ্ট দূরীভূত করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার জন্যই এই রেলপথ নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি হারামাইনেরও যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন করেন।
খলীফা আবদুল হামিদ ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরকে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ফান্ডিং করেন যাতে তিনি পাস্তুর ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, এবং সেখানে যাতে তিনজন উসমানী খিলাফতের বিশেষজ্ঞ ট্রেনিং নিতে পারেন সে ব্যবস্থাও করেন যারা পরবর্তীতে রেবিস ভেক্সিন তৈরীর কাজ শুরু করেন। অথচ সেক্যুলার আব্দুল হামিদ এবং তার দলীয় সরকার দেশে করোনার ভ্যাক্সিন তৈরী না করেই উচ্চ মূল্যে বিদেশী ভ্যক্সিন ক্রয়ের মাধ্যমে জনগণের টাকা লুটপাটের মধ্যে ব্যস্ত ছিল।
সুতরাং, সেক্যুলার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মতই দুর্বল শাসকদের জন্ম হবে যারা পশ্চিমাদের দাসখত দিয়ে সেক্যুলারিজম আর পুঁজিবাদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় আসে। তাই এদের মাধ্যমে আমাদের কোনরকম উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে খলীফা আবদুল হামিদের মত শাসক যদি আমরা নিয়োগ দিতে পারি তাহলে দেশে ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের অবস্থানের উন্নতি হবে। ইসলামের সম্মান রক্ষা হবে। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই আবদুল হামিদের মত খলীফা নিয়োগ দিতে গিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
- মো. হাফিজুর রহমান