শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রামে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ

 



খবরঃ

তিন দিনের শুভেচ্ছা সফরে যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ফিৎসজেরাল্ড( USS Fitsgerald) বাংলাদেশের জলসীমায় পৌঁছেছে। গতকাল বুধবার জাহাজটি চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলে প্রবেশ করলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা আবু উবাইদাহ তাদের অভ্যর্থনা জানায়। এ সময় দুই দেশের নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। গতকাল বুধবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর সদস্যরা পেশাগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বিনিময়ের সুযোগ পাবেন। এতে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইএসপিআর আরো জানায়, এই সফর দুই দেশের নৌ সদস্যদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যেখানে তাঁরা পেশাগত উৎকর্ষ ও আধুনিক নৌ প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। ২০২২ সালেও যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর একটি জাহাজ শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে এসেছিল। আগামী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের জলসীমা ত্যাগ করবে ফিৎসজেরাল্ড। (https://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2025/10/09/1588874)  

মন্তব্যঃ 

চট্টগ্রাম বন্দরে শুভেচ্ছা সফরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ পাঠানো মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক উচ্চাকাঙ্ক্ষারই অংশবিশেষ। “USS Fitsgerald” জাহাজটি মূলত Aegis Radar ও Intelligence collection system সম্পন্ন এক ধরনের Guided Missile Destroyer যুদ্ধজাহাজ যা একসঙ্গে বিশাল সমুদ্রাঞ্চল স্ক্যান করে জাহাজ, বিমান, সাবমেরিন ও মিসাইল সনাক্ত করতে পারে এবং সেগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি রিপোর্টে এ ধরনের যুদ্ধজাহাজ ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে মোতায়েনের পরিকল্পনা স্পস্ট বলা আছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান প্রণালীতে Freedom of Navigation বজায় রাখতে এ ধরণের Guided Missile Destroyer যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। কারণ চীন বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগর ও বঙ্গোপসাগরে Surveilance vessels ও Submarinine patrols দিয়ে তার সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, ইন্দো প্যাসিফিকের গেটওয়ে বঙ্গোপসাগরে এ ধরনের যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ চোকপয়েন্ট (chokepoint) ও চীনের জ্বালানি সরবরাহের অন্যতম রুট  মালাক্কা প্রণালীর উপর শক্তিশালী নজরদারি নিশ্চিত করতে চায়। সেইসাথে এই যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে প্রবেশে চীনের ব্যাকডোর এবং চীনের বিকল্প জ্বালানি রুট হিসেবে পরিচিত কুনমিং-কিয়াকফিউ করিডোরকে সামুদ্রিক নজরদারির আওতায় আনতে চায়। এছাড়া এ ধরনের যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ কিংবা মোতায়েনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের পেশাগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হলেও তা ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিনীদের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ম্যারিটাইম সিকুইরিটি ইনিশিয়েটিভে(Maritime Security Initiative) সংযুক্ত করেছে যার আওতায় তারা বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডকে রাডার, নজরদারি ও তথ্য-আদান প্রদান প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করছে। এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি Regional Security Contributor হিসেবে গড়ে তুলতে চায় যাতে বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড বঙ্গোপসাগরে চীনের নৌ উপস্থিতি মোকাবেলা ও মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে নৌ-নিরাপত্তা ও নজরদারিতে ভূমিকা রাখতে পারে। উপরন্তু, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া-পূর্ব এশিয়া তে তেল ও LNG প্রবাহের লাইফ লাইন ও গুরুত্বপূর্ণ Energy Shipping Route। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে একটা সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে এই Energy Shipping Route এর নিরাপত্তায় সক্রিয় অংশীদার  বানাতে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সেলারেট এনার্জি এলএনজি টার্মিনালে বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার এই কোম্পানির সাথে ১ লক্ষ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি চুক্তি করেছে! এভাবে বাংলাদেশে মার্কিন সৈন্য সমাবেশ, যৌথ মহড়া ও চট্টগ্রাম বন্দরে যুদ্ধজাহাজ প্রেরণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ঘিরে ফেলার নীতি(China Encircle Policy) এবং বাংলাদেশকে তার অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। 

সুতরাং, তথাকথিত শুভেচ্ছা সফর ও নিরাপত্তা সহযোগিতার অজুহাতে ফিলিস্তিনে গণহত্যায় অভিশপ্ত ইহুদীদের মদদদাতা আমেরিকার যুদ্ধজাহাজকে মুসলিম নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা আবু উবাইদাহ কিভাবে স্বাগত জানাতে পারে যখন এটা এ অঞ্চলে আমেরিকার কৌশলগত নীল-নকশা বাস্তবায়ন ও মুসলিমদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে? এ ধরনের যুদ্ধজাহাজ প্রেরণের পেছনে আমাদের  শত্রু রাষ্ট্র আমেরিকার ক্ষতিকর উদ্দেশ্য(Malicious Objectives) ব্যতীত অন্য কিছুই নেই । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কাফিরদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে (কাফের এবং মুশরিকদেরকে) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ” (সুরা আল ইমরানঃ১১৮)। তাই কাফির শত্রু রাষ্ট্র আমেরিকার যেকোন অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তি, জোট এবং নিরাপত্তা সহযোগিতায় মুসলিম সামরিক বাহিনীর অংশীদার হওয়া ইসলামী শরীয়াহ পরিপন্থী। মুসলিমদের যুদ্ধজাহাজ কাফিরদের যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে, আমাদের ট্যাঙ্ক তাদের ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে, আমাদের যুদ্ধবিমান তাদের যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে এবং আমাদের সৈন্যদের তাদের সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে হবে। 

    -    কাজী তাহসিন রশীদ 


Previous Post Next Post