Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 87

 



Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৮৭ তম সংখ্যা । ৬ মে, ২০২৩


এই সংখ্যায় থাকছে:


“নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ৩ দেশ সফরঃ রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ” 

“বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেল ভারত”

“ওসি হারুন: সিস্টেমের মহানগরে সিস্টেমবাজ সুপারহিরো”

“পর্নোগ্রাফির ফাঁদ”

“বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রয়োজন: আইএমএফ প্রধান”

“ওয়াশিংটনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি, সংঘর্ষ”

“স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেত্রী নিপুণ” 





“নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ৩ দেশ সফরঃ রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ” 

খবরঃ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফর শুধু কূটনৈতিক নয়; বরং রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনের আগে সফরে রাজনীতির দৃশ্যমান কর্মকান্ড না থাকলেও একটা বাতাবরণ লক্ষণীয়। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে অপ্রকাশ্য রাজনীতির বার্তা কী তা জানার কৌতূহল প্রবল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে জাপান সফর শেষ করছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে সফরে গেছেন। তার সফরের শেষ দিকে নতুন ব্রিটিশ রাজার রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগে…তিন দেশ সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে কিনা জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, যে কোন উচ্চপর্যায়ের সফরেই অতিরিক্ত রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকতেই পারে। (https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/669745/রাজনৈতিকভাবেও-তাৎপর্যপূর্ণ)

 

মন্তব্যঃ 

বাংলাদেশে আমরা সবসময় দেখে আসছি নির্বাচনের আগে প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের উচ্চপর্যায় বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বৈদেশিক সফর করেন। এই সফরগুলো সাধারণত ঐসব দেশেই হয়ে থাকে যেসব দেশের রাজনৈতিক আধিপত্য কোন না কোনভাবে বাংলাদেশের উপর রয়েছে। তাই এই ধরণের সফরে কিংবা সফরের আগে সফরকৃত রাষ্ট্রের প্রতি শাসকগোষ্ঠির বিশেষ বার্তা কিংবা প্রতিশ্রুতি থাকে, যেমনটি এবারের ত্রিদেশীয় সফরের আগে স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা দেখতে পাই সফরের ঠিক আগমুহুর্তে হাসিনা সরকার ১৫টি অভিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে “ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা” ঘোষণা করেছে। মূলত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য আমেরিকা কর্তৃক তৈরিকৃত আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মৈত্রী কোয়াডে অংশগ্রহণের জন্য গত কয়েক বছর ধরেই চাপ ছিলো বাংলাদেশের উপর। (দেখুন “ইন্দো-প্যাসিফি স্ট্রাটেজিঃ যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীন-কার দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ?”)। গত ১০ এপ্রিল ২২তম সংসদীয় অধিবেশনে মিথ্যে বাহাদুরি দেখিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন চাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে, অথচ তার কয়েকদিনের মাথায় হাসিনা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করে সেই মার্কিন পরিকল্পনাই গ্রহণ করে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সফরের পূর্বে ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা, মার্কিন কোম্পানী এক্সনমোবিলকে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রসীমায় অবস্থিত ১৫টি (প্রায় সবকটি) হাইড্রো-কার্বন ব্লক তুলে দেওয়া, সোনাদিয়ায় চীনা গভীর সমুদ্র-বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে মার্কিন কোয়াডের মিত্র জাপানকে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর তুলে দেওয়া এবং সফরকৃত দেশ জাপানের সাথে “সামরিক সরাঞ্জামাদি ক্রয়াদেশ” জারি (সূত্রঃ যুগান্তর) এর সবকিছু করে হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট যে বার্তা তুলে ধরছে তা হচ্ছে, এই অঞ্চলে মার্কিনীদের স্বার্থে মুসলিম উম্মাহ্‌’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব মার্কিনীদের হাতে তুলে দিতে তার চেয়ে উত্তম গোলাম বর্তমানে আর কেউ নাই। সুতরাং, তাকে যাতে পরিবর্তনের চেষ্টা করা না হয়।  তাইতো এর পরক্ষণেই আমরা দেখছি মার্কিন অন্যতম সাম্রাজ্যবাদী সংস্থা আইএমএফ প্রধান ক্রিসটালিনা জর্জিভা বলে, “বাংলাদেশের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নেতৃত্ব দরকার”। এ যেন গোলামের প্রতি মনিবের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার আস্থা সার্টিফিকেট। সবশেষে, যুক্তরাজ্য সফরের মাধ্যমে যেন শেখ হাসিনা তার প্রকৃত মনিবকে পুরো সফরের আপডেট দিতে গেল। যদিওবা যুক্তরাজ্য এখন আমেরিকান আধিপত্যের বিপরীতে আর আগের মতো শক্তিশালী নয়, তাই তার অন্যতম ভু-রাজনৈতিক লক্ষ্যই থাকে তার দালাল শাসকদের দ্বারা আমেরিকার ফরেন পলেসিতে সামিল থেকে তার ‘Share in the Cake’ ঠিক রাখা। তার দালাল হাসিনা সরকারের মাধ্যমে আমেরিকান আইপিএস-এ যুক্তরাজ্যও জড়িত। হাসিনা সরকার নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে মার্কিনীদের স্বার্থরক্ষায় অগ্রগামী হলেও ব্রিটিশ গোলামীকে পরিত্যাগ করেনি।

এধরণের ধর্মনিরপেক্ষ গোলাম শাসকদের তাদের কাফের সাম্রাজবাদী প্রভুদের গোলামী করার বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা ছাড়া আলাদা কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। এদের পরিচয় হচ্ছে পশ্চিমা-কাফেরদের গোলাম এবং কাফেরদের গোলামি করার মধ্যেই এরা স্বার্থকতা খুঁজে। এটাই হল ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফত পতন পরবর্তী পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার মনিব-ভৃত্যের রাজনীতি (master-servant politics) যেটার জালে মুসলিম বিশ্ব আস্টেপৃষ্টে আছে। সুতরাং, বাস্তবতা হচ্ছে এরা যতদিন থাকবে ততদিন বিভিন্ন উপায়ে কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে ইসলাম এবং মুসলিম উম্মাহ্‌’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকে ত্বরান্বিত করবে। এবং উম্মাহ্‌র সূর্যসন্তান নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারদেরকে বিভিন্ন জোট বা কোয়াডের ছুতোয় কাফেরদের স্বার্থের ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করবে। তাই এই অবস্থা থেকে রক্ষায় করণীয় এধরণের গোলামদেরকে ক্ষমতা থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে উম্মাহ্‌’র রক্ষাকবচ খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। কেননা, খিলাফত ব্যবস্থা উম্মাহ্‌‘কে এমন ইন্দো-প্যাসিফিক কোয়াডে মার্কিন কাফেরদের স্বার্থের ঘুটি হিসেবে বিসর্জন হওয়া থেকে ফিরিয়ে এনে সম্পূর্ণ আলাদা এমন পরাক্রমশালী পদক্ষেপ হাতে নিবে যা শুধু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেই না, বরং পুরো বিশ্বে মুসলিম উম্মাহ্‌র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে আল্লাহ্‌’র সাহায্যে, তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু” [সূরা-রুমঃ ৪-৫]

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম




“বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেল ভারত”

খবরঃ

বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে ভারত। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সই হওয়া একটি চুক্তির আওতায় এতদিন পরীক্ষামূলকভাবে বন্দর দুটি ব্যবহার করেছে দেশটি। ২৪ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জারি হওয়া স্থায়ী আদেশের মাধ্যমে সব ধরনের বাণিজ্যিক কাজে এ বন্দর ব্যবহার করতে পারবেন ভারতীয় আমদানি-রফতানিকারকরা। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বেশি লাগে। এ প্রেক্ষাপটেই ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে ‘এগ্রিমেন্ট অন দি ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তি হয়। এর আওতায় ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্যের পরিচালনা পদ্ধতির মান (এসওপি) সই হয় ২০১৯ সালে। এরপর ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট বিধিমালা জারি হয় ২০২১ সালে। যার আলোকেই সবশেষ ২৪ এপ্রিল জারি হয়েছে স্থায়ী আদেশ। (bonikbarta.net/home/news_description/338633)

মন্তব্যঃ

২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে হাসিনা সরকার একের পর এক বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে উম্মাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত সম্পদ ভারতের কাছে তুলে দিচ্ছে, যা গত ২০১৮ সালের ৩০ মে প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায়ও ফুটে উঠেছে, “আমরা ভারতকে যেটা দিয়েছি তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে”। সুতরাং সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে ভারতকে মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার এই স্থায়ী আদেশ নতুন কিছু নয়। ভারতকে ট্রানজিট দেয়াকে বৈধ করার স্বার্থে হাসিনা সরকার কিছু বক্তব্য সাজিয়েছে। যেমন, সরকারপন্থী অনেক বুদ্ধিজীবি ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার যুক্তি হিসেবে ট্রানজিটের বিনিময়ে অর্থ আয়কে একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে অর্থ আয় কতটা যুক্তিযুক্ত? যেখানে প্রতিনিয়ত আমাদের বর্ডারে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকদের রক্ত ঝড়ছে আর আন্তঃনদী সমূহের পানির হিস্যা প্রতিনিয়তই হ্রাস পাচ্ছে সেখানে ট্রানজিটের মাধ্যমে অর্থ আয়ের বক্তব্য নিতান্তই হাস্যকর। অন্যদিকে ভারতীয় যানবাহনের পরিবহনের সুবিধা দিতে গিয়ে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে যা খরচ হয় সে তুলনায় ভারতের দেয়া অর্থ খুবই অপ্রতুল। পাশাপাশি অনেক বুদ্ধিজীবীদের ভাষ্যমতে, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সাথে সাথে ভুটান ও নেপালের সাথে যদি বাংলাদেশ আঞ্চলিক ট্রানজিট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে তাহলে বাংলাদেশের জন্যও তা লাভজনক হবে। 

সরকারপন্থীরা যেমন শুধুমাত্র ভারতকেই চোখের সামনে দেখছে একইভাবে জাতীয়তাবাদী বিরোধী পক্ষরাও ভারতবিদ্বেষী বক্তব্যের মাধ্যমেই বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখছে। এটি জনগণের সাথে জাতীয়তাবাদীদের আরেকটি প্রতারণা। এরা ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও ভারতের এই আগ্রাসন যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সে বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। মূলত বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের ট্রানজিট কিংবা ট্রান্সশিপমেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেরই আরেকটি প্রদর্শন। যেমন, ফেনী নদীর উপর নির্মিত ‘মৈত্রী সেতু’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে Think Tank Centre For Social And Economic Progress এর ফেলো Constantino Xavier বলেন, “There’s a huge demand in the region for export facilitation within the Indo-Pacific economies and so this bridge (Maitri Setu) is ultimately the ground zero for India’s Neighborhood First Policy, Act East Policy and Indo-Pacific Policy.” দেশে বিদ্যমান ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করলেও তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের পরিকল্পনার ব্যাপারে নীরব থাকাকেই জাতীয়তাবাদীগোষ্ঠীরা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করছে। গত ২৪ এপ্রিল হাসিনা সরকার তার ইন্দো-প্যাসিফিক ‘রূপরেখা’ ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজের অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা করার পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলকে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ দেয়ার ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি প্রদান করেছে, যে ব্যাপারে তারা নীরব।

এসকল বিক্রি হয়ে যাওয়া শাসক ও রাজনীতিবিদদের দিয়ে এদেশের জনগণের স্বার্থ কখনোই রক্ষা করা সম্ভব হবে না। একদিকে সরকারী দল যেমন দেশের সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, অন্যদিকে বিরোধী দলও বিভিন্ন এম্বাসীতে যোগাযোগ রক্ষা করে নিজেরা ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে। সুতরাং এসকল স্বার্থপর সেক্যুলার শাসকদের হাতে সাধারণ জনগণের স্বার্থ কখনোই নিরাপদ নয়। বরং, এরাই হল আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির পথে একমাত্র বাঁধা। আমাদের প্রয়োজন ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত ব্যবস্থা যেখানে শাসক ইসলাম কর্তৃক নির্দেশিত সুনির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী শত্রু রাষ্ট্রের সাথে আচরণ করবে, ট্রানজিট দেয়াতো দূরের কথা। উদাহরণস্বরূপ, কুরাইশদের নেতা আবু-সুফিয়ান যখন সিরিয়া থেকে তার ক্যারাভান নিয়ে মদীনার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ক্যারাভানকে আটক করার জন্য সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তিনি (সাঃ) তাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেননি। মূলত এটাই হচ্ছে শত্রুরাষ্ট্রের সাথে আচরনের সঠিক পন্থা। ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্র সবাই মুসলিম বিশ্ব ও ইসলামের শত্রু, সুতরাং এদের আধিপত্য বিস্তারে সহায়তা করা ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই আমরা দেখতে পাই যতদিন খিলাফত ছিল ততদিন ক্রুসেডার ইউরোপিয়ানরা মুসলিমদের ভূমি ব্যবহার করে ভারতবর্ষে এসে মশলার ব্যবসা করার সুযোগ পায়নি। আর তাই পর্তুগীজ, ডাচ এবং বৃটিশদেরকে বিপদসংকুল ও সময়সাপেক্ষ সমুদ্রপথেই ভারতবর্ষে আসতে হয়েছিল।

    -    মো. হাফিজুর রহমান 




“ওসি হারুন: সিস্টেমের মহানগরে সিস্টেমবাজ সুপারহিরো”

খবরঃ

তিনি ভয়ঙ্কর বুদ্ধিমান, কুটিল আর অর্থলোভী। অসহায় মানুষকে নিয়ে খেলতে-খেলাতে ভালোবাসেন। তবে তাদের ‘ক্ষতি’ করেন না। শ্রেণির প্রশ্নে তিনি বড্ড সচেতন। বড়লোকের টাকার প্রতি যত লোভ তার। গরিবের টাকায় তেমন রুচি নেই। তিনি এই মহানগরের এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর-২’ এর ওসি হারুন (মোশাররফ করিম); যিনি তার পদবীর চাইতেও অনেক বেশি ক্ষমতাধর এবং নিরঙ্কুশ। মাঝে মাঝে ‘আঙ্গুল বাঁকা করা’, বা ‘নিজেই সিস্টেমের ভূত হয়ে ওঠা’ ওসি হারুন বিবিধ আচরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেন যে, সরল মানুষের জন্য এই মহানগর নয়। ফলে মহানগরে টিকতে হলে তারই মতো ধূর্ত আর হিংস্র হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। তাই সারল্যকে তিনি কটাক্ষ করেন আর দুর্বলের প্রতিচ্ছবি মাসুমকে বলেন রাজধানী ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে। মাসুমও চলে যান শহর ছেড়ে। (https://bangla.thedailystar.net/entertainment/ওটিটি/news-474301)

মন্তব্যঃ

মহানগর-২ ওয়েব সিরিজটি বাংলাদেশে বেশ আলোড়ন ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোন নাটক, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ নিয়ে এতোটা আলোচনা হয়নি। অনেকে বলছেন, মহানগর-২ সিরিজে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো যেন সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এবং দেশে গত ১০ বছরে যা ঘটেছে তার অনেক বিষয় এই সিরিজের মাধ্যমে উঠে এসেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার ‘গোপন ডিটেনশন সেন্টারে’ জিজ্ঞাসাবাদ, বিভিন্ন ব্যক্তির টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড, একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীপুত্রের কাণ্ড-কীর্তি, একজন মেয়র ও একজন এমপির মধ্যে দ্বন্দ্ব – এসব কিছু দেখানো হয়েছে এই ওয়েব সিরিজে। এর সবকিছুকে ছাপিয়ে দেশের মানুষের কাছে ওসি হারুন চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং অনেকেই তাকে ত্রাণকর্তা হিসেবে কল্পনা করা শুরু করেছেন; যেমন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজন মন্তব্য করেছেন, ‘ওসি হারুন বারবার ফিরে আসুক বাংলাদেশে, ভিন্ন বেশে’, ‘ওসি হারুনের মত লোকই এই মুহূর্তে দরকার’ ইত্যাদি। শত অন্যায় ও অন্যায্য কর্মকান্ডে যুক্ত থাকলেও দু‘একটি ‘ভাল কাজ’ আর সস্তা ডায়লগ দিয়ে দেশের মানুষের কাছে ওসি হারুনের ‘হিরো’ বনে যাওয়া প্রমাণ করে দেশে বিদ্যমান অন্যায় আর যুলুমের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য মানুষের রয়েছে প্রবল আকাঙ্খা। এবং এটা আরো প্রমাণ করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবে যারা দেশের মানুষকে সকল যুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্ত করবে জনগণ তাদেরকে কত বিশাল সম্মান ও মর্যাদা দিবে!  

মহানগর-২ দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করলেও সচেতন জনগণের উদ্দেশ্যে একটি ‘সতর্কবার্তা’ দেওয়া প্রয়োজন। ওসি হারুনের এই গল্পের মোরাল হল কতিপয় লোক তাদের নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য দেশের শাসনব্যবস্থা বা সিস্টেমকে ব্যবহার করছে, যাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিস্টেমের ভুত’। পরিচালকের ভাষায় ‘সিস্টেমের কোনায় কোনায় ভূত’। ঊর্ধ্বতন মন্ত্রীকে না জানিয়ে কোন এক এমপি’র টাকা খেয়ে ‘গোপন ডিটেনশন সেন্টারে’ বন্দি রাখার প্রদর্শনী প্রচ্ছন্নভাবে সিস্টেমকে দায়মুক্তি দেয়। সকল যুলুম-অত্যাচারের বাহক ও জন্মদাত্রী এই সিস্টেমের মধ্যে যেন কোনো গলদ নেই, বরং গলদ এর ‘ভূতদের’ মধ্যেই নিহিত! এর অর্থ হল সিস্টেম পুরোপুরি ঠিক আছে আর এই ভুতেরা সিস্টেমকে গ্রাস করে রেখেছে। এটি একটি চরম মিথ্যাচার। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রীক-পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা একটি মানবরচিত ব্যবস্থা যেখানে শাসকের কথা ও মর্জি-ই আইন, যা সংসদ নামক আইনসভার মাধ্যমে জায়েজ করা হয়। আর শাসকদের খেয়ালখুশি মত দেশ পরিচালনার এই ব্যবস্থার কারণেই দেশের সকল যুলুম-অত্যাচারের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এই সিস্টেম বা ব্যবস্থাই দেশে বিদ্যমান সকল সমস্যার জননী এবং এই গণতান্ত্রীক-পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা এমন একটি নোংরা ও অথর্ব ব্যবস্থা যার কোন ‘স্যালভেজ ভ্যালু’ নেই। অর্থাৎ, এই ব্যবস্থার কোন একটি অংশেরও নূন্যতম মূল্য নেই এবং একে সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করতে হবে এবং এর মধ্যেই দেশের সকল সমস্যার সমাধান নিহীত রয়েছে।

দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদাবাজী, ব্যাংক-লুট, ডলার-পাচার, খুন, গুম, দলীয় সন্ত্রাস, ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ, নৈতিক অবক্ষয় ও অসামাজিক কর্মকান্ড, কিশোর গ্যাং, টেন্ডারবাজী, অপরাজনীতি, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, বৈদেশিক নগ্ন হস্তক্ষেপ এসবই হল নিতান্ত উপসর্গ মাত্র; মূল সমস্যা হল এই মানবরচিত শাসনব্যবস্থা (সিস্টেম) যেখানে শাসকশ্রেণী ও সংসদকে ‘ইলাহ্‌’ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থার ধারক-বাহকরা তা ভাল করেই জানে, আর এজন্যই ‘সিস্টেমকে’ আলোচনার বাইরে রেখে কতিপয় ব্যক্তির উপর দায় চাপানোর সকল আয়োজনে তারা প্রকাশ্য কিংবা মৌন সমর্থন দেয়। এভাবেই এই সিস্টেমের সফট পাওয়াররা (soft power) সিস্টেমের পক্ষে ‘সম্মতি উৎপাদন’ (consent manufacturing) করে যাচ্ছে। সিস্টেমের পরিচালকরা এই ‘সিস্টেমকে’ দায়মুক্ত ও পবিত্র হিসেবে জনমনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্র্রশাসন, শিক্ষাব্যবস্থা, বুদ্ধিজীবি, মিডিয়া সহ সম্ভাব্য সকল উপাদানকে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই ‘ভয়াবহ’ মিথ্যাকে সত্য হিসেবে মেনে নেওয়ার কারণেই দেশের মানুষ সমস্যা থেকে মুক্তি চাইলেও তাদের মুক্তি মিলছে না। উপসর্গের তালিকা যতই দীর্ঘ হোক না কেন, দেশের জনগণ যদি মূল সমস্যা এই গণতান্ত্রীক-পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ফিরে আসে তাহলে এসকল উপসর্গের কোন চিহ্নই তাদের জীবনে থাকবে না। খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ‘সরল মানুষের জন্য এই মহানগর নয়’, ‘মহানগরে টিকতে হলে ধূর্ত আর হিংস্র হয়ে বেঁচে থাকতে হবে’ এধরনের কথা তখন অতীতের কল্পকথা হিসেবে মনে হবে। খাব্বাব (রা.) বলেন, “মুসলিমরা মক্কার কোরাইশদের অত্যাচারে নিদারূন কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছিল। একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম যখন তিনি কা’বা শরীফের ছায়ায় বসে ছিলেন। আমি তাকে (সাঃ) বললাম, হে আল্লাহ্‌’র রাসূল! আপনি কী আল্লাহ্‌’র কাছে আমাদের কষ্ট লাঘবের জন্য দো‘আ করবেন না? ….. রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন, আবশ্যই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর দ্বীনকে পূর্ণতা দান করবেন এবং (যখন এই দ্বীন বাস্তবায়িত হবে) তখন একজন মুসাফির (ইয়েমেনের) সানা থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত (যা সে সময়কার খুবই বিপদজনক জায়গা হিসেবে বিবেচিত হত) নিশ্চিন্তে ভ্রমন করবে এবং তার মধ্যে আল্লাহ্‌ ও জন্তু-জানোয়ারের ভয় ছাড়া অন্য কোন ভয় কাজ করবে না” (বুখারী-৩৮৫২)। 

    -    রিসাত আহমেদ




“পর্নোগ্রাফির ফাঁদ”

খবরঃ

অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রিয়া। মায়ের মোবাইল ফোনে আসাদুল নামের এক স্থানীয় ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হতো তার। ভিডিও কলে কথা বলার বিষয়ে তার মা’কে বলে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসাদুল ওই ছাত্রীকে নগ্ন হয়ে ভিডিও কল দেয়ার কথা বলে। পরে ওই শিক্ষার্থী নগ্ন হয়ে ভিডিও কলে কথা বললে তা রেকর্ড করে রাখে আসাদুল। এরপর ওই ভিডিও মেয়ের মা’কে দেখিয়ে একদিনের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দেয়া না হলে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয় আসাদুল। বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগীর মা লজ্জায় ব্যাটারির এসিড পানি পান করে আত্মহত্যা করেন।... (https://mzamin.com/news.php?news=52899)

মন্তব্যঃ

মানুষের মধ্যে যখন মজা খোঁজা বা আনন্দ নেওয়া (pleasure seeking) জীবন দর্শনের মুল হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার মধ্যে আর কোন নীতি-নৈতিকতা কাজ করে না। তখন সবকিছুতে পরম আনন্দ খোঁজাটাই হয়ে দাঁড়ায় নীতি-নৈতিকতা নির্ধারণের অন্যতম নির্ণায়ক। এটাই পশ্চিমা সভ্যতার হিডোনিসম (Hedonism) দর্শন, যা ধর্মনিরপেক্ষ জীবন বিশ্বাসের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার নিশ্চিত ফলাফল হলো, এধরনের মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ তৈরি হওয়া। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদা মানুষের জীবনে স্রষ্টার কর্তৃত্বকে গৌণ করে দেয় এবং এর ভিত্তিতে গঠিত সমাজে মানুষ তার জীবন পরিচালনা করে নিজের খেয়ালখুশী অনুযায়ী। আর মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো, সে সবসময় তার সুখ খুঁজতে চায়। এজন্য এটাকে যদি কোন দৃঢ় বিধি-বিধান দিয়ে নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে এটা শুধুমাত্র বস্তুগত সুখ অর্জনের দিকে মানুষকে তাড়িত করে। ফলে মানুষ তখন সীমাহীন ভোগ, অবাধ যৌনতা, এগুলোর দিকে ধাবিত হয়। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদার ভিত্তিতে গঠিত সমাজ ব্যবস্থায় এগুলোকে কোন প্রকার বাধাতো দেয়া হয়ই না, বরং বিভিন্ন দার্শনিক তত্ত্বকথা হাজির করে এগুলোকে মহিমান্বিত করা হয় এবং আইন করে বৈধ করা হয়। এখানে আনন্দ বা মজা খোঁজার মানসিকতাকে উৎসাহিত করা হয়। যেমন, ‘আনন্দ নিয়ে কাজ করুন” (অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ) একটি বহুল আলোচিত তত্ত্বকথা যা বর্তমানে চর্চা করা হয়। আবার আনন্দের জন্য অবাধ যৌনাচার করে ধরা খেলে বাংলাদেশের আইনে এর শাস্তি মাত্র ১০০ টাকা জরিমানা, আর ধরা না খেলেতো কোন সমস্যাই নেই। অন্যদিকে আমরা দেখি নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, বিজ্ঞাপনচিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে এগুলোকে সমাজের সর্বস্তরে প্রচার করা হচ্ছে। সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে এধরনের তথাকথিত ‘সাহসী’ (নোংরা) চরিত্রকে মানুষের জন্য ‘আইডল’ বানানো হচ্ছে। ফলে পার্কে, রেস্টুরেন্টে, হোটেলে এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে পর্যন্ত বর্তমানে অবাধ যৌনাচার ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তাই যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং এর থেকে উৎসারিত মজা খোঁজার মানসিকতা সমাজে অবাধ যৌনাচার এবং এর থেকে উদ্ভূত (আলোচিত নিউজে বর্ণিত) সমস্যাসমূহের জন্য দায়ী, সেগুলোকে বিদ্যমান রেখে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। 

এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদায় বিশ্বাসী সমাজব্যবস্থাকে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্দেশিত ইসলামী সমাজব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা জরুরী। এই ব্যবস্থায় রয়েছে একটি অনন্য সামাজিক ব্যবস্থা যেখানে নারীত্বকে সম্মানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয় এবং পুরুষদের দায়িত্ব হল এই সম্মানকে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করা। যেখানে এই বর্তমান সমাজব্যবস্থায় নারী হলেন ‘পণ্য’ এবং একারণে তারা পুরুষদের নিকট ভোগের সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামী ব্যবস্থায় আত্মীয়তার সম্পর্কের কিছু ক্ষেত্র এবং শিক্ষা, চিকিৎসা, লেনদেন ইত্যাদি ব্যতীত নারী-পুরুষের যোগাযোগ নিষিদ্ধ। এবং এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর মর্যাদাকে রক্ষা করা হয় এবং শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়ার মাধ্যমে একটি তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গঠন করা হয়। নারীর সম্মান রক্ষার্থে এই রাষ্ট্র প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী প্রেরণেও এক মুহূর্ত দ্বিধা করে না। খিলাফতের ইতিহাসে রোমান বাহিনীর হাতে বন্দী এক মুসলিম নারীর আর্তনাদের জবাবে ইতিহাসের অন্যতম আমুরিয়ার যুদ্ধের দামামা বাজান আব্বাসি খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ। একজন মাত্র মুসলিম নারীর আর্তনাদের দাম মুসলিম সিপাহসালার ও সেনাবাহিনীর কাছে কত বেশি, খলিফা মুতাসিম বিল্লাহ তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন পৃথিবীকে। রোমান সাম্রাজ্যের অধিভুক্ত অজেয় শহর আম্মুরিয়া অবরোধ করেন তিনি ৬ রমজান। ১৭ রমজান ছিনিয়ে আনেন বিজয়। এটাই ছিলো মুসলিম নারীর সম্মান রক্ষার্থে খলিফার পক্ষ থেকে জবাব। তাই এই খিলাফত ব্যবস্থায় নারীকে বেআব্রু করে ভিডিও করাতো কল্পনাও করা যায় না!

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম 




“বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রয়োজন: আইএমএফ প্রধান”

খবরঃ 

 বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, ‘সকল বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন।’ শনিবার (২৯ এপ্রিল) ওয়াশিংটনের রিজ-কার্লটন হোটেলে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ’কালে এ কথা বলেন তিনি। ক্রিস্টালিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করেছে।’ জর্জিয়েভা কোভিড-১৯ মহামারিকালেও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। বলেন, ‘ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুসংযোগ স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’ এসময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে আইএমএফ প্রধানকে অবহিত করেন। (https://www.banglatribune.com/national/796689/সমৃদ্ধির-জন্য-শেখ-হাসিনার-নেতৃত্ব-প্রয়োজন-আইএমএফ

মন্তব্যঃ

নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ প্রধান কর্তৃক পশ্চিমাদের আজ্ঞাবহ পুতুল শাসক শেখ হাসিনার প্রতি এই স্বীকৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছে না, তেল-গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যখন জনগণ তাদের কর্মসংস্থান ও আয় হারিয়ে নিজেদের সহায়সম্বল বিক্রি করে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, নিজেদের সঞ্চয়কে পুঁজি করে কোনরকম টিকে আছে। দেশের মানুষের পরিবারপ্রতি ধার বা ঋণ করা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের এক–তৃতীয়াংশ পরিবার এখন ঋণগ্রস্ত(প্রথম আলো, ১৬ এপ্রিল ২০২৩)। পরিবারে দারিদ্রতার কারণে খাবার বা কাজের সন্ধানে শহরে এসে ১৮.৪% পথশিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে কিংবা ভিক্ষুকের সহায়তাকারী হিসেবে জীবনযাপন করছে। এখনও আনুমানিক ৬ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ (দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ) দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করছে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে বহু সংখ্যক নারীরা শহরে এসে ভাসমান যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করছে। তাই, অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে জনগনের কাছে এই বিষয়টি এখন আরও বেশী পরিষ্কার যে কেন IMF/WB এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নব্য সাম্রাজ্যবাদী বলা হয়, যারা মার্কিনী আধিপত্যকে টিকিয়ে রাখতে ‘অনুন্নত’ মুসলিম ভূমিগুলোকে অর্থনীতির ছদ্ম্যাবরনে ব্যবহার করছে। 

 মূলত আইএমএফ প্রধানের এই বিবৃতি শেখ হাসিনার মত পশ্চিমাদের আজ্ঞাবহ শাসককে সেই চারিত্রিক সনদ প্রদানেরই স্বীকৃতি। সত্যিকারের প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কের স্বীকৃতির উদাহরণ এর চেয়ে আর কি হতে পারে? এই সার্টিফিকেট তারা এমন সময়ে দিল যখন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে আগামী নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আরোহনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দাবীর কাছে নতি স্বীকার করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এই সার্টিফিকেট হাসিনা সরকারকে আরও বিদেশী ঋণ পেতে এবং World Bank, (ADB), (IDB), (JICA), ইত্যাদি কর্তৃক অর্থায়নকৃত মেগাপ্রকল্পসমূহ নিশ্চিতে সহায়তা করবে, যা দুর্নীতিবাজ এই সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকে নিশ্চিত করবে। তাই আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্য করলাম আইএমএফের ঋণ অনুমোদনের পর ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও বাংলাদেশকে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। দেশের জনগণ যখন অর্থনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য মরিয়া তখন পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের প্রতিষ্ঠান আইএমএফ কর্তৃক হাসিনা সরকারের মিথ্যা উন্নয়নের স্বীকৃতি শেখ হাসিনাকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে। যেহেতু এ অঞ্চলে উপনিবেশবাদীদের নিজস্ব ঘৃণ্য ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, এই স্বীকৃতিকে কাফির উপনিবেশবাদীরা আমাদের দেশকে নিয়ন্ত্রণের আরেকটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। 

 আমরা বর্তমানে এমন এক গভীর সংকটের সম্মুখীন তা কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে পর্যালোচনা করা ভুল, বরং একটি রাজনৈতিক সমস্যা, যা পঁচে যাওয়া পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে অন্তর্নিহিতভাবে জড়িত। তাদের নেতৃত্বের অধীনে কখনোই উপনিবেশবাদী শক্তি ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি অর্জন করা সম্ভব নয়। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে আমাদের এখন একটি বিকল্প রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। আমাদেরকে অবশ্যই IMF/World Bank এর প্রেস্ক্রিপশন ও ঋণ ও অনুদানের নামে আমাদের দেশকে ঋণের ফাঁদে ফেলার নব্য উপনিবেশবাদী সকল প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের সামনে একমাত্র পথ হচ্ছে নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফত রাশিদাহ্’র অধীনে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং নতুন নেতৃত্বের অধীনে পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে পরিচালনা করা যাতে আমরা শেখ হাসিনার মত রুওয়াইবিদা নেতৃত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং উম্মাহ্ ও তার সম্পদকে পুঁজিবাদী-ঔপনিবেশিকগোষ্ঠীর করালগত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি। এটিই হচ্ছে উম্মাহ্‌’র মুক্তির একমাত্র পথ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আনে বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে” [আল-রা’দ: ১১] 

    -    সিফাত নেওয়াজ




“ওয়াশিংটনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি, সংঘর্ষ”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে ওয়াশিংটনে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকরা। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনে তাদের  মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সোমবার সকালে বিশ্বব্যাংকের সামনে জয় বাংলা সমাবেশের ডাক দেয়। একই সময়ে একই স্থানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি প্রতিরোধ সমাবেশের ডাক দেয়। (https://mzamin.com/news.php?news=53443)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশে পশ্চিমা-মদদপুষ্ট গণতন্ত্রের সৃষ্ট দ্বন্দ্ব, বিভক্তি, সংঘর্ষ অবশেষে গণতন্ত্রেরই তীর্থস্থান ওয়াশিংটনে গিয়ে পৌঁছেছে। তার আগে এই গণতন্ত্র যে দেশকে কতটা বিভক্ত করেছে, কত সংঘর্ষ, ধ্বংস, দুর্দশার কারণ হয়েছে তা বলাবাহুল্য। দেশ যত গণতান্ত্রীক ব্যবস্থার গভীরে গিয়েছে এই বিভক্তি ও সংঘর্ষ যেন তত গভীর হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি চরম আকার ধারণ করে। প্রতিটি নির্বাচন যেন একেকটি প্রলয়ংকারী ঝড় যা অসংখ্য মানুষের জীবনকে লন্ডভন্ড করে দেয়। গণতন্ত্রের এই সংঘাত নব্য-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার মোড়ল আমেরিকার প্রভু-ভৃত্য রাজনীতিকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। কারণ গণতন্ত্রের রাজনীতির মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য বিবাদমান সকল পক্ষই প্রতিনিয়ত আমেরিকার দ্বারে দ্বারে ঘুরে, তাদের খুশি করতে প্রতিযোগিতা করে, তাদের কাছে নিজেদেরকে শক্তিশালী প্রমাণ করার জন্য প্রতিপক্ষকে আরও বেশি ঘায়েল করতে থাকে। অবস্থা এমন হয়েছে যে শুধু লবিষ্ট নিয়োগ করেই কিংবা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিদের ঐসব দেশে রেখেও তারা ক্ষান্ত হচ্ছে না, এই বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনে এখন যেন তাদের রাজনৈতিক ক্যাডারদেরও ওয়াশিংটন নিয়ে গিয়ে মহড়া দিতে হচ্ছে!

ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে এই যে আওয়ামী-বিএনপি গোষ্ঠীর তথাকথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই মরণপণ সংগ্রামের উপর ভর করেই সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল আমেরিকা এখন বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্বন্দ্বের ভাগিদার হওয়ার আহ্বান করছে। আমেরিকা চীন, উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমারের মত অগণতান্ত্রিক দেশগুলোর হাত থেকে এই অঞ্চলকে মুক্ত ও স্বাধীন রাখার জন্য বাংলাদেশকে ভারত, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদির মত গণতান্ত্রীক দেশগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে দ্বন্দ্বে জড়ানোর আহবানে জানাচ্ছে। যে গণতন্ত্রের জন্য ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ চরম আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত সেই গণতন্ত্রের জন্যই যদি এইধরনের আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে হয় দেশটিকে তা হবে নিশ্চিত বিপর্যয়কর। কিন্তু তারপরও আমেরিকার দাবি হচ্ছে গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশেকে এই দ্বন্দ্বে যুক্ত হতেই হবে। এই কথাটিই যেন সম্প্রতি বাইডেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে মনে করিয়ে দিয়েছে। “As Bangladesh approaches its next election, I am reminded of the deep value both of our nations’ people place on democracy, equality, respect for human rights, and free and fair elections.” এটা বলে বাইডেন রহিংগা ইস্যু নিয়ে এসে এই অঞ্চলে কিছু লোককে শাস্তি দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা ইংগিত করে বলে, “We share a commitment to finding long-term solutions to the Rohingya refugee crisis and holding perpetrators of atrocities accountable.” এই বক্তব্য এবং পরবর্তি ঘটনাবলিতে এটা স্পষ্ট যে আমেরিকা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ফ্রীডম ইত্যাদি সুরক্ষার জন্য তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সংগ্রামে বাংলাদেশকে পাশে চাচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কি সমস্যা যে আমাদেরকে এই গণতন্ত্রের বিষে নীল হতে থাকতে হবে, যা আমাদেরকে ভেতর থেকে বিভক্ত ও দূর্বল করছে আবার অনেকটা অবধারিতভাবে একটি ধ্বংসাত্মক আন্তর্জাতিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? আমাদের জনগণকে শাসনের জন্য বা বিষয়াদির দেখভালের জন্য এটি ছাড়া কি আমাদের হাতে কোন বিকল্প নেই? নিঃসন্দেহে ইসলামী চিন্তা, সমাধান ও মূল্যবোধ এদেশের মানুষকে একসূতায় বাধতে সক্ষম শুধু তা নয়, বরং দিতে পারে একটি স্থির ও প্রগতিশীল পূর্নাংগ রাষ্ট্র ব্যবস্থা। আর তার নাম হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থা। বাস্তবতা হচ্ছে এই অঞ্চল একসময় খিলাফত ব্যবস্থার অধীনেই ছিল। তখন প্রায় হাজার বছর ধরে এখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্মের মানুষ সুন্দরভাবে স্বচ্ছলভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করেছে। এমনকি এদেশের মুসলিমদের আক্বিদা বা বিশ্বাস গণতন্ত্রের যে আক্বিদা বা বিশ্বাস তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এর সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র এখানকার মানুষদের সাথে কখনই খাপ খায়নি, কখনও খাবেও না। দুঃখজনক সত্য হচ্ছে আওয়ামী-বিএনপির নেতৃত্বাধীন এই রাজনৈতিকগোষ্ঠী এবং কিছু দেওলিয়া বুদ্ধিজীবী ও স্বার্থান্বেষি মহল সাম্রাজ্যবাদীদের এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে, এবং দেশের মানুষকে খিলাফতের ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। অথচ ইসলামের আক্বিদার কারণে এই খিলাফত ব্যবস্থা শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষগুলোকে একসূতায় গাঁথবে তা নয় বরং পুরো মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং দ্রুতই বিশ্বের বুকে একটি শক্তিশালী রোল মডেল আকারে দাঁড়িয়ে যাবে। এবং খিলাফতের ন্যায়বিচার ও সুন্দর ব্যবস্থাপনা পুরো বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করবে এবং একসময় পুরো মানবজাতি এই ব্যবস্থার নিচে প্রশান্তি লাভ করবে। সেদিকে ইঙ্গিত করেই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “ভূপৃষ্টে এমন কোন মাটির ঘর বা ঝুপড়ি ঘরও থাকবে না, যেখানে আল্লাহ্‌ ইসলামের কালেমা প্রবেশ করাবেন না। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে এবং অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। যাদেরকে আল্লাহ্‌ সম্মানিত করবেন, তাদেরকে তিনি মুসলিম হওয়ার তাওফীক দিবেন। আর যাদেরকে তিনি  অসম্মানিত করবেন, তারা ইসলামের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করবে। রাবী বলেন, তাহ’লে তো দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহ্‌’র জন্য হয়ে যাবে (অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর ইসলাম বিজয়ী হবে) (আহমাদ)।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেত্রী নিপুণ” 

খবরঃ

স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন বিএনপির ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) অংশ নিতে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ওয়াশিংটনের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল (রহ্‌.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন তিনি। ‘জনসাধারণের নীতিনির্ধারণে নারীর অগ্রগতির প্রভাব: নারী আইনপ্রণেতা এবং স্টাফ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায়। ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় এই অনুষ্ঠান আগামী ১ মে থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চলবে। এতে বিদেশী নেতা, আমেরিকার আইনপ্রণেতা ও আমেরিকার সহকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি এবং জনগণের সঙ্গে আরও ভালোভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হবে। (jugantor.com/politics/669609/স্টেট-ডিপার্টমেন্টের-আমন্ত্রণে-যুক্তরাষ্ট্রে-বিএনপি-নেত্রী-নিপুণ

মন্তব্যঃ

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাংস্কৃতিক বিভাগ (Department of cultural affairs) কর্তৃক পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামে (আইভিএলপি) বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম সফট পাওয়ার (soft power) যার উদ্দেশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন নব্য সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা। (বিস্তারিত জানতে পড়ুন: exchanges.state.gov/non-us/program/international-visitor-leadership-program-ivlp)। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার কৌশলগত স্বার্থরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে এমন সম্ভাবনাময় তরুণদের এই কর্মসূচীর মাধ্যমে লালন-পালন (grooming) করে যাতে ভবিষ্যতে তারা তাদের দেশের দায়িত্বশীল পদে থেকে মার্কিন স্বার্থরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩০০ এর অধিক বিভিন্ন দেশের বর্তমান বা সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে কাজ করছে। ইন্দীরা গান্ধি, মাহথির মোহম্মদ, টনি ব্লিয়ার এবং বাংলাদেশের শেখ মুজিব তরুণ বয়েসে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল। অংশগ্রহণকারীরা তাদের দেশের ক্ষমতায় বা ক্ষমতার বাহিরে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামের সফলতার বিষয় মন্তব্য করে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সব থেকে কার্যকর কর্মসূচী”। এই প্রোগ্রামটির কার্যকারীতার আর একটি প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০৩ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারী শার্লট বিয়ার্স কংগ্রেসের সামনে এক শুনানীতে বলে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী ওয়ার আন টেররে (ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) কোয়ালিশনের অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ৫০% এরও বেশী নেতা-নেত্রী ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটরস লিডারশিপ প্রোগ্রামের অংশগ্রহণকারী”। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লালিত-পালিত এসব রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবি-পেশাজীবিগণ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মার্কিনিদের দাসে পরিণত হয়। সাম্রাজবাদীদের অনুগত এসকল ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে জনগণের জন্য কোন কল্যাণ নাই কারণ তাদের রাজনীতি সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থকে কেন্দ্র করে অবর্তিত হয় এবং সাম্রাজ্যবাদীদের অনুগত এই সকল তথাকথিত নেতৃত্ব হচ্ছে উম্মাহ্‌’র উপর সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম হাতিয়ার। 

জনগণের স্বার্থ রক্ষা এবং প্রকৃত মুক্তির জন্য সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাসত্বের শৃঙ্খলের এই নব্য সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামের নেতৃত্বে নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যারা সাম্রাজ্যবাদীদের কূট কৌশলের ব্যাপরে সচেতন, সাম্রাজ্যবাদীদেরর ষড়যন্ত্র উন্মোচনে অকুতভয় এবং ইসলামের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হিযবুত তাহ্‌রীর হচ্ছে সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যারা সাহসিকতার সাথে সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রগুলো যেমন: যৌথ মহড়া-টাইগার শার্ক, সম্প্রীতি, পিলখানা হত্যাকান্ড, টিফকা, জিসুমিয়া, ইত্যাদি জনগণের সামনে অব্যাহতভাবে তুলে ধরছে, এবং নব্যুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ্‌ সুবাহানাতায়লার ইচ্ছায় খিলাফত রাষ্ট্র অতিসন্নিকটে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে নবুয়ত থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন, তারপর আল্লাহ্‌ তার সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে নবুয়তের আদলে খিলাফত তা তোমাদের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেন, অতঃপর তিনি তারও সমাপ্তি ঘটাবেন। তারপর আসবে যন্ত্রণাদায়ক বংশের শাসন, তা থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করবেন। এক সময় আল্লাহ্’র ইচ্ছায় এ্ররও অবসান ঘটবে। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে জুলুমের শাসন এবং তা তোমাদের উপর থাকবে যতক্ষণ আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করবেন। তারপর তিনি তা অপসারণ করবেন তারপর আবার ফিরে আসবে নবুয়তের আদলে খিলাফত (আহমদ)।

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম    

Previous Post Next Post