উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ কেন তুললেন এনসিপি নেতারা



খবরঃ

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদে সরে যাওয়ার উপায় খুঁজছেন অভিযোগ করে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির দুইজন নেতা। হঠাৎ করে কেন তারা এই প্রসঙ্গ তুললেন সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। প্রথমে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গটি তোলেন। পরে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও একই বিষয়ে বক্তব্য দেন তাদের দলের এক সভায়।… (https://www.bbc.com/bengali/articles/cj9zkyl1pn9o)

মন্তব্যঃ

‘নিরাপদে পলায়ন’ বা ‘সেইফ এক্সিট’ বর্তমান বাংলাদেশে একটি বহুল আলোচিত টার্ম হলেও, এটি আসলে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার একটি সাধারণ ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের সৈন্যদের আক্রমণের মুখে ভারতের সৈন্যদের ফেলে রেখে সিঙ্গাপুর থেকে ব্রিটিশ সৈন্যদের পলায়ন থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে রাতের আঁধারে পলায়ন, তার উপর শ্রীলংকার রাজাপাকসা, সিরিয়ার আসাদ, বাংলাদেশের হাসিনা, আফগানিস্থানের হামিদ কারজাই ইত্যাদি শাসকবর্গের বদৌলতে ‘সেইফ এক্সিট’ শব্দটি বর্তমান বিশ্বের মানব রচিত তন্ত্রগুলোর (গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি) শাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চতুর্দিক থেকে হাসিনা পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদকে নিয়ে যে সেইফ এক্সিটের রব উঠেছে, তার কারন হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জন-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে তাদের পরিপূর্ন ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার কারন হচ্ছে, জনগণ মূলত যেগুলো চেয়েছিলো- তাদের ঈমান-আক্বীদা সুরক্ষিত থাকবে, দেশ বিদেশীদের আধিপত্যমুক্ত হবে, দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে, সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হবে- এগুলোর কোন কিছুই তারা পায়নি। এখন প্রশ্ন হলো, কেন উপদেষ্টা পরিষদ পারেনি?

এর কারন অনুসন্ধান করতে গেলে আমরা দেখবো-প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পক্ষ দুইটি। এক পক্ষে রয়েছে অধিকার বঞ্চিত জনগণ, যারা হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থানের রক্ত দিয়েছে। অন্য পক্ষে রয়েছে আমেরিকা, যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাসিনা সরকারকে সহায়তা করেছে। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছিলো। হাসিনা পরবর্তী যুগে মার্কিন প্রশাসন তাদের স্বার্থে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে তাদের অনুগত দালালদের বসিয়েছে, যার প্রমাণ তারা (উপদেষ্টা পরিষদ) দিয়েছে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থে আরাকান আর্মিকে করিডোর, মার্কিন নেভি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চট্টগ্রাম বন্দর, জ্বালানি খাত মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির হাতে তুলে দেওয়া ইত্যাদি ইস্যুতে তাদের প্রচেষ্টা ও অবস্থান গ্রহণ করে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মার্কিনীদের আগ্রহের কারন হলো- সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে ইসলামকে দমন, চীনকে নিয়ন্ত্রনে মার্কিন স্বার্থে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহন ইত্যাদি, যেগুলোতে বিগত হাসিনা সরকারেরও কোন আপত্তি ছিল না। ফলে শাসনের ক্ষেত্রে কিংবা বিদেশীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিগত হাসিনা সরকারের মৌলিক কোন পার্থক্য পরিলিক্ষিত হয়নি। ফলে হাসিনার মতই দ্রুত গতিতে তারা জনগনের নিকট গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। এখন কোনমতে একটা নির্বাচন দিয়ে নতুন কোন মার্কিন দালালের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দ্রুত পালিয়ে যেতে চাচ্ছে, যা এই এনসিপি নেতৃবৃন্দের কথায় উঠে আসছে।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের বুঝতে হবে, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের আক্বীদা ও আবেগ অনুভূতিতে ইসলাম রয়েছে, সেহেতু ইসলামী শাসনব্যবস্থা ব্যাতীত অন্য কোন শাসনব্যবস্থা এদেশের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। একমাত্র এই শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলেই দেশ থেকে বিদেশী শক্তির আধিপত্য যেমন বিলুপ্ত হবে, তেমনি এই শাসনব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকার পুরনেও বাধ্য। ফলে একমাত্র এই শাসনব্যবস্থাকেই এদেশের মানুষ নিজের মনে করে একে সহায়তা করবে। এ শাসনব্যবস্থায় ন্যায়-পরায়ন শাসক যতদিন খুশি ততদিন ক্ষমতায় থাকেন, এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধার সহিত স্মরন করেন। তাদেরকে তাই সেইফ এক্সিটের কথা চিন্তা করতে হয় না। এ উপমহাদেশের ইসলামী শাসনের যুগে বিন বখতিয়ার খিলজীর অভিযানের খবর শুনে হিন্দু রাজা লক্ষন সেনের সেইফ এক্সিটের পর তিনি এর শাসনভার গ্রহন করে ন্যায়পরায়নতার সহিত জনগনকে শাসন করেন। যার ফলে বিন বখতিয়ার যেখানে সমাহিত হয়েছেন, সেই পশ্চিমবঙ্গের পিরপল গ্রামের মানুষেরা তার সম্মানার্থে এখনো খাটে বা চৌকিতে না ঘুমিয়ে মাটিতে ঘুমান। কারন যে মাটির নিচে বিন বখতিয়ার শুয়ে আছেন, সেই মাটির উপর খাটে শোয়াকে তারা বেয়াদবি মনে করেন।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post