খবর:
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বর্তমানে অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা আলোচনা করছেন। আসলে উপদেষ্টা হিসেবে সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। তবে এখনকার রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে এই জাতির সেফ এক্সিট হওয়া দরকার। আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ৫৫ বছর আমরা দুঃশাসন দেখেছি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছি, ব্যাংক লুট করে সাধারণ মানুষের আমানত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এটাও দেখেছি। এই ভয়াবহ অসুস্থ আত্মধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো থেকে আমাদের সেফ এক্সিট প্রয়োজন।
(https://www.banglatribune.com/national/918584/‘উপদেষ্টাদের-নয়-বর্তমান-রাষ্ট্রব্যবস্থা-থেকে)
মন্তব্য:
আইন উপদেষ্টা বিদ্যমান “ভয়াবহ অসুস্থ আত্মধ্বংসী রাষ্ট্র কাঠামো” থেকে দেশের জনগণের ‘সেইফ এক্সিট’ দরকার বলে যে মন্তব্য করেছেন তা পুরোপুরি সঠিক। কিন্তু তিনি সম্ভবত মনের ভুলে এই মন্তব্য করে ফেলেছেন। কারণ, হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিদ্যমান সেকুলার পুঁজিবাদী সংবিধান বাতিল ও জনগণের আকাঙ্খার আলোকে নতুন ন্যায়ভিত্তিক সংবিধান প্রণয়নের যে জনদাবি উত্থাপিত হয়েছিল তা নস্যাৎ করতে সর্বপ্রথম আঘাত হেনেছিলেন এই অধ্যাপক নজরুল ইসলাম উরফে আসিফ নজরুল। তিনিই সেই ব্যক্তি যে জালিম শেখ মুজিবের সংবিধানকে জোরপূর্বক বহাল রেখে এই সংবিধানের অধীনে অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে মূখ্য ভূমিকা রাখেন। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি আইন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও নিষ্ঠাবান দল হি-য-বু-ত তা-হ-রীরের উপর হাসিনার বেআইনী নিষেধাজ্ঞাকে বহাল রেখেছেন। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও হাসিনার আমলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাওয়াহ বহনের ‘অপরাধে’ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেওয়া দূরে থাক তাদের কথা শুনার মত সময়ও তার হয়নি। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি জুলাই-২০২৪ এ হাসিনার ঘাতক বাহিনীর হাতে সন্তানহারা বিচারপ্রার্থী মা-কে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছেন।
মূলত আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিগত ১৩-১৪ মাস সময়ে সরকারের অংশ হয়েও বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফেরাতে, জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার করতে, দেশের জনগণের জন্য আইনের শাসন কিংবা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চরম ব্যর্থ হয়ে জনরোষে পরার ভয়ে ভীত। শত শত ছাত্রজনতার লাশ মাড়িয়ে ক্ষমতা পেয়েও মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার অনিবার্য পরিণতি এই জনরোষ থেকে বাঁচার জন্যই তিনি শাসনব্যবস্থার উপর সকল দায় চাপানোর পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি মূলত বলার চেষ্টা করছেন, দেশের শাসন ক্ষমতায় যেই থাকুক কিংবা আসুক না কেন, কারো পক্ষেই দেশের কোন সমস্যার আমূল ও প্রকৃত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মূলত: সেকুলার পুঁজিবাদে দিক্ষীত ও নৈরাশ্যবাদে নিমজ্জীত যে কেউই এই মন্তব্য করবে, কারণ তারা আল্লাহর নূর, হিদায়াত ও পরিপূর্ণ জীবনবিধানের ব্যাপারে অজ্ঞ। এদেরকেই রাসূলুল্লাহ (সা) রুয়াইবিদা বা মূর্খ শাসক বলে অভিহিত করেছেন। ঠিক যেভাবে, নানান ছলচাতুরী ও বৈষয়ীক জ্ঞান থাকার পরও ইসলামকে অনুধাবন করতে ও তা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আবুল হাকামের নাম হয়েছিল ‘আবু জাহাল’ বা ‘মুর্খতার পিতা’।
জুলুমের শাসনব্যবস্থা ‘সেকুলার পুঁজিবাদ’ থেকে ‘এক্সিট’ করে জনগণ ইসলামী খিলাফত শাসনব্যবস্থার নূর ও হিদায়াতের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু জনগণের এই এক্সিটের পথে বাঁধা হয়ে আছে আসিফ নজরুলের মত শাসনক্ষমতায় বসে থাকা ‘সেকুলার অন্ধকার’-কে আঁকড়ে ধরা ব্যক্তিরা। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় জনগন অন্ধকার থেকে বের হয়ে আলোতে প্রবেশ করবেই, কেউ তা ঠেকাতে পারবে না। কারণ মহান আরশের অধিপতি সর্বশক্তিমান আল্লাহ হলেন এর জিম্মাদার। আল্লাহ বলেন: “তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নূর (ইসলামকে) নিভিয়ে দিতে চায়! কিন্তু আল্লাহ তার নূরকে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করবেনই; মুশরিকরা তা যতই ঘৃণা (ও ঠেকানোর চেষ্টা) করুক না কেন”। (সূরা আস-সফ: ০৮)
- রিসাত আহমেদ
