Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 88

 


Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৮৮ তম সংখ্যা । ১৫ মে, ২০২৩


এই সংখ্যায় থাকছে:


“বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী”

“রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী”

“বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য”

“ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঁশ বিক্রি না করার নির্দেশ পুলিশের!”

“মোবাইল আসক্তিতে বিপথগামী শিক্ষার্থীরা”

“সমকামী পর্যটকদের স্বাগত জানাবে সৌদি আরব!”

“বিশ্বাঙ্গনে সরকারের প্রতি সমর্থন অনুধাবনে ব্যর্থ হলে বিএনপি ভুল করবে : তথ্যমন্ত্রী” 









“বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। গত ২৯শে এপ্রিল বিকেলে দ্য রিজ-কার্লটন হোটেলের সভাকক্ষে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। আইএমএফ সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। বৈঠক শেষে মোমেন আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্ধৃত করে বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোলমডেল (সামগ্রিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে) কারণ, দেশটি এমনকি করোনা মহামারির পরও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে।” আইএমএফ প্রধান বলেন, সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। (https://www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-146006)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে তিন মাসের বেশি হয়ে গেছে। অথচ এখনও ডলার রিজার্ভ কমছেই, টাকার মান কমছে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রিজার্ভ থেকে কমেছে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এদিকে আইএমএফের শর্তগুলো বাস্তবায়নের ফলে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনে বিদেশ বা ডলার নির্ভরতা যেহেতু দিন দিন আরও বাড়বে সেহেতু দেশের জনগণ অর্থনীতির এই ঘাটতি টানতে গিয়ে সামনের দিনগুলোতে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে থাকবে তা বলাবাহুল্য। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ার আগে তাদের দেয়া শর্তগুলো বাংলাদেশ ঠিকমত মানছে কিনা তা তদারকি করতে বাংলাদেশে এসে এমনকি খোদ আইএমএফও একই আশংকা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি তাদের সফর শেষে লিখিত বিবৃতিতে বলেছে, “ক্রমাগত মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রধান অগ্রসর বাণিজ্যিক অংশীদারদের মন্দায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও টাকার ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে”। অথচ হাসিনা সরকার বলছে সাময়িক স্বস্তির জন্য আইএমএফের ঋণ নিয়েছে!

আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের মত ঋণদাতা ও তদারকি সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বর্তমান নব্য-উপনিবেশবাদী বিশ্বের পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতির মূলভিত্তি সম্পর্কে যার নূন্যতম ধারণা আছে সে জানে যে এধরণের সংস্থাগুলোর ঋণ দেয়ার উদ্দেশ্য কখনোই কোন দেশের বিদেশ বা আমদানি নির্ভরশীলতা কমানো নয়। এটাও সবাই জানে যে তাদের দেয়া ঋণগুলো সরকার নিজেদের ইচ্ছায় নিজেদের প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে পারে না। ফলে নিশ্চিতভাবেই এসব ঋণ অর্থনীতিতে স্বস্তিতো আনতে পারেইনা, বরং ঋণের দুষ্ট চক্রে আটকে আগের ঋণ শোধ করার জন্য নতুন করে ঋণ নিতে বাধ্য করে। এবং ঋণের কিস্তি ফেরতে ব্যর্থ হয়ে এই আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক দ্বারাই দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য সরকার বাধ্য হয় এই সংস্থাগুলোর দেয়া শর্তগুলো মানতে। যার ফলস্বরূপ এই শাসকরা জনগণের টুটি চেপে ধরে ট্যাক্স, ভ্যাট, তেল-গ্যাস-বিদ্যুত ইত্যাদির দাম বাড়িয়ে তাদের জীবনেকে দুর্বিসহ করে তুলে। এবিষয়ে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহরীর-এর আমীর বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ শাইখ আতা আবু আল-রাশতা রচিত ‘Economic Crises: Their Reality and Solutions from the Viewpoint of Islam’ নামক বুকলেটে তিনি লিখেছেন, “Addressing the debt problem through the IMF compounds the problem, because the IMF’s program includes the solution on an abstract arithmetic basis. The IMF considers the subject a mathematical equation and works to find a balance between its two sides. So, it tries to increase the lower side or reduce the higher side without giving regard to the relationship of this solution with man and without linking it with man himself, who will suffer economically from the proposed solution”. অর্থাৎ এইধরণের ঋণ জনগণের আয় এবং ব্যয় দুটোর উপরই চাপ বাড়ায়। অথচ হাসিনা এই সহজ বিষয়টি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে! শুধু হাসিনা নয় তার পুরো মন্ত্রী পরিষদ এমনকি উপদেষ্টারাও এর ভয়াবহতা বুঝতে অসমর্থ হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এটি বুঝতে পারে না এমনকি পুঁজিবাদী বুদ্ধিজীবিরাও আইএমএফ বিশ্বব্যাংককের অনুপ্রবেশকে ভালো মনে করে!

প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমাদের অন্ধঅনুকরণই এদের সবাইকে এমন অথর্ব বানিয়েছে। এরা কেউই নিষ্ঠার সহিত নিজের চিন্তার স্বাভাবিক ভীতের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করেনা, পশ্চিমা রাজনীতিক বা অর্থনীতিকরা কিভাবে চিন্তা করে তারা সর্বদা সেটাই অনুকরণ করে। তারা কেবল পশ্চিমাদের চিন্তাগুলোকে যথাযথ প্রমাণের জন্য নিজেদের বুদ্ধির ব্যবহার করে। এইধরণের লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ‘রুয়াইবিদা’ বলে সন্মোধন করেছেন। ……জিজ্ঞাসা করা হল, রুয়াইবাদা কে? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বললেন, “অপদার্থ ব্যক্তি যে জনগণের বিষয়াদি নিয়ে কথা বলে”। এই অপদার্থরা চিন্তাতো করেই না, আশপাশের উদাহরণ দেখেও শিখে না। UNTAD এর তথ্যমতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মোট বৈদেশিক ঋণ ২০১১ সালে দাঁড়ায় ১১.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে যা ২০০৯ সালে ছিল ৪.১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০০০ সালে ছিল ২.০ ট্রিলিয়ন ডলার। বৃটিশরা আসার আগে এই বাংলা অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ অঞ্চল ছিল অথচ ২০২২ সালে দেশের বৈদেশিক ঋণ ৯৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে! এসবই মিরজাফর থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত সকল রুয়াইবিদা শাসকদের অবদান। এমনকি হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ের আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান, মিশর, লেবানন, শ্রীলঙ্কার মত দেশগুলোর পরিণতি দেখেও যেন দেখছে না। তাই, দেশের জনগণ এবং হাসিনার আশপাশে থাকা চিন্তাশীল নিষ্ঠাবান মানুষগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আগেই এই রুয়াইবিদার হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার শর্তে তাদের শাসনভারের দায়িত্ব ন্যায়নিষ্ট ও ইসলাম দ্বারা দেশ পরিচালনায় সক্ষম দল হিযবুত তাহরীর-এর নিকট তুলে দেয়া।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী”

মন্তব্যঃ

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার (৬ মে) লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে এই অনুষ্ঠানে রাজা চার্লস ও রানী কনসোর্ট ক্যামিলা পার্কারকে মুকুট পরানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে শুক্রবার (৫ মে) রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং বিদেশি প্রতিনিধিদের জন্য রাজা তৃতীয় চার্লসের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সংবর্ধনার আগে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ দেশগুলোর নেতাদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের যোগদানের পাশাপাশি কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের বৈঠকেও অংশ নেন। লন্ডনের কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউসে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কমনওয়েলথ প্রধান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। (www.banglatribune.com/national/797426)

মন্তব্যঃ

শুধুমাত্র শেখ হাসিনাই যে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে তা নয় বরং বৃটেনের সাবেক উপনিবেশসমূহের প্রায় সকল শাসকরাই এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া মূলত সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনের প্রতি এসকল শাসকদের আনুগত্যের চূড়ান্ত প্রদর্শনী। এর পূর্বে যখন বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যায়, তখনও শেখ হাসিনা তার আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য রানীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে যায়। এর পাশাপাশি সারাদেশে তিন দিনের শোক ঘোষণা করে এবং রানীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করে। বৃটেনের প্রতি শাসকগোষ্ঠীর এই আনুগত্য মূলত তাদের পূর্বপুরুষদের বৃটিশবিরোধী আন্দোলন ও আত্মত্যাগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বৈ আর কিছুই নয়। দেশের জনগণের বৃটিশবিরোধী আবেগের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও এসব শাসকরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের খুশি করার নিমিত্তে যেকোন কিছুই করতে প্রস্তুত।

অথচ এই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতবর্ষসহ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় তাদের অমানবিক লুটপাট চালিয়েছে শত শত বছর ধরে। ভারতবর্ষে বৃটিশ দখলদারিত্বের পূর্বে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে পৃথিবীর মোট অর্থনীতির ২৩ শতাংশ ছিল এই অঞ্চলে সেখানে সমগ্র ইউরোপের অংশ ছিল ২৭ শতাংশ। ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসনামলে তা ৪ শতাংশে নেমে আসে এবং এর সাথে যোগ হয় ৩০ মিলিয়ন মানুষের দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু। বৃটিশরা দীর্ঘ ১৭৩ বছর ধরে ভারতবর্ষে লুটপাট করে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমান সম্পদ লন্ডনে পাচার করে। উপরন্তু, এই বৃটিশ সাম্রাজ্য ১৯২৪ সালে বিশ্বাসঘাতক মুস্তাফা কামালের সহায়তায় মুসলিমদের ঢাল ও নিরাপত্তা তথা খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে। তারা ইসলামি শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে মুসলিমদের উপর কুফর শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা মুসলিম ভূমিসমূহকে ছোট ছোট কৃত্রিম জাতিরাষ্ট্রে পরিণত করে যাতে মুসলিমরা কখনো একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে একজন শাসকের অধীনে একত্রিত হতে না পারে। তারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিবর্তন করেছে যাতে আমরা আমাদের আত্মপরিচয় ভুলে যাই এবং এর সাথে যোগ হয়েছে অবাধে তাদের সেক্যুলার-লিবারেল সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। তারা চায় আমরা যেন অস্ট্রেলিয়ার আদি অধিবাসী Aborigine কিংবা অ্যামেরিকার আদিবাসী Red Indian-দের মত হয়ে যাই। বৃটিশরা খুব সহজেই তাদেরকে তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা ভুলিয়ে পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা মোহগ্রস্ত করে তাদেরকে পশ্চিমাকরণ করে ফেলেছে। 

শাসকেরা নিজেদের পরিচয় ভুলে পশ্চিমাদের আনুগত্যে নিজেদের স্বার্থকতা খুঁজলেও, মুসলিম উম্মাহ্‌’র চিত্র ঠিক তার উল্টো। কারণ মুসলিম উম্মাহ্‌ তার ঈমান-আক্বীদা ও দ্বীনের ব্যাপারে সচেতন এবং তার রয়েছে পৃথিবীকে শাসন করার দীর্ঘ ইতিহাস, তাই তার আত্মপরিচয়কে মুছে ফেলা সহজ নয়। মুসলিম উম্মাহ তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে মরিয়া। মুসলিম উম্মাহ আবারও ইসলামের দিকে ফিরে আসছে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার আকাংখা তাদের মধ্যে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশী। দেশে দেশে খিলাফত পুণঃপ্রতিষ্ঠার জোরালো দাবী হতে যা সহজেই অনুমেয়। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) প্রদত্ত সুসংবাদ যা বাস্তবায়ন হতে বাধ্য তা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ্‌ মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত আসন্ন খিলাফতের প্রত্যাশায় অধীরভাবে অপেক্ষা করছে, “....তারপর আবার ফিরে আসবে খিলাফত নবুয়্যতের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)।

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য”

খবরঃ

আগামীতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাজ্য। শনিবার লন্ডনে হোটেল ক্ল্যারিজে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি জানান, তার দেশ বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। …ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ওয়েস্টমিনস্টারে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সেটিতে আমরা বিশ্বাস করি। …যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথম জেল থেকে বের হয়ে এই লন্ডনে এসেছিলেন। তখন এ দেশের প্রধানমন্ত্রী তাকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। আর সেই থেকে বাংলাদেশে ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। …শেখ হাসিনা বলেছেন, রানি সবসময় তার এবং তার ছোট বোনের (শেখ রেহানা) খোঁজখবর রাখতেন। …একই দিন স্থানীয় সময় শনিবার বেলা ২টার দিকে লন্ডনের পলমলে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের মার্লবোরো হাউসে ‘কমলওয়েলথ লিডার্স ইভেন্টে’ যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী…মার্লবোরো হাউসের ডেলিগেটস লাউঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কমনওয়েলথ প্রধান ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। (www.jugantor.com/national/672143/বাংলাদেশে-সুষ্ঠু-নির্বাচন-দেখতে-চায়-যুক্তরাজ্য

মন্তব্যঃ

ব্রিটিশদের আগামীতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাওয়ার বক্তব্য যেন গোলামের প্রতি মনিবের শাসনসুলভ অভিব্যক্তি। “গোলাম আর মনিবের” এই সম্পর্ক আরও সুস্পষ্ট হয় যখন প্রতুত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ওয়েস্টমিনস্টারে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সেটিতে বিশ্বাস করি”। এযেনো মনিবের প্রতি গোলামের আজ্ঞাবহ আত্মসমর্পণ। ব্রিটিশদের প্রতি এমন আজ্ঞাবহ আত্ম-সমর্পণ কিছু বিষয়কে আমাদের সামনে পরিষ্কার করে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস আমরা শুনি। বলা হয়ে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের গোলামি থেকে মুক্তির জন্য এই স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে এই মুক্তিযুদ্ধ ছিলো মূলত পাকিস্তানের গোলামি তথা আমেরিকান গোলামি থেকে পূর্ব-পাকিস্তানকে আলাদা করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নামে ১৯৪৭ পূর্ববর্তী ব্রিটিশ গোলামীর অধীনে নতুনভাবে নিয়ে যাওয়া। যার কারণে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বেশিরভাগ ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রানাধীন কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো আর মার্কিনীরা পাকিস্তানের পক্ষে। এরই ফলশ্রুতিতে, স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অতীত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীভূক্তরাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত ‘কমনওয়েলথ নেশন্স’-সংস্থায় যোগ দেয়। এবং ব্রিটিশদের আদর্শভিত্তিক “ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক” ব্যবস্থা গ্রহণ করে উম্মাহ‘কে ব্রিটিশ গোলামীর অধীনে নিয়ে যায়। আর এই পুরো বিষয়টাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনার পিতা “শেখ মুজিবুর রহমান”। তাইতো শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে বের হয়ে প্রথম ব্রিটেনে গিয়েছেন তার মনিবের আশির্বাদ নিতে। আর, আমরা দেখে আসছি ব্রিটিশ গোলামীর এই ধারাবাহিকতা বংশানুক্রমিকভাবে শেখ পরিবার ধরে রেখেছে গত ৫২ বছর ধরে এবং ব্রিটিশরাও এই পরিবারকে জেনারেশন বাই জেনারেশন পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে যা সুস্পষ্ট খোদ শেখ হাসিনার নিজের বক্তব্যে, “রানি সবসময় তার এবং তার ছোট বোনের (শেখ রেহানা) খোঁজখবর রাখতেন”, “তার দুঃখজনক প্রয়াণে বাংলাদেশের মানুষ এবং ব্যক্তিগতভাবে আমি শুধু একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকেই হারালাম না, একজন প্রকৃত অভিভাবকও হারালাম”। 

মূলত, ১৭৬৫-১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ১৭৩ বছরে এই উপমহাদেশ থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ লোপাটকারী, নীলচাষ, দূর্ভিক্ষ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জুলুম, ১৮৮০-১৯২০ সাল পর্যন্ত সরাসরি ১০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী, সর্বোপরি ১৯২৪ সালে ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত ব্যবস্থাকে ধবংসকারী এই কাফের ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলাতে পারে একমাত্র উম্মাহ্‌’র চরম বিশ্বাসঘাতকই। আর এই বিশ্বাসঘাতকতা তখনই সম্ভব যখন কেউ ঈমান-আকীদা বিক্রি করে আল্লাহ্‌’কে মান্য করার কৃত ওয়াদাকে ভঙ্গ করে। তখন, তার পক্ষে কাফেরদের সাথে হাত মিলিয়ে, কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে ইসলাম এবং মুসলিম ঊম্মাহ্’র বিরুদ্ধে সবকিছুই করা সম্ভব। সুতরাং, আমরা মুসলিম উম্মাহ্‌’র সচেতন অংশ যদি এখনই বিশ্বাসঘাতকে অপসারণে বদ্ধপরিকর না হই তাহলে এরা কাফেরদের সাথে আবারও হাত মিলিয়ে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’, ‘ওয়েস্টমিনস্টারের গণতন্ত্র’ এমন নানা অজুহাতে আমাদেরকে কাফেরদেরই গোলাম বানিয়ে রাখবে। তাই, কাফেরদের গোলামি থেকে মুক্তি পেতে আসুন কাফেরদের এই গোলামদেরকে ক্ষমতা থেকে অপরসারণ করে “ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র” ফিরিয়ে আনি। বাস্তবতা হচ্ছে এধরণের বিশ্বাসঘাতকরা অনেক দূর্বল কারণ তাদের সাথে আল্লাহ্‌’র সম্পর্ক থাকেনা। স্মরণ করুন আমাদের প্রতি আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নির্দেশ, “মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহ্‌র সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।…” [সূরা-আল-ইমরান-২৮]। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাইম




“ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঁশ বিক্রি না করার নির্দেশ পুলিশের!”

খবরঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে হওয়া সংঘর্ষ এড়াতে স্থানীয় কামারদের দেশি অস্ত্র না বানাতে বলেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল্লাহ সরকার। একইভাবে বাঁশের অস্ত্র তৈরির জন্য কারও কাছে যাতে বাঁশ বিক্রি না করা হয়, সে ব্যাপারে বাঁশ ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ দিন উপজেলার ২৫টি গ্রামে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে তিনটি। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে আছে কাতরা, সড়কি, বল্লম, এককাট্টা, পল, রামদা, চাইনিজ কুড়াল, ডেকার, চাকু, লাঠি, টেঁটা, ফলা ও চল। (https://www.youtube.com/watch?v=ezxQ35Ub29A)

মন্তব্যঃ

পুলিশ বলছে তুচ্ছ ঘটনার জেরে দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় স্থানীয় লোকজন। বাস্তবিক অর্থে এই সংঘর্ষের কারণ তুচ্ছ নয় বরং এর পিছনে রয়েছে জনগণের বিষয়াদী দেখাশোনায় বর্তমান শাসনব্যবস্থার পুরোপুরি ব্যর্থতা এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য ভিত্তিমূল। প্রথমত, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার বিষয়টি আলোকপাত করা যাক। খবরে বলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার দেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যেকেউ এটা বুঝবে যে, এসকল অস্ত্র সংগ্রহ ও আয়ত্বে রাখার কারণ হল মূলত তিনটি; এক: জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ, দুই: নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা এবং তিন: রাজনৈতিক বা ক্ষমতার দ্বন্দ। দেশের বিচার-ব্যবস্থা বা আদালত এর কোন সুরাহা করছে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাবান অনেকেই অন্যায়ভাবে মানুষজনের জমি দখলে নিয়ে ও স্থাপনা তৈরী করে তার সুবিধা ভোগ করে; কারণ তারা জানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তার ‘রায়’ বের হতে দশকের পর দশক কেটে যাবে। সিজিএসের গবেষণা: জমির বিরোধে ভুগছে ৫০ লাখ পরিবার (প্রথম আলো, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২), জমি নিয়ে বিরোধ: মামলায় জেরবার জীবন (দৈনিক বাংলা, ১২ মার্চ, ২০২৩), আদালতে বিচারাধীন ভূমি সংক্রান্ত ২৪ লাখ মামলা (২৯ জুলাই ২০২২), দেশের ৭০ শতাংশ মামলা হয় ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে (মানবজমিন, ৮ মে ২০২১)।

এসকল অস্ত্র রাখার দ্বিতীয় কারণটি হল নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। স্থানীয়ভাবে সম্পদশালী ও প্রবাসীদের বাড়িতে চোর-ডাকাতের উপদ্রব এবং তার কোন প্রতিকার থানা-পুলিশের কাছ থেকে না পেয়ে অনেক মানুষ নিজেদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা শঙ্কা দূর করার জন্য তাদের ঘরে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র রাখে। এবং এর তৃতীয় ও সবচেয়ে বড় কারণ হল রাজনৈতিক বা ক্ষমতার দ্বন্দ। স্থানীয়-সরকার (ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যান) কিংবা সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে বিরোধ ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এসকল দেশীয় অস্ত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যেকোন পর্যায়ের নির্বাচনকে সামনে রেখে এধনের দেশীয় বা বিভিন্ন বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা ব্যবসা হয়। এক দশকে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু ১৪০০ (মানবজমিন, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩), ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত ৫ হাজার ৪০০: আসক (ডেইলিস্টার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২)। এই তিনটি কারণ দেশের কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাস্তবতা নয় বরং এই চিত্র পুরো দেশের। অঞ্চলভেদে (শহরে কিংবা গ্রমাঞ্চলে) অস্ত্রের ও সংঘর্ষের ধরণের ভিন্নতা থাকতে পারে। বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা এর কোনটিরই সমাধান করতে পারছে না। 

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছে ‘জাতীয়তাবাদের’ উপর ভিত্তি করে, যার নিউক্লিয়াস হল আধিপত্য বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা যা অবশ্যম্ভাবিভাবে সংঘাত-সহিংসতার জন্ম দেয়। আওয়ামী-বিএনপি নেতৃত্বাধীন দেশের সকল রাজনৈতিক দলসমূহের রাজনৈতিক মতাদর্শ তৈরী হয়েছে জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে। ফলে এই দলগুলো ক্ষমতায় থাকুক বা ক্ষমতার বাইরে, দেশের মানুষকে তারা সংঘাত-সহিংসতা ও সমাজের মানুষের মনে চিরস্থায়ী উদ্বেগ ছাড়া আর কিছু উপহার দিতে পারেনি। ‘তুচ্ছ কারণ’, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’, ‘সরকারবিরোধী নাশকতা’, ‘ব্যক্তির অপরাধের দায় দল বা সরকার নেবে না’ ইত্যাদি শব্দমালা দিয়ে বিভিন্ন ঘটনাকে ধামাচাপা দিলেও যতদিন পর্যন্ত দেশে এসব রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষ সংঘাত-সহিংসতা ও অসহনীয় উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাবে না।

আমাদের বর্তমান অবস্থার সাথে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নবুয়্যত প্রাপ্তির পূর্বের আরবের গোত্রীয় সংঘাত-সহিংসতা ও তাদের অশান্তি-উদ্বেগের বিস্ময়কর মিল রয়েছে। জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবা (রা.)-এর নেতৃত্বে ‘ইসলামী আক্বীদার’ ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ফলে আরবরা শুধুমাত্র তাদের সংঘাত-সহিংসতা ও অশান্তি-উদ্বেগ থেকেই মুক্তি পেয়েছিল তা নয়, বরং অল্প সময়ের ব্যবধানে তারা পুরো পৃথিবীর ক্ষমতার ভারসাম্য ও ভৌগলিক মানচিত্রকে চিরদিনের জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছিল! এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণকে দু’টি কথা মনে রাখতে হবে! এক: জাতীয়তাবাদকে আকড়ে ধরে থাকলে সংঘাত-সহিংসতা, অস্থিরতা-অশান্তির জীবন নিয়ে আপনাদের নতজানু ও অপমানজনক জীবনযাপন অব্যহত থাকবে; এবং দুই: বর্তমান বিশ্বের একমাত্র সঠিক ও ন্যায়নিষ্ঠ ইসলামী দল হিযবুত তাহরীর-এর নেতৃত্বে ‘ইসলামী আক্বীদার’ ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলে অতীতের রোমান ও পারস্যের অধিপতিদের মত বর্তমান সময়ের ওয়াশিংটন-লন্ডন-দিল্লীর অধিপতিরা শীঘ্রই আপনাদের পদানত হবে, ইনশা’আল্লাহ।

    -    রিসাত আহমেদ




“মোবাইল আসক্তিতে বিপথগামী শিক্ষার্থীরা”

খবরঃ

ডেন্টাল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাইয়ানা। তার বেশির ভাগ সময় কাটে মোবাইলে। পড়াশোনা বা অন্য কোনোকিছুই ভালো লাগে না। কিছুক্ষণ পরে পরে ঢুঁ মারেন ফেসবুকে। এরপরই দীর্ঘ সময় কাটতে থাকে অনলাইনে।... এভাবে একসময় রাত শেষে ভোর হয়ে যায়। কিন্তু পরে আর পড়ার সময় থাকে না। ... বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতিনিয়ত একজন মানুষ ফেসবুক বা অনলাইনে বিভিন্ন ছবি, ভিডিও দেখে তখন অবচেতনভাবেই এর সঙ্গে তার নিজেকে তুলনা করতে থাকে। একসময় সে ভয়ঙ্কর নেশার মধ্যে চলে যায়। বাস্তব জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।... ফেসবুকে ছবি পোস্ট দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর দেখে কয়টি লাইক পড়েছে, কয়টি কমেন্ট করেছে বা সেখানে কে কি বলছে, কেউ নতুন করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছে কিনা, কোনো বন্ধু তাকে ব্লক করেছে কিনা এগুলো ফলো করে। গেমসহ বিভিন্ন সাইটে থাকে তার বিচরণ। ১৬-২২ বছরের বয়সীদের মধ্যে এই ধরনের প্রবণতাটা বেশি। ...অনৈতিক কাজ, অপরাধ, অগ্রহণযোগ্য ও পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হচ্ছে। ইভটিজিং, দলগত ধর্ষণ, আত্মহত্যা ও খুনের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। (https://mzamin.com/news.php?news=54228)

মন্তব্যঃ

যে সমাজে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘ব্যক্তিবাদ’কে (individualism) প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা হয় সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তিবাদ মানুষকে সমাজের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তির স্বার্থের দিকে গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করে। এখানে সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ শুধুই ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র মতো অহেতুক ব্যাপার। আবার ব্যক্তি যখন তার স্বার্থ খুঁজে তখন সে তার প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয়। ফলে সে অপরাধপ্রবণতা কিংবা বিপথগামীতার দিকে ধাবিত হয়। এই নিউজে আলোচিত তরুণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তির মূল কারণ হলো, এখানে ফ্রিমিক্সিং কিংবা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার অফুরন্ত সুযোগ। ব্যক্তিবাদ দ্বারা কলুষিত এই সমাজে অবাধ মেলামেশা নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই, বরং তা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এতে নাকি তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার ব্যাহত হয়! আবার যেহেতু মানুষের যৌনচাহিদার প্রবৃত্তি রয়েছে সেহেতু তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক বিষয়। আর এ বিষয়টি পুঁজি করেই সোশ্যাল মিডিয়ার কোম্পানীগুলো এর মাধ্যমে অবাধ মেলামেশার দ্বার উন্মুক্ত করে তাদের ব্যবসা প্রসারিত করছে, নিউজ মিডিয়াগুলো সেলিব্রেটিদের সহায়তায় এ সম্পর্কিত চটকদার খবর প্রচার করছে, এমনকি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন তৈরিতেও মানুষের যৌন চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এক কথায় মানুষের আনন্দ নেওয়ার সমস্ত উপকরণ এখন সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা অনলাইন কেন্দ্রীয় হয়ে যাচ্ছে। আর এতে ব্যস্ত থেকে মানুষ তার বাস্তব জীবনের সমস্যাসমূহ-যেমন, পরিবার- আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে সম্পর্ক বিষয়ক কিংবা শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের সমাধানের যোগ্যতা হারাচ্ছে। এই ফাঁদে সবচেয়ে বেশি পা দিচ্ছে তরুনরা, তরুণ শিক্ষার্থীরা। অবশেষে তারা ইভটিজিং, ধর্ষণ, খুন, মাদকাসক্তি সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অন্যদিকে আমাদের সমাজের চিন্তাশূন্য বুদ্ধিজীবীরা ও মোটিভেশনাল স্পিকাররা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের রাষ্ট্রের দায়িত্বের কথা পাশ কাটিয়ে ব্যক্তি, ব্যক্তির পরিবার-এগুলোকে দোষারোপ করে চলেছে। অনিয়ন্ত্রিত সোশ্যাল মিডিয়া গর্ভজাত বিভিন্ন অপরাধে কঠোর শাস্তি বিধানের পরামর্শ দিচ্ছেন। অপরাধের উৎস ও কারণ অবারিত রেখে অপরাধ ঘটার পর বিভিন্ন অদ্ভুত সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে। 

অন্যদিকে, ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাধীনতা কিংবা এর থেকে উৎসারিত ব্যক্তিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে ব্যক্তিকে সমাজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ, সমাজ যদি একটি মানবদেহ হয়, ব্যক্তি এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। এখানে ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে কোন মানুষকে অন্যায় কাজ করতে দেখে ছেড়ে দেওয়া হয় না। এই রাষ্ট্রে মানুষের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, এমনকি অপরিচিত মানুষ হলেও যেকোন অন্যায় কাজে একে অন্যকে বাধা দেয়। কারণ, ‘আমর বিন মারুফ নাহি আনিল মুনকার’ তথা ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ’ এখানে নামাজ-রোজার মতই ফরজ বিষয়। তাই ভবিষ্যত খিলাফত ব্যবস্থা যেটা অবশ্যই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে বাস্তব জীবনে কিংবা ‘সোশ্যাল মিডিয়া’ সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রতিহত করা হবে। সর্বোপরি একটি সতর্ক রাষ্ট্রীয় কাঠামো খিলাফত ব্যবস্থা অবাধ মেলামেশার মতো যেকোন কুফরি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তো করতে দিবেই না বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে উন্নত ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে সদা তটস্থ থাকবে। ইতিপূর্বে খিলাফতব্যবস্থা এক অনন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সুলতান মোহাম্মদ আল-ফাতেহ এর মত ভিশনারি নেতৃত্ব তৈরি করেছিল। যিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হাদিসকে সত্য প্রমাণ করে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের মাধ্যমে সেখানকার অধিবাসীদেরকে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছিলেন। বিখ্যাত সাহাবা আবু আইয়ুব আনসারী থেকে শুরু করে তার পূর্বপুরুষ সুলতানগন, তার শিক্ষক, রাষ্ট্রের সৈনিকগন সবাই এই স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এটি বিজয়ে আমৃত্যু চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সে সময় মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদেরকে পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে ঘুম পাড়াতেন।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


“সমকামী পর্যটকদের স্বাগত জানাবে সৌদি আরব!”

খবরঃ 

 এবার সমকামী ও রূপান্তরকামী ভ্রমণার্থীদের দেশে স্বাগত জানানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিল সৌদি আরব। সৌদি আরবের পর্যটন মন্ত্রকের এক মন্তব্যকে ঘিরে বেশ বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এক প্রশ্নোত্তর পর্বে সৌদি আরবের পর্যটন মন্ত্রককে প্রশ্ন করা হয়- ‘সউদি আরবে কী এলজিবিটি সম্প্রদায়ের পর্যটকরা আসতে পারবেন?’ এর উত্তরে পর্যটন মন্ত্রক জানায়, এদেশে সবাইকে স্বাগত। তবে পর্যটন মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সকলেই সৌদিতে স্বাগত, অন্যদেশের সরকারের মতোই আমরা কোনও পর্যটককে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি না। আমরা গোপনীয়তার অধিকারকে সম্মান করি।’ সমকামীদের ট্যুর প্ল্যানিং নিয়ে কাজ করা এক সংস্থার সিইও ড্যারেন বার্ন বলেন, ‘গবেষণা বলছে সাধারণ ও প্রচলিত যুগলদের চেয়ে সমকামী যুগলরাই এক বছরে বেশকয়েকবার ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমার চিন্তা হচ্ছে গন্তব্যে বাস্তবতা কেমন তা নিয়ে। তারা কী একই হোটেলে সমকামী যুগলকে থাকার জায়গা দেবে? (https://www.puberkalom.com/saudi-will-welcome-gay-tourists/

মন্তব্যঃ

সৌদি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের পূর্বপূরুষদের ইসলামবিদ্বেষ ও পশ্চিমা কাফেরদের প্রতি আনুগত্যের ঘটনা কারোই অজানা নয়। মুসলিম উম্মাহ্‌ ভুলে যায়নি বৃটিশ দালাল ইবনে সৌদ কিভাবে উসমানীয় খিলাফতের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধকে উস্কে দিয়েছিল এবং খিলাফত ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের কাজে ওয়াহাবী মতবাদ বাস্তবায়ন ও ওয়াহাবী ক্যাম্পেইন চালু রেখে উপনিবেশিক ব্রিটিশদেরকে সহায়তা করেছিল। ইতিপূর্বে তারা খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে আর এখন ইবনে সৌদের শয়তানতূল্য বংশধর ইসলামবিদ্বেষী এম.বি.এস (মোহাম্মদ বিন সালমান) ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস ও সমাজকে দ্রুত পশ্চিমীকরণ করার লক্ষ্যে এই পবিত্র ভূমিকে সকল প্রকার মন্দ ও অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য উন্মুক্ত করছে। সৌদির জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটি (জিইএ) ২০১৮ সালে তার বিনোদন শিল্পের বিকাশে ৬৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা করে এবং সৌদি আরবকে তারা এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ ৪ এবং বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০ নম্বর বিনোদন গন্তব্যে স্থান দিতে চায়। এরপর থেকে সৌদি আরব হলিউড-বলিউড তারকাদের অংশগ্রহণে সমস্ত ধরণের অশ্লীল পারফরম্যান্স এবং যৌন সুড়সুড়িপূর্ণ গানের মঞ্চায়ন ও কনসার্টের আয়োজন করে আসছে। আমরা পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করলাম দুর্বৃত্ত সৌদি সরকার কোভিড ১৯ প্রাদুর্ভাবের সময়েও এই পবিত্র ভূমিতে বিদেশী অতিথি ও গায়ক-গায়িকাদের কনসার্ট ও জমায়েত বন্ধ না করলেও বিশ্বের সকল প্রান্তে অপেক্ষারত হজ্বযাত্রীদেরকে হজ্জ্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা দিতে তাদের অজুহাতের কোন অভাব হয়নি। শুধু তাই নয় সৌদি কর্মকর্তারা প্রতি দুই বছর পর পর সৌদিতে ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনেরও প্রস্তাব করেছে। ক্রিশ্চিয়ানা রোনাল্ডো সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দেয়ার পর সৌদি আরব লিভ টুগেদারের বিরুদ্ধে কোন কথা উচ্চারণ করেনি। পর্যটন শিল্পকে উত্সাহিত করতে অবিবাহিত বিদেশী যুগলদেরকে একসাথে হোটেল রুম ভাড়া করার অনুমতিও দিয়েছে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, মদের বার, সৌদি আইডল প্রতিযোগিতা সহ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা উৎসাহিত করতে নারীদের হিজাবের বাধ্যবাধকতাকে নারীদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রনালয় আযান সম্প্রচারের ভলিউম কমাতে এবং পূর্ণ নামাজ ও খুতবা সম্প্রচার বন্ধ করার জন্য মসজিদে মসজিদে নির্দেশনা জারি করেছে। সম্প্রতি সৌদি সরকার পাশ্চাত্যের অনুকরণে পবিত্র ভূমিতে খ্রিস্টানদের প্রেতাত্মা পূজা “হ্যালোইন”-কে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। এছাড়া, সৌদি আরব বছরের পর বছর ধরে দুই পবিত্র মসজিদের ভূমিতে ইহুদীদের সফরের সুবিধা সমন্বয় করে ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে যাচ্ছে। মুসলিমদের পবিত্র ভূমি আল-কুদস দখলকারী দানব রাষ্ট্রের (ইসরাইল) যুদ্ধবিমানগুলোর জন্য সৌদি আরব তার আকাশসীমা খুলে দিয়েছে!! বিভিন্ন সৌদি সহায়তা(Saudi Aid) এবং এনজিও’র মাধ্যমে সৌদি আরব পশ্চিমাদের প্রেস্ক্রাইবড ইসলামের একটা সেক্যুলার ভার্সন বিশ্বব্যাপী প্রচার করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশকে বিভ্রান্ত করেছে। মাদখালিজম-এর মত ভ্রান্ত ফিরকার Cult Personality দেরকে বছরের পর বছর লালন-পালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে সৌদি আরব, উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় যাদের উদ্ভব হয়। মাদখালিরা শাসকের হারাম কাজকে হালাল ফতোয়া দেয়, মানবরচিত আইন প্রণয়ন ও শরীয়াহ দিয়ে শাসন করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকাকে বৈধ ঘোষণা করে, সৌদি শাসকদের মত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দালাল শাসকদেরকে প্রকৃত শাসক হিসেবে চিত্রায়িত করে। এই তথাকথিত ধর্মীয় বক্তা ও বিভিন্ন দেশে তাদের অনুসারীগণ খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে উম্মাহকে বিরত থাকার ফতোয়া দিয়ে উম্মাহর অবর্ণণীয় ক্ষতি সাধন করে চলেছে।  

দুর্বৃত্ত সৌদি সরকার কর্তৃক ঘটে চলা এসব অপরাধ থেকে উম্মাহ্‌’র মধ্যে এই প্রখর অনুধাবন আসা উচিত যে, ইসলামের পবিত্রতা কখনোই নিরাপদ হবে না যতক্ষণ পশ্চিমাদের দালাল ইসলামবিদ্বেষী সরকারগুলো মুসলিম ভূখন্ডে শাসন করতে থাকবে এবং যতক্ষণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র মনোনীত দ্বীনের অভিভাবক খিলাফত ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকবে। খিলাফতের অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ বিন সালমানের মত বিশ্বাসঘাতক শাসকেরা উম্মাহকে একের পর এক ইসলামের গিঁট(বন্ধন) থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পশ্চিমা উদারনৈতিক সংস্কৃতির সকল প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে উম্মাহকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যেতে কখনোই বিরত হবে না। একমাত্র নব্যুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতই হারামাইনের ভূমিকে তথাকথিত খাদেমুল হারামাইনদের কবল থেকে পুনরুদ্ধার করবে এবং কুফরের নোংরামি ও অপবিত্রদের হাত থেকে মুক্ত করবে। খিলাফত রাষ্ট্র হারামাইনের পবিত্র ভূমিতে সকল পশ্চিমা অপসংস্কৃতির প্রবেশ পথ বন্ধ করার পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য প্রসন্ন হৃদয়ের সাথে হজ্জ্ব সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত ইবাদত পালনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবে। তাই জনগণ ও নিষ্ঠাবান আলেম সমাজকে কাল বিলম্ব না করে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, “ইসলামের গিঁটসমূহ একের পর খুলে ফেলা হবে। যখন একটি গিঁট খুলে ফেলা হবে তখন লোকেরা পরেরটিতে চলে যাবে (তা মেনে চলবে)। প্রথম যে গিঁট খুলে ফেলা হবে তা হচ্ছে শাসন (অর্থাৎ খিলাফত), আর শেষটি হবে নামায (আল সালাহ)”(মুসনাদে আহমাদ)। 

    -    সিফাত নেওয়াজ




“বিশ্বাঙ্গনে সরকারের প্রতি সমর্থন অনুধাবনে ব্যর্থ হলে বিএনপি ভুল করবে : তথ্যমন্ত্রী” 

খবরঃ

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশ্বাঙ্গনে জননেত্রী শেখ হাসিনার উচ্চতা আর তার সরকারের প্রতি সমর্থন কোন জায়গায় সেটি নিশ্চয়ই বিএনপি অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে। সেটি না করতে পারলে বিএনপি ভুল করবে। মন্ত্রী সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সফরের শেষপর্যায়ে এখন যুক্তরাজ্যে রয়েছেন, ৯ মে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। তার এ সফর অত্যন্ত সফল একটি সফর। জাপানের সরকার ও জনগণ রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভাবনীয় মর্যাদা দিয়েছে এবং আমাদের নানা প্রকল্পে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তার চুক্তি সই করেছে। পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া বিশ্বব্যাংক ভুল উপলব্ধি করে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে এখন ২.২৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নতুন রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজা চালর্সের সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন যে শেখ হাসিনা হচ্ছেন আমার ‘আইডল’ এবং শুধু তারই নয়, তার মেয়েদেরও ‘আইডল’। পাশাপাশি ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কমনওয়েলথ মহাসচিবসহ অনেকেই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। (jugantor.com/national/672599/বিশ্বাঙ্গনে-সরকারের-প্রতি-সমর্থন-অনুধাবনে-ব্যর্থ-হলে-বিএনপি-ভুল-করবে

মন্তব্যঃ

পশ্চিমাদের সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতায় কোন রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না তা হাছান মাহমুদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। নিকট অতীতে এই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো পশ্চিমাদের তাবেদারি রেখে-ডেকে গোপনে করার চেষ্টা করতো। কিন্তু বর্তমানে তারা এতটাই দেউলিয়া ও সাম্রাজ্যবাদীদের মুখাপেক্ষি যে তারা পশ্চিমাদের তাবেদারির রীতিমত প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতা করেছে। দালাল বুদ্ধিজীবিরাও তথাকথিত সার্বভৌমত্বের ধারণাকে নতুন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর পশ্চিমামুখীতাকে জায়েজ করার চেষ্টা করছে। বিস্তারিত দেখুনঃ Can the US Eagle Fly to Bangladesh?, Zillur Rahman, The daily star, Feb 18, 2023। জনগণের মতামত নয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সিদ্ধান্তেই নির্ধারিত হয় এই দেশের ক্ষমতায় কে আসবে যাবে। এটাই হচ্ছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া বিশ্বব্যবস্থা যেখানে সাম্রাজ্যবাদীদের দালালের দেশের শাসন ক্ষমতায় বসে আমাদের ভূ-খন্ডগুলোকে তাদের ক্লায়েন্ট স্টেটের মত ব্যবহার করে আমাদের সম্পদ লুটপাট চালাচ্ছে। তাই পশ্চিমাদের বিশ্বব্যবস্থার হাতিয়ার ধর্মনিরেপেক্ষ ব্যবস্থা এবং তাদের দালাল রাজনীতিবিদদের টিকিয়ে রেখে সাম্রাজ্যবাদীদের শোষনের বলয় থেকে যেমন বের হওয়া সম্ভব নয় তেমনি জনগণের প্রকৃত মুক্তিও সম্ভব নয়। 

সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভাব বলয়ে থেকে বের হয়ে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে দেশের শাসক নির্বাচন করতে হলে সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া ধর্মনিরেপেক্ষ ব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে শারীয়াহ্‌’র এবং কর্তৃত্ব উম্মাহ্‌’র। উম্মাহ্‌’র কর্তৃত্ব এবং শারীয়াহ সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। এক্ষেত্রে, পরিবেশ পরিস্থিতির অজুহাত দিয়ে ব্যাত্যয় সম্ভব নয়। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহরীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২ অনুযায়ী, মুসলিমদের বিষয়ে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইসলামী ভূমির কর্তৃত্ব শুধুমাত্র মুসলিমদের থাকা বাধ্যতামূলক। হিযরতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বিভিন্ন গোত্র থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক সমর্থন অনুসন্ধান করার সময় বনু শাইবান গোত্র পারসিয়ানদের নিকট থেকে নিরাপত্তা প্রদানে অক্ষমতা প্রকাশ করলে, তিনি (সাঃ) বলেন, ”.... আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় তারাই সমর্থন (নুসরাহ) করতে পারবে যারা সবদিক থেকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম”। সুতরাং, মুসলিমদের ভূ-খন্ডের উপর কোন প্রকার বিদেশী হস্তক্ষেপ বা কর্তৃত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিমদের ভূমিতে মুসলিমদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নাই।

    -    মোঃ সিরাজুল ইসলাম

Previous Post Next Post