Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৮৯ তম সংখ্যা । ২০ মে, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা”
“সরকার পতনে গণঅভ্যুত্থানের আহ্বান ইনসাফ কমিটির”
“বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে টাকা–রুপিতে বাণিজ্য, ঘোষণা আসছে”
“ত্রিমুখী সংকটে বাংলাদেশ: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য”
“‘মায়ের ডাক’ সদস্যদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ”
“এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর করিডোর পেট্রাপোল-বেনাপোল”
“একদিকে হাহাকার অন্যদিকে দক্ষ কর্মীর সংকট”
“ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলন: ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ”
খবরঃ
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশ কিছু নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা না গেলে বাণিজ্যের পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। তাই এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন। ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের এক অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে শুরু দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন। সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্মেলনের প্রথম দিনের চতুর্থ অধিবেশনের বক্তাদের আলোচনায় এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। এই অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘শান্তিপূর্ণ ও টেকসই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অপ্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’। মূলত সামরিক নয় এমন উৎস থেকে যেসব সংকট তৈরি হয় সেগুলোকেই বলা হচ্ছে ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ’। (www.prothomalo.com/bangladesh/iugwmsioun)
মন্তব্যঃ
এধরণের বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট কিংবা সম্মেলনের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। এবং এধরণের লক্ষ্য মূলত যে আঞ্চলিক শক্তি এটার আয়োজন করছে তার স্বার্থেই হয়ে থাকে। যেমন, আলোচ্য ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য বিস্তার করা। এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য বিস্তার শুধুমাত্র ভারতের স্বার্থেই নয় বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ২০২১ সালের মার্চে বাইডেন প্রশাসনের ডিফেন্স সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন যখন ভারত সফর করেন তখন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি ভারত মহাসাগরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেরিটাইম ফোর্সের আধিপত্য বিস্তারেও আলোচনা হয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত দেশসমূহের কাছ হচ্ছে তাদের আরোপিত কিছু পলিসি বাস্তবায়ন করা।
এই সম্মেলনের কাগুজে উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘Security and Growth for All in the Region’। সব পক্ষের জন্য মুক্ত ও উদার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, মানব পাচার, চোরাচালান, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্র সম্পদের ক্ষতিসাধন ইত্যাদি রোধ, সমুদ্রপথে নিরাপদে যোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তা, ‘ক্লাইমেট স্মার্ট ইকোনমি’ চালুকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হলেও খুবই সুচিন্তিতভাবে এই অঞ্চলের দেশসমূহের সামরিক নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কথায়, “বাংলাদেশের সুপার পাওয়ার হওয়ার সামরিক উচ্চাভিলাষ নেই”। যেখানে ভারত প্রতিদিন সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা করছে, আমাদের শক্তিশালী সীমান্ত বাহিনীর দক্ষ সামরিক অফিসারদেরকে পিলখানায় হত্যা করেছে এবং কাশ্মীরসহ সারা ভারতজুড়েই প্রতিনিয়ত মুসলিম নিধন হচ্ছে সেখানে কিভাবে এই ক্রমবর্ধমান সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের কোন সামরিক উচ্চাভিলাষ না থাকতে পারে! এধরণের কথা কেবলমাত্র হাসিনা-খালেদার মত সেকুলার শাসকদের মস্তিষ্ক থেকেই প্রসূত হতে পারে। এরা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সবকিছুই বিসর্জন দিতে প্রস্তুত আছে।
বাংলাদেশের যেহেতু নিজস্ব কোন সামরিক ভিশন নাই সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই তাকে অন্য দেশের সামরিক ভিশনের অংশ হতে হয়। মুসলিম সেনাবাহিনী যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের হাতে গড়া বাহিনী এবং যা গত ১৪শত বছর ধরে (খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত) মুসলিমদেরকে সফলভাবে নিরাপত্তা প্রদান করে আসছিল সেটিকে বাধ্য করা হয়েছে মুসলিমদের শত্রুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ The agreements are General Security of Military Information Agreement (GSOMIA) এবগ্ন the Acquisition Cross-Servicing Agreement (ACSA) চুক্তি স্বাক্ষর করতে। তাছাড়া ভারত, ইসরায়েল সহ অন্যান্য শত্রুদের সাথে সামরিক মহড়ার আয়োজনতো স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। মুসলিম সেনাবাহিনী এবং মুসলিমদের সমুদ্রে যে দাপট তা আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তবে সেক্যুলার ব্যবস্থায় না বরং খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে। খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে মুসলিম সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উভয়েই জলে ও স্থলে মুসলিমদের নিরাপত্তা বিধান ও দাওয়াহ’র সম্প্রসারণে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে কারণ এজন্যেই এই বাহিনীকে গড়ে তোলা হয়েছিল, কোন আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক পাওয়ারের ফুট সোলজার্স হিসেবে কাজ করার জন্য না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “وَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰی وَ دِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡهِرَهٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّهٖ” “তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন” [আত-তাওবা: ০৯]
- মো. হাফিজুর রহমান
“প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা”
খবরঃ
গভীর সাগর থেকে উপকূলের দিকে যত এগিয়ে আসছে, ততই শক্তি বাড়াচ্ছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা ঘূর্ণন গতি রয়েছে ১৭০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রচণ্ড গতিতে উপকূলে আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। (https://ekattor.tv/news/article?article_id=44288)
মন্তব্যঃ
যখনই বাংলাদেশ সম্ভাব্য কোন ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কার মধ্যে পড়ে, এর প্রতিবারই শুরু হয় লঘূচাপ, ঘণীভূত হওয়া, গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া, বাতাসের গতিবেগের ফিরিস্তি আর আঘাত হানার কাউন্টডাউন নাটক। প্রতি ঘন্টা এমনকি মিনিটে মিনিটে সরকারি-বেসরকারি আপডেট, এর সাথে প্রস্তুতির নামে চালের বস্তা, চিড়া-গুড় আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে টানাটানির সাথে এবার নতুন যোগ হয়েছে ড্রাইকেক! কক্সবাজার উপকূল হয়ে ‘বিপদ’ মায়ানমারে চলে যাওয়ার পর শুরু হয় আরেক দফা সার্কাস: ‘সরকারের প্রস্তুতি দেখে ভয়ে মোখা মায়ানমারের দিকে চলে গিয়েছে’ বা ‘প্রধানমন্ত্রীর পরহেজগারীর কারণে আল্লাহ ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচিয়েছে’! গণতন্ত্রকামী আর উন্নয়নকামী রাজনৈতিক কর্মীদের এধরনের তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত কথাবার্তার কারণে ‘আসল’ পরহেযগার মুসলিমদের জন্য বাতাস আজ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। উম্মাহ্’র বিপদ ও কষ্ট নিয়ে এসকল নির্বোধ বা ‘রুয়াইবিদা’-দের তাচ্ছিল্যপূর্ণ ও স্বার্থান্বেষী কথাবার্তা আমাদেরকে এই উম্মাহ্’র ‘প্রকৃত অভিভাবকদের’ অভাবকে প্রকটভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছে, যারা যত্নসহকারে উম্মাহর দেখাশোনা করবেন, যারা জানবাজী রেখে উম্মাহর বিপদে তাদের পাশে দাড়াবেন।
দেশের অতীত ও বর্তমান ‘রুয়াইবিদা’ শাসকদের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবসময়েই একটি দলীয় রাজনীতির এজেন্ডা। তাদের কাছে জনগণের জীবনহানী বা জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি খুবই তুচ্ছ বিষয়। এজন্য তারা ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেলে গুড়-চিড়া নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকে কখন বিপদ এসে আঘাত হানবে! অপরদিকে, একজন খলিফা, যিনি আল্লাহ্’র বিধান দিয়ে জনগণের দেখাশোনার জন্য দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, তার কাছে ‘একটি’ মানুষের জীবনও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এদেশে প্রায়শই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে এবং প্রতিবারই এর উৎপত্তি হয় দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে, তাই এর প্রকৃত কারণ বের করে তা গোড়াতেই শেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে খলিফা সেখানকার ভূপ্রকৃতি, পানি, স্রোতের গতিপ্রবাহ, সামুদ্রীক জীববৈচিত্র্য, বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি নিয়ে ফলপ্রসূ গবেষণা পরিচালনার কাজ গ্রহন করবেন। যদি এই কাজে কেউ বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে দাদাগিরি দেখাতে আসে তাহলে দেশের জনগণের জীবনরক্ষা ও তাদের সম্পদহানী থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে খলিফা রাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাঠিয়ে তাদের শীরদাঁড়া ভেঙ্গে দিবেন যেন জরিপ ও গবেষণা কাজ অব্যাহত রাখা যায়। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে এমন প্রাথমিক সম্ভাবনা দেখা দিলে সেখানকার বাতাসকে ঠান্ডা করার প্রযুক্তি নিয়ে বা cloud seeding করে দ্রুত বৃষ্টি ঝরিয়ে সম্ভাব্য ঝড়কে সাগরেই শেষ করে দেওয়ার জন্য বিমান-হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে কিংবা সাগরের সবচেয়ে গরম স্থানের (ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য কেন্দ্রের) পানির quick evaporation process-কে বন্ধ/মন্থর করার জন্য যথাযোগ্য ক্যামিকেল ছিটাতে জাহাজ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরবেন দুঃসাহসী মুসলিম বৈজ্ঞানীকের দল। কারণ তারা বিশ্বাস স্থাপন করেন ‘তিনিই আল্লাহ যিনি মহাবিশ্বের সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের কল্যানের জন্য (বাক্বারা-২৯)। এই একই বিশ্বাস থেকেই, কোন কারণে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে গেলেও তার গতিপথকে অন্যদিকে ঘুড়িয়ে দিতে অতি-শক্তিশালী সাউন্ডওয়েভ বা নাম না জানা নতুন আবিষ্কৃত কোন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জানবাজী রেখে লড়ে যাবেন খিলাফতের master scientist-রা; যারা পুঁজিবাদীদের মত মুনাফা বা বাজারকেন্দ্রীক গবেষণা করবেন না, তারা গবেষণা করবেন পুরো পৃথিবীর গণমানুষের কল্যানের জন্য। এটি কারো কাছে অতিকল্পনা বা হাস্যকর চিন্তা মনে হলেও, ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-র আক্বীদায় বিশ্বাস স্থাপনকারী রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য এটি একটি অতি সাধারণ চিন্তা। সামান্য একটা উপসাগরকে বশ মানাতে পিছপা হলে তারা বিশাল বিশাল মহাসাগরের উপর কর্তৃত্ব করবেন কিভাবে!! এটাই আসন্ন খিলাফত! এবং এটাই খিলাফতের রাজনৈতিক কর্মীদের চিন্তা! উম্মাহর বিপদ/কষ্ট তাদেরকে ব্যথিত করে; এই বিপদ/কষ্টকে দূর করার জন্য যদি সমুদ্রকেও বশ মানাতে হয় উম্মাহর স্বার্থে তারা তা করারও দৃঢ় প্রত্যয় রাখেন।
‘ঘূর্ণিঝড়’ আমাদেরকে অতি মূল্যবান আরেকটি শিক্ষা দেয়, আর তা হল don’t give time to ‘an evil’ to grow in strength। সময় ও সুযোগ পেলে সামান্য লঘূচাপ যেমন ২০০-২৫০ কিলোমিটার ঘুর্ণনগতির প্রলয়ঙ্করী ঝড়ে রূপ নিতে পারে ঠিক তেমনি নির্বোধ বা ‘রুয়াইবিদা’ শাসকগোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে সময় ও সুযোগ দিলে তারাও ‘শক্তি’ সঞ্চয় করার সুযোগ পাবে, যা প্রকারান্তরে উম্মাহর উপর বিদ্যমান যুলুমকে আরো বৃদ্ধি করবে। এটি একটি জাগতিক নিয়ম/বাস্তবতা ও স্বাভাবিক সমীকরণ। “যখন তারা (যালিমরা) আঘাত করে, আঘাত করে নির্দয়ের মত” (সূরা: আশ-শু‘আরা: ১৩০)। সূতরাং যালিমকে আরো শক্তি সঞ্চয় করার সময় ও সুযোগ দেওয়া যাবে না। আমাদের উচিত যালিমের প্রতারণাপূর্ণ রাজনৈতিক দর্শনকে ইসলামের রাজনৈতিক চিন্তাসমূহ দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকা যতক্ষণ না তা তাসের ঘরের মত হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পরে। “আল্লাহ হক্ব (ইসলাম) দ্বারা বাতিলকে (কুফর ও যুলম) আঘাত করেন চরমভাবে, যেন বাতিল চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নিশ্চিন্ন হয়ে যায়” (সূরা আল-আম্বিয়া: ১৮)।
- রিসাত আহমেদ
“সরকার পতনে গণঅভ্যুত্থানের আহ্বান ইনসাফ কমিটির”
খবরঃ
সাহায্যের আশায় বিদেশী শক্তির দিকে তাকিয়ে থাকলে গণতন্ত্র আসবে না। ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে হলে সেই ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। রাজপথে নামতে হবে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে হবে। কেউ কমিউনিস্ট হতে পারে, কেউ ইসলামি হতে পারে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বলে কিছু নেই। গণঅভ্যুত্থান কখনোই বেআইনি না। (https://mzamin.com/news.php?news=54981)
মন্তব্যঃ
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন-নির্বাচন খেলায় গত এক যুগে বিএনপির কোনঠাঁসা অবস্থান এবং নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রশাসনের উপর আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশের অনেকেই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে হাসিনার পতনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া, সাম্রাজ্যবাদীদের মোড়ল আমেরিকার ‘চাপ’ প্রয়োগের রাজনীতির ব্যারোমিটার asymmetrical বা এলোমেলোভাবে উঠানামা করার কারণে আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি যারা করে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও হতাশা। এই পরিস্থিতিতে বিগত কয়েক বছরে দেশের রাজনীতিতে ‘গণঅভ্যুত্থান’ শব্দটি নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। অনলাইন রাজনীতি কিংবা মাঠের রাজনীতি সবখানেই ‘গণঅভ্যুত্থানের’ আশায় বুক বেধেছেন অনেকে। বিএনপির গত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করেও এধরণের একটি আশা অনেকেই দেখেছিলেন যা খুব দ্রুতই ‘হাওয়ায়’ মিলিয়ে যায়। তাছাড়া অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংস আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য অনেক ‘শিক্ষণীয়’ বিষয় রয়েছে বলে অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে ‘গণঅভ্যুত্থান’ নিয়ে অতি উত্তেজিত হয়ে উঠার আগে সচেতন জনগণের উচিত এর প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে জানা এবং দেশের রাজনীতিতে তাদের করণীয় সম্পর্কে নির্ভুল ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা; কারণ এক্ষেত্রে তাদের সামান্যতম ভুল ক্ষমতাসীন যালিমের হাতকেই শক্তিশালী করে জনগণের উপর চলতে থাকা জুলুমকে দীর্ঘায়ীত করবে কিংবা নতুন যালিমকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে।
শাসকের বিরুদ্ধে কোন গণঅভ্যুত্থান বা গণআন্দোলনে যদি সেদেশের সামরিক বাহিনীর (hard power) প্রত্যক্ষ সহায়তা না থাকে তাহলে তা কখনোই সফলতা লাভ করে না। নিকট অতীতে শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবারের বিরুদ্ধে হওয়া গণআন্দোলন কিংবা বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫ মে’র গণআন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে সামরিক বাহিনীর সহায়তা না থাকার কারণে। এই একই কারণে মিসরে গণআন্দোলনের মাধ্যমে কেবলমাত্র চেহারার পরিবর্তন হয়েছে; হোসনী মুবারকের স্থলে ‘পুতুল’ মুরসীর হাত ঘুরে ক্ষমতা এখন আবার হোসনী মুবারকের প্রিয়জনদের হাতে। সিরিয়াতে অভূতপূর্ব গণআন্দোলনের পরও অত্যাচারী বাশার আল আসাদের টিকে যাওয়ার কারণও তার পক্ষে সিরীয় সামরিক বাহিনীর অবস্থান গ্র্রহণ। তাছাড়া, ঐতিহাসিকভাবেও এটা প্রমাণীত যে ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব, ১৯৭৯ সালের ইরানী বিপ্লব (তথাকথিত ইসলামী বিপ্লব) কিংবা ১৯৪৯ সালের চীনা সমাজতান্ত্রীক বিপ্লব সবগুলোর সফলতার পেছনেই রয়েছে তাদের দেশের সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তা। সুতরাং সামরিক বাহিনীর সহায়তা নিশ্চিত না করে ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য দলবেধে রাস্তায় নেমে পড়া ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর আক্রমণ শুধুমাত্র নির্বোধদেরই কাজ; যার ফলে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ কিংবা শক্তিপ্রয়োগের ক্ষেত্রে সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনীর আইনগত অবস্থান তৈরী হয়। এই কারণে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জনতো হবেই না; বরং এর ফলাফল হল জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং আন্দোলনের ব্যর্থতা থেকে সৃষ্ট চরম-হতাশা যার ফলে জনগণ জুলুমকে তাদের ‘ভাগ্য’ হিসেবে মেনে নিয়ে কাপুরুষের জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। বিপরীত দিকে, যদি সামরিক বাহিনী কোন পরিবর্তনের পক্ষে দাড়ায় তাহলে তাদের hard power এর কারণে এর সফলতা-তো সুনিশ্চিত হয়ই, পাশাপাশি তাদের hard power থেকে সৃষ্ট soft power এর প্রভাবে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি শূণ্যের কাছাকাছি বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। তাছাড়া, এধরণের রাজনৈতিক পরিবর্তন কোন সর্বাত্মক যুদ্ধক্ষেত্র নয় যে সবাইকে লাঠী-কোঁদাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরতে হবে! বরং আধুনিক যুদ্ধবিদ্যায়ও surgical strike একটি জনপ্রিয় শব্দে পরিণত হয়েছে। অসুস্থ হলে মানুষ যেমন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যায় ঠিক তেমনি রাজনৈতিক পট-পরিরবর্তনের বিশেষজ্ঞ হল সামরিক বাহিনী! অপারেশন থিয়েটারে ফোকাস লাইটের মৃদু আলোয় বিশেষজ্ঞের আলতো হাতের ক্ষণিকের অপারেশনে একজন ‘রোগীর’ পক্ষে যে নিরাময় পাওয়া সম্ভব তা বিশেষজ্ঞের দারস্থ হওয়া ছাড়া শত লম্ফ-ঝম্প, চিৎকার-চেঁচামেচি করেও পাওয়া সম্ভব নয়! ক্ষমতা পরিবর্তনের অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় সামরিক বাহিনীর সহায়তায় রাজনেতিক পট-পরিবর্তন হল সবচেয়ে সুনিশ্চিত, সবচেয়ে সহজ ও সবচেয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অর্জনযোগ্য একটি পদ্ধতি এবং এটি পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত। এর জন্যই এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই কারণেই বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো একে অপরের সাথে সবসময় প্রতিযোগীতায় লিপ্ত থাকে যেন এই বাহিনীর hard power বা soft power ব্যবহার করে তারা তাদের পছন্দের দালালকে ক্ষমতায় আনতে কিংবা রাখতে পারে এবং একই চিত্র ঠিক এইমুহূর্তেও বিদ্যমান। এটিই হল দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রকৃত বাস্তবতা। সুতরাং, বুদ্ধিমানের কাজ হল sabotage করে সামরিক বা আধাসামরিক বাহীনিকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে বরং তাদের সামরিক সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের মধ্যে ইসলামের ভিত্তিতে জনগণের আকাঙ্খীত পরিবর্তন বা খিলাফতের স্বপক্ষে জনমত তৈরী করা।
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তোমরা (শুধুমাত্র) তা-ই গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহ্‘কে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর (আল হাশর: ৭)। মুসলিম হিসেবে আমাদের সকল কাজের ক্ষেত্রেই আল্লাহ্’র রাসূলকে (সাঃ) অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেটা হোক ব্যক্তিগত ইবাদত, রাষ্ট্রপরিচালনা কিংবা ক্ষমতার পরিরবর্তন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মক্কা, তায়েফ, কিছু প্রসীদ্ধ আরব গোত্র ও মদীনায় শাসনকর্তৃত্ব পেয়ে ইসলাম বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এগুলোর কোথাওই তিনি sabotage বা তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের আশ্রয় নেননি। বরং তিনি মক্কার শাসকদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন যেন পুরো আরবে তৎকালীন বিদ্যমান কুফর শাসনের বিরুদ্ধে এবং পাশাপাশি ইসলামের পক্ষে জনমত তৈরী হয়; এবং এই জনমতের উপর ভিত্তি করে শাসনকর্তৃত্ব পওয়ার জন্য তিনি (সাঃ) মক্কার কোরাইশ, তায়েফের বানু সাক্বীফ, মদীনার আওস ও খাযরাজ সহ বিভিন্ন আরব গোত্রের কাছে সামরিক সহায়তা লাভের চেষ্টা করেছিলেন, যা একটি ঐতিহাসিক সত্য। মক্কা ও তায়েফের শত অত্যাচার-নির্যাতনও তাকে (সাঃ) এই সামরিক সহায়তা বা নুসরাহ অনুসন্ধান থেকে একবিন্দু পরিমানও সরাতে পারেনি, যার শর’ঈ ইঙ্গিত হল নুসরাহ অনুসন্ধান আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে একটি ফরয আদেশ। অন্যান্য স্থানে বাধার সম্মুখীন হলেও এই ‘নুসরাহ অনুসন্ধান’ পদ্ধতি ব্যবহার করেই আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) মদীনায় রাষ্ট্রক্ষমতা বা শাসনকর্তৃত্ব লাভ করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুতরাং মুসলিম হিসেবে বর্তমানে বিদ্যমান কুফর ও যুলুমের শাসনকে পরিবর্তন করে ইসলামী রাষ্ট্র (পৃথিবীতে ‘ইনসাফের’ একমাত্র উৎস) প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অনুসৃত ‘একমাত্র পদ্ধতিটি’ অনুসরণ করতে হবে, যা হল ইসলাম ও খিলাফতের পক্ষে জনমত তৈরীর ভিত্তিতে সামরিক সহায়তার (নুসরাহ) মাধ্যমে শাসক ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন। ‘নুসরাহ অনুসন্ধান’-কে একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে নির্বাচন করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নিঃসন্দেহে মুসলিম উম্মাহ্’র উপর বিশাল অনুগ্রহ করেছেন, কারণ কাফির-মুশরিকদের (প্রকাশ্য-গোপন) সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, তাদের মেরুদন্ড চিরতরে ভেঙ্গে দিয়ে খিলাফতের কালিমা খচিত বিজয় নিশান পুনরায় উড়ানো শুধুমাত্র এই পদ্ধতির মাধ্যমেই সম্ভব!
- রিসাত আহমেদ
“বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে টাকা–রুপিতে বাণিজ্য, ঘোষণা আসছে”
খবরঃ
মার্কিন ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ও ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরুর জন্য উভয় দেশই রাজি। আগামী সেপ্টেম্বরে টাকা-রুপিতে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু করার লক্ষ্যে কাজ করছে দুই দেশ। তবে এর আগেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রথমে কোভিড ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলার-সংকট দেখা দেয়, যা এখনো চলমান। এরই মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেনে বাংলাদেশি টাকা ও তাদের রুপি ব্যবহারের মৌখিক প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হবে। (https://www.prothomalo.com/business/o0hyxdx7nk)
মন্তব্যঃ
সরকারের ভাষ্যমতে রুপিতে ভারতের সাথে বাণিজ্য বাংলাদেশকে তার অর্থ প্রদানের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে, কারণ আমদানির কিছু অংশ ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রায় করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এটি বাংলাদেশকে মোটেই সাহায্য করবে না, কারণ ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ১৩.৬ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য ও পরিষেবা আমদানি করেছিল, যেখানে রপ্তানি করেছিল ২ বিলিয়ন, অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে উভয় দেশের মধ্যে প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলারের একটি বড় ভারসাম্যহীনতা পরিলিক্ষিত হয়। ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ মূল্য টাকা-রুপিতে লেনদেন হলেও বাকিটা বরাবরের মতো মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। অন্যথায়, বাংলাদেশকে ভারতে তার রপ্তানি এতটা বাড়াতে হবে যে এটি ভারত থেকে তার আমদানির সমপর্যায়ের, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাহলে বাকি রুপি বাংলাদেশ পাবে কোথা থেকে? বাকি বিকল্পটি হল সুদের উপর ভারতীয় ব্যাংক থেকে রুপি ধার করা। তাহলে ডলার বা রুপিতে বাণিজ্যের মধ্যে আসলেই পার্থক্য কী? বর্তমানে বাংলাদেশ ডলারে সুদে ঋণ নিচ্ছে, এখন থেকে রুপিতেও সুদে ঋণ নিবে এবং সুদ ব্যয়ের বোঝা বাড়বে। আবার যেহেতু, ডলারের মূল্যের উপর ভিত্তি করে দুই দেশের মুদ্রার মান নির্ধারণ করা হবে, তাই ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর উঠানামা করবে, ভারত তখন বাংলাদেশি মুদ্রার বিপরীতে রুপির দর বাড়িয়ে দেবে, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের সাথে লেনদেনে।
কিছু বাণিজ্য চুক্তিতে ডলার ব্যতীত অন্য মুদ্রার ব্যবহার ডলারের আধিপত্য মুক্তিকরণের [De-dollarization] প্রক্রিয়ার দিকে পরিচালিত করবে না। কারণ ডলার এখনও প্রভাবশালী; অন্যান্য মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি তার আধিপত্যে খুব বেশি ক্ষত সৃষ্টি করতে পারেনি। ডলারের মূল্য পতনের সাথে পাউন্ড স্টার্লিং, ইউয়ান, ইউরো কিংবা অন্যান্য রিজার্ভ মুদ্রার শেয়ারের বৃদ্ধি ঘটেনি। আইএমএফের ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের ৬০ শতাংশই ডলার। ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটে বেচাকেনার ৯০ শতাংশই ডলারে সংগঠিত হয়। বৈশ্বিক ঋণের ৪০ শতাংশই ইস্যু করা হয় ডলারে [সূত্রঃ বিবিসি]। এটি চরম সত্য অদ্যাবধি ইউরো, ইউয়ান, রুবলসহ প্রতিটি মুদ্রা ডলারের সাথে আবদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, তখন তারা তাদের অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বিশ্বব্যবস্থা পুনর্গঠন করে; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বব্যবস্থায় ডলারকে একীভূত করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কর্তৃত্ব নিশ্চিত ও সুসংহত করে। বিশ্ব পরিস্থিতিকে একটি আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বোঝা যায়, অন্য রাষ্ট্রগুলো এই ব্যবস্থায় এমনভাবে একীভূত হয়ে রয়েছে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে এবং রাষ্ট্রগুলি একটি নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করে, যাতে পুঁজিবাদী মতাদর্শের আধিপত্য বজায় থাকে। সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে দিতে হলে এমন একটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন, যা বর্তমান ব্যবস্থাকে অন্য একটি আদর্শিক ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে পারে। রাশিয়া কিংবা চীনের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য/অভিলাষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতন/ধ্বংস নয়, বরং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বিশ্ব ব্যবস্থায় তাদের স্বাধীনতার পরিধি আরো বৃদ্ধি করতে চায়। এই দেশগুলো একই ব্যবস্থায় কাজ করছে এবং তাদের অর্থনীতি পরস্পর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলি যদি তাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টাও করে, তথাপি তারা সর্বদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীন সহ আরও কিছু বড় শক্তি দ্বারা চালিত হতে থাকবে, যেহেতু ডলার, ইউরো, ইউয়ান এবং রুবল নিজেরাই ফিয়াট মুদ্রা, ফিয়াট মুদ্রাগুলি ইস্যুকারী দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কক্ষপথে ঘুরছে; এবং যে দেশগুলি চীন এবং রাশিয়ার স্থানীয় মুদ্রার সাথে লেনদেনের নীতিতে আসার চেষ্টা করছে, তারাও এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কক্ষপথে ঘুরছে (এর দালাল), অর্থাৎ তারা রাজনৈতিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত। তাই কেউ যদি সত্যিকার অর্থে ডলারকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তবে এই মুদ্রাব্যবস্থা সহ বর্তমান ব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান অপরিহার্য।
বৈশ্বিক অর্থনীতির এই সমস্যার সমাধান হল ফিয়াট মুদ্রা (ডলার) পরিত্যাগ করা, যার নিজস্ব কোন মূল্য নেই; এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য মানের উপর ভিত্তি করে একটি মুদ্রা গ্রহণ করা, যার নিজস্ব মূল্য রয়েছে। একমাত্র নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্রই শারী’আহ্ কর্তৃক নির্ধারিত স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক দ্বি-ধাতব মুদ্রা চালু করবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি হিসেবে স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রা চালু করে ডলারের আধিপত্যের অবসান ঘটাবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক দ্বি-ধাতব মুদ্রা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনবে এবং ফিয়াট মুদ্রা (ডলার) সহ উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির দ্বারা অর্জিত সকল সুবিধার অবসান ঘটাবে; কারণ সমস্ত পণ্য ও পরিষেবা এবং এমনকি মুদ্রাগুলিও স্বর্ণ ও রৌপ্য মানের বিপরীতে মূল্যায়ন করা হবে। মুদ্রা স্বর্ণ ও রৌপ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, রাষ্ট্রের জন্য অন্য কোন ধরনের মুদ্রা গ্রহণ করা শারী’আহ্ অনুমোদিত নয়। রাষ্ট্র চাইলে স্বর্ণ বা রৌপ্যের বিকল্প হিসাবে কাগজের মুদ্রা বা অন্য মুদ্রা ইস্যু করতে পারবে, তবে শর্ত থাকে যে, এর বিপরীতে বাইতুল মালে সমপরিমাণ স্বর্ণ ও রৌপ্য মজুত রয়েছে। এবং খিলাফত রাষ্ট্রে আমদানি ও রপ্তানি কিংবা লেনদেনের ক্ষেত্রে অন্য কোন মুদ্রা প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না, যদি এতে খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রা বা অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
- সুজন হোসেন
“ত্রিমুখী সংকটে বাংলাদেশ: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য”
খবরঃ
চ্যানেল আই কর্তৃক আয়োজিত তৃতীয় মাত্রা টকশোর পর্ব ৭২২৩ এ বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভুরাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিস্টিংগুইস ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার মতামত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হিসেবে বিদেশ নির্ভরতা, দৃশ্যমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কৌশলকে (বৈদেশিক ঋণ বৈদেশিক ঋণ নির্ভর মেগা প্রকল্প, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশী কোম্পানি ডেকে আনা, বিদ্যুতখাতে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ইত্যাদি) গলার কাটা হিসেবে সাব্যস্ত করেন। আগামী ১/২ বছর পরে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ভয়ঙ্কর চিত্র আসার সম্ভাবনাকে উল্লেখ করে বলেন আইএমএফ এর ৪.৭ বিলিয়ন ঋণকে সাময়িক স্বস্তি আনলেও তা অর্থনৈতিক সংকটের কোন সমাধান বয়ে আনবে না। রাজনৈতিক ও ভুরাজনৈতিক সংকটের প্রশ্নে ড. দেবপ্রিয় বলেন রাজনৈতিক বিবাদমান গোষ্ঠী ও আগামী দিনের বিকাশমান প্রতিশ্রুতিশীল শক্তিরা যদি সমঝোতায় আসে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যদি কার্যকর থাকে তাহলে রাষ্ট্র স্থিতিশীল থাকে। গণতান্ত্রিক বৈধতার সংকট থাকলে বৈশ্বিক শক্তিগুলো অনেক কিছুই আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজের মুক্ত আচরনের অধিকার নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এছাড়া তিনি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাকে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের উপায় হিসেবে ইঙ্গিত করেন। (https://www.youtube.com/watch?v=zUKIrEYPJJM)
মন্তব্যঃ
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ঋণের উল্লম্ফন, রিজার্ভ ও ডলার সংকট সহ দেশের অর্থনীতি যখন গভীর সংকটে নিমজ্জিত তখনও মূলধারার সংবাদ মাধ্যম এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতো পশ্চিমাপন্থী থিঙ্ক-ট্যাঙ্কগুলো সর্বদাই অর্থনীতি সংক্রান্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সমস্যার শাখা-প্রশাখাকে হাইলাইট করার মাধ্যমে পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা ও তাদের পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ডিফেন্ডারের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অথচ এসকল বুদ্ধিজীবীদের দ্বায়িত্ব ছিল সীমাহীন অর্থনৈতিক নিপীড়ন ও দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকে বর্তমান সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য সঠিক পথনির্দেশ করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তারা তাদের সমস্ত আলোচনায় সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কৌশল ও অব্যবস্থাপনাকে মূল কারণ হিসেবে চিত্রায়িত করছে এমনভাবে যেন এগুলো ঠিক হয়ে গেলেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে! এসকল কপট বুদ্ধিজীবীদের ভন্ডামীর মূল জায়গাটা হল তারা পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা ও তাদের পুঁজিবাদী ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে থেকেই সরকারের তথাকথিত সমালোচনা করে যাচ্ছে! তারা এই প্রশ্ন করছে না যে, সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কৌশল ও সেগুলোর অব্যবস্থাপনার উত্পত্তিস্থল কোথায়? এগুলো কি পশ্চিমা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর অনুকরণে তাদের অনুসৃত পুঁজিবাদী নীতিসমুহের অন্ধ অনুকরণের ফলাফল নয়? এগুলো কি তাদের প্রদত্ত পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক প্রেস্ক্রিপশন বাস্তবায়নের অনিবার্য পরিণতি নয়? এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকগোষ্ঠী আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস এবং দেশ ও জনগণকে পরাধীন করে রাখার জন্য এসব পুঁজিবাদী নীতিমালা বাস্তবায়নে IMF এবং WB’র সাথে আঁতাত করে যাচ্ছে যা দেশের কৃষি, শিল্প ও জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করেছে, প্রকৃত উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জনজীবনে নিয়ে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। অথচ এসব পশ্চিমাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সমস্যার গোড়া (পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও তাদের নীতিসমূহ) অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া IMF এবং WB’র চাপিয়ে দেয়া ঋণনীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক ঋণনির্ভর অনুৎপাদনশীল মেগা প্রকল্পগুলো (৭০.৭ বিলিয়ন ডলার) যখন ইতিমধ্যে দেশকে ঋণের সাগরে ডুবিয়ে রেখেছে এবং দেশের জন্য ঋণের দুষ্টু চক্র ডেকে আনছে তখন এসকল বুদ্ধিজীবীরা এই ভয়াবহতাকে উপলব্ধি করে তাদের আগের সুর পরিবর্তন করে বলছে যে, “আইএমএফ এর ৪.৭ বিলিয়ন ঋণ সাময়িক স্বস্তি আনলেও তা কোন সমাধান বয়ে আনবে না।” অথচ কিছুদিন পূর্বেই তারা ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ঘাটতি সমন্বয়ের জন্য আইএমএফের ঋণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল (বাংলাদেশের জরুরী ভিত্তিতে আইএমএফের ঋণ প্রয়োজনঃ ড. দেবপ্রিয়, দ্য বিজনেস পোস্ট, ২৩ জুলাই, ২০২২ ) যা অর্থনীতিবিদ হিসেবে এসকল বুদ্ধিজীবীদের অদক্ষতা ও অযোগ্যত্যকে স্পস্ট করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, এসকল পশ্চিমাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা বারংবার মানবাধিকার, জনগণের বাক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তারা ঘুরেফিরে সেই পশ্চিমা ওয়ার্ল্ড অর্ডার এবং তাদের পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই সমাধান ও প্রতিষেধক খোঁজার আহবান করছেন। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন কিছু ডিসকোর্স যার ভিত্তিতে সহজেই একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা যায়। যেহেতু এইসব ডিসকোর্স পশ্চিমা বিশ্বেরই তৈরি, আমাদের পশ্চিমাপন্থী বুদ্ধিজীবীরা এগুলোকে শ্বাশ্বত বাণী হিসেবে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে মেনে নিয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার প্রশ্নে তারা সর্বদাই পশ্চিমাদের ন্যারেটিভের সাথে সুর মেলায়। আমেরিকা যদি বলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ঠিক আছে তাহলে শাসকের বৈধতা আছে কিন্তু আমেরিকা যদি বলে এগুলো ঠিক নেই তাহলে শাসক তার বৈধতা হারিয়েছে। এই ডিসকোর্সগুলো হল পশ্চিমা উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রসমূহের ছুঁড়ে দেয়া কিছু বিভ্রম (illusion) যেগুলোকে কেন্দ্র করে মুসলিম ভূমিগুলোতে তাদের বিশেষ করে আমেরিকার আধিপত্য (hegemony) গড়ে উঠেছে।
এমতাবস্থায় আমরা যদি সত্যিকার অর্থে আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির উপায় খুজি তাহলে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রদত্ত ইসলামী জীবনব্যবস্থার বাস্তবায়ন ছাড়া ভিন্ন কোন পথ খোলা নেই। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের একটা স্বাধীন ইসলামী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থাকবে যা সকল প্রকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় (Economic Shock) থেকে মুক্ত করে প্রকৃত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে। খিলাফত রাষ্ট্র আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মত কুফর প্রতিষ্ঠান ও তাদের সকল প্রকার নীতি ও কর্মসূচীর সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে শরীয়াহ নির্দেশিত নীতি অনুসরণ করে খাদ্য ও শিল্প নিরাপত্তা (Food & Industrial Security) অর্জনের মাধ্যমে একটি স্বয়সম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়ে তুলবে যাতে আমরা এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারি। অন্যদিকে ইসলামে রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা। তাই দেশের জনগণকে পশ্চিমা দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে এদেশের মিডিয়ার বা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি/বিশ্লেষকদের পশ্চিমা মদদপুস্ট অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ন্যারেটিভ’কে চ্যালেঞ্জ করে ইসলামী আদর্শ অনুসরণের সেই রাজনীতির ধারায় ফিরে যেতে হবে।
- সিফাত নেওয়াজ
“‘মায়ের ডাক’ সদস্যদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ”
খবরঃ
দেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ সদস্যরা গত ১০ মে রাজধানীর বারিধারাস্থ আমেরিকান সেন্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কি বলেছেন জানতে চাইলে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাদেরকে জানিয়েছেন যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সেখানেই আমরা তা বন্ধে কাজ করি। বাংলাদেশে গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতন ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর আগে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ সুমনের নাখালপাড়ার বাসায় গিয়েছিলেন। সে সময় ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি, কারাদন্ড, চাকরিচ্যুত সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্নার’ সদস্যরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে দাবি তুলে ধরার জন্য সুমনের বাসার সামনে ভিড় করেন। (www.deshrupantor.com/mofossol/2023/05/10/424957)
মন্তব্যঃ
‘মায়ের ডাক’ কিংবা ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনগুলোর সদস্য ও স্বজনরা শুধু নয় দেশের এরকম আরও অসংখ্য মানুষের উপর শাসকশ্রেণী জুলুম করেছে ও করছে। অথচ শাসকদের দায়িত্ব হচ্ছে অত্যাচারীকে পাকড়াও করে অত্যাচারিতকে রক্ষা করা অতঃপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু যেহেতু স্পষ্টত এই শাসকরা নিজেরাই অত্যাচার করছে তাহলে আর কেইবা থাকতে পারে তাদেরকে পাকড়াও করে? বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখলে এটা স্পষ্ট যে শুধুমাত্র আমেরিকার মত সুপারপাওয়ার রাষ্ট্রেরই ক্ষমতা আছে এইসব শাসকদের উপর, কারণ আমরা পরিস্কারভাবে দেখি যে দেশের শাসকরা প্রতিনিয়ত এই আমেরিকার মত শক্তিধর দেশগুলোর কাছে ধরনা দিচ্ছে এবং তাদের খুশি রাখার জন্য যেকোন কিছু করছে। তাই বাস্তববাদী এবং এমনকি গভীর চিন্তার মানুষরাও ভাবতে পারে এই জুলুমের অবসানের জন্য এবং এরকম ভয়ংকর অত্যাচারীদের শায়েস্তা করার জন্য অত্যাচারিতদেরকে ঐ আমেরিকার মত শক্তিধর দেশেরই দারস্ত হতে হবে, ন্যায়বিচার আদায় করার জন্য তাদেরকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এইধরনের চিন্তার মানুষ আরও উৎসাহিত হল যখন আমেরিকা র্যাবের উপর সেংশন দিল এবং তার ফলস্বরুপ সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বিচারবহির্ভূত হত্যা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল এবং অত্যাচারী শাসক দৃশ্যত কিছুটা দূর্বল হলো।
কিন্তু আমরা যদি একটু আলোকিতভাবে চিন্তা করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারবো যে এই অত্যাচারী শাসকরা অত্যাচার করে আমেরিকা, বৃটেন ইত্যাদির মত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো এবং তাদেরই তৈরী ও নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ ইত্যাদি থেকে মেন্ডেট, অথরিটি বা কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। এসব শাসকদের নির্বাচন ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া যেমন এই সাম্রাজ্যবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন, তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার র্যাব-পুলিশের গঠন, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কাঠামোও এই সাম্রাজ্যবাদীদেরই ডিজাইন করা। ইতিহাস থেকেও এটা পরিস্কার যে শুধুমাত্র হাসিনাই নয় বাংলাদেশের এযাবৎকালের সকল শাসক ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা হোক কিংবা ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আসা হোক সবারই গডফাদার আসলে আমেরিকা-বৃটেনের মত সাম্রাজ্যবাদীরাই। যেটি বিভিন্ন সময় এই শাসকরা নিজেরাই স্বীকার করেছে। এই শাসকেরা এবং আমেরিকা-বৃটেন, আল্লাহ্ বিবর্জিত এই জুলুমের রাষ্ট্রব্যবস্থার পার্টনার। এবং এটি দাস-মনিবের পার্টনারশিপ যেখানে দাস-মনিবের অনুমতি বা পরিকল্পনা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। অর্থাৎ এই ব্যবস্থার সকল জুলুম অত্যাচারের প্রত্যক্ষ দায় শুধুমাত্র জালেম শাসকদের উপর দিলেই হবে না, দায়ী করতে হবে এই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোকে এবং তাদের চাপিয়ে দেয়া মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকেও।
আজ তাই ‘মায়ের ডাক’ ও ‘মায়ের কান্না’ কিংবা দেশের কোন মানুষেরই উচিত নয় আমেরিকার মত সাম্রাজ্যবাদী গডফাদারদেরকে আমাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবক হিসেবে আহ্বান করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ না করে। আর যেকেউ এরূপ করবে, আল্লাহ্’র সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই” (সুরা আলি-ইমরান ২৮)। তাই সর্বশক্তিমান ও সকল বিচারকের বিচারক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয় এমনকিছু না করে আমাদের দ্রুতই আল্লাহ্কেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আর তিনি (আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাঁর বান্দা মুমিনদেরকেই ম্যন্ডেট বা কর্তৃত্ব বা দায়িত্ব দিয়েছেন দুনিয়ায় তাঁর (আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) দেয়া জীবনব্যবস্থা ইসলাম বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে সকল জুলুম থেকে মুক্ত করার জন্য। মুমিনরা এটা করে থাকে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে যেটি আল্লাহ্ প্রদত্ত একটি ফরজ দায়িত্ব। এক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের দায়িত্ব হচ্ছে নুসরার মাধ্যমে জুলুমের ব্যবস্থা ও জালেম শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে খলিফা নিয়োগ করা। আর ‘মায়ের ডাক’ বা ‘মায়ের কান্না’র সদস্যদের ও সকল সাধারণ মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে এই লক্ষ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলন করা ও নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারদের প্রতি নুসরার (সহায়তা) দাবি তোলা। খলিফা বর্তমান অত্যাচারী শাসকদেরকে বিচারের আওতায় আনবে। বিচারবহির্ভুত হত্যাতো খিলাফতে হবেইনা, পুলিশি হেফাজতে নূন্যতম নির্যাতন থাকবে নিষিদ্ধ এমনকি বিচারে অপরাধী প্রমাণিত হওয়ার আগে কাউকে অপবাদও দিতে পারবে না রাষ্ট্র। আর কেউ যদি খলিফা বা তার প্রশাসনের কারো কর্তৃক জুলুমের শিকার হয় তাহলে সে মাহাকামাতুল মাজালিম বা মাজালিম আদালতে মামলা করতে পারবে। এই আদলত এতই শক্তিশালী যে এটি এমনকি খলিফাকেও পদচ্যুত করতে পারে। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯০ এ বলা আছে, “রাষ্ট্রের যেকোন শাসক কিংবা কর্মচারীকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা আছে মাজালিম আদালতের। একইভাবে খলিফাকে অপসারণ করার ক্ষমতাও আছে এই আদালতের যদি জুলুম অপসারণের জন্য এই অপসারণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে”।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর করিডোর পেট্রাপোল-বেনাপোল”
খবরঃ
বাংলাদেশে ভারত সীমান্তে সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশে পেট্রাপোল স্থলবন্দরকে বলা হয় এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। এ দুয়ে মিলে তৈরি করেছে এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর করিডোরটি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে করিডোরটির দূরত্ব ২৪০ কিলোমিটার ও পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে এ দূরত্বের পরিমাণ ৮০ কিলোমিটার। পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর করিডোর এখন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলবাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। দুই দেশের স্থলবাণিজ্যের ৩০ শতাংশই সম্পাদিত হচ্ছে এখান দিয়ে। কিছুদিন আগেই পেট্রাপোল স্থলবন্দর এলাকা সফরে যান দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সফরে.. একটি কার্গো গেট উদ্বোধন করার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতীয় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু দেশটির অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করছে না, একই সঙ্গে তা সীমান্তে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছে। আমাদের নীতিমালা পরিষ্কার। আমরা চাই সীমান্ত এলাকায় শক্তিশালী অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি গড়ে উঠুক, যাতে করে তা ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে।’ (bonikbarta.net/home/news_description/340283/এশিয়ার-সবচেয়ে-বড়-স্থলবন্দর-করিডোর-পেট্রাপোল-বেনাপোল)
মন্তব্যঃ
বিশ্বব্যাংকের আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার সবেচেয়ে বড় স্থলবন্দর করিডোর শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক যোগাযোগের অর্থনৈতিক প্রজেক্ট নয় বরং সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনার অংশ। এই অঞ্চলে মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঘৃণ্য উদ্দেশ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস কৌশল ঘোষণা করে। এই নীতি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কোয়াড), অকাস চুক্তি, ইত্যাদি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের মতো মিত্র দেশ ও জোটকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। এরই অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এই অঞ্চলের কৌশলগত অংশীদার হিসাবে নির্বাচন করেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ট্রানজিটের নামে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে স্থল-নৌ করিডরের মত বিভিন্ন কৌশল কাঠামোগত প্রকল্প গ্রহণ করছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বব্যাংককে ব্যবহার করছে। বিশ্বব্যাংক অ্যাডভোকেসি ও কারিগরি সহায়তার নামে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে ট্রানজিটের (করিডোরের) পক্ষে জনমত তৈরি করতে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ বাংলাদেশের জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলেও দাবি করে। বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ worldbank.org/en/news/press-release/2021/03/09/seamless-transport-connectivity-can-create-major-economic-gains-for-bangladesh-and-india। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোরটি ব্যবহার করার সুযোগ না পেলে কলকাতা বন্দর থেকে আগরতলা যেতে একটি কার্গো ট্রাককে ১,৬০০ কিঃমিঃ পথ পারি দিতে হতো। কিন্তু বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যেতে পারলে এই রাস্তার দূরত্ব হয় মাত্র ৪৫০ কিঃমিঃ। এই পথটি ব্যবহার করার কারণে ভারতের পণ্যের পরিবহন ব্যয় প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যাচ্ছে। এই বিশাল সুবিধার জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের টন প্রতি মাত্র ৫৮৯ টাকা ফি প্রদান করতে হচ্ছে। বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ (dw.com/bn/ভারতীয়-পণ্য-ট্রানজিটে-টন-প্রতি-৫৮৯-টাকা-ফি/a-65435546, এপ্রিল ২৬, ২০২৩)। যদিও ভারী ভারতীয় কার্গো ট্রাকের (বাংলাদেশের তুলনায় ভারতীয় ট্রাকের ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশী) বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারের ফলে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যায়, যানজট এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। এই আর্থিক ক্ষতি ও নিরাপত্তা ঝুকির মূল্য ৫৮৯ টাকা থেকে অনেক বেশী। এছাড়াও, ১,৬০০ কিঃমিঃ এই দূরত্বের কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়িরা ভারতের ”সেভেন সিস্টার” নামে পরিচিত প্রদেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির যে সুযোগ পেত তা হারাবে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা না হয় আপাতত পাশ কাটিয়ে রাখলাম। বিশ্বব্যাংক যে ১৭ শতাংশ জাতীয় আয় বৃদ্ধির কথা বলেছিল সেটা কোথায়? সরকার, রাজনৈতিক দল এবং অর্থনীতিবিদদের বিশ্বব্যাংক-কে এই প্রশ্ন করা উচিত ছিল। কিন্তু সরকার এই প্রশ্নতো করেই নাই বরং শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে তরান্বিত করতে নতুন করে ৭৫৩.৪৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণের চুক্তি করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ বিএনপিগোষ্ঠী এবং অর্থনীতিবিদগণ এই ঋণের সমালোচনা না করে তারা ক্ষমতায় এলে এই আনুগত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষার ইশারা দিয়েছে। এসব দালাল শাসক ও রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও যেতে, সামন্য ফান্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে, ফেলোশিপের মত সামান্য অর্জনের জন্য উম্মাহ্’র স্বার্থে কথা না বলে সাম্রাজ্যবাদীদের দালালী করে। এসকল দালালগোষ্ঠী, তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভু ও তাদের পরিকল্পনা থেকে বেরি আসতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা নির্দেশিত খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম
“একদিকে হাহাকার অন্যদিকে দক্ষ কর্মীর সংকট”
খবরঃ
ঘরে ঘরে বেকার। চাকরির বাজারে চলছে মন্দা। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বেকার হন্যে হয়ে খুঁজছে চাকরি। বেকার জীবন থেকে মুক্তি পেতে তাদের কতো চেষ্টা। চাকরির বাজারে চলছে হাহাকার। অন্যদিকে দক্ষ কর্মী খুঁজছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বার বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দক্ষ কর্মী। একদিকে চাকরির জন্য হাহাকার অন্যদিকে দক্ষ কর্মীর অভাব- সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। মাস্টার্স সম্পন্ন করা বেকারকেও দেখা যায় এসএসসি পাস চাকরির নিয়োগে আবেদন করতে। কেউ কেউ সোজা পথে কিংবা বাঁকা পথে উড়াল দিচ্ছেন বিদেশ বিভূঁইয়ে।... (https://mzamin.com/news.php?news=55202)
মন্তব্যঃ
যে জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার ভিশন নাই, শুধুমাত্র সেবাদাস হয়ে বেঁচে থাকার ভিশন, তাদের এই পরিণতিটাই স্বাভাবিক বিষয়। কারণ, কোন জাতির মধ্যে দক্ষ লোক তখনই তৈরি হয়, যখন সেই জাতি ব্যাপক ভারী শিল্পায়ন করে। আবার কোন ভিশন না থাকলে ভারী শিল্পায়নের পলিসি গ্রহণ করার কোন দরকার হয় না। তখন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষ লোক তৈরি করারও কোন প্রয়োজন হয় না। একগাদা তাত্ত্বিক তত্ত্বকথা সম্বলিত শিক্ষাব্যবস্থাই তখন সম্বল। যার সাথে বাস্তব জীবনে কিংবা কর্মক্ষেত্রের কোন সম্পর্ক থাকে না। যেমনটি এই নিউজে বর্ণিত রয়েছে। বাংলাদেশের ৪৭% গ্র্যাজুয়েট হয় বেকার, না হয় তিনি যে কর্মে নিযুক্ত এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থাটাকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেন শুধুমাত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য, মেশিনারিজ কিংবা প্রযুক্তির ব্যবহারকারী বা ভোক্তা তৈরি হয়। যেমন, বাংলাদেশে কোটি কোটি স্মার্টফোনের চাহিদা থাকলেও আমাদের এগুলো তৈরি সক্ষমতা নাই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র এগুলোর ভোক্তা কিংবা ব্যবহারকারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। তাই এখানে চাকরির ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে বড়জোর রক্ষণাবেক্ষণ, অপারেটিং, ট্রেডিং কিংবা হিসাবরক্ষণ সংক্রান্ত। যার পরিমান এত বিশাল সংখ্যক বেকারের তুলনায় নিতান্তই ক্ষুদ্র। আবার এগুলো শেখার সুযোগ পর্যন্ত এই শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। আর এই জঘন্য অবস্থায় দায়ভার মূলত আমাদের শাসকগোষ্ঠীর। যারা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ ‘মানবসম্পদ’এর এই সুবিশাল নেয়ামত হাতে পেয়েও এদেশের মানুষকে শুধুমাত্র পশ্চিমাদের সেবাদাসে পরিণত করেছে। যাদের কাজ হচ্ছে পশ্চিমাদের দেশে গিয়ে তাদের সমস্ত নিম্ন শ্রেণীর কাজ করে নিজেরা কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা।
এ অযোগ্য নেতৃত্ব প্রতিস্থাপন জরুরী। এক্ষেত্রে সমাজে ইসলামী ব্যবস্থার বাস্তবায়ন অত্যাবশ্যকীয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “এভাবে আমি তোমাদেরকে আদর্শ জাতি করেছি, যেন তোমরা মানবগণের জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়...” (বাকারাঃ ১৪৩)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মানবজাতির কাছে ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব বহন করেছিলেন। তাইতো তার প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থা পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছিল। আর পৃথিবীর নিয়ম হলো, দুনিয়া সব সময় বিজয়ী জাতির নেতৃত্ব অনুসরণ করে, যেমন ইতিপূর্বে অন্য জাতিসমূহ ১৪০০ বছর ধরে বিজয়ী জাতি মুসলিমদেরকে অনুসরণ করতো। আজকে মুসলিমরা বিজয়ী জাতি পশ্চিমা কুফর শক্তির অনুসরণ করছে। তাই আবারো বিজয়ী জাতি হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের খিলাফত ব্যবস্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা জরুরী। তখন মানবজাতির কাছে আমরা আবারও আমরা ইসলামকে বহন করতে পারব। মানবজাতির সাক্ষী হতে পারব। তখন আমাদেরকে আর অদক্ষ, কর্মহীন হয়ে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে হবে না।
- মো: জহিরুল ইসলাম