Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৯০তম সংখ্যা । ২৮ মে, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“শর্তের বেড়াজালে হেফাজত, নানা গুঞ্জন”
“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ইসলামী স্কলারদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর”
“আলোচনায় রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার ও স্যাংশন”
“যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বলি ৪৫ লাখ মানুষ”
“আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে, প্রস্তুত সরকার”
“আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর“
“শর্তের বেড়াজালে হেফাজত, নানা গুঞ্জন”
খবরঃ
এক দশক আগে হেফাজতের উত্থান ছিল নাটকীয়। ‘অপারেশন শাপলা’র পর দৃশ্যপট বারবার পরিবর্তন হয়েছে। ... পাঁচটি শর্তের ভিত্তিতে হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।... কোনো রাজনীতির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না।... (https://mzamin.com/news.php?news=56342)
মন্তব্যঃ
ইসলাম থেকে রাজনীতি আলাদা করার ধর্মনিরপেক্ষ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকারে কোন কল্যাণ নেই, বরং তা ইসলামকে পরিত্যাগ করারই নামান্তর। আর এটা এমন সময় করা হচ্ছে যখন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পুঁজিবাদী আদর্শ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পতনের পর এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে এর অযোগ্য সৈনিক এই শাসকেরা এর বিরোধীদেরকে দমন নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। আরো পরিতাপের বিষয় হলো, শাসকগোষ্ঠী আলেম-ওলামাসহ সকল বিরোধী মতকে দমনে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করলেও রাজনৈতিকভাবে এর প্রতিবাদ করার সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “আমার উম্মত যখন একজন জালেমকে এই কথা বলতে ভয় পাবে যে, “তুমি একটা জালেম” তখন আমার উম্মতের বিদায়”। তাই যেটা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ফরজ করেছেন সেটা থেকে বিরত রাখার অধিকার এই জমিনে কারো নেই। আর এটা থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার এমন এক জালিমের কাছে করা হচ্ছে, যে এই জমিনে আল্লাহ্’র হুকুম প্রতিষ্ঠার কাজকে ‘জঙ্গিবাদ’ কিংবা ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করে (নাউজুবিল্লাহ)। এটা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা, তাঁর রাসূল ও মু‘মিনগণের নিকট অত্যন্ত লজ্জার বিষয়।
প্রকৃতপক্ষে, ইসলামী আদর্শ এবং এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দেখানো পথে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম বাদ দিয়ে যখন মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনের শিক্ষা দেওয়ার সহজ পদ্ধতি বেছে নেওয়া হয়, তখন একটা সময় মাদ্রাসা টিকিয়ে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আরো ভয়ংকর ব্যাপার ঘটে যখন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে আলেম-ওলামাগণের জীবিকার বিষয়টি এক করে ফেলা হয়। একটা সময় ব্যক্তিগতভাবে ইসলাম পালনের বিরুদ্ধে কিংবা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) অবমাননার বিরুদ্ধে অথবা মুসলিম গণহত্যার বিরুদ্ধে সামান্য প্রতিবাদও অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। ফলে তখন একদিকে মাদ্রাসা-জীবিকা, অন্যদিকে, ইসলাম। একটাকে বেছে নিতে হয়। এখানে তাই ঘটেছে। ইসলাম তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাজনীতি ছেড়ে দিতে হচ্ছে। যেটা অত্যন্ত হতাশাজনক।
তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক পথ বেছে নেওয়া উচিত। কোন সহজ কিংবা কঠিন পথ নয়। কোন আপোষের পথ নয়। একটাই পথ, যেটা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর পথ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর সাহাবাদের সমন্বয়ে একটি দল গঠনের পর এর মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে ইসলামের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি করে অবশেষে ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গের নুসরাহ সহায়তায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ইসলাম বাস্তবায়ন করেছিলেন। তাই এই লক্ষ্যে সত্যনিষ্ঠ দল ‘হিযবুত তাহ্রীর’ এর সাথে একত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি একমাত্র দল যেটি দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর দেখানো পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ‘হিযবুত তাহ্রীর’ তার লক্ষ্যে অবিচল এবং এক্ষেত্রে কোন শাসকের রক্তচক্ষুকে পরোয়া করে না, যা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত।
- মো জহিরুল ইসলাম
“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ইসলামী স্কলারদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর”
খবরঃ
শিশুদের জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রেখে একটি আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নত জাতি গঠনে অবদান রাখতে হজযাত্রী এবং আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, আপনাদের এবং আলেম-ওলামাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে আমাদের শিশুরা এটি থেকে দূরে থাকতে পারে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত হতে পারে। গতকাল রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হজ অফিসে হজ কর্মসূচি-২০২৩ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। (mzamin.com/news.php?news=56341)
মন্তব্যঃ
এখানে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ বলতে শেখ হাসিনা মূলত ইসলামকে বুঝাচ্ছে আর আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক জাতি বলতে মূলত পশ্চিমা সেক্যুলার চিন্তায় দীক্ষিত ইসলামবিদ্বেষী প্রজন্মকে বুঝাচ্ছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা হজযাত্রী ও আলেম-ওলামাদেরকে বুঝাতে চাচ্ছে যাতে তারা সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে, যেখানে ইসলামের বাস্তবায়নকে শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যে সীমিত করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, ইসলাম পালনকে সংযুক্ত করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ, বিজ্ঞানহীনতা, পশ্চাদপদতা, প্রতিক্রিয়াশীল ইত্যাদি বিশেষণের সাথে। সে কৌশলে এই হুমকি দিচ্ছে যদি আলেম-ওলামারা কিংবা কোন রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়নের কথা বলে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ট্যাগ দেয়া হবে এবং নিষিদ্ধ করা হবে। যেমন, নব্যুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক রাজনৈতিক দল ‘হিযবুত তাহ্রীর-কে কোন যুক্তি প্রমাণের তোয়াক্কা না করে হাসিনা সরকার ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করেছিল।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামী আদর্শের প্রতি শেখ হাসিনার বিদ্বেষ মূলত তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনার ফসল নয় বরং তা হচ্ছে তার পশ্চিমা প্রভূদের শিখিয়ে দেয়া চিন্তার প্রতিফলন। তার এই বক্তব্য মূলত পশ্চিমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-এর নামে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমর্থনেই করা। পশ্চিমারা ইসলামের উত্থানের ব্যাপারে ভীত, সুতরাং তারা এধরণের ন্যারেটিভ তৈরী করবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, আর এটিও অস্বাভাবিক কিছু নয় যে শেখ হাসিনা তাদের অনুকরণ করে তাদের ভাষাতেই কথা বলবে। সুতরাং তার এই বক্তব্যে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নাই বরং হাসিনাসহ মুসলিম বিশ্বের সকল শাসকরাই পশ্চিমাদেরকে নিজেদের পশ্চিমাত্ব দেখানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টায় লিপ্ত থাকে।
পশ্চিমারা বলতে চায়, তাদের তথাকথিত বিজ্ঞানভিত্তিক ও উদার সমাজব্যবস্থা এবং তাদের সেক্যুলার চিন্তাভাবনা অন্য সকল আদর্শ বা চিন্তা থেকে উন্নততর। তাদের মতে ধর্মকে ত্যাগ করে সেক্যুলারিজমকে আকড়ে ধরার কারণেই মূলত তাদের এই নাটকীয় উত্থান। তাই তারা মুসলিমদেরকেও ইসলাম ত্যাগ করে সেক্যুলারিজমকে গ্রহণের আহ্বান জানায়। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে দেখলে দেখব, পশ্চিমাদের অন্ধকার যুগ হিসেবে পরিচিত ইউরোপের মধ্যযুগের সময় মুসলিমের স্বর্ণযুগ চলছিল শুধুমাত্র পরিপূর্ণ ইসলামকে খিলাফত রাষ্ট্রের মাধ্যমে চর্চার কারণে। মুসলিমদের বর্তমান দুরবস্থা শুরু হয় মূলত একশত বছর পূর্বে যখন ইসলামী শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় এবং আমরা ইসলামকে রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ত্যাগ করে সেক্যুলারিজমের আলোকে এটিকে শুধু ধর্মচর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলি। সেক্যুলার ব্যবস্থা মুসলিমদেরকে ভিশনহীন জাতিতে পরিণত করে ফেলেছে। ফলে, এ জাতি এখন আর গবেষণা আর আবিষ্কারে মনোযোগ দেয় না, নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারে গবেষণা করে না।
সুতরাং ইসলাম থেকে দূরে সরে নয় বরং ইসলামকে আকড়ে ধরেই মুসলিম উম্মাহ্ তার হারানো গৌরব ও সম্মান ফিরে পেতে পারে। ইসলাম বাস্তবায়নের কারণেই খিলাফত রাষ্ট্র ১৪০০ বছর ধরে তিন মহাদেশে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিল। এ লম্বা সময়ে মুসলিমরা পৃথিবীকে দিয়েছিল অনেক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তি। শিক্ষা, চিকিৎসা, সামরিক, ন্যায়বিচার ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে এই লম্বা সময়ে সকল প্রতিপক্ষকেই খিলাফত রাষ্ট্র টপকে গিয়েছে অতি সহজেই। ইউরোপের আকাশ যখন মধ্যযুগের অমাবস্যায় অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল তখন খিলাফত রাষ্ট্রের আকাশ ছিল ভরা পূর্নিমায় জ্বলজ্বল। উন্নত নগরায়ন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সর্বোতকৃষ্ট নাগরিক সুবিধা, গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সামরিক ও রাজণৈতিক নেতৃত্ব তৈরিকরণ ইত্যাদি সবকিছুতেই ইসলামী সভ্যতা ছিল ঈর্ষণীয় অবস্থানে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“আলোচনায় রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার ও স্যাংশন”
খবরঃ
বাংলাদেশে ছয়টি বিদেশি দূতাবাসের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার। যেসব দেশ স্যাংশন দিয়েছে তাদের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ। আর প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এইসব বিষয় নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নিয়ে দুইবার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ নিয়ে কথা বললেন। প্রথম তিনি বলেছেন, যারা আমাদের স্যাংশন দিয়েছে তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু কিনব না। এরপর গতকার সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তাদের সঙ্গে আমরা লেনদেন করব না। মঙ্গলবারই আবার যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়। আর মঙ্গলবার রাতে বিবিসিতে প্রচার হওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। (https://www.ittefaq.com.bd/644187/আলোচনায়-রাষ্ট্রদূতদের-বাড়তি-নিরাপত্তা-প্রত্যাহার-ও)
মন্তব্যঃ
বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার এবং যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী জ্বালাময়ী বক্তব্য শুনে শেখ হাসিনাকে পশ্চিমা চাপের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভাবার কোন কারণ নেই। পশ্চিমা দাসত্ব বজায় রেখে তার আকস্মিক এই পশ্চিমাবিরোধী অবস্থান মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাসিনা সরকারের ধূর্ত ম্যাকিয়াভেলিয়ান কৌশলের অংশবিশেষ। ২০০৮ সালে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির সমঝোতায় ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই হাসিনা সরকার উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত সম্পদসহ (জ্বালানি খাত, গভীর সমুদ্র বন্দর, বিদ্যুৎ) দেশের প্রতিরক্ষা খাতকে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের কাছে সমর্পণ করে আসছে। উৎপাদন-বন্টন চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন-বৃটিশ কোম্পানিগুলোকে আমাদের গ্যাস সম্পদ ইজারা দিয়েছে। যৌথ সামরিক মহড়ায় (CARAT) অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপনিবেশিক আমেরিকার মেরিটাইম এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা ছাড়াও, এখন তাদের কোম্পানীগুলোকে আমাদের অফশোর ব্লকে সুযোগ অন্বেষণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং জনগণকে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক আধিপত্যের অধীনে রাখার জন্য নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে আঁতাত করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ACSA ও GSOMIA’র মত দেশবিরোধী সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সম্প্রতি তার ত্রিদেশীয় সফরের (জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য) আগে মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে “ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা” ঘোষণা করেছে। এমতাবস্থায় হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী সাহসী বক্তব্য দিয়ে জনগণের সাথে ধোঁকাবাজি করছে এবং জনগণের সহানূভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে যেন জনগণ তাকে বিশ্বাসঘাতক ও বেঈমান হিসেবে সাব্যস্ত না করে। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা ও নিন্দার মাধ্যমে সে বুঝাতে চায় তার সরকার কখনোই পশ্চিমা চাপ ও তাদের স্যাংশনের কাছে মাথা নত করেনি। বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সে এই ম্যাসেজ দিতে চায় যে তার সরকার যেকোন বিদেশী হস্তক্ষেপ ও চাপ মোকাবেলা করতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যের দালাল শেখ হাসিনা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে, কিন্তু দরজার আড়ালে সে আসলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দর কষাকষি করছে।
প্রকৃতপক্ষে, শেখ হাসিনার মত বিশ্বাসঘাতক শাসক হচ্ছে পশ্চিমা সমর্থিত ম্যাকিয়াভেলিয়ান রাজনীতির ফসল যে ক্ষমতা অর্জন এবং জনগণকে বোকা বানানোর জন্য প্রতারণাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি চতুরতা ও ধূর্ততার সাথে জনগণের সাথে প্রতারণা করার কৌশল সম্পর্কে বলেছিল, “Those princes who have done great things have considered keeping their word of little account, and have known how to beguile men’s minds by shrewdness and cunning”। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা বিশ্বসহ মুসলিম বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থার গর্ভে ম্যাকিয়াভেলিয়ান ধ্যান-ধারণায় গভীরভাবে সংক্রমিত রাজনীতিবিদদের জন্ম হচ্ছে যারা ধূর্ত কথার আড়ালে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণা করার আর্ট সুদক্ষতার সাথে আয়ত্ত করেছে।
আমরা যতক্ষণ এসব শাসকদের হাতে উম্মাহ্’র দেখভাল ও দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে রাখবো ততক্ষণ তারা ম্যাকিয়াভেলিয়ান পলিসি “End Justify the Means” কে ব্যবহার করে ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখতে উপনিবেশবাদী কাফেরদের কাছে উম্মাহর সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। তাদের নেতৃত্বের অধীনে আমরা কখনোই পশ্চিমা আধিপত্য থেকে বের হয়ে আসতে পারবো না। এমতাবস্থায় পশ্চিমা আধিপত্যের অবসান ঘটাতে দেশের নিষ্ঠাবান জনগণ ও রাজনীতিবিদদের অবশ্যই প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে। ইসলামে রাজনীতির (সিয়াসাহ) মূল দর্শন হচ্ছে জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা। ইসলাম “End Justify the Means” নামক ম্যাকিয়াভেলিয়ান নীতিকে স্বীকৃতি দেয় না। খিলাফত রাষ্ট্রে শাসকগণ শারীআহ্ বিধিবিধান দ্বারা আবদ্ধ, অর্থাৎ তাদের গৃহিত “Means/Actions have to be Justified by Sharia”. পশ্চিমা পরাশক্তির চাপে দেশের অভ্যন্তরীন ও বহিঃস্থ বিষয়াদিকে তাদের হাতে সমর্পণ করা শারীআহ্ কর্তৃক নিষিদ্ধ: “এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” (সূরা আন-নিসা: ১৪১)। শারীআহ্ নির্ধারিত শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে এঅঞ্চলসহ বিশ্বব্যাপী আমেরিকা ও অন্যদের আধিপত্যকে ধ্বংস করতে আমেরিকা, বৃটেন ও তাদের মিত্রদেরকে একে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে এবং পশ্চিমা মদদপুস্ট ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করে বিশ্বজুড়ে ইসলামের মাহাত্ব্য প্রচার করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পৃথিবীকে আমার সামনে সংকুচিত করলেন, ফলে আমি এর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত দেখতে পেলাম; এবং যতদূর পর্যন্ত দেখেছি আমার উম্মতের কর্তৃত্ব ঐ পর্যন্ত পৌছে যাবে” (মুসনাদে আহমাদ)।
- সিফাত নেওয়াজ
“যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বলি ৪৫ লাখ মানুষ”
খবরঃ
একুশ শতকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাত কোনটি? অনেকেই হয়ত বর্তমানে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলবেন। না ইউক্রেন যুদ্ধ নয়! হতাহতের বিচারে চোখ কপালে উঠারমত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে খোদ মার্কিন একটি সংস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড পাবলিক এ্যাপেয়ার্সের কস্ট অফ ওয়ার প্রজেক্টে বলা হয়েছে, টুইনটাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে তাতে ৪৫ লাখেরও বেশি লোক মারা গেছে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বব্যাপী কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। মার্কিন সে আগ্রাসীনীতির অংশ হিসেবে আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণ চালানো হয়। এতে অসংখ্য নীরিহ মানুষ প্রাণ হারান বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের বলি হয়েছে যেসব অঞ্চলের মানুষ সেগুলোহলো পাকিস্তান, সিরিয়া এবং ইয়েমেন সহ আরও অসংখ্য দেশ। এইদেশগুলোতে বিভিন্নপক্ষ বিবাদমান থাকলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় বলাহচ্ছে, “মার্কিন সন্ত্রাসবাদ সহিংসতাকে তীব্রতর করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।” ( https://www.youtube.com/watch?v=mNsA1IQuFRk )
মন্তব্যঃ
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মার্কিন আধিপত্যের জন্য সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে স্যামুয়েল হানটিংটন (ক্ল্যাশ অব দ্যা সিভিলাইজেশন এর লেখক)-এর মত পশ্চিমা গবেষকরা যখন ইসলামী রাষ্ট্রের উত্থান-কে তাদের গবেষণায় তুলে নিয়ে এসেছে, তখন থেকে আমরা প্রত্যক্ষ করি সারা বিশ্বব্যাপী ইউরোপীয় দেশগুলোর পাশাপাশি আমেরিকা ইসলামের উত্থান ঠেকাতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, তারা বিশ্বকে দুইভাগে বিভক্ত করে। মার্কিনপন্থী অঞ্চলসমূহকে “শান্তি প্রতিষ্ঠিত অঞ্চল (zones of peace)” এবং মার্কিনবিরোধী অঞ্চল সমূহকে “হাঙ্গামাপূর্ণ অঞ্চল (zones of turmoil)” হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ছদ্দাবরণে সারাবিশ্বব্যাপী সহিংসা ছড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে “zones of turmoil” অধিভুক্ত অঞ্চলসমূহে। উদ্দেশ্য মার্কিন আধিপত্যকে টিকিয়ে রাখতে সম্ভাব্য হুমকিগুলোকে দমন করা। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০০১-২০২৩ পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ্যেরও বেশি নীরিহ মানুষকে হত্যা এবং কোটি কোটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত্ত করে এই বিশ্ব সন্ত্রাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্যামুয়েল পি.হানটিংটঙ্গের মতে, “পশ্চিমারা তাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ কিংবা ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে বিশ্বকে জয় করেনি …বরং, করতে পেরেছে বিশ্বব্যাপী সুসংগঠিত সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণে। পশ্চিমারা তা ভুলে যায় কিন্তু বাকিরা তা ভুলেনা”। সুতরাং, এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, পশ্চিমাদের ওয়েস্টফিলিয়া শান্তি চুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ শান্তি মিশন যে সম্পূর্ণরূপে ভন্ডামি আর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব সংস্থার কাজ হচ্ছে শুধু পশ্চিমা কাফের রাষ্ট্রসমূহের সহিংসতাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হিসেবে বৈধ করা। ঠিক যেমনটি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর যখন তাদেরকে বলা হয় “তোমরা জমিনে বিশৃংখলা করোনা”, তারা বলে, “আমরাতো কেবল শান্তি স্থাপনকারী” (সূরা-বাকারা-১১)”।
এই বাস্তবতায় আমাদেরকে অবশ্যই “আমেরিকা”কে তার প্রকৃত চেহারায় চিনতে হবে। তার আগ্রাসী নীতির বাহিরে আমাদের এই অঞ্চলের কোন মুসলিম ভূখন্ডও অবশিষ্ট নাই। তাই ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে তার আধিপত্য বিস্তার করে এই অঞ্চলে ইসলামের উত্থানকে ঠেকাতে আমেরিকা বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশে তথাকথিত গণতন্ত্রের জন্য আমেরিকার মাতব্বরি নব্য-উপনিবেশবাদী আগ্রাসন বৈকি আর কিছুই না। বাংলাদেশকে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের বেড়াজালে আটকিয়ে, পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা ও সম্পর্কের নামে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং টাইগার শার্কের মত সামরিক মহড়ার আড়ালে মূলত আমাদের মুসলিম সামরিকবাহিনীকে মার্কিনীরা তাদের স্বার্থে ব্যবহৃত করতে চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে আকসা এবং জিসোমিয়া চুক্তির মাধ্যমে আমাদের এই পবিত্রভূমি এবং সেনাবাহিনী যাতে তাদের যুদ্ধের গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারের পিছনে মার্কিনীদের দু’টো মূল উদ্দেশ্য রয়েছে, (১) যেকোনমূল্যে ইসলাম তথা আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন ঠেকানো এবং (২) চীনকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না দেওয়া। এই দুই নীতিকে কেন্দ্র করেই যখন তারা এগোচ্ছে তখন আমাদের এই বিষয়টা অনুধাবন করা জরুরী যে আমাদের জান-মাল পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত মার্কিন আগ্রাসনের হুমকিতে ভয়াবহভাবে ধ্বংসে পরিণত হতে যাচ্ছে। আর, এটি করতে মার্কিনীদের ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মত এই অঞ্চলের দালাল আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। আমরা দেখছি, আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী যেকোন মূল্যে মার্কিনীদের সাথে সম্পর্ক রাখতে বদ্ধ পরিকর। কেননা উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার বিনিময়ে এরা চায় নিজের ক্ষমতার সিংহাসনকে সুরক্ষিত রাখতে। যা বর্তমান দালাল সরকার শেখ হাসিনার কথা এবং কাজে গত কয়েকদিন ধরে সুস্পষ্ট। সুতরাং, আমরা যদি এইসব দালাল শাসকদের অতিদ্রুত উচ্ছেদ করে এই অঞ্চলকে খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে মার্কিন আগ্রাসন থেকে সুরক্ষিত না করি; তাহলে বুঝতে হবে, দ্রুতই আমরা মার্কিন ধ্বংসনীতির বলি হতে চলেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম (খলীফা) হলো সে ঢাল যার পিছনে দাঁড়িয়ে মুসলিমরা লড়বে এবং কাফিরদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করবে” (সহীহ্ মুসলিম)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম
“আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে, প্রস্তুত সরকার”
খবরঃ
বাংলাদেশের ওপর আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে। মানবাধিকার ইস্যু ছাড়াও গণতন্ত্র খর্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্গে জড়িত সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ওপর চলতি মাসেই নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে সরকার। (https://kalbela.com/ajkerpatrika/firstpage/5y2kyu827m)
মন্তব্যঃ
কোন দেশের উপর অন্য দেশের সামরিক অনুপ্রবেশ বা আক্রমণকে দেশটির স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ হিসেবে মানুষ যেমন সহজেই বুঝতে পারে (যেমনটা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার মত ঘটনা), কিন্তু আমেরিকা বা অন্যকোন পশ্চিমা দেশ অথবা দেশগুলোর জোট (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান (জাতিসংঘ, আইএমএফ) ইত্যাদি কর্তৃক অন্যদেশের উপর ‘স্যাংশন’ বা নিষেধাজ্ঞা দেয়াকে কিন্তু একইরকমভাবে ঘৃণ্য হিসেবে দেখা হয় না। যেমন: বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, সরকারের যুলুম ও দুঃশাসনের জর্জরিত জনগণের সরকারবিরোধী আবেগকে ব্যবহার করে “স্যাংশন” অস্ত্রটিকে পরিত্রাণের পথ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এই ‘স্যাংশন’ অস্ত্র ব্যবহার করেই আমেরিকা প্রায় সারা বিশ্বে তার রাজত্ব চালাচ্ছে। ‘স্যাংশন’-কে ভয়ংকর, প্রভাবশালী ও কার্যকর রাখার জন্য আমেরিকা অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন বা কনভেনশন (UN Charters & Conventions), আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান (UN, ICC) এবং জোট (NATO, QUAD, EU, ASEAN etc.) গঠন করে। এসবের সমন্বয়েই চলে American Hegemony বা আমেরিকান রাজ। এখানে যেসব দেশ আপোসে নিজেই নিজের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা বা স্বাধীনতাকে আমেরিকার ইচ্ছার কাছে সপে দেয়না, এই ‘স্যাংশন’ ব্যবহার করে আমেরিকা প্রথমে তাদেরকে ক্রিমিনালাইজ করে বা খারাপ হিসেবে তুলে ধরে এবং পরবর্তিতে বাগে না আসলে আমেরিকা সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি আগ্রাসন চালিয়ে দেশসুদ্ধ প্রায় ধ্বংস করে দেয়। যেমন ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া, ইরান, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিউবা, ভেনেজুয়েলা, পাকিস্তান ইত্যাদি। শুধু তাই নয় যেসব দেশ এই আমেরিকান রাজের সাথে দরকষাকষি করতে চায় তাদেরকেও এই স্যাংশন ব্যবহার করে দমন করা হয়।
মার্কিন আধিপত্যবাদ তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন মুখরোচক শব্দ যেমন স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব, মানবাধিকার ইত্যাদি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। হাসিনা সরকার জানে তারাও আমেরিকান রাজ-এরই অংশ, কারণ তারা পশ্চিমাদের প্রণীত ও নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থাকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। উপরে উপরে তারা যতই মার্কিন বিরোধিতার ভাব ধরুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তারা আমেরিকার সব চাওয়াই মেনে নিচ্ছে। তাছাড়া, তার পক্ষে চীন, রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়ে এই আমেরিকান রাজের Status Quo কে ভেঙে ফেলাও সম্ভব না। কারণ তারাও সেক্যুলার বিশ্বব্যবস্থা দ্বারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাধা।
একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব এই বিশ্বব্যবস্থাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে নতুন Status Quo তৈরি করা। কারণ এটি ইসলামী আক্বিদার স্পিরিটুয়াল শক্তি দিয়ে মুসলিমদের একত্র করতে পারবে। এই শক্তি একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, ফ্রীডম ইত্যাদিকে প্রত্যাখ্যান করে ও মুসলিম জাতিকে অন্যের অধীনস্থ থাকতে নিষিদ্ধ করে, অন্যদিকে পুরো মানবজাতির দায়িত্ব গ্রহণের ফারজিয়া আরোপ করে। একারণেই ইসলামের শক্তিতে বলিয়ান খলিফা মুসলিম দেশগুলোকে খিলাফতের মধ্যে নিয়ে এসে এবং উম্মাহর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুতই এই আমেরিকান রাজকে পর্যদুস্ত করে নতুন এক বিশ্ব রচনা করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “এভাবে আমি তোমাদেরকে আদর্শ জাতি করেছি, যেন তোমরা মানবগণের জন্য সাক্ষী হও এবং রাসূলও তোমাদের জন্য সাক্ষী হয়” (সুরা বাকারা: ১৪৩)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর“
খবরঃ
করযোগ্য আয় না থাকলেও আগামী বছর থেকে আয়কর দিতে হবে। রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পেতে শূন্য রিটার্ন জমা (করযোগ্য আয় না দেখিয়ে রিটার্ন জমা) দিলেও দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। কর অফিস থেকে রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যাবে না। কর আদায় বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আসন্ন বাজেটে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) বাতিলের সুযোগ দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। (Jugantor.com/todays-paper/first-page/677259/আয়-না-থাকলেও-দুই-হাজার-টাকা-কর)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের বিদ্যমান কর ব্যবস্থায় পরোক্ষ করের (ভ্যাট, আমদানি শুল্ক ইত্যাদি) নামে করের বড় বোঝা মূলত সমাজের প্রান্তিক জনসাধারণকেই বহন করতে হয় যেখানে খাদ্য, চিকিৎসাসহ প্রায় সকল ব্যয়ের উপর সেবা গ্রহীতার আর্থিক সামর্থ বিচার না করে সমপরিমাণ কর (ভ্যাট এবং বিভিন্ন প্রকার শুল্ক) আদায় করা হয়। বর্তমানে দেশের মোট কর আয়ের ৬৫% আসে এই পরক্ষ কর থেকে। বিস্তারিত পড়ুনঃ thefinancialexpress.com.bd/bn/’জিডিপির-অনুপাতে-বাংলাদেশের-প্রত্যক্ষ-কর-বিশ্বের-অনেক-দেশের-তুলনায়-কম’-1668857303। অগ্রীম প্রত্যক্ষ করের নামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা প্রাপ্তি এবং আয়ের ক্ষেত্রে অগ্রীম আয় কর (Advance Income Tax) বা উৎস কর (Tax Deducted at Sources) কেটে রাখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যানবাহনের জন্য প্রতি বছর বিশাল অংকের অগ্রীম আয়কর এবং পেশাজীবিদের সম্মানীর উপর (১০-১৫%) অগ্রীম কর অর্থ প্রদানকারী সংস্থা কেটে রাখে। বছর শেষে এমনও দেখা যায়, কোন ব্যক্তির সারা বছরের আয় থেকে বেশী কর ইতিমধ্যে সরকার কেটে রেখেছে। কিন্তু, সরকারী কোষাগার থেকে অতিরিক্ত আদায়কৃত কর ফেরত পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। এভাবে, ব্যক্তির আয়ের উপর কর আরোপ করে পুঁজিবাদী সরকারগুলো জনগণের অর্থ কাঠামোগতভাবে (systematically) চুরি করে জনগণের উপর যুলুম করছে। আয় না থাকলেও শুধুমাত্র টিন নম্বর থাকার জন্য ২,০০০ টাকা আদায় নিঃসন্দেহে এই যুলুমের আরও একটি স্তর বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু, সুশীল সমাজের মুখোশ পরা পশ্চিমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দালাল বুদ্ধিজীবিরা পুঁজিবাদী সরকারের এই যুলুমের সমালোচনা করে না বরং তারা দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর অনুকরণে আরও অধিক মাত্রায় কর আরোপের পরামর্শ দিচ্ছে। মুসলিমদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি কি হওয়া উচিত পশ্চিমাদের অনুসরণ না কি শারীআহ্? নিশ্চয়ই শারীআহ্! আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যদি সেই জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের উপর আসমান ও জমিনের যাবতীয় নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” [সুরা আল আরাফ: ৯৬]।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার করভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যয় ব্যবস্থাপনার বিপরীতে ইসলামের রয়েছে স্বতন্ত্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। ইসলামে সকল প্রকার আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর নিষিদ্ধ। আহমদ হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “কর আদায়কারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না”। খিলাফত রাষ্ট্রে আয়ের খাত এবং ব্যয়ের খাত শারীআহ্ দ্বারা বিধিবদ্ধ। বায়তুল মালের আয়ের খাতসমূহ আনফাল, গনিমত, মালে ফা‘ই এবং খুমুছ, খারাজ, জিযিয়া, গণমালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে উপার্জিত আয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ থেকে অর্জিত রাজস্ব, বিভিন্ন সীমান্তে সংগৃহীত শুল্ক, গুপ্তধন এবং ছোট খনির এক পঞ্চমাংশ(খুমুছ), এবং যাকাত বাবদ আদায়কৃত সম্পদ। রাষ্ট্রের বিশেষ প্রয়োজনে অর্থের প্রয়োজন হলে রাষ্ট্র সামর্থ্যবান মুসলিমদের সম্পদের উপর কর ধার্য্য করতে পারে। খিলাফত রাষ্ট্র কখনও সম্পদহীন নাগরিকদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয় না, বরং তারা প্রয়োজন পূরণের অক্ষম হলে উম্মাহ্’র অভিভাবক হিসেবে খলিফা বায়তুল মাল থেকে ভাতা প্রদান করে তাদের প্রয়োজন পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খিলাফত রাষ্ট্রের ১৪০০ বছরের ইতিহাস স্বাক্ষী জনগণের আয়ের উপর কর না বসিয়ে কিভাবে খিলাফত একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম