শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি, ঘোষণাপত্রে এলো যেসব দাবী




খবরঃ

ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণজমায়েত কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গাজা’। ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দাবি জানানো হয়— ইসরায়েলি গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে; যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। মুসলিম নেতাদের প্রতি দাবি জানানো হয়— ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়—বাংলাদেশি পাসপোর্টে 'Except Israel' শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-665426)

মন্তব্যঃ

দেশের নারী ও শিশুরা যখন ফিলিস্তিনের মুক্তির আহ্বানে সাড়া না দেয়া মুসলিম শাসকদের ‘চূড়ি পরে’ থাকার কথা বলে নিজেরাই যুদ্ধে যেতে চাইছে, তখন এধরনের একটা বড় সমাবেশ থেকে ফিলিস্তিন মুক্তির কোন রোডম্যাপ না দিয়ে ‘একই পুরোনো গদবাধা ঘোষণা’ দেয়া মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতির সাথে উপহাসের শামিল। এই দীর্ঘ ঘোষণাপত্রে শুধুমাত্র যে ফিলিস্তিন মুক্ত করতে সামরিক অভিযানের গণদাবীকে পাশ কাটানো হয়েছে তা নয়, বরং এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুসলিম হত্যার মাস্টারমাইন্ড আমরিকাকে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। দেশের ক্ষমতার রাজনীতির সমীরকণে আমেরিকার আশির্বাদ লাভের জন্য এই ঘোষণাপত্রে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের মদদদাতা আমেরিকার নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনে ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবী জানিয়ে প্রকারান্তরে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে এবং আমেরিকার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রচারণা করা হয়েছে। অথচ, বিশ্বব্যাপী ছাত্রজনতার মূল দাবী “from the (Jordan) river to the (Mediterranean) sea, Palestine will be free”, তথা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের সম্পূর্ণ বিলোপসাধন। 

 এটা লজ্জাজনক যে, সমাবেশে উপস্থিত এমনসব ব্যক্তিত্ব যারা নিজেদের বিজ্ঞ ও পণ্ডিত মনে করেন তারা কিভাবে তথাকথিত “আন্তর্জাতিক আইন”, “জাতিসংঘ” ও “বিশ্ববিবেক”কে আহ্বান জানান, যেখানে তারা ভালো করেই জানেন এই বিশ্ববিবেক মৃত এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইন হচ্ছে পশ্চিমাদের নিপীড়নের হাতিয়ার। মঞ্চে উপস্থিত স্বনামধন্য আলেম ও বুদ্ধিজীবিদের নিকট থেকে কীভাবে এমন একটি বিবৃতি বের হতে পারে যেখানে গাজার মুসলিমদের রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের আহ্বান নেই, এমনকি বিশ্বাসঘাতক মুসলিম শাসকদের সম্পর্কে একটি শব্দও নেই যারা গাজার অসহায় মুসলিমদের ভুলে গিয়ে ট্রাম্পের পশ্চাৎদেশ লেহনে ব্যস্ত। এই ঘোষণাপত্রে যেভাবে তথাকথিত “জাতিসংঘ” ও “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের” নিকট দাবী জানানো হয়েছে, যেন আমরা ইসলামবিহীন একটি উম্মাহ্‌, যেন শরিয়া উধাও হয়ে গেছে, এবং যেন ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা জাতিসংঘের বিষয়, ইসলামী উম্মাহ্‌’র কর্তব্য নয়!

দেশের স্বনামধন্য আলেম ও বুদ্ধিজীবিদের ইসলামের ব্যাপারে আল্লাহ্‌-কে ভয় করা আবশ্যক। যেসব শাসক ও রাজনীতিবিদরা কাফির-মুশরিকদের নিকট নিজের দেশ এবং মুসলিম হিসেবে আত্মমর্যাদাকে বিক্রি করে দিয়েছে, তাদের মুখপাত্র হবেন না। জনগণকে স্পষ্ট করে দিন, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট কোন দাবী জানিয়ে লাভ নেই। এবং ট্রাম্পের পশ্চাৎদেশ লেহনকারী শাসকদের নিকটও দাবী জানিয়ে লাভ নেই, কারণ তারা আমেরিকাকে খুশি করতে বিভিন্ন অজুহাতে মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে বন্দি করে রেখেছে। একমাত্র দাবী জানাতে হবে মুসলিম সামরিক বাহিনীর কাছে, যেন গাজায় মুসলিমদের সাহায্যের পথে প্রধান বাধা পশ্চিমা দালালগোষ্ঠীকে সরিয়ে মুসলিম উম্মাহ্‌’র প্রকৃত অভিভাবক খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে; খলিফা মুসলিম সামরিক বাহিনীগুলোকে একত্রিত করবে এবং আল্লাহ্‌’র হুকুম পালনের লক্ষ্যে ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকানসহ সকল অধিকৃত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে মুক্ত করতে জরুরী ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সামরিক অভিযান শুরু করবেন। তাই, আমাদের দায়িত্ব এইমুহুর্তে তাদের নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া যারা নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক সংগ্রামরত। হিযবুত তাহ্‌রীর ছাড়া সেটি আর কে?

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post