রোহিঙ্গা বিষয়ে খলিলুর: আমাদের ঘাড়ে গাজা বসে আছে, সেটি নিয়ে মিছিল-মিটিং নেই

 


খবরঃ 

বাংলাদেশে যখন বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে, তখন ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের নামে বহুজাতিক কোম্পানির আউটলেটে হামলা চালিয়েছে একদল তরুণ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, “একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড (ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া) করারই একটা চেষ্টা হিসেবে আমাদের এখন ধারণা হচ্ছে। এটার একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।” ... আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের ওপর একটি গাজা বসে আছে—রোহিঙ্গা। সেটা নিয়ে কারও মিটিং-মিছিল নেই, আলাপ-আলোচনা নেই। তিনি আরও বলেন, “আমার ঘাড়ের ওপর একটা সমস্যা বসে আছে। নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? (https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/94996/রোহিঙ্গা-বিষয়ে-খলিলুর-আমাদের-ঘাড়ে-গাজা-বসে-আছে

মন্তব্যঃ 

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ’ ড. খলিলুর রহমানের বক্তব্যে মনে হচ্ছে যেন উনি এবং অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে খুব চিন্তিত। তাই উনি চাচ্ছেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিটিং-মিছিল, আলাপ-আলোচনা হউক। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। কারণ, তিনি যদি রোহিঙ্গা সমস্যার প্রকৃত সমাধান চাইতেন তাহলে তা নিয়ে শুধু মিটিং-মিছিল করার আহ্বান জানাতেন না। বরং, দখলদার মিয়ানমারসরকারের কবল থেকে আরকানকে মুক্ত করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিজভূমি ফিরিয়ে দিতে সেনাবাহিনী প্রেরণ করার কথা বলতেন। ক্ষমতায় বসে থেকে এখন তারা কী অজুহাত দিবেন? গাজায় সাহায্যের ক্ষেত্রে দুরত্ব ও সামরিক সক্ষমতার যে অজুহাত আপনারা দিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যের ক্ষেত্রে কী তা দিতে পারবেন, যেখানে মিয়ানমার আমাদের সীমানায় অবস্থিত এবং আমাদের সামরিক সক্ষমতা তাদের চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তী সরকার ভূমিকম্প পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় খুনী মিয়ানমার সরকারকে সামরিক সহায়তা করতে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হয়ত ভুলে গিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার সময়েও উম্মাহ্‌ একইভাবে তার দায়িত্ব পালন করেছে। বরঞ্চ, দায়িত্ব পালন করেনি মার্কিন-বৃটেন-ভারতের মদদপুষ্ট তৎকালীন যালিম হাসিনা সরকার- তারা পালিয়ে আসা খুনী বার্মিস সৈন্যদের আশ্রয় দিয়েছে। বর্তমানেও উম্মাহ্‌ ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সমর্থনে সাধ্যমত বিক্ষোভ করছে, কিন্তু আপনারা পূর্বের যালিম হাসিনা সরকারের মতই লেবানন সীমান্তে ‘অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষায়’ জাতিসংঘের মিশনে সামরিক সদস্য প্রেরণ করে রেখেছেন। উম্মাহ্‌ আশ্চর্যান্বিত হয়েছে যে, আপনারা গাজার মুসলিমদের সমর্থেনে প্রতিবাদগুলোতে কালেমার পতাকা তুলতে ও আমেরিকার বিরুদ্ধে শ্লোগাণ তুলতে বাধা দিয়েছেন, এই অজুহাতে যে, গাজায় গণহত্যায় দখলদার ইসরায়েলের মদদদাতা আমেরিকা মাইন্ড করবে, দেশে ইনভেস্টমেন্ট সামিটের বিদেশীরা মাইন্ড করবে।

মুলতঃ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সরকারের এই মায়াকান্না এই কারণে নয় যে, মুসলিম শাসক হিসেবে এই অসহায় মুসলিমদের পাশে দাড়ানো তাদের দায়িত্ব। বরং জনাব খলিলুর রহমান রোহিঙ্গা বিষয়ে মুসলিমদেরকে মিছিল-মিটিংয়ের আহবান জানাচ্ছেন দুটি বিশেষ মার্কিন স্বার্থকে মাথায় নিয়ে: (১) আমেরিকার জন্য অস্বস্তিকর গাজার গণহত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী গণবিষ্ফোরণকে থামাতে এটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া (২) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জান্তা সরকারকে চাপে ফেলবে, যেহেতু আমেরিকা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে। এই অঞ্চলে চীনের উত্থানকে ঠেকাতে আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্যাট্রেজি, যার জন্য মিয়ানমারের উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া আমেরিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে মার্কিন প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমাণ্ডার জেনারেল জোয়েল বি ভোয়েল এবং দুইজন মার্কিন কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরেও এটি উঠে এসেছে। আমেরিকা চাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতি যেন ভারত থেকে সরে এখন মিয়ানমার কেন্দ্রিক হয়। প্রকৃতপক্ষে, আরাকান, কাশ্মির কিংবা ফিলিস্তিন, আমাদের ঘাড়ে যত গাজা আছে তার মুক্তি এবং সুরক্ষা পশ্চিমাদের কোন দালালদের অধীনে হবে না। বরং এমন নিষ্ঠাবান ও ন্যায়নিষ্ট শাসকদের অধীনে সম্ভব যারা পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকল মুসলিমদের ভূমি জান-মাল-রক্ত-সম্মান সমান দৃষ্টিতে দেখে। খিলাফত রাষ্ট্রই আমাদেরকে এমন শাসক উপহার দিতে পারে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন: মুসলিম উম্মত হল এক জাতি; তাদের ভূমি এক, তাদের যুদ্ধও এক— তাদের শান্তিও এক (সহীহ মুসলিম)।

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম


Previous Post Next Post