আমেরিকান ট্যারিফ বৃদ্ধিতে আমাদেরই লাভ হবে: পিনাকী ভট্টাচর্য

 


খবরঃ

আমেরিকা বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশের উপর অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এই অতিরিক্ত শুল্কের কারণে আমেরিকার বাজারে আমাদের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। বিক্রয় কমে যাবে। এটা বাংলাদেশের একার সমস্যা না সবার সমস্য। এই সমস্যা আমাদের থেকে আমেরিকার জন্য অধিক গুরুতর।…কিভাবে বাংলাদেশ এই সমস্যাকে সুযোগে রূপান্তর করতে পারে? কাঁচামাল আমদানিতে ট্যারিফ শুন্য করতে হবে। এতে উৎপাদন খরচ কমলেও রাজস্ব আয় কমে যাবে। রাজস্ব আয় স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান Mckinsey, BCG, pWc এবং ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানে World Bank, ADB এর সাথে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। (https://youtu.be/Hb-oLfRTqjU?si=KrKCGJjS7eXsIxTt

মন্তব্যঃ

ট্যারিফ আরোপ পরবর্তী বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এবং আমেরিকার প্রতি নতজানুতাই প্রমাণ করেছে। ট্রাম্পের ভাষায় “এসব দেশের নেতারা আমাদের ফোন করছেন। আমার পশ্চাদ্দেশে চুমু খাচ্ছেন”। বাংলাদেশের কতিপয় রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি ও সোশাল মিডিয়া ইনফোলিয়েন্সারাও এক্ষেত্রে ভিন্ন নয়। ট্রাম্প প্রশাসন একটি ভুল হিসাবের মাধ্যমে পাল্টা ট্যারিফ হার ধার্য করলেও এই হারের প্রশ্নটি ইউনুস সরকার এমনকি দেশের তথাকথিত বিখ্যাত অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন করার সাহস পায় নাই। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ মার্কিন পণ্য আমদানিতে গড় শুল্ক ৬ শতাংশ, সবচেয়ে বেশি শুল্ক হুইস্কিতে, প্রথম আলো, এপ্রিল ৬, ২০২৫)। বরং তারা আমেরিকার ট্যারিফকে জনগণের কাছে একটি সুযোগ হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টায় ব্যস্ত। তারা বলতে চাচ্ছে, আমেরিকা থেকে কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে আমাদের দেশে উৎপাদন সস্তা হবে এবং বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগের তথাকথিত FDI এর নামে দেশীয় শিল্প হুমকিতে পড়বে, দেশের সম্পদ ও শ্রম স্বস্তায় ব্যবহার হবে, পরিবেশ ধ্বংস করে তারা মুনাফা নিয়ে চলে যাবে; আর আমাদের অর্থনীতির পরনির্ভরশীলতা ও ঋণগ্রস্থতা বাড়তেই থাকবে। পশ্চিমাদের মুক্তবাজার অর্থনীতির মুখোশ যখন খসে পড়ছে, অথচ তখন এটিকে চ্যালেঞ্জ না করে প্রতিউত্তরে নতজানু অন্তর্বর্তী সরকার চড়াদামে আমেরিকার পণ্য ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকার কাঁচামালের সংগ্রহ ব্যায় (পণ্যের মূল্য এবং পরিবহন ব্যায়) এমনিতেই বেশী। অথচ তাদের উচিত ছিল গার্মেন্টস পণ্যের বিকল্প বাজার খোঁজার হুমকি প্রদান করা, কারণ বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য বিশ্ববাজারে এতটাই সস্তা যে, রপ্তানী বন্ধে আমেরিকাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং তারা ট্রাম্পকে এই ট্যারিফ তিন মাস স্থগিত করার করুণা ভিক্ষা করেছে।

এই সংকটের মূল কারণ হল অর্থনৈতিক নির্ভরতা, যা মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ অংশকে বিদেশী ধাক্কার ঝুঁকিতে ফেলেছে। এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্ব এবং বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা সত্ত্বেও মুসলিম বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগতভাবে খণ্ডিত হয়ে আছে। অর্থনৈতিক পরনির্ভরতার এই চক্রের কারণে ওয়াশিংটনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আজ সরাসরি ঢাকা, জাকার্তা বা লাহোরের লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকাকে হুমকি মুখে ফেলে। আমরা মুসলিম উম্মাহ্‌ যখন এই কৃত্রিম সীমানা ভেঙে এক পতাকা, এক রাষ্ট্র, এক শাসনের অধীনে আসবো, তখন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাধা দূর হবে, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত হবে, অঞ্চলগুলোর মধ্যে সম্পদ সঞ্চালন হবে এবং শক্তি থেকে প্রযুক্তি পর্যন্ত কৌশলগত সকল শিল্প বিকশিত হবে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচিত হবে, ইনশাআল্লাহ্‌। যেখানে আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতি তার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে এবং আমেরিকাসহ কোন উপনিবেশবাদীকে আমদানি-রফতানিকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হবে না। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬১ অনুযায়ী বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি হচ্ছে: “আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল্যায়ন হবে বণিকের নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে, পণ্যের উৎসের উপর ভিত্তি করে নয়। রাষ্ট্র যাদের সাথে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে সে সকল দেশের বণিকদের রাষ্ট্রে বাণিজ্য করতে বাঁধা দেবে, যদি না এক্ষেত্রে উক্ত বণিকের বা পণ্যের বিশেষ অনুমতি থাকে। যে সকল রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি রয়েছে তাদের চুক্তি অনুযায়ী বণিকদের সাথে আচরণ করা হবে”। 

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” [আল-আ'রাফ, আয়াতঃ ৯৬]

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post