Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 91


 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯১তম সংখ্যা । ৪ জুন, ২০২৩


এই সংখ্যায় থাকছে: 


“৪৪ ধরনের সেবার বিপরীতে আসছে বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা”

“টক অব দ্য পলিটিক্স: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা”

“১৮৬ কোটি টাকায় বিক্রি হলো টিপু সুলতানের তলোয়ার”

‘কামরাঙ্গীরচরে তার কথাই আইন’

“জীবন উৎসর্গকারী ৫ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দিল জাতিসংঘ”

“‘ভিসা নীতির’ প্রেক্ষাপটে কর্মসূচি নেবে বিএনপি”







“৪৪ ধরনের সেবার বিপরীতে আসছে বাধ্যতামূলক রিটার্ন জমা”

খবরঃ

বিদ্যমান ৩৮ ধরনের সেবার বাইরে নতুন আরও ৬ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন জমার রশিদ বা ‘প্রুফ অব সাবমিশন অব রিটার্ন’ বা পিএসআর বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। করের আওতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন আয়কর আইনের মাধ্যমে এ বিধান যুক্ত করা হতে পারে। এছাড়া আসছে বাজেটে সেবা নিতে করদাতাদের রিটার্ন জমার রশিদ দেখানোর এই বিধান আরও কঠোর করা হচ্ছে। করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক, ন্যূনতম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। ন্যূনতম এ কর না দিলে মিলবে না সরকারি-বেসরকারি এসব সেবা। (www.banglatribune.com/business/budget/800481)

মন্তব্যঃ

ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে এখানে শাসকশ্রেণী পদ্ধতিগতভাবে জনগণকে শোষণ করে। আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তারা জনগণের পকেট ফাঁকা করার বিভিন্ন রকম সৃজনশীল কৌশল নিয়ে প্রতিবছরই হাজির হয়। আয়কর, ভ্যাট, উৎস কর- ইত্যাদি বাহারি নামের জুলুমের উপকরণ নিয়ে এরা জনগণের সামনে ‘বাজেট’ নামক ভীতিকর নাটকের মঞ্চায়ন করে। সরকার যাতে বেশী কর সংগ্রহ করতে পারে সে জন্যে করের আওতা বাড়ানোর সুযোগের সন্ধান সে সবসময় করতে থাকে। এবার যেমন সরকারী সেবা বিক্রির মাধ্যমে কর সংগ্রহের আওতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এসকল সেবা নিতে গেলে ১ থেকে ২ হাজার টাকা কর দেয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। আবার সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে, তাদেরই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে—করের আওতা বাড়াতে দেশে এ রকম একটি পদ্ধতি চালু করা যায়।” অর্থাৎ একজন ব্যক্তির আয় থাকুক আর না থাকুক, সে সুস্থ কিংবা অসুস্থ যাই হোক না কেন, বেকার কিংবা চাকরিজীবী- সকলকেই অদূর ভবিষ্যতে করের আওতায় আনা হবে। ফলে বিদ্যমান অবর্ণনীয় কষ্টের সাথে নতুন এই জুলুমের সংযোজন মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকাকেই দুর্বিষহ করে তুলবে।

জনগণের কাছ থেকে কর সংগ্রহের ব্যাপারে শাসকশ্রেণী যতটা সিরিয়াস ঠিক ততটাই উদাসীন জনগণের চাহিদাসমূহ পূরণের ব্যাপারে। দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা বৃদ্ধি, বেকারত্ব বৃদ্ধি, নিরাপত্তাহীনতা- ইত্যাদি ব্যাপকহারে বিদ্যমান থাকলেও সরকার শুধুমাত্র ব্যস্ত তার মেগা প্রজেক্টসমূহ বাস্তবায়ন নিয়ে। নগরীর রাস্তাগুলোয় ভিক্ষুক ও ছাদহীন মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও এদের কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ব্যবস্থা না করে সরকার এখন ব্যস্ত এদের কাছ থেকে কিভাবে ট্যাক্স আদায় করা যায় সে চিন্তায়। হায়! এরা যে পরিমাণ মেধা ও শ্রম জনগণের পকেট ফাকা করার জন্যে ব্যয় করছে এর নূন্যতম চিন্তাও যদি জনগনের কল্যাণের জন্য করত! কিন্তু এসকল শাসকেরা যে সবার ব্যাপারেই উদাসীন তা কিন্তু নয়। শাসকশ্রেণী তার দল ও ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠীর উন্নয়নের ব্যাপারে সবসময়ই সিরিয়াস। এদের উন্নয়নের জন্যে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন রকম মেগা প্রজেক্টের আয়োজন করা হয় যাতে এই প্রজেক্টসমূহকে কেন্দ্র করে মেগা দুর্নীতি সম্পন্ন করা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী খাতকে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দিয়েও এদেরকে টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। যেমন, কুইক রেন্টাল নামক বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রজেক্টের ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ নামক উদ্ভট চিন্তা মূলত পুঁজিপতিদের স্বার্থেই। অর্থাৎ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সাধারণ জনগণ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ সরকার নামক ডাকাতের হাতে তুলে দিবে এবং পরবর্তীতে এরা তা নিজেদের মধ্যে লুটপাট করে নিবে।

পক্ষান্তরে খিলাফত রাষ্ট্রে নাগরিকদের কাছ থেকে কি কি উপায়ে খলিফা রাজস্ব সংগ্রহ করবেন তা সুনির্দিষ্ট। খলিফার এখানে সৃজনশীল হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আনফাল, গনিমত, মালে ফা‘ই এবং খুমুছ, খারাজ, জিযিয়া, গণমালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে উপার্জিত আয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ থেকে অর্জিত রাজস্ব, বিভিন্ন সীমান্তে সংগৃহীত শুল্ক, গুপ্তধন এবং ছোট খনির এক পঞ্চমাংশ(খুমুছ), এবং যাকাত- ইত্যাদি হচ্ছে খিলাফত রাষ্ট্রের শারীয়াহ নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় আয়ের উৎস। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হচ্ছে রাষ্ট্রে বিদ্যমান গনমালিকানাধীন খনিজ সম্পদ সমূহ। রাষ্ট্র এগুলো উত্তোলন করে প্রায় বিনামূল্যে জনগনের কাছে পৌছে দিবে। এর পাশাপাশি খিলাফত রাষ্ট্র এসকল জ্বালানি বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে তা দিয়ে জনগনের চাহিদা পূরণ করবে। তাছাড়া, খিলাফত রাষ্ট্র সব মুসলিম ভূখণ্ডসমূহকে একত্রিত করে তার অধীনে নিয়ে আসবে, ফলে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে ব্যয় তা ব্যাপকহারে এসকল বিস্তৃত ও সম্পদশালী ভূমিসমূহ থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। খলিফা কোন নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য জনগনের কাছ থেকে রাজস্ব আয় করবেন না, ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন নামে-বেনামে জনগনের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালাবেন না। 

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“টক অব দ্য পলিটিক্স: মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা”

খবরঃ

ওয়াশিংটনে পার্টনারশিপ ডায়ালগেই মার্কিন ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করে জারি করা স্বতন্ত্র নীতির কথা জানানো হয় বাংলাদেশকে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে, গণতান্ত্রিক আচার-ব্যবহারের ক্ষেত্রে যারাই বাধা হবে তারা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। কারা হতে পারেন তারা? সেটাও স্পষ্ট করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এদিকে মার্কিন ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতেও শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের ওপর যে ওয়াশিংটন সবসময় খেয়াল রাখছে সর্বশেষ ঘোষণায় এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। এটি সবার জন্যই বার্তা। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার জন্য ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে বাংলাদেশের নির্বাচন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার জন্য ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের নির্বাচন। নানা সমীকরণ ঘুরপাক খাচ্ছে। বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি এখন দেশের টক অব দ্য পলিটিক্স হয়ে উঠেছে। (https://mzamin.com/beta/news.php?news=57312)

মন্তব্যঃ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের রক্ষাকর্তা মনে করার কারণ নেই, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সে এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে ফেরি করে বেড়াচ্ছে এবং স্যাংশনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইতিপূর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ব্যাপক কারচুপি ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে হয়নি। মার্কিন অর্থ দফতরের প্রেসবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী RAB এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৬০০-রও বেশি গুমের সাথে জড়িত থাকলেও তারা এত বছর অবধি এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। কারণ এই ঘটনাগুলো তখন মার্কিন এজেন্ডাকে সমর্থন করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন হাসিনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কিংবা পরিবর্তনের মাধ্যমে হলেও তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ত্বরান্বিত করার উপর জোর দিচ্ছে; ফলশ্রুতিতে সে বাংলাদেশের দুর্বৃত্ত বাহিনী র‍্যাবের উপর স্যাংশন আরোপ করেছে। আমরা ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছি RAB-এর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ৩ মাসের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে বাংলাদেশকে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) চুক্তি স্বাক্ষরে চাপ প্রয়োগ করে (দেখুন দৈনিক যুগান্তরঃ https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/532719/বাংলাদেশের-সঙ্গে-আকসা-ও-জিসোমিয়া-চুক্তি-চায়-যুক্তরাষ্ট্র)। ঠিক একইভাবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এদেশের স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া মার্কিনীরা নিজেদেরকে হঠাৎ করে গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করে এটিকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করতে চায়। তাই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত সরকার ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে চায় যাতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার কর্তৃক তাদের নব্য-উপনিবেশিক প্রকল্প ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে জায়েজ করাতে পারে এবং আকসা ও জিসোমিয়ার মত দেশবিরোধী সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশকে আরোও চাপ প্রয়োগ করতে পারে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বিরোধী দল ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবী/বিশ্লেষকরা এই মার্কিন এজেন্ডাকে অনুধাবন না করেই মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারে সহায়ক বলে এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করে ক্ষমতায় আরোহণ কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ও বিরোধী দল কেউ কারো ব্যতিক্রম নয়। অথচ পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার অধীনে তথাকথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন কেউই পশ্চিমা শক্তিসমূহের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে জনগণকে স্বাধীন করতে সমর্থ হবে না। গণতান্ত্রিক নির্বাচন হচ্ছে পশ্চিমা পরাশক্তিসমূহের আধিপত্যের ধারাবাহিকতা মাত্র।

খিলাফত ব্যবস্থার অনুপস্থিতির ফলেই মুসলিম ভূখন্ডসমূহে পশ্চিমা দাসত্বের রাজনীতির সূচনা হয়েছে এবং পশ্চিমা সমর্থিত মেরুদন্ডহীন রাজনীতিবিদরা আমাদের উপরে চেপে বসেছে যাদের কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। তাই কাফির উপনিবেশবাদীদের আধিপত্যের অবসান ঘটাতে দেশের নিষ্ঠাবান জনগণ ও রাজনীতিবিদদেরকে নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফাহ রাশিদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে, যা মুসলিমদের প্রকৃত রক্ষাকর্তা হবে এবং এ অঞ্চল থেকে চিরকালের জন্য ক্রুসেডার মার্কিনীদেরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “তিনিই আল্লাহ্‌ যিনি তার রাসুলকে পাঠিয়েছেন হেদায়েত ও সত্য জীবনব্যবস্থা সহ যাতে তা অন্য সকল জীবনব্যবস্থার উপর বিজয় লাভ করে যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে” (সুরা আস সফঃ ৯)। 

    -    সিফাত নেওয়াজ




“১৮৬ কোটি টাকায় বিক্রি হলো টিপু সুলতানের তলোয়ার”

খবরঃ

টিপু সুলতান ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণের মহীশূর রাজ্যের একজন কালজয়ী মুসলিম শাসক। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর অসীম সাহসীকতার জন্য তিনি ইতিহাসে পেয়েছেন বীরের মর্যাদা। সেই সাথে যোদ্ধা টিপুর সেই তলোয়ারটিও হয়ে উঠেছিল সাহসীকতার প্রতীক। গত সপ্তাহে লন্ডনের ‘বনহ্যামস নিলাম হাউসে’ ১৮৬ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে আঠারোশো শতকের ভারতীয় এই মুসলিম সুলতানের বিখ্যাত সেই তলোয়ার। (https://www.youtube.com/watch?v=0FJ-USkgjWU)

মন্তব্যঃ

দখলদার বৃটিশদের জন্য ‘মুসলিম ভারতে’ এক মূর্তীমান আতঙ্কের নাম ছিলেন মহীশূরের কালজয়ী মুসলিম শাসক টিপু সুলতান, যার প্রকৃত নাম ছিল সুলতান ফাতেহ আলী টিপু। কর্নাটকের কানাড়ি ভাষায় টিপু অর্থ হল ‘বাঘ’ এবং বাস্তবিক অর্থেই শত্রু বৃটিশদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বাঘের মতই ক্ষীপ্র আর সাহসী। তিনি বলতেন “শিয়ালের মত ২০০ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মত ২ দিন বাঁচাও উত্তম”। তার অসম সাহসিকতা, আক্রমনাত্মক সামরিক কৌশল ও সামরিক উদ্ভাবনী চিন্তার কারণে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাকে যমের মত ভয় পেত। প্রখর রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী টিপু সুলতান সেই সময়েই বুঝতে পেরেছিলেন বৃটিশরা বানিজ্যের খোলসে ভারতে অবস্থান করলেও তাদের আসল উদ্দেশ্য হল উপনিবেশ স্থাপন করা, যার কারণে তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ভারতের এক ইঞ্চি মুসলিম ভূখন্ডও কাফিরদের হস্তগত হওয়া ঠেকাতে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। বৃটিশদেরকে পরাজিত করে ভারত থেকে বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে তিনি আয়রন-কেইসড (iron-cased) ‘মহীশূরীয়ান রকেট’ আবিস্কার ও ব্যবহার করেন যা লোহার টিউবের মাধ্যমে দুই কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পারতো। শুধু তাই নয়, টিপু সুলতান তার সেনাবাহিনীর ২৪টি ব্রিগেডের প্রতিটিতে ২০০ সৈনিকের রকেট আর্টিলারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যারা প্রত্যেকে জ্যামিতিক হিসাবনিকাশ করে রকেট উৎক্ষেপণ করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৭৯৯ সালের ৪ মে বৃটিশরা টিপুর সিরাঙ্গাপত্তন দুর্গ দখলের পর সেখান থেকে ৭০০ উৎক্ষেপণযোগ্য রকেট ও ৯,০০০ নির্মানাধীন রকেট আয়ত্তে নেয়, যার ২ বছর পর এই মহীশূরীয়ান রকেটকে ভিত্তি ধরে ১৮০১ সালে বৃটিশরা ‘রয়েল উলউইচ আর্সেনাল’ গবেষণাগারে সামরিক রকেট নিয়ে গবেষণা শুরু করে; যার ফলাফল হল ১৮০৮ সালে ‘কনগ্রীভ রকেট’ উদ্ভাবন, যাকে পশ্চিমারা ‘প্রথম মিসাইল’ হিসেবে বড়াই করে থাকে। টিপু সুলতান ইসলামী আক্বীদার ভিত্তিতে ‘ফাতহুল মুজাহিদীন’ নামক সামরিক ম্যানুয়াল তৈরী করেছিলেন যার ডকট্রিণ বা মূলমন্ত্র ছিল “শিয়ালের মত ২০০ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মত ২ দিন বাঁচাও উত্তম”।

বৃটিশরা টিপুর কাছে পরপর কয়েকবার পরাজিত হয়ে ১৭৯৮ সালে ‘চতুর্থ মহীশূরের যুদ্ধে’ সর্বাত্মক আক্রমন করলে টিপু তার ৩০,০০০ মুসলিম বাহিনী নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। আক্রমনকারী ৬০,০০০ সৈন্যের মধ্যে মাত্র ৪,০০০ জন বৃটিশ আর ৫৬,০০০ ভারতীয় (অধিকাংশই হিন্দু মারাঠী আর বৃটিশদের সাথে হাত মিলানো হায়দারাবাদের নিজামের সৈন্য)! দিকে দিকে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা মোকাবেলা করে টিপু সুলতান শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। একদিকে মারাঠা ও নিজামের ষড়যন্ত্র, অপরদিকে মীরজাফর ও ঘষেটি বেগমদের উত্তরসূরি মীর সাদিকের (টিপুর এক সেনাপতি) বিশ্বাসঘাতকতায় সংঘটিত এ যুদ্ধে টিপু সুলতান বৃটিশদের বিরুদ্ধে উম্মাহ্‌কে বিজয় এনে দিতে পারেননি। বৃটিশদের ‘মুসলিম ভারত’ দখলের পথে সর্বশেষ প্রতিরোধ হিসেবে প্রাণপন যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত ‘শহীদ’ হন এই মুসলিম বীর। টিপু সুলতানের মৃত্যুর খবর শুনে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল রিচার্ড ওয়েলেসলি মদের গ্লাস হাতে উল্লাস প্রকাশ করে বলেছিল, ‘ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, ভারতবর্ষের মৃত আত্মাকে স্মরণ করে পান করছি, এ গোটা ভারতই এখন আমাদের’! সেদিন টিপু সুলতানের কাছ থেকে লুন্ঠিত তলোয়ারের অকশন (নিলাম) মূল্য বর্তমানে ১৮৬ কোটি টাকা নির্ধারিত হলেও কাফিরদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ এই ফাতেহ আলী টিপুর অর্জিত জান্নাতের মূল্য নির্ধারনের সামর্থ্য পৃথিবীর কোন অকশন-হাউসের নেই!

টিপু সুলতান ছিলেন একজন প্রকৃত মুসলিম বীর যিনি এই উম্মাহ্‌’র দু্র্দিনে শত প্রতিকূলতাকে পায়ের নিচে দলিত করে বৃটিশদের দখলদারিত্বের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। প্রকৃত বীর তারাই যারা উম্মাহ্‌’র দু্র্দিনে আশার আলো হয়ে আবির্ভূত হন এবং শত প্রতিকূলতাকে, শত বাঁধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে উম্মাহ্‌-কে স্বস্তি এনে দেন। সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবী, সুলতান সাইফুদ্দীন আল-কুতুয, হামযা (রা.), উমার (রা.), সাদ বিন মুয়ায (রা.), খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এরা প্রত্যেকেই ছিলেন মুসলিম উম্মাহ্‌’র দু্র্দিনের আশার আলো; যারা যার যার সময়ে ও প্রেক্ষাপটে পাহাড়সম প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্‌’র জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। আমাদের এই ঐতিহাসিক বীরদের প্রত্যেকেই ছিলেন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ্‌’র প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মানসীকতাসম্পন্ন, ইতিহাসই তার প্রমাণ। এই ২০২৩ সালে মুসলিম উম্মাহ্‌ যখন স্থানে স্থানে কাফির-মুশরিক হায়েনা রাষ্ট্রসমূহের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, কাফিরদের ষড়যন্ত্র ও মুসলিম শাসকশ্রেণীর বিশ্বাসঘাতকতায় উম্মাহ্‌ যখন দিশেহারা, ঠিক এই সময় ও বাস্তবতায় উম্মাহ্‌ প্রতীক্ষায় রয়েছে নতুন কোন ‘বীরের’, যে আবির্ভূত হয়ে উম্মাহ্‌’র অন্তরকে শীতল ও প্রশান্ত করবে। এ বীরের কাজই হল এই দু্র্দিনের আশার আলো (খিলাফতকে) প্রজ্জলিত করা যেন উম্মাহ্‌ এই আলোতে তার নেতৃত্বের কক্ষপথে ফিরতে পারে ও শত্রু-মিত্রকে চিহ্নিত করে নতুন-পুরনো সব হিসাব চুকাতে পারে! উম্মাহ্‌’র এই প্রয়োজন পূরণে শত প্রতিকূলতা ও বাঁধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করার জন্য যিনি জানবাজী রেখে বাঘের ক্ষীপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পরতে প্রস্তুত, আল্লাহ, আল-ফাত্তাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) তার জন্যই প্রস্তুত রেখেছেন বিজয়ের মহামঞ্চ! “শপথ আকাশমন্ডলীর ও শপথ সেই বিশেষ নক্ষত্রের (আত-ত্বরিক্ব)। (হে রাসুল!) আপনি কী জানেন কী সেই বিশেষ নক্ষত্র? এটি হল সেই মহাতারকা, যার আবির্ভাব রাতের কালো অন্ধকারকে বিদীর্ণ করে দেয়! (সূরা আত-ত্বরিক্ব: ১-৩)।

    -    রিসাত আহমেদ 




‘কামরাঙ্গীরচরে তার কথাই আইন’

খবরঃ

মোহাম্মদ হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। কামরাঙ্গীরচরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এই ওয়ার্ডের অবস্থান। পর পর দুইবারের এই কাউন্সিলরের কথাই সেখানে আইন। দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার ক্যাডার বাহিনীর হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে এলাকাছাড়া হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। … যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই এসব অভিযোগ তুলছে। ... ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, তিনি ক্ষমতালোভী। এককভাবে কামরাঙ্গীরচর নিয়ন্ত্রণ করছেন।... (https://mzamin.com/beta/news.php?news=57141)

মন্তব্যঃ

‘কামরাঙ্গীরচরে তার কথাই আইন’-এটা এই প্রতিবেদকের প্রতিবেদনে উঠে আসলেও বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে যে ‘শেখ হাসিনার কথাই আইন’- এটা সবসময় সব জায়গায় সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ‘মোহাম্মদ হোসেন’ (আফসোসের বিষয় যে নামের সাথে কর্মের কোন মিল নেই) আসলে কোন ব্যতিক্রম চরিত্র নয়, বরং সে সমগ্র বাংলাদেশ তথা সমগ্র পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদদের একটা নমুনা চরিত্র মাত্র। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদদের এহেন চরিত্র তখনই প্রকাশিত হয় যখন তার স্থানীয় প্রতিপক্ষ তার চেয়ে শক্তিশালীরূপে তাদের সকলের ‘গডফাদার’ (বর্তমানে ‘গডমাদার’) দলীয়প্রধানের ‘নিকট’ প্রতীয়মান হয়। এখানে দলীয় কিংবা সরকারপ্রধান এই ‘গডফাদার’রা কখনোই স্থানীয় রাজনীতিতে একক কোন ব্যক্তির উপর ভরসা রাখে না। সে একাধিক বিকল্প রাখতে চায় যেন তার নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। যেমন, আমরা দেখতে পাচ্ছি নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান-আইভি কিংবা গাজীপুরে জাহাঙ্গীর-আজমত উল্লার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। এসব দ্বন্দ্বে প্রায়ই তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সকল সংঘর্ষে যে জয়ী হয় সেই ‘গডফাদার’দের নিকট যোগ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আবার একই চিত্র আমরা দেখতে পাই জাতীয় রাজনীতিতেও। আওয়ামীলীগ-বিএনপি এই দুই দলই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করলেও তাদের উভয়ই তাদের বিদেশী প্রভুদের (মার্কিন-ব্রিটেন-ভারত) নিকট একমাত্র বিকল্প হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করার জন্য পরস্পর পরস্পরের সাথে মারামারি-কাটাকাটি-খুনোখুনি করে কিংবা দেশের কৌশলগত সমস্ত সম্পদ যেমন, খনিজ সম্পদ, জ্বালানি খাত কিংবা বন্দরসমূহ ইত্যাদি তাদের বিদেশি প্রভুদের হাতে তুলে দেওয়ার অঙ্গীকারসহ যেকোনো উপায়ে যেকোন কিছু করতে সদা প্রস্তুত থাকে। অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতেও তাদের বিদেশি প্রভু রাষ্ট্রগুলো একক কোন শক্তির উপর ভরসা করে না। তারা কখনো আওয়ামীলীগ, কখনো বিএনপি, কখনোবা তৃতীয় কোন শক্তির উপর ভরসা করে। এভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশে-দেশে, স্থানে-স্থানে এমনকি পাড়ায়-পাড়ায় সংঘর্ষ তৈরি করে। এসব সংঘর্ষে যে টিকে যেতে পারে, সেই পায় সীমাহীন আধিপত্য, অত্যাচার, সন্ত্রাস কিংবা লুটপাটের সুযোগ। আলোচিত কাউন্সিলর ‘মোহাম্মদ হোসেন’ এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গর্ভে জন্ম নেওয়া এমনই এক ‘পাতি’ সন্ত্রাসী মাত্র। তার চেয়েও বড় সন্ত্রাসী হলো তার ‘গডমাদার’ শেখ হাসিনা। আর শেখ হাসিনার চেয়েও বড় সন্ত্রাসী হলো বাইডেন-সুনাক-মোদিরা। তাই শুধু কামরাঙ্গীরচর নয় সমগ্র পৃথিবীটাই আজকে গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসের নরকরাজ্য। সমগ্র পৃথিবীতেই এসব সন্ত্রাসীদের কথাই ‘আইন’। 

এই নরক থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। এসকল নরকের দানবদের থেকে মুক্তি পাওয়াটাও জরুরী। এজন্য এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপসারণ করে আল্লাহ্‌-আল হাকিম (শান্তি, নিরাপত্তার উৎস ও ত্রাণকর্তা) আদিষ্ট ‘খিলাফত’ রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ‘আইনদাতা’ শুধুমাত্র আল্লাহ্‌-আল মালিকুল মূলক। এখানে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট যোগ্য প্রতীয়মান হওয়ার জন্য দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ কিংবা শাসকগণ ন্যায়পরায়ণ হওয়ার জন্য পরস্পর পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন ন্যায়পরায়ণ শাসক আল্লাহ্‌’র আরশের ছায়ায় নীচে স্থান পাবেন”। এখানে মোহাম্মদ হোসেনের মত কিংবা তার চেয়েও বড় কোন সন্ত্রাসীর রাজনীতি করার কোনই সুযোগ নেই। 

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“জীবন উৎসর্গকারী ৫ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দিল জাতিসংঘ”

খবরঃ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পাঁচ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে মর্যাদাপূর্ণ মরণোত্তর ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ প্রদান করেছে জাতিসংঘ। গত ২৫ জুন জাতিসংঘ সদর দফতরে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের কাছ থেকে তাদের পক্ষে এ মেডেল গ্রহণ করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশ বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার ৫০০ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের ৯টি মিশনে কর্তব্যরত রয়েছেন। দায়িত্বরত অবস্থায় এ পর্যন্ত ১৬৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন। (https://www.jugantor.com/national/679048/)

মন্তব্যঃ

সৈন্যের কাজ হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য প্রয়োজনে মারার ও মরার উভয়েরই প্রস্তুতি ও প্রতিশ্রুতি থাকতে হয় তাদের। তাই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সৈন্যের মারা যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় একটি মুসলিম দেশের মুসলিম সৈন্য কেন জাতিসংঘ মিশনের জন্য প্রাণ দিবে? এটার সাথে তার দায়িত্ব এবং আক্বিদার কি কোন সম্পর্ক আছে? কেন তাকে ঐ যুদ্ধ ক্ষেত্রে যেতে হলো, কে তাকে সেখানে পাঠালো? এখন এই মরনোত্তর সন্মাননা এবং তার পরিবারের পাওয়া ক্ষতিপূরণ কি তার কোন কাজে আসবে?

জাতিসংঘ হচ্ছে নব্য-উপনিবেশবাদী বিশ্বের মোড়ল আমেরিকা এবং অন্যান্য পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত পশ্চিমা কাফের শক্তিগুলোর বৈশ্বিক প্রতিপত্তি বলবত রাখার লক্ষ্যে বাকি বিশ্বকে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত করে দুর্বল করে রাখে এবং বিশ্বজুড়ে সংঘাত জিইয়ে রাখে। এই লক্ষ্যেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্ন কনভেনশন বা আইন গ্রহণ করে। আর সেসব আইনের বা আদেশের বাস্তবায়ন করার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনগুলো কাজ করে (https://peacekeeping.un.org/en)। সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ইসলাম দমন তাদের অন্যতম লক্ষ্য। জাতিসংঘ প্রথম মিশন পাঠায় ফিলিস্তিনে ১৯৪৮ সালে  (UNTSO),  আর দ্বিতীয় মিশন পাঠায় কাস্মীরে  (UNMOGIP)। এই দুইটা মিশন এখনও বলবৎ আছে এবং বলাবাহুল্য এর ফলাফল হচ্ছে মুসলিমদের জান, মাল, ইজ্জত ও মুসলিমদের পবিত্র ভুমির উপর দখলদার বাহিনীগুলোর অন্তহীন আগ্রাসন। এখন এরকম ৭০ টি মিশন আছে জাতিসংঘের। 

দেশের স্যেকুলার শাসকরা নিজেদের আক্বিদা ও দেশের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার ফলে নিজেরা যেমন ইসলামের শত্রু পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তেমনি আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও এমন অপবিত্র ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত করেছে। এরকম পবিত্র ও  মর্যাদাবান মুসলিম একটি বাহিনীকে কেন কাফেরদের জন্য ভাড়ায় খেটে টাকা আয় করতে হবে? দেশের মুসলিমরা কি এতই অক্ষম যে তারা খালিদ বিন ওয়ালিদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবী, মোহাম্মদ বিন কাসিম, বিখতিয়ার খিলজি, টিপু সুলতান এমন অসংখ্য বীরদের উত্তরসুরীদের খাওয়া, পরা, চিকিৎসা, বাড়ি ইত্যাদির টেনশনে রাখবে? বস্তুত এই স্যেকুলার বিশ্বাসঘাতক শাসকরা এরকম মিথ্যা ভীতি তৈরি করে আমাদের মর্যাদাবান বাহিনীকে একটি ঘৃণ্য অমর্যাদাকর কাজের মুখাপেক্ষী করে রেখেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ”(সুরা বাকারাহ ২৬৮)।

সামরিক বাহিনীর সাহসী ও নিষ্ঠাবান ভাইয়েদের উচিত আল্লাহ উনাদেরকে যে শক্তি সামর্থ্য ও মর্যাদা দিয়েছেন তার উপর আস্থা রাখা ও তার সম্মান রক্ষা করা। এমন অমর্যাদাকর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা তাদের সাজে না। তাদের ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে এই স্যেকুলার ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে সেই খিলাফতে রাশেদাহ্‌ প্রতিষ্ঠা করা যে খিলাফত উম্মাহ্‌ ও উম্মাহ্‌’র সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে সাম্রাজ্যবাদী কাফের শক্তিকে পরাভূত করবে এবং ফিলিস্তিন, কাস্মীর, আরাকান সহ একের পর এক ভুমিকে দখল মুক্ত করবে।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“‘ভিসা নীতির’ প্রেক্ষাপটে কর্মসূচি নেবে বিএনপি”

খবরঃ

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসা নীতি দেশে নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করছে বলে মনে করে বিএনপি। এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই নতুন ধাপে আন্দোলনের কৌশল ও কর্মসূচি ঠিক করতে যাচ্ছে দলটি। … বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে যেরকম রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি হয়েছিলো, মার্কিন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে নতুন করে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে। (https://www.prothomalo.com/politics/vrr361fl6r)  

মন্তব্যঃ

নিজস্ব রাজনৈতিক দূর্বলতার কারণে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো আশা রাখছে তাদের ত্রাণকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবার তাদেরকে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিসা নীতির’ ঘোষণায় এসব কোমর-ভাঙা বিরোধী-জোটগুলোর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতি আওয়ামী লীগের জন্য বজ্রপাতের মতো ঘটনা।” অথচ এসবকিছুর মাধ্যমে বিএনপি এবং বিরোধীজোটগুলো জনগণকে তাদের উপর আস্থা রাখতে আহ্বান করছে। এবার আন্দোলন জোড়ালো করে তারা জনগণকে দুঃশাসন ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিবে। কিন্তু, বিষয়টাকে তারা যেভাবে উপস্থাপন করছে, বাস্তবতা আসলেই কি তাই? 

বাস্তবতা হচ্ছে, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, সেই মার্কিনীদের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা তথা “ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তথা গণতন্ত্র”, “পূঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা”, “ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক ব্যবস্থা”, “ধর্মনিরপেক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা”, “ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা”, সর্বোপরি ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা বা জীবনব্যবস্থাই বর্তমান দুরাবস্থার মূল কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মাধ্যমে এই অঞ্চলে তার উপনিবেশিক এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করছে। যা বর্তমানে মূলত দুটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে। (১) কোনভাবেই এই অঞ্চল যেন উপনিবেশিক ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে “ইসলামি শাসনব্যবস্থা”র অধীনে ফিরে যেতে না পারে, (২) এই অঞ্চলে শক্তিশালী মার্কিন সামরিক ঘাটি তৈরি করা যাতে করে এই অঞ্চলের ভূমি এবং সামরিক শক্তি ব্যবহার করে আমেরিকা তার ইন্দো-প্যাসিফিক সাম্রাজ্যবাদনীতি বাস্তবায়ন করতে পারে। আর এই কাজে মার্কিনীদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী। আওয়ামীগোষ্ঠী ক্ষমতায় টিকে থাকতে একের পর এক মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে আর বিএনপি রাজনৈতিক ময়দানে থেকে জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে” জনমনে হাসিনাবিরোধী মনোভাব টিকিয়ে রেখে মার্কিন উপনিবেশ এজেন্ডাগুলোকে গোপন রাখছে। একজন সুস্থ মানুষ একটু বিচক্ষণভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারার কথা যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশের কৌশলগত সম্পদ হাসিনা সরকার তুলে দেওয়ার ফলে আজকে আমাদের জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে, মার্কিন সংস্থা আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের নীতি বাস্তবায়নে একের পর এক করের এবং ঋণের বোঝা আমাদের নাভিশ্বাস করে দিচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে এসবের বিরুদ্ধে বিএনপি কখনো কথা বলেছে? কিংবা বিএনপি কি কখনো ঘোষণা দিয়েছে মার্কিনিদের সাথে কিংবা মার্কিন মিত্র ভারতের সাথে হাসিনা সরকার যেসব দেশবিরোধী এবং সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি করেছে সেগুলো ক্ষমতায় গেলে তারা বাতিল করবে? না। বরং তারা এই মার্কিনীদের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় আশার স্বপ্ন দেখছে। এবং তা এজন্য যে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা শেখ হাসিনার থেকেও অগ্রগামীভাবে মার্কিননীতি বাস্তবায়ন করবে এবং মার্কিনীদের সাথে করা চুক্তিগুলোকে বৈধতা দিবে। দেশের মানুষকে মুক্ত করতে নয়। সুতরাং, বিএনপির আন্দোলনের ডাক হচ্ছে মূলত মার্কিন আধিপত্যকে আরও বেশি সুদৃঢ় করা যেমনটি তারা ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে উত্তাপ ছড়িয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা হারানোর ভয় দেখিয়ে মার্কিন চাওয়া “বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি”তে যুক্ত হতে বাধ্য করে। এটিই হচ্ছে বিএনপির প্রকৃতরূপ। সুতরাং, আওয়ামী-বিএনপির মত এমন গাদ্দারদেরকে তাদের উম্মাহ্‌-বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন থেকে প্রতিহত করতে আমাদের দ্রুততার সাথে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরী। কেননা, খিলাফত ছাড়া মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমাদের জন্য ফরজ দায়িত্ব রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সতর্কবাণী অনুযায়ী এদেরকে এখুনি প্রত্যাখ্যান করা। রাসূলুল্লাহ্‌ বলেছেন, “আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসক চেপে বসবে, যারা এমন আদেশ করবে যা তোমরা গ্রহণ করতে পারো না এবং এমন কাজ করবে যা তোমরা প্রত্যাখ্যান কর, তারা তোমাদের প্রকৃত ইমাম(অভিভাবক) নয়”। (ইমাম সুয়ূতি জামে’ আস-সগীর)

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

Previous Post Next Post